৪৯. মিটিং
মিন হুয়ের ফোরাম সকাল এগারটায় আর রিপোর্ট দুপুর একটায়। মাঝে দুপুরে খাবার সময়।
সজাগ থাকার জন্য মিন হুয়ে কোনো সামাজিক জমায়েতে অংশ নেয় নি। একটা কাফেতে ঘাপটি মেরে বসে পিপিটি তৈরি করছিলো একটা মাত্র ব্রেড খাবার পরে।
যদিও রিপোর্টের বিষয়বস্তু সবই ওর নখের আগায়, তবুও কোনো ভুল করতে চায় না ও। মোবাইল ফোনটা চালু করে রিপোর্টের সঙ্গে সম্পর্ক আছে এমন সব তথ্যের ওপরে চোখ বুলোচ্ছিলো। হঠাৎ ফোনে একটা ডিং করে আওয়াজ হলো। হে হাই শিয়াং-এর টেক্সট মেসেজ। একটা মাত্র লিঙ্ক আছে। লিঙ্কের শিরোনাম : বা’অ্যান হাই-টেকের বড়ো কর্তা, সিনিয়র এক্সেকিউটিভ গভীরভাবে জড়িত যৌন হেনস্থার মোকদ্দমায়। বেরিয়েছে “এআই ট্র্যাক”-এ।
“এআই ট্র্যাক” একটা নামকরা অফিসিয়াল অ্যাকাউন্ট এআই শিল্পক্ষেত্রে। এটা মূলত শিল্পক্ষেত্রের নানান তথ্য নিয়ে কাজ করে, কখনো কখনো গভীর বিশ্লেষণধর্মী নিবন্ধও প্রকাশ করে। বিনোদনের নিবন্ধও।
অফিসিয়াল অ্যাকাউন্ট |
মিন হুয়ে চটপট পড়ে নিলো যা লেখা হয়েছে তার সবটা। নিঃসন্দেহে লেখাটা ভর্তি বিদ্বেষ।
লেখক চার বছর আগেকার খবরের ওপরে কোনো নতুন কিছু লেখেন নি। শুধু চার বছর আগেকার মোকদ্দমার একটা সারমর্ম আর তখনকার নানান গুজবকে জড়ো করে একটা প্রাণবন্ত ব্যাখ্যা খাড়া করে মিন হুয়ের পরাজয়ের কাহিনী বলেছে।
খবরটা এমন করে লেখা যেনো মনে হচ্ছে এক কামুক মেয়ের নাচনকে পিটিয়ে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। পুরো ব্যাপারটাতে চেং ছিরাং ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে ছিলো আর জুলুমবাজির ভয়ে বেচারা আদালতে অবধি যেতে পারে নি।
মিন হুয়কে গুয়ান ছাও থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়। আর পরের অনেকগুলো মাস মিন হুয়ে কোনো কাজ পায় নি।
তার সাথে সে অবিবাহিত অবস্থায় অন্তঃস্বত্তা হয়ে পড়ে আর তার বাচ্চার বাবার পরিচয় জানা যায় না।
শেষে লেখক উল্লেখ করতে ভোলেন না যে নিকট অতীতে শিল্পক্ষেত্রের একটা সম্বর্ধনাতে মিন হুয়ে একবার জনসমক্ষে চেং ছিরাং-এর শ্লীলতা হানি করে এবং ঝেং য়ি তিং তার মাথায় মদ ঢেলে দেয়।
যদিও খবরটা মিথ্যে আর বাজে খবর, তবুও রাগে লাল হয়ে ওঠে মিন হুয়ে।
জিএস১.০ বাজারে আসা থেকে মিন হুয়ে শিল্পক্ষেত্রে নতুন তারকা।
এই সময়ে এই পুরোনো খবরটা খুঁজে বার করে, যে দিন মিন হুয়ে শিল্পক্ষেত্রের সব চাইতে নামী সমাবেশে হাজির হবে সেদিনই আবার করে প্রকাশ করা হলো।
নিশ্চিতভাবে উদ্দেশ্য হলো মিন হুয়ের ধার কমানো আর বিনিয়োগের সম্ভাবনা ধ্বংস করে দেওয়া। জিএস১.০ তৈরি করেছে যে মানুষের দল তাদের প্রতি অন্য মানুষজনের শুভেচ্ছা আর বা’অ্যানের বাজার দর দুটোই কমে যাবে।
মিন হুয়ে ফোনটা বন্ধ করে দিলো। বন্ধ করে দিলো কম্পিউটার, শ্বাসপ্রশ্বাস গুছিয়ে নিলো, চোখ বন্ধ করে একটা চুমুক দিলো কফিতে।
ও যখন চোখ খুলল তখন দেখতে পেলো লিন শি য়ুয়ে তাড়াতাড়ি হেঁটে আসছে ওর টেবিলের দিকে। আজ একটা সাদা ফুল ছাপ জামা পরেছে, ইংরেজি ‘এ’ অক্ষরের মতো করে কাটা, কোমরে নকশা তোলা রূপোলি ঝালর দেওয়া লেস আছে। মুখের মেক-আপ প্রায় নেই বললেই চলে। একটা বেশ মিষ্টি বাচ্চা মেয়ের মতো ধরন-ধারন।
লিন শি য়ুয়ের বয়স মিন হুয়ের তুলনায় বছর দুয়েক বেশি। তার মানে এ বছরে তার প্রায় বত্রিশ বছর বয়স হবে। তার ছোট্টো-খাট্টো চেহারা আর কমনীয় ত্বক তার চেহারাতে একটা সদ্য কলেজ পাশ করে কাজ করতে শুরু করা যুবতীর রূপ দিয়ে রেখেছে।
“শও হুয়ে, আপনি এখানে কেনো?” ও এখনো একই ভাবে সম্বোধন করলো, “মিটিং-টা এখনই শুরু হবে, প্রথমেই আপনার রিপোর্ট। আপনি কী শিগগির অনুষ্ঠানের ওখানে যাচ্ছেন?”
“মিটিং শুরু হতে এখনো পঁয়ত্রিশ মিনিট বাকি আছে।” মিন হুয়ে নিজের ঘড়ির দিকে এক ঝলক দেখে বললো, “কোনো তাড়া নেই।”
“এখনো আমার ওপরে রেগে আছেন?” ও বসে পড়লো আর নরম সুরে বললো, “এতো দিন হয়ে গেছে।”
“তুমি চেং ছিরাং-এর হয়ে মিথ্যে হলফ করে ছিলে। ওর অনুগত। তোমাকে সেলস ডিরেক্টর করে দিয়ে ছিলো না?”
মিন হুয়ে হাতের কফির কাপটা ঠুকে রাখলো টেবিলে, “আর তোমাকে দেখো, আমি এখনো তোমাকে ক্ষমা করতে শুরুই করি নি, আর তুমি নিজেই নিজেকে ক্ষমা করে দিয়েছো …”
“আমি আশা করি নি ব্যাপারটা এতো বড়ো হয়ে দাঁড়াবে - এটা কিছুতেই শেষ হবে না। আমি চেং ছিরাং-কে ভালোই চিনি। ওকে দেখতে ভদ্র, নম্র, কিন্তু তাড়ায় পড়লে ও একটা পশু। তুমি যদি ওকে একটা মরিয়া অবস্থায় ঠেলে দাও, তাহলে ও তোমাকে ঠেলে নরকে ফেলে দেবে। শও হুয়ে, আমরা সবাই উচ্চাকাঙ্খী মহিলা। আমি এখনো সে রকমই ভাবি।” লিন শি য়ুয়ে বললো, “যেহেতু তোমারও উচ্চাকাঙ্খা আছে, তুমি এতো সংবেদনশীল হয়ো না। এটা পুরুষের পৃথিবী, তারাই নিয়ম আর নীতি বানিয়েছে। প্রতিবাদ করবে? আপত্তি জানাবে? দামটা বড্ডো বেশি। ওদেরকে বদলাবে? সে তো অসম্ভব। এটাই বাস্তব। সবাই এটা ভালোই জানে। তোমাকে আর সে কথা বলতে হবে না। যা চাও, তাই পাবে।”
ওর অভিব্যক্তি খুবই গম্ভীর, “অন্যায়টা কী ছুঁলে? তুমি আমাকে একটা চুমু খেলে আমি মরে যাবো না। তার ওপর এই লোকটা চেং ছিরাং। তার পরিচয়, যোগ্যতা, স্বভাব কোনটাই বা তোমার নিরিখে মূল্যহীন? কাজের কারণে প্রেম দেখানোটা আপত্তিকর, কিন্তু অপমানজনক তো নয়, ঠিক কিনা? – – আমি সেলস-এ আছি। তুমি যে ব্যাপারটার মুখোমুখি হয়েছো সেটা আমার কাছে কিছুই অন্যায় নয়। তুমি কী ভেবে ছিলে এইচআর তোমাকে সুবিচার দেবে? ওদের তো তোমার সাথে কথা বলারই সময় নেই। তুমি কী ভেবে ছিলে তুমি গুয়ান ছাও-কে নাড়া দিয়ে ওদের কর্মী ব্যবস্থা নতুন করে লিখবে চেং ছিরাং-এর বিরুদ্ধে মামলা করে? লোকে তোমার নির্বুদ্ধিতায় কেবল হাসবে। গুয়ান ছাওকে যদি বেছে নিতে বলো তোমার আর চেং ছিরাং-এর মধ্যে একজনকে, তুমি যদি তোমার পায়ের কড়ে আঙুল দিয়েও ভাবো, কেউ তোমাকে বেছে নেবে না।”
“আমরা তখন বন্ধু ছিলাম।” মিন হুয়ে ওর চোখের দিকে তাকালো, ওর চোখের পরতে পরতে ঝড় জমে আছে, “সেই মূহুর্তে তুমি সত্যিটা দেখে ছিলে, তুমি বেছে নিয়ে ছিলে সত্য গোপণ করার সিদ্ধান্তটা এমন কী আদালতে মিথ্যে সাক্ষ্যও দিয়েছো। আমার মনের গভীরে, তুমি একটা খারাপ লোক। তোমার না আছে নৈতিক চরিত্র, না আছে বিচারে আস্থা। তুমি অন্য মানুষের যন্ত্রণাতে হাসতে পারো না এই জন্য যে তুমি আপস করেছো -”
“লড়াই-এর দরকারটা কী? তাতে তো পরিস্থিতি আরো খারাপ হয়। তুমি নিজের দিকে দেখো এখন, তোমার অনুতাপ হয় না? তুমি যদি এতোটা গুরুত্ব না দিতে শুরুতে, তাহলে কিছুদিনের মধ্যেই তুমি গুয়ান ছাও-এর সিটিও হয়ে যেতে পারতে, তাই না? আমি এখনো বুঝি না যে তুমি কেনোওর নষ্টামির কথা বলতে গেলে তাও নিজের আসল নাম ব্যবহার করে, আর এখনো নিজের প্রচার করে চলেছো ধুমধাম করে? তুমি কী খেলছো? তুমি কী ওকে ধরাশায়ী করতে পারবে?”
“আমি করছি শিক্ষার জন্য।”
মিন হুয়ে উঠে দাঁড়ালো ব্যাগটা নেবার জন্য।
“শিক্ষা? কার শিক্ষা?”
“তোমার মতো গোঁয়ার নির্বোধদের শিক্ষার জন্য।”
কথা বলা শেষ করে, লিন শি য়ুয়ে পা বাড়িয়ে পথ আটকালো মিন হুয়ের, “আমি সত্যিটা বলি নি কারণ আমি চেং ছিরাং-কে ভালোবাসি। আমি ওকে রক্ষা করতে চেয়ে ছিলাম।”
“...”
“ও আমাকেও অমন করে চুমু খেয়ে ছিলো।”
“...”
“এখন চেং ছিরাং-এর সাথে মিটে গেছে।”
“গংশি নিয়া।” উপহাস করলো মিন হুয়ে।
“আমি জানি না শিন ছির সাথে তোমার কী ভাবে দেখা হয়েছে। ও আমার বস এখন। “ বললো লিন শি য়ুয়ে, “শও হুয়ে, আমি খুব খাটতে চাই, আমি আশা করবো যে তুমি আমার রাস্তা আটকাবে না।”
মিন হুয়ে উত্তর দিতে যাচ্ছিলো। এমন সময়ে মিন হুয়ের ফোন বেজে উঠলো এআইম্যাক্স কনফারেন্স টিম থেকে শাও হুয়াং টেক্সট মেসেজ পাঠিয়েছেন, “মিন হুয়ে, আমি একটা সাময়িক বিজ্ঞপ্তি পেয়েছি কনফারেন্স প্রিপারেসন টিমের থেকে, যে দুপুরে আপনার রিপোর্ট মিটিং-টা বাতিল হয়ে গেছে সময়ের অসুবিধার জন্য। আপনার সহযোগিতার জন্য ধন্যবাদ। আশা করি আপনি বুঝবেন।”
লিন শি য়ুয়ের সাথে কথাবার্তার তোয়াক্কা না করেই মিন হুয়ে ব্যাগ নিয়ে জোর কদমে হাঁটা দিলো মিটিং হলের দিকে সাও মুকে খুঁজে বার করার জন্য। সাও মুকে দেখে জিজ্ঞেস করলো, “আমার রিপোর্টটা হঠাৎ করে ক্যান্সেল হয়ে গেছে, সাও জিয়ে, তুমি জানো?”
সাও মু মাথা ঝাঁকালো, একটু ক্ষণ ভাবলো, বললো, “এটার কারণ, যদ্দুর মনে হয়, “এআই সার্কিট”-এর আর্টিক্লটার জন্য। আমি শুনেছি যে অনেক সরকারী আমলা এসেছে এই মিটিং-এ।”
“আমার কী করা উচিৎ?” রাগত স্বরেই বললো মিন হুয়ে, “এর পিছনে নিশ্চয়ই চেং ছিরাং।”
“নাও হতে পারে। যদি আমি চেং ছিরাং হতাম, তবে আমি পুরোনো কাদা খুঁড়ে বার করে ঘাঁটতাম না।” বললো সাও মু, “আমি ফেং লিং ক্যাপিটালের সর্বেসর্বার সাথে কথা বলছিলাম এই একটু আগে। উনিই খবরটা দেখেছেন, আমাকে তো উনিই দেখালেন।”
“মিটিং শুরু হতে চলেছে।”
মিন হুয়ে মাথা তুলে ওর সামনে পোডিয়ামটা দেখলো।
দুপুরের রিপোর্ট চললো দু ঘন্টা ধরে। চার জনের বলার কথা ছিলো শুরুতে, প্রত্যেকের তিরিশ মিনিট করে।
পোডিয়ামে বসে ছিলো তাং জিয়াঁগঁ, কনফারেন্সের সঞ্চালক। তাঁর বাঁদিকে চারটে চেয়ার পাতা। সব নিশ্চয়ই সাজানো হয়ে গিয়ে ছিলো পরিস্থিতি বদলানোর আগে। তিনজন বক্তা ইতমধ্যেই তাঁদের জায়গায় বসে পড়েছেন। তারা কেউ ক্যান্সেলেসনের কথা জানেও না। তাই তাঁরা প্রথম চেয়ারটা খালিই রেখেছেন বক্তৃতার ক্রম অনুসারে।
মিন হুয়ে চাপড় দিলো সাও মুকে, “আমি একটা চেষ্টা করে দেখি।”
সাও মু ওর হাত চেপে ধরে বললো, “আমাকে যে বললে ক্যান্সেল হয়ে গেছে। আবার চেষ্টা কী করবে?”
“জোর করে চেষ্টা করবো।”
মিন হুয়ের নিজের জামাকাপড় টেনে সোজা করে নিয়ে চুপচাপ হাঁটা দিলো ফ্রন্ট ডেস্কে। সময় হয়ে গেছে। দর্শকাসনে তখনো কিছু লোক কথা বলে চলেছে। ঘরে প্রচন্ড শোরগোল চলছে।
তাং জিয়াঁগঁ গলা পরিস্কার করে বলে উঠলেন, “ছিং, বসুন চুপ করে। রিপোর্ট মিটিং শুরু হতে চলেছে।”
এই মূহুর্তে মিন হুয়ে পোডিয়ামের দিকে হেঁটে গেলো আর বসে পড়লো খালি চেয়ারে।
তাং জিয়াঁগঁ মাইক্রোফোনটা হাত চাপা দিয়ে নিচু গলায় বললেন, “মিন হুয়ে টেক্সট মেসেজ পান নি? আপনার রিপোর্ট ক্যান্সেল হয়ে গেছে।”
“না” মিন হুয়ে বড়ো বড়ো চোখ করে তাকালো তাং জিয়াঁগঁ-এর দিকে, “আমি একটা পিপিটি তৈরি করছিলাম, একটু আগে। তাই ফোন বন্ধ করে রেখে ছিলাম, আমি ভয় পাচ্ছিলাম যে বিরক্ত করবে কেউ, তাই টেক্সট মেসেজও পাই নি।”
“কিন্তু আমি একটা নোটিস পেয়েছি যে তুমি -”
“তাং লাওশি, চলুন শুরু করা যাক, কয়েকশো চোখজোড়া আপনাকে দেখছে দর্শকাসন থেকে।”
“কিন্তু -”
“আমি তো এর মধ্যেই বসে পড়েছি। আর এতো লোকের চোখের সামনে আপনি আমাকে তাড়িয়েও দিতে পারবেন না, তাই না? সেটা বড্ডো অভদ্রতা হয়ে যাবে, কী ভাবছেন?”
“কেমন হয় … যদি তুমি নিজেই যাও?”
মিন হুয়ে জেদের সঙ্গে ঘাড় নাড়লো, “আমি যাবো না কিছুতেই।”
~~~~~~~~~~~~
সম্পূর্ণ বই বিনামূল্যে : https://dl.bookfunnel.com/lcj5vznt96
Link to Previous Post in the Series : https://projectionofnaught.blogspot.com/2024/09/jpda-chapter-48.html
Link to following Post in the Series : https://projectionofnaught.blogspot.com/2024/09/jpda-chapter-50.html
No comments:
Post a Comment