Saturday, September 14, 2024

JPDA - Chapter 39

 ৩৯. ঘড়ি



আধ ঘন্টা পরে মিন হুয়ে ফিরিয়ে দিলো শিন ছির ল্যাপটপ, “এটা ঠিক হয়ে গেছে।”

“ড্রপবক্স?” শিন ছি খুললো উইন্ডোটা। মিন হুয়ের কম্পিউটারটা ওর হাতে দিয়ে বললো, “শিয়া লা।”

ও বসে ছিলো মিন হুয়ের পাশে। ওর গায়ে হালকা লেবুর গন্ধ তখনো লেপ্টে আছে। মিন হুয়ের মনে হতে লাগলো যে ও যেনো একটা ফলের বনে হেঁটে বেড়াচ্ছে ঘোরের মধ্যে। যাই হোক, মিন হুয়ের সাথে কথা বলার কোনো ইচ্ছে শিন ছি দেখালো না। ও টাইপ করতে লাগলো যেনো ওর আঙুলগুলো উড়ে যাচ্ছে। মন দিয়ে উত্তর দিয়ে যাচ্ছে ইমেলগুলোর।

বেশ খানিক ক্ষণ পরে, ও ঘুরে তাকিয়ে এক ঝলক দেখলো মিন হুয়েকে। মিন হুয়ে যেনো চুপ করে বসে আছে হতবুদ্ধি হয়ে। মিন হুয়ের হাতে নিজের ফোনটা দিয়ে বললো, “এটা ঠিক করে দিতে পারবি?”

“আমি চেষ্টা করতে পারি।”

“পাওয়ার অন পাসওয়ার্ডটা 0627।”

শিন ছি বললো কোনো বিশেষ গুরুত্ব না দিয়েই। মিন হুয়ের মুখটা ফ্যাকাশে হয়ে গেলো, হিম বয়ে গেলো যেনো ওর শিরদাঁড়া দিয়ে। 

মিন হুয়ে কল্পনা করলো যে শিন ছির আঙুলের ডগায় সংখ্যা চারটে ঘুরেছে অসংখ্যবার আর একই সঙ্গে ওর মনের চোখে ঝলসে উঠলো সু তিয়াঁর পিঠের দিক থেকে ধরা ওর লাইফবয়টা জলে ফেলে দিয়ে মুশুই নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়ার দৃশ্যটা।

যে দুটো ক্যামেরায় সু তিয়াঁ ধরা পড়েছে, সেগুলো ওর থেকে অনেক দূরে ছিলো, কিছুতেই ওর মুখটা দেখা যাচ্ছিলো না পরিষ্কারভাবে। শুধু পরিষ্কার দেখা গেছে ওর পিঠটা।

শিন ছি নিশ্চয়ই অনেকবার ধরে দৃশ্যটা ঘুরে ফিরে দেখেছে মিন হুয়ের মতোই, সূত্র খোঁজার চেষ্টা করেছে। যেদিন সু তিয়াঁ হারিয়ে যায় সেদিন ছিলো জুন মাসের সাতাশ তারিখ। বোঝা যাচ্ছে যে শিন ছির কোনো ইচ্ছেই নেই মিন হুয়েকে ক্ষমা করে দেবার সারা জীবনে কখনো, কোনো দিনও। নিঃশব্দে মিন হুয়ে একবার তাকালো শিন ছির দিকে। নিশ্চয়ই মিন হুয়ে খুব বেশি ভাবছে। এই সংখ্যাগুলোর উচ্চারণ হয়তো একটা নিতান্তই অনিচ্ছাকৃত ঘটানা।

শিন ছি মন দিয়ে ছিলো কাজের ইমেলগুলোর উত্তর দেওয়াতে। ঝটপট টাইপ করে চলেছে, আর কখনোই কিছু মুছছে না। ওর আই-ফোনটা রুপোলি ধূসর, হালের মডেল, কোনো আবরণ নেই আঘাত থেকে রক্ষা করার, কোনো পাতলা পর্দাও নেই স্ক্রিনের ওপরে, খুব সরু আর সামান্য ভারি। আর শিন ছির গায়ের উষ্ণতা তখনো লেগে আছে ফোনটার গায়ে। মিন হুয়ে ফোনের পর্দাটা ছুঁল নিজের আঙুল দিয়ে। পর্দায় দুটো ফাটল। হয়েছে যখন শিন ছি ফোনটা ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে ছিলো। হালকা টোকা দিলো মিন হুয়ে, একটা নীল পর্দা জেগে উঠলো। একটা ইউএসবি এঁটে দিলো ফোনে, আইটিউন মোডে রিস্টার্ট হলো ফোনটা, স্ক্রিনের আলো জ্বলে উঠলো, আর স্বাভাবিক পেজগুলো এসে গেলো।

“এটা এখন ব্যবহার করা যাবে।” মিন হুয়ে ফোনটা ফেরত দিয়ে দিলো শিন ছিকে। ফোনটা নিয়ে ও সেটা ছুঁড়ে দিলো কম্পিউটারের পাশে। 

“এবার সময়।”

“বারোটা তো বেজে গেছে।” শুধরে নিলো মিন হুয়ে, “তোর ঘড়িতে কী উত্তর আমেরিকার সময় দেয়?”

শিন ছি আবার একঝলক দেখলো মিন হুয়ের দিকে, বললো, “হওয়া উচিৎ বেজিং-এর সময়, কিন্তু মনে হচ্ছে যে ঘড়িটাও ভেঙে গেছে।”

“একটা যান্ত্রিক ঘড়ি কী ভাঙতে পারে?”

শিন ছির পরনে যা যা আছে, তার কোনোটাই সস্তা নয়। ঘড়িটাও কোনো ব্যতিক্রম নয়।

“আমি ওটা কয়েকবার ফেলেছি মেঝেতে।”

ও ঘড়িটা খুলে ফেললো, গুঁজে দিলো মিন হুয়ের হাতে, “রাখ।”

সু ছন হাত ঘড়ি কিংবা বড়ো ঘড়ি সবই খুব পছন্দ করে। মিন হুয়ে ভাবলো শিন ছি ঘড়িটাকে আর চায় না, তাই বোধ হয় সু ছনকে দিয়ে দিলো খেলার জন্য।

মিন হুয়ে ধন্যবাদ জানাতে যাচ্ছে এমন সময়, অপ্রত্যাশিতভাবে শিন ছি বলে উঠলো, “সারিয়ে দে।”

মিন হুয়ে অনেক ক্ষণ চুপ করে আছে দেখে, আবার বললো, “যেহেতু তুই কম্পিউটার আর মোবাইল ফোন সারাতে পারিস, তুই নিশ্চয়ই হাতঘড়িও সারাতে পারবি, তাই না? তোর বাড়িতে সবাই, তোর বাপ-ঠাকুর্দা, ওঁরা কারিগর ছিলেন। তার মানে তোর নিশ্চয়ই জোরদার হাতে-কলমে কাজ করার দক্ষতা আছে।”

 “এর আগে আমি সারিয়েছি … কয়েকজন সহপাঠীর হাতঘড়ি।”

ঘড়িটা সাদামাটা, রুপোলি ডায়াল আর কালো চামড়ার স্ট্র্যাপ। ভেতরে চারটে ছোটো ডায়াল আছে। এমন একটা ব্র্যান্ডের ঘড়ি যার নাম মিন হুয়ে কখনো শোনে নি। একটা পয়েন্টার যেটা দিয়ে তারিখ, সপ্তাহের বার এসবের কোনো একটা মাপা যায় সেটা থেমে গেছে। মিন হুয়ে খুব জোর দিয়ে ঘড়িটার খোলসটায় চাপড় লাগাতে লাগলো, “মনে হয় এটা আটকে গেছে কোথাও। আমার কাছে স্ক্রুড্রাইভার নেই। এটা আমি বাড়িতে নিয়ে গেলে তবে সারাতে পারব।”

“আস্তে আস্তে সারা। কোনো তাড়া নেই।”

“এই ঘড়িটা … এটা খুব দামী তো।”

“এটা দামী নয়।”

“আমি যদি এটা ঠিক করে সারাতে না পারি তাহলে তুই … রেগে যাবি না?”

“আমি চাই তুই এটা সারিয়ে দে।”

“...”

“যদি তুই এটা সারাতে না পারিস, তাহলে ক্ষতিপূরণ করতে তুই ঠিক একই রকমের একটা ঘড়ি আমাকে কিনে দিবি।”

“শিন ছি, তুই অযৌক্তিক কথা বলছিস।” অনুযোগের সুরে বললো মিন হুয়ে, “আমি তো ঘড়িটা ভাঙি নি।”

“এই ঘড়িটা আমি একদিন বাথরুমে ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে ছিলাম। কারণ সেদিন আমি জানতে পেরে ছিলাম যে আমার একটা ছেলে আছে।”

মিন হুয়ে চমকে উঠলো, উদ্বিগ্ন স্বরে জানতে চাইলো, “শিন ছি, তোর কী কোষ্ঠকাঠিন্য চলছে?”

শিন ছির মুখটা সবুজ হয়ে গেলো যেনো, “আমি তোকে একটা ঘড়ি সারাতে বলেছি, তুই এতো ভাট বকছিস কেনো?”

বলেই ও আবার টাইপ করতে শুরু করলো।


মিন হুয়ে নিস্তব্ধ হয়ে বসে রইলো খানিক ক্ষণ। হঠাৎ ওর কী যেনো মনে পড়ে গেলো, নরম স্বরে বললো, “যা হোক, আমার কাছে সু তিয়াঁর জীবনের নানা সময়ের কিছু ছবি আছে। আমি ওর সার্ক্ল অফ ফ্রেন্ডস-দের থেকে ওগুলো জোগাড় করেছি। তুই কী দেখতে চাস?”

হঠাৎ কি-বোর্ডের শব্দ থেমে গেলো। শিন ছি একটা চেয়ার নিয়ে তৎক্ষণাৎ এগিয়ে এলো, “সু তিয়াঁর নানান বয়সের ছবি? আমি তো দেখি নি কিছুই। কোথায় সেগুলো? আমাকে দেখতে দে।”

মোমেন্টস-এর পনেরটা ছবিতে কেবল মাত্র পাঁচটায় সু তিয়াঁর হেডশট আছে। আর দুটো ছবি আছে আপাদমস্তক মানুষটার। তিনটে সেলফিও আছে। সব হাই-ডেফিনিসন।

মিন হুয়ে ছবিগুলো শিন ছিকে পাঠাতে চেয়ে ছিলো সেদিনই, চার বছর আগে যেদিন ওদের সম্পর্ক ভেঙে যায়। কিন্তু শিন ছি ব্লক করে দিয়ে ছিলো মিন হুয়েকে। মিন হুয়ে তাই কোনো দিনই ছবিগুলো পাঠাতে পারে নি। মনে করে ছিলো যে দেঁ চেনের তদন্ত করার যেমন প্রতিভা, তাতে শিন ছি নিশ্চয়ই ছবিগুলো পেয়ে যাবে। ও মোটেই আশা করে নি যে শিন ছি ঐ ছবিগুলো দেখতে পাবে না।

মিন হুয়ে সব কটা ছবি তখনই শিন ছির মোবাইল ফোনে পাঠিয়ে দিলো। শিন ছিও ফোনটা মুঠোয় ধরে দেখতে লাগলো আগ্রহ নিয়ে।

“হারিয়ে যাবার আগে সু তিয়াঁ কাজ করতো ল্যান জিন গতে। তুই ওখানে গেছিস কখনো?” জানতে চাইলো সু তিয়াঁ।

“গিয়ে ছিলাম। তিন বছর আগে একটা গ্রীষ্মে।” বললো শিন ছি, “দেঁ চেন নিয়ে গিয়ে ছিলো আমাকে। দুঃখের কথা হলো যে ওখানে যাবার কাজটা করতে বড্ডো দেরি করে ফেলে ছিলাম, কাজটা আমার আরো আগে করা উচিৎ ছিলো, ল্যান জিন গ ভেঙে দেওয়া হয়ে ছিলো।”

“ভেঙ্গে দেওয়া হয়ে ছিলো?”

“ওটা একটা গুয়ান্দং হুয়া রেস্টুরেন্ট হয়ে গেছে তখন। ল্বব্যানিয়াঁ এক ব্রাজিলের বাসিন্দা অনাবাসী চিনে লোককে বিয়ে করে দক্ষিণ আমেরিকায় চলে গেছে বরাবরের মতো। গুয়াংঝুয়ের মানুষজন খুব দ্রুত বদলে যাচ্ছে। দক্ষিণ-পূর্ব চিনের ঐ সমস্ত এলাকায় বাইরে থেকে কাজ করতে আসা মেয়েদের কোনো রকমের কোনো ফর্দ রাখার ব্যবস্থা নেই যে সেই ফর্দ থেকে কাউকে খুঁজে পাওয়া যাবে। পরিবার খুঁজে বার করার ওয়েবসাইটের শও ওয়ানকে আমি জিজ্ঞেস করেছি, ও বলেছে সু তিয়াঁ ওখানেই ছিলো। প্রাইভেট মেসেজ, ফোন কল এসব থেকে তাই দাঁড়ায়। আমার নিজের উইচ্যাট নেই। আমি জানি যে সার্ক্ল অফ ফ্রেন্ডস ব্যাপারটা গত দু বছরে হয়েছে …”

একটা ব্যাপার নিশ্চিত যে সু তিয়াঁর কথা বলার সময়ে শিন ছি অনেক কথা বলে। সেটা খুব চটপট বুঝে গেলো মিন হুয়ে। যদিও মিন হুয়ে খুব মনোযোগ দিয়ে শুনছে বলেই মনে হচ্ছিলো, তবুও হঠাৎ করে কথা বলার উৎসাহ হারিয়ে ফেললো শিন ছি, দুম করে থেমে গেলো কথা শেষ হবার আগেই। মাথা নিচু করে ছবিগুলো দেখতো লাগলো মন দিয়ে।



খুব আস্তে আস্তে দেখছিলো। পনেরটা ছবি দেখতে সময় নিলো তিরিশ মিনিট। যখনই সু তিয়াঁর ছবি এলো তখনই ও জুম ইন আর জুম আউট করে করে দেখলো বার বার।

“ছবির সাথে আগেকার সু তিয়াঁর কোনো ফারাক আছে?” জানতে চাইলো মিন হুয়ে।

“কি করে জানবো আমি?” বাঁকা হাসি নিয়ে বললো শিন ছি, “তখন আমি চোখে ভালো দেখতে পেতাম না, আমি তো কোনো দিন স্পষ্ট করে ওর মুখ দেখতেই পাই নি। অনেক সময় মাথার পিছনের সাথে সামনে মুখের দিকের তফাতই করতে পারতাম না।”

“ও ভীষণ প্রাণবন্ত আর অনেক কথা বলে।”

“আসলে ও ছিলো খুবই অন্তর্মুখী। বেশি কথা বলতো না। যেহেতু আমি চোখে দেখতে পেতাম না ভালো, ও আমাকে অন্ধ মানুষ মনে করতো, আমাকে অভ্যস্ত করে তুলে ছিলো ওর নিজের গলার স্বরে আমার জন্য সব কিছুর বিবরণ দিতে দিতে। তার জেরে ও ক্রমশ এমন একটা মেয়ে হয়ে গেছিলো যে অনেক কথা বলে।”

“তোর স্বভাব নিয়ে ও প্রচুর অনুযোগ করেছে ওর ডায়েরিতে।”

“তার কারণ ওর নিজের স্বভাবটা খুব ভালো ছিলো।” হালকা সুরে বললো শিন ছি, “যদি কারুর স্বভাবটা খুব ভালো হয়, তবে চারপাশের হাঙরেরা সেটার গন্ধ টের পেয়ে যায় চট করে আর চলে আসে তার সুযোগ নিতে।”

“তাহলে, তুই তাদের মধ্যে একজন।”

“আমি একটা কুকুর, ওকে সারাক্ষণ পাহারা দিতাম। কেউ ওর ভালোমানুষীর সুযোগ নেবার সামান্য চেষ্টা করলেই আমি দৌড়ে গিয়ে তাদের কামড়ে দিতাম।”

মিন হুয়ের দুঃখ ঘনিয়ে উঠলো, “তুই ঠিকই বলেছিস, আমি সব চুরি করে নিয়েছি, সব ধ্বংস করে দিয়েছি।”

শিন ছি শ্বাস ফেলে বললো, “আমিও চুরি করেছি, এটা একটা ষড়যন্ত্র।”

মিন হুয়ে অবাক হয়ে গেলো।

“অনেক দিন পর্যন্ত আমি জানতাম না যে ব্রাউনরা, যাঁরা আমাকে দত্তক নিয়ে ছিলেন, তাঁরা আসলে একটা মেয়েকে দত্তক নিতে চেয়ে ছিলেন। কারণ ওঁদের তখনই এক দত্তক পুত্র ছিলো, যাঁকে ওঁরা চোঙ্গুয়ো থেকেই নিয়ে গিয়ে ছিলেন, সে আমার ভাই এরিক। চোঙ্গুয়ো সরকারের দত্তক নেবার পদ্ধতি খুবই কড়া। ওঁরা পুরো এক বছর অপেক্ষা করে ছিলেন সু তিয়াঁর সাথে দেখা করার জন্য। সু তিয়াঁর জন্যই অনাথাশ্রম থেকে সুপারিশ করা হয়ে ছিলো। অপ্রত্যাশিতভাবে যখন ওঁরা সু তিয়াঁর সাথে দেখা করেন, তখন সু তিয়াঁ মত বদলে ফেলে, আর বলে যে একটা ছেলে আছে যাকে কেউ দত্তক নিলে বেশি ভালো হয়। ওমেগুওয়াযেতে চায় না কারণ ওকে চুরি করে আনা হয়েছে সেই জন্য ও অনাথাশ্রমে থেকে ওর মায়ের জন্য অপেক্ষা করতে চায়। ব্রাউনরাও মত বদলে ফেলে।”

“বিদেশীরা চোঙ্গুয়ো আরতং দত্তক নেবে, নিজেদের পছন্দ মতো নিতে পারে না?”

“অনেক সময় লাগে, লাইনে অপেক্ষা করতে হয় অনেক দিন একটা স্বাস্থ্যবান বাচ্চাকে দত্তক নেবার জন্য। কিন্তু ব্যাপারটা অনেক তাড়াতাড়ি মিটে যায় যদি দত্তক নেওয়া বাচ্চা প্রতিবন্ধী হয় আবার তার ওপরে তার হৃদরোগ থাকে। অনাথাশ্রমের শিক্ষকেরা সবাই বলতেন যে আমি ভাগ্যবান আমার শরীরের বেহাল অবস্থাটার হাল ফেরানোর জন্যমেগুওয়াউপযুক্ত জায়গা, আর ব্রাউন পরিবারও অবস্থাপন্ন। ওঁরা নিশ্চিতভাবে আমার চোখটা সারিয়ে তুলবেন। আমার জন্য চোখে দৃষ্টি ভালো হওয়াটা একটা নিশ্চিত ভালো ব্যাপার। কিন্তু আমি সু তিয়াঁর থেকে আলাদা হয়ে যেতে চাই নি। এটা নিয়ে আমাদের ভীষণ ঝগড়া হয়ে ছিলো। সু তিয়াঁ বার বার আমাকে বোঝানোর চেষ্টা করে ছিলো যে এই বিচ্ছেদ তো সাময়িক। হ্যাঁ, ও আমার জন্য অপেক্ষা করবে, বড়ো হয়ে আমার চোঙ্গুয়োতে ফিরে এসে ওকে খুঁজে বার করা পর্যন্ত। ওর ভয় ছিলো যে আমার মন খারাপ হবে, তাই যাবার দিন ও আমার সঙ্গে দেখা করতেও চায় নি …”

“তাই তুই ঐ চিঠিটা লিখে ছিলি।”

শিন ছি ঘাড় নাড়লো, ওর চোখ দুটো হালকা লাল হয়ে উঠেছে, “দশ বছরেরও বেশি, আমি দিন রাত ভেবে চলেছি, যে মানুষটামেগুওয়াগেলো সে যদি সু তিয়াঁ হোতো, তাহলে নিশ্চিতভাবে ও-ও আমার মতো একটা আরামের জীবন পেতো, যেমন আমি পেয়েছি, ভালো শিক্ষা পেতো, পয়সা রোজগার করার জন্য খুব কষ্টকর শারীরিক পরিশ্রম করতে হতো না, তার জায়গায় আমার নিজেকে দেখতে আমার একদম ভালো লাগে না। ও আমাকে একটা বহুমূল্য সুযোগ দিয়ে ছিলো আজকে আমি যা হয়ে উঠেছি তা হয়ে ওঠার জন্য। যখন আমি ওর প্রতিদান শোধার অবস্থায় এলাম, তখন ও আর নেই …”

“আমার তা মনে হয় না।”

“হুহ্‌?”

“তোর জন্য তোর চোখের সেরে ওঠাটা জরুরি ছিলো। ওর জন্য জরুরি ছিলো ওর মায়ের সাথে ওর দেখা হওয়াটা। তুই মেইগুয়োতে সুখে ছিলিস। ও-ও সুখী হয়ে ছিলো যখন ওর সাথে ওর মায়ের দেখা হয়ে ছিলো। ও মায়ের সঙ্গে ছিলো, মায়ের দেখা শোনা করেছে ও যতো দিন না ওর মা মারা গেছেন, ওর মনে কোনো অনুতাপ ছিলো না। তোরা প্রত্যেকেই যার যার প্রাপ্য পেয়েছিস, কারুর কাছেই কারুর কোনো পাওনা বাকি নেই।”

“কারুর কাছেই কারুর কোনো পাওনা বাকি নেই?” শিন ছি মাথা তুলে বিদ্রুপ করলো, “এমনটাই মনে করিস তুই? মিন হুয়ে, কেনো তুই মরতে গিয়ে ছিলি শুরুতে?”

“...”

“চেং ছিরাং-এর কারণে, তাই তো?”

মিন হুয়ে গালের পেশি শক্ত হয়ে উঠলো হঠাৎ করে, ওর চোয়ালে ব্যাথা করতে লাগলো, “হ্যাঁ, চেং ছিরাং-এর জন্য।”

“তাহলে আবার তুই ওর কোলে বসতে গেলি কেনো এখন?”



“তুই যা ভাবছিস, ব্যাপারটা তা নয়।”

“আমি তোর কথা ভাববো, এতো উৎসাহ আমার নেই।”

ওর রাগ আবার চড়ে গেলো, “তুই সু তিয়াঁর যোগ্য নস! দেখ তাকিয়ে, তোর জীবন বাঁচিয়ে ও কী পেলো! তুই তো ফের চেং ছিরাং-এর শরীরই আঁকড়ে ধরলি আবার, সু তিয়াঁর মরে যাবার কোনো মানে রইলো না।”

“আমি এই নিয়ে কাউকে কখনো কিছু বলি নি, কিন্তু তুই লোকটাকে চিনলি কী করে?” মিন হুয়ে প্রতি প্রশ্ন করলো, “ওরকম একটা লোকের সাথে কখনো ব্যবসা করিস না, লোকটা ভালো নয়! লোকটার মিথ্যাচারের কোনো সীমা নেই!”

“লোকটার মিথ্যাচারের কোনো সীমা নেই? উম্‌, তুই কী তোর নিজের কথা বলছিস?”

“আমি …”

শিন ছি আবারও মিন হুয়েকে উপেক্ষা করলো, ফোন বন্ধ করে দিয়ে, ইমেলের উত্তর দিয়ে চললো। 

“শিন ছি, তোর সঙ্গে আমার কিছু কথা আছে।” বেহায়ার মতো বললো মিন হুয়ে, “আমি আর আমার টিম একটা প্রোডাক্ট তৈরি করছি, যেটা আসছে মাসে প্রথামাফিক বাজারে আসবে। বেশ কিছু কাজ এখনো বাকি আছে। আমাকে আগামী পনেরো দিন ওভারটাইম কাজ করতে হবে। তুই কী আমাকে সাহায্য করবি? সু ছনের খেয়াল রাখার ব্যাপারে?”

এটা একটা কাজ যেটা মিন হুয়ে কিছুতেই চব্বিশ ঘন্টার জন্য ফেলে রাখতে পারে না। প্রথম যে মানুষটার কথা ওর মনে হয়ে ছিলো সে হলো ঝৌ রু জি, যাই হোক ঝৌ রু জির সাথেই সব থেকে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ওর। কিন্তু হাসপাতালেই ঝৌ রু জির অগুণতি সার্জারি আছে, তার ওপর বাড়ি ফিরে ওকে ওর বউয়ের দেখাশোনা করতে হবে।

ও চেন জিয়া জুনের কথাও ভেবে ছিলো। খুব কঠিন হতো না চেন জিয়া জুনকে আধখানা মাস কাজের থেকে ছুটি নিতে বলতে, আর চেন জিয়া জুনও অনিচ্ছুক হতো না। কিন্তু চেন জিয়া জুনের কোনো অভিজ্ঞতা নেই বাচ্চাদের খেয়াল রাখার ব্যাপারে, তার ওপরে বাবা-মা হবার ব্যাপারে ও কিছুই জানে না, তার ওপরে ওর মধ্য এখনো খানিক “রাস্তার ছেলে” ভাবটা রয়ে গেছে। ওর স্বভাবটা এখনো ঝগড়াটে, মারকুটে আর নিষ্ঠুর। মিন হুয়ের ভয় আছে যে ওর ছেলে ইস্কুলে হয়তো ফেল করবে চেন জিয়া জুনের প্রভাবে বেশি থাকলে, তাই চেন জিয়া জুনের ব্যাপারে মিন হুয়ে স্বচ্ছন্দ নয়।

সাও মু-র বর য়িন শু সারা দিন বাড়িতেই থাকে। কিন্তু ওঁর নিজেরই দুটো বাচ্চা আছে। উনি এক দিন আধ দিন হঠাৎ দরকার পড়লে সু ছনের দায়িত্ব নিতে পারেন, কিন্তু এক মাসের জন্য সু ছনকে ওঁর কাছে রেখে দেওয়া … উনি নিশ্চিতভাবে পেরে উঠবেন না।

নার্স বা ন্যানি রেখে দেওয়া খুব কঠিন হবে না। পয়সারও অসুবিধে নেই। কিন্তু অপরিচিত লোকেদের ব্যাপারে সু ছন ভীষণ খুঁতখুঁতে। এদিকে মিন হুয়ে না থাকলে অপরিচিত মানুষের সাথে আলাপ করে নেওয়াটাও কঠিন সু ছনে পক্ষে। 

সব দিক ভেবেই মিন হুয়ে স্থির করেছে যে শিন ছিকেই বলবে একটা মাস সু ছনের দেখাশোনা করতে।

“আমি তো বলেছি যে ও যতোদিন না হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাচ্ছে আমি ওর দেখাশোনা করবো। তুই যদি খুব ব্যস্ত থাকিস, তবে এই দশদিন তোর এখানে সময় দেবার দরকার নেই।’

“পনেরো দিন।”

“আমি বেজিং-এ থাকি। ঘন ঘন নিউ ইয়র্কে যাই। তুই যদি মেনে নিস যে বাচ্চা আমার সঙ্গে থাকবে -” থামলো শিন ছি, “পনেরো দিন বলিস না। কিচ্ছু যাবে আসবে না যদি পনেরো বছরও হয়।”

“আমি দু;খিত, বিনচেং ছেড়ে কোথাও যেতে পারবে না সু ছন।”

“তাহলে তুই কী বলতে চাস? আমি আমার সর্বস্ব উজাড় করে দেবো, আর বদলে কিছুই পাবো না?”

“হ্যাঁ।”

“তোর এতো দুঃসাহস হলো কী করে এমন একটা অযৌক্তিক অনুরোধ - ?”

“কারণ তুই ওর বাবা।”

মিন হুয়ে আকাশের দিকে তাকালো, “এটাই দায়িত্ব। একবার কাঁধ পেতে দিলে, এটা তোর কাঁধেই রয়ে যাবে। ফেলে দিতে চাইলেও, ফেলে দেওয়া যায় না, কিছুতেই।”



~~~~~~~~~~~~

সম্পূর্ণ বই বিনামূল্যে : https://dl.bookfunnel.com/lcj5vznt96

Link to Previous Post in the Series : https://projectionofnaught.blogspot.com/2024/09/jpda-chapter-38.html

Link to following Post in the Series : https://projectionofnaught.blogspot.com/2024/09/jpda-chapter-40.html

Readers Loved