Sunday, March 8, 2015

আবহমান নারীদিবস


সপ্তাহ শেষে দোল ছিল। ফলে দীর্ঘতর ছিল সপ্তাহান্ত। তার ওপর ঝেঁপে বৃষ্টি হয়েছে কদিন আগে। ফলে মঠ-ফুটকড়াই থেকে পিঁপড়ে ছাড়ানোর বাড়তি খাটনি জুটেছিল। বাড়তি খাটনি অবশ্য গায়ের রং তুলতে, মাথা ঘষতেও গেছে। ফলে সোমবার সকালেও সব্বাই বেশ ক্লান্ত। সাড়ে আটটার গ্যালপিং ধরতে এসে হাই তুলে চলেছে অনেকেই। ট্রেনটাও লেট করছে।
দ্যুতি এলো দুলতে দুলতে। কানে রেডিও মির্চি। যেমন থাকে সাধারণত। পায়ল দেখতে পায়নি দ্যুতিকে। পায়েলের বক্তব্য দেরি করতে থাকা ট্রেনকে পাত্তা দিলে আরও বেশি নাকি দেরি করবে ট্রেন। তাই ও ট্রেন আসার পথে না তাকিয়ে যাওয়ার পথে তাকিয়ে আছে। এতে নাকি ওর মনে হয় যে ও খানিকটা এগিয়ে আছে। তাতে সময় মতো আপিসে পৌঁছোনোর চাপটা নাকি কেটে যায়। দ্যুতি এলো ট্রেনের আসার দিক থেকেই, সব্বাই যেমন আসে, স্টেশনের গেট থেকে মার্কা করা মহিলা বগির এলাকায়। তাই সুযোগও পেল। আর পায়েলের পিঠে মারল একটা চাপড়। পায়ল চেঁচিয়ে উঠল, দ্যুতি! তুই মারলে বোধ হয় আমার মড়াও জেগে উঠবে। দ্যুতি মুচকি হেসে বলল, কতোদিনের প্র্যাকটিস, মড়া জাগবে না মানে!
বুলি কিছু একটা বলছিল। এ সময়ে এই এলাকায় কানাকানি, উত্তেজনা অনেক থাকে। রেপের নতুন রিপোর্ট থেকে বাজেটের বজ্রপাত সবই চটপটি হয়ে যায় মুখে মুখে। তবে এ চত্বরের খবরের ক্ষেত্র খবরের কাগজ আর চ্যানেলের বাইরেও ব্যাপ্ত। তাই দ্যুতি বলল, কী রে বুলি, হপ্তাখানেক বর্ধমানে কি করলি তোরা, কিছু বল? বুলি বলল, বিশেষ কিছু না। কাটোয়ার সরকারিদের একজনের নাকি শ্বশুর হাসপাতালে। তো তিনি মিস করে বর্ধমানে। সেখানেও তাঁর দুয়েকটি দলকর্মী জুটে গেল, দরজার সামনের দখল পেতে অসুবিধা হল না। আর মুন্নিদি ছুট্টে এসে উঠেছে যখন ট্রেনে, ট্রেন তখন স্পীড নিতে শুরু করেছে। তো, মাসিরা ঝুড়ি সরিয়ে ওকে একটু দম নেওয়ার জায়গা করে দিয়েছে। ট্রেন সবে প্ল্যাটফর্ম ছেড়েছে কি ছাড়েনি সরকারীরা মুন্নি দিকে বলে, তোকে বলেছি না, তুই জেনারেলে যাবি। এখানে উঠবি না। মুন্নিদির একে দৌড় গেছে। তায় বাজে কথা শুনে মাথাটাও গরম হয়ে গেছে। তবু কিছু বলে নি। তাতে সরকারি দল আরও পেয়ে বসে। বলে, এরপর তোকে দেখলে এখানে ঠেলে ফেলে দেব। ব্যস, মুন্নি দিও বলে, আয় না দেখি, গায়ে কতো জোর দেখা যাবে। বাপের উঠোন নাকি তোর- তো মুন্নিদি শেষ করার আগেই, উল্টোদিকের গেটে দাঁড়িয়ে হাওয়া-খাওয়া পলাদি সিটি দিয়ে ও কে থামিয়ে দেয়। তারপর ভিতরে এসে বলে, ওরে তোর গায়ে লেবু গন্ধ। ওদের সজ্জ্য হবে নি। ইদিকে আয়। ওদের বয়স হচ্ছে, ওরা পারে নে। তবু দেখলেই গলে যায়, সামলাতেও পারে নে। কেন যাস ওদিকে, ওদের কষ্ট দিতে? ইদিকে আয়। একসাথে হাওয়া খেতে খেতে যাব। তাতে সরকারীরা হামলে পড়ে পলাদির ওপর। লেবু গন্ধ মানে? ওকে দেখতে মেয়েদের মতো হলে কি, ওর কায়দাবাজি তো- পলাদি আবার সিটি মেরে ওদের থামিয়ে দেয়। আর জুড়ে দেয়, ও বুড়ি, জানো না তো শিখে লাও, লেবু হলো লেস্‌বিয়ানের ডাক নাম। এরা বলে, কী! আমরা জানি না? পুলিশ ডাকব, জানিস। নিজের ঘরে যা করিস করিস, তাবলে ট্রেনে বাসে- পলা দি থামিয়ে দেয়, উফ্‌! তোমার ঘরে কি তোমার ঝগড়াটে মুখটা কিংবা উঁচিয়ে থাকা বুকটা তুমি রেখে আসতে পারো?-
সীমন্তিকা কখন এসেছে কেউ খেয়াল করে নি। পলার জবাব শুনে বুলির শ্রোতারা সবাই সমস্বরে উ-উ-উ-উ বলে তালি বাজাচ্ছিল যখন, তখন সীমন্তিকা চেঁচিয়ে উঠল, এই মেয়েগুলো গাড়ি ঢুকছে। বাকিটা আবার একসাথে জড়ো হয়ে শোনা যাবে। বর্ধমানের প্যাসেঞ্জারগুলোও আজ এখানে ভিড়বে। যেখানে পারিস ওঠ আগে। বুলি তবু একনিঃশ্বাসে বলে ফেলল, তখন এরা মুখ সামলে-টামলে বলে চীৎকার শুরু করল। আর একটা মাসি উঠে ওদের একপিসের মাথায় খালি ঝুড়ি পরিয়ে দিয়েছে। তারপর মাসিদের সাথে ওদের বাধে। হাওড়া নামার সময় কোন মাসি নাকি মাথায় মাথা ঠুকে উকুন চষে দিয়েছে একজনের মাথায়।
দ্যুতি বোধ হয় বলছিল, এক্কেবারে যা-তা কেস। কিন্তু ট্রেন ঢুকে পড়ায় আর কিচ্ছু শোনা গেল না।  ট্রেনে উঠে দ্যুতি সুচেতা্কে খুঁজতে লাগল। ফেরার সময় কখনোই সুচেতার সাথে দ্যুতির দেখা হয় না, যদি না সন্ধের শোয়ে সিনেমা দেখে বাড়ি ফেরার ব্যাপার থাকে। কিন্তু সে তো আট-ঘাট বেধে, একসাথে ফেরার ব্যবস্থা করা। অনেকদিন সেসব ফুর্তি বাকি পড়ে গেছে। আজ সুচেতাকে দেখেছে দ্যুতি, ট্রেন আসার আগে। বুলির গল্প শুনছিল, তাই সুচেতার সাথে তখন কথা বলা হয় নি দ্যুতির। এ সপ্তাহে একটা কিছু করতেই হবে।
সুচেতা ছিল এক্কেবারে সামনে। সরকারী দলের জটলার পাশ কাটিয়ে একটা জায়গা বার করে সিটের পিঠে পিঠ ঠেকিয়ে খবরের কাগজ গোছাচ্ছিল। ঝগড়ার আওয়াজে মুখ তুলে দেখে যে অরুন্ধতির দুটো পায়েরই পাতার আধখানা করে তখনও ঝুলছে দরজার বাইরে। ট্রেন প্ল্যাটফর্ম ছেড়ে দৌড় শুরু করেছে। আর এক ফর্সা বেঁটে গোলগাল মহিলা অরুন্ধতিকে তড়পে চলেছে, কিছুতেই ওকে ভিতরে আসতে দেবে না। অরুন্ধতিও বেশ করেছি, বেশ করেছি করে চেঁচিয়ে চলেছে। অরুন্ধতি সুচেতার মুখ-চেনা, বন্ধু নয়। সুচেতা তাও চেঁচিয়ে বলল, এই অরুন্ধতি, এদিকে। ব্যাগ দে, আসতে আসতে ভেতরে ঢোকার চেষ্টা কর। অরুন্ধতি ওর দুটো ব্যাগই সুচেতাকে দিয়ে দিল। ফর্সা বেঁটে গোলগাল মহিলা সরকারী দলের দিকে ফিরে নালিশ করতে গেল। সেই ফাঁকে অরুন্ধতি গলে এলো সুচেতার কাছে, আর চেঁচাতে লাগল, জানো, আমায় চড় মেরেছে? আমিও মেরেছি ঘুরিয়ে। অভদ্র কোথাকার, এদের মায়ে কিছুই শেখায় নি- সুচেতা থামিয়ে দিল অরুন্ধতিকে, সারাদিন আপিস করতে হবে। সব এনার্জি এখানেই খতম করে ফেলিস না। যা ভেতরে যা সিটের মধ্যে দাঁড়া। জল খা। হাওয়া খা। সিটে যে মেয়েগুলো বসেছিল, তাদেরকে ডেকে সুচেতা বলল, ওকে একটু দাঁড়াতে দিন না,  প্লিজ। একটা মেয়ে আবার হাত বাড়িয়ে সুচেতার থেকে অরুন্ধতির ব্যাগ দুটো নিয়ে বাঙ্কে তুলে দিল। আরেকটা মেয়ে অরুন্ধতিকে বলল, জল খাও। তারপর বলল, বসবে একটু? অরুন্ধতি একটু অপ্রস্তুত হলো। বলল, ধন্যবাদ। না বসতে লাগবে না। সব ঠিক আছে।
সুচেতার হাতের খবরের কাগজে টান পড়তে সুচেতা দেখে যে দ্যুতি। সুচেতা কাগজটা ভাঁজ করতে লাগল আর দ্যুতি বলল, বাহ্‌, তোমার পাঞ্চালী আজও আপিসে ডুব সুচেতা বেশ অবাক হয়ে বলল, হ্যাঁ ওর কাল ফেরার কথা ছিল, কিন্তু তুই জানলি কী করে যে ও আপিসে ডুব দিচ্ছে আজ? দ্যুতি বলল, আরে স্টেশনে ঢুকতে গিয়ে দেখি সে বেরোচ্ছে স্টেশন থেকে। আমাকে দেখে বলল, তোরা এলি না তো, জানিস  না কী পেলি না। আসছে বছর আবার যাবো। রং মেখে টোটাল ভুত হয়ে আছে এখনও। সুচেতা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, আসছে বছরও হবে না, যদি না এ বছর চাকরিটা বদলাই। ও এই নিয়ে তিন বছর দোলে বোলপুরে গেল। এখন আবার দোল বলে না। বলে বসন্তোৎসব। সুচেতা হাসতে লাগল, দ্যুতি জিজ্ঞেস করল, কাল কখন ফিরলি রে? সুচেতা হাসি থামিয়ে বলল, আর বলিস না। এই মন্ত্রী-এমপিগুলো আর এদের মোসাহেবগুলো... উফ্‌ফ্‌। মনিটর লিজার্ডটাকে এমন মেরেছে যে ওটার শিড়দাঁড়া ভেঙে গেছে। কাল ওটাকে রেস্কিউ করে, ভেট দেখিয়ে, ফিরতে ফিরতে সন্ধে হয়ে গেল। তারপর বলল, কিন্তু পাঞ্চালি এদিকে কী করছে? ও তো ব্যান্ডেলে নেমে হালিশহর চলে যেতে পারত? দ্যুতি বলল, ওদের ট্রেন নাকি ব্যান্ডেলে ধরে নি। আজ আপিস যাওয়া হবেই না দেখে ওরা এখান থেকে আর ব্যান্ডেল না গিয়ে লঞ্চে- অরুন্ধতি সুচেতাকে ডাকায় দ্যুতি থেমে গেল। অরুন্ধতি কাগজটা চাইল। কাগজটা ওকে দিতে গিয়ে সুচেতা দেখল সরকারি দলের মোসাহেব সুকন্যাদি জ্বলন্ত চোখে ওদের দেখছে, অরুন্ধতির পাশে দাঁড়িয়ে।
কাগজ লেনদেনের পরে সুকন্যাদি হাঁচড়-পাঁচড় করে এসে সুচেতার কাঁধ ধরে বলল, শোনো ওকে বলো ক্ষমা চাইতে। সুচেতা বলল, না। সুকন্যা দি আরেকটু গলা তুলে বলল, তোমরা ওর বন্ধু তাই বলছিলাম। ও কাজটা ঠিক করে নি। জানো ও কাকে মেরেছে? সুচেতা জবাব দিল, আরেকটা প্যাসেঞ্জারকে। সুকন্যা একটু থতমত খেল, জানো উনি কে? এবার সুচেতা গলা তুলল, আরেকজন প্যাসেঞ্জার। টিকিট কেটে বা না কেটে ট্রেনে যখন উঠেছেন তখন এটাই পরিচয়, তা বাদে যা আছে সেটা জানার কোনো দরকার নেই আমার। আর এসব সিংহের মামা নরহরি দাস সাজার ওপরচালাকি দেখার সাধ আপনার থাকলে আপনি দেখুন আমাকে দেখাতে আসবেন না। সব্বাই কোথাও না কোথাও চাকরি করি। সেখানে বসার একটা চেয়ার সবার আছে। সেটার নামও আছে। কিন্তু সেই চেয়ারটা আমরা আপিসেই রেখে আসি। পেছনে এঁটে ঘুরে বেড়াই না। আর অযথা গায়ে পড়ে প্রাপ্তবয়স্ক সহযাত্রীকে কিছু শেখানোর অভদ্রতাও করবেন না। চড়ও মারবেন না। এরপর দেখলে পুলিশে রিপোর্ট করব। প্রথমে হাফ-মাইনের সাসপেন্সন হবে, তারপর অভিযোগ প্রমাণ হলে চাকরি যাবে। আপনি জানেন না। যাদের তাঁবেদারি করছেন তারাও জানে না বলেই মনে হচ্ছে। জেনে রাখুন, সরকারী চাকরির এটাই নিয়ম। আর কিছু শেখার দরকার থাকলে বলবেন। ইস্কুল খুলে ফি নিয়ে শেখাব, ফোকটে নয়। আর পেশাগত শিক্ষক বলে ট্রেনের বগিটাকে ক্লাসরুম মনে করবেন না। শেখাবার জন্য যেখানে মাইনে পান সেখানে গিয়ে কাজটা ঠিক করে করুন। সেখানে ফাঁকি মেরে যেখানে সেখানে ওস্তাদি দেখাবেন না। এবার যান। সুকন্যার মুখটা বেপাড়ায় কামড় খাওয়া কুকুরের মতো হয়ে গেল। সরসর করে সেঁদিয়ে গেল সরকারি দলের বৃত্তে।
দ্যুতি বলল, কি করে বললি, তুই? সুচেতা বলল, সেই কলেজের দিনগুলো থেকে দেখছি। বিকেলের ট্রেনে ওদের পান্ডা সক্কলকে সিট থেকে তুলে দিয়ে বসে। মস্তানি! দ্যুতি বলল, যা হোক তুই সরকারি অফিসার বলে দাবড়াতে পারলি। না হলে ওদের তো ওটাই গরম দেখানোর কারণ- সুচেতা ভ্রু কুঁচকে বলল, কেন গরমের কী আছে এতে? অরুন্ধতি টেলিমার্কেটিং-এ পঁচিশ বছর বয়সে যা রোজগার করে ওদের পান্ডাও তা পায় না। করে তো স্পন্সরড ইস্কুলে চাকরি, তাও বিএ-পাস-কোর্স, সেলাই দিদিমণি। বাপের খুঁটি ছিল তাই-। আর সুকন্যা? ও তো কো-অপরেটিভে কাজ করে। তাও ওর বর মরে গেছে বলে সেই জায়গায়। সরকারী কাজই নয়। গভর্নিং পার্টি ধরে কাজ জোটালেই গভরমেন্টের কাজ হয়ে যায় নাকি!
মুনিরা মুখ ঝামটা দিল, এসব বন্ধ কর দেখি। কিরে এনেছিস? বলে দ্যুতিকে কনুই দিয়ে খোঁচা মারল। দ্যুতি বলল, আনা যায় নাকি? তোকে বললাম তো আমার সাথে চল, আউটডোরে ঝুলিয়ে রেখেছি। দেখে শুনে মেপে নিবি। সুচেতা বলল, ও একলা গেলে হবে? ওর বয়ফ্রেন্ডকেও নিয়ে যেতে হবে না? কিন্তু ছদ্মগাম্ভীর্য রাখতে পারল না। হিহি করে তরল হাসতে লাগল। দ্যুতি বলল, তোদের কাউন্সেলিং দরকার। বিনিপয়সায় পেতে হলে সরকারি হাসপাতালের আউটডোরে আসিস। আর শনিবার বাড়িতে গেলে পয়সা লাগবে। মুনিরা বলল, না বয়ফ্রেন্ডকে লাগবে না। ও যখন ঘুমোবে তখন মেপে নেব। দ্যুতি বলল, কী আপদ! তুই কী সিরিয়াস? কোনো ডিফরমিটি আছে? তাহলে চিকিৎসা করা, নাহলে ব্যাপারটা বেশ হিউমিলিয়েটিং। মুনিরা বলল, নাহ্‌, কৌতুহল, কেমন হওয়া উচিৎ, আর বাস্তবে কেমন। দ্যুতি বলল, ওটা একটা মডেল এবং মোটেই স্কেল মোতাবেক কিছু নয়, রিয়েল কিছুর রেপ্লিকাও নয়। শুধু যৌনজীবন নিয়ে আলোচনার জড়তা কাটাতে, যৌনবোধে স্বচ্ছতা আনতে ডিলডোটা আউটডোরে ডিসপ্লে করা নিয়ম। কিন্তু তোর ব্যাপার দেখে মনে হচ্ছে, তোকে স্টাডি করা উচিৎ, মুনিরা।
এই সময় মুনিরার জ্যাঠতুতো বোন বুসরা এসে সুচেতাকে বলল, তোমাদের আসামী তো ইন্টেরিম বেইল পেয়ে গেছে। তবে তোমাদের প্রসিকিউটর বলছিল যে বডি ওয়ারান্ট করবে। একবার কথা বলে নিও। বুসরা ওকালতি করে। সুচেতার সাথে কোর্ট চত্বরে দেখা হওয়ার পর থেকে এরকম টুকটাক খবরাখবর দেওয়া নেওয়া চলেই। সুচেতার সুবিধেই হয়। নানান কাজের মধ্যে শুনানীর দিন ছাড়া ওর কোর্টে যাওয়া হয় না ক্রিমিনাল কেসের তদ্বির করতে।
আবার এলো সুকন্যা। বলল, তুমি মানিকদার ভাগনি তো? সুচেতা যেন মুখে নিম নিয়ে বসে আছে, থু থু করে ছেটাবে বলে, তোমার চাকরিটার মতো আমার চাকরিটা মানিক মিত্তির করে দেয় নি গো। পিএসসির ওয়েবসাইট খুলে দেখো নিয়ে আমি সিলেকসনে থার্ড হয়েছিলাম। আমার পুরো-, আধা-, বড়ো-, মেজো কাউকে তেল দিতে লাগে না। যাও। এবার দ্যুতি বলল, তাই তুই ওর সব কথা জানিস? সুচেতা বলল, জানতাম না। বছর দশেক আগে ওর সাথে সেজমামার বন্ধু মিহিরমামার বিয়ের কথা হয়েছিল। তা ও কবতে পড়ে না বলে মিহিরমামা ওকে বাতিল করে দেয়। মুনিরা জিজ্ঞেস করল, মিহির মামা কি কবি না তার বউ কবি? সুচেতা প্রথমে হা হা করে হাসল; তারপর বলল, মিহিরমামা পেশাদার রাজনীতিক। আর তার বউ কন্ট্র্যাক্ট কিলার। দ্যুতি বলল, যাহ্‌, কি যে গল্প দিস! সুচেতা চোখ পাকিয়ে বলল, ওরা আমার জুরিডিকশনে করে খায় হে। মামা-মামির কারবারটা জেনেছি বসের ব্রিফিং থেকে। সে ছিটেল আবার জানে না এরা আমার চেনা লোক। দ্যুতি বলল, কিন্তু অরুন্ধতিকে অনেকেই সহ্য করতে পারে না জানিস? ও ডিভোর্সি বলে। মুনিরা বলল, আমাকেও পারে না। সুচেতা বলল, কেন তুই মুসলমান বলে? মুনিরা বলল, না, আমার প্রেমিক বাঙালি বলে। তারপরেই খুব সিরিয়াস মুখ করে বলল, এই সুচেতা, তুই এসব বুসরাকে বলবি না একদম। ও জানলে বাড়িতে অশান্তি হবে। দ্যুতি বলল, তোরা তো ত্রিপুরা চলে যাচ্ছিস- মুনিরা বলল, এটাও চাউর করিস না। আমার ট্র্যান্সফ্যার পেয়ে গেছি। ওদিকে ব্রাঞ্চে লোক কম, ব্যবসাও কম। তাই ওদিকে ট্র্যান্সফার চাইতে ম্যানেজমেন্ট হেব্বি খুশি হয়েছে, যদিও প্রাইভেট ব্যাঙ্ক।
ট্রেন হাওড়ায় ঢুকে পড়েছে। অরুন্ধতি খবরের কাগজটা হাত বাড়িয়ে ফেরত দিল সুচেতাকে। যে যার মতো, পার্ক্সট্রিট, ডালহৌসি, এসপ্ল্যানেড, শিয়ালদা, বালিগঞ্জ, বেহালা, আলিপুর, সল্টলেকের দিকে দৌড়োলো। বাসে সুচেতার পাশে বসল মধুপর্ণা। বলল, আমি সফ্‌টওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার শুনে ববচুল মুখ বাঁকিয়ে বলেছে, , প্রাইভেট। আমি অবশ্য শোধরানোর চেষ্টায় বলেছিলাম, এমএনসি। তা বোঝে নি বোধ হয়। সুচেতা হাসল মুচকি। বাস দৌড়োলেই ঘুমোবে দুজনে।  প্রায় ঘন্টা দেড়েকের রাস্তা। হাতের কাগজটা ভাঁজ করে ব্যাগে ঢোকাতে গিয়ে দেখল কোণে কেউ লিখে দিয়েছে,
সহনীয়া সই
সখ্যতা মেপে রেখে
দলে বলে রই
আন্তর্জাতিক নারীদিবসের শুভেচ্ছা।

Readers Loved