৫৫. ঝাও মু খেলাধুলোর সরঞ্জাম
বেচাকেনার পাকা চুক্তি হয়ে যেতে য়ুঁআ লাই আর বা’অ্যান প্রথামাফিক সমস্ত কর্মীকে জানালো মিটিং করে আর ইমেল করে।
সবার আবেগকে শান্ত করার জন্য, সমস্ত ভুল বোঝবুঝি আর দুশ্চিন্তা নির্মূল করার জন্য, সাই বিঁ জিয়ে, হে হাই শিয়াং আর গুয়ান ছাও-এর কর্তৃ আর নেতৃরা যাঁরা কোম্পানি হস্তান্তরের দায়িত্বে ছিলেন, তাঁরা সবাই উপস্থিত সমস্ত বন্দোবস্ত ব্যবহার করে কর্মীদের সাথে যোগাযোগ করতে লাগলেন - সমস্ত অন্তর্বর্তী ফোরামে, মেলবক্স কিউ অ্যান্ড এ-তে, আর একে একে মুখোমুখি কথোপকথনে, এভাবে গুয়ান ছাও ইন্টারন্যাশন্যালের কর্মসংস্কৃতির সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেবার আর গুয়ান ছাও ইন্টারন্যাশন্যাল কী কী সুবিধে তার কর্মীদের দেয় সেসব জানানোর কাজটাও চলতে লাগলো।
পারিশ্রমিক, কাজের জায়গার আবহাওয়া, আর প্রতিশ্রুতি যে কোম্পানির মালিকানা বদলে গেলেও শ্রমের যে চুক্তি আছে তাতে কোনো আঁচ আসবে না। সবাই যেনো নিশ্চিন্ত থাকে।
অভিজ্ঞ লোকেরা সবাই জানে যে এগুলো সবই মনভুলোনো ফাঁকা কথা।
বা’অ্যানের কর্মীরা এই টালমাটাল অবস্থাটা অভ্যর্থনা করলো উৎকন্ঠা নিয়ে।
সবথেকে বেশি উদ্বিগ্ন প্রশাসনিক দল। তাদের যেনো মৃত্যুদন্ড হয়েছে।
গুয়ান ছাওয়ের নিজেরই খুব শক্তিশালী প্রশাসনিক, সেলস্ আর রিসার্চ টিম আছে।
সব কিছু ঢেলে সাজানোর পরে প্রশাসনিক দলটা বাড়তি হয়ে যাবে। ওরাই হবে ছাঁটাইয়ের প্রথম ধাপ।
আর অ্যান্ড ডি টিম মূল জোর হলেও, তারাও নিরাপদ নয়। কারণ বা’অ্যান আর গুয়ান ছাওয়ের অনেকগুলো প্রজেক্টই এক বিষয়ে আর প্রায় একই রকমের। এর জেরে প্রযুক্তিবিদদেরও ঝাড়াই বাছাই চলবে। কাকে যে গুয়ান ছাও রাখবে আর কাকে তাড়াবে সেটা গুয়ান ছাওয়ের পছন্দের ওপর নির্ভর করে আছে।
মিন হুয়ে মনস্থির করেই ফেলেছে যে ও কোম্পানি ছেড়ে দেবে। ওর আপত্তি ছিলো কেবল ওর এতো দিনের টিম - যাদের সাথে এতোগুলো বছর কাজ করেছে - তাদের ছেড়ে যেতে। ওর পদত্যাগের চিঠি জমা করার আগে ও সাও মুয়ের সাথে একবার দেখা করলো। অনুরোধ করলো ওর পাঁচজন অধস্তনের খেয়াল রাখার জন্য।
“আমি যথা সম্ভব চেষ্টা করবো ওদের দেখাশোনা করতে।” সাও মু দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো, “আমিও যে কাদার বোধিস্বত্ত্ব, আমায় কে দেখে তার ঠিক নেই।”
“দঁ ইয়াং-এর বৌ সবে অন্তঃস্বত্তা। ওর একটা বাধা রোজগার চাই এই সময়টাতে।”
মন ভারি করে মিন হুয়ে বলে চললো, “জিয়াঁ হেং আর ছিং য়ুআঁ দুজনেই গত বছরে বাড়ি কিনেছে। ওঁদের বউদের রোজগার খুব বেশি নয়। বাড়ির ধার শোধ করার দায় মূলত ওদেরই কাঁধে। শও হানের ভাই এ বছরের শুরুতে ভয়ানক পুড়ে গেছে আগুনে। গ্রামের বাড়িতে ওদের কোনো মেডিক্যাল ইন্স্যুরেন্স নেই, ওই ভাইবোনেদের সবার বড়ো, বাড়ির সবার চিকিৎসার ব্যাপারটা ওরই দায়িত্ব। আমার কোনো ভয় নেই তাং শিন নিং-কে নিয়ে যে ও কোনো কাজ পাবে না, ওর একটা বোঝাপড়া করার মানসিকতা আছে। আমার ভয় ওকে উৎপীড়ন করা হবে খুব যদি ও অন্য কোথাও কাজে যায় … সাও জিয়ে, গুয়ান ছাও কী তোমার সাথে কোনো কথা বলেছে?”
“কিভাবে কর্মীদের সাজানো হবে নানান বিভাগে নানান কাজে সেসব বিশদে এখনো কেউ কিছু জানায় নি। তাই আমিও টের পাই নি কী দাবার ছক চেং ছিরাং সাজিয়েছে। ও আমার সাথে একবার কথা বলেছে। তখনই বলছিলো সেলস্-এর ডেপুটি ডিরেক্টর হবার জন্য। আমি বলে ছিলাম যে আমি আর অ্যান্ড ডি ডিপার্টমেন্টেই থাকতে চাই। কিন্তু ও জানিয়েছে যে দিঁ য়িফঁ এখন আর অ্যান্ড ডি চালাচ্ছে, আমি তো ওর ওপরওয়ালা ছিলাম, কিন্তু এখন ওর ডেপুটি হওয়া সাজে না।”
“তার ওপর ও যা বিবেচক।" বিদ্রুপ করে বললো মিন হুয়ে। তখন দিঁ য়িফঁকে বা’অ্যান থেকে বের করে দেবার জন্য ব্যাপক উদ্যম নিয়ে ছিলো সাও মু। এখন সাও মুকে দিঁ য়িফঁয়ের সহকারী হতে হলে, কে জানে কী প্রতিশোধ সাও মুয়ের জন্য সাজিয়ে রাখবে দিঁ য়িফঁ ।
“জানো কী হে হাই শিয়াং কোন পদে আছে?” হঠাৎ প্রশ্ন করলো সাও মু।
“কী পদ ও পেতে পারে? ও তো মূল প্রযুক্তিবিদও নয়। ওর কোম্পানি চালানোর পদ্ধতিও খুব সেকেলে। আমি এখনো ঝোঁক বুঝি খানিকটা। পুরো আবহাওয়াটাই আমলাগিরির সঙ্গে খাপ খায় না। আমার আশঙ্কা এই যে চেং ছিরাং-এর তীক্ষ্ণ নজর ব্যাপারটা বুঝে ফেলেছে। ওকে রাখলে, শুরুতেই অনেক বেশি মাইনে দিতে হবে, আবার ওর থেকে খুব বেশি কাজও পাওয়া যাবে না, আমার মনে হয় ওকে ছাঁটাই করবে।”
“আমিও তাই ভেবে ছিলাম। কিন্ত হে হাই শিয়াং আমাকে বলেছে যে চেং ছিরাং ওকে আর অ্যান্ড ডি-এর ফু শংসাই করতে চেয়েছে।”
যদিও আর অ্যান্ড ডি-এর ভাইস প্রেসিডেন্ট সি-লেভেল-এর সমকক্ষ নয়, তবে এটা আর অ্যান্ড ডি-এর ডিরেক্টরের থেকে উঁচু তলার ওপরে, একটা গুরুত্বপূর্ণ পরিচালন কর্তৃত্বের পদ। হে হাই শিয়াং-এর যোগ্যতায় ও নিশ্চয়ই কোনো বিশেষ দান করেছে গুয়ান ছাও-এ একটা গুরুত্বপূর্ণ পদ পাবার জন্য। এর থেকে বাকি সকলের অনুমান যে কী করে গুয়ান ছাও একটু মাত্র বেশি দর দিয়ে তার প্রতিযোগীর থেকে বা’অ্যান ছিনিয়ে নিলো, সেটাও প্রমাণ হয়; কেউ নিশ্চয়ই এমবিও-র মূল দরটা চেং ছিরাং-এর কাছে ফাঁস করে দিয়েছে।
“তার মানে নিশ্চয়ই হে হাই শিয়াং বলেছে।” দাঁত কিড়মিড়িয়ে বললো মিন হুয়ে, “বেজন্মা।”
“আমার কেবল মনে হচ্ছে যে আমি যদি তোমার মতো বুদ্ধি করে কাজ ছেড়ে দিতে পারতাম।” বাঁকা হাসি নিয়ে বললো সাও মু, “কিন্ত আমি এখন তোমার মতোই একা, একলা মা। আমাকে দুটো বাচ্চা মানুষ করতে হবে। প্রাপ্তবয়স্করা যতোটা পারে ততোটা পয়সা বাঁচাতে পারে, কিন্তু বাচ্চার প্রচুর খরচ। নন-কম্পিট এগ্রিমেন্ট যে ক্ষতিপূরণের পয়সা দেয়, তাতে আমার চলবে না।”
“তাও ঠিক। কপাল জোরে, সু ছনের যা লাগবে তা শিন ছি পুরোটাই দেয়। আমার কোনো ধার নেই বাজারে …” মিন হুয়ে হো হো করে হেসে উঠলো, “আমার বেঁচে থাকাটা সহজ।”
***
নিয়ম অনুযায়ী কাজ ছাড়ার তিরিশ দিন আগে মিন হুয়েকে নোটিস দিতে হবে এইচআর ডিপার্টমেন্টে। আবার বা’অ্যানও খুব শিগগির উঠে যাবে চেনঝঁ বিল্ডিং-এ সতেরো নম্বর ছিং লিউ জিএ-তে। ওখানেই গুয়ান ছাও ইন্টারন্যাশন্যালের হেডকোয়ার্টার্স, আর অ্যান্ড ডি সেন্টার।
গুয়ান ছাও-এর কর্মীদের মতে চেনঝঁ বিল্ডিং-এ নতুন অফিস বসানোর মতো খালি জায়গা প্রায় নেই বললেই চলে। সেই জন্যই চেং ছিরাং কিনতে চাইছিলো হাইতিয়াঁ বিল্ডিং-টা। নতুন তৈরি হওয়া হাইতিয়াঁ বিল্ডিং আটত্রিশ তলা। চেনঝঁ বিল্ডিং মাত্র ছাব্বিশ তলা। হাইতিয়াঁ বিল্ডিং-এর নকশা কিংবা উত্তেজনা নিঃসন্দেহে প্রশ্নাতীত।
“চেং জঁ আমাকে আলাদাভাবে বলে দিয়েছেন যে তোমাকে যেনো রাখা হয়। তার জন্য যা লাগবে তাই যেনো করি।" মিন হুয়ের পদত্যাগ পত্র পড়ে, চিঠিটা টেবিলের ওপরে রেখে দিয়ে, হাসি মুখে বললেন হে হাই শিয়াং, “তোমার যদি কোনো শর্ত থাকে তবে তা সোজাসুজি জানিয়ে দাও। ছেলের গুরতর হার্টের অসুখ আছে, আর তাকে বাড়িতে দেখাশোনা করতে লাগে, কাজের জন্য সময় নেই ইত্যাদি … এ সবই ডাহা মিথ্যে। এটাই যদি অসুবিধে হয়, তবে আমরা তোমাকে আগের মতোই পুরো সুবিধে দেবো, অধিকাংশ সময়ে তুমি বাড়ির থেকেই কাজ করবে।”
“হে জঁ আমি মনস্থির করে ফেলেছি। আমার সাথে আর তর্ক করবেন না।” মাথা ঝাঁকিয়ে বললো মিন হুয়ে, “যাতে কারোর কাজের কোনো অসুবিধে না হয়। সেই জন্য আমি যতো শিগগির সম্ভব হাত বদলের কাজটা শুরু করতে চাই। আমি কিছু কাগজপত্র, ফর্দ তৈরি করে ফেলেছি।”
“কোম্পানিতে যোগ দেবার সময়ে তুমি তিনটে চুক্তি সই করে ছিলে।” হে হাই শিয়াং ড্রয়ার থেকে একটা ফোল্ডার বার করলেন, তার থেকে তিনটে নথি বার করলেন, “টেকনিক্যাল অ্যাচিভমেন্ট এগ্রিমেন্ট, নন-কম্পিটিসন এগ্রিমেন্ট, আর কনফিডেনশিয়ালিটি এগ্রিমেন্ট। এই চুক্তিগুলো অনুযায়ী তুমি যা অর্জন করেছো প্রযুক্তির ক্ষেত্রে, যার মধ্যে আছে পেটেন্ট, নকশা, কপিরাইট, প্রযুক্তিগত তথ্য, ব্যবসায়িক তথ্য, গোপণীয় ব্যবসায়িক বিষয়, ইত্যাদি, সবই বা’অ্যানের দেওয়া জিনিসপত্র আর প্রযুক্তি ব্যবহার করে সম্পূর্ণ করেছো।”
“আমি জানি।”
“কোম্পানির মূল প্রযুক্তি আর ব্যবসায়িক গোপণীয়তা রক্ষার স্বার্থে, তুমি কাজ ছেড়ে দেবার পরের দু বছর নন-কম্পিট কাল। নতুন কাজ পাবার দু সপ্তাহের মধ্যে তোমাকে আমাদের লিখে জানাতে হবে তোমার নিযুক্তির পরিস্থিতি আর তারপরে প্রতি তিনমাস অন্তর জানিয়ে যেতে হবে তোমার কাজের কথা। তুমি যদি সময় মতো জানাতে না পারো, সেটাকে চুক্তির উল্লঙ্ঘন হিসেবেই ধরা হবে। আমাদের ক্ষতির খেসারত হিসেবে তোমাকে মুদ্রামূল্যে পাঁচ লাখ য়ুঁআ দিতে হবে আমাদেরকে। নিশ্চয়ই আমরা তোমাকে একটা যাহোক নন-কম্পিট কম্পেনসেসন দেবো প্রতি মাসে, নিয়ম অনুসারে।”
“বুঝলাম।”
“শ্রমের চুক্তি খারিজ হবার পরে, নন-কম্পিটিসন সময়ে, তুমি কোনো এমন সংস্থায় কাজ নিতে পারবে না, যারা একইরকম জিনিস বানিয়ে বাজারে বেচে, বা যাদের সাথে সম্পর্কটা প্রতিযোগিতামূলক, তুমি একই রকম জিনিস বানাতেও পারবে না যেটা মূল জিনিসটার সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে পারে, অথবা এমন কোনো ব্যবসা করতে পারবে না যেটা তোমার ছেড়ে দেওয়া কাজের ব্যবসার সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে পারে।”
“আমি জানি।”
“তুমি যদি কোম্পানির অধিকার অথবা স্বার্থে আঘাত করো নন-কম্পিট চুক্তি উল্লঙ্ঘন করার জন্য - সেটা বেআইনি।”
“আপনাকে এতো কথা বলতে হবে না, হে জঁ। যখন আইন ভাঙার কথা আসছে, কথা আসছে গোপণ তথ্য ফাঁস করে দেবার -” মিন হুয়ে তাকালো একটা কপট হাসি নিয়ে, ওর বিরক্ত লাগছে, “গুয়ান ছাও-এর দর আমাদের থেকে মাত্র দশ লাখ বেশি, আপনার কী মনে হয় চেং ছিরাং এতটা নির্ভুল অনুমান করবে?”
“চেং ছিরাং খুব বুদ্ধিমান মানুষ। ওঁর চিফ ফিনান্সিয়াল অফিসারও খুব বুদ্ধিমান।”
“সব থেকে বুদ্ধিমান আপনি, তাই না?”
“মিন হুয়ে গুজব তৈরি কোরো না! তোমাকে আইনি দায়িত্ব নিতে হবে, ক্ষতিপূরণ দিতে হবে গুজব ছড়ানোর জন্য!”
“আমি গুজব না ছড়াই এমনটাই যদি আপনি চান, তবে আমাকে শিগগির ছেড়ে যেতে দিন।" কথাগুলো বলে মিন হুয়ে আর এক মূহুর্ত দাঁড়ালো না, চলে গেলো।
***
একটা বিরক্তিকর দিনের শেষে, মিন হুয়ের দেখা হলো য়িন শুয়ের সাথে।
ও হেঁটে বাড়ি ফিরতে চাইছে। তাই শপিং মলে গেলো সু ছনের জন্য এক জোড়া জুতো কিনতে। রাস্তায় একলা হাঁটলো মিনিট পাঁচেক। হঠাৎ বিপ শুনতে পেলো। একটা সাদা ভ্যান আস্তে আস্তে ওর কাছে ঘেঁষে এলো। জানলা দিয়ে মাথা বাড়ালো য়িন শু। ডাকল, “মিন হুয়ে!”
“য়িন গ্য?” মিন হুয়ে খুব অবাক হয়ে গেলো। ওর মনে পড়ে এলো যে য়িন শুয়ের একটা টয়োটা স্পোর্টস্ ইউটিলিটি ভেহিক্ল ছিলো। কেমন করে সেটা বদলে গেলো?
“চললে কোথায়? আমি তোমাকে নামিয়ে দিতে পারি।”
“না, এই তো সামনেই। লাল রঙের বাজারের বাড়িটা।”
“আমিও ওখানেই যাচ্ছি। উঠে পড়ো।”
গাড়ির ভেতরের কাপড়গুলো একদম নতুন। গাড়িতে চেপে বসেই মিন হুয়ে নতুন গাড়ির গন্ধ পেলো, “য়িন গ্য, তুমি গাড়ি বদলালে কেনো?”
“আমি এসইউভিটা সাও মুয়ের জন্য রেখে এসেছি। আমার এখন একটা ছোটোখাটো ব্যবসা আছে। আমার একটা ট্রাকের দরকার মাল বওয়ার জন্য।” বললো য়িন শু, “আমি রুইদ্য-এর তিন তলায় একটা দোকান দিয়েছি, খেলাধূলোর জিনিসের। মূলত ব্র্যান্ড স্পোর্টস্ শু বেচি, যেমন নাইকি, রিবক, আন্ডার আরমর, নিউ ব্রান্সোয়েক, স্কেচারস, অ্যাডিডাস এই রকম সব।”
“কবে থেকে?”
“ডিভোর্সের পরে সমস্ত টাকাকড়ি তো বউ আর বাচ্চাদের কাছে গেছে। আমার কিছুই ছিলো না প্রায়। তাই আমাকে টাকাকড়ি রোজগারের একটা ব্যবস্থা দেখতে হলো আর কি।” গাড়ি চালাতে চালাতেই বললো য়িন শু, “আমি একটা পুরোনো বাড়ি বেচে দিলাম আর এখানে একটা দোকান খুললাম।”
“ব্যবসা চলছে কেমন?”
“সবে শুরু করেছি। এটাই খুব ভালো যে আমি ভীষণ ব্যস্ত আজকাল।” য়িন শু বলতে লাগলো, “আমি পনেরো জন কলেজের ছাত্রকে রেখেছি আমার জন্য বেচার কাজটা করবে বলে।”
“পনেরো জন?” চমকে উঠলো মিন হুয়ে, “তোমার দোকানটা ছোটো না?”
“দোকানটা তিন তলার তিন ভাগের একভাগ জুড়ে, অন্যান্য দোকানের তুলনায় বড়োই বলা চলে।” ও গাড়ির পিছন দিকটা দেখিয়ে বললো, “তাছাড়া, বিক্রি হয়ে যায় খুব তাড়াতাড়ি। আমাকে দিনে দু বার মাল আনতে যেতে হয় গুদামে।”
“খুব ভালো।”
“বাচ্চাদের জুতো আছে?”
“হ্যাঁ, আমার কাছে বাচ্চাদের জুতোও আছে। খুব অল্প বেচি, কিন্তু বেচি, তবে শুধু নাইকি আর কেস্কি।”
এইটা যেই বললো য়িন শু, মিন হুয়ের কৌতুহল বেড়ে উঠলো। ও চললো পুরো পথ য়িন শুয়ের সঙ্গে। তিন তলায় গিয়ে এলিভেটর থেকে বেরিয়ে ডান দিকে বাঁক নিলো, সামনেই দেখলো একটা নতুন সাজে সাজা দোকান, তার নাম “ঝাও মু স্পোর্টস্”।
“এই নামটা রেখেছো কেনো?”
“দিন রাত আমার মনে পড়ে সাও মুয়ের কথা।” মৃদু হেসে জানালো, “শুনতে ভালো লাগছে? বেশ মিল আছে না?”
মিন হুয়ে চোখ পাকিয়ে বললো, “এক্ষুণি নামিয়ে ফেলো এই সাইনবোর্ড।”
দোকানের ভেতরে ঢুকে দেখলো খুব সাজানো হয়েছে, খুব ঝকঝকে গোছানো ব্যবস্থা, স্নিকার সাজিয়ে রাখা আছে যেখানে, সেখানটার নকশা বেশ নজর কাড়া।
“সাজানো গোছানো বেশ ভালো। তুমি কী বিশেষ ডিসাইনারকে দিয়ে করিয়েছো ভেতরের ব্যবস্থাটা?”
“আমি নিজে নকশা করেছি। অ্যাকাডেমি অফ ফাইন আর্টসের ছাত্রদের বললাম আমার ভাবনাগুলোকে এঁকে দিতে, তারপর দুজন ছুতার মিস্ত্রিকে ভাড়া করে আনলাম - খুব সহজ, সিধে, ব্যাপার আর কি।”
“সাও মু জিয়ে জানে?”
“আমি ওকে এখনো বলি নি। ওর সাংঘাতিক বদমেজাজ। ওর অ্যাকুইজিসন ব্যর্থ হয়েছে, মেজাজ এমনিতেই খারাপ আছে। আমি তো আজকাল কথা বলতে খুব ভয় পাই। বাচ্চাদের দেখাশোনা করে, রাতের খাবার রেঁধে দিয়ে আমি চুপচাপ চলে আসি। এরকম করেই কাটছে আজকাল।”
“গ্য, তুমি নিজেকে এরকম অল্প সময়ের কাজের লোক বানিয়ে ফেললে কী করে?”
“বলতে পারো প্রায়শ্চিত্ত।”
মিন হুয়ে ওর দিকে তাকিয়ে রইলো, কথা হারিয়ে।
“সাও মু বললো যে তুমি কাজ ছেড়ে দিচ্ছো?”
“আমি কাজ ছেড়ে দিয়েছি, আজই। কিছু সময় লাগবে কাজগুলো অন্যদের হাতে তুলে দিতে।”
বিশেষ কিছু না ভেবেই মিন হুয়ে জিজ্ঞেস করলো, “তোমার কাজ করার লোক কম পড়ে নি তো? আমি কী তোমার হয়ে জুতো বেচবো?”
“হ্যাঁ, লোক তো কম পড়েইছে। কিন্তু এ ধরনের কাজ -”
“আমার একটা সুবিধে আছে। আমি তোমাকে একটা ইলেকট্রনিক সেল সিস্টেম তৈরি করতে সাহায্য করতে পারি যেটা নিজে নিজেই বিক্রির হিসেব রাখবে, তোমার ভাঁড়ারে আর কতো মাল আছে দেখাবে, আর তোমাকে সাহায্য করবে সহজে মাল খুঁজে পেতে। তার সঙ্গে আমি তোমাকে একটা ই-কর্মাস তৈরিতে সাহায্য করতে পারি, একটা অফিসিয়াল অ্যাপ, উইবো, উইচ্যাট আর কিউআর কোড, অনলাইন মার্কেটিং … অনলাইন আর অফলাইন, যাই করতে বলো না কেনো,আমি তোমাকে সাজিয়ে গুছিয়ে করতে সাহায্য করতে পারি।”
“তুমি কাজ পেয়ে গেছো।” তক্ষুণি বললো য়িন শু, “মূল কারণ হলো এই যে আমাকে ক্লাবে কিছু ক্লাস নিতে হবে টেনিস শেখানোর। ওরা সবাই ভালো বন্ধু, কাউকেই ফেরাতে পারবো না। তাই আমি রোজ আসতে পারবো না। তুমি যদি কাজ করো, আমি তোমাকে যত্নেই রাখবো। কাজটা পুরো সময় দিয়ে করতেই হবে এমন নয়, আর তোমার মাইনেও খুব কম হবে না।”
কথা বলা হয়ে যেতে ও দেখলো যে মিন হুয়ের হাতে একজোড়া নাইকির জুতো। এই জুতো জোড়া মিন হুয়ে সু ছনের জন্য নেবে ঠিক করেছে। য়িন শু বললো, “এগুলো কী ছন ছনের জন্য? তোমাকে এর জন্য দাম দিতে হবে না। আমি ওকে দেবো ওগুলো।”
মিন হুয়ে ব্যাঙ্ক কার্ড বার করলো। চোখ দিয়ে ঝলসে দিলো য়িন শুকে, “তুমি ব্যবসা শুরু করছো, এতো দরাজ হয়ো না। সারা পৃথিবী জুড়ে তোমার বন্ধুরা আছে, সবাইকে যদি একজোড়া করে জুতো দাও তো তোমাকে উত্তরপশ্চিমের হাওয়া খেয়ে কাটাতে হবে।”
দুজনে খানিকক্ষণ গল্প করলো নানান। মিন হুয়ে বাড়ি ফেরার পরে ন্যানি সু ছনকে মিন হুয়ের জিম্মায় করে দিলো। জানিয়ে দিলো যে রাতের খাবার খাওয়ায় হয়ে গেছে। টেবিলে দুটো পদ রাখা আছে, ইয়ুন লু ও দুটো রেখে গেছে শুধু মিন হুয়ের জন্যই।
টেবিলে বসে মিন হুয়ে খাবারের ঢাকা খুলল। একটাতে ষাঁড়ের লেজ রাঁধা আছে রেড ওয়াইনে। অন্যটায় গার্ডেন স্যালাড। দুটোই মিন হুয়ের খুব পছন্দ। পাশে একটা রেড ওয়াইনের বোতল। বোতলটা দিয়ে একটা কার্ড চাপা দেওয়া আছে। কার্ডে লেখা, “এই বোতলের ওয়াইনটা কাজে লাগবে তোর দুশ্চিন্তাগুলো থেকে ছাড়া পেতে।”
হাতের লেখাটা শিন ছির।
ষাঁড়ের লেজ রাঁধা রেড ওয়াইনে |
গার্ডেন স্যালাড |
মিন হুয়ে মোবাইল ফোন বার করে শিন ছিকে একটা টেক্সট মেসেজ পাঠালো, “শিয়া শিয়া নি দে হংজিউ।”
হংজিউ |
কিছু পরে উত্তর দিলো শিন ছি, “তুই কী গুয়ান ছাওতে কাজ করতে যাবি?”
মিন হুয়ে উত্তর দিলো, “আমি কাজ ছেড়ে দিয়েছি।”
শিন ছি জানতে চাইলো, “কাল থেকে কী করবি?”
মিন হুয়ে উত্তর দিলো, “জুতো বেচবো।”
তক্ষুণি ফোন বেজে উঠলো, শিন ছির অধীর গলা শোনা গেলো, “জুতো বেচবি? কেমন জুতো?”
“স্নিকারস্।”
উল্টো দিকে শিন ছির স্বরে আরো বেশি উত্তেজনার ঝাপটা, “অমন মহিমান্বিত হুয়াছিং ইউনিভার্সিটির একটা কম্পিউটার সায়েন্সের মাস্টার্স ডিগ্রি, বা’অ্যানের আর অ্যান্ড ডি ডিরেক্টর জুতো বেচবে? লজ্জা করে না?”
“--”
“অতো বাড়াবাড়ি করিস না। তুই কী বেচছিস? তোকে জুতো বেচতেই হবে?”
“আমার তো একটা নন-কম্পিটিসন বাধ্যবাধকতা আছে। তাই আমি কেবল জুতোই বেচতে পারি।”
শিন ছি চুপ করে রইলো কিছুক্ষণ, শেষে বললো, “করিস না এমন। কতো টাকা লাগবে তোর? আমি দেবো।”
“দরকার নেই। কারো ব্যাপারে এতো নরম হবার মানে হয় না। আমার বাবার তো ছোটোখাটো ব্যবসাই ছিলো। আমি আসলে জুতো বেচার কাজটা পছন্দই করছি।”
মুখে স্যালাডের একটা বড়ো গ্রাস পুরে বললো মিন হুয়ে, লেটুস চিবোতে চিবোতে, “তুই যদি আমাকে সাহায্যই করতে চাস তবে দোকানটাতে এসে অনেক জুতো কিনিস। ওহ্, তুই তোর কোম্পানির সব লোকজনকেও পাঠাতে পারিস। আমি কুড়ি শতাংশ ছাড় দেবো সকলকে। দোকানটা রুইদ্য বাজারের বাড়িটার তিনতলায়, নাম ‘ঝাও মু স্পোর্টস্’।”
“মিন হুয়ে।”
“হুহ্?”
“তুই কী মাতাল হয়ে গেছিস? মদের নেশার ঘোরে কথা বলছিস? তুই শুধু নিজের জন্য জুতো বেচতে পারিস, কিন্তু তুই চাস যে আমি সেগুলো তোর থেকে কিনবো?”
“মিষ্টি আলু বেচে যা পয়সা করা যায় তার থেকে অনেক বেশি পয়সা করা যায় জুতো বেচে।”
“চেং ছিরাং তোকে বড়ো কিছুর প্রস্তাব দেয় নি? আমি এটা বিশ্বাস করি না।”
“শিন ছি,” মিন হুয়ে না চেঁচিয়ে থাকতে পারলো না, “এই কথাটা কতোবার বললে তবে তোর বিশ্বাস হবে? আমি চেং ছিরাং-কে ঘেন্না করি! ও আমাকে চাঁদ দিতে পারে, তারা দিতে পারে, সব সমেত পুরো আকাশটাও দিতে পারে। আমি গুয়ান ছাওতে যাবো না আমাকে পুরো আকাশগঙ্গা দিয়ে দিলেও যাবো না।”
~~~~~~~~~~~~
সম্পূর্ণ বই বিনামূল্যে : https://dl.bookfunnel.com/lcj5vznt96
Link to Previous Post in the Series : https://projectionofnaught.blogspot.com/2024/09/jpda-chapter-54.html
Link to following Post in the Series : https://projectionofnaught.blogspot.com/2024/10/jpda-chapter-56.html