দোসরাতে মিগেইল ফিরে যাবেন জেলে। তাই পয়লাতে সব্বাই চললেন চড়ুইভাতিতে। বাড়ির থেকে বার মাইল উত্তর-উত্তরপুবে পাহাড়ের ওপর স্যান গ্যাব্রিয়েল নদীর বুকে আছে স্যান গ্যাব্রিয়েল রিজার্ভার। রিজার্ভার ঘিরে বন আছে। বনে হরিণ আছে। সেখানেই হবে চড়ুইভাতি।
যেখানে এডউইনদের বাসা সেটা পুরো গমগমে কসবা, ঘিঞ্জি মফস্বল। কিন্তু সেই এলাকাটাও স্যান গ্যাব্রিয়েল নদীর উপত্যকারই অংশ আসলে। সেখানেই নদীটা পাহাড় ছেড়ে ঝাঁপ দিয়েছে সমতলে।
এডউইনদের বাসার থেকে একটু দূরেই একটা বাঁধ আছে। এই বাঁধটার পাড়টা কেমন ন্যাড়া। কোনো গাছ নেই। ছাইরঙা শুকনো পাথুরে জমির কোলে টলটল করে নীল জল। জলে নামা মানা। জলে মাছও নেই নাকি। তাই মাছ ধরাও মানা। বাঁধটার পশ্চিমে, সমুদ্রের দিকে ধাপে ধাপে নিচের দিকে বয়ে চলার পথে, নদীর খাতটা প্রায় শুকনোই থাকে গ্রীষ্ম থেকে শীত পর্যন্ত।
বাঁধের পশ্চিমেই নদীর খাতটা জোর করে ঢুকিয়ে নেওয়া হয়েছে নানান সোনার খনিতে। স্যান গ্যাব্রিয়েল পর্বতশিরার নানান পাহাড়ের মাথা আর গা থেকে নদী যেসব পাথর ভেঙে আনে তাতে নাকি সোনার দলা থাকে। তাই খনিগুলোতে নানান যন্ত্রে নদীর জলকে ছেঁকে তার মধ্যেকার কাদা বের করে নেওয়া হয় যাতে পরে কাদার থেকে সোনা খুঁজে নেওয়া যায়।
সোনার খোঁজে বাতিল হওয়া কাদা জমে জমে নদীখাতের পাশের নিচু জমিগুলো ক্রমশ ভরাট আর উঁচু হয়ে উঠছে। এমন জায়গায় চড়ুইভাতি জমে না। তাই এডউইনরা সপরিবারে চলল স্যান গ্যাব্রিয়েল রিজার্ভার।
সেখানে গিয়ে এডউইন আর নাটালি খুব সাঁতার কাটল। অ্যাশলি, প্রিসিলা আর মিগেইল মিলে সারাদিন মেতে রইলেন মাছ ধরাতে। টেরেসা, ভেরোনিকা আর তাঁদের মা বনের মধ্যে ঘুরে ঘুরে পেখমওয়ালা ফেজেন্ট, ঘুমন্ত পেঁচা, বাদামখোর কাঠবেড়ালি, আর হরিণ দেখলেন।
শুধু খিদে পেলেই সব্বাই জড়ো হয়ে যাচ্ছিলেন ক্যাম্পে। আর পানভোজন সেরে ফিরে যাচ্ছিলেন যার যার খেলায়।
এদিকে অ্যান্থনিরা পাঁচ ভাইবোনও মা-বাবা, মামা-মামি আর মামাতো ভাই-বোনেদের সঙ্গে গেল উত্তরে। তবে স্যান গ্যাব্রিয়েল রিজার্ভারের দক্ষিণে যে মরিস রিজার্ভার তার থেকে একটু দক্ষিণে, জঙ্গলের মধ্যে। মামা সঙ্গে নিয়েছিলেন বালতি, ফানেল, ছাঁকনি আর স্ল্যুইস।
অ্যান্থনি খেয়াল করেছে যে সমুদ্রে স্নান করতে যাওয়ার দিনগুলোতে ইন্টারস্টেট হাইওয়েতে পড়লেই যে নীল জল, সবুজ জলের পুকুরগুলো পড়ে ওখানে সারি দিয়ে পাতা থাকে অনেকগুলো স্ল্যুইস। ওগুলোই নাকি সোনার খনি। ওখানেই কোনো একটা খনিতে মামা কাজে যান বলে শুনেছে সে। তবে স্ল্যুইস যে হাতে করেও ব্যবহার করা যায় সেটা ও এই প্রথম জানল।
আজ সারা দিন মারিয়া আর মার্সেলা মাংস ঝলসে দেবেন। মেয়েরা যদি কাঠবেড়ালি বা ইঁদুর শিকার করতে পারে তাহলে তো কথাই নেই। জমে যাবে বনভোজন। তাই মেয়েরা সঙ্গে নিয়েছে জাল। মায়েরা নিয়েছেন কাঠকয়লা। ছেলেরা সারাদিন ধরে নদীর জলে স্ল্যুইস পেতে, কাদাজল ধরে, তা ফানেল আর ছাঁকনি দিয়ে বালতিতে ছেঁকে ফেলে, চুম্বক দিয়ে লোহার কণা আলাদা করে, সোনা খুঁজবে। কয়েকটা দলা পেলেই হাতে কিছু থোক টাকা আসবে। কটা দিন হয়তো একটু ভালো ভাবে থাকা যাবে, নতুন বছরে।~~~~~~~~~~~~~
No comments:
Post a Comment