৩৫. গরু
পরের দশ মিনিট দুজনে দুটো চেয়ারে বসে রইলো কেউ কোনো কথা বললো না। কেউ ঘর ছেড়ে বেরিয়েও গেলো না।
এমন সময়ে সু ছন হঠাৎ জেগে উঠলো, “মা।”
মিন হুয়ে ঝটপট বিছানার কাছে গেলো, ছেলের মাথা ছুঁয়ে বললো, “এই তো মা।”
“আমি ‘নাই’ চাই।”
“আচ্ছা।”
“দুধ কী টাটকা?” শিন ছি ঘরের মধ্যে ঘুরে ঘুরে দেখছিলো, কিন্তু রেফ্রিজেটর খুঁজে পেলো না, “আমি কী কিনে আনবো, কী বলিস?”
“না।” নিচু স্বরে ফিসফিসিয়ে বললো মিন হুয়ে, “দরজাটা বন্ধ করে দে, আর মুখটা ঘুরিয়ে বোস।”
শিন ছি দরজাটা বন্ধ করে দিলো, কিন্তু মিন হুয়ের দিকে তাকালো এমন করে যেনো ধাঁধায় পড়ে গেছে।
“ও মানুষের দুধ খেতে চায়।”
“ওর তো তিন বছরের বেশি বয়স।” ভ্রূ কুঁচকে বললো শিন ছি, “অনেক দিন আগেই ওর দুধ ছাড়িয়ে দেওয়া উচিৎ ছিলো না?”
“ও ভয় পাচ্ছে। তাই আবার চাইছে …”
শিন ছি তাকালো মিন হুয়ের স্তনের দিকে, “তোর এখনো … এখনো দুধ আছে?”
“না।”
“তাহলে দুধ ছাড়া ও পাবেটা কী?”
“শুধু ভরসা, সঙ্গ, আর আরাম। যেটা খানিকটা চুষিকাঠির মতো।”
মিন হুয়ের মুখ লাল হয়ে গেলো উত্তর দিতে দিতে, “খাবার দরকারও নেই, একটু হাত দিয়ে ছুঁতে পারলেও একই কাজ হয়।”
সু ছনকে বুকের দুধ খাওয়ানোর সময়ে ঝৌ রু জি গুয়াঁদং থেকে এক অল্প সময়ের কাজের লোক রেখে ছিলো যে ঝোল রেঁধে দিতো মিন হুয়ের জন্য। সেই জন্য মিন হুয়ের প্রচুর দুধ ছিলো। সু ছন কখনো ফর্মুলা দুধ খায় নি। ছেলের দূর্বল স্বাস্থ্যের কারণে মিন হুয়ে জোর করে ছেলেকে দুধ ছাড়ায় নি, বরং ধৈর্য ধরে নিজে নিজে ছেড়ে যাবার জন্য অপেক্ষা করে ছিলো। আর যোগানটা বজায় ছিলো সু ছনের আড়াই বছর বয়স অবধি। এখনো পর্যন্ত, বাচ্চাটা ঘুমোতে যাবার সময়ে যদি মা পাশে শুয়ে থাকে, তো বাচ্চাটা মায়ের বুকে হাত রেখে তবেই ঘুমোতে যায়।
শিন ছি হতবাক হয়ে রইলো অনেক ক্ষণ। কিন্তু কোনো কারণও খুঁজে পেলো না আপত্তি করার। তাই কোনো মতে বললো, “তাহলে …বেশ।”
জন্মের কয়েক দিন পরেই ওকে ওর মা ছেড়ে চলে যায়, ও বেড়ে উঠেছে বেবি ফর্মুলা খেয়ে। অনাথাশ্রমে ডজন খানেক বাচ্চা ছিলো ওর বয়সী, কেবল মাত্র দুজন শিক্ষক ছিলেন ওদের খাওয়ানোর জন্য। কারুর পক্ষে রোজ খাওয়ানোর সময়ে ওকে ধরে বসে থাকা অসম্ভব ছিলো। তাই শিন ছি জানেও না স্বাভাবিক মাকে কেমন দেখায়। কখনো এই কথাটা জানার চেষ্টাও করে নি।
মিন হুয়ে বিছানায় বসলো, এক পাশে ভর রেখে আধ-শোয়া হয়ে, জামার বোতাম খুললো, শিন ছির নজরে আড়াল দিলো একটা কম্বল দিয়ে। সু ছন চোখ বন্ধ করলো, কয়েকবার জোরে জোরে ঘা দিলো মিন হুয়ে বুকে, তারপর তিন মিনিটের মধ্যে ঘুমিয়ে গেলো।
মিন হুয়ে জামা পরে নিলো, বিছানা থেকে নেমে এলো। থাকতে না পেরে হাই তুললো, “অনেক রাত হয়ে গেছে, তুই ফিরে যা। এখানে বাচ্চার সাথে একজন থাকলেই চলবে।”
“তাহলে তুই চলে যা। আমি থাকবো ওর সাথে এখানে।” শিন ছি বললো, “তোর জামাকাপড়ও নোংরা হয়ে আছে। তুই ফিরে যা বরং, চান করতে লাগবে না তোর?”
মিন হুয়ে মেঝেতে পড়ে থাকা ব্যাগটা তুলে নিয়ে কাঁধে রাখলো, “পারবি তুই?”
“হ্যাঁ। তাছাড়া ডাক্তার আর নার্সও আছে তো।”
“তাহলে, আমি তোর হেপাজতে রেখে গেলাম। চলি।”
মিন হুয়ে দরজার দিকে এগোলো। শিন ছি বলে উঠলো, “ঠিক আছে।”
“হু?”
“তোর মোবাইল ফোন নাম্বার?”
“মোবাইল ফোন নাম্বার?” মিন হুয়ে বড়ো বড়ো চোখে চেয়ে রইলো শিন ছির দিকে, “তুই আমাকে আনব্লক করিস নি?”
“...”
“একটা লোককে আনব্লক করার পরে, কী করে সহজে তাকে আবার জুড়ে ফেলা যায় যোগাযোগের খাতায়?”
“কিন্তু ও যদি আবার জাগে? ও যদি আবার ‘নাই’ চায়, আমি কী করব?” শিন ছি মাথা চুলকোলো।
“অ্যাই, তুই যে বললি আমি যেনো ওকে দিয়ে দি তোর কাছে, ওকে থাকতে দি তোর সাথে? চার বছরের কথা বাদ দে, এক রাতের কথায় আয়। তুই তাও পারবি না, তাই তো?”
শিন ছির মুখ আবার সবুজ হয়ে গেলো, “তোর কী ভয় নেই যে আমি ওকে সত্যিই নিয়ে চলে যাবো?”
“তোর সাহসে কুলোবে না।”
"কেনো নয়?”
“বাচ্চার বার্থ সার্টিফিকেটে লেখা আছে বাচ্চার বাবার নাম ঝৌ রু জি। যদিও তুইই বাচ্চার আসল বাবা, কোনো নথিগত প্রমাণ নেই যে তুই ওর জন্মদাতা বাবা। তাই তোকে পরামর্শ দেবো যে ভাবিসও না ওকে আমার থেকে নিয়ে নেবার কথা। তাহলে আমি পুলিশে অভিযোগ জানাব।”
“...”
“আরো একটা কথা, বাচ্চার সামনে কথা বলার সময়ে আমার সঙ্গে বিনয়ের সঙ্গে কথা বলবি। যদি আমার সঙ্গে কটু কথা বলিস, তাহলে আমার ছেলে তোকে বাবা বলে মেনে নেবে না। আমার কথা বিশ্বাস না হলে চেষ্টা করে দেখতে পারিস।”
“...”
“তাছাড়া, ফিরে আসার জন্য স্বাগতম, শিন ছি।”
এরপরে “ওয়া আ’ন” বলে মিন হুয়ে আর দাঁড়ালো না, হতবাক শিন ছিকে রেখে দিয়ে চলে গেলো।
***
সে রাতে মিন হুয়ের খুব ভালো ঘুম হলো। খুশিতে গুনগুন করে গানও গাইল চানঘরে শাওয়ারের নিচে দাঁড়িয়ে। এমনকি ভুলেই গেলো সমস্ত মন খারাপের কথা, চেং ছিরাং আগের দিনই ব্যাঙ্কোয়েতে যে যন্ত্রণা দিয়েছে সে সব কথা।
কারণ শিন ছি ফিরে এসেছে।
যদিও এখনো রেগে আছে ও, ওর জিভটা বিষাক্ত হলেও, ও ফিরে এসেছে।
মিন হুয়ে ভীষণ খুশি। ওর কাঁধের থেকে বোঝা যেনো অনেকটা নেমে গেলো। ও আশাও করে নি যে শিন ছি থাকবে, আর ওর সঙ্গে থাকবে। ও ছেলেকে এতো ভালো বেসেছে যে নিশ্চয়ই প্রায়ই আসবে ছেলের সাথে দেখা করতে।
এটুকু হলেই মিন হুয়ে সন্তুষ্ট।
পরের দিন, বিরল ঘটনা ঘটল, মিন হুয়ে অ্যালার্ম শুনতেই পেলো না। দেরি করে ঘুম থেকে উঠলো। যখন ও চোখ খুললো, তখন সাড়ে নটা বেজে গেছে। ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখলো উইচ্যাট, ইমেল, স্কেজ্যুলে অবশ্য-করণীয় কাজগুলোর নোটিফিকেসনের গাদাটা ফোনের কানা ছুঁয়ে ফেলেছে।
তাড়াহুড়ো করে পরিষ্কার হয়ে নিলো, জামাকাপড় বদলে নিলো। যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব দু পিস পাঁউরুটি খেয়ে নিলো। গেলো রাস্তার পুবদিকের ছোটো দোকানটা থেকে সু ছনের প্রিয় খাবার কিনতে, কুমড়োর পোলেন্টা আর মাংস ভরা বাওজি।
কুমড়োর পোলেন্টা |
কুমড়োর পোলেন্টা |
কুমড়োর পোলেন্টা |
কুমড়োর পোলেন্টা |
শিন ছি তখনো থাকতে পারে ভেবে ও একটু বেশি করেই কিনলো। একটা কফি নিলো আর ই-ডঙ্কিতে চড়ে চললো হাসপাতালে।
দৌড়ে ওয়ার্ডে গিয়ে দেখলো সু ছন বিছানায় নেই। ডেনিম জ্যাকেট পরা এক যুবক টেবিলের ওপরে জড়ো হওয়া খাবার বাসন পরিষ্কার করছে, যেনো এই মাত্র কেউ সকালের জলখাবার খেয়েছে।
মিন হুয়ে যুবকটিকে চিনতে পারলো না। ভাবলো হাসপাতালের কোনো নার্স হবে। কিন্তু নার্সেরা জানেও না অমন জামাকাপড় কী করে পরতে হয়। সেই জন্য ও বললো, “নি হাও, এই বিছানার রুগী কোথায় গেলো?”
“মিন হুয়ে শওজিয়ে, তাইতো?” যুবকটি বললো, “ইথান নিচের বাগানে হাঁটার জন্য নিয়ে গেছে সু ছনকে। ফিরে আসবে তাড়াতাড়ি।”
কৌতুহল নিয়ে তাকালো মিন হুয়ে যুবকটির দিকে। ছেলেটা দারুণ সুদর্শন নয়, তবে দেখতে ভালোর দিকেই। কাটা কাটা চোখ-নাক-ঠোঁট, সূচালো থুতনি, লম্বায় প্রায় শিন ছির মাথায় মাথায়, গায়ের রং চাপা, পাকা গমের মতো।
“আমাকে মিন হুয়ে বললেই চলবে। আমি কী জানতে পারি, আপনি কী -”
“আমার নাম ইয়ুন লু, বাই ইয়ুন মেঘের মতো, আর মা লু যাবার পথের মতো।" মৃদু হাসলো, আর হাত ছড়িয়ে জানালো, “আমি ইথানের রাঁধুনি।”
ওকে দেখে চেনা চেনা লাগলো, কোথায় যেনো দেখেছে ওকে। তখন মনে পড়লো আগের রাতে ব্যাঙ্কোয়েতে, শিন ছি বলে ছিলো যে ওর পাশে একটা খালি জায়গা আছে, আর ওর পাশে বসে থাকা মানুষটা তখনই উঠে দাঁড়িয়ে চলে গিয়ে ছিলো।
সেই মানুষটাই ইয়ুন লু।
“ইথান?”
“মানে শিন ছি। ওর ইংরেজি নাম ইথান।”
“তার মানে … ওর রেস্টুরেন্ট আছে?" মিন হুয়ে একটু বিভ্রান্ত।
“না। আমি ওর ব্যাক্তিগত রাঁধুনি।” ইয়ুন লু বুঝিয়ে বললো, “ওর ডায়েটের দায়িত্বে, শুধু ওর জন্য আর ওর পরিবারের লোকেদের জন্য রান্না করি।”
বাইরে থেকে আনিয়ে খাবার ব্যবস্থা এতো ভালো হবার পরেও এখনো ব্যাক্তিগত রান্নার লোকের কাজ আছে? মিন হুয়ে না ভেবে পারলো না, এটা একটা পুরো সময়ের কাজ নয় নিশ্চয়ই?
মিন হুয়ের বিভ্রান্ত চেহারা দেখে ইয়ুন লু হেসে বললো, “আমি একটা রেস্টুরেন্টে রান্না করতাম। ইথানের ভালো লেগেছিলো আমার রান্না। তাই ও জিজ্ঞেস করে ছিলো যে আমি রেস্টুরেন্টের কাজটা ছেড়ে দিয়ে ওর জন্য রান্না করবো কিনা। আমার মনে হয় মাইনেটা ভালো আর কাজটা সহজ। তাই আমি রাজি হয়ে যাই।”
মিন হুয়ে খুব অবাক হয়েই বললো, “ওহ্।”
“আমি এখানে সকালের জলখাবার দিতে এসেছি। ইথান আর সু ছনের খাওয়া হয়ে গেছে।” ইয়ুন লু একটা লাঞ্চবক্স তুলে মিন হুয়ের দিকে বাড়িয়ে দিলো, “বাকিটা আপনার, হয়তো ঠান্ডা হয়ে গেছে।”
“দরকার নেই।” মিন হুয়ে হাতের প্ল্যাস্টিক ব্যাগ তুলে ধরে দেখিয়ে বললো, “আমি কিনে এনেছি।”
তারপর ও পরিজ আর স্টিমড বান বার করলো, “আমি একটু বেশি করেই এনেছি, আপনি খাবেন?”
“আমি খেয়েছি। তাহলে দুপুরে কী খেতে চান? কী পছন্দ আপনার? আমি দুপুরের খাবার পাঠিয়ে দেবো।”
“দুপুরে? দুপুরে কোম্পানিতে একটা মিটিং আছে …”
“তাহলে, কোম্পানিতে পাঠিয়ে দেবো?”
“দরকার নেই। কোম্পানিতে রেস্টুরেন্ট আছে, সস্তা বেশ। আপনি … আমার কথা একদম ভাববেন না।”
মিন হুয়ে বার বার ওর হাত নাড়তে লাগলো, ওর মনে হয় সু ছন খেলো শিন ছির হেঁসেলে, সেটা চলে, কিন্তু ও-ও যদি খায়, তাহলে কে জানে কী হবে, সতর্ক থাকাই ভালো।
“বু খেছি। আমি যাবো না, ড্রাইভার যাবে।” উৎসাহের সাথে ইয়ুন লু জানালো, “আমার তো একজনের খাবার বানাতে যা সময় লাগবে, তিনজনের জন্য বানাতেও একই সময় লাগবে।”
“দরকার নেই। শিয়া শিয়া।”
“ঠিক আছে।” ছেলেটা জোরাজুরি করা বন্ধ করে দিলো, “ইথান এর মধ্যেই আমাকে বলে দিয়েছে যে সু ছনের প্রতিদিনের তিনটে মূল খাবারের দায়িত্ব আমার। ও হ্যাঁ, ইথান আরো বলছিলো যে ও দেখেছে সু ছনের ওজন ওর বয়সী বাচ্চাদের তুলনায় কম, সু ছন মাথাতেও বেড়েছে কম ওর বয়সী অন্য বাচ্চাদের তুলনায়। মানে গড় যা বলে আর কী। আমি জানতে চাই সু ছনের কী দুধ খাবার অভ্যেস নেই?”
“দুধ আছে। কিন্তু তার কোয়ালিটি ভালো নয়। আমার আশঙ্কা দুধে মেলামাইন মেশানো থাকে, তাই আমি ওকে দুধ দিতে সাহস করি না।”
“ওটা আপনি আমাদের ওপরে ছেড়ে দিন। আমরা ওকে নিশ্চয়ই খাঁটি দুধ খাওয়াবো।” ইয়ুন লু নোট বই বার করে কিছু লিখে নিলো, “আমি খুঁজেছি। কাছাকাছি দুটো ডেয়ারি ফার্ম আছে। আমি গিয়ে কয়েকটা গরু কিনে নেবো। একটা নির্ভরযোগ্য গোয়ালা রাখব। এক সেট সম্পূর্ণ স্বয়ংক্রিয় দুধ দোয়ানোর যন্ত্র কিনব। এক সেট বাস স্টেরিলাইজেসন কন্ট্রোলার কিনব। সু ছনের জন্য স্পেশাল দুধ বানিয়ে নেবো।”
মিন হুয়ে পরিজে চুমুক দিচ্ছিলো, এসব শুনে ওর মুখ থেকে ছিটকে পরিজ বেরিয়ে যাচ্ছিলো প্রায়, “গরু? বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে না?”
“কোনো সমস্যা নেই।” হেসে বললো ইয়ুন লু, “যা বলছিলাম, সু ছনের কেমন স্বাদের খাবার পছন্দ?”
“ওর খাওয়া নিয়ে কোনো বাছবিচার নেই। ও ইন্সট্যান্ট নুডল্ পছন্দ করে। আমি জানি যে সেটা অস্বাস্থ্যকর।”
“সে ঠিক আছে। আমি ইন্সট্যান্ট নুডল্ বানিয়ে নিতে পারবো হাতে পাকিয়ে, মনে হবে ঝোলের মতো একইরকম খেতে।”
“ও টম্যাটো আর টম্যাটো দিয়ে বানানো পদও পছন্দ করে। টম্যাটো দিয়ে ডিম, টম্যাটো দিয়ে বিফ, টম্যাটো দিয়ে টোফু, বর্শট, এই সব আর কি।”
“তা বেশ, ও এসবই ভালো করে খায় তো?”
“তা ছাড়া কম আঁচে ঝলসানো মাংস পছন্দ করে - ব্রেইসড চিকেন উইং, ব্রেইসড পর্ক রিবস, ব্রেইসড মাছ …”
ইয়ুন লু মন দিয়ে শুনলো আর একে একে সব লিখে নিলো ওর নোটবুকে। তারপরে বিশদে জানতে চাইলো সু ছন কী ফল খেতে পছন্দ করে। জলখাবারে কী পছন্দ করে, কী ধরনের পানীয় পছন্দ করে, ও কোনো ভিটামিন খায় কিনা, ওর কোনো ক্যালসিয়াম সাপ্লিমেন্ট চলছে কিনা, এমন কী জেনে নিলো সু ছনের প্রস্রাবের রং কী আর পায়খানার আকার কী। মিন হুয়ে একে একে উত্তর দিলো।
কথা শেষ হওয়া মাত্র আরেকটা জোয়ান ছেলে উদয় হলো দরজায়। মাঝারি উচ্চতা, সোনালি ফ্রেমের চশমা পরা, বেশ চতুর দেখতে।
ওর হাতে বড়ো বড়ো কয়েকটা বাক্স রয়েছে। মিন হুয়েকে দেখে ও একটা বিনয়ের হাসি হাসলো, তারপর বাক্সগুলো মেঝেতে নামিয়ে রাখলো।
“ইনি মিন হুয়ে, সু ছনের মা।” আলাপ করিয়ে দিলো ইয়ুন লু।
“নি হাও, আমি শেন হান, শিন জঁর সহায়ক।”
দুজনে করমর্দন করলো। শেন হান বললো, “শিন জঁ আমাকে বলে ছিলেন সু ছনের জন্য কয়েকটা খেলনা কিনতে।”
“শিয়া শিয়া। তবে এতো খেলনা লাগে না।”
“এটা খানিকটা। আমরা আরো অনেক কিছু কিনেছি আর ওকে বলেছি বেছে নিতে, ফেরত দিয়ে দেবো যদি ওর পছন্দ না হয় তো।”
ইয়ুন লু জানতে চাইলো, “তুমি কী ইথানের কম্পিউটারটা এনেছ?”
“এখনো গাড়িতে। নিয়ে আসছি।”
শিন ছি হুইল চেয়ার ঠেলে সু ছনকে নিয়ে এলো ভেতরে, মিন হুয়েকে দেখলো আর হালকা সৌজন্য দেখালো, “সাও।”
“সাও” জবাব দিয়ে হাঁটু মুড়ে বসে মিন হুয়ে চুমু খেলো ছেলেকে, “ছন ছন, তোমার কী বুকে ব্যাথা করছে এখনো?”
“না, এখন আর ব্যাথা করছে না। মা, বাবা আমাকে নিচে নিয়ে গিয়ে ছিলো খেলার জন্য। আমি একটা ছোট্টো বাদামী রঙের বেড়াল দেখেছি।”
“ওয়াও, সুন্দর না?”
“বাবা বলেছে আমার শরীর ভালো হয়ে গেলে আমাকে একটা বিড়াল ছানা দেবে।”
“সত্যি?”
“নিশ্চয়ই।” শিন ছি হালকা হাতে চাপড় দিলো সু ছনের মাথায়।
সু ছন দুলছিলো চেয়ারে বসে উত্তেজনায়। মিন হুয়ে এতো ভয় পেলো যে ও হাত দিয়ে ছেলেকে আগলে ধরলো।
ব্যাপার দেখে, শিন ছি, সু ছনকে জড়িয়ে ধরে বিছানায় নিয়ে গেলো, আর সাধারণ কথার মতো জানতে চাইলো, “কাল রাতে ভালো ঘুমিয়েছিস তুই?”
“খুব ভালো ঘুমিয়েছি।”
“আজ কী কাজে যাবি?”
“কতকগুলো জরুরি মিটিং আছে। আমি যাবো।”
“তুই যা, আমি এখানেই আছি।”
“তাহলে তুই …”
মিন হুয়ে শিন ছির দিকে দেখলো, তারপরে ইয়ুন লুয়ের দিকে, শেন হানের দিকে, “কতক্ষণ থাকবি তুই হাসপাতালে?”
“ওর সঙ্গে সারাক্ষণ, যতক্ষণ না ও হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাচ্ছে।”
মিন হুয়ে মূহুর্তের জন্য কথা হারালো, “ও হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাবে দশ দিন পরে।”
“তাহলে আমি আরো দশ দিন থাকবো ওর সাথে।” ঝটপট কম্বল ভাঁজ করতে করতে বললো শিন ছি, “তুই যদি ব্যস্ত থাকিস তো তোকে আমার সঙ্গে থাকতে হবে না চব্বিশ ঘন্টা। কেবল আসবি আর দেখা করে যাবি একবার। জিয়া জুনকে বলে দিস যে ওকে আর লাগবে না।”
অবাক হয়ে মিন হুয়ে জানতে চাইলো, “তুই কাজে যাবি না?”
“আমি এ মাসের সব মিটিং আর ইন্টারভিউ বাতিল করে দিয়েছি। যেগুলো না করলেই নয়, সেগুলো আমি ওয়ার্ডে বসেই করে নেবো।”
“তাহলে ক্ষতি কতো হবে?”
“তাহলে কতো ক্ষতি হবে?”
শিন ছি বসে পড়লো, পায়ে কাঁচি মেরে, হালকা সুরে বললো, “আমার ছেলের থোরাকোটমি হয়েছে, এমন মূর্খ কে আছে যে আমার সঙ্গে কাজের কথা বলবে এখন?”
~~~~~~~~~~~~
সম্পূর্ণ বই বিনামূল্যে : https://dl.bookfunnel.com/lcj5vznt96
Link to Previous Post in the Series : https://projectionofnaught.blogspot.com/2024/09/jpda-chapter-34.html
Link to following Post in the Series : https://projectionofnaught.blogspot.com/2024/09/jpda-chapter-36.html