Saturday, September 7, 2024

JPDA - Chapter 32

 ৩২. দেবদূত ও দানব



আশীর্বাদ চট করে আসে না, দূর্ভাগ্য কখনো একলা আসে না।

বলা অসম্ভব যে মিন হুয়ে গত চার বছরে শিন ছিকে ভুলে গেছে। কিন্তু ও চেষ্টা করেছে ভুলে যাবার, নানা উপায়ে। যার মধ্যে সবচেয়ে জোরালো আর সর্বগ্রাসী উপায় হলো আরেকটা লোককে বিয়ে করে ফেলা, বিদ্যুৎ বেগে।

ও কোনো দিনও ভুলবে না শিন ছির বলা দুটো কথা-

“এই মূহুর্ত থেকে তোর আর আমার কোনো সম্পর্ক নেই। আমি তোকে জানি না, তুই আমাকে চিনিস না।”

“আমি তোকে আর কোনো দিনও দেখতে চাই না। তার দায়টাও তোর।”

প্রথমে মিন হুয়ে ভেবে ছিলো এসব নেহাত রাগের কথা। শিন ছির তো মাথা গরম, সেই বাচ্চা বয়স থেকেই, সে কথা সু তিয়াঁও বার বার লিখেছে ওর ডায়েরিতে।

কিন্তু যখন মিন হুয়ের সাথে শিন ছির দেখা হয়ে ছিলো, তখন শিন ছি প্রাপ্তবয়স্ক, ইউনাইটেড স্টেটসে থাকে, ভালো পারিবারিক পরিবেশে আর সুশিক্ষিত। এমন নয় যে ভদ্রলোকে কখনো আবেগতাড়িত হয় না বা রাগ দেখায় না। সব কিছুর মাত্রা থাকে, কিন্তু শিন ছির রাগ বাড়াবাড়ি রকমের।

মিন হুয়ে ভেবে ছিলো ও তেমন বড়ো দোষ কিছু করে নি, ও একটা কারণে মিথ্যের আশ্রয় নিয়ে ছিলো, মনে কারো ক্ষতি করার কোনো ইচ্ছে তো ছিলো না। যেদিন সত্যিটা প্রকাশ হলো, মিন হুয়ে ধরেই নিয়ে ছিলো শিন ছি পাগল হয়ে যাবে। কিন্তু ও কখনো কল্পনাও করতে পারে নি যে শিন ছি অমন হৃদয়হীন।

বাসে বসে, মিন হিয়ে একটা লম্বা চিঠি লিখে ছিলো শিন ছিকে, আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা চেয়ে ছিলো, যেটাকে একটা পুঙ্খানুপুঙ্খ পর্যালোচনা আর পূর্ণ স্বীকারোক্তি বলা যায়।

ফোন স্ক্রিনের হিসেবে পাঁচটা পাতা ধরে লেখা। কিন্তু ততক্ষণে শিন ছি ব্লক লিস্টে পাঠিয়ে দিয়েছে মিন হুয়েকে। তাড়াতে এতো অধৈর্য যেনো মিন হুয়ে কোনো জঘন্য অপরাধ করেছে।

ওরা দুজনে যখন একসঙ্গে ছিলো তখন তো ওরা সুখী ছিলো, ছিলো না?

সেই সব হাত ধরে থাকা, চুমু আর প্রেমে ভরপুর দিন আর রাতগুলো …

সত্যিই কী ওর মনে কোনো তোলপাড় হয় নি? ও কী এক মূহুর্তের জন্যও মিন হুয়েকে ভালো বাসে নি?

মিন হুয়ের প্রথম প্রেম শিন ছি। আঘাতটা তাই ভীষণ গভীর।

ওর আর চেং ছিরাং-এর মধ্যেকার ব্যাপারটা এতো বড়ো যে দেঁ চেন নিশ্চয়ই সেটা খতিয়ে দেখেছে, হয়তো শিন ছিকে কিছু বলে ছিলো, তাই কী?

ইন্টারনেটের অকম্মার ঢেঁকিরা, ট্রোল আর ট্রোল, নিশ্চয়ই ওদের অনেক রসালো গল্প জুটিয়ে ছিলো …

এ সবের কারণে শিন ছিও নিশ্চয়ই আর সকলের মতোই সহজ সিদ্ধান্তে পৌঁছে গিয়ে ছিলো।

যখন যুক্তি এই পর্যায়ে পৌঁছোলো তখন মিন হুয়ের হৃদয় হিম ঠান্ডা হয়ে গেলো এক লহমায়, আর যুক্তি তর্কে কোনো উৎসাহ পেলো না।

যদি ওর লড়াই করার ইচ্ছেটা থাকতো, তাহলে কখনো মরতে যেতো না।

ও কিছুতেই ফিরে যেতে চায় না সেই সময়ের সেই ভাঙাচোরা অবস্থাটায়। ও বরং অন্য একটা মানুষ হয়ে উঠতে চায়। সব কিছু ভুলে যেতে চায়। ভালোভাবে বাঁচতে চায়।

এ ভাবে ব্যাপারটাকে ভাবার পরে ওর মনে হলো শিন ছি অন্য সবার থেকে কিছু মাত্র আলাদা নয় যারা ওকে ভুল বুঝেছে আর অন্যদের অনুসরণ করেছে।

ওরা দুজনে একসাথে ছিলো, যদি সু তিয়াঁ নাও থাকতো তাহলেও ওর আর চেং ছিরাং-এর মধ্যেকার ব্যাপারটা ওর জন্য যথেষ্ট হতো সম্পর্কটা অস্বীকার করার জন্য। অল্প কথায়, ব্যাপারটা ভালো হতো না কিছুতেই।

সামনে উষ্ণতা দেখিয়ে, আর পিঠপিছে জমাট শৈত্যের সম্পর্কের থেকে ভালো আলাদা হয়ে গিয়ে একে অপরের সুখে সামিল হওয়া।

***

যেরকম ও জানতো না সু তিয়াঁ কখন বাসে চড়েছে, সে রকমই ও জানে না যে শিন ছি কখন ঝিনজি ক্লাবে এসেছে। শিন ছি যে ঝিনজি ক্লাবে আসতে পারে সে কথা ও ঘুণাক্ষরেও ভাবে নি। তারওপর আবার অমন একটা লজ্জাজনক দৃশ্যের সাক্ষী হয়ে থাকবে।

যাহোক, মিন হুয়ে তোয়াক্কাই করে না শিন ছি কী মনে করলো, ওর চোখে মিন হুয়ে তো কবেই খারাপ হয়ে গেছে।

ওর একটাই অনুতাপ যে অন্যের গল্পে ভাঁড়ের ভূমিকা নিয়ে ও লোক হাসিয়েছে, আবারও। তবে নিজের পেটের ছেলের জীবনের চেয়ে সম্মান বেশি দামী নয়, কোনোভাবেই নয়।

মিন হুয়ে খেয়ালই করে নি শিন ছিকে কারণ শিন ছি এবার একটা ঘন ধূসর রঙের স্যুট পরে আছে, সাথে কালো টাই, আর একটা রুমাল ভাঁজ করে রাখা আছে পকেটে। মাথার চুল ছোটো করে কাটা, চওড়া নির্বিকার কপাল। একটা ছোট্টো কিন্তু ত্রিকোণ মুখমন্ডল জুড়ে ছড়িয়ে আছে ব্যক্তিত্বের আভা।

মিন হুয়ের মনে আছে আরামদায়ক ঢোলা জামা জামা পরা শিন ছিকে, যে গুলো সাধারণ দেখতে হলেও, সাদামাটা নয়। ওর জামার রং, কোনটার সঙ্গে কোনটা পরবে, আর জামার কাপড় থেকে বোঝা যায় ওর জামাকাপড়ে একটা বিশেষ রুচির ছাপ আছে। অন্ধের মতো নিত্য নতুন হালের জামাকাপড় কিংবা ভয়ানক দামী জামাকাপড় পরে তা নয়, আবার একদম হাতের সামনে যা পেলো কিচ্ছু না ভেবে তাই পরল তাও নয়।

ওর মাথার চুল এখনকার মতো এতো ছোটো করে ছাঁটা ছিলো না। কিন্তু এখনো খানিকটা ওর কপালের ওপরে ঝুলে আছে। ঘুমোনোর সময়ে মিন হুয়ের খুব ভালো লাগতো পাঁচ আঙুলের চিরুণি দিয়ে ওর কপালের ওপরে, ভ্রুর হাড়ের ওপর থেকে চুলগুলোকে ঠেলে মাথার ওপরে পাঠিয়ে দিতে, যেনো একটা বেড়ালের গায়ে আঙুল বুলিয়ে দিচ্ছে।

শিন ছি খুব পছন্দ করতো মিন হুয়ে যখন আঙুল দিয়ে চুল ঠেলে সরিয়ে দিতো কপাল থেকে ও ভাবে। ও খুব শিগগির ঘুমিয়ে পড়তো।

ও শিন ছিকে দেখেছে পড়াশোনার ভক্ত হিসেবে, খেলাধূলোর ভক্ত হিসেবে, আর সাদামাটা যাপণের ভক্ত হিসেবে। এখন ওর সামনে ও যে শিন ছিকে দেখছে সে ব্যবসার অনুগামী, যার মাথার চুল কপাল থেকে সরিয়ে মাথার ওপরে তুলে দিলে ওয়াল স্ট্রিটের ব্যাঙ্কার হয়ে যায়।

টেবিলটাতে বারো জন বসে ছিলো। সবাই চেং ছিরাং-এর সমকক্ষ কর্তা নানান কোম্পানিতে। তাঁদের কেউ কেউ মহিলা সঙ্গী এনেছেন। চেং ছিরাং আর ঝেং য়ি তিং ছাড়া আর দুজনকে মিন হুয়ে চেনে, তবে তেমন আলাপ পরিচয় নেই তাঁদের সাথে।

সবাই গাঢ় রঙের স্যুট পরে আছে। মিন হুয়ের মাতাল চোখে তারা সবাই ক্ষুধার্ত। তার ওপরে, আলোটাও কম, আবছায়া বেশি, মিন হুয়ের কোনো প্রস্তুতি ছিলো না। ও যখন টের পেলো যে ওটা শিন ছি, তখন ও মর্মাহত হয়ে পড়লো, কিন্তু ওর মুখে কোনো ছাপ পড়লো না।

কারণ ওর মনে ছিলো শিন ছির কাছে নেওয়া শপথ, “আমি তোকে জানি না। তুইও আমাকে চিনিস না।”

তাই মিন হুয়ে ভান করলো যে ও শিন ছিকে চেনে না।

মিন হুয়েকে সংযম হারাতে দেখে টেবিলের সবাই, শিন ছিও ওর দিকে তাকিয় ছিলো হতবাক হয়ে।

যেনো কিছুই হয় নি এমন ভান করে মিন হুয়ে টেবিল থেকে একটা ন্যাপকিন তুলে নিয়ে নিজের মুখটা মুছে নিলো, নিচের দিকে তাকালো, ফিসফিস করে বললো, “ভালো না।”

জমিয়ে “নাটুকে” ভাব আনার জন্য ও আই শ্যাডো মেখে ছিলো, সঙ্গে ছিলো আই লাইনার, আর মাসকারার পুরু স্তর। কাগজ দিয়ে মোছার পরে সব কালো হয়ে গেলো। আয়না না দেখেও ও টের পাচ্ছিলো যে ওকে একটা ডাইনির মতো দেখাচ্ছে।

ক্ষণিকের নৈশব্দকে কাটিয়ে আবার হলে জেগে উঠলো নিরন্তর হালকা গুঞ্জন।

মিন হুয়ের প্রথম প্রতিক্রিয়া ছিলো ছুটে পালানো কিংবা মাটিতে একটা গর্ত খুঁড়ে তাতে ঢুকে পড়া, কিন্তু ও জানতো যে এই প্রদর্শনীটা ওর একার নয়, আর প্রদর্শনী এখনো শেষ হয়ে যায় নি - ভাবতে না ভাবতেই কানে এলো চেং ছিরাং-এর হতাশ অবজ্ঞা মাখা স্বর, “মিন হুয়ে, তুমি বড়ো বেশি পান করেছো।”

মিন হুয়ে ওর জামার কলার ধরে ওর মুখটা নিজে কাছে টেনে এনে জিজ্ঞেস করলো, “কি ভাবে?”

‘ঠাস!’ মিন হুয়ে কথা বলা শেষ করার আগেই ওর মুখে এসে পড়লো একটা জোরালো থাপ্পড়। ঝেং য়িতিং চেঁচিয়ে ডাকলেন আনাজ পরিবেশন করছিলেন যিনি সেই পরিবেশককে, “সিকিউরিটি গার্ড কোথায়? আপনি যান আর একজন সিকিউরিটি গার্ডকে ডেকে আনুন আর এই মহিলাকে, যিনি মাতাল হয়ে পাগলামি করছেন এখানে, ওঁকে এখান থেকে টানতে টানতে বার করে দিন।”

টেবিলে সবাই বিব্রত বোধ করছেন, কেউ কোনো কথা বলছেন না।

এই মূহুর্তে শোনা গেলো একটা স্বর শান্ত ভাবে বললো, “আমার পাশে বোস, মিন হুয়ে। এখানে একটা বসার জায়গা খালি আছে।”

কোনো বসার জায়গা খালি ছিলো না।

শিন ছির বাঁদিকে ওয়াইনের মতো লাল রঙের স্যুট পরে একটি অল্প বয়স্ক ছেলে বসে ছিলো। সে ব্যাপার দেখে উঠে দাঁড়ালো, “ওহ্‌, আমার কাজ আছে। আমি আসবো এবার। সবাই ধীরে ধীরে পদগুলো উপভোগ করুন।”

দুম করে শিন ছি উঠে দাঁড়ালো, বুঝি মিন হুয়ে দৌড়ে পালিয়ে যাবে, তাড়াতাড়ি মিন হুয়ের পাশে এলো, নিজের স্যুট খুলে পরিয়ে দিলো মিন হুয়েকে, নিয়ে গেলো ওকে নিজের বসার জায়গায়।

মিন হুয়ে দৌড়ে পালাতেই চাইছিলো। কিন্তু শিন ছির ডান হাত লোহার বেড়ির মতো শক্তভাবে জড়িয়ে আছে ওর হাতে।

অপ্রত্যাশিতভাবে, ব্যাঙ্কোয়েতে একটা “অপরিকল্পিত” অনুষ্ঠান হয়ে গেলো। চেং ছিরাং চোখ সরু করে দুবার তাকালো শিন ছি আর মিন হুয়ের দিকে, হাসলো, “হেহ!" প্লেটের ওপরে থাকা স্টিকটাকে কেটে একটা টুকরো মুখে দিলো এবং জমিয়ে চিবোতে চিবোতে বললো, “ইথান, তুমি সত্যিই জানো নায়করা কিভাবে সুন্দরীদের উদ্ধার করে।”

“উল্লেখ নিষ্প্রয়োজন।” শিন ছি মেরুদন্ড খাড়া করে বসলো, আর বললো, “আমি মিন হুয়েকে জানি। এই আর কি।”

“প্রথমত, এটা একটা তুচ্ছ ব্যাপার, উল্লেখের দরকার নেই, সবার রুচি নষ্ট করার জন্য।”

চেং ছিরাং দরাজ হেসে উত্তর দিলো, “সবাই খেয়ে চলেছে, কথা বলে চলেছে …”

মিন হুয়ের সামনে এক প্লেট চিংড়ি ছিলো। মিন হুয়ে একটা গভীর শ্বাস নিলো আর সিদ্ধান্ত নিলো যে খাওয়াতে মন দেবে। তাই একটা কাঁটা দিয়ে একটা চিংড়ি তুলে মুখে পুরে দিলো। কিন্তু শিন ছি কেড়ে নিলো, “এরকম করে চিংড়ি খায় কেউ, মিন হুয়ে?”

ওর স্বর নরম, মধুমাখা, “চিংড়ির খোলাটা এতো বড়ো, এটা তোর গলায় আটকে যাবে। আমি ছাড়িয়ে দিচ্ছি।”

ও ছুরি নামিয়ে রাখলো। নিজের হাতের আঙুল দিয়ে চিংড়ির খোসা ছাড়িয়ে, মাংসল অংশটা রাখলো মিন হুয়ের প্লেটে।

মিন হুয়ে খুব হতাশ হয়ে ছিলো, যেনো ফেটে পড়বে এবার, ও চাইছিলো চিংড়ি খেয়ে যেতে যেনো কিছুই হয় নি এমন একটা ভান করে।

ওর পাশে বসে শিন ছি চিংড়ির খোলা ছাড়াচ্ছে আর টেবিলে বসে থাকা অন্য মানুষদের সঙ্গে কথা বলে যাচ্ছে।

সব্বাই ভান করলো যেনো কিছুই ঘটে নি।

ব্যাঙ্কোয়ে শেষ হওয়া পর্যন্ত দুজনের মধ্যে কোনো কথাই হলো না শুধু চিংড়ি ছাড়ানো আর চিংড়ি খাওয়া ছাড়া।



সবাই যখন দেখলো শিন ছি আর মিন হুয়ে খুবই ঘনিষ্ঠ তখন উপস্থিত সবাই মিন হুয়ের জন্য মোটেই দুঃখ বোধ করলো না। এমনকি চেং ছিরাং আর ঝেং য়ি তিং-ও।

ব্যাঙ্কোয়ে শেষ হতে, শিন ছি বাইরে এলো মিন হুয়েকে সঙ্গে নিয়ে আর সোজাসুজি বলে দিলো, “তুই সত্যিই জানিস কিভাবে তোর প্রেম জানানোর উপযুক্ত জায়গা খোঁজা যায়, মিন হুয়ে।”

“...”

“যেহেতু তুই চেং ছিরাং-কে এতো ভালোই বাসিস, তাহলে ওর বৌ যখন তোকে মারলো, তোরও ওকে ঘুরে মারা উচিৎ ছিলো। তুই ওর থেকে মাথাতেও বেশি লম্বা আর গায়েও ওর থেকে তোর জোর বেশি, তুই নিশ্চয়ই জিতে যেতিস মারপিটটাতে। আমি তো দশ য়ুআঁ বাজি ধরতেও রাজি আছি।”

“...”

“এমন মাতাল। আমি তো তোকে বাড়ি পাঠাতেও ভরসা পাচ্ছি না। রাতটা অন্ধকার আর ঠান্ডা। রাস্তায় একটা মহিলা গুন্ডা, তাই আইন শৃঙ্খলার অবস্থা খারাপ।”

“যথেষ্ট বলেছিস, শিন ছি!”

“না তো। আমি তো তোকে এক কথায় স্বান্তনা দেবার চেষ্টা করছিলাম।”

ওর শরীর থেকে একটা লেবু লেবু গন্ধ বেরোচ্ছিলো, মিন হুয়ের মনে হচ্ছিলো যে ও যেনো ঘোরের মধ্যে একটা কমলা লেবুর ঝোপে এসে পড়েছে, “মর্যাদার ক্ষতি হওয়াটা খুব ভ্রান্ত কিছু নয়। রেহ্‌ট একবার বলে ছিলো যে তুমি বুঝতেও পারবে না মর্যাদা কী যতক্ষণ না তুমি তার পুরোটাই খোয়াচ্ছো। যে ধরনের বোঝাই হোক, সেটা থাকলে তুমি জানবেও না স্বাধীনতার অস্তিত্ব কী জিনিস।”

“রেহ্‌ট আবার কে?”

“দেখিস নি ‘গন উইথ দ্য উইন্ড’ সিনেমাটা?” ও হ্যাঁ, তুই তো দেখিস নি। সু তিয়াঁ আর আমি - আমরা একবার দেখে ছিলাম।”

কথা বলার সময় ও আসলে মিন হুয়েকে ঠেকা দিয়ে রেখে ছিলো, ভয় পাচ্ছিলো হাই হিল পরে মিন হুয়ে হয়তো পড়ে যাবে।

“...”

মিন হুয়ে চুপ করে আছে দেখে ওর কিছু বলার ছিলো না, “দেঁ চেন বলেছে তুই নাকি সু তিয়াঁর ভাইকে খুঁজে বার করেছিস?”

“হ্যাঁ।”

“আমি ওকে দেখতে চাই।”

“আমার কাছে ওর মোবাইল নাম্বার আছে। তোরা নিজেরা ঠিক করে নে কোথায় কখন দেখা করবি।”

“আমি ওকে এখন দেখতে চাই।”

“ও …” মিন হুয়ে একটু দ্বিধায় পড়ে গেলো, তারপর স্থির করে নিলো যে সত্যিটা বলেই দেবে, “ও আমার ছেলের কাছে হাসপাতালে আছে এখন।”

“তাহলে চল, একসাথে হাসপাতালে যাই।”

“হ্যাঁ।”

“দাঁড়া এখানে একটু। আমার ড্রাইভার গাড়ি নিয়ে আসবে।”

অ্যালকোহলের অনুভূতি ঝাঁপিয়ে আসছে। মিন হুয়ের মাথা কেবল ভোঁ ভোঁ করছে। মিন হুয়ে একটু টলমল করছিলো। তাই ও দেওয়ালে ঠেস দিয়ে দাঁড়ালো।

“তাহলে, তুই বিয়ে করেছিস?” বলে মিন হুয়ের দিকে তাকিয়ে চুপ করে গেলো শিন ছি।

“ঠিক।”

“গংশি নিয়া” শিন ছি ভ্রু কোঁচকালো, “তোর বিয়ের আংটি নেই কেনো?”

“বিয়ে ভেঙে গেছে।”

“ওহ্‌, গংশি নিয়া।”

“বিয়ে ভেঙে যাওয়াতে অভিনন্দন জানানোর কি আছে?”

“অভিনন্দন তোর প্রাক্তন বরকে। কী সৌভাগ্য এর থেকে পালানোর। এ তো একটা দূর্যোগ! এ তো আমার মতো নয়, যাকে তুই বোকা বানিয়েছিস। কিন্তু -”

ও প্রসঙ্গ বদলালো, “এতো বছর পরে, তোর অভিনয়ের দক্ষতা কমে গেছে কেনো?”

মিন হুয়ে আর শুনতে চায় না শিন ছির ব্যাঙ্গে ভরা কথাগুলো, তাই ও ফোন বার করে ক্লিক করলো “দিদি” লেখার ওপরে, “এই যে - তোর উচিৎ চেন জিয়া জুনের সাথে নিজে কথা বলা। আমি তোদের দুজনের মধ্যেকার ব্যাপারে আমাকে জড়াতে চাই না। বাচ্চাটা অসুস্থ। আমাকে শিগগির হাসপাতালে যেতে হবে।”

মিন হুয়ে এক ঝলকে রাস্তার ধারে চলে গেলো, কিন্তু শিন ছি ওকে দমকা হাওয়ার মতো টেনে নিয়ে পুরে দিলো গাড়িতে। 

গাড়িটা খুব তীব্র গতিতে চলছে। মিন হুয়ের পেট গোলাতে লাগলো, ও আর সামলাতে পারলো না। ও বমি করতে চাইছে। ওর কেবল মনে হচ্ছে যেনো ওর বুকে কিছু আটকে গেছে।

“আমি কখনো ভাবি নি যে তুই এরকম মা হবি। বাচ্চা যখন অসুস্থ তোকে তখনও রিসেপসনে যেতে হবে, তোকে তোর পুরোনো প্রেমিকের কাছে প্রেম স্বীকার করতে হবে, নিজেকে ইন্ডাস্ট্রির লোকেদের কাছে হাস্যকর করে তুলতে হবে - মিন হুয়ে, তোকে বাঁচিয়ে সু তিয়াঁ ওর জীবনে কী লাভ করলো বা নাকি তোকে আহত করে ছিলো বাঁচিয়ে? ভাগ্য, কেবল তোর সাথে এ জীবনে দেখা হয়ে যাওয়া? এমন কি আমি অবধি ভুগবো? সিট বেল্ট বাঁধ, তুই আমার সিট বেল্টটা ধরে পরার চেষ্টা করছিস।”

“বলে ফেল, বলতে থাক, কেবল বল … আমি ভাবছিলাম তুই এসব পেরিয়ে গেছিস।” মিন হুয়ে গর্জন করলো নিচু স্বরে।

শিন ছি সত্যি বলে গেলো যা মুখে এলো তাই। সব রকমের রাগ উগরে দিলো। এক মূহুর্ত থামলো না সারা পথে।

এই প্রথম মিন হুয়ে বুঝতে পারলো যে শিন ছি এতো গুছিয়ে কথা বলতে পারে। ও এতে মুগ্ধ হয়ে যাচ্ছিলো। ওর বুঝতে অনেক ক্ষণ লাগলো যে শিন ছি থেকেই থেকেই গালি দিচ্ছিলো।

গাড়ি থেকে নেমে ইনপেশেন্ট ওয়ার্ডের প্রথম তলে পৌঁছে, শিন ছি হঠাৎ দাঁড়িয়ে পড়লো এলিভেটরের সামনে, “আমি নিচেই অপেক্ষা করবো। ওকে বল নিচে এসে আমার সাথে দেখা করতে।”

মিন হুয়ে হতচকিত হয়ে গেলো, "কেনো? তুই আমার ছেলেকে দেখতে চাস না।”

“তোর ছেলে?” শিন ছি নাক দিয়ে একটা আওয়াজ করলো হিম ঝরিয়ে, “আমি তোর ছেলেকে কেনো দেখবো? আমি শুধু সু তিয়াঁর দিদিকে দেখতে চাই।”

মিন হুয়ে তিন সেকেন্ড চুপ করে রইলো, তারপর বললো, “কারণ ও তোরও ছেলে। শিন ছি, তোর একটা ছেলে আছে।”




~~~~~~~~~~~~

সম্পূর্ণ বই বিনামূল্যে : https://dl.bookfunnel.com/lcj5vznt96

Link to Previous Post in the Series : https://projectionofnaught.blogspot.com/2024/09/jpda-chapter-31.html

Link to following Post in the Series : https://projectionofnaught.blogspot.com/2024/09/jpda-chapter-33.html

No comments:

Post a Comment

Readers Loved