Sunday, September 8, 2024

JPDA - Chapter 33

 ৩৩. পুত্র



শব্দগুলো ঝরা মাত্র হঠাৎ শিন ছির পুরো শরীর যেনো জমাট বেধে গেলো। 

এই মাত্র উপহাসে মত্ত ছিলো আর পর মূহুর্তেই মিন হুয়ের চোখের সামনে পুরো মানুষটা যেনো জমে বরফ হয়ে গেলো, যেনো একটা মুভি চলতে চলতে আটকে গেছে।

“আমার ছেলে আছে?” শিন ছির মুখটা যেনো নিভে গেলো। মিন হুয়েকে টানতে টানতে করিডরের কোণে নিয়ে গেলো, চোখ গুলো সরু করে, কেটে কেটে একেকটা শব্দ বললো, “কবে হলো আমার ছেলে?”

“চার … বছর আগে।”

শিন ছির চোখ দুটো ধারালো আর হিংস্র হয়ে উঠেছে, যেনো এক কামড়ে গিলে ফেলবে মিন হুয়েকে। নিজের অজান্তে এক পা পিছিয়ে গেলো মিন হুয়ে, “যখন আমরা একসাথে ছিলাম।”

“এটা এমন কাকতালীয় হলো কী করে?” গম্ভীরভাবে বললো, “আমরা মাত্র চারটে রাত একসাথে ছিলাম, খুব বেশি হলে চার বার।”

শিন ছি অস্বীকার করছে সন্তানকে। ধুর, ও মানছেই না যে ওর ছেলে হতে পারে।

“তুই তো কন্ডোম পরিস নি।” মিন হুয়ে সোজাসুজি তাকালো শিন ছির দিকে, “আর একেক রাতেত একের বেশি বার।”

“যখন তুই পুরুষদের দেখিস, তুই বিরামহীন চালিয়ে যাস।” শিন ছির মুখটা রাগে লাল, “মেয়েমানুষ, তোর কোনো সংযম নেই?”

মিন হুয়ে কথা হারালো, “প্রত্যেকবার তুই চেয়েছিলি। তাহলে কি করে এটা হয় যে আমার সংযম নেই?”

“তার কারণ আমি ভেবে ছিলাম তুই সু তিয়াঁ। যদি না হতো, তাহলে আমি তোর আঙুলও ছুঁতাম না। কন্ডোম ছাড়া যেতাম কিনার প্রশ্ন নেই। তোর মতো মারাত্মক মেয়েমানুষের জন্য আমাকে বুলেটপ্রুফ ভেস্ট পরতে হতো।”

প্রচন্ড রাগে গর্জে উঠলো শিন ছি, “যদিও তুই সত্যি বলতে পারিস নি, তবু তুই তোর হর্মোনগুলোকে আটকাতে পারিস নি নিজের উথলে ওঠা খুশি দেখানোর থেকে। তুই আসলে একটা বাচ্চার জন্ম দিয়েছিস, কেনো ওকে জন্ম দিয়েছস তুই? তোর সাথে একটা তেতো নাটক করার জন্য?”

“শিন ছি” ওর গলার স্বর ক্রমশ চড়ছে দেখে মিন হুয়ে চেষ্টা করলো, নিজের গলার স্বর শান্ত করতে, “আমি যা করেছি সে সবই করেছি সু তিয়াঁর ইচ্ছে পূরণের জন্য। আমি চেষ্টা করেছি তোর অপেরেসনের আগে তোকে খুশি রাখতে। না হলে, আমি সহজে কোনো পুরুষের সাথে শুই না, কাউকে বাধ্য করা তো দূরে থাক। তুই যদি আমাকে পছন্দ না করতিস, আমিও তোর প্রেমে পড়তাম না।”

“তুই আমার প্রেমে পড়িস নি, আর তুই একটা বাচ্চার জন্ম দিয়েছিস। তুই কি কিছু স্মৃতিতে ধরে রাখতে চাইছিস?” শিন ছি উপহাসে ফেটে পড়লো, “মিন হুয়ে, তুই আমাকে বল, তোর আর আমার মধ্যে মিথ্যে আর ছলনা ছাড়া আর কী আছে? মনে রাখার মতো?”

“আমি যখন জানতে পেরেছি তখন আমি দু মাসেরও বেশি অন্তঃস্বত্তা। ও তখন একটা জীবন্ত প্রাণ।”

“তুই স্পষ্ট করে জানতিস যে এই সম্পর্কটা মিথ্যে। কেনো তুই ঐ পর্যন্ত গেলি? আমাকে তুই অন্ধকারে রেখেছিলি, কিন্তু তুই তো বুদ্ধিমান সংবেদনশীল মানুষ একটা। তোর তো হাজারো উপায় ছিলো প্রেগনেন্সি আটকানোর, তুই তার কোনোটাই নিস নি, কিন্তু তুই একটা বাচ্চা চেয়েছিস। বাচ্চা হয়েওছে। তোর গুরুতর মস্তিষ্ক বিকৃতি আছে!”

“হ্যাঁ, আমি বাচ্চাটার জন্ম দিয়েছি।”

মিন হুয়ে শূণ্য দৃষ্টিতে চাইলো শিন ছির দিকে, “কিন্তু তোর এতো নার্ভাস হবার কিছু নেই। কেউ তোকে দায় নিতে বলছে না। তুই যদি বাচ্চাকে তোর বলে মানতে না চাস, কিচ্ছু যাবে আসবে না। আমি তোকে কোনো সমস্যায় ফেলবো না।”

“তাহলে আমি কে? একটা স্পার্ম ডোনার?” শিন ছির মুখ আরো অন্ধকার করে এলো, “তুই একটা প্রতারকের ভান করলি, পরিস্থিতির সুযোগ নিলি, আর এখন দাবি করছিস যে তোর বাচ্চাটা আমার। আবার আমাকে তার দায়িত্বও দিবি না? যদি বাচ্চাটা সত্যিই আমার হয়, তাহলে আমি দায়িত্ব নিতে পারি না?”

“যদি তুই দায়িত্ব নিতে চাস, সেটা ভালোই। একাধিক বাবা থাকা সব সময়ে ভালো। কিন্তু তুই বদমেজাজি। তোর ইমোশনাল ইন্টেলিজেন্সও ভালো নয়। যথেষ্ট নয়, এই দুটো কারণ, তুই যদি সত্যিই বাচ্চার কাছে থাকিস, তবে বাচ্চার ওপরে তোর খারাপ প্রভাব পড়বে। আশা করি তুই এটা বদলাতে পারবি।” খুব কায়দা করে সাজিয়ে গুছিয়ে বললো মিন হুয়ে।

“তুই বদমেজাজি নস? সেই জন্যই তুই উদ্যম নিয়ে বাচ্চার মা হলি আর গিয়ে বসলি একটা লোকের কোলে? তোর ইমোশনাল কোশেন্ট হাই, কিন্তু তুই ‘অপমানজনক’ শব্দটা সম্পর্কে কিছুই জানিস না। মিন হুয়ে, মিন হুয়ে, নিজের আকাশছোয়াঁ প্রশংসা করিস না, তোর ইমোশনাল কোশেন্ট নেই। তোর মেরুদন্ড নেই। তুই একটা কেন্নোরও অধম। তুই কিস্যু পারিস না নোংরা খুঁটে খাওয়া ছাড়া! এখন আমি ভাবছি আমরা কী কান্ডই না করেছি, বাহ্‌, বাহ্‌, বাহ্‌! জঘন্য!”

“জঘন্য? আমার তো মনে হচ্ছে ব্যাপক হয়েছে।”

“...”

“প্রথম ভুলটা আমারই। সু তিয়াঁর হারিয়ে যাওয়াটা তোর থেকে লুকিয়ে ঠিক করি নি আমি। তাই এবারে আমি তোর থেকে কিচ্ছু লুকোতে চাই নি। সু ছন, মানে তোর ছেলে, ওর ব্যাপারে তোকে জানিয়ে আমি আমার কর্তব্য করেছি। তুই যদি ওকে দেখতে না চাস, তুই এখন চলে যেতে পারিস।”

“ধ্যাৎ তেরি! ওকে আমার ঘাড়ে চাপানোর চেষ্টাটা বন্ধ কর। তোর কী পয়সা নেই? নাকি তোর প্রাক্তন বর তোকে খোরপোষ দেয় না, তুই আমাকে ব্ল্যাকমেল করতে চাস যখন তুই আমাকে দেখতে পাবি?”

“আমার আগের বর একজন দূর্দান্ত সার্জেন, সুদর্শন আর দয়াবান। আর ওঁর রোজগার তোর থেকে খারাপ নয়। আমি একটা টেকনোলজি কোম্পানিতে ডিরেক্টর। আমার রোজগারও কম নয়। অনুরোধ করছি, তুই মুখটা পরিষ্কার রাখ আর আমাকে কাদা ছোঁড়া বন্ধ কর।”

“একটা সুদর্শন লোক? তার হার্টের অবস্থা ভালো তো?” বিদ্রুপ ঢেলে বললো শিন ছি, “একটা সুদর্শন আর দয়াবান লোক তোকে ডিভোর্স দিলো? সেও কী টের পেয়েছে যে আমার মতো তাকেও তুই ঠকিয়েছিস?”

শিন ছির মুখটা ক্রমশ লাল থেকে টকটকে লাল হয়ে উঠছিলো, কপালের শিরাগুলো জেগে উঠছিলো, ও ওর মুঠোটা নেড়ে চলে ছিলো মিন হুয়ের মুখের সামনে। যা হোক, এটা হাসপাতালের সাধারণের ব্যবহারের জায়গা, ও ভালো করে চেঁচাতে পারছে না, খুলে রাগ দেখাতেও পারছে না, গলার স্বর ক্রমশ নিচু থেকে নিচুতর হয়ে যাচ্ছে, ওর জিভ আরো বিষাক্ত হয়ে উঠছে, গালি দিচ্ছে কঠিন থেকে কঠিনতর, কিন্তু মিন হুয়ে এই দূর্ব্যবহার অস্বীকার করে চলেছে।

“যথেষ্ট হয়েছে! তুই যখন আমার কথা বিশ্বাস করতে পারছিস না, তখন মনে কর যে আমি তোকে কিছু বলি নি।”

মিন হুয়ে দরজার দিকে দেখিয়ে বললো, “এখনই চলে যা। আর ওটাকে ফিরে ব্যবহার করিস না। আমি আর আমার বাচ্চা তোকে ছাড়াই ভালো থাকবো -”

মিন হুয়ের কথা শেষ হলো না, করিডরে হঠাৎ দেখা দিলেন একজন ডাক্তার। উনি একটা সাদা কোট পরে ছিলেন। যখন উনি ওদের দুজনকে দেখলেন, তখন দূর থেকেই ডাকলেন, “মিন হুয়ে?”

ডাক্তারটি হলেন ঝৌ রু জি।

হয়তো উনি ঝগড়া শুনতে পেয়ে ছিলেন, উনি পা চালিয়ে এলেন আর মিন হুয়ের পাশে দাঁড়ালেন রক্ষকের মতো। “ডিনার পার্টি এতো তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে গেলো?”

“হ্যাঁ।”

“জামার অবস্থা এরকম কেনো? কারুর সাথে মারপিট করেছো?” মিন হুয়ের পরনের জামাটা দেখিয়ে জানতে চাইলেন ঝৌ রু জি।

মিন হুয়ে ঝুঁকে দেখলো আর চোখে পড়লো যে ও তখনো শিন ছির স্যুটটা পড়ে আছে আর ওর সাদা স্কার্টে তখনো লাল ওয়াইনের দাগ লেগে আছে। খুব মন দিয়ে না দেখলে, রক্ত লেগে আছে বলে মনে হবে। ও স্যুটটা খুলে নিয়ে শিন ছির হাতে ধরিয়ে দিলো, বললো, “আমি ঠিক আছি।”

দুজনেরই মুখ ভার আর কেউ কাউকে কারুর সাথে আলাপ করিয়ে দিলো না। তাই ঝৌ রু জিই কেবল শান্ত হয়ে বললো, “আমার কাজ শেষ। আমি সু ছনকে দেখতে যাচ্ছি। একসাথে যাবে?”

“ঠিক আছে।”

“এটা পরে নাও। বাচ্চাকে ভয় দেখানোর দরকার নেই।” ঝৌ রু জি নিজের সাদা কোটটা খুলে দিলো, ইস্ত্রি করে সিধে করা কোট। মিন হুয়ে কোটটা হাতে নিয়ে পরে নিলো। এলিভেটরে উঠে বোতাম টিপে দিলো। 

শিন ছি চুপচাপ চললো, পিছু পিছু। এলিভেটরের দরজায় দাঁড়িয়ে রইলো কোনো কথা না বলে। ঝৌ রু জি কৌতুহল রাখতে পারলো না, “ইনি-?”

মিন হুয়ে কিছু না বলে নিচের দিকে তাকিয়ে রইলো।

তৃতীয় ব্যক্তির উপস্থিতিতে শিন ছি চটপট নিজের সংযম ফিরে পেলো, “আমার নাম শিন ছি।”

“ঝৌ রু জি।”

দুজনে পরস্পরের দিকে তাকালো আর করমর্দন করলো বিনয়ের সঙ্গে। 

“আপনি - সু ছনকে দেখতে এসেছেন?” ঝৌ রু জি সাধারণভাবে জানতে চাইলো বার বার শিন ছিকে দেখে।

“আমি এসেছি চেন জিয়া জুনের খোঁজে। আপনি কী জানেন ও কোন রুমে আছে?”

“পাঁচশো সাত। আমরাও ওখানেই যাচ্ছি। এই তো এলিভেটর পৌঁছে গেছে।”

এলিভেটরের ভেতরে আবহাওয়াটা উদ্ভট।

তিনটে মুখ চেয়ে আছে, প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে এলিভেটরের ঝকঝকে ধাতব দরজাতে। 

শুরুর থেকে শেষ অবধি কেউ কোনো কথা বললো না।

সু ছনের ওয়ার্ড করিডরের এক্কেবারে শেষ মাথায়। ঝৌ রু জি নিজের প্রভাব খাটিয়ে সু ছনের জন্য একটা আলাদা ঘরের ব্যবস্থা করে দিয়েছে। ঘরটাতে আওয়াজ অনেক কম, আর সু ছনের সঙ্গে থাকার জন্য আরামদায়কও। সার্জারির পরে বাচ্চা খুবই দূর্বল হয়ে পড়েছে। প্রায়ই বলে ব্যথা করছে আর আর ওর মেজাজও খারাপ থাকে।

বাচ্চার জন্য মিন হুয়ের খুবই মন খারাপ। কখনই বাচ্চাকে ছেড়ে যায় না ও কোথাও। ওর অবস্থাটা বুঝে কোম্পানি ওকে সম্মতি দিয়েছে কয়েকদিন কাজে না আসার। তবে টেকনিক্যাল ডিরেক্টর হিসেবে ও বেশিদিন কাজের জায়গা থেকে দূরে থাকতেও পারে না।
ঘরের মধ্যে কেবল দুটো চেয়ার ছিলো। ওখানে শুয়ে ঘুমোনোর কোনও জায়গা নেই, যদি না ক্লান্তিতে কেউ মেঝেতে শুয়ে পড়ে। ব্যাপার দেখে ঝৌ রু জি একটা সোফা অফিস থেকে টেনে এনে পেতে দিয়েছে ঘরটাতে। সোফাটা সিধে করে দিয়ে বিছানা বানিয়ে নেওয়া যায়। এই সোফাটার জন্যই মিন হুয়ে এতোদিন কাটাতে পেরেছে।

ওয়ার্ডের দরজা অবধি গিয়ে শিন ছি দাঁড়িয়ে পড়লো। 

মিন হুয়ে ওকে উপেক্ষা করে, ঠেলে দরজা খুলে ঢুকে পড়লো ঘরে।

ঝৌ রু জিকে দাঁড়াতে হলো, জিজ্ঞেস করলো, “জিয়া জুন ভেতরে, আপনি যাবেন না?”

“ছিং, ওকে বলুন বেরিয়ে আসতে।” বললো শিন ছি বিনয়ের সাথে, “আমি ভয় পাচ্ছি যে আমি রুগীর বিশ্রামে ব্যাঘাত ঘটাবো।”

“ঠিক আছে। আমি গিয়ে ওর সাথে কথা বলছি।” ঘাড় নেড়ে জানালো ঝৌ রু জি, আঙুল তুলে করিডরের এক সারি চেয়ারের দিকে দেখালো, “ওখানে বসে কথা বলতে পারেন আপনারা।”

“ধন্যবাদ।”

খানিক পরে চেন জিয়া জুন বেরিয়ে এলো ওয়ার্ডের ভেতর থেকে। শিন ছি ওকে দেখেই উঠে দাঁড়িয়ে নমস্কার করলো, “চেন জিয়া জুন?”

“হ্যাঁ, আপনি -”

“আমার নাম শিন ছি। আমি আপনার জিয়েজিয়ের নান ফঙিয়ো।” শিন ছি হাত মেলালো চেন জিয়া জুনের সাথে আর খুব জোরে জোরে নেড়ে দিলো ধরে থাকা হাত।

“আমার জিয়েজিয়ে?” বিভ্রান্ত হয়ে চেন জিয়া জুন চাইলো শিন ছির দিকে, “মানে মিন হুয়ে?”

“না সু তিয়াঁ, আপনার সহোদরা।” খুব গম্ভীর মুখে বলতে লাগলো শিন ছি, “আপনার জিয়েজিয়ে আর আমি একসাথে বড়ো হয়েছি। আর আমরা … পরস্পরের খুবই ঘনিষ্ঠ ছিলাম, আত্মীয়ের মতো।”

“মনে পড়েছে। আপনি সেই শিন ছি যার কথা রোজ ডায়েরিতে আমার জিয়েজিয়ে লিখে রেখেছে।” হাসতে হাসতে বললো চেন জিয়া জুন। কিন্তু দেখলো শিন ছির চোখে যেনো হালকা লালচে ভাব। চট করে নিজের মুখের ভাব বদলে দুঃখী করে নিলো, “মিন হুয়ে বলেছে আপনি নাকি মেইগুয়োতে থাকেন?”

“হ্যাঁ। কিন্তু আমি থেকেই থেকেই চোঙ্গুয়াতে আসি গত দু বছর যাবৎ।”

“বেড়াতে?”

“না, ব্যবসার কাজে।”

“তা ভালো। তাহলে আমাদের থেকে থেকেই দেখা হবে।”

“অবশ্যই।”

শিন ছির মনে হয়ে ছিলো এরকম একটা “ঐতিহাসিক সাক্ষাৎ” নিশ্চয় খুব উত্তেজনাময় হতে চলেছে। কিন্তু বাস্তবে দুজনেই খুব শান্ত আচরণ করলো।

হঠাৎ করে সু তিয়াঁর জন্য তারা আত্মীয় হয়ে গেলো, কিন্তু অপরিচয়ের দূরত্ব রয়ে গেলো। আর অনেকটা সময় না কাটলে, অনেকটা সময় একে অপরের সঙ্গে না কাটালে অপরিচয়ও কাটবে না, দূরত্বও ঘুচবে না। তার সঙ্গে দুজনের সংস্কার, পেশা, শিক্ষা, এসবের পার্থক্য জুড়ে কথা বলার কিছুর রইলো না।

“যাই হোক, আপনি থাকেন কোথায়? আপনার ফোন নাম্বার?” শিন ছি নিজের মোবাইল ফোন বার করলো, “আসছে সপ্তাহে কবে আপনি ফাঁকা থাকবেন? আমি আপনার সঙ্গে কোথাও খেতে যেতে চাই, ভালো করে কথাও বলা যাবে।”

শিন ছির ফোনটা নিয়ে জিয়া জুন ওর নিজের ফোন নাম্বার লিখে দিলো। জানতে চাইলো, “আপনার সাথে জিয়েজিয়ের দেখা হলো কী করে? আমি মিন হুয়ের কথা বলছি। ও তো বলে ছিলো যে আপনার সাথে অনেক দিন ওর কোনো যোগাযোগ নেই।”

“হঠাতই ওর সাথে ব্যাঙ্কোয়েতে দেখা হয়ে গেলো।”

“তাহলে … আপনি দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে কেনো? আপনি ভেতরে যাবেন না? ওর সাথে কথা বলবেন না?”

শিন ছি মাথা নেড়ে বললো, “না, আমি এখানে এসেছি তোমার সাথে দেখা করতে।” 

“তাহলে আপনি, আপনি এখন একা?”

“হুহ্‌?” শিন ছি বুঝতে পারলো না।

“বিয়ে করেন নি?”

“না।” শিন ছি কাঁধ ঝাঁকালো, “আমি এখনো তোমার জিয়েজিয়েকে খুঁজে পাই নি, আমি কী করে একটা পরিবার শুরু করি?”

“গ্যগ্য,” দু চোখে ভর্তি অবিশ্বাস নিয়ে শিন ছির দিকে তাকিয়ে বললো চেন জিয়া জুন, “আপনি এখনো আমার জিয়েজিয়ে জন্য অপেক্ষা করছেন, তাই কী? আমার জিয়েজিয়ে গত হয়েছেন।”

“ও হারিয়ে গেছে।”

“ও হারিয়ে গিয়ে থেকে চার বছর হয়ে গেছে … ভুলে যান। আমি বলছি আপনাকে, আমার মনে হয়, এবার আপনার জীবনের খাতায় নতুন পাতা খোলার সময় হয়ে গেছে।”

“এতো সহজে আমি হাল ছেড়ে দেবো না। জ্যান্ত মানুষকে দেখা যায়, মরা মানুষ হলে মড়াটা দেখা যায়। জীবিত বা মৃত, ওকে খুঁজে বার করতেই হবে আমাকে।”

তেতো হাসি ছড়িয়ে গেলো চেন জিয়া জুনের মুখে, “এই ব্যাপারে আপনার আর মিন হুয়ে জিয়ের মতের কোনো বিরোধ নেই।”

“ওর ছেলের কী হয়েছে? হাসপাতালে দিতে হলো কেনো?”

“জন্মগত হৃদরোগ। এই সবে ছেলেটার থোরাকোটমি হয়েছে।”

“...”

“আমার অনুমান সঠিক হলে, আপনি ছেলেটার জনক।” হঠাৎ বললো চেন জিয়া জুন।”

শিন ছির শরীর কেঁপে উঠলো, অপ্রত্যাশিতভাবে ওর চোখের দৃষ্টি গেলো বদলে, “তোমাকে মিন হুয়ে বলেছে?”



“ও কোনোদিন এই কথাই তোলে নি। কিন্তু আপনি আর সু ছন এতো একরকম দেখতে। দেখলেই চেনা যায় বাবা আর ছেলে বলে।”

“... …”

শিন ছির মনে পড়ে গেলো ঝৌ রু জি ওর দিকে বার বার দেখছিলো এলিভটরে। 

“আমি শিগগির যাবো। ফোন করে নেবেন?”

“ওকে, ওয়া আন।”

***

মিন হুয়ে এক বাটি মিলেট পরিজ খাওয়ালো সু ছনকে। ওয়ার্ড থেকে বেরিয়ে সিঙ্কে বাসনগুলো নিয়ে গেলো মাজার জন্য। চোখ তুলে তাকাতে দেখলো শিন ছি করিডরে একটা চেয়ারে বসে, চুপ করে ওর দিকে তাকিয়ে আছে।

মিন হুয়ে খানিক ক্ষণ ভেবে নিলো, ওর কাছে হেঁটে গেলো, নরম সুরে জানতে চাইলো, “ও এখনো ঘুমিয়ে পড়ে নি। তুই কি যাবি, একবার দেখে আসবি?”

“মিন হুয়ে, আমি কী তোর সাথে খারাপ ব্যবহার করছি?”

শিন ছির হঠাৎ প্রশ্নে মিন হুয়ে এক মূহুর্তের জন্য জমে বরফ হয়ে গেলো, তারপর ঘাড় নেড়ে বললো, “সহানুভূতিশীল।”

“তাহলে তুই আমার সাথে এমন ব্যবহার করছিস কেনো?” এখন মুখে জুড়ে ছড়িয়ে আছে ঘেন্না, “আমাকে জন্মের পরেই আমার মা, বাবা ফেলে দিয়ে ছিলো রাস্তায়, আমি নিজের কাছে শপথ করে ছিলাম আমি এ জীবনে আমার বাচ্চাকে কখনো ছেড়ে যাবো না।”

“...”

“কিন্তু তুই আমার পিতৃত্বের অধিকারটা দিলি না! সে কথা না হয় বাদই দিলাম যে আমার বাচ্চা, অসুস্থ বাচ্চা, যার আমাকে ভীষণ প্রয়োজন। ওর জন্মের সময়ে আমি ছিলাম না। ওর জীবনের শুরুর মূহুর্তগুলো আমি হারিয়েছি … সেটা ওকে ফেলে চলে যাবারই মতো -”

ওর গলা আস্তে আস্তে বুজে এলো, “মিন হুয়ে, তুই কী নিষ্ঠুর?”

“শিন ছি – –”

“আমি তোকে কোনো দিনও ক্ষমা করবো না।”

“শোন, আমি তোকে ওর বাবা হওয়া থেকে আটকাই নি।”

“ও আমার রক্ত, আমিই ওর জনক, সে তুই আমাকে ওর থেকে দূরে রাখিস আর না রাখিস।” গর্জে উঠলো শিন ছি চাপা স্বরে।

ব্যাপারটা ক্লান্তিকর! মিন হুয়েও রেগে গেলো, “যদি তুই তোর ছেলেকে দেখতে চাস, তাহলে বাজে বকা বন্ধ কর। দরজা ঐখানে, কেউ তোকে আটকাবে না।”

শিন ছি বড়ো বড়ো পা ফেলে দরজার দিকে এগিয়ে গেলো। দশটা বিছানার ঠিক মাঝামাঝি একটাতে শুয়ে আছে আছে ফ্যাকাসে দেখতে বাচ্চা ছেলেটা, তার বুকের চারপাশে গজ জড়ানো, একটা বিস্কুট খাচ্ছে, মাথাটা ঝৌ রু জির হাতে হেলান দিয়ে।

“বাবা, আমি ডিসনি যাবো, হাসপাতাল থেকে বেরোনো মাত্র।”

“ঠিক আছে।”

“বাবা, বাবা, আমি চাই তুমি আর মা দুজনেই আমার সঙ্গে যাবে।”

“ঠিক আছে। এই মাত্র তুমি দু পা হাঁটলে। খুব সাহসের কাজ সেটা। কাল তোমাকে একটা গেম কনসোল দেবো। তোমার সাহসী কাজের পুরস্কার।”

“ইয়ে!” সু ছন হাসতে চাইছিলো, কিন্তু জোর দেবার সাহস হলো না ওর। এখনো ওর বুকে হালকা ব্যথা আছে। ব্যথার জেরে মাঝে মাঝেই ওর ভ্রূ কুঁচকে উঠছে, ও কিছুতেই সেটা আটকাতে পারছে না। যেই মুখ তুলে চাইলো, অমনি দেখলো ঘরে একটা অচেনা লোক।

মিন হুয়ে টেনে নিয়ে এলো শিন ছিকে সু ছনের বিছানার পাশে। নরম সুরে ডাকল, “ছন ছন -”

“এই শুশু কে?” কৌতুহল মাখা চোখে সু ছন দেখছিলো শিন ছিকে।

“ছন ছন, এই পৃথিবীতে কারুর মাত্র একটা বাবা থাকে, কারুর দুটো বাবা থাকে। মা তোমাকে আজ কিছু বলতে চায়। এই মানুষটা,” মিন হুয়ের আঙুল তখন ঝৌ রু জির দিকে, “তোমার দ্বিতীয় বাবা।”

“একটা বাবা। আর ইনি,” মিন হুয়ের আঙুল ঘুরে গেলো শিন ছির দিকে, “হলেন তোমার প্রথম বাবা।”

সু ছনকে দেখে বোঝা যাচ্ছিলো যে ও কথা হারিয়েছে।

মিন হুয়ে শিন ছির দিকে আঙুল রেখে বোঝাতে লাগলো, “এই বাবা আর মা তোমাকে জন্ম দিয়েছে যখন তারা একসাথে ছিলো। তারপর এই বাবা ব্যবসার কাজে চলে যায়। মা তোমার দ্বিতীয় বাবাকে নিয়ে আসেন তোমার খেয়াল রাখার জন্য। এখন যখন তোমার প্রথম বাবা ফিরে এসেছেন, এখন তোমরা থেকেই থেকেই একে অপরের সাথে দেখা করতে পারবে।”

সু ছন তখনও ঘোরের মধ্যে।

“তার মানে -” মিন হুয়ে যেনো আনন্দে হাততালি দিয়ে উঠলো, “তোমার আরকটা বাবা আছে, যে তোমার সাথে খেলবে। কী ভালো না! তুমি কী অবাক হয়ে গেলে? হ্যাঁ, তুমি অবাক হয়ে গেছো বুঝি?”

সু ছন তাকালো ঝৌ রু জির দিকে, আর তারপর তাকালো শিন ছির দিকে, জিজ্ঞেস করলো, “মা, হাসপাতাল ছাড়ার পরে আমি কোন বাবার সাথে থাকব? এক নম্বর বাবার সাথে, নাকি দু নম্বর বাবার সাথে?”


~~~~~~~~~~~~

সম্পূর্ণ বই বিনামূল্যে : https://dl.bookfunnel.com/lcj5vznt96

Link to Previous Post in the Series : https://projectionofnaught.blogspot.com/2024/09/jpda-chapter-32.html

Link to following Post in the Series : https://projectionofnaught.blogspot.com/2024/09/jpda-chapter-34.html

No comments:

Post a Comment

Readers Loved