Thursday, August 22, 2024

JPDA -Chapter 16

 ১৬. দেঁ চেন



চোখের সামনে অবস্থাটা দেখে মিন হুয়ে দৌড়ে পালায় কী করে? শিন ছির একটা হার্ট অ্যাটাক হয়ে গেছে। মদের প্রকোপে সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারছে না। মারপিটও করতে পারছে না। 

লোকটা গাঁইতি নাচিয়ে এমন তেড়ে এলো যে শিন ছি খালি হাতে আটকাতে পারলো না। পিছনে হেলে, বাঁয়ে, ডাইনে দুলে কোনো মতে গাঁইতির কোপে এড়াতে লাগলো।

কাছের বেড়া থেকে মিন হুয়ে কোনো মতে দুটো বাঁশের লাঠি খুলে আনলো। মোটাটা ছুঁড়ে দিলো শিন ছির হাতে, অন্যট হাতে নিয়ে নিজে লড়াইতে নামল। তারস্বরে চেঁচাতে লাগলো, “বাঁচান, আমাদের বাঁচান। আমাদের লুঠে নিচ্ছে।”

হাতে একটা অস্ত্র পেয়ে শিন ছি ঘুরে মারতে পারলো। 

যদিও লুঠ করতে আসা লোকটার গাঁইতিটার জোর বেশি, কিন্তু জিনিসটার ওজনও অনেক বেশি। তারওপরে লোকটা হেলমেট পরে ছিলো। ফলে লোকটা খুব সহজে নড়াচড়া করতে পারছিলো না। 

সাত-আট খেপে দুজনের লড়াই চললো। শিন ছির হাতের বাঁশের লাঠিতে গাঁইতিটা দু-দুটো তীক্ষ্ণ গর্ত করে দিয়েছে। তারপরে লাঠিটা ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে গেলো। পরপর দুবার শিন ছি কোনো মতে গাঁইতিের কোপ এড়ালো। তারপর গাঁইতিটকে ও চেপে ধরলো সাঁড়াশির মতো।

এই সুযোগে মিন হুয়ে এগিয়ে গিয়ে লুঠেরার হাঁটুতে এক লাথি কষিয়ে দিলো। লোকটা গাঁইতিটা ছাড়িয়ে নিয়ে মিন হুয়েকে মারতে গেলো। মিন হুয়ের মাথাটা দুফাঁক করে দেবে আর কি। লোকটার গাঁইতির আঘাত থেকে মিন হুয়েকে বাঁচাতে শিন ছি দৌড়ে এসে পিঠ পেতে দিলো। লোকটা একটা গোঁত্তা মারলো। মিন হুয়ে আর শিন ছি দুজনেই গিয়ে পড়লো ধান ক্ষেতের মধ্যে। 

গাঁইতিওয়ালা লোকটা গাঁইতি হাতে আবার তাড়া করতে গেলো। এই সময়ে মোটর বাইকটা ফিরে এলো, বিদ্যুৎবেগে। চালক একটা শিস দিয়ে ইশারা করে গাঁইতি হাতে লোকটাকে মারপিট করতে মানা করলো। 

লোকটা লাফ দিয়ে মোটরবাইকে চড়ে বসলো। তারপর তির বেগে চলে গেলো দুজনেই।

মিন হুয়ে আর শিন ছি হামাগুড়ি দিয়ে বেরিয়ে এলো ধান ক্ষেত থেকে, আপাদমস্তক কালো কাদায় ঢাকা, যেনো জলার ভুত দুটো।

যদিও শিন ছি আছে, কিন্তু ওর শরীরটা থরথর করে কাঁপছে। শিন ছির ঠোঁট কালচে বেগুনী হয়ে গেছে দেখে মিন হুয়ে ভয় পেয়ে গেলো। ওকে ধরলো, জিজ্ঞেস করলো, “তোর কী খুব লাগছে?”

ওর বুকে পিঠে অগুণতি ছড়ে যাওয়া দাগ। সম্ভবত গাঁইতির খোঁচা লেগে হয়েছে। সব থেকে গভীর ক্ষতটা বাঁ কাধের ওপর। দু আঙুল চওড়া রক্তাক্ত গর্ত। এইটা সব থেকে শেষের, সব থেকে টাটকা ক্ষত, যেটা মিন হুয়েকে বাঁচাতে গিয়ে হলো। গাঁইতির চোট, রক্ত বন্ধ হওয়া মুস্কিল।

মিন হুয়ে নিজের গা ছুঁলো। তাইতে ওর মনে পড়ে গেলো যে ওর ব্যাকপ্যাকটা লুঠ হয়ে গেছে। ওর কাছে এখন কোনো পরিস্কার কাপড় নেই। এতো উদ্বিগ্ন হয়ে পড়লো যে ও শিন ছিকে বসিয়ে দিলো রাস্তার পাশেই, একটা গাছের গুঁড়িতে ঠেসান দিয়ে, “বোস এখানে। আমি একটা বাইসাইকেল খুঁজে আনছি।”

ওর মনে পড়ে গেলো যে ও যখন এখানে এসে ছিলো, তখন কয়েকটা খামার দেখে ছিলো কাছেই। ও একটু দূরে তাকাতেই দেখতে পেলো যে সামনের ক্ষেত পেরোলেই একটা খামার বাড়ি। ও কিছুরই পরোয়া না করে দৌড় লাগালো।

সময়টা দুপুরের খাবার খেয়ে নেবার। বাড়ির যুবতী পুত্রবধূ তখন উনুন ধরাচ্ছিলো পিঠে বাচ্ছা বেধে।

মিন হুয়ে যুবতীকে ব্যাপারটা বুঝিয়ে বললো। জানতে চাইলো এমন কোনো ওষুধ আছে কিনা যাতে ব্যাথা মরে, আর এমন কোনো ওষুধ আছে কিনা যাতে ক্ষত থেকে রক্ত পড়া বন্ধ হয়ে যায়। প্রথমে যুবতী বধূটি না বললো। তবে পর মূহুর্তে ঘরের ভেতরে গেলো আর ঘাসের গোড়া থেকে বানানো একটা দাঁত মাজার মাজন নিয়ে এলো। বললো যে সারা গাঁয়ের লোক ব্যাথার মলম হিসেবে ওটাই ব্যবহার করে। এক বোতল ফুটিয়ে ঠান্ডা করা পরিস্কার জল, দুটো পরিস্কার কাপড়ের পটি, একটা ডায়াপারও দিলো। শেষে একটা বাইসাইকেলও ধার দিলো।

মিন হুয়ে বাইসাইকেলটা চড়ে শিন ছির কাছে গেলো। পরিস্কার জল দিয়ে ক্ষতটা পরিস্কার করে দিলো। ক্ষতটাকে ঘিরে মাজনটা লাগিয়ে দিলো। তারপর ডায়াপার দিয়ে ক্ষতটাকে ঢেকে কাপড়ের পটি দিয়ে বেধে দিলো। 

শেষে বাইসাইকেলের পিছনের সিটে শিন ছিকে বসিয়ে দিলো মিন হুয়ে। তারপর সাইকেলটা চালিয়ে নিয়ে মিন হুয়ে সোজা গেলো শিংশুই কাউন্টি হাসপাতালে।

ডাক্তার যখন শুনলেন যে শিন ছির জন্মগত হার্টের অসুখ আছে , তখন যেকোনো ওষুধ যে দিতে পারবেন না সে বিষয়টার ওপরে গুরুত্ব দিলেন। উনি ক্ষত পরিস্কার করে, আবার পটি দিয়ে বেধে দিলেন। খাবার জন্য কতকগুলো অ্যান্টিবায়োটিক দিলেন, একটা টিটেনাস শটও দিলেন।

যখন মিন হুয়ে একতলায় নেমে এলো হাসপাতালের পাওনা মেটানোর জন্য তখন ওর খেয়াল হলো যে ওর সমস্ত পয়সাকড়ি সমেত লুঠ হয়ে গেছে ব্যাকপ্যাকটা। দুজনে মিলে পকেট হাতড়ে সমস্ত খুচরো ঝেড়ে পুছে দিয়ে কোনো মতে হাসপাতালের পয়সা মেটালো।

হাসপাতাল থেকে দুজনে হোটেলে ফিরে গেলো। স্নান সেরে নিলো একে একে। পরিস্কার জামা পরলো। বিছানায় বসে সমাধানের পথ খুঁজতে লাগলো।

“ব্যাগটা ভর্ত্তি আমাদের সমস্ত জরুরি জিনিসপত্র।” মিন হুয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেললো, “আমাদের ওয়ালেট দুটো, কার্ডস, মোবাইল ফোন দুটো, আইডি কার্ড -”

ফর্দটাতে শিন ছি জুড়ে দিলো, “আমার পাসপোর্ট।”

“তুই বিছানায় শুয়ে খানিকক্ষণ বিশ্রাম করে নে।” উঠে দাঁড়ালো মিন হুয়ে। “আমি পুলিশে খবর দিচ্ছি ফোন করে। চেষ্টা করি যাতে জিনিসগুলো ফেরত পাওয়া যায়।”

“চল, একসাথে যাই।”

“তুই সবে ফিরেছিস চিনদেশে। থানার মতো সংস্থার সম্পর্কে তোর স্পষ্ট ধারণা নেই। আমি একা যেতে পারবো।”

শিন ছি তর্ক করলো না। হেসে বললো, “ঠিক আছে।”

মিন হুয়ে উদ্বিগ্ন পায়ে হোটেলের লবি পেরোলো, তারপর বাইসাইকেলে চড়ে গেলো পুলিশ স্টেশনে। পুলিশ খুব গুরুত্ব দিয়ে বিষয়টা নিজেদের খাতায় নথিবদ্ধ করলো। জানালো যে তারা নিশ্চয়ই কাউকে পাঠাবে তদন্ত করতে। তবে লুঠকারীরা হেলমেট পরে থাকায়, তাদের মুখের বিশদ বিবরণ না থাকায় জিনিসপত্র ফেরত পেতে খানিক সময় লাগবে। মিন হুয়েকে পরামর্শ দিলেন ওঁরা হোটেলে ফিরে গিয়ে খবরের জন্য অপেক্ষা করতে।

হোটেল ফিরে যাওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় ছিলো না মিন হুয়ের। ও হোটেলের লবিতে পা রাখা মাত্র ফ্রন্ট ডেস্ক থেকে কর্মী এসে টাকা চাইলেন। বললেন যে ওরা মাত্র এক রাতের ভাড়া দিয়েছে আর ওরা আরো একরাত থাকছে। তাই ওদের আরো পয়সা জমা করতে হবে। মিন হুয়ে না হেসে পারলো না। ও জানালো যে ওর সমস্ত পয়সা খোয়া গেছে। ও একটা রাস্তা খুঁজছে হোটেলের পয়সা চোকানোর। ও আশা করছে একদিনের জন্য একটা ছাড় পাবার। ফ্রন্ট ডেস্কের কর্মী অস্বীকার করলো কোনো ছাড় দিতে। বাধ্য হয়ে মিন হুয়ে ঘরে গিয়ে, ওর সোনি ল্যাপটপটা এনে ফ্রন্ট ডেস্ক কর্মীর কাছে গচ্ছিত রাখতে। 

মিন হুয়ের বাক্সে শুরুতে ক্যাশে ছ হাজার য়ুআঁ ছিলো। ঐ টাকাটা নীল সোনা প্রমোদগৃহে সু তিয়াঁর শেষ মাসের মাইনে। টাকাটা রাস্তায় চোট হয়ে যেতে পারে সেই আশঙ্কায় মিন হুয়ে টাকাটা নিজের ব্যাঙ্ক কার্ডে ভরে নিয়ে ছিলো। মোবাইল ফোনটা থাকলে উইচ্যাট দিয়ে সব পাওনা মেটানো যেতো। কিন্তু ব্যাগের সঙ্গে মোবাইল ফোনটাও চুরি হয়ে গেছে। কম্পিউটার থেকে টাকা লেনদেন করা যেতে পারে, তবে সেটা মোবাইল ফোনে টেক্সট মেসেজ এলে তবেই পাকাপাকি করা যাবে। ব্যাপারটা শিন ছির জন্যও একই রকম। তাই দুজনেই এই মূহুর্তে কপর্দকহীন।



“চিন্তা করিস না।” শিন ছি বললো, “আমি এই মাত্র আমার গ্যগ্যকে একটা ইমেল করেছি। ওকে বলেছি আমাকে একটা উপায় পেতে ও যেনো সাহায্য করে।”

বাঁকা হাসি ছড়িয়ে মিন হুয়ে বললো, “তোর গ্যগ্য ইউনাইটেড স্টেটসে না?”

“ও তো ব্যবসা করে। মেইনল্যান্ড চায়নাতে ওর অনেক পরিচিত লোকজন আছে। এখন উত্তর আমেরিকায় মাঝরাত। হয়তো ঘুমোচ্ছে, তাই কোনো উত্তর দেয় নি, এখনো।”

মিন হুয়ে নিজের স্যুটকেসের ভেতরটা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে তোলপাড় করলো। একটা দশ আনা পয়সাও পেলো না।

এতা দেখে, শিন ছিও নিজের স্যুটকেসটা তোলপাড় করে ফেললো। হঠাৎ হেসে বললো, “দ্যাখ, আমি কী পেয়েছি!”

হাতের তালু মেলে ধরলো, তাতে একটা কয়েন।

“এক য়ুআঁ?” মিন হুয়ে তাকালো অপলক শিন ছির দিকে, “এক য়ুআঁতে এক বাটি ইন্সট্যান্ট নুডলও কেনা যাবে না।”

“এক য়ুআঁ -” শিন ছি নিজের মুখটা মিন হুয়ের সামনে বাড়িয়ে ধরলো, “চামড়াটা মোটা হলে, সেটাই যথেষ্ট।”

“পর্বতটা খুবই উঁচু। সম্রাটও অনেক দূরে। যদি তোর গ্যগ্য টাকার ব্যবস্থাও করে, তো সেটা আসতে কয়েকদিন সময় লাগবে।”

মিন হুয়ে ঢোক গিললো, তারপর লেপের নিচে ঢুকে শুয়ে পড়লো। চোখ বন্ধ করলো, “চল উপোসে অভ্যস্ত হই। নড়াচড়া কম করি। যাতে শরীরে শক্তি সঞ্চয় হয়।”

“মেনে নিলাম।”

ঘরটাতে এয়ার-কন্ডিশনার চলছে। লেপটা পাতলা। দুজনে একে অপরকে জড়িয়ে ধরলো। চোখ বন্ধ করে, ঘুমিয়ে নিলো খানিক। যখন মিন হুয়ে জাগলো, তখন সন্ধে সাতটা। খিদেয় পেটে মোচড় দিচ্ছে। সারা ঘরে খুঁজল খানিক, এক টুকরো বিস্কুট বা একটা ক্যান্ডি যদি পাওয়া যায়। কিন্তু কয়েকটা ন্যাপথলিন গুলি ছাড়া কিছুই পেলো না। শিন ছির দাদাও কোনো উত্তর দেয় নি। 

“হেঁটে আসি চল।” বিছানার পাশ থেকে কোটটা তুলে শিন ছি সেটা ছুঁড়ে দিলো মিন হুয়েকে, “সামনে কিছু জলখাবারের দোকান আছে।”

“দারুণ সুস্বাদু!”

সাতটার ঠিক পরেই হোটেলের উল্টোদিকে রাতের বাজারটা খুলে যায়। পাশাপাশি কয়েকটা দোকানে বার্বিকিউ হচ্ছে। জিরের গন্ধে ভুরভুর করছে বাতাস। দুজনে হাত ধরাধরি করে বাজারের এমাথা ওমাথা করলো বার দুয়েক। এমন কোনো খাবার দেখতে পেলো না যার দাম এক য়ুআঁর চেয়ে কম হবে।

শেষে নজরে পড়লো একটা বাওজির দোকান। মিন হুয়ে চোখ ভরা খিদে নিয়ে তাকালো বাওজির দিকে। বাওজির ভেতরে ঠাসা পুর থেকে ভুর ভুর করে সুগন্ধ ছড়াচ্ছে, বাওজির ভাপানো রুটির মোড়ক ছাপিয়ে। দাম লেখা ছিলো এক য়ুআঁতে পাঁচ ভাগের একভাগ। ঢোক গিলে মিন হুয়ে জিজ্ঞেস করলো, “ল্বব্যাঁ, রুটি কী আরেকটু সস্তা হতে পারে?”



“এটা খুবই সস্তা।”

“এটা সস্তাই।” মালিক বয়স্ক মানুষ। প্রায় ষাট বছর বয়স। কালো রোগা। একটা সাদা অ্যাপ্রন পরে আছে, যার সবটা জুড়ে কালো আঙুলের ছাপ। 

ভাপানোর যন্ত্র থেকে সুগন্ধ ভেসে আসছে। তাতে বাধ মানা মুস্কিল।

“আমাদের সঙ্গে কেবল এক য়ুআঁ আছে।” শিন ছি কয়েন টা দেখালো। “আমাদের অর্ধক রুটি দিলেই চলবে। দেবেন?”

বয়স্ক লোকটা নাক টেনে বললো, “এখানে ভাপা রুটির এটাই দাম পড়ে। তোমরা একটা ভাপা রুটি কিনতে পারো।”

“ঠিক আছে।” শিন ছি লোকটার হাতে কয়েনটা গুঁজে দিলো। বাই শুয়ানশুয়ানের থেকে একটা ভাপা রুটি নিয়ে মিন হুয়ের হাতে গুঁজে দিলো। 

মিন হুয়ে সেটাকে ভেঙে দু খন্ড করলো, “একেক জনের আধখানা। আয় একসাথে খাই।”

“আমার খিদে নেই। সবটাই তুই খেয়ে নে। দুপুরের গুহুয়া য়ুর পদটা এখনো হজম হয় নি।” 

শিন ছি পেটের ওপর হাত বোলালো। মিন হুয়ে ধরে নিয়ে গেলো দোকানটায়। বয়স্ক লোকটাকে জিজ্ঞেস করলো, “ল্বব্যাঁ, এখানে ফুটন্ত গরম জল আছে?”

লোকটা ঘাড় নাড়লো, “বাদ দাও। এখানে খানিক সব্জির ঝোল আছে এখনো। তোমাদের দিচ্ছি এক বাটি।”

“অশেষ ধন্যবাদ।”

মিন হুয়ে দু গ্রাসে অর্ধেক ভাপা রুটি শেষ করে ফেললো। তখনই বয়স্ক মানুষটি ঝোলের বাটি নিয়ে এলেন। দুজনে তাকিয়ে দেখলো যদিও ঝোলটাকে সব্জির ঝোল বলে, তবে ওর মধ্যে সব্জি নেই এক টুকরোও। এক পরত তেলের সরে কয়েকটা দানা ভাসছে আর কয়েক কুঁচো পেঁয়াজ। তবে চুমুক দিতে বোঝা গেলো যে ঝোলটা খেতে বেশ ভালো।

“ল্বব্যাঁ, ঝোলটা বেশ স্বাদু।”

“এটা তো যেমন তেমন সব্জির ঝোল নয়। এটা আসলে মুর্গির ঝোল। অনেক খন্ড মুর্গির র‍্যাক দিয়ে এটাকে ফোটানো হয়ে ছিলো। নিশ্চয়ই খেতে ভালো এটা।”



মিন হুয়ে জোর করে বাওজির বাকিটা শিন ছির মুখে ঠুসে দিলো। ও অবশ্য জেদ করছিলো যে খাবে না, দুপুরের মদের ঠেলায় পেট নাকি ভার হয়ে আছে তাই।

 “বু শি। বু খনং। মানছি তুই দুপুরে বেশি খেয়েছিস। কিন্তু বমি করে সব তো তুলেও দিয়েছিস।”

মিন হুয়ে বললো, “বু খেছি। আমার পেট ভরে গেছে।”

“তুই যদি না খাস, তবে তোকে এটা ফেলে দিতে হবে। আমি খেতে পারবো না।” হালকা চালে বললো শিন ছি।



মিন হুয়ে চাউনি দিয়ে ভস্ম করে দিলো ওকে। তারপর ভাপা রুটির বাকিটুকু খেয়ে নিলো। আর শিন ছিকে সবজির ঝোলটা দিয়ে দিলো, “ঠিক আছে তোকে রুটি খেতে হবে না। শুধু ঝোলটা খেয়ে নে।”

শিন ছি মৃদু হাসলো আর বাকি ঝোলটুকু খেয়ে নিলো।

মিন হুয়ে খালি বাটিটা চেটে নিয়ে বয়স্ক মানুষটার কাছে গেলো। মুখে হাসি মাখিয়ে বললো মালিককে, “ল্বব্যাঁ, ঝোলটা বেশ খেতে। আরেক বাটি পাওয়া যাবে?”

বয়স্ক মানুষটি অন্য খদ্দেরদের রুটি পরিবেশনে ব্যস্ত ছিলো। ওদের দুজনের দিকে এক ঝলক দেখে বললো, “তোমাদের দুজনের ব্যাপারটা কী? দেখে তো ভিখারি বলে মনে হচ্ছে না …… কে তোমাদের সব লুঠে নিয়েছে নাকি?”

“হ্যাঁ, আমাদের সমস্ত কিছু লুঠ করে নিয়েছে।”

বয়স্ক মানুষটি ঠোঁট বাঁকিয়ে একটা লোহার হাতা দেখিয়ে বললেন, “হাতাটা হাঁড়ির তলা অবধি চালিয়ে দেখো। ভালো করে খোঁজো। কয়েক খন্ড মূলো বা অন্য কোনো সবজি পেয়েও যেতে পার।”

“শিয়া শিয়া, ল্বব্যাঁ।”

ঝোলের হাঁড়িটা প্রায় আধমানুষটাক উঁচু। একটা লোহার হাতা দিয়ে মিন হুয়ে চেঁছে তুললো ঝোল। অবাক কান্ড! এক খন্ড গাজর উঠে এলো। এক খন্ড মুর্গির র‍্যাক - মানে মাথা, গলা, ডানা, পা, বুকের অংশ বাদ দিয়ে মুর্গির শরীরের বাকিটা, দু খন্ড মূলো এমনকি মুর্গির তিনটে পা দিয়ে বাটি ভরে গেলো। শিন ছির দিকে বাড়িয়ে ধরে বললো, “দ্যাখ, আমাদের কিছু খাবার আছে।”

শিন ছি চামচ দিয়ে বাটিটার গায়ে একটা টোকা লাগালো। খানিক পরে মাথা নেড়ে বললো, “আমি মুর্গির পা খাই না। আমি মুর্গির র‍্যাকও খাই না।”

“তুই কী চোঙ্গুয়ার উত্তরপুব দিকের লোক?”

“কোনো জন্তুর শরীরের ভেতরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গও খাই না।”’

“তুই নিশ্চয়ই মূলো খাস। তাহলে মূলোর খণ্ডগুলো তোর।”

দুটো মূলোর টুকরো মাপে প্রায় মাহ্‌জং-এর কাছাকাছি। মিন হুয়ে টুকরো দুটো শিন ছির বাটিতে দিয়ে দিলো। 

“আমি এটা খেয়ে নেবো।”

গাজর খেতে খেতে বললো শিন ছি। মনের শুখে খুঁটে খুঁটে মুর্গির র‍্যাক খেতে লাগলো মিন হুয়ে। মুর্গির র‍্যাকটা অনেকক্ষণ ধরে সেদ্ধ করা হয়েছে ফুটিয়ে ফুটিয়ে। হাড়ের গায়ের মাংসগুলো সব গুলে মিশে গেছে ঝোলে, কেবল একটা পাতলা আস্তরন রয়ে গেছে হাড়ের ওপরে। মিন হুয়ে হাড়টাকে ছোটো ছোটো খন্ডে ছাড়িয়ে ফেললো। তারপর মুখে দিয়ে চিবোতে লাগলো।

“মুর্গির হাড় খাস না।”

ওকে মুর্গির হাড় খেতে দেখে শিন ছি ফের জানতে চাইলো, “তোর কী এখনো খুব খিদে পেয়েছে?”

“এটা দারুণ খেতে। বিশেষ করে পাগুলো। হাড়গুলো এতো নরম! খেয়ে ফেলা যাবে রে।”

মিন হুয়ে হ্যাংলার মতো খেতে লাগলো। মাথা তুলে টেবিলের অন্যপাশে বসা শিন ছিকে দেখলো, মাথা হেলিয়ে, পা দুটো কাঁচি মেরে তাকিয়ে আছে মিন হুয়ের দিকে নিঃশব্দে, অবয়ব জুড়ে আছে প্রেম।

অন্য খদ্দেরদের জন্য রুটি ওজন করছিলেন মালিক। কাজটা শেষ হতে ঘুরে তাকিয়ে দেখলেন যে মিন হুয়ে খুঁটে খুঁটে খেয়ে চলেছে মুর্গির র‍্যাক, বেশ উৎসাহ নিয়েই। জানতে চাইলেন, “তোমরা কী বিদেশী? এখানে কেনো?”

“আমরা এখানে মধুচন্দ্রিমায়।” হাসি মুখে বললো শিন ছি। হাতটা বাড়িয়ে মিন হুয়ের মাথাটা ছুঁয়ে বললো, “আমার বাগদত্তা।”

মিন হুয়ে আঙুল মেলে তাতে হিরের আংটিটা দেখালো মালিককে, “আমরা তোমাকে মিথ্যে বলছি না।”

“অ্যাই! আমি না হয় আগেভাগেই বলি!” মালিক চারটে মাংসের পুর দেওয়া ভাপা রুটি নিয়ে দুজনকে দুটো করে দিলেন, “খাও, আমার উপহার। বিয়ের উদ্‌যাপণ সুখের হোক।”

দুজনে হাত ধরে, ভরা পেটের ওপর হাত বোলাতে বোলাতে রাতের বাজার থেকে হাঁটতে হাঁটতে ফিরলো হোটেলে। যখন ফ্রন্ট ডেস্কের সামনে দিয়ে যাচ্ছিলো, তখন ফ্রন্টডেস্কের কর্মী ডেকে বললেন, “শিন জঁ?”

“আপনাদের ভাড়া মেটানো হয়ে গেছে।” কথা বলা শেষ করে ফ্রন্টডেস্কের কর্মীটি আরেকটা খাম বাড়িয়ে দিলো শিন ছির দিকে, “এতে পাঁচশো য়ুআঁ আছে নগদে। আপনার দাদার বন্ধু বলেছেন আমাদের এই টাকাটা আপনাকে দিতে। উনি এই টাকাটা আমাদের মোবাইল ফোন দিয়ে পাঠিয়ে দিয়েছেন। যদি আপনাদের কাছে খাবার পয়সাও না থাকে …”

শিন ছি খামটা নিয়ে নিলো। খুলে দেখে নিলো। তারপর মিন হুয়ের হাতে দিলো, “শিয়া শিয়া।”

“আপনার গ্যগ্য-এর বন্ধু আপনাকে জানাতে বলেছেন যে উনি দ্রুততম প্লেনে চেপে আসছেন এখানে। ভোর চারটের দিকে পৌঁছে যাবেন। আপনাকে উনি সাহায্য করবেন আপনার এখানকার কাজে।”

দুজনে পরস্পরের দিকে তাকালো, “ঠিক আছে।”

“মিন শওজিয়ে, আপনার ল্যাপটপ ফেরত নিয়ে নিন। দেখুন সব ঠিক আছে কিনা।”

দুজনেই ঘরে ফিরে এলো জিনিসপত্র নিয়ে। দুজনেই অবাক শিন ছির দাদার বন্ধুর দ্রুত কাজে।

“শিন ছি, তুই কী তোর গ্যগ্য-এর এই বন্ধুকে চিনিস?”

শিন ছি মাথা নাড়লো আর কম্পিউটার খুলে ইমেল পড়তে লাগলো। “তবে, আমার গ্যগ্য উত্তর দিয়েছে আর জানিয়েছে যে ও ওর এক বন্ধুকে আসতে বলেছে আমাকে সাহায্য করার জন্য। বন্ধুর নাম ডেরেক।”

মিন হুয়ে বেশ অবাক হলো, “বিদেশী?”

“ডেরেক দেঁ। চোঙ্গুয়ার লোক হতে পারে।”

“তাহলে তুই কী তাকে চিনিস নাকি?”

“না।’ শিন ছি মাথা নাড়লো। “আমি আমার পাসপোর্টের একটা কপি আর তোর আইডি কার্ডের একটা কপি গ্যগ্যকে পাঠিয়ে বলে ছিলাম যে কোনো বন্ধু থাকলে যেনো একটা উপায় বার করে যাতে আমরা এগুলো ফেরত পাই।”

“বেশ চটপট হলো তো সব কিছু।” মিন হুয়ে হাতে তালি দিয়ে উঠে হাসলো, “তোর গ্যগ্য তো অসাধারণ।” 

পরদিন ভোর ভোর দুজনে রেস্টুরেন্টে গেলো ব্রেকফাস্ট খেতে। ফ্রন্টডেস্কের কর্মী ফোন করে জানালো যে “ফংইয়ো” এসে পৌঁছে গেছেন। দুজনে যখন দৌড়ে ফ্রন্টডেস্কে এসে পৌঁছোলো তখন কালো তাং স্যুট পরা একজন লোককে দেখতে পেলো। সঙ্গে একটা ব্রিফ কেস আর একটা সাধারণ বেড়ানোর ব্যাগ। উচ্চতা মাঝারি, মোটা ঠোঁট, বড়ো নাক, কানগুলো ভ্রূর থেকেও উঁচুতে, মাথায় টাক পড়ছে।



শিন ছি তাঁর কাছে এগিয়ে গেলো, “ডেরেক?”

“শিন ছি কী?”

লোকটা হাত বাড়িয়ে দিয়ে শিন ছির হাতে ঝাঁকুনি দিলো, “নি হাও, আমি দেঁ চেন। এরিকের ফংইয়ো।”

পরস্পরের সঙ্গে আলাপ পরিচয় সারা হতে, তিনজনে এটাসেটা কথা বললো খানিকক্ষণ। হারিয়ে যাওয়া পাসপোর্ট আর আইডি কার্ডের জন্যই শিন ছি বেশি চিন্তায় পড়েছে। ও দুটো ছাড়া এক ইঞ্চি নড়া যাবে না কোত্থাও। দেঁ চেন কথা বললেন খুব কম, চুপ করে শুনলেন ওদের দুজনের থেকে লুঠের গল্প।

কোথায় হয়ে ছিলো আর কী করে সেখানে যাওয়া যায় এই দুটো ব্যাপার খুব খুঁটিয়ে জেনে নিলেন। তারপর খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে জানলেন ব্যাকপ্যাকের রং, চেহারা আর ওর মধ্যে কী ছিলো সেই সব।

“তোমার চোটের খবর?”

“চামড়া কেটেছে। খুব গুরুতর কিছু নয়।”

তিনি মাথা নাড়লেন। মনে হলো যেনো নিশ্চিন্ত হলেন। ব্রিফকেস থেকে দুটো আইফোন বার করে দুজনকে দিতে গেলেন, “এগুলো নতুন ফোন। নতুন নম্বরের সাথে ব্যবহার করতে পারবে।” 

মিন হুয়ে শিন ছির দিকে তাকালো, কথাটার উত্তর দেবার সাহস করলো না। শিন ছি শান্ত হয়ে ফোনদুটো নিয়ে একটা ফোন মিন হুয়ের হাতে দিলো। 

“আমরা লুঠের ব্যাপারটা পুলিশে জানিয়েছি এর মধ্যেই।” বললো, শিন ছি। 

“আচ্ছা। আমি সেটা দেখে নেবো।”

দেঁ চেন বললেন, “আমার ফোন নাম্বার আর উইচ্যাট অ্যাকাউন্ট মনে রেখো।”

তারপর পকেট থেকে একটা কার্ড বার করে শিন ছিকে দিলেন, “এটা ব্যাঙ্ক অফ চায়নার। ডেবিট কার্ড। আমি এটা তোমার গ্যগ্য-এর জন্য ব্যবহার করি যখন উনি বেজিং আসেন ব্যবসার কাজে। এটা ওঁর নামে। থাকে আমার কাছে। এতে টাকা আছে। তোমার গ্যগ্য তোমাকে পাসওয়ার্ড বলে দেবেন। নিয়ে নাও, ব্যবহার করো।”

“শিয়া শিয়া।”

“এখানে কাছে পিঠে অনেকগুলো সুন্দর জায়গা আছে। তোমরা বেড়িয়ে আসতে পারো। শিন ছি, মনে করে ওষুধ বদলে নিও। আমি এখন ব্যাগের খোঁজে যাবো। দুপুর পেরিয়ে তোমাদের সাথে দেখা হবে, কেমন?”

“ঠিক আছে।”

“আচ্ছা, আপনি যদি আঁয়া গ্রামে যান, তবে আমার হয়ে একটা বাইসাইকেল ফেরত দিয়ে দেবেন?”

মিন হুয়ের মনে পড়ে গেলো যে ও বাইসাইকেল ধার নিয়ে ছিলো এক চাষার পুত্রবধূর থেকে। সেটা তখনও ঘরে রয়েছে। আরো একশো য়ুআঁ বার করে আনলো। সেটা দেঁ চেনের হাতে দিয়ে জানতে চাইলো, “আরো একশো য়ুআঁ হবে কী?”

দেঁ চেন ফেরার পরে তার চেহারায় কোনো পরিবর্তন দেখা গেলো না। পিঠে তার একটা ব্যাকপ্যাক। সেটা একদম যেটা লুঠ হয়ে গিয়েছে সেটার মতো দেখতে।

শিন ছি আর মিন হুয়ে খুব অবাক হলো। শিন ছি জিজ্ঞেস করলো, “তুমি কী ব্যাগটা খুঁজে পেয়েছ?”

“হ্যাঁ।” দেঁ চেন ব্যাগটা ওদের হাতে তুলে দিলো, “আমি দেখেছি মিলিয়ে। সবই আছে ওর মধ্যে। ওরা বলেছে যে ওরা কিচ্ছু সরায় নি।”

দুজনে খুঁটিয়ে দেখলো ব্যাগের ভেতরটা। একদম ভেতরের সব বার করে, ব্যাগ উল্টে ঝেড়ে। সমস্ত কাগজপত্র আছে ঠিকঠাক। সব টাকাপয়সাও আছে। নিশ্চিন্তির শ্বাস ফেললো দুজনে, “তুমি ওদেরকে পেলে কী করে?”

দেঁ চেন হালকা হেসে বললো, “সে কথা তোমাদের জানার দরকার নেই।”

দুজনে অনেকক্ষণ ধরে দেঁ চেনকে ধন্যবাদ দিলো। দেঁ চেন জানতে চাইলেন, “এরপরে কোথায় যাচ্ছো তোমরা?”

“আমরা …” শিন ছি আর মিন হুয়ে মুখ চাওয়া-চাওয়ি করলো খানিক, “এখনো ঠিক করে উঠতে পারি নি।”

“তাহলে কবে রওয়ানা হচ্ছো?”

“আগামী কাল।” বললো মিন হুয়ে।

দেঁ চেনের দিকে তাকিয়ে ও দেখলো যে দেঁ চেন দেখছে শিন ছির দিকে, যেনো ওঁর কিছু বলার আছে শিন ছিকে। সেই জন্য ও চটপট বললো, “আমি ঘরে গিয়ে আমার জিনিসপত্র গুছিয়ে নেবো আগে।”

দেঁ চেন ঘাড় নেড়ে সম্মতি দিলেন।

মিন হুয়েকে চলে যেতে দেখে শিন ছির কাঁধে টোকা দিয়ে দেঁ চেন জানতে চাইলেন, “তোমার গ্যগ্য জানতে চাইছেন তোমার এখানকার কাজ কবে শেষ হবে? উনি আশা করছেন যে তুমি যতো শিগগির সম্ভব ততো শিগগির নিউ ইয়র্কে ফিরে যাবে।”

“আমি সু তিয়াঁকে এখনো একসাথে যাবার জন্য রাজি করাতে পারিনি।” শিন ছি বললো, “ও যেতে চাইছে না।”

“সু তিয়াঁ?”

দেঁ চেন শান্ত স্বরে জিজ্ঞেস করলেন, “এই কী সেই মেয়েটি যার কথা তোমার গ্যগ্য বলছিলেন …. যার সাথে দেখা করার জন্যই তুমি এসেছো?”

“হ্যাঁ, এখন ওর নাম মিন হুয়ে।”

দেঁ চেন ওর দিকে তাকালেন, দু সেকেন্ড চুপ করে থাকলেন। তারপর আবার জানতে চাইলেন, “তোমার কোনো ভুল হচ্ছে না তো?”

“হুঁ?”

“আমি জানি না সু তিয়াঁ কে। তবে এই মিন হুয়ে মোটেই সু তিয়াঁ নয়।”

~~~~~~~~~~~~

সম্পূর্ণ বই বিনামূল্যে : https://dl.bookfunnel.com/lcj5vznt96

Link to Previous Post in the Series : https://projectionofnaught.blogspot.com/2024/08/jpda-chapter-15.html

Link to following Post in the Series : https://projectionofnaught.blogspot.com/2024/08/jpda-chapter-17.html

Readers Loved