Showing posts with label Emigration from India Immigration to the United States. Show all posts
Showing posts with label Emigration from India Immigration to the United States. Show all posts

Tuesday, June 10, 2025

ICD - 5

সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন এবং ……… 

২০১৯-এর নাগরিকত্ব আইন সংশোধনী ধর্মনিরপেক্ষতার বিচারে অসাংবিধানিক কিনা সেটা কেবলমাত্র সুপ্রিম কোর্ট নির্ধারণ করতে পারে। তবে বাংলাদেশের গবেষকের গবেষণাপত্রে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্টের রাষ্ট্রীয় প্রতিবেদনে, পাকিস্তানের স্বদেশত্যাগী অভিবাসীদের সংগঠনের মুখপত্রে এবং রাষ্ট্রসংঘের প্রতিবেদনে উল্লেখ আছে ভারতের প্রতিবেশী শরিয়া রাষ্ট্রগুলিতে (আফগানিস্তানে, পাকিস্তানে, বাংলাদেশে) কিভাবে অমুসলিম মানুষদের স্থাবরাস্থাবর সম্পত্তি ছিনিয়ে নেওয়া হয় রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার মধ্যে দিয়ে আইনসভায় আইন প্রণয়ন করে, বিচারব্যবস্থার রায়ে, কার্যনির্বাহী দপ্তরের উদ্যোগ ও তৎপরতায়। 

সেই হিসেবে ২০১৯-এর নাগরিকত্ব আইন সংশোধনী প্রতিবেশী শরিয়া কিংবা ইসলামিক রাষ্ট্র থেকে ভারতে এসে পড়া অমুসলিম মানুষদের আইনি পদ্ধতিতে নাগরিকত্ব দেওয়ার সুযোগ তৈরি করে ২০০৩, ২০০৪ -এর সংশোধনে বাধা বেআইনি অনুপ্রবেশের সংজ্ঞার পরিসরকে সংকুচিত করেছে। কিন্তু এই সংজ্ঞার সীমার বাইরে রয়ে গেছেন আহ্‌মদিয়া গোষ্ঠীর মুসলিমরা। তাই ২০১৯-এর নাগরিকত্ব আইনের সংশোধনীটিতে মুসলিমবিরোধী প্রবণতা প্রকাশ হচ্ছে বলে কেউ কেউ মনে করেছেন। এই যুক্তিতে নাগরিকত্ব আইনের ২০১৯এর সংশোধনীটি ইহুদীবিরোধী, বাহাইবিরোধী, সায়েন্টোলজিবিরোধী, তাওবিরোধী, কনফুসিয়াসিজমবিরোধী, শিন্তোবিরোধীও বটে।

তাছাড়া আহমদীয়রা শরিয়ৎ অনুসরণ করেই জীবন যাপণ করেন যদিও তাঁরা মাহ্‌দি মানে মহম্মদ পরবর্তী পয়গম্বরের উপাসনা করে সুন্নী সমাজে ব্রাত্য। শরিয়ৎ মেনে চলা আহমদীয় মানুষদের শরিয়া রাষ্ট্রব্যবস্থা থেকে বাঁচানোর চেষ্টাটা সেই মানুষের ব্যক্তিস্বাধীনতার পরিপন্থীও বটে। আবার সেই চেষ্টাটা জলের মাছকে ডাঙায় তুলে বাঁচানোর চেষ্টা করার করার মতো অবাস্তবিকও বটে।

কেউ কেউ সন্দেহ প্রকাশ করেছেন যে ২০১৯-এর নাগরিকত্ব আইন সংশোধনী সংবিধানের ধারা ১৪-এর প্রতিশ্রুত সাম্যের অধিকার অবমাননা করেছে হিন্দু, বৌদ্ধ, শিখ, জৈন, পার্সি আর ক্রিশ্চানদের একদলে করে। ধর্মনিরপেক্ষতার প্রসঙ্গেই দেখা গেছে যে, সংবিধানের ধারা ২৫-এ হিন্দু, বৌদ্ধ, জৈন শিখদের একত্র করা হয়েছিল। তাছাড়া সংবিধানেই বলা আছে যে এই জাতীয় শ্রেণীবিন্যাস তৈরি করার দায়িত্ব এবং অধিকার দুইই সংসদের উপর ন্যস্ত আছে, সংবিধানের ১৪ নং ধারাতেই। আচার্য দূর্গা দাস বসু লিখেছিলেন যে, এই শ্রেণীবিন্যাসের প্রকৃতি, ব্যক্তি বিশেষের প্রয়োজন এবং পরিস্থিতি বিবেচনা করে সংসদ নির্ধারণ করতে পারে। আচার্য বসু কলকাতা হাইকোর্টের এক রায়কে উল্লেখ করে ব্যাখ্যা করেছিলেন যে সাম্যের অর্থ হলো সম পরিস্থিতে সকলের উপর একই দায়িত্ব ও অধিকার বর্তানো। নাগরিকত্ব আইনের ২০১৯ সালের সংশোধনীতে যেভাবে নানান ধর্মের শ্রেণীবিন্যাস করা হয়েছে তাতে সম অধিকার ও দায়িত্ব অর্পণের সাংবিধানিক পদ্ধতির অবমাননা ঘটেছে কিনা তা আইনত কেবলমাত্র সুপ্রিমকোর্ট নির্ধারণ করতে পারে।

নাগরিকত্ব সংশোধন আইন, ২০১৯, লাগু হওয়ার পরে পরেই সংবাদে প্রকাশ পেয়েছিল যে অনধিক বত্রিশু হাজার মানুষ এই সংশোধনীর আওতায় নাগরিকত্ব পাবেন। ২০২১ সালের বাদল অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী দাবি করেছেন যে এই সংশোধনী শুধুমাত্র পশ্চিমবঙ্গেই ত্রিশ লাখের বেশি লোককে নাগরিকত্ব দেবে। তাহলে প্রশ্ন দাঁড়ায় এই যে নাগরিকত্ব সংশোধন আইন, ২০১৯ কতোটা অনুপ্রবেশকারী ভারতবাসীকে ধর্মান্ধ রাষ্ট্রব্যবস্থা থেকে উদ্ধার করার জন্য আর কতোটা ক্ষমতার দীর্ঘমেয়াদী অভিলাষায়?

সাধারণ মানুষের জন্য আইন একটা নিয়ম যেটা লাগু থাকে একটা দেশে একটা কালে সেই দেশের ঐ কালের বাসিন্দাদের ওপর। যেমন একটা মাঠে খেলার নিয়ম থাকে খেলোয়ারদের ওপর। দেশের কালের খেলাটাকে নারাণ সান্ডেল নাম দিয়েছিলেন “দু কুড়ি সাতের খেলা”। সেটা রক্তাক্ত যদিও, তবুও সে খেলার নিয়ম বাঁধা হয়েছিল ১৯৫০-এর ২৬শে জানুয়ারি সংবিধান প্রণয়ন করে। তারপর নাগরিকত্বের নিয়ম আসে ১৯৫৫ সালে। সেই নিয়ম পর্যায়ক্রমিক সংশোধনে যা দাঁড়িয়েছে তাতে কোথাও লালকার্ড দেখিয়ে খেলোয়ারকে মাঠের বাইরে বার করে দেওয়ার ব্যবস্থা নেই। যা আছে তা মোটামুটি হলুদ কার্ড দেখানোর বন্দোবস্ত। সেই বন্দোবস্তের যৌক্তিকতা নিয়ে বিতর্ক চলতেই পারে। এই চলতে থাকা বিতর্কই গণতান্ত্রিক সমাজের জিয়নকাঠি।

লেখা : 2020

প্রকাশ : 2021, 2022

পুরো বই : https://www.amazon.com/dp/B09875SJF8 




Monday, June 9, 2025

ICD-4

 সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন এবং ………


আবার নাম ধরে ধর্ম নিরূপণ করে নাগরিকত্ব খারিজের সিদ্ধান্ত নেওয়ার কাজে যদি আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স ব্যবহার করা হয়, তাহলেও খুব দক্ষ ফলাফল হবে এমন আশা করা যায় না। সারাদিন ভারতীয় ভাষার নানান শব্দ আড়ি পেতে শুনে, যাচাই করে, ফেরাই করার পর  ভারতীয় ভাষার কিবোর্ড যা সব শব্দ বানিয়ে দেয়, তাতে রবিউর, মতিউর, আব্দুল, সরকার, সাত্তার হালদার, পাতিদার, মন্ডল, চৌধুরি, বিশ্বাস এসবের তফাত বোঝার মতো মেধা কৃত্রিম বোদ্ধার থাকবে এতোটা আশা করা বাড়াবাড়ি হয়ে যাবে।

তাছাড়াও অসমের কিছু মানুষের মধ্যে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে যে নাগরিকত্ব আইনের ২০১৯-এর সংশোধনী অসম অ্যাকর্ডকে লঙ্ঘন করছে বেআইনি অনুপ্রবেশকারীদের নাগরিকত্ব দিয়ে। সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের ধারায় আছে যে মূল আইনের ধারা ২-এর সংশোধনীতে আরোপিত শর্তের জেরে যাঁরা নাগরিকত্ব পাবেন তাঁরা অসম, ত্রিপুরা, মেঘালয় মিজোরামের নির্দিষ্ট উপজাতীয় এলাকাভুক্ত হতে পারবেন না [ধারা ৬খ, নাগরিকত্ব আইন, ১৯৫৫ (সংশোধিত)]। এর পরেও কোনও আইনি স্খলন হয়েছে কিনা সেটা সুপ্রিম কোর্টের বিবেচনার বিষয়।

নাগরিকত্ব আইনের ২০১৯-এর সংশোধনী নিয়ে বিতর্কের মূলত দুটো অঙ্গ। প্রথমত, এই সংশোধনী সংবিধান প্রতিশ্রুত ধর্মনিরপেক্ষতাকে লঙ্ঘন করেছে কিনা। দ্বিতীয়ত, এই সংশোধনী সংবিধান প্রতিশ্রুত সাম্যের প্রতিশ্রুতিকে ভেঙেছে কিনা। তবে যাঁরা দাবি করেছেন, এই সংশোধনী সংবিধানের মূলগত কাঠামোকে ভেঙে দিয়েছে, তাঁদের ভুল হচ্ছে যে, সংবিধানের মূলগত কাঠামো ভেঙে পড়ার সম্ভাবনা আসে সংবিধান সংশোধন থেকে। নাগরিকত্ব আইনের সংশোধনী সংবিধানের কাঠামোতে আঁচ লাগাতে পারবে না। খুব বেশি হলে সুপ্রিম কোর্টের বিচারে অসাংবিধানিক বলে বাতিল হয়ে যেতে পারে।

দূর্গা দাস বসু লিখেছিলেন যে সাংবিধানিক ধর্মনিরপেক্ষতার প্রশ্নটা আইনের, আবেগের নয়। সেকুলার শব্দের বিবর্তনগত অর্থ হলো অধার্মিক। ভারতীয় সংবিধানে নিহিত দর্শন হিসেবে সেকুলার শব্দের মানে দাঁড়ায় যে রাষ্ট্র কোনো বিশেষ ধর্মের পক্ষে বা বিপক্ষে নয়।

ভারতীয় সংবিধান ১৯৫০-এ সেকুলার ছিল না। ধর্মের প্রতি ভারত রাষ্ট্রের অবস্থান নাগরিকের মূলগত অধিকারগুলির মধ্যে স্বধর্ম উদযাপণের স্বাধীনতায় ও পরধর্ম সহিষ্ণুতার নির্দেশের মধ্যে নিহিত ছিল আর্টিক্ল ১৪, ১৫, ১৬ এবং আর্টিক্ল ২৫ থেকে ২৮-এ। সেকুলার শব্দারোপ ১৯৭৬-এর বিয়াল্লিশতম সংবিধান সংশোধনের ফল। 

ভারতীয় সংবিধান শুধুমাত্র ভারতীয় নাগরিক নয়, ভারতের বাসিন্দা সমস্ত মানুষের ধর্মীয় স্বাধীনতা সুরক্ষিত করে (আর্টিক্ল ২৫)। একই সঙ্গে সংবিধান জানিয়ে দেয় যে এক ধর্মের স্বাধীনতার উদ্‌যাপণ অন্য ধর্মের স্বাধীনতা হরণের কারণ হতে পারবে না। ধর্মীয় সংগঠনের, আয়, ব্যয় এবং রাজনৈতিক ক্রিয়াকলাপের ওপরও রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণ আরোপ করে। সংবিধান রাষ্ট্রকে অধিকার দেয় হিন্দু মন্দিরের বিভিন্ন অংশে অহিন্দু শিখ, জৈন, বৌদ্ধদের প্রবেশ অবাধ করে দেওয়ার জন্য। অর্থাৎ সংবিধানের ধারা ২৫-এই হিন্দু, বৌদ্ধ, শিখ, জৈন - ভারতে উদ্ভুত চারটি - ধর্মকে এক শ্রেণীভুক্ত করা হয়েছে। 

সংবিধানের ধারা ২৬ সমস্ত ধর্মীয় সংগঠনকে স্থাবরাস্থাবর সম্পত্তি রাখার এবং বাড়ানোর অধিকার দিয়েছে। ধারা ২৭ রাষ্ট্রকে নিষেধ করেছে এক ধর্মের প্রতিষ্ঠানে করের বোঝা চাপিয়ে সেই করজাত রাজস্ব থেকে অন্য ধর্মের প্রতিষ্ঠানকে পুষ্ট করতে। এই ব্যবস্থা সংবিধানের সূচনায় সেকুলার শব্দ জোড়ার ছাব্বিশ বছর আগে থেকেই ছিল। 

ধারা ২৮ রাষ্ট্রকে নিষেধ করেছে কোনও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ধর্ম প্রচার করতে। একই ধারা ধর্মীয় প্রতিষ্টানকে অনুমতি দিয়েছে তাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ধর্মপ্রচার করার। আবার এই ধারা জানায় যে কোনও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রাষ্ট্র অধিগ্রহণ করার আগে যদি তার পরিচালক মণ্ডলী সেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ধর্মানুচারণের ব্যবস্থা করে থাকেন তাহলে সেই ব্যবস্থা রাষ্ট্র অধিগ্রহণ করলেও চলতে পারে। এই ধারা আরও জানায় যে, ধর্মীয় সংগঠন পরিচালিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রাপ্ত বয়স্ক ছাত্ররা (বা অপ্রাপ্ত বয়স্ক ছাত্ররা তাদের অভিভাবকের সিদ্ধান্ত অনুসারে)  শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ধর্মানুষ্ঠানে নাও অংশ নিতে পারেন। এই ভাবে, প্রতিষ্ঠানের ও ব্যক্তির উভয়ের ধর্মীয় স্বাধীনতাকে সুরক্ষিত করা হয়েছে ভারতীয় সংবিধানে।

(চলবে)

লেখা : 2020

প্রকাশ : 2021, 2022

পুরো বই : https://www.amazon.com/dp/B09875SJF8


Sunday, June 8, 2025

ICD- 3

 সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন এবং ………


১৯৮৫-এর সংশোধনী আইনে কিন্তু বিদেশী বলে চিহ্নিত,  ১৯৬৬ সালের ১ লা জানুয়ারি থেকে ২৫ মার্চ ১৯৭১ -এর মধ্যে ভারতে অনুপ্রবেশকারী, ব্যক্তিদের কাউকে ভারত থেকে বেরিয়ে যেতে বলা হয় নি। বরং বলা হয়েছিল যে  তাঁদের নাম নির্বাচক তালিকা থেকে মুছে দেওয়া হবে দশ বছরের জন্য। নাম মোছার আগে তাঁরা নাগরিকত্ব আইনের ধারা ১৮ অনুসারে কেন্দ্রীয় সরকারের নির্ধারিত নিয়মে নিজেদের বিদেশী হিসেবে নথিভুক্ত করাবেন। এইভাবে নথিভুক্ত হওয়ার দশ বছর পরে তাঁরা যথাযথ প্রক্রিয়ায় ভারতের নাগরিকত্ব অর্জন করে নির্বাচক তালিকায় আবার নিজেদের নাম লেখাতে পারেন। ঐ দশ বছরে তাঁদের ভারতীয় পাসপোর্ট থাকতে পারে, তাঁরা ভারতের মধ্যে বিদেশী হলেও, বিদেশে ভারতীয় হিসেবে পরিচিত হতে পারেন।

২৫ মার্চ ১৯৭১ -এর পরে ভারতে বেআইনিভাবে অনুপ্রবেশকারীদের ভারতের নাগরিকদের থেকে আলাদা করার চেষ্টায় অসমে ২০১৯ সালে ন্যাশনাল সিটিজেনশিপ রেজিস্টার তৈরি করা হয়। এর ভিত্তি ছিল ১৯৫১-এর নির্বাচক তালিকা এবং পরবর্তী তিনটি নির্বাচক তালিকা যার শেষটি প্রকাশিত হয়েছিল ২৫ শে মার্চ ১৯৭১। এই সব নির্বাচক তালিকাভুক্ত নির্বাচকদের এবং তাঁদের বংশধরদের ভারতের নাগরিক হিসাবে স্বীকার করা হয়।  এর ফলে ১৯৬৬ সালের ১ লা জানুয়ারি থেকে ২৫ মার্চ ১৯৭১ -এর মধ্যে ভারতের অসমে ঢুকে পড়া বেআইনি যে অনুপ্রবেশকারীরা বিদেশী বলে চিহ্নিত হয়ে ছিলেন ১৯৮৫ সালে অসম অ্যাকর্ডে, তাঁরা ১৯৯৫ সালের পরে ন্যাচারালাইজেশনের (ধারা ৬) দ্বারা নাগরিকত্ব অর্জন না করে থাকলে তাঁরা এবং তাঁদের বংশধরেরা ভারতের নাগরিক নন বলেই বিবেচিত হবেন। সে কথা ২০০৯ সালের নাগরিকত্ব নিয়ম (সিটিজেনশিপ রুল, ২০০৩)-এর  সংশোধনীতে স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। তবে অসম অ্যাকর্ডে যেমন স্পষ্ট করে বলা হয়েছিল যে বিদেশী বলে চিহ্নিত হওয়ার পর বিদেশীদের কী করতে হবে তেমন করে স্পষ্ট কোনো নির্দেশ নাগরিকত্ব নিয়মে নেই। এই বিষয়টি নির্ধারণের ক্ষমতা ১৯৫৫ সালের নাগরিকত্ব আইন কেবলমাত্র ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারকেই দিয়েছে।

২০১৯-এ অসমের এনআরসি আর সেই বছরের নাগরিকত্ব আইনের সংশোধনী নিয়ে তুলকালাম হয়ে গেলেও,.২০০৩-এর নাগরিকত্ব আইন সংশোধন নিয়ে কোনও হট্টগোল হয় নি। অথচ এনআরসির শুরু এই ২০০৩ সালের সংশোধনীতেই, সিটিজেন শিপ রুল এবং রাষ্ট্রীয় নাগরিক পঞ্জি ও নাগরিক পরিচয়পত্র প্রণয়নের নির্দেশের মধ্যে দিয়ে। অসম অ্যাকর্ডের মতো স্পষ্ট করে নির্ধারিত না থাকলেও, সিটিজেনশিপ রুল এখনও অনাগরিকদের ভারত থেকে বহিষ্কারের নির্দেশ দেয় নি।

এছাড়াও একটা সন্দেহের কথা শোনা যায় যে বেছে বেছে মুসলিমদের ভারত থেকে বের করে দেওয়ার জন্যই এনআরসি করার ফিকির। অসমে ২০১৯-এ হয়ে যাওয়ার এনআরসির ফর্ম ছিল সব মিলিয়ে চার পাতার। কোনও পাতাতেই ধর্ম বলার জায়গা ছিল না। 

২০১১-এর আদম শুমারির নথিতে গণ্য ব্যাক্তির ধর্ম কী হতে পারে সেটা নানান ধর্মের নামের মধ্যে থেকে বেছে নেওয়ার জায়গায় নাস্তিকতার উল্লেখ ছিল না। তখন নামের ভিত্তিতে ধর্ম নির্ধারণ করা হয়েছে ভারতের বাসিন্দাদের এবং নাস্তিকের সংখ্যা শূণ্য (০) দেখানো হয়েছে। একইভাবে মানুষের নামের ভিত্তিতে তার আচরিত ধর্ম কী তা বুঝে নিয়ে ঐ মানুষদের নাগরিকত্ব খারিজ করতে পারে এনআরসি। কিন্তু তাতে এক একজন সরকারি কর্মীকে দপ্তরের কাজে দৈনিক তিনঘন্টার থেকে অনেক বেশি সময় দিতে হবে। এদিকে সরকারি কর্মীদের পঁচানব্বই শতাংশ শোনা যায় ‘ (খুব অল্প সময়ের জন্য দপ্তরে) যান, আসেন, মাইনে পান’; কাজ করেন না। তাদের সকলকে কোনও বিশেষ শাস্তির জুজু দেখিয়ে যদি কাজে বাধ্যও করা যায়, তাহলেও তাঁরা রাতারাতি দক্ষ হয়ে উঠে মেশিনের মতো নাম দেখে ধর্ম নির্ধারণ করে মানুষের নাগরিকত্ব খারিজ করবেন এতোটা বাস্তবাতীত। তার ওপর থাকবে তাঁদের মগজ নির্গত ব্যক্তিগত (রাজনৈতক আদর্শগত) মতামতের ও বিবেচনার বোঝা।

(চলবে)

লেখা : 2020

প্রকাশ : 2021, 2022

পুরো বই : https://www.amazon.com/dp/B09875SJF8 




Saturday, June 7, 2025

ICD -2

 সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন এবং ………




২০০৩ ও ২০০৪ সালের নাগরিকত্ব আইনের সংশোধনী স্পষ্টত পাকিস্তানবিরোধী, তবুও ২০১৬-তে ভূতপূর্ব পাকিস্তানি নাগরিক সঙ্গীত শিল্পী আদনান সামি ভারতের নাগরিকত্ব পেয়েছেন ধারা ৬ অনুসারে ন্যাচারালাইজেশনের মাধ্যমে। এসব নিয়ে কোনও হল্লা হয় নি। 

২০০৩ এবং ২০০৪ সালের সংশোধনে নাগরিকত্ব আইন বেশ কিছু প্রথম পদক্ষেপ নেয়। যেমন জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব পাওয়ার সংজ্ঞায় শর্ত দেওয়া হয় যে জাতকের পিতা বা মাতার অন্তত একজনকে ভারতীয় নাগরিক হতে হবে এবং জাতকের জন্মের সময় অনাগরিক জনক বা জননীর বেআইনি অনুপ্রবেশকারী হওয়া চলবে না। আবার এও স্পষ্ট করে বলে দেওয়া হয় যে পাকিস্তানে (অবিভক্ত পাকিস্তানে এবং এখনকার পাকিস্তানে) এবং বাংলাদেশে জন্মানো জনক জননীর সন্তান ভারতীয় বংশোদ্ভুত বলে গণ্য হবেন না। ভারতীয় বংশোদ্ভুত বলে পরিচিতি পাওয়ার নিয়মে কিছু পরিবর্তন ২০১৫ সালেও এসেছিল। ২০১৯-এও এসেছে। দুই ক্ষেত্রেই ভারতীয় বংশোদ্ভুতের প্রাপ্য অধিকার ও সুবিধা কমেছে।

২০১৫-এর সংশোধন অনুসারে ভারতীয় বংশোদ্ভুত বলে পরিচিত কেউ যদি সেই পরিচিতি নিজে ভারত সরকারের কাছে আবেদন জানিয়ে রদ করে দেন কিংবা আইনি স্খলনে হারান, তবে তাঁর বিবাহিত দোসর এবং সন্তান তাঁর সাথেই সেই পরিচিতি হারাবেন। তাছাড়াও এই সংশোধনী খারিজ করে দেয় ভারতীয় বংশোদ্ভুতদের ভারতের রাষ্ট্রপতিত্ব, উপরাষ্ট্রপতিত্ব, নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিত্বের অধিকার এবং সংবিধানের ধারা ১৬ অনুসারে সরকারী পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে সমান সুযোগের অধিকার। 

২০১৯-এর সংশোধনী অনুসারে ভারতীয় বংশোদ্ভুতের ওভারসিস সিটিজেন অফ ইন্ডিয়া কার্ড খারিজ হয়ে যাবে যদি এই কার্ডের অধিকারী কেউ কোনো আইন ভাঙেন। আইন এখানে শুধু নাগরিকত্ব আইন বা ভারতের আইন নয়, যে কোনো আইন। তবে ঐ মানুষটির ভারতীয় বংশোদ্ভুত হওয়ার পরিচয়পত্র খারিজ হয়ে যাওয়ার আগে তাঁকে স্বপক্ষ সমর্থনের যথেষ্ট সুযোগ দেওয়া হবে।

নাগরিকত্ব আইনের ২০১৯-এর সংশোধন নিয়ে প্রতিবাদের খ্যাতনামা মুখ যেগুলো, বিশেষত পশ্চিমবঙ্গে, তার অনেকগুলিই আজকের তারিখে সম্ভবত ভারতীয় নাগরিকের নয়, ভারতীয় বংশোদ্ভুতদের। ২০১৯-এর নাগরিকত্ব আইনের সংশোধন সম্পূর্ণ খারিজ হয়ে গেলে, ভারতীয় বংশোদ্ভুতদের যে অধিকার ও সুবিধা খর্ব হয়েছে, সেগুলোও বাতিল হয়ে যাবে।

. ২০০৩, ২০০৪, ২০০৫ সালের আগে, বেআইনি অনুপ্রবেশ নিয়ে ও অনুপ্রবেশকারীর সন্তানের নাগরিকত্বের শর্ত নিয়ে সংশোধনী ১৯৮৫ সালেও এসেছিল। ১৯৮৫ সালের সংশোধনী নাগরিকত্ব আইনের সবচেয়ে বড়ো সংশোধনী। এই সংশোধনী ১৯৫৫-এর মূল আইনে জুড়ে দেওয়া ধারা ৬ক। এই ধারা প্রণোয়নের আগে মারদাঙ্গা হয়েছিল কিছু, কিন্তু সে শুধু অসমে। অসম অ্যাকর্ড নামে পরিচিত ধারা ৬ক অনুসারে অসম রাজ্যের চিহ্নিত সীমায় বসবাসকারীদের মধ্যে কে নাগরিক আর কে বিদেশী সেই বিষয়টি নির্দিষ্ট হয়।

এই ধারা সংজ্ঞাত করে যে বিদেশী মানে সেই সব মানুষ যাঁরা ১৯৪৬ সালের ফরেনার্স অ্যাক্টের সংজ্ঞানুসারে চিহ্নিত বিদেশী এবং/ অথবা যাঁরা ১৯৬৪ সালের ফরেনার্স ট্রাইবুন্যাল অর্ডার অনুসারে গঠিত ট্রাইব্যুনালের রায়ে নির্ধারিত বিদেশী। এই ধারা ভারতীয় নাগরিকের সংজ্ঞায় শর্ত দেয় -

  • যে ব্যক্তি ১৯৮৫ সালের ধারা ৬ক প্রণয়নের আগেই ভারতীয় নাগরিক ছিলেন এবং এই ধারা প্রণয়নের ষাট দিনের মধ্যে ভারতের নাগরিকত্ব (যথাযথ পদ্ধতি মেনে) ত্যাগ করেন নি

  • যে ব্যক্তির পিতা/মাতা কিংবা পিতামহ/পিতামহী কিংবা মাতামহ/মাতামহীর একজন অন্তত অবিভক্ত ভারতে জন্মেছেন

  • যে ব্যক্তি ১৯৬৬ সালের ১লা জানুয়ারির আগে “নির্দিষ্ট এলাকা” থেকে আসামে এসেছেন, (তাঁর নাম ১৯৬৭ সালের লোকসভা নির্বাচন পর্বে নির্বাচক তালিকা অন্তর্ভুক্ত করা হলেও)

“নির্দিষ্ট এলাকা”-র অর্থ কোথাও স্পষ্ট করে বলা নেই। ১৯৮৫ সালে ধারাটি প্রণয়নের সময় বাংলাদেশ স্বাধীন রাষ্ট্র, কিন্তু ধারার বিভিন্ন সংজ্ঞার কালের সময়সীমা যেমন ১৯৬৬ সালের ১ লা জানুয়ারি থেকে ২৫ মার্চ ১৯৭১ -এর আগে অবধি বাংলাদেশের অস্তিত্ব ছিল না। ছিল পূর্ব পাকিস্তান বা পাকিস্তান। সেই জন্য, হয়তো, ১৯৬৬ সালের ১ লা জানুয়ারি থেকে ২৫ মার্চ ১৯৭১ -এর মধ্যে ভারতের বাইরে থেকে অসমে অনুপ্রবেশের ভৌগোলিক উৎসগুলিকে  “নির্দিষ্ট এলাকা” বলা হয়।

(চলবে)

লেখা : 2020

প্রকাশ : 2021, 2022

পুরো বই : https://www.amazon.com/dp/B09875SJF8


Friday, June 6, 2025

ICD


 সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন এবং ………


কলকাতাকে করোনা গ্রাস করার আগে কলকাতা ছিল কাগ্রস্ত। এই কা কিন্তু রুডইয়ার্ড কিপলিং-এর কালজয়ী সৃষ্টি জাঙ্গল বুকের অজগর ‘কা’ নয়। এই কা হলো অত্যাধুনিক সংক্ষেপণ প্রক্রিয়ায় উল্লেখিত নাগরিকত্ব (সংশোধন) আইন, ২০১৯।
সাবেকি বা কা-এর আগে চলতি নিয়মে যে কোনও আইনকে লিখতে হয় “আইনের (সংশোধন) নাম” “সংশোধনের সাল” [উদাহরণ: Citizenship (Amendment) Act, 2019] এই ছকে। কিংবা “আইনের নাম” “আইনটি প্রথম প্রণয়ণের সাল” (সংশোধিত) [উদাহরণ: Citizenship Act, 1955 (amended)] এই চালে। অথবা, “আইনের নাম” “আইনটি প্রথম প্রণয়ণের সাল” “এযাবৎ সংশোধিত” [উদাহরণ: Citizenship Act, 1955 as amended / as amended upto date] এই বয়ানে। অনেক কিছু বদলে যাওয়ার মতো কা এসে বদলে গেছে আইন উল্লেখের চলতি পদ্ধতিটা।



সারা ভারতবর্ষ কাগ্রস্ত ছিল ২০১৯-এর শেষার্ধে এবং ২০২০-এর মার্চ অবধি। সেই থেকে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের প্রসঙ্গটা গুলিয়েও যাচ্ছে ক্রমশ। এর সাথে জুড়ে গেছে নাগরিকত্বের রাষ্ট্রীয় খাতা (যাকে এনআরসি বললে চেনা সহজ) সংক্রান্ত নানান কথা। রাজনীতিকরা চেঁচামেচিতে জুড়েছেন জনসংখ্যার রাষ্ট্রীয় খাতাকেও। অর্থাৎ এনপিআরকে। এই সেদিন খবরের কাগজের উৎসাহে এনআরসির সঙ্গে জুড়ে গেল ফরেনার্স ট্রাইবুন্যাল। তা বাদে সাম্য ও ধর্মনিরপেক্ষতার প্রশ্নও ছিল নাগরিকত্ব আইনের ২০১৯ সালের সংশোধন ঘিরে। আর আছে ভারত থেকে বহিষ্কৃত হওয়ার ভয়।
[ভাবতে অবশ্য ভালো লাগে যে ব্রিটিশরা থাকলে নাকি যে দেশটা এমন উচ্ছন্নে যেত না সেই উচ্ছন্নে যাওয়া দেশের নাগরিকত্ব চলে যেতে পারে বলে এতোগুলো মানুষ ভীষণ বিচলিত।]



নাগরিকত্ব আইনের সংশোধন এই প্রথম হলো এমন নয়। ১৯৬০, ১৯৮৫, ১৯৮৬, ১৯৯২, ২০০৩, ২০০৪, ২০০৫, ২০১৫ সালেও নাগরিকত্ব আইনের সংশোধন হয়েছে। কিন্তু কখনই সেই সব সংশোধন নিয়ে এমন হট্টগোল বাধে নি যেমনটা বেধেছে ২০১৯-এর সংশোধন নিয়ে।



১৯৬০-এর সংশোধনে মুছে দেওয়া হয় মূল আইনের অর্থাৎ ১৯৫৫ সালের আইনের ধারা ১৯। এই ধারা জড়িত ছিল ধারা ২-এর বিভিন্ন সংজ্ঞা এবং প্রথম তপশিলের সঙ্গে।
প্রথম তপশিল ছিল একটা ফর্দ যাতে ব্রিটিশ কমনওয়েলথ-এর এগারটি দেশের নাম ছিল, আর ছিল আয়ারল্যান্ডের প্রজাতন্ত্র। এই এগারটা দেশের মধ্যে পাকিস্তানও ছিল। মূল আইনের ধারা ১১ এবং ১২ অনুযায়ী ব্রিটিশ কমনওয়েলথভুক্ত যে কোনো দেশের নাগরিক ভারতীয় নাগরিক বলে স্বীকৃত হতে পারতেন। অর্থাৎ পাকিস্তানের নাগরিকও ভারতীয় নাগরিক বলে গণ্য হতে পারতেন।
এদিকে মূল আইন মানে ১৯৫৫-এর নাগরিকত্ব আইনের ধারা ১০ (উপধারা ১, ক্লজ ৩)-এই বলা ছিল যে পাকিস্তান থেকে আসা মানুষদের নাগরিকত্ব খারিজ হয়ে যাবে যদি না তাঁদের পিতা-মাতা কিংবা পিতামহ-পিতামহী/ মাতামহ-মাতামহী কিংবা পিতামাতার পিতামহ-পিতামহী/, মাতামহ-মাতামহীদের অন্তত একজন ভারতে জন্মে থাকেন যে ভারতের সংজ্ঞা দেওয়া আছে ১৯৩৫ সালের ব্রিটিশ পার্লামেন্টে গৃহীত ভারত সরকার আইনে এবং যদি না তাঁরা পাকিস্তান থেকে ভারতে এসে থাকেন -
  • ১৯শে জুলাই ১৯৪৮-এর আগে এবং তারপর ভারতের বাইরে না গিয়ে থাকেন এবং
  • ১৯শে জুলাই ১৯৪৮ থেকে ২৬শে জানুয়ারি ১৯৫০-এর মধ্যে এবং ভারত সরকারের নির্দিষ্ট আধিকারিকের কাছে নাগরিকত্বের আবেদন করে থাকেন এবং এই আবেদন করার আগের ছ মাসে ভারতে সাধারণভাবে বসবাস করে থাকেন ।
১৯৫৫ সাল থেকে আজ অবধি ধারা ১০ কখনও সংশোধন করা হয় নি। অর্থাৎ ১৯৫৫ সালে গৃহীত ধারা ১০ এখনও পর্যন্ত অপরিবর্তিত রয়ে গেছে। তাই এই ধারার সাথে ধারা ১১ এবং ১২-এর বিরোধ রয়ে গিয়েছিল ২০০৩ এবং ২০০৪ সালের সংশোধনে ধারা ১১ এবং ১২ এবং প্রথম তপশীল মুছে দেওয়া পর্যন্ত। এই নিয়ে ১৯৬০-এ কিংবা ২০০৩/২০০৪ সালে কোনো বিতর্ক হয় নি।



(চলবে)
লেখা : 2020
প্রকাশ : 2021, 2022



Thursday, January 30, 2025

Akshay Kumar Mozumdar - First Indian Émigrée to the United States - Part 10

 ক্যালিফর্নিয়ার মজুমদার গলি – ধুলোচাপা ইতিহাসের পথ



শেষ প্রশ্নের উত্তরে বলা যায় যে অগণিত ভারতীয় জন্মভূমিকে ছেড়ে কর্মভূমিকে মাতৃভূমির মর্যাদা দিয়েছেন। ভারতবর্ষ তাঁদের প্রবাসী, অনাবাসী ও ভারতীয় বংশোদ্ভুত বলে স্বীকৃতও করেছে, কাউকে কাউকে রাষ্ট্রীয় সম্মানও দিয়েছে। তাহলে এই বিষয়ে ভারতের অভিমানের কোনো কারণ নেই।

অক্ষয় কুমার মজুমদারের ধর্মদর্শন নিয়েও ভারতের আপত্তি থাকার কথা নয়। খোদ ভারতেই আড়াই হাজার বছর ধরে হিন্দু ধর্মের নানান ব্যাখ্যা শৈব, শাক্ত, বৈষ্ণব, ব্রাহ্মরা দিয়ে চলেছেন। অদ্বৈত্যবাদ, দ্বৈতাদ্বৈত্যবাদ থেকে অচিন্ত্যভেদাভেদ তত্ত্ব কিংবা একেশ্বরবাদ কোনোটাই ভারতবর্ষ গুরুত্বহীন বলে মনে করে নি।

ধর্ম সমন্বয়ের উদাহরণ আকবার বাদশাও রেখেছিলেন দীন ইলাহিতে। না, অক্ষয় কুমার রাজা, বাদশার মতো ক্ষমতার চূড়ামণি ছিলেন না। কিন্তু তিনি ভারতের ধর্ম সমন্বয়ের আদি অভ্যাসটিকে জাগরুক রেখেছিলেন।

তাহলে ভারতবর্ষ খেয়ালই করে নি উদ্যমী ধর্ম প্রচারক ও সুদুর পাশ্চাত্যে সমাদৃত ভারতীয় অক্ষয় কুমার মজুমদারকে? সে প্রশ্নের সঠিক উত্তর সময়ের সমুদ্রে বিলীন মুহুর্তের সাথেই মিলিয়ে গেছে।



সূত্র: 

  1. http://www.mozumdar.org/yesterdaysevangelist.html

  2. https://web.archive.org/web/20141018005925/http://www.mozumdar.org/images/Hesperia.pdf

  3. https://spokanehistorical.org/items/show/618

  4. https://web.archive.org/web/20141018010017/http://www.mozumdar.org/

  5. https://web.archive.org/web/20141217213012/http://www.mozumdar.org/images/mozumdar%20camp%20article%201948%20B.pdf

~~~~~~~~~~~~

আগের পোস্ট :

Wednesday, January 29, 2025

Akshay Kumar Mozumdar - First Indian Émigrée to the United States - Part 9

 ক্যালিফর্নিয়ার মজুমদার গলি – ধুলোচাপা ইতিহাসের পথ



লগ কেবিন থেকে উত্তর-পুবে নেমে যাওয়া ঢালু পথের শেষে দাঁড়িয়ে আছে টেম্পল অফ ক্রাইস্ট। ঝকঝকে নীল আকাশের নিচে, ধবধবে সাদা গম্বুজ আর চার কোণায় উঁচিয়ে থাকা চারটে সাদা মিনার নিয়ে। লাল রঙের সিঁড়ি উঠে গেছে মন্দির চত্বরের লাল মেঝেতে। গর্ভগৃহের চারপাশ দিয়ে ঘেরা বারান্দায় সাদা জাফরির কাজ আর লাল মেঝে। গর্ভগৃহের দর্শনের জন্য গর্ভগৃহের ফটকের দু দিকের দেওয়ালের সাথে লম্বভাবে থাকা দুই দেওয়ালে রয়েছে একটা করে কুলুঙ্গি, যেমন দেখা যায় বিষ্ণুপুরের মন্দিরগুলোতে। কুলুঙ্গি দিয়ে উঁকি মেরে দেখা গিয়েছিল যে ভিতরে রয়েছে মঞ্চ, মেঝতে একটার উপর একটা করে চাপানো অগুণতি চেয়ার, একটা ঘোরানো সিঁড়ি যা উঠে গেছে গম্বুজের ঠিক নীচের ঝুল বারান্দাতে। একটার ওপর একটা চেয়ার চাপিয়ে জড়ো করে রাখা আছে বারান্দার এক কোণেও। উত্তর আর পুব দিকের বারান্দা থেকে পাইন বনের ফাঁক দিয়ে দূরে দেখা যায় সিলভারউড লেক ।

টেম্পল অফ ক্রাইস্টের গঠন হিন্দু মন্দিরের মতো হলেও স্থাপত্যে স্পষ্ট ইসলামিয়ানা। আবার গর্ভগৃহের মতো জায়গাটার ভেতরটা খ্রীষ্টান চার্চের মতো ব্যাসিলিকা আর আইলের ধাঁচে গড়া। অক্ষয় কুমার মজুমদার শুধু দর্শনে বা বচনে ধর্মসমন্বয় সাধক ছিলেন না, মননেও ছিলেন। না হলে তাঁর ভক্ত শিষ্য বন্ধু  স্যান দিয়েগোর স্থপতি উইলিয়াম পি লজ এমন একটা স্থাপত্য নির্মাণ করলেন কী করে!


ভারতবর্ষ অক্ষয় কুমার মজুমদারের কথা মনে রাখে নি? নাকি সচেতন ভাবে উদাসীন অক্ষয় কুমার মজুমদার প্রসঙ্গে? উভয় প্রশ্নেরই পরের প্রশ্ন কেন? তিনি খাঁটি হিন্দু ধর্মের শ্রেষ্ঠত্ব জাহির করে জগৎ সংসারকে হিন্দু ধর্মে ব্রতী করেন নি বলে? নাকি তিনি পাশ্চাত্যের ধর্মমানসের মধ্যে সূক্ষভাবে রোপণ করেছিলেন হিন্দু অধ্যাত্মাচারণের বীজ সেকথা ভারতবর্ষ বুঝতে পারেনি? নাকি অক্ষয় কুমারের খোলাখুলি ব্যবহারের মধ্যে খ্রীষ্টধর্মের সোচ্চার প্রচার তাঁকে স্বজাতিদের মধ্যে অপ্রিয় করেছে? নাকি তাঁর জন্মভূমি ছেড়ে কর্মভূমিকে মাতৃভূমির মর্যাদা দেওয়ার মরিয়া চেষ্টাটা ভারতবর্ষকে অভিমানী করেছে?

Tuesday, January 28, 2025

Akshay Kumar Mozumdar - First Indian Émigrée to the United States - Part 8

 ক্যালিফর্নিয়ার মজুমদার গলি – ধুলোচাপা ইতিহাসের পথ



অক্ষয় কুমারের জীবনাবসানের পর স্যান বার্নার্দিনো পাহাড়ের ক্যাম্প মজুমদাররের সম্পত্তি বিক্রি হয়ে গিয়েছিল। প্রথম ক্রেতা ওয়াই এম সি এ। তারপর কোরিয়ান ধর্ম্যাধক্ষ সান মিয়াং মুন এর ইউনিফিকেশন চার্চের অধীনে ছিল। এখন ক্যাম্প মজুমদারের আশেপাশের পুরো ক্রেস্টলাইন জুড়ে চার্চ অফ ল্যাটার-ডে সেন্টস -এর (মানে মরমনদের) আধিপত্য। ২০১৪ সালেও ক্যাম্প মজুমদারে পতপত করে উড়তে থাকা মিলিয়ন ফেমিলি মার্চের পতাকা প্রমাণ করে যে ক্যাম্প মজুমদারের মালিকানা এখনও ইউনিফিকেশন চার্চেরই।



তা সত্ত্বেও ক্যাম্প মজুমদার নামটি রয়ে গেছে। ইউনিফিকেশন চার্চ কর্তৃপক্ষ নামটা রেখে দিয়েছেন। মজুমদারের লগ কেবিনটির জায়গাতেই একটা লগ কেবিনও আছে। মজুমদার যেমন বলতেন “ঈশরের গৃহই ভক্তের আশ্রয়” সেই কথারই প্রতিধ্বনি রূপে কেবিনের দেওয়ালে  স্প্যানিসে লেখা “মি কাসা এস সু কাসা” (অর্থাৎ আমার বাড়ি তোমার বাড়ি)।





লগ কেবিনের একতলার বারান্দা জুড়ে ছড়িয়ে থাকে এলোমেলো জিনিস। ছুতারের কাজের সরঞ্জজাম, বাইসনের শিং, লোহার নানান যন্ত্রপাতি। কেউ যেন ঘর গোছাতে গোছাতে অন্য কাজে আটকে গেছে। আর গোছানোর জিনিস সব ছত্রখান হয়ে ছড়িয়ে পড়েছে সারা বারান্দায়।

বারান্দার বরগা থেকে একটা সাদামাঠা উইন্ড চাইম ঝোলে। তার পাশে ঝোলে প্লাস্টিকের আটপৌরে হামিংবার্ড ফিডার। একটা রুফোস হামিন বার্ড এসে থেকে থেকে সেই ফিডার থেকে চিনিজল বা শুধু জল খেয়ে যায়।



সেখান থেকে মেঠো পাহাড়ি পথ পৌঁছে দেয় পাইনবইনের সিরসিরে হাওয়া মেখে দাঁড়িয়ে থাকা পিলার্স অফ গডে। এখানে এখনও সব ধর্মের মানুষ নিজদের ধর্মের কথা বলতে পারেন, যেমন ব্যবস্থা করেছিলেন অক্ষয় কুমার মজুমদার।



(চলবে)

~~~~~~~~~~~~

আগের পোস্ট : https://projectionofnaught.blogspot.com/2025/01/akshay-kumar-mozumdar-first-indian_01888544863.html

পরের পোস্ট : https://projectionofnaught.blogspot.com/2025/01/akshay-kumar-mozumdar-first-indian_0468523117.html

Monday, January 27, 2025

Akshay Kumar Mozumdar - First Indian Émigrée to the United States - Part 7

 ক্যালিফর্নিয়ার মজুমদার গলি – ধুলোচাপা ইতিহাসের পথ


পরে ১৯৪৬ সালে আইন পরিবর্তন হলে, অক্ষয় কুমার আবার আদালতে নাগরিকত্বের আবেদন জানানোর সুযোগ পেয়েছিলেন। কিন্তু সেই আইন ভারতের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষদের ককেশয়েড বলে মেনে নিলেও পুব ভারতের বাঙালিকে ককেশয়েড বলে মানে নি। ফলে এবারেও অক্ষয় কুমার মার্কিন নাগরিকত্ব থেকে বঞ্চিত ছিলেন। পরে ১৯৫০ সালে মার্কিন নাগরিকত্ব আইন আরও শিথিল হতে, বন্ধুদের সাহায্য ও তৎপরতায় অবশেষে অক্ষয় কুমার মজুমদার মার্কিন নাগরিকত্ব অর্জন করেন।
লস এঞ্জেলসের পাশে স্যান বার্নার্দিনোতে ঘাঁটি হওয়ার পর ফার্স্ট সোসাইটি অফ ক্রিশ্চিয়ান ইয়োগা সত্যিই ব্যাপক বিস্তৃতি পায়।  ১৯১৬ সালে ডিবিট নিজে বসবাস ও ধর্মপ্রচার করতে শুরু করেন নিউ ইয়র্কে। অক্ষয় কুমারের ধর্মমন্ডলীর নানান কেন্দ্রের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে স্যান দিয়েগো, সিয়াটেল, টেকোমা, পোর্টল্যান্ড, ওকল্যান্ড, মিলওয়াকি, ওয়াশিংটন ডিসি এবং নিউ ইয়র্ক। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ১৯১৬ সালের ধর্মসংগঠন সুমারির প্রতিবেদনে ফার্স্ট সোসাইটি অফ ক্রিশ্চিয়ান ইয়োগা স্থাণ ও উল্লেখ পেয়েছিল।
অক্ষয় কুমার মজুমদারের জীবনাবসান হয়েছিল  স্যান দিয়েগোতে, ১৯৫৩ সালের ৯ই মার্চ। তিনি সমাধিস্থ হয়েছেন লস এঞ্জেলসের পাশের শহর গ্লেনডেলে। অক্ষয় কুমার কিছুদিন অরেগনেও ছিলেন। এখনও ফার্স্ট সোসাইটি অফ ক্রিশ্চিয়ান ইয়োগা অরেগনেই সবচেয়ে সক্রিয়।
ওয়াশিংটনের স্পোক্যানের ইতিহাস নিয়ে যাঁরা চর্চা করেন তাঁদের বক্তব্য হলো এই যে খ্রীষ্টধর্মের নিউ থট মুভমেন্টের অগ্রণী হিসেবে অক্ষয় কুমার মজুমদারকে যতো গুরুত্ব দেওয়া হয়, তাঁর মার্কিন নাগরিকত্ব অর্জনের ঘটনা বহুল অধ্যায়টিকে মার্কিন অভিবাসন ও নাগরিকত্বের ইতিহাসে ততো গুরুত্ব দেওয়া হয় না। হয়তো অভিবাসন ও নাগরিকত্বের ইতিহাসে জাতিভেদ আর বর্ণবিদ্বেষের ভূমিকা প্রকট হয়ে পড়বে সেই জন্য। অথবা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিশ শতকের মাঝামাঝি পর্যন্ত পরাধীন জাতির স্বহায় ছিল না এমন কথাও উঠতে পারে, তাই।

(চলবে)

~~~~~~~~~~~~

আগের পোস্ট : https://projectionofnaught.blogspot.com/2025/01/akshay-kumar-mozumdar-first-indian_01606019516.html

পরের পোস্ট : https://projectionofnaught.blogspot.com/2025/01/akshay-kumar-mozumdar-first-indian_0835112172.html

Sunday, January 26, 2025

Akshay Kumar Mozumdar - First Indian Émigrée to the United States - Part 6

ক্যালিফর্নিয়ার মজুমদার গলি – ধুলোচাপা ইতিহাসের পথ


নাগরিকত্ব পাওয়ার পর, ১৯১৮ সালে মার্কিন সেনাবাহিনীতেও যোগ দেন অক্ষয় কুমার। কিন্তু প্রশিক্ষণের সময়েই তাঁকে সেনাবাহিনী থেকে সসম্মানে অব্যহতি দেওয়া হয়েছিল যুদ্ধবিরতি ঘোষণা হয়ে গিয়েছিল বলে। এরপরেও অক্ষয় কুমার মজুমদারের মার্কিনি নাগরিকত্ব নাকচ হয়ে গিয়েছিল।

স্পোক্যানে মজুমদারের যত অনুরাগী ছিলেন তাঁরা অক্ষয় কুমারের কথা তাঁদের বন্ধুদের জানাতে থাকেন চিঠিপত্রে। তাঁরা মজুমদারের লেখা বই পাঠাতে থাকেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নানান এলাকায় ছড়িয়ে থাকা তাঁদের নিজেদের বন্ধু মহলে। এর ফলে অক্ষয় কুমার মজুমদার মার্কিন মুলুকের নানান শহরে মাঝেমধ্যে বক্তৃতা দিয়ে বেড়াচ্ছিলেন। এই সময় তিনি ক্যালিফোর্নিয়া সফরে এসে বুঝতে পেরেছিলেন যে স্পোক্যানের ছোট্টো জনপদের তুলনায় লস এঞ্জেলসের মতো বড়ো শহরে তাঁর ধর্মমণ্ডলী স্থাপণ করলে প্রচার বাড়বে অনেক বেশি। ফলে ধর্মমণ্ডলীর প্রসারের সম্ভাবনাও অনেক বেশি।


তাই তিনি স্পোক্যান ছেড়ে চলে যান লস এঞ্জেলসে। বেছে নেন শহরের প্রাণকেন্দ্র থেকে প্রায় আশি মাইল পুবের স্যান বার্নার্দিনো পাহাড়ের মাথা। সেখানে দশ একর জায়গায় শুরু করেন ধর্মোপদেশ দেওয়ার কাজ। ক্রমে জায়গাটা ছড়িয়ে যায় একশ একর জায়গায়। তৈরি হয় ক্রমে পিলার্স অফ গড। অর্ধবৃত্তাকারে সাজানো বারোটি স্তম্ভের মধ্যখানে সবচেয়ে বড়ো স্তম্ভটি খ্রীষ্টের প্রতীক। তৈরি হয় লাল মেঝে আর সাদা গম্বুজ নিয়ে টেম্পল অফ ক্রাইস্ট। টেম্পলের ভেতরের কাজ নাকি অক্ষয় কুমারের জীবদ্দশায় বা তার পরেও কখনও শেষ হয় নি।





এর মধ্যে ১৯২৩ সালে ইউ এস সুপ্রিম কোর্ট ভগৎ সিং ঠিন্ড এর নাগরিকত্বের মামলায় রায় দিয়েছিলেন যে অ্যান্থ্রোপলজিস্টরা যাই প্রমাণ করুন না কেন ভারতবর্ষের অধিবাসীদের মার্কিনি নাগরিকত্ব দেওয়া যাবে না। এই রায় বেরোনোর পরে লস এঞ্জেলসের ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নির উদ্যোগে অক্ষয় কুমার মজুমদারের মার্কিন নাগরিকত্ব প্রত্যাহার করা হয়েছিল। এর ফলে অক্ষয় কুমার মজুমদার ‘প্রথম ভারতীয় যিনি মার্কিনি নাগরিকত্ব অর্জন করেছিলেন’ থেকে হয়ে গিয়েছিলেন ‘প্রথম ভারতীয় যাঁর মার্কিনি নাগরিকত্ব খারিজ হয়ে গিয়েছিল’। অ্যাপিলেও কোনো ফল হয় নি।



 

Readers Loved