ক্যালিফর্নিয়ার মজুমদার গলি – ধুলোচাপা ইতিহাসের পথ
লগ কেবিন থেকে উত্তর-পুবে নেমে যাওয়া ঢালু পথের শেষে দাঁড়িয়ে আছে টেম্পল অফ ক্রাইস্ট। ঝকঝকে নীল আকাশের নিচে, ধবধবে সাদা গম্বুজ আর চার কোণায় উঁচিয়ে থাকা চারটে সাদা মিনার নিয়ে। লাল রঙের সিঁড়ি উঠে গেছে মন্দির চত্বরের লাল মেঝেতে। গর্ভগৃহের চারপাশ দিয়ে ঘেরা বারান্দায় সাদা জাফরির কাজ আর লাল মেঝে। গর্ভগৃহের দর্শনের জন্য গর্ভগৃহের ফটকের দু দিকের দেওয়ালের সাথে লম্বভাবে থাকা দুই দেওয়ালে রয়েছে একটা করে কুলুঙ্গি, যেমন দেখা যায় বিষ্ণুপুরের মন্দিরগুলোতে। কুলুঙ্গি দিয়ে উঁকি মেরে দেখা গিয়েছিল যে ভিতরে রয়েছে মঞ্চ, মেঝতে একটার উপর একটা করে চাপানো অগুণতি চেয়ার, একটা ঘোরানো সিঁড়ি যা উঠে গেছে গম্বুজের ঠিক নীচের ঝুল বারান্দাতে। একটার ওপর একটা চেয়ার চাপিয়ে জড়ো করে রাখা আছে বারান্দার এক কোণেও। উত্তর আর পুব দিকের বারান্দা থেকে পাইন বনের ফাঁক দিয়ে দূরে দেখা যায় সিলভারউড লেক ।
টেম্পল অফ ক্রাইস্টের গঠন হিন্দু মন্দিরের মতো হলেও স্থাপত্যে স্পষ্ট ইসলামিয়ানা। আবার গর্ভগৃহের মতো জায়গাটার ভেতরটা খ্রীষ্টান চার্চের মতো ব্যাসিলিকা আর আইলের ধাঁচে গড়া। অক্ষয় কুমার মজুমদার শুধু দর্শনে বা বচনে ধর্মসমন্বয় সাধক ছিলেন না, মননেও ছিলেন। না হলে তাঁর ভক্ত শিষ্য বন্ধু স্যান দিয়েগোর স্থপতি উইলিয়াম পি লজ এমন একটা স্থাপত্য নির্মাণ করলেন কী করে!
ভারতবর্ষ অক্ষয় কুমার মজুমদারের কথা মনে রাখে নি? নাকি সচেতন ভাবে উদাসীন অক্ষয় কুমার মজুমদার প্রসঙ্গে? উভয় প্রশ্নেরই পরের প্রশ্ন কেন? তিনি খাঁটি হিন্দু ধর্মের শ্রেষ্ঠত্ব জাহির করে জগৎ সংসারকে হিন্দু ধর্মে ব্রতী করেন নি বলে? নাকি তিনি পাশ্চাত্যের ধর্মমানসের মধ্যে সূক্ষভাবে রোপণ করেছিলেন হিন্দু অধ্যাত্মাচারণের বীজ সেকথা ভারতবর্ষ বুঝতে পারেনি? নাকি অক্ষয় কুমারের খোলাখুলি ব্যবহারের মধ্যে খ্রীষ্টধর্মের সোচ্চার প্রচার তাঁকে স্বজাতিদের মধ্যে অপ্রিয় করেছে? নাকি তাঁর জন্মভূমি ছেড়ে কর্মভূমিকে মাতৃভূমির মর্যাদা দেওয়ার মরিয়া চেষ্টাটা ভারতবর্ষকে অভিমানী করেছে?