Thursday, September 12, 2024

JPDA - Chapter 37

৩৭. বাতাসের শব্দ

 


“আমিও এরকম গুজব শুনেছি।” বললো, সাও মু, “আমি তো হে হাই শিয়াংকে সরাসরি জিজ্ঞেসও করেছি। উনি তো বললেন এরকম হওয়া অসম্ভব, বলার সময় গলার স্বরে বেশ একটা নিশ্চিত ভাব ফুটে উঠে ছিলো।”

হে হাই শিয়াং-এর সঙ্গে হেড কোয়ার্টার্সের সম্পর্কটা বেশ ঘনিষ্ঠই বলা চলে। উনি বহু পুরোনো, নেতৃস্থানীয় মানুষদের সঙ্গে যোগাযোগও রাখেন, তাঁদের গুরুত্বও দেন। যদি কোনো সমস্যা হয় তো, হে হাই শিয়াং নিশ্চয়ই আগে থেকে জানতে পারবেন।

মিন হুয়ে ভাবলো একটু, তারপর জানতে চাইলো, “সাবসিডিয়ারি বেচে দেওয়া কঠিন? নাকি, বা’অ্যান বেচে দেওয়া অসম্ভব? য়ুআঁলাই-এর বিক্রিবাটা গত বছর থেকেই পড়তির দিকে। স্টকের দামও পড়ছে রোজ। ওদের অবস্থা যে ভালো নয় সেটা তো আর লুকিয়ে রাখার উপায় নেই। আমাদের বা’অ্যানের কথাই ধরো -”

রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টে প্রচুর টাকা লাগে, হেড কোয়ার্টার্সের প্রচুর ফান্ড, টাকার ব্যাপারে ওঁরা বেশ দরাজ বরাবরই, সব সময়েই অনুরোধে সাড়া দিয়েছেন ওঁরা। আগের বছরের শেষার্ধ থেকে ওঁরা হঠাৎ করেই খরচ কমিয়ে আয় বাড়ানোর দিকে ঝোঁক দিচ্ছেন। এদিকে বা’অ্যানের রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টে তৈরি প্রোডাক্টগুলো এখনো পরীক্ষার স্তরে আছে, আর অবশেষে বা’অ্যান সফল হয়েছে অনেকগুলো হাসপাতালের সাথে পরীক্ষা-নিরীক্ষার চুক্তি করতে, তবে এখনো বা’অ্যান হাসপাতালগুলোর থেকে পয়সা চাইছে না ওদের প্রোডাক্ট ব্যবহার করার জন্য। যে দুটো প্রোডাক্টের দাম পাওয়া যাচ্ছে, সেগুলো গুঁজে দেওয়া হয় য়ুআঁলাইয়ের যন্ত্রপাতির সাথে, একেকটা প্রোডাক্টকে ব্যবসায় লাগানোর কাজটা এখনো অনেক দূরে।

মিন হুয়ে যতো ভাবছে বিষয়টা ততো ওর মনে হচ্ছে যে শা শি কাই ঠিক বলেছে। যেহেতু বা’অ্যান কোনো পয়সা রোজগার করে না, অথচ প্রচুর খরচা হয় বা’অ্যানের জন্য, সেই জন্য সম্ভাবনা খুব বেশি যে বা’অ্যানকে বেচে দেওয়া হবে।

“উনি বলেছেন যে বা’অ্যান বিক্রিও হয়ে যাওয়াটা অসম্ভব। কিন্তু আমি তো বা’অ্যান বেচে দিতে চাওয়ায় কোনো সমস্যা দেখছি না। এখন তো বাজারে প্রতিযোগিতা বেশ জোরদার। সবাই একই কাজ করছে প্রায়। তবে তুমি যদি কোনো হস্টাইল বায়ার পাও, তবেই সমস্যা।”

“হস্টাইল বায়ার?”

“কোনো কোম্পানি যারা বা’অ্যানের মতো একই কাজ করে, তারা বা’অ্যানের রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের ফলাফলটা নিয়ে প্রতিযোগিতা মুছে ফেলতে চায়। একবার পেয়ে গেলে নিজেদের হাতে, আমাদের আর অ্যান্ড ডি টিমটাকেই হয়তো ভেঙে দেওয়া হবে। যে প্রজেক্টগুলোতে কাজ হচ্ছে সেগুলোও ভেঙে চুরে দেওয়া হবে। আমাদের কাউকে কাউকে হয়তো তাড়িয়ে দেওয়া হবে, কেউ কেউ থেকে যাবে, কাউকে কাউকে অন্য ডিপার্টমেন্টে পাঠানো হবে …”

দরজাটা বন্ধ করে দিয়ে মিন হুয়ে নিচু গলায় বললো, “কেমন হবে যদি আমরা সবাই একসাথে রিসাইন করি আর নতুন করে শুরু করি?”

সাও মু অনেক ক্ষণ তাকিয়ে রইলো মিন হুয়ের দিকে, কিন্তু কিছুই বললো না। 

ওর গায়ে টোকা দিয়ে মিন হুয়ে বললো, “আমাকে বোলো না যে তুমি এমনটা কখনো ভাবো নি।”

কোম্পানিতে সবাই জানে সাও মু আর হে হাই শিয়াং-এর টক্করটা সমানে সমানে। হে হাই শিয়াং বয়স্ক আর পিঠে ছুরি মারায় ওস্তাদ, কিন্তু লোকটা জানে যে সাও মুয়ের প্রযুক্তিবিদদের বদলি লোক চট করে পাওয়া যাবে না আর সাও মুয়ের জন্য তার প্রযুক্তিবিদরা যেমন ক্ষমতার উৎস তেমনই তাকে মহিমাও দিয়েছে। কোনো অসন্তোষের কারণ দেখা দিলে, রাগারাগি হলে, কেউ বজ্রবিদ্যুতের ঝলকানি বা ঝড়বৃষ্টি কিছু দেখতে পায় না তেমন, আর সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রযুক্তিগত সিদ্ধান্ত নেবার দায়িত্বটা রয়ে যায় সাও মুয়েরই, আর সবাই বেশ একসাথে রয়ে যায়, হাজার বিরোধ সত্ত্বেও।

অনেক বারই শিল্পক্ষেত্রে গুজব শোনা গেছে যে অন্য অনেক কোম্পানি সাও মুকে ছিনিয়ে নেবার চেষ্টা করেছে। কিন্তু অবশেষে সাও মু রয়ে গেছে বা’অ্যানেই, য়ুআঁলাইয়ের পুরোনো মানুষগুলোর প্রতি তার আনুগত্যের কারণে।

“প্রথমত, আমাদের মধ্যে কেউ কেউ যদিও ছেড়ে দিতে পারি, মানে আমি বলছি মূল প্রযুক্তিতে কাজ যাঁরা করেন তাঁদের কথা, কিন্তু প্রজেক্টগুলো কিংবা প্রোডাক্টগুলো আমাদের সঙ্গে যাবে না, তার সঙ্গে যাবে না যে পেটেন্ট আর সার্টিফিকেটগুলোর জন্য আমরা আবেদন করেছি সেগুলো। সেগুলো সবই বা’অ্যানের সম্পত্তি। আমরা কি শুরুর থেকে শুরু করতে পারবো?”

সাও মু নিজের হাতদুটো রাখলো মিন হুয়ের কাঁধে, দীর্ঘশ্বাস ফেললো, “তাছাড়া, আমরা নন-কম্পিট শর্তে সই করেছি। তাই না?”

মিন হুয়ে নিজের কপালে একটা চাপড় মারল, উগরে দিলে হতাশা, “যাচ্ছেতাই, আমি তো নন-কম্পিট শর্তের কথা ভুলেই গিয়ে ছিলাম।”

শর্তে বলা আছে যে যে দিন থেকে শর্ত শেষ হবে বা কোম্পানির সঙ্গে শ্রমচুক্তি বাতিল হবে সেদিন থেকে পরবর্তী দু বছর কর্মীরা এমন কোনো ব্যবসা করতে পারবে না বা ব্যবসায় অংশ নিতে পারবে না, যে ব্যবসা কোম্পানির ব্যবসার প্রতিযোগী। কোম্পানি গড় মাইনের তিরিশ শতাংশ দেবে।

এর ফলে সাও মু, মিন হুয়ে, কোম্পানির মূল প্রযুক্তিবিদেরা আর ওঁদের মতো আরো অনেকে সহজে কোম্পানি ছেড়ে যেতে পারবে না।

“খুব বেশি চিন্তা কোরো না। গুজব যদি সত্যিও হয়, আমাদের কাজ যাবে না। তবে বড়ো ব্যাপার হবে ওপরওয়ালা বদলে যাবে। য়ুআঁলাই কোনো দিনই বা’অ্যানের দিকে বিশেষ মনোযোগ দেয় নি। য়ুআঁলাইয়ের সাথে হয়তো বা’অ্যানের ভবিষ্যতও খুব স্পষ্ট নয়। কেমন হবে যদি এমন কেউ কোম্পানিটা নেয় যাঁর সাথে আমাদের দারুণ ভাব-ভালোবাসা হয়ে যাবে? একসাথে সমান তালে উৎপাদন চলবে। সেটা তো ভালোই হবে অন্য হাতে পড়ে, এতো প্রায় ধনীর ঘরে বিয়ে করার মতো।”

সাও মু বেশ আশাবাদী, “আমি হে হাই শিয়াং-এর সাথে কথা বলব যাতে উনি হেড কোয়ার্টার্সে কী চলছে সে ব্যাপারে নজর রাখেন। যদি গুজব সত্যি হয়, তবে ওঁকে সমস্ত সম্পর্ক ব্যবহার করে আমাদের টিম আর আমাদের প্রজেক্টগুলোকে ধরে রাখতে হবে আর যাঁরা কিনবেন কোম্পানি তাঁদের সঙ্গে বোঝাপড়া করতে হবে যে আমাদের বৈজ্ঞানিক গবেষণাগুলোতে আর প্রযুক্তিগত বিষয়গুলোতে ওঁরা যেনো নাক না গলান। এমনকি এসব কেনার সময়ে চুক্তিতেও লেখা থাকতে হবে।”

“তা ঠিক, মালিক বদলে গেলে, মালিক হয়তো আমাদের কাজ-কারবারের সাথে খুব একমত হবেন না। তাঁদের ভাবনা-চিন্তা আমাদের সাথে নাও মিলতে পারে। হেড কোয়ার্টার্স তো বেচতে চায় শুধু ভালো দাম পাবার জন্য, তাতে আমাদের কপাল খুলবে নাকি কপাল পুড়বে তাতে ওদের কিছুই যায় আসে না।”

মিন হুয়ের নিজের পয়সাকড়ির অবস্থা এলোমেলো। ঝৌ রু জিকে ডিভোর্স করার পরে ওর পারিবারিক আয় অর্ধেক হয়ে গেছে। চেন জিয়া জুনকে ভরসা দিতে অনেকগুলো টাকা গেছে। বা’অ্যানের মেডিকেল ইন্স্যুরেন্স খারাপ নয়, কিন্তু সু ছনের সার্জারির সব খরচ তো আর পাওয়া যাবে না। আবার অপরেসনের পরের চিকিৎসাটাও সস্তা নয়, তার ওপর, মিন হুয়ে ছেলের জন্য সেরা ব্যবস্থাটাই চায়।

“চিন্তা কোরো না মিন হুয়ে।” চোখে মুখে গাম্ভীর্য নিয়ে সাও মু তাকালো মিন হুয়ের দিকে, “আমি দেখছি কী করা যায়।”

“হয়তো আমি বড্ডো বেশি দুশ্চিন্তা করছি।” মিন হুয়ে হাসি মুখে বললো।

অবাক হবার কিছুই নেই যে হে হাই শিয়াং তাড়াহুড়ো করছে। ফুসফিসের অসুখ নির্ণয় ও চিকিৎসার একটা সিস্টেম, যেটা বা’অ্যান সম্পূর্ণ নিজের উদ্যোগে বানিয়েছে, সেই প্রোডাক্টটা তার এসকিউএ টেস্টের পাঁচ নম্বর, আর শেষ দিনে পৌঁছেছে। সব কিছু খুব ভালো গেছে প্রথম তিনদিনে, চার নম্বর দিনে কিছু ছোটোখাটো ত্রুটি ধরা পড়েছে। 

মিন হুয়ে আর ঝ্যাং শও হান আলাদা আলাদা করে বাগগুলোকে সারিয়েছে, খুব তাড়াতাড়ি সমাধান করে দিয়েছে। যেই মিন হুয়ে একটা স্বস্তির শ্বাস ফেলে ভাবলো যে এবারে ডেলিভারি করে দেওয়া যাবে, অপ্রত্যাশিতভাবে আরো কিছু বেশি ঝামেলার বাগ দেখা দিলো শেষ দিনে। ফলে মিন হুয়ে সকলকে ওভারটাইম কাজ করতে বলতে বাধ্য হলো। তার জেরে রাত নটার সময় সব কাজ শেষ হওয়া অবধি ভীষণ ব্যস্ত রইলো।

এই সময়ে ফোন বাজলো, মিন হুয়ে ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখলো শিন ছি ফোন করছে। 

“ এখনো কাজে?” শিন ছি জানতে চাইলো হালকা চালে। 

“প্রোডাক্ট টেস্টিং চলছে, বাগ ফিক্সিং করছি।”

“চলে আয়, সু ছন কাঁদছে।” ওর গলাতে যেনো উদ্বেগ।

“আমি এখন যেতে পারবো না। বিছানার ঠিক পাশে, টেবিলটাতে একটা আইপ্যাড আছে। ওতে ‘লিটল আইনস্টাইন’ আছে, ওকে দেখা।”

“বাদ দে, ওসব কাজ করে নি।”

“তাহলে ওকে হাবিজাবি বকে ভুলিয়ে রাখ।” কোড বদলাতে বদলাতে বললো মিন হুয়ে, “কিংবা, ওকে নিচের তলায় ঘুরিয়ে নিয়ে যা।”

“ওর তোকেই চাই।” শিন ছির গলায় হতাশা, “ও বুকের দুধ চায়।”

মিন হুয়ে ওর পাশে বসে থাকা সুপারভাইসর, হে হাই শিয়াং-এর দিকে দেখলো, “দরজা দিয়ে বেরিয়ে, বাঁদিকে একটা ক্যান্টিন আছে। ওরা দই বেচে। সু ছনের পছন্দ পিচ-এর গন্ধমাখা দই।”

“ও যা চায়, তা হলো তোর দুধ,” শিন ছিকে উদ্ভ্রান্তের মতো শোনালো, “শিগগির আয়।”

“প্রোডাক্ট ডেভেলপমেন্ট চলছে। সিস্টেম টেস্ট হচ্ছে। কাল ডেডলাইন। ওহ্‌, যা হোক, ঝৌ রু জি এখনো হাসপাতালেই আছে বোধ হয়। ওর আজকে নাইট শিফ্‌ট। তুই ওকেও খুঁজে নিতে পারিস।’

“ওকে খুঁজে নেব?” অধৈর্য হয়ে চেঁচিয়ে উঠলো শিন ছি, “আমি দেখেছি ও কী করেছে, ওর কী লজ্জা করে না?”

“শিন ছি, একটা তিন বছরের বাচ্চা, কখনো কখনো কাঁদবে সেটাই স্বাভাবিক। কোথাও কোনো গন্ডগোল না থাকলেও কাঁদতে পারে, সেটাই স্বাভাবিক। ঘাবড়ে যাস না। ঠিক আছে? ও হয়তো ঘুমোতে চাইছে। আর ঘুমিয়ে পড়ার আগে একটু বায়না করবে।”

“আমি যতোই ভোলাই না কেনো,ও কিছুতেই শান্ত হবে না। নার্স এসে ছিলো, দেখে বলে গেছে ও ভালোই আছে। কিন্তু ওর শুধু ওর মাকে চাই। তোকে আসতেই, ব্যাপারটা সামলাতেই হবে।”

“তাহলে … আমাকে আরেক ঘন্টা দে, ছিং!” আর কিছু বলতে মিন হুয়ের সাহসে কুলোলো না। তাড়াতাড়ি ফোন রেখে কাজে ফিরে গেলো, পুরো দমে।

“কেমন চলছে কাজ? হবে শিগগির?” হে হাই শিয়াং তাকালো গাদাগাদি হয়ে থাকা উইন্ডোগুলোতে, পর্দায় ছড়িয়ে থাকা কোডের রাশির দিকে, “আজ করতে পারবে, তোমরা? কোড বদলাতে তিন ঘন্টা লাগবে, অবশ্যই তার সঙ্গের সব বিবরণও বদলাতে হবে ডকুমেন্টেসনে।”

মিন হুয়ে দুম করে কফিতে চুমুক লাগালো, কথা বলতে বলতে বলতে টাইপ করছিলো, কি-বোর্ডে টকাটক ঠকাঠক শব্দ তুলে, “কেমন হয় - যদি আমি কাজটা আমার সঙ্গে বাড়ি নিয়ে যাই আর বদলগুলো করে দি? তার সঙ্গে আমার ছেলেরও দেখাশোনা করি?”

“না, না, না! এরকম একটা গুরুত্বপূর্ণ টেস্টের একদম শেষ দিনে তুমি এসেছো। আমি অপেক্ষা করতে পারবো না …”

“আমি তো সারাক্ষণ অনলাইনই ছিলাম।”

মিন হুয়ে বললো, “আপনি আগে চলে যান না কেনো,হে জঁ? আমি থাকলেই সব ঠিক থাকবে এখানে।”

“বাজে কথা বন্ধ করো, আর তাড়াতাড়ি কাজ করো।”

মিন হুয়ের আসল উদ্দেশ্য ছিলো হে হাই শিয়াং যেনো চলে যান, তাহলে ও নিজেও চলে যেতে পারবে সেই সুযোগে। হাসপাতালে যাবে, সু ছনকে ঘুম পাড়াবে আর আবার ফিরে আসবে।

ও একদম ভাবে নি যে হে হাই শিয়াং রয়ে যাবেন কাজ শেষ হওয়া পর্যন্ত। ওপরওয়ালার চোখের সামনে ও ফোনের দিকে তাকাতে সাহস করে না। ফোনটা কেঁপে চলেছে সমানে দেখে, ও কেবলমাত্র উপেক্ষা করার ভান করলো। 

এটাও ভাবে নি যে চাপ যতো বাড়বে কাজটা ততো ফলপ্রসূ হবে। মিন হুয়ে মাথা না তুলে কাজটা করে গেলো একানাগাড়ে দু ঘন্টা, রিভিসন শেষ করে দিলো, টেস্টটা পাশ করে গেলো, ধড়পড় করে নিজের জিনিসপত্র গুছিয়ে নিয়ে দৌড় লাগালো নিচের তলায়। 



দৌড়োতে দৌড়োতেই ফোনে করলো, “শিন ছি, আমার কাজ হয়ে গেছে। সু ছন কী করছে? এখনো কী কাঁদছে? ওকে বল যে ওর মা এক্ষুণি আসবে ওর কাছে।”

উল্টোপাড়ে ফোনটা তখনই ধরে নিলো, কিন্তু কোনো উত্তর পাওয়া গেলো না অনেক ক্ষণ ধরে। মিন হুয়ে কথা শেষ করার প্রায় পাঁচ সেকেন্ড পরে শোনা গেলো শান্ত স্বরে শিন ছি বলছে, “ও ঘুমিয়ে পড়েছে।”

“বেশ, ভালো।” মিন হুয়ে স্বস্তির শ্বাস ফেললো একটা, “তুই কী ক্লান্ত? আমি এখনই ফিরে যাচ্ছি, তোর বদলে থাকবো ওখানে।”

কথা বলতে বলতেই ও বাড়িটার বাইরে বেরিয়ে এসেছে দৌড়ে, যখন ও পার্কিং লটের দিকে যাচ্ছিলো ওর ই-মিউলটা খুঁজে বার করতে, ও শুনতে পেলো একটা কালো গাড়ি ওর সামনে হঙ্ক করছে। 

ফোনে শিন ছি বললো, “গাড়িতে উঠে পড়।”

মিন হুয়ে হৃদয় উষ্ণতায় ভরে এলো, প্রায় কেঁদেই ফেললো ও।

এই অন্ধকার রাতে, আসলে শিন ছি নিজে এসেছে ওকে কাজ থেকে ফেরার পথে নিয়ে যাবে বলে, সবার চোখের সামনে! ঝ্যাং শও হান, তাং শিন নিং সমেত একদল লোক তখনই দরজা দিয়ে বাইরে এলো।

“মিন হুয়ে জিয়ে!” চেঁচিয়ে বললো তাং শিন নিং, “একটা গাড়ি ডেকেছো? অতো তাড়াহুড়ো করে যেও না। চলো একসঙ্গে কিছু খেতে যাই এই রাত দুপুরে?”

“তোমরা খাও, আমি ফিরে যাই, ছেলেটাকে দেখি একটু।”

মিন হুয়ে বেশি কথা বলার সাহস করলো না। যখন ড্রাইভার বেরিয়ে এসে ওর জন্য দরজাটা খুলে দিলো, ও ভেতরে গিয়ে বসলো।



শিন ছি পিছনের সিটে বসে ছিলো, ডান কানে ব্লু টুথ ইয়ার প্লাগ লাগিয়ে, দ্রুতহাতে কম্পিউটারে কী সব টাইপ করে চলে ছিলো, যেনো ই-মেলের উত্তর দিচ্ছিলো। মিন হুয়েকে বসতে দেখে কম্পিউটারটা বন্ধ করে একপাশে সরিয়ে রাখলো। 

বেশ অনেক ক্ষণ দুজনেই কোনো কথা বললো না। শেষে মিন হুয়ে মুখ খুলল আগে, “কী করে ঘুম পাড়ালি ওকে?”

“ও যদি তোরটা না পায়, তো আমি আমারটা ছুঁয়ে থাকতে দিয়েছি।”

“কোথায় থাকিস তুই? আমি তোকে নামিয়ে দিয়ে যাবো।”

“মিংসেন কমিউনিটি, সামনেই। আর পাঁচ মিনিটে পৌঁছে যাবো।” মিন হুয়ে ইচ্ছে বললো, “আগে হাসপাতালে যাই। আমি সু ছনকে দেখতে চাই।”

“কাল দেখবি। আমি ফিরে যাবো, ওর সঙ্গে থাকব, তারপরে।”

মিন হুয়ে মনে মনে ভাবছিলো, ওর সাথে শিন ছির যা সম্পর্ক এখন তাতে মনে হয় না শিন ছি ওকে নিতে এসেছে শুধু ওকে বাড়ি পৌঁছে দেবে বলে। ওর নিশ্চয়ই কিছু বলার আছে।

একটাও শব্দ বলার আগেই ওরা পৌঁছে গেলো মিংসেন কমিউনিটি। কমিউনিটির মধ্যে রাস্তাটা খুবই অন্ধকার। শিন ছি নিতান্ত ভদ্রলোকের মতো মিন হুয়েকে পৌঁছে দিলো ওর অ্যাপার্টমেন্টের দরজায়। 

মিন হুয়ে চাবিটা বার করে দরজা খুলে নরম স্বরে ডাকল, “ভেতরে আয়, বোস।”

শিন ছি থমকে গেলো, “না। ঘুমিয়ে পড় শিগগির।”

“দেখতে চাস না তোর ছেলের বাড়ি কেমন? পরিবেশ কেমন যেখানে ও বড়ো হচ্ছে?”

মিন হুয়ে একটা অনুরোধের অভিব্যক্তি ফুটিয়ে তুললো। শিন ছি একটু দ্বিধায় পড়লো যেনো, কিন্তু ঢুকে পড়লো মিন হুয়ের বাসায় আর ঘুরে ফিরে দেখলো এদিক ওদিক খানিক ক্ষণ, আর দুম করে বললো, “মিন হুয়ে, শিগগির বাসা বদলে ফেল।”

“হুহ্‌”

“এমন যাচ্ছেতাই জায়গায় আমার ছেলে থাকবে কী করে?”

মিন হুয়ে একটু চটে গেলো আর তর্কও করলো, “এটা বেশ ভালো জায়গা, বাড়িটা একটু ছোটো। কিন্তু ইস্কুলগুলো ভালো। কিন্ডারগার্টেন আর হাসপাতালও কাছাকাছি, ভাড়াও এমন কিছু কম নয়।”

“তুই রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের ডিরেক্টর হয়ে গেছিস, তাও তুই একটা ভদ্র অ্যাপার্টমেন্ট ভাড়া নিতে পারিস না?”

“শংসাই, আপনি যদি আমার জন্য একটা বড়ো অ্যাপার্টমেন্ট কেনেন তো তাতে আমি সানন্দে থাকবো।”

“আমি, কিনবো, তোর জন্য?” বিদ্রুপ করলো শিন ছি, “কোনো সম্ভাবনাই নেই।”

“তাহলে আমার ছোট্টো অ্যাপার্টমেন্টটা এতো অপছন্দ করিস না।” মিন হুয়ে কোমরে দু হাত রেখে বললো, “আমরা এখানে সুখেই আছি।”

“তোরা যদি আমার সঙ্গে থাকিস, তাহলে থাকার জায়গাটা অনেক বেশি বড়ো পাবি।”

“ধন্যবাদ, ও তোর সাথে থাকবে না।”

একথা শুনে শিন ছি হতাশায় ফেটে পড়তে যাচ্ছিলো, কিন্তু শেষ অবধি নিজেকে সামলে নিলো, “আমিও কিছু খোঁজখবর করেছি। এখানে কিন্ডারগার্টেন খুবই গড়পড়তা। সামনে ফেঁয়ুয়াঁ রোডে একটা দ্বিভাষিক কিন্ডারগার্টেন আছে। ওটা এখানকারটার থেকে অনেক বেশি ভালো।”

“তুই ঐ কিন্ডারগার্টেনে ওকে ভর্তি করতে পারবি না কিছুতেই। ওখানে কোনো ডাক্তার পাওয়া মুশকিল। ওখানে পয়সা খরচা করার কোনো মানে হয় না।”

“আমি যদি ওকে ওখানে ভর্তি করতে পারি, তবে তুই ওকে আমার সঙ্গে থাকতে দিবি কী?”

“শিন ছি" হতাশ সুরে বললো মিন হুয়ে, “আমি বুঝতে পারছি না, তুই যে তোর ছেলেকে দেখতে পেলি সেটাই খুব ভালো ব্যাপার। কিন্তু তুই ওর জীবন থেকে আমাকে তাড়াতে এতো ব্যস্ত কেনো?”

“কারণ তোর আসাই উচিত হয় নি। সু ছন তাহলে আমার আর সু তিয়াঁর ছেলে হতো।” ওর চোখ দুটো ঠান্ডা হয়ে গেলো, ভরে গেলো ঘেন্না আর খুঁত ধরার খোঁজে, “তুই সেই ফাঁকটা ভরার চেষ্টা করে দেখতে পারিস, তোর স্বপ্নে।”

“কিন্তু আমরা -”

“স্বপ্ন দেখা বন্ধ কর। সে দিন কেটে গেছে।” প্রত্যেকটা শব্দ কেটে কেটে উচ্চারণ করলো, “ঐ কটা দিনই তুই চুরি করে নিতে পেরেছিস। তুই যদি সু তিয়াঁ হবার ভান না করতিস, তাহলে আমি কোনো দিন তোর সাথে ঐ ব্যবহারটা করতাম না।”

মিন হুয়ের বুকের মধ্যে কুরে কুরে খাচ্ছিলো একটা ব্যথা। ওর কিছুই বলার নেই। ওর কিছুই করার নেই, শুধু চুপ করে থাকা ছাড়া। এতোগুলো বছর ধরে, দিনে আর রাতে, ও শুধু এই কথাটাই ভেবেছে, আর অনুতাপ কখনো কমেনি এতোটুকু। আর এখন অন্য কারুর মুখ থেকে কথাটা শুনে, সত্যিটা যেনো শেলের মতো বিধছে হৃদয়ে।

“আমাকে বল, কী শর্তে তুই রাজি হবি সু ছনের সব অধিকার ছেড়ে ওকে আমার কাছে দিয়ে দিতে।”

“...”

“দশ দিন পরে ও হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাবে। আমি তখন এই বিশ্রী নোংরা এলাকায় রোজ আসতে চাই না।”

“তাহলে আসিস না।” এক ঝটকায় দরজা খুলে ধরলো মিন হুয়ে, “আয় এখন।”

“ওয়া আ’ন, মিন হুয়ে।”

“ওয়া আ’ন।”





~~~~~~~~~~~~

সম্পূর্ণ বই বিনামূল্যে : https://dl.bookfunnel.com/lcj5vznt96

Link to Previous Post in the Series : https://projectionofnaught.blogspot.com/2024/09/jpda-chapter-36.html

Link to following Post in the Series : https://projectionofnaught.blogspot.com/2024/09/jpda-chapter-38.html

No comments:

Post a Comment

Readers Loved