একটা লোক
গিয়েছিল তার ভাগ্নের অন্নপ্রাশনের নেমতন্ন খেতে। সেখানে তো দারুণ সব ভালোমন্দ
খাওয়া-দাওয়া। লোকটা সকালে বিকালে তিনবার করে পাতা পেতে খেয়েছে টানা তিনদিন।
চারদিনের দিন হল ভয়ানক পেট খারাপ। এমন পেট খারাপ যে তার চোটে লোকটা ফ্যাকাসে থেকে
ফ্যাকাসেতর হয়ে গেল। সে চলল বদ্যিবাটী। পথে তাকে ধরল রাজার পেয়াদা।
সে খুব ঘাবড়ে গেলো। পেটটা একে খারাপই ছিল,
তায় রাজপেয়াদায় ধরল। লোকটার পেট গুড়গুড়, রোমে সুড়সুড় ভয়ানক বেড়ে গেল। সে যতো
কাঁদে, “আমায় ছাড়ো, আমার কাপড় নষ্ট হয়ে যাবে।” তাকে তত
বেশি করে জাপটে ধরে রাজপেয়াদারা। তাদের গা থেকে পেঁয়াজ, রসুন, দেশি মদ আর ঘামের
গন্ধ ছাড়ে। লোকটার গা গুলিয়ে ওঠে।
রাজবাড়িতে পৌঁছে তারা তাকে বসতে দিল
জলচৌকিতে। লোকটা জল চাইল। তারা জলের সঙ্গে রাজভোগ দিল। লোকটা খেল না, তার মুখে ব্যাটন
দিয়ে গুঁজেও দেওয়া হলো না। বরং রেকাবিটা দাসী নিয়ে চলে যাওয়ার পর পাহারায় থাকা
জওয়ান দুটোও গেল পিছু পিছু। তারপর তাদের রসালাপ আর চাকুম চাকুম শব্দে নিশ্চিন্ত
হয়ে লোকটা বাগানের দিকে পা বাড়াল।
অমনি তার পেছন থেকে দুটো পেয়েদা এসে তাদের
বিশ্রী গন্ধ মাখিয়ে ক্যাঁক করে চেপে ধরল লোকটাকে। লোকটা বলল, “ওরা রাজভোগ খাচ্ছে। তোমরা খাবে না?” এরা বলল, “আগেই খেয়েছি। আবার পরে খাব।” জবাব শুনে লোকটা আশ্বস্ত হলো যে
এরা বোবাও নয়, কালাও নয়। তাই কৌতুহলটুকুনি ঝেড়ে ফেলল, “আমাকে ধরলে কেন?” এবার এরা পাকানো পাগড়ির মতো
গোঁফের নিচে ঝিনুকের খোলের মতো হলদেটে দাঁত চমকিয়ে হাসল। তারপর লজ্জায় গাল, কান
রাঙিয়ে বলল, “রাজকুমারীর বে, যে।”
শুনে লোকটা আর্ত চীৎকার জুড়ল, “না, না, না-আ। আমি আর কিছুতেই
মাংস, পোলাও, মণ্ডা, মিঠাই খাব না।” পেয়াদারা বলল, “আমরা খাব। আমনারে খেতে হবে নি।” লোকটা বলল, “তাহলে রাজকুমারীর বে তে আমি কী করব?” লোকগুলো এবার লজ্জায় থরথর করে কেঁপে উঠল। কাঁপুনি
ঢাকতে তারা হাতের সড়কিগুলো মেঝেতে এলোমেলো ঠুকতে লাগল। তারপর পায়ের বুড়ো আঙলের নখ
মাটিতে ঘষতে লাগল।
এতো কিছুর পরেও লোকটা উত্তরের আশায় তাদেরই
দিকে পিটপিটিয়ে চাইছে দেখে গলা খাকারি দিল অনেকক্ষণ। তারপর মিন মিন করে বলল, “রাজামশায়, আমনারে জামাই করবেন।” শুনে লোকটা তিড়িং করে লাফিয়ে উঠল।
ভুলেই গেল পেট খারাপের কথা। আবার বিয়ে? তার গিন্নী শুনতে পেলে হয়! উড়ে এসে এমন কটাং
কটাং কথা শোনাবে যে সব জুতোপেটা ঝাঁটাপেটার বাড়া হয়ে যাবে। লোকটা দুঃখে অপমানে বুক
ফেটে মরেই যাবে।
কিন্তু লোকটাকে পেয়াদাদুটো লুফে নিয়ে আবার
জলচৌকিতে বসিয়ে দিল। এরপর সে ঘ্যান ঘ্যান করতে শুরু করল, “আমাকে ছেড়ে দাও। আমি বাড়ি যাব।” “আমার বউয়ের জন্য মন কেমন করছে, আমি বাড়ি যাব।” একটু কাঁদতে চেষ্টা করল। এলো না
চোখে জল। গলা দিয়ে একটা ঘ্যাঁকো ঘ্যাঁকো শব্দ বেরোল শুধু। এক ফাঁকে ছুট্টে পালাতে
গেল। পেয়াদারা ধরে ফেলল। আর জলচৌকিতে বসিয়ে দিল আবার। তারপর তাকে ঘিরে একসারি
পেয়েদা দাঁড়িয়ে গেল।
তারপর সে সামনের পেয়াদাদের হাত দিয়ে ঠেলে
সরিয়ে পালাতে গেল। তারা তো নড়লোই না তাদের পিছনের আরেক সার পেয়াদা ঘিরে ধরল। এরকম
ঠেলাঠেলি করে যখন সার পাঁচেক পেয়াদা তাকে ঘিরে ধরেছে, তখন সে বলল, “কিন্তু রাজা কী জানেন যে, একটা
লোকের দুটো বিয়ে বেআইনী।” এক পেয়াদা অমনি ছুটল কথাটা রাজাকে জানাতে।
রাজা তখন পরম নিশ্চিন্তে পাঁজি দেখছিলেন।
কত কষ্ট করে, কত লোক লাগিয়ে অবশেষে তাঁর একমাত্র মেয়ের বর জোটানো গেল, তা চলছে
কিনা ম’লো মাস। ইচ্ছে করলে তিনি আইন করে ম’লো মাসগুলোকেই তাঁর রাজ্য থেকে বার করে দিতে পারেন।
কিন্তু তাহলে তাঁর রাজত্বে কখনও অমাবস্যাই আর হবে না নাকি। অন্তত জ্যোতিষি তো তাই
বলেছে তাঁকে। অমাবস্যা না হলে কালী পুজো হবে না। কালী পুজো না হলে বাজি পুড়বে না,
ভোগ চড়বে না। তাহলে রাজামশাই মাংস খাবেন কী করে? ফূর্তি করবেন কী করে?
এদিকে রাজ্যকন্যার সব সখীরা বিয়ে করে
শ্বশুরবাড়ি চলে গেছে। তাঁরও ইচ্ছে বিয়ে করে শ্বশুরবাড়ী যাওয়ার। কিন্তু কতো দেশের
কতো রাজপুত্রকে সম্বন্ধ দেওয়া হলো, কেউ ফোকলা রাজকন্যাকে বিয়ে করতে রাজিই হলো না।
কেউ কেউ তো আবার বলেছে, “জম্ম ফোকলা হলে মেনে নেওয়া যায়, কিন্তু আক্কুটে ফোকলার সাথে ঘর করা যায় না।” রাজামশাই খুব বিরক্ত। কথাটা যে কী
করে ছড়াল! সেই কবে দশ বছর বয়সে রাজকন্যা বাগানে আম খাচ্ছিলেন আর আমগাছের ডালে বসা
মুখপোড়া হনুমানকে ভ্যাঙাচ্ছিলেন। হনুমানও তাঁকে দাঁত খ্যাঁচাচ্ছিল। তাতে রেগে গিয়ে
তিনি হাতের আমের আঁটিটা ছুঁড়ে দিয়েছিলেন হনুমানের দিকে। হনুমানের লাগে নি, সে
লাফিয়ে সরে গিয়েছিল। তারপর আঁটিটা কুড়িয়ে এনে ছুঁড়ে মেরেছিল রাজকুমারির মুখে। তাতে
রাজকুমারির ওপরের দাঁতের পাটিটা খুলে পড়ে যায়। তিনি ভয়ানক চটে গিয়ে হনুমানকে জাপটে
ধরে তার সব দাঁত উপড়ে নেন, হনুমানও বদলি থাপ্পড়ে রাজকুমারির দাঁতের নিচের পাটিটা
খুলে দেয়। এটাকে অনেকে দূর্ঘটনা বলে না। বরং মনে করে রাজকুমারির আক্কুটেমি। কারণ
হনুমানটা রাজবাড়িরই পোষা প্রাণী ছিল। সে এই দাঁতাদাঁতিকান্ডে মারা যায়। আর রাজবৈদ্যর
চিকিৎসায় রাজকুমারি সেরে ওঠেন। কিন্তু হনুমানমাতার অভিশাপে তাঁর মাড়ি এমন শুকিয়ে
যায় যে তাতে আর নকল দাঁতও বসানো যায় না। অভিশাপ দেওয়ার অপরাধে হনুমানমাতা দেশ ছাড়া
হয়েছেন রাজাজ্ঞায়। সে বজ্জাতটাই বোধ হয় রাজকন্যার দূর্গতি নিয়ে কুৎসা করে বেড়ায়। অন্তত
রাজার কয়েকজন পারিষদ যাঁরা নাগরিকদের বহির্নির্বাসন অপছন্দ করেন তাঁরা এমনটাই
বলেন। আবার যাঁরা মনে করেন যে আপদ বিদেয় করাই ভালো কিংবা যে আপনি বাঁচলে বাপের নাম
তাঁরা মনে করেন এসব অমোঘ, অনিবার্য। রাজকাজ যেন শাঁখের করাত! রাজসঙ্গও তাই।
এমন দ্বিধাদ্বন্দ সংকটের মহা তেরিয়াকালে
পেয়াদা ঘাম ঝরিয়ে হাঁপিয়ে এসে জানালেন, “জোটানো পাত্র বলছেন যে তিনি বিবাহিত এবং এরাজ্যে
পুরুষের একাধিক বিয়ে বেআইনী।” পাঁজি থেকে মুখ তুলে ঘোলা চোখে সভার দালান পেরিয়ে খোলা দরজার আলোর সমুদ্রে
চোখ রেখে ঠোঁটে ভাঁজের ঢেউ তুলে রাজা বললেন, “সে আইন না হয় বদলে দিচ্ছি।” অতএব আইনমন্ত্রী মইকাঁধে ছুটলেন
মন্ত্রকে, বিয়ের আইনের শেষতম সংস্করণ পেড়ে আনতে। ততক্ষণ সভায় তর্কের তুফান উঠল,
নতুন বিয়ের আইন হবে নাকি পুরোনো আইনের সংস্কার মাত্র হবে।
আইনমন্ত্রী যখন ফিরলেন তখনও তর্কের অবসান
হয় নি। তবুও রাজা মশাই কলমের এক খোঁচায় “বিবাহিত পুরুষের একপত্নী জীবিত থাকলে অপর দারগ্রহণ
বেআইনী” বাক্যটির শেষে একটি “নয়” জুড়ে দিলেন। তারপর শিলমোহর করার আগে সভাস্থ সকলের সইয়ের জন্য দিলেন
প্রধানমন্ত্রীর হাতে। প্রধানমন্ত্রী সই করে আনুগত্য জানাবার ছলে জুড়ে দিলেন, “যদি পুরুষ নিজের ও সব পত্নীর
গ্রাসাচ্ছাদন জোটাতে সক্ষম হন তবে।” কারণ প্রধানমন্ত্রীর সাত-সাতটি বিবাহিত কন্যা। তাঁর সাত জামাই যদি একে একে
দারপরিগ্রহ করে তাঁর কন্যাদের পিত্রালয়ে ফিরিয়ে দেয়! ভেবে শিউরে উঠেছেন বলেই না সই
করার আগে সাবধান হলেন। তারপর আইনটা দিলেন আইনমন্ত্রীর হাতে। তাঁর আবার পাঁচকন্যা
সকলেই অবিবাহিত। তিনি সই করার ছলে লিখলেন, “কিন্তু একাধিক পত্নীরা সহোদরা হওয়া চলবে না।” তিনি খুব ভালোই জানেন যে অমাত্যের
প্রচন্ড নজর তাঁর মানে আইনমন্ত্রীর বিবাহযৌতুকে পাওয়া পাঁচশ বিঘা জমিতে। রোজই একেক
মেয়ের সঙ্গে নিজের একেক ছেলের সম্বন্ধ পাঠান আর পণে দাবি করেন একশো বিঘা। এবার তো
এক ছেলেতেই সব সাবড়ে দেওয়ার তাল করবেন! তারপর আইন গেল বিত্তমন্ত্রীর কাছে। তাঁর
দুটি মাত্র মেয়ে। বড়ো জামাই নিজের বাড়ি
যাওয়ার নামই করেন না। বলাবাহুল্য তিনি সই করার ছলে লিখলেন, “কোনো দারপরিগ্রহ করে শ্বশুরবাড়ির
চিরাতিথেয়তা নেওয়া চলবে না।”
আইন যখন অমাত্যর হাতে পৌঁছল তখন তিনি সই
করার আগে গোঁফ চুমড়োনোর ছলে গোঁফে লাগানোর জলে আঙুল চুবিয়ে নিলেন আর আইনমন্ত্রীর
লেখা শর্তটা ভিজিয়ে আবছা করে দিলেন। পাত্র,মিত্র, সভাসদেরা যে যার মতো শর্ত লিখলেন
আর মুছলেন। ফলে রাজা যখন শিলমোহর লাগাতে গেলেন তখন আইনের পাতাটা ভিজে সপসপ করছে।
কিছুতেই তাতে শিলমোহর ধরানো গেল না। পেয়াদা ছুটল সেটা উঠোনের রোদে শুকোতে দিতে।
লোকটার বউ তখন কাঁচকলাভাতে রাঁধছিল।
তাড়াহুড়ো করে ভিজে কাঠ গুঁজেছে বলে ধোঁয়া হচ্ছে কেবল, আঁচ আর জমছে না। তার
রোগাভোগা বর খেয়ে সুস্থ হবে বলে সে ধড়ফড় করে রান্না বসাচ্ছিল। ভেবেছিল ভাগ্নের
অন্নপ্রাশন খেয়ে ফিরলে লোকটাকে খুব একহাত নেবে যে লোকটা ঘরের খেয়ায়লই রাখেনা তাই
রান্নাঘরের চালের ফুটো দিয়ে জল পড়ে জ্বালানি ভিজে যাচ্ছে রোজ। তা যে অবস্থায় ঘরে
এলো সে আর সে সব কাহন তাকে শোনানো গেল না। ঠক করে চালের ফুটো দিয়ে একটা শুকনো
কলাপাতা পড়ল রান্না ঘরে। ব্যাকুল হয়ে লোকটার বউ সেই কলাপাতাটাই গুঁজে দিল উনুনে।
তাতে উনুনটা দাউ দাউ করে জ্বলে উঠল। আর কাঁচ-কলাও সেদ্ধ হয়ে গেল চটপট। বউটা তখন
একটা সানকিতে ভাত আর কাঁচকলা সেদ্ধ বেড়ে নিয়ে গেল দাওয়ায় যেখানে তার বর শুয়ে আছে।
বউয়ের ডাকাডাকিতে উঠে দুগরাস মুখে দিয়ে
লোকটা বলল, “আইন কী সত্যিই বদলে গেছে?” বউ চোখ গোল গোল করে বলল, “কীসের আইন? আমি কী জানি তার? আমি তো ঘরে থাকি... আইন-কানুন, রাজারাজড়ার কথা
জানব কী করে?” তারপর লোকটা চুপচাপ খাচ্ছে দেখে বউটা আবার বলল, “কী জানি, বাবা! ঠাকুরঝির বাড়ি থেকে
ফিরে বললে পেট খারাপ, তাই কাঁচকলা সেদ্ধ করে দিলুম। আবার এখন বলছ কিনা আইন-কানুন।
মাথাটা খারাপ হয়ে যাই নি তো?” লোকটার খাওয়া হয়ে গিয়েছিল। কাঁচকলা সেদ্ধ দিয় আর কতটাই বা খাওয়া যায়! দাওয়া
থেকে নেমে আঁচাতে গেল লোকটা। বউ লাগল এঁটো পাড়তে।
এমন সময় রাজার পেয়াদা ঢ্যাঁড়া দিয়ে গেল। কী
একটা শুকনো কলাপাতায় লেখা আইন নাকি কাকে মুখে নিয়ে উড়ে গেছে। কেউ দেখতে পেলে সেটা
যেন রাজবাড়িতে জমা দেওয়ার ব্যবস্থা করে। শুনে বউটা বলল, “সেরেছে, আমি কী তাহলে চাল থেকে পড়া
যে কলাপাতাটা পুড়িয়ে কাঁচকলা রাঁধলুম সেটাই রাজার আইন ছিল!” লোকটা বলল, “হতে পারে, কাগে এসে চালে বসেছিল।
তারপর পাতাটা খেতে না পেরে ফেলে দিয়েছে ফুটোর পাশে। কিন্তু-” লোকটাকে চিন্তিত দেখে তার বউ
অধৈর্য হয়ে বলল, “কিন্তু কী? আহ্, সব কথা আধখানা গিলে ফেলা অভ্যেস!” লোকটা বলল, “আরে শুকুতে দেওয়া আইনের কাগজটা কাগে
নিয়ে উড়ে গিয়েছিল বলেই তো পেয়াদা দিয়ে কাগ ধরতে আর কাগজ খুঁজতে হলো। তাতে পেয়াদা
কম পড়ল। তখন আমার পাহারায় যারা ছিল তারা আমাকে জলচৌকিশুদ্ধু কাঁধে তুলে নিয়ে
বেরিয়ে পড়ল। কিন্তু- কিন্তু আমি বাড়ি পৌঁছুলাম কী করে?” বউ এবার বেশ বিরক্ত হলো, “বলি তোমার ঘিলু-টিলু সব গলে বেরিয়ে
গেছে নাকি? অসুস্থ লোক, হেঁটে আসতে পারে নে, গরুর গাড়ি চড়ে এলো, তাও শুয়ে শুয়ে।
আবার বলে রাজার পেয়াদা-”
লোকটা ধপ করে সোফায় বসে পড়ল। বউটা
দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল, “চা খাবে না কফি?” লোকটা বলল, “সেগুলো কি?” বউ বলল, “বানিয়ে আনছি। খেলে বুঝতে পারবে।” লোকটার মনে হলো না চাইতে এই বোধ হয় প্রথমবার বউ তাকে চা কফি দিতে চাইছে। তাতে
লোকটার কেমন ঘোর কেটে গেল। সোফায় হাত বুলোতে লাগল আর ভাবতে লাগল, তাহলে দাওয়াটা,
জলচৌকিটা, এসব -। পুরোটা ভেবে ওঠার আগেই ঠক করে আওয়াজ হল। দেখল বউ চা-কফি নিয়ে ঘরে
ঢুকছে, ঠুন ঠুন আওয়াজ হচ্ছে পেয়ালা পিরিচে। কিন্তু সেটা টেবিলে রাখে নি। তাহলে ঠক
করে আওয়াজটা কোথা থেকে এলো? আবার আওয়াজ হলো ঠক ঠক – এবার দুবার। বউ পেয়ালা পিরিচি টেবিলে
রেখে ধড়ফড় করে জানলাটা খুলে দিল। দেখা গেল একটা কাক বসে আছে, ঠোঁটে তার
স্লেট-পেন্সিল। স্লেটে লেখা আছে, “সুকুমার জয়ন্তী আজকের মতো এখানেই শেষ হলো।”