“খরচা কমান ভালো থাকুন”
সাতের দশকেই সমস্ত দোকানের পরিচালন ব্যবস্থা দক্ষ এবং দ্রুত করার জন্য ওয়ালমার্ট সাহায্য নিয়েছিল কম্পিউটারের। সেকালের সেই বৃহৎ যন্ত্রটার ছবিও রয়েছে মিউজিয়ামে। ছবি রয়েছে স্যাম ওয়ালটন ব্যবহৃত ছোট্টো এরোপ্লেনটির, কোম্পানি একশো বিলিয়ন ডলার রোজগার করার পর ওয়াল স্ট্রীটে স্যাম ওয়ালটন প্রতিশ্রুত হুলা নাচের। ছবি রয়েছে সাতাশটা আলাদা আলাদা দেশে ছড়িয়ে পড়া বিশাল সংস্থাটির নানান দেশে কর্মকান্ডের ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার, পরিবেশ সংরক্ষণ প্রয়াসের, সামাজিক দায়িত্ব পালনের।
কিন্তু উৎকর্ষের এই যাত্রা কিছুমাত্র মসৃণ ছিল না। ওয়ালমার্টের সংখ্যা সতের ছাড়াতে স্যামপত্নী হেলেন চেয়েছিলেন যেন দোকানের সংখ্যা আর না বাড়ে। কিন্তু ছিল আত্মীয়-বন্ধু ইত্যাদি লগ্নিকারদের তুষ্টি সাধনের আর ব্যাঙ্কের ধার শোধার দায়। একটা সময় অ্যারক্যানস, ওকলাহোমা, মিসৌরি আর টেক্সাসের উত্তরে ডালাস অবধি নানান ব্যাঙ্কে স্যাম ওয়ালটনের ব্যক্তিগত দেনা দাঁড়িয়েছিল আকাশছোঁয়া।
তার থেকে নিস্তার পান কোম্পানির শেয়ার বিক্রি করে। ফলে বাড়ে মুনাফা বাড়ানোর চাপ, দোকানের সংখ্যা বাড়ানোর চাপ। ফলে তিনি একটা পুরোন প্লেন কিনে ফেলেছিলেন, সারাদিনে অনেকগুলো দোকান যাতে ঘুরেফিরে দেখতে পারেন সে জন্য। আর তাছাড়াও সস্তা জমির খোঁজ করতে সুবিধে হবে বলে।
মুদি ব্যবসার প্রথম পাঁচ বছরেই খুব চড়া মূল্য দিয়ে ওয়ালটনরা জেনেছিলেন যে দোকানঘরের মালিকানা তাঁদের নিজেদের হওয়াটা জরুরি। তাই মফস্বলের ফাঁকা জমি দেখে সেখানে নিজেদের দোকান বানানো যাবে কিনা তার পরিকল্পনা করার জন্যই নিজের এয়ারপ্লেনকে যথাসম্ভব নিচু দিয়ে ওড়াতেন স্যাম। এভাবেই ওয়ালমার্ট ছড়িয়ে গিয়েছিল জনপদ থেকে জনপদে সস্তা দ্রব্য আর সন্তোষজনক পরিষেবার লক্ষ্য নিয়ে।
মিউজিয়ামে রাখা আছে বিভিন্ন সংবাদপত্রে নানা সময়ে প্রকাশিত ওয়ালমার্ট ও স্যাম ওয়ালটন সম্পর্কিত নানান খবরের সংগ্রহ। অধিকাংশ খবরেরই উপজীব্য হলো যে স্যাম ওয়ালটন ছিলেন মধ্যবিত্ত মার্কিনির আদর্শ ব্যক্তিত্ব। ওকলাহামার প্রত্যন্ত অঞ্চলে জন্মে, গভীর দক্ষিণের ফ্লোরিডা বা দক্ষিণের মিসৌরির নানা মফস্বল শহরে ঘুরে ঘুরে বেড়ে উঠে, মন্দার তিরিশের দশকের অভাব অনটন আর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আঁচ সয়ে, মুদির ব্যবসায় কোটিপতি হয়েছিলেন স্যাম ওয়ালটন ও তাঁর ওয়ালমার্ট। মার্কিন মফস্বলের স্বপ্ন সফল হয়েছিল। আবার কিছু সংবাদপত্রে যে নিন্দে করা হয়েছিল কোটিপতি ব্যবসায়ী নিজের দোকানের সস্তা জামা গায়ে দেন বা পাড়ার সেলুনে চুল কাটেন সস্তায়, স্পোর্টস কার নয় নিতান্ত সাধারণ মজুরের পিক আপ ট্রাক চড়েন বলে – সেসবও সাজিয়ে রাখা আছে মিউজিয়ামে।