পাগল বললেই মনে পড়ে রাস্তার পাশে ধুলো মাখা ছেঁড়া জামা পরে চুলে জট আর উকুন নিয়ে মাথা চুলকোতে চুলকোতে বাঁকা ঘাড়ে বাঁকা চোখে দুনিয়াকে অভিসম্পাত করতে থাকা কারুকে। কিংবা মনে পড়ে এমন একটা লোককে যে পিঠে চটের বস্তা নিয়ে দুনিয়ার পলিথিন তুলে চলেছে পাড়া মহল্লা শহর ঝেঁটিয়ে আর তারপর সেগুলোকে ইঁট দিয়ে পিষে মারছে! তারপর মনে পড়ে অনেককে যারা অজস্র অসংলগ্ন কথা বলে। কিংবা তাদের যারা ঘর সকড়ি বা এঁটো হয়ে যাবে বলে নর্দমার পাশে খেতে বসে। তাদেরও মনে পড়ে যারা দল বেধে ছুটে যায় আরেক দলের প্রাণ নেবে বলে, আপাতভাবে ঘেন্নায়, আসলে কায়েমী স্বার্থে।
সুতরাং পাগল অনেক রকম, পাগল অনেক মাত্রার। কেউ বেশি পাগল কেউ কম। কেই সিজোফ্রেনিক কেউ হিস্টেরিক। কেউ বা অন্যরকম। প্রত্যেক রকম আর মাত্রাকেই তার উপসর্গ দিয়ে চেনা যায়। চিকিৎসা করা গেলে সুস্থও করে তোলা যায়। কিন্তু স্পষ্ট চিকিৎসাবিজ্ঞানসম্মত কারণ না থাকলেও অনেক মানুষকে পাগল বলা হয়ে থাকে। গান পাগল, ছবি পাগল, ছায়াছবি পাগল, কবিতা পাগল, সাহিত্য পাগল – সাধারণত সুকুমার বৃত্তির চর্চায় বুঁদ ও ব্যতিব্যস্ত মানুষদেরই এভাবে পাগল বলা হয়। তাতে পাগল শব্দের অপলাপ হয়। পাগল শব্দ নিতান্ত নিরর্থক হয়ে যায়। তার গুরুত্ব স্খলিত হয়।
আবার পাগলের অর্থোন্নয়নও হয় মহম্মদ বিন তুঘলক বা জ্যাক পারসন্সকে পাগল বললে। কারণ এঁরা দুজনেই নিজের সময়ের থেকে অনেকটা এগিয়ে ভেবেছিলেন। ফলে মহম্মদ বিন তুঘলকের কাণ্ডকারখানা খুব সহজবোধ্য ছিল না তাঁর চারপাশের মানুষদের নজরে। তাঁর প্রত্যেকটা প্রশাসনিক পদক্ষেপকে সমকাল করেছিল নির্মম নিন্দে। আর ইতিহাস সেই নিন্দের আখ্যান ছাপিয়ে সত্যের বুকে উঁকি দিয়ে দেখিয়েছে যে বহিঃশত্রুর আক্রমণ থেকে কিভাবে রাজধানী বা রাজধানীর বাসিন্দাদের মড়ক থেকে কিভাবে তিনি বাঁচিয়েছিলেন।
একশো বছর আগে পারসন্সের বক্তব্যকেও কল্পবিজ্ঞান বলে মনে হতো তাঁর সমকালিক মানুষদের, যদিও সেটা তুঘলকের সময়ের থেকে অর্ধসহস্রাব্দ পেরিয়ে। হয়তো যাঁরা পারসন্সকে পাগল ভাবতেন তাঁরা টের পান নি কিভাবে মাইকেলেঞ্জেলো আর জুল ভের্নের কল্পনার জগৎ সত্যিকারের বিজ্ঞান বাস্তবে ফলিয়ে দেবে। যখন পাঁচশ বছর ধরে চলতে থাকা কল্পনা এক শতকে হুড়মুড়িয়ে বাস্তব হয়ে গেল তখন তাঁরা ভাবতে শুরু করেলেন বিশ্বাস করলেন যে জেট প্লেন বা রকেট বানানো সম্ভব।
যখন তখন যে কোনো অপরিচিত বাস্তব বা দূর্বোধ্য কল্পনাকে পাগলামি বলাটা মানুষের স্বভাবগত এবং সামাজিক রেওয়াজ। তাতে প্রকৃত পাগল যতই বিপন্ন হোক না কেন। আবার পাগল তকমা দিয়ে স্বাভাবিককে বিপন্ন করে তুলতে পারাতেও মানুষের অমানবিক আনন্দ। মানুষের এই চিন্তনরীতি মেনে তাহলে কতকগুলো ভাবনা পাগলামি কিনা দেখা যাক।
ভাবনা ১: বিরোধিতার পাগলামি - চলতি শস্য বনাম পালতু শস্য
দারিদ্র্যসীমা একটা ভয়ানক দৃঢ় সজ্ঞাত শব্দ। দরিদ্রের সংজ্ঞা মূলত আয়ভিত্তিক। যে জানে যে মরে গেলে আর তাকে শুধতে হবে না, সে গলা পর্যন্ত ধার করে খেয়ে, পরে, বেরিয়ে জীবন যাপণ করলে তাকে পাজি বলে, পাগল বলে না। কিন্তু যে লোকের আয়ে খাবারটুকু জোটানো মুশকিল হয়ে পড়ে সে ধার করেই খায়, খাওয়ায়। এরকম লোকের সংখ্যা ভারতবর্ষে অনেক। এক হিসেবে চল্লিশ কোটি, আরেক হিসেবে তার দ্বিগুণের বেশি। গ্লোবাল হাংগার ইন্ডেক্স মানে বুভুক্ষার পরিমাপ দিয়ে মাপলে ভারতের অবস্থান ভীতিপ্রদ (অ্যালার্মিং)। যার অর্থ দাঁড়ালো আমাদের দেশে এখনও প্রচুর লোক অত্যাবশ্যকীয় পুষ্টি থেকে বঞ্চিত।
অথচ কেমন শস্য ফলাবো আমরা তাই নিয়ে আমাদের তর্কের শেষ নেই। বিশ শতকের ষাটের দশক জুড়ে চলতে থাকা খাদ্য সংকটে ইতি টানা গিয়েছিল উচ্চফলনশীল শস্য উৎপাদনে। তাকে তখন ‘জেনেটিক্যালি মডিফায়েড’ বা ‘পরীক্ষামূলক (বিটা) জেনেটিক্যালি মডিফায়েড’ নামে ডাকা হতো না। কারণ খোলা বাজার অর্থনীতি তো ছিল না তখন। ছিল না বিশ্বায়নের ঝাপটাও। সার ও বীজ উৎপাদনকারী পুঁজিপতিদের আগ্রাসনে পড়ার ভয়ও ছিল না। তাই সেই শস্য তার আন্তর্জাতিক নামে পরিচিত না হয়ে, নিজেদের কোটরে নিজেদের অভিব্যক্তিতে ছিল সন্তুষ্টির ঢেঁকুর, স্বদেশী সাফল্যের (যাকে অ্যাচিভমেন্ট বললে বোঝা সহজ হয়, গর্বে বুকটা ফুলে ওঠে) অহংকার।
এখন বিশ্বায়নের দাপানিতে পৃথিবীটা আপাত চ্যাপ্টা চেহারা নিয়েছে। মোটামুটি এস্পার-ওস্পার দেখা যায় নেহাৎ গোপনীয়তার দেওয়াল না থাকলে, শোনাও যায় সাগর পেরিয়ে, পাহাড় ডিঙিয়ে। ফলে ভাষার আড় ভেঙে গেছে। “উচ্চফলনশীল” এখন দিদিমার তোরঙ্গে আর “জেনেটিক্যালি মডিফায়েড” এখন ফেসবুক স্ট্যাটাসে। ফলে দুনিয়াজোড়া “জেনেটিক্যালি মডিফায়েড” শস্যের বিরোধিতাও ভারতে সংক্রামিত।
বিরোধিতার কারণগুলোকে পর পর সাজালে যেমন দেখায় –
- জেনেটিক্যালি মডিফায়েড তাই জল বেশি খায়। (উচ্চফলনশীলও খেত। তর্ক করার সময়, চেপে যাই, ভুলে যাই বা জানা থাকে না।) তাই এটা চাষ করতে সেচের খরচ বেড়ে যাবে।
- এটা পরীক্ষামূলক বলে স্বাস্থ্যের ওপর তার প্রভাব জানা নেই।
- যেহেতু জেনেটিক্যালি মডিফায়েড সেহেতু পোকা ধরলে, বোধ হয়, না নিশ্চয়ই, বেশি বেশি পোকা মারার ওষুধ লাগবে। চাষের খরচ বেড়ে যাবে।
- বেশি বেশি পোকা মারার ওষুধ দিলে শস্যে কীটনাশকের পরিমাণ বেড়ে যাবে। সেই শস্য খেলে মানুষের শরীরেও বিষ ছড়িয়ে যাবে। মানুষ অসুস্থ হবে দুরারোগ্য রোগে।
- বীজটা দামি হবে (বিলিতি কোম্পানি দিচ্ছে যখন)।
- আর তাছাড়া বীজ যখন পরীক্ষামূলকই, তখন চাষি নিজে ঝুঁকি (পড়ুন রিস্ক, ব্যবসায়িক দৃষ্টীভঙ্গীতে আর মানবিক আবেগে বুঝতে সুবিধে হবে) নিয়ে জমি দিলে তাকে দাম দিয়ে বীজ কিনতে হবে কেন?
- এই ফসলের ফলগুলো নির্বীজ হয় যাতে চাষি বীজের সংগ্রহ না বানাতে পারে। তাহলে চাষিকে ফি বছর বীজ কিনতে হবে আর বহুজাতিকের নাফা অব্যাহত থাকবে।
আরও কারণ আছে নিশ্চয়ই। না থাকলে বানিয়ে নিয়ে দর্শানোও যায়। তবে এই সমস্ত কারণের বিরুদ্ধেই জোরালো সওয়াল নিয়ে খাড়া করা হয়েছে অর্গ্যানিক ফার্মিং। মানে শস্য চাষ করার সময় জমির থেকে আগাছাও তোলা হবে না, রাসায়নিক সার দেওয়া, সেচ দেওয়া তো দূর।
কিন্তু চাষ করতে তো শস্যের বীজ লাগে। বীজ যদি পোকা, ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস, অতিরিক্ত আর্দ্রতা, উত্তাপ, হিম, বরফ এবং শৈত্য থেকে না বাঁচানো যায় তাহলে বোনার সময় বীজ আসবে কোথা থেকে? বীজ বাঁচানোর ব্যবস্থাটা আদৌ জৈব বা প্রাকৃতিক নয়। বরং কৃত্রিম, যন্ত্রনির্ভর ও বৈদুত্যিক শক্তি নির্ভর এবং অবশ্যই খরচসাপেক্ষ। অর্গ্যানিক বা জৈব ব্যবস্থায় বীজ সংরক্ষণের কোনো ব্যবস্থাই নেই। ফলে একটা বছরের শস্য পরের বছরের বীজ হিসেবে ব্যবহার করার জন্য একটা চালার নিচে বা খোলা জায়গায় বা ঘরের মধ্যে গাদা দিয়ে রাখলে সেটা পোকা লেগে বা ভেবনো ধরে বা পচে বা ঠান্ডায় জমে নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। আবার চাষ মূলত গ্রামীণ জীবিকা, গ্রামেই ভারতের জনতার প্রায় ৬৫% মানুষ বাস করেন এবং তার ৩০% দারিদ্র্যসীমার নিচে এবং গ্রামাঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবরাহ ও ব্যবহার সীমিত। ফলে বীজ সংরক্ষণের খরচসাপেক্ষ অজৈব ব্যবস্থাগুলোর প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ সরবরাহের ব্যবস্থা করে নিলে পুরো সংরক্ষণ প্রক্রিয়ার দাম আরও বেড়ে যায়। অর্থাৎ কিনা শস্যের বীজ চাষি যদি না কেনে, তাহলে সেটা সংরক্ষণের যথাযথ ব্যবস্থা করা দুঃসাধ্য এবং ব্যবস্থা না করলে বীজ নষ্ট হবেই। বীজ না রেখে শস্য পুরো বেচে দিলে চাষির কিছু আয়ের সম্ভাবনা থাকে। কিন্তু বীজ রাখলে, এবং খরচসাপেক্ষ ব্যবস্থায় কৃত্রিম উপায়ে সংরক্ষণ না করলে বা না করতে পারলে এবং জৈব উপায়ে বীজ শুধু জমা করে রাখলে, চাষি পরবর্তী মরশুমে বীজ কেনার খরচ বাঁচাতে পারবে কিনা তা অনিশ্চিত। বীজ তাকে বড়ো চাষি বা কৃষি সমবায় বা বহুজাতিকের কাছে থেকে কিনতে হয়। অর্গ্যানিক ফার্মিং করে বহুজাতিকের মুনাফা আটকালেও সমবায় বা বড়ো চাষির মুনাফা চাষি বিশেষ আটকাতে পারে না।
জৈব চাষের জমিতে আগাছা রেখে দেওয়া হয় যা মাটির ওপর আবরণ হিসেবে কাজ করে। এর ফলে মাটির কণার ভেতরে থাকা জল বাষ্পীভূত হয়ে গিয়ে মাটিকে শুকনো করে দিতে পারে না। যেটুকু আগাছা তুলে নেওয়া হয় সেটুকু যায় কম্পোস্ট পদ্ধতিতে সার বানানোর কাজে যাতে মাটির পুষ্টি পদার্থ মাটিতেই ফিরে আসে সেটা ব্যবহার করে। এই কম্পোস্ট সার মাটিতে দিতে হয় ধানের মতো মাটির উপরের ফসল তোলার অন্তত তিন মাস আগে এবং আলুর মতো মাটির নিচের ফসল তোলার অন্তত চার মাস আগে। সাধারণত আগাছা বাড়ে বর্ষায়। ফসলও বাড়ে বর্ষায়। তাহলে কম্পোস্টের জন্য আগাছা বর্ষার আগে তোলা হলে যথেষ্ট সার পাওয়া দুসাধ্য। আবার বর্ষায় বেড়ে ওঠার পর আগাছা তুলে নিয়ে তা দিয়ে কম্পোস্ট বানিয়ে তা চাষের খেতে দিলে ফলন বাড়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ। কারণ ফসলের বাড়ের সময় পেরিয়ে যাওয়ার পরে, ফসল পাকার সময়ে সার দিলে ফসলের ফলন বাড়ে না।
আবার শস্যের জমিতে আগাছা থাকলে মাটির থেকে পুষ্টিপদার্থ, জল ও মূলের শ্বাসবায়ু পাওয়ার জন্য আগাছার সাথে শস্যের প্রতিযোগিতা বাধে। শস্য হিসেবে সেই প্রজাতির গাছকেই ব্যবহার করা হয় যারা ফুল দেয় আর যাদের ফল হয় ও ফলের মধ্যে শাঁস ও বীজের আকারে পুষ্টি পদার্থের অনেকটা জমা থাকে। প্রাকৃতিক কারণেই শস্যের ডালপালা বাড়ার পরিমাণ আগাছার থেকে কম। এদিকে ফুল হওয়ার জন্য আবার গাছের একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ বৃদ্ধিও হতে লাগে। কিন্তু আগাছার ফলে খুব বেশি পুষ্টি থাকে না। তাই তার ফুল, ফল ধারণের জন্য পুষ্টি সঞ্চয়ের বা বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজন নেই। ফলে শস্যের গাছের তুলনায় আগাছা ডালপালায়, দৈর্ঘ্যে, প্রস্থে বাড়ে অনেক বেশি, অনেক তাড়াতাড়ি। ফলে আগাছার চাপে শস্য নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। তারওপর খরা, বন্যা, তুষারপাত বা হিম থেকে জৈবচাষের ফসল বাঁচানোর কোনো ব্যবস্থা নেই। তাছাড়াও রয়ে যাচ্ছে পতঙ্গ এবং আণুবীক্ষণিক জীবের আক্রমণ ও সংক্রমণের সম্ভাবনা।
জৈবচাষে ফসলের ক্ষতি করে এমন পতঙ্গ এবং আণুবীক্ষনিক জীবের প্রাকৃতিক শত্রুদের খুঁজে এনে চাষের এলাকায় ছেড়ে দেওয়া হয়। তাদের থেকে ফসলের ক্ষতির সম্ভাবনা যে নেই একেবারে সে কথা প্রমাণসাপেক্ষ। তাছাড়া অনেক সময়ে এই শত্রুদের ধরে আনা হয় সম্পূর্ণভাবে ভিন্ন প্রাকৃতিক পরিবেশ থেকে। মানে বহুক্ষেত্রে উচ্চ অক্ষাংশের ফসল পোকার হাত থেকে বাঁচাতে তার শত্রু ধরে আনা হয় নিম্ন অক্ষাংশ থেকে। ফলে শত্রু অকেজো হয়ে যায় নতুন পরিবেশে। এই আমদানির কাজটা বেশ ব্যয়বহুল। ফলে শত্রু অকেজো হয়ে গেলে ফসল ফলানোটা বেশ অনিশ্চিত, ব্যবসার পক্ষে ক্ষতিকরও।
জেনেটিক্যালি মডিফায়েড শস্যে এই কীট আক্রমণের সম্ভাবনা যথা সম্ভব ক্ষীণ করে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। তাছাড়া এই শস্যের ক্ষেত্রে সেচ, ফসল ঢাকার ব্যবস্থা আর কীট নাশক ব্যবহার করে আবহাওয়ার জন্য বা পোকামাকড়ের জন্য যে ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে সেগুলো কিছুটা হলেও প্রতিহত করার চেষ্টা করা হয়। বীজ সংরক্ষণের যথাযথ ব্যবস্থা থাকায় শস্যহানি হলে বীজের জোগানে টান পড়ে না। অর্গ্যানিক পদ্ধতির তুলনায় এই পদ্ধতিতে চাষ করলে ফসল ফলানোর এবং বেশি পরিমাণে ফলানোর সম্ভাবনা বেশি। খাদ্যশস্যের ফলন বেশি হলে বাজারে তাদের জোগানও বেশি হবে, দামও প্রচুর বেড়ে যাবে না। তাতে দরিদ্রলোকের অন্নসংস্থাণ সহজ হতে পারে। তবুও জেনেটিক্যালি মডিফায়েড শস্যের বিরোধিতা করা হয় তা স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর এই যুক্তিতে, যদিও এই মূহুর্তে অর্গ্যানিক পদ্ধতিতে চাষ করে ফলানো শস্যের দাম তুলনামূলকভাবে বেশি।
প্রাচীনকালে যখন কৃষিই অধিকাংশ লোকের জীবিকা ছিল এবং একেকটা পরিবার নিজের পুষ্টির প্রয়োজনীয় শস্য নিজেরাই চাষ করত তখন অর্গ্যানিক প্রক্রিয়ায় চাষই যথেষ্ট ছিল, চাষের ঋতুতে মারী, মড়ক বা দূর্যোগ না দেখা দিলে। কিন্তু বর্তমানে শতাংশের হিসেবে কৃষির উপর জীবিকানির্ভর মানুষের পরিমাণই শুধু বেশি নয়, যে পরিমাণ মানুষ কৃষিজ দ্রব্য কিনে খেয়ে পুষ্টি সংগ্রহ করেন তাদের সংখ্যাটা আরও বিশাল। বিশাল জনসংখ্যাকে কম খরচে প্রয়োজনীয় পুষ্টি দিতে হলে প্রাকৃতিক দূর্যোগ, ফসলের মারী, মড়কের মোকাবিলা করে অনেক পরিমাণে খাদ্য শস্য উৎপাদন করা জরুরি। জেনেটিক্যালি মডিফায়েড শস্য সেই জরুরি প্রয়োজনের পথে একটা সম্ভাবনা। কিন্তু এমন শস্য চাষ করলে দরিদ্র চাষির ঋণের বোঝা বাড়বে বলে এই শস্যের বিরোধিতা করা হচ্ছে।
তাহলে জনবহুল দারিদ্র্যক্লিষ্ট দেশে জেনেটিক্যালি মডিফায়েড শস্য না ব্যবহার করার পেছনে এই ভাবনা দাঁড়াল যে অস্বাস্থ্যকর খাবার খেয়ে যেটুকু পুষ্টি পাওয়া যায় তা নেওয়ার থেকে না খেয়ে মরাই ভালো। এটা কি স্বাভাবিক বুদ্ধির সিদ্ধান্ত না পাগলামি?
ভাবনা ২: শাসনের পাগলামি - প্রাকৃতিক ও অপ্রাকৃত
সমলিঙ্গের মানুষ যৌন সংসর্গ করলে সেটা প্রাকৃতিক কিনা তা নিয়ে শাসন যন্ত্রের রায় নেতিবাচক। কারণ হিসেবে ধরে নেওয়া যায় যে মানুষের বিপরীত লিঙ্গের অস্তিত্বের কারণ বংশবিস্তার এবং সমলিঙ্গের যৌন সংসর্গে বংশবিস্তারের সম্ভাবনা নেই।
একই দেহে পুরুষ ও স্ত্রী –দুই লিঙ্গধারী জীবের জীবনচক্রে বংশবিস্তার পদ্ধতিটি কেমন? কেমনই বা সেই জীবের ক্ষেত্রে বংশবিস্তার পদ্ধতি যার লিঙ্গই নেই?
টিনিয়া সোলিয়াম নামের চ্যাপ্টা কৃমির দেহটা নানা খন্ডাংশ দিয়ে তৈরি। তার দেহের এই খন্ডাংশের প্রত্যেকটায় পুরুষ এবং স্ত্রী দেহাংশ থাকে। অথচ একই দেহাংশের মধ্যে স্বনিষেক হয়ে ভ্রূণ তৈরির ঘটনা বিরল। সাধারণত যৌনভাবে সক্ষম দুটি আলাদা টিনিয়া নিকটবর্তী হয়ে পরস্পরের মধ্যে সংযোগনালী স্থাপণ করে শুক্রাণুকে ডিমের দিকে নিয়ে যায় ও তাদের মিলনে নিষেক ঘটে ভ্রূণ তৈরি হয়। আবার হাইড্রার দেহে লিঙ্গের অস্তিত্বই নেই। তারা প্রচুর খাবার খেলে কুঁড়ির মতো দেহাংশ দেখা দেয় যা থেকে নতুন হাইড্রা জন্ম নেয় এবং নির্দিষ্ট সময় ধরে তার বৃদ্ধি হলে সে জননীর দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়। টিনিয়ার বংশবিস্তার যৌনপ্রক্রিয়া, কিন্তু হাইড্রার প্রক্রিয়া হলো অযৌন। বলাবাহুল্য দুই প্রক্রিয়াই প্রাকৃতিক।
মানুষ স্তন্যপায়ী জীব/জন্তু মাত্র। তাদের দেহে যৌনাঙ্গের উপস্থিতির বিচারে তারা স্ত্রী ও পুরুষ এই দুই লিঙ্গের হয়। এদের বংশবিস্তার হয় যৌনমিলনে ঘটা নিষেক থেকে। এ নিতান্ত প্রাকৃতিক ঘটনা। এই নিয়ে মানুষেরই বানানো শাসনতন্ত্রের কোনো আপত্তি নেই। আপত্তি মানুষের অন্য নানা কাজকে ঘিরে। এমন এক আপত্তিকর কাজ হলো কম সময়ে বেশি দ্রব্য উৎপাদনের জন্য বাষ্পচালিত, বিদ্যুতচালিত ও বৈদ্যুতিন ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রিত যন্ত্র/কারখানা বানানো। মানুষ এমন কারখানা বানালে পরিবেশে কার্বন ডাইঅক্সাইড, সালফার ডাইঅক্সাইড ও নানা সালফাইডের পরিমাণ বাড়ে যা মানুষ এবং অন্য প্রাণীর শ্বাসপ্রক্রিয়াকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। আবার কারখানা করতে চেয়ে বা খাদ্যশস্যের ফলন বাড়াতে গিয়ে মানুষ ক্রমাগত ঘন বন কেটে কারখানা আর মাঠ বানিয়ে দিচ্ছে। ফলে পরিবেশের যত কার্বন ডাইঅক্সাইডকে সেই বনের গাছেরা খাবার তৈরির কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করে তার সমান অক্সিজেন পরিবেশে ফিরিয়ে দিতে পারত, ততটা অক্সিজেন বাতাসে ফিরছে না। অক্সিজেনই তো প্রাণবায়ু। সুতরাং যন্ত্র বানানো আর বন কাটা মানুষের এই দুই কাজই অপ্রাকৃত বলে গণ্য করা হয়। কিন্তু চাষ করে যেহেতু পুষ্টির জন্য জরুরি খাবার পাওয়া যায়, তাই সেটাকে ক্ষতিকর বা অপ্রাকৃত বলে গণ্য করা হয় না।
যে যুক্তিতে যন্ত্র/কারখানা বানানো ক্ষতিকর, সেই যুক্তিতে চাষ করা, খাদ্যশস্য ফলানো খারাপ নয়? চাষ করতে শিখেছে মানুষ কারখানা বানাতে শেখার তিন হাজার বছরেরও বেশি আগে। যে ফলটা সুস্বাদু লেগেছে সেটাই চাষ করে করে ছড়িয়ে দিয়েছে প্রান্তর থেকে প্রান্তরে। আর জন্মাবার জন্য প্রয়োজনের মাটি না পেয়ে, বেড়ে ওঠার জায়গা না পেয়ে সে যুগের মানুষের অপছন্দের ফলগুলো, ফসলগুলো উপে গেছে হয়তো। উপে যাওয়াটা যেমন প্রাকৃতিক, তেমনই মানুষের চাষ করাটাও প্রাকৃতিক। কারণ মানুষ প্রকৃতির অংশমাত্র। কতকগুলো ফলের প্রজাতির পৃথিবীর বুকে টিকে থাকা না থাকার ব্যাপারটায় মানুষ একটা যন্ত্র হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে প্রকৃতির দ্বারা। তাহলে এই যুক্তিতে তার কারখানা বানানোটাও প্রাকৃতিক। নতুন প্রযুক্তির আবিষ্কারে পরিবেশে পরিবর্তন তৈরি করাতে মানুষ প্রকৃতির একটা যন্ত্রমাত্র। সেই একই যুক্তিতে তার সমলিঙ্গে যৌন সংসর্গ করাটাও প্রাকৃতিক। যখন পৃথিবী মানুষের জনসংখ্যার ভারে হাঁসফাস করছে তখন জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য সমকামীদের সংখ্যাধিক্য হয় নি একথা সপ্রমাণ বলা যায় কী?
কৃষিজ ফসলে শাসক, উৎপাদক অন্যান্য খাদক সবাই ভোক্তা ছিল, তাই ফসল ফলানোয় কেউ কোনো বাধা দেয় নি। তারওপর কৃষি আবিষ্কারের সময়ে মানুষের সংখ্যা এতো কম ছিল যে খাদ্য, বাসস্থাণ বা পরণের সংকট তৈরি হয় নি। ফলে চাষের জমি বাড়ানোতে মানুষের কোনো ভয় তৈরি হয় নি যা থেকে মানুষ কৃষির সম্প্রসারণের বিরোধিতা করবে। তাছাড়া কারখানাজাত দ্রব্যের ব্যবহারে শাসক, উৎপাদক ও ব্যবহারকারী সবাই সুবিধে পায় শক্তি সংরক্ষণের। তাই সবাই আওয়াজ তোলে যাতে গাছ না কেটে দ্রব্য পাওয়া যায় এমন ব্যবস্থার চাহিদা জানাতে। সমলিঙ্গের যৌনতায় নিষেকের সম্ভাবনা নেই। ফলে জনসংখ্যা বাড়ার সম্ভাবনা নেই। জনসংখ্যা কমলে মানুষে মানুষে লড়াই বাধিয়ে তাদের শাসন করার সুযোগ চলে যাবে, তাই শাসক ভীত, সন্ত্রস্ত। তাই শাসক সমলিঙ্গের যৌনতাকে অপ্রাকৃত আখ্যা দিয়ে জনসংখ্যা হ্রাসের নিতান্ত প্রাকৃতিক পদ্ধতিটা আটকানোর জন্য প্রকৃতি বিরুদ্ধ চেষ্টা করে চলেছে।
কে বলতে পারে জনস্ফীতিতে, যান্ত্রিক সভ্যতার প্রসারে, পর্যাপ্ত গাছের এবং অক্সিজেনের অভাবে পৃথিবীতে নানা প্রজাতির জীব যখন অস্তিত্ব সংকটে ভুগছে, তখন সমকামের বিস্ফোরণ প্রাকৃতিক জন্মনিয়ন্ত্রণ প্রক্রিয়া নয়? তাহলে সেই নিতান্ত প্রাকৃতিক ঘটনাকে অপ্রাকৃত বলাটা কী পাগলামি নয়?
ভাবনা ৩: সাম্যের পাগলামি – বাস্তুতন্ত্র ও তার বিরুদ্ধাচারণ
বেশ কিছু মানুষ মোটা মোটা বই লিখে, মঞ্চে মঞ্চে বক্তৃতা করে প্রমাণ দেয় মানুষের সমাজে কয়েকটা মানুষের হাতে ক্ষমতা, অর্থ, যশ, প্রতিপত্তি থাকা ঘোর অনাচার। সমাজের ভালো করতে হলে সবমানুষকে ক্ষমতা, অর্থ, যশ, প্রতিপত্তি সমান সমান পেতে হবে এমনটাই তারা বোঝায়। সেক্ষেত্রে যে সত্যিটাকে অস্বীকার করা হয় সেটা হলো মানুষও বাস্তুতন্ত্রের অংশ। বাস্তুতন্ত্র মানে যেখানে গাছ সালোকসংশ্লেষ করে সূর্যের আলো থেকে পাওয়া শক্তি তার ফুলে, পাতায়, ডালে, মূলে ধরে রাখে শর্করার মধ্যে, সেই শর্করা জমেই তার বৃদ্ধি ও অযৌন বংশ বিস্তার ঘটে; তারপর গাছের পাতা খায় পোকা, আর হরিণ, ছাগল, বানর, গরুর মতো জন্তুরা; পোকাদের খায় ব্যাঙ, পাখি, টিকটিকি, গিরগিটি; সাপ খায় ব্যাঙ, পাখি, টিকটিকি, গিরগিটি, ইঁদুর, হরিণ; ময়ূর সাপ খায়, বাঘ খায় হরিণ, ছাগল, গরু; এভাবে সূর্যের আলোর শক্তি ক্রমাগত প্রবাহিত হয় পোকা থেকে বাঘে।
এবং মানুষেও, মানুষ যা খায় তার মধ্যে দিয়ে। এই যে সব শেষে শক্তি নেওয়া জন্তু মানে বাঘ বা মানুষ এরা সবচেয়ে বেশি শক্তিশালী। মানে এই শ্রেণীর সদস্যরা তার নিচের শ্রেণীগুলোতে থাকা জীবেদের বধ করে তার প্রয়োজনে, তার শারিরীক, জাগতিক এবং টিকে থাকার প্রয়োজন মেটানোর তাগিদে। জীব পিরামিডের নিচের তলার জীবেরা উপরের তলার জীবেদের সাধারণতঃ বধ করতে পারে না, মূলত বুদ্ধির তারতম্যের কারণে। না হলে অজগর বা গোখরো সাপেরা লুপ্তপ্রায় জন্তু হিসেবে বিবেচিত না হয়ে, মানুষ লুপ্তপ্রায় বলে বিবেচিত হতো।
যদি এই পিরামিডের একতলের জন্তুর হাতে আরেকতলের জন্তুর নিরন্তর বধ হওয়া আটকানোর জন্য সব সমান করে দেওয়া হতো তাহলে বাঘ আর মানুষকে সূর্যের আলো থেকে শক্তি শুষে নিয়ে বাতাস আর মাটির নানা অজৈব পদার্থ দিয়ে খাবার বানিয়ে নিয়ে পুষ্টি আহরণ করতে হতো এবং শক্তি সঞ্চয় করে রাখতে হতো চলা, ফেরা, খাবার তৈরির অজৈব উপাদান সংগ্রহ করার মতো কাজগুলো করার জন্য। তাহলে আবার প্রাকৃতিক ভাবেই মানুষকে গাছের মতো বেশ কিছু জন্তু, যারা নিজেরা খাবার বানাতে পারে না, তারা খেত তাদের পুষ্টির জন্য। বাস্তুতন্ত্রে পুষ্টি ও শক্তি প্রবাহের হিসেবে আরেকটা পিরামিড তৈরি হয়ে যেত। কিছুতেই সব সমান থাকত না।
এই প্রাকৃতিক শক্তি আর পুষ্টি প্রবাহই মানুষের আপন বাস্তুতান্ত্রিক অবস্থাণে সংগতির পিরামিড তৈরি করে। প্রকৃতিতে টিকে থাকার তাগিদেই কিছু মানুষ সংগতি আহরণ করে। বাকিরা তাদের উপর নির্ভর করে টিকে থাকার জন্য। এই সংগতির সম্পর্কের ভিত্তিতে বা সংগতির বন্টনে মানুষের আপন বাস্তুতান্ত্রিক অবস্থাণে পিরামিড তৈরি হয়ে যায়। সাম্য প্রতিষ্ঠা করার জন্য এরকম একটা পিরামিড ভেঙেচুরে ফেলার পরেও দেখা যায় যে নানা তলের সদস্যদের পরিচয় বদলেছে মাত্র। কিছু মানুষের অবস্থাণ বদলেছে। কেউ আগের থেকে ওপরে গেছে, কেউ আগের থেকে নিচে নেমেছে। কিন্তু আরেকটা পিরামিড তৈরি হয়ে গেছে আবার। বা পিরামিড একটা আছেই।
সেই পিরামিডেও কেউ কেউ নিজেদের অবস্থানে অখুশি। তারা আবার সব সমান করে দেবার কথা বলে বা অন্য কোনো অংগতির কথা বলে একটা বলে মহা শোরগোল বাধিয়ে ক্রমশ চলে যাওয়ার চেষ্টা করে নিজেদের কাঙ্খিত অবস্থাণের দিকে। সেই অবস্থাণের পূর্ববর্তী বাসিন্দারা হয় এই নতুন দলের পথের বাধা হয়। নয়তো, তাদের মধ্যে যারা নিজেদের অবস্থাণে অখুশি তারা এই পুরো ওলোটপালোট-কে ব্যবহার করে নিজেদের পছন্দের তল খুঁজে নিতে। আবার একটা নতুন পিরামিড তৈরি হয়ে যায়।
তবুও নিঃস্বার্থ পারস্পরিক উপকারের ছবি বিরল নয়। একেকটা গোষ্ঠী তাদের নিজের চরিত্রগুণাগুণ অমর করার তাগিদে শুধু সহোদর নয়, তুতো, তুতোর তুতো সম্পর্ককেও পোষণ করে চলে। সেটা প্রাকৃতিক। অথচ অসাম্যের আকর জঘন্য “স্বজনপোষণ” বলে সেটাকে প্রবল নিন্দে করা হয়! আবার এই পোষণটা উপরের তল থেকে নিচের তলের দিকে হলে তাকে মহানুভবতার মর্যাদা দেওয়া হয়।
তাহলে কথায় কথায় সব সমান করে দেওয়ার ডাকটা, বা মহানুভবতার প্রশংসাটা বা স্বজনপোষণের নিন্দেটা কী প্রাকৃতিক, স্বাভাবিক বুদ্ধিজ?
মানুষের চিন্তনরীতি মেনে স্বাভাবিক ও পাগল উভয়কেই বিপন্ন করে তোলা যায়। বা স্বাভাবিককে খেপিয়ে খেপিয়ে নিদেনপক্ষে খ্যাপা বানিয়ে তোলা যায়, যদি পুরো পাগল নাও করা যায় তো। এভাবেই পাগলকে হাসস্পদ করে আর স্বাভাবিককে অতিষ্ঠ করে মানুষ আনন্দ পায়। এই বিকার যদি একপ্রকার পাগলামি হয় তাহলে পাগল বাছতে জগৎ উজাড় হয়ে যাবে। অথবা এটাই মোক্ষম সময়। যদি বোধোদয় হয় এবং চিনে নেওয়ার ক্ষমতা তৈরি হয় যে কে পাগল বা কোনটা পাগলামি আর কোনটা নয় তাহলে সত্যিকারের পাগলরা সেরে ওঠার সুযোগ পাবে। সত্যিকারের সুস্থ মানুষ একটা যথার্থ বাস্তব এবং স্বাভবিক জীবন যাপণ করতে পারবে। কে পাগল বা কে নয় চিনতে পারলে, বুঝতে পারলে আর জানতে পারলে মানুষের উত্তরণ ঘটবে। আবার প্রকৃতিকে ব্যাখ্যা করার নিয়মও, সবটা না হলেও, খানিকটা বদলে যাবে। বদলে যাবে পাগল আর পাগলামির সংজ্ঞা। সব ভাবনা আবার নতুন করে ভাবতে হবে তখন।
** published at ঐহিক পত্রিকার "পাগল" সংখ্যা, যা বাংলা আকাদেমির বিচারে ২০১৪ সালের সেরা লিটল ম্যাগ।