এক শনিবার দুপুরে ইস্কুলের প্রজেক্ট নিয়ে মশগুল এডউইন। অ্যান্থনিদের বাড়ি থেকে ভেসে আসছে লাতিনো গান। সে সময় আবার হেলিকপ্টারের ঘড়ঘড়ানিতে কালা হওয়ার দাখিল হলো সবার। সব্বার।
অ্যাশলি তিড়িং বিড়িং লাফাতে লাফাতে ভেরোনিকাকে বলল, “মা-আ! শুনতে পাচ্ছ? মা-গো এটার আওয়াজে আমার কেমন ভয় করে! কেন? তোমার ভয় করে কি? নাটালি বলেছে ওর ভয় করে না...... নাটালি, নাটালি-ই”
নাটালিকে ডাকতে ডাকতে অ্যাশলি ঢুকে পড়ল নাটালির ঘরে। রাতে এই ঘরেই সে আর নাটালি ঘুমোয় দুটো সরু খাটে। প্রিসিলা এলে অ্যাশলিকে মায়ের সাথে ঘুমোতে হবে মায়ের বড়ো খাটে, এমনটাই ভেরোনিকা বলেছেন।
এমন সময় দৈববাণির মতো ভেসে এলো, “বেঞ্জামিন মাইলস তুমি আত্মসমর্পণ করো।”
নাটালি অ্যাশলির দিকে তাকায় চোখ গোল গোল করে। আর অ্যাশলি দৌড়ে বসার ঘরে চলে আসে, তার লাগোয়া খাবার টেবিলে বসে ভেরোনিকা নিজের পড়াশোনা, হিসেব, ফর্দ এসব দেখছিলেন। আর সে চেঁচাতে থাকে, “মা-আ, শুনছো-ও, ও মা আমার ভয় করছে কেন, কেন মনে হচ্ছে কিছু একটা হবে, সাংঘাতিক মতো!”
ততক্ষণে এডউইন ছুটে বেরিয়ে গেছে বারান্দায়। হাতের মোবাইল ফোনে রেকর্ড করে নিচ্ছে ছাদের কিছু ওপর দিয়ে ঘুরপাক খেতে থাকা হেলিকপ্টারটাকে। রেকর্ড করে নিচ্ছে গমগমে ঘোষণা, “বেঞ্জামিন মাইলস তুমি আত্মসমর্পণ করো। আমাদের অফিসাররা সশস্ত্র। তুমি পালানোর চেষ্টা করলেই তোমাকে দেখা মাত্র গুলি করা হবে।”
তাই দেখে অ্যাশলি আশ্বস্ত হলো। কিন্তু এতক্ষণে উত্তেজনা পেয়ে বসেছে ভেরোনিকাকেও। তিনি টেবিল ছেড়ে ছুট্টে গেলেন এডউইনের পাশে। এডউইনকে বললেন, “ভালো করে ভিডিও করে রাখো। এরকম জিনিস চট করে দেখতে পাওয়া যায় না। পরে কাজে লাগতে পারে, প্রজেক্টে বা প্রেজেনটেশনে।”
কিন্তু এডউইন মায়ের সব কথাটা শুনতে পেল না কারণ তখন আবার হেলিকপ্টার থেকে গমগম করে ভেসে আসছিল ফেরারের প্রতি নির্দেশ , “বেঞ্জামিন মাইলস তুমি আত্মসমর্পণ করো। আমদের শিকারী কুকুর তোমাকে খুঁজছে।”
এই চক্কর আর ঘোষণা চলল প্রায় আধ ঘন্টাটাক। উল্টোদিকের বারান্দাতে গোল ভুঁড়িওয়ালা ভারতীয় লোকটাও ক্যামেরা হাতে দাঁড়িয়ে । তার সঙ্গিনী জানলা দিয়ে হাত নাড়ল এডউইনের বারান্দার নিচে থাকা কাউকে। ওখানে অবশ্য আরেকটা ভারতীয় পরিবার থাকে।
তার পাশের বারান্দায় হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে আছে ম্যাট বা ম্যাথিউ। ম্যাটের চোখ মুখে একটাই ভাব, “যাচ্চলে, এ কোথায় এসে পড়লাম!”
হেলিকপ্টারটা যেমন হঠাৎ এসেছিল, তেমনই হঠাৎ চলে গেল। তাই ভিডিও করা বন্ধ করে এডউইন আর ভেরোনিকা ঢুকে পড়ল বসার ঘরে। এডউইন ভিডিওটা নিয়ে উত্তেজিত হয়ে নাটালির ঘরে ঢুকে বলল, “ন্যাট, এই দেখ কী জিনিস বাগিয়েছি!”
নাটালি কোনো উত্তর দিল না। নিজের খাতা বইতে যেমন মুখ গুঁজে ছিল, তেমনই রইল। কিন্তু কৌতুহলে অ্যাশলি অস্থির হয়ে গেল। সে এডউইনকে বলল, “এড, আমাকে দেখাও না, প্লিজ।”
এডউইন অ্যাশলিকে ভিডিওটা দেখাতে শুরু করল। দেখতে দেখতে অ্যাশলি কেবল কেবল উত্তেজিত হয়ে বলে উঠতে লাগল, “আররে সেদিনও এরকম হয়েছিল...। এসবই বলছিল... আমি তো বুঝতে পারছিলাম না...। ন্যাট আমাকে ফিস ফিস করে বলে দিয়েছিল......”
এবার এডউইনের মনে পড়ল যে আগেও অ্যাশলি বলেছিল এরকম একটা ঘটনার কথা বটে। সেদিন সে নাটালিকে যা নয় তাই বলেছিল। মনে পড়তেই সে নাটালির মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলতে লাগল, “আয়াম সরি, ন্যাট। ফরগিভ মি। আয়াম আ ফুউল দ্যাট আই ডিডন্ট বিলিভ ইউ... প্লিজ।”
ততক্ষণে ভেরোনিকারও মনে পড়ে গেছে যে মেয়েরা বলেছিল তাঁকে এরকম কিছু হয়েছিল বলে। তিনি চকোলেটের বাক্স নিয়ে ঘরে ঢুকলেন। তিনজনকে চকোলেট দিলেন আর বললেন, “এড, ভিডিওটা ন্যাট আর প্রিসিলার সাথে শেয়ার কোরো যাতে দরকারে ওরাও এটা ব্যবহার করতে পারে। আমাকেও দিও হোয়াট্স অ্যাপে। আমি টেরেসাকে আর মিগেইলকে দেখাব।”
এরপর ভেরোনিকা যেদিন গেলেন মিগেইলের সাথে দেখা করতে, সেদিন ভিডিওটা তিনি দেখালেন মিগেইলকে। মিগেইল সেটা দেখে গম্ভীর হয়ে গেলেন। থমথমে গলায় ভেরোনিকাকে বললেন, “আমার ভুলে বাচ্চাদের কোথায় এনে ফেলেছি!”
এরপর দুজনেই মনের দুঃখে খানিকক্ষণ চুপ করে বসে রইলেন।
বাড়ি ফিরে সেকথা ভেরোনিকা বলেও ফেললেন ছেলেমেয়েদের। তবে সে দুঃখ সক্কলকে খুব একটা গ্রাস করতে পারল না। কারণ খবর পাওয়া গেল যে প্রিসিলা দারুণ গ্রেড পেয়ে হাইস্কুল পাশ করেছে। সে সিট্রাস কলেজে ক্লাস শুরু করবে। বায়োলজি আর কেমিস্ট্রি হবে তার ডাবল মেজর। দু বছর পরে সে কলেজ থেকে গ্র্যাজুয়েসন করলেই তার কলেজ গ্রেড ট্রান্সফার হয়ে যাবে ইউনিভার্সিটিতে, তার নার্সিং ব্যাচেলর ডিগ্রি কোর্সে।
আরও ভালো খবর হলো যে প্রিসিলা কাজও পেয়েছে তার কলেজ-ইউনিভার্সিটির পাড়াতে, চিক-ফিল-আ নামে একটা রেস্টুরেন্ট চেন-এ। শুধু প্রিসিলা নয়, ভেরোনিকার কোর্সও প্রায় শেষ পর্যায়ে পৌঁছেছিল। খুব স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে যে আসছে গ্রীষ্মে তিনিও ডিগ্রিটা পেয়ে যাবেন। চেষ্টা করলে হয়তো, বার কাউন্সিলের মেম্বারশিপের পরীক্ষাটাও পাশ করে যাবেন।~~~~~~~~~~~~~