৪৪. দারুচিনি কেক
ডেডলাইনের চব্বিশ ঘন্টা আগেই, মিন হুয়ে সম্পূর্ণ তৈরি করে ফেললো জিএস১.০-র ডায়াবেটিস স্ক্রিনিং ফাংশন। টেস্টের জন্য একটা পুরো দিন পাওয়া গেলো। পরদিন য়ুআঁলাই হেডকোয়ার্টার্সে খুব ধুমধাম করে প্রোডাক্টটা বাজারে আনা হলো। সংবাদমাধ্যমকে ডাকা হয়ে ছিলো। নানান সংবাদ চ্যানেলে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে প্রোডাক্টটার কথা আলোচনা হতে লাগলো। শিল্পক্ষেত্রে হইহই শুরু হয়ে গেলো।
একই সময়ে য়ুআঁলাই যাঁরা বা’অ্যান কিনতে পারেন তাঁদের কাছে বা’অ্যান বিক্রি করার জন্য নানান প্রচারমূলক বিবরণ পাঠাতে শুরু করলো। উৎসাহী হবেন যাঁরা কিনতে তাঁরা যেনো প্রথম প্রস্থের নিলামের বিবরণের জন্য যোগাযোগ করেন।
কাজটা স্বচ্ছন্দে হয়ে গেলো, মিন হুয়ের মরিয়া ওভারটাইমের কারণে আর শিন ছির ‘ন্যানি’ টিমের পূর্ণ সহযোগিতায়।
দুজন ন্যানি সমান তালে দিনে দুবার তাঁদের কাজের সময়ে নিরলসভাবে উপস্থিত থেকেছেন। ইয়ুন লু দিনের তিনটে খাবার জুগিয়ে গেছে। তা ছাড়া টিউটররা এসেছেন সু ছনকে নানান বিষয়ে শিক্ষিত করতে। সু ছনের জীবনের শেখার আর খেলার সময় পুরো গোছানো হয়ে গেছে।
ন্যানিরা জানিয়ে ছিলেন যে শিন ছি রোজ দিনে একবার করে সু ছনের সাথে ভিডিও কলে কথা বলেছেন। কিন্তু মিন হুয়ে এতো ব্যস্ত ছিলো যে কিছুতেই সময় করে একবারও কথা বলতে পারে নি শিন ছির সাথে।
যখন মিন হুয়ে বাড়ি ফিরতো কাজের থেকে তখন বাচ্চা এমনিই ক্লান্ত হয়ে থাকতো। ঘুমোনোর জন্য অপেক্ষা কেবল। মিন হুয়ে মাত্র তিন মিনিটের জন্য গল্প পড়ে শোনালেই সু ছন ঘুমিয়ে কাদা হয়ে যেতো।
জীবন বেশ সুন্দর।
গুড়ের ওপরে উড়তে থাকা মাছির মতো জেগে আছে একটাই ব্যাপারঃ য়িন শু এখনো স্বীকার করে নি ওর দোষ সাও মুয়ের কাছে। সাও মুকে খোশমেজাজে হাসতে আর কথা বলতে দেখে, রোজ স্বাভাবিক আচরণ করতে দেখে মিন হুয়ের কেবল মনে হতে লাগলো যে ও যেনো একটা ভুতকে পুষে রেখেছে নিজের মধ্যে।
য়ে শও ঝেনকে তাড়িয়ে দেবার পরের দিনই, মিন হুয়ে বিনচেং ইউনিভার্সিটির “ওয়ার্ক-স্টাডি সেন্টার”-এ ফোন করে ছিলো। ওঁদেরকে জানিয়ে ছিলো য়ে শও ঝেনের অসদাচরণের কথা। প্রমাণ হিসেবে রেকর্ডিং-টাও দিয়ে ছিলো।
তারপরে ব্যাপারটা সাংবাদিকতা বিভাগের প্রশাসনিক অফিসেও জানানো হয়ে ছিলো। ওঁরা জানিয়েছেন যে তদন্তের পরে গুরুত্বের সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিন দিন পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাবিষয়ক অধিকরণ মিন হুয়েকে ফোন করে জানালো যে য়ে শও ঝেনের আচরণ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি নষ্ট করেছে আর অন্যদের ওপরেও একটা ক্ষতিকর প্রভাব ফেলেছে, সেই জন্য য়ে শও ঝেনকে শাস্তি হিসেবে “একবারের জন্য কৃতিত্ব দেওয়া হবে না" তাছাড়া য়ে শও ঝেনকে আর কখনো টিউটরের কাজও করতে দেওয়া হবে না। তার সঙ্গে চলে গেলো ওর নানান পুরস্কার আর স্কলারশিপ পাবার যোগ্যতা, আর নানান অনুদান পাবার যোগ্যতা।
য়ে শও ঝেন আর কখনো জিয়া জুনের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করে নি। সাও মুও কিছুদিনের অবকাশ নেবার অজুহাত পেলো। আর ঝামেলাটা কেটে গেলো।
কঠিন পরিশ্রমের দিনগুলো সবে পার হয়েছে। বা’অ্যানও মার্জার আর অ্যাক্যুইজিসনের প্রস্তুতি পর্বে।
রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট ডিরেক্টর হিসেবে মিন হুয়েকে ধাপে ধাপে এই বছরের কাজের পরিকল্পনাটা পূরণ করতে হবে আর তার সাথে পাব্লিসিটি আর ডেমনস্ট্রেসন ডিপার্টমেন্টের সঙ্গে কাজ করতে হবে। সে নিজে কোনো অংশ নেবে না মার্জার আর অ্যাকুইজিসনের কাজে। এর জন্য হেডকোয়ার্টার্সের একটা বিশেষ গোষ্ঠী কাজ করছে।
যখন বা’অ্যানের কাছে কাজটা আসে, তখন হে হাই শিয়াং, সাও মু আর কোম্পানির চিফ ফিনান্সিয়াল অফিসার ইয়ান চেন লি নির্দিষ্ট টিমের সাথে যোগাযোগ করেন নানান জিনিসপত্র বানানোর জন্য, নানান তথ্যের স্মারক বানানোর জন্য, এরকম আরো অনেক কিছুর জন্য।
সেই জন্য রোজই সাও মু অভিযোগ করতে থাকে যে ওঁর সময় নেই ঘুরতে যাবার বা বেড়াতে যাবার। কিন্তু তুলনায় মিন হুয়ে অনেক নিরুদ্বেগে কাটাচ্ছিলো। বড়ো সপ্তাহান্তের সুযোগে মিন হুয়ে পুরো টিমকে পাহাড়ি রিসর্ট ফুংহুয়াং শানে নিয়ে গেলো।
পাহাড়ি রিসর্ট ফুংহুয়াং শান |
সু ছন ওর সঙ্গে গেলো পুরো পথ। সবাই দারুণ সময় কাটালো খেলাধূলোর মধ্যে। মিন হুয়ে সোমবার কাজে ফিরল নতুন উৎসাহ নিয়ে। চোখের তলার কালি অনেকটাই মুছে গেলো যেনো।
নিয়মের মিটিং-এর পরে হে হাই শিয়াং ডাকলেন মিন হুয়েকে নিজের অফিসে। হাসি মুখে বললেন, “বেজিং-এ যাও। একটা বিজনেস ট্রিপে, আগামী শুক্রবার। এআই ম্যাক্স চোঙ্গুয়ো ইন্টেলিজেন্ট এলিট সামিট -এ। হেডকোয়ার্টার্সের দরকার জিএস১.০-এর প্রভাবটা আরো ছড়িয়ে দেবার। আমি একটা ফোরামের ব্যবস্থা করেছি যেখানে তুমি একটা প্রেজেন্টেসন দেবে। আচরণে সংযম রেখো আর বা’অ্যানকে গর্বিত কোরো।”
“অবশ্যই" উত্তেজিত হয়ে বললো মিন হুয়ে।
এআই ম্যাক্স চোঙ্গুয়োতে সবথেকে উঁচু দরের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সম্মেলন। প্রত্যেক বছর ওখানে যাবার জন্য মিন হুয়ে প্রচুর খাটে।
প্রেজেন্টেসনের সুযোগটা বিরল ব্যাপার। সাধারণত, শিল্পক্ষেত্রের খুব নামী অভিজাত জনেরাই এই সুযোগ পেয়ে থাকেন।
কপাল ভালো যে মিন হুয়ের খুব বেশি সময়ের দরকার নেই তৈরি হবার জন্য। এর মধ্যেই দুটো ছোটোখাটো ব্যবসায়িক মিটিং-এ ও একই রকমের বিষয়বস্তু নিয়ে বক্তব্য রেখেছে, হেডকোয়ার্টার্সের প্রচারের অংশ হিসেবে। সমস্ত বিষয়বস্তু, ছবি আর তথ্য ওর হাতের মুঠোতেই আছে।
***
কাজের শেষে অফিস ছেড়ে বেরিয়ে, রাস্তার কোণের একটা স্টারবাক্সের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলো মিন হুয়ে। এক কাপ আমেরিকানো কিনে নিলো।
দোকানের ভেতরটা প্রায় ফাঁকাই আছে দেখে একটা বসার জায়গা পেয়ে বসে পড়লো, কম্পিউটার বার করে পিপিটি বদলে এআইম্যাক্সের উপযোগী করে নিচ্ছিলো।
ওর অজান্তে, আধঘন্টাটাক পরে কেউ ওর সামনে এসে দাঁড়িয়ে টেবিলের ওপরে আঙুলের টোকা দিয়ে ডাকল, “মিন হুয়ে”।
ও চোখ তুলে তাকিয়ে দেখলো চেং ছিরাং। মিন হুয়ের মুখের হাসি হঠাৎ মিলিয়ে গেলো।
“কী কাকতালীয়, তোমার সাথে আবার দেখা হয়ে গেলো,” দরাজ ভঙ্গিমায় বসে পড়লেন উনি, “তোমার সাথে কথা বলার মতো কতকগুলো বিষয় ঠিক এখনই আমার মনে এলো।”
“...”
“এখানে দারুচিনি কেকগুলো খুব ভালো। আমি দুটো অর্ডার করছি। ঠিক আছে, এখানে আসছে। আমার মনে আছে যে তুমি খেতে পছন্দ করতে -”
তার আগেই -
মিন হুয়ে উপহাস না করে পারলো না।
*****
“আর অ্যান্ড ডি-র বড়ো বুকওয়ালা মেয়েটা” ছিলো ওর প্রথম ডাকনাম। চৌত্রিশের সি খুব বড়ো নয়। কিন্তু পুরো ডিপার্টমেন্টে মাত্র চারটে মেয়ে ছিলো। আর অন্য তিনজন সবাই ‘এ’। ও যবে থেকে যাতায়াত শুরু করলো, ও হয়ে উঠলো সেই মেয়েটা যার স্তন বড়ো। যখনই ও রেস্টুরেন্টে যাবে খেতে, তখনই পিছন থেকে কেউ না কেউ সিটি দেবে।
গুয়ান ছাও -তে ওর কাজ করতে শুরু করার দ্বিতীয় দিনেই, ও ভিড়ের মধ্যে দিয়ে হাঁটছিলো হাতে এক গোছা কাগজপত্র নিয়ে। কেউ ওর নিতম্ব ছুঁয়ে দিয়ে ছিলো। হঠাৎ ঘুরে দাঁড়িয়ে ও দেখতে পেয়ে ছিলো চারটে ছেলে গা লাগালাগি করে হাঁটছে ওর পিছন পিছন। ওর মুখে রাগ দেখে ছেলেগুলো ভান করলো যেনো ঘাবড়ে গেছে। ও ওদের দিকে তাকিয়ে ছিলো আর ওরাও তাকিয়ে ছিলো ওর দিকে, হাসি মুখে, মাথা নাড়তে নাড়তে, কাঁধ ঝাকিয়ে।
ঐ টিমের দায়িত্বে ছিলেন ওয়াং তং য়ুআঁ। লোকটার বয়স তিরিশের ঘরে, শুরুর দিকে, ফর্সা মুখ আর হালকা দাড়ি। লোকটা হালকা মোটা ছিলো আর ওর মুখ ভর্তি হালকা বাদামী রঙের ছিটে ছিলো। কাজে যেতে শুরু করার প্রথম একমাসের মধ্যেই ওয়াং তং য়ুআঁ নানান অছিলায় মিন হুয়েকে অফিসে অনেক দেরী অবধি থাকতে বলতো ওভারটাইম করার জন্য।
ওভারটাইম হয়ে গেলেও , মিন হুয়েকে যেতে দিতো না। ওকে নিজের সঙ্গে রাতের খাবার খেতে বাধ্য করতো। আর তারপরে ওকে নিজের গাড়িতে চড়িয়ে বাড়ি পৌঁছে দিতো।
মানা করতে গেলে মিন হুয়ে বিব্রত হতো। সবটাই কাজ যা হোক। মাথার ঠিক ওপরে থাকা লোকটাকে চটালে চলে না।
খুব বেশি দিন কাটতে না কাটতেই ওয়াং তং য়ুআঁ খোলাখুলি মিন হুয়েকে প্রেম নিবেদন করতে লাগলো, ফুল দিয়ে, রাতে খেতে নিয়ে যেতে চেয়ে, নানান উপহার দিয়ে, যার সবটাই বিনয়ের সঙ্গে মিন হুয়ে প্রত্যাখ্যান করে ছিলো।
ওয়াং তং য়ুআঁ ভেবে নিয়ে ছিলো যে মিন হুয়ে বুঝি লাজুক। তাই সে আরো বেশি করে উঠে পড়ে লেগে ছিলো মিন হুয়েকে রাজি করানোর জন্য। কঠিন নিবের পেন দিয়ে সুন্দর ক্যালিগ্রাফি লিখে ছিলো, প্রতিদিন একটা করে প্রেমের কবিতা নকল করে আনতো মিন হুয়ের জন্য, আর সেটা সেঁটে দিতো মিন হুয়ের মনিটরে, যেটা একটা সময়ের পরে আর অ্যান্ড ডি ডিপার্টমেন্টে একটা রসিকতা হয়ে দাঁড়িয়ে ছিলো।
হেনস্থা হতে হতে মিন হুয়ে একদিন ওয়াং তং য়ুআঁকে একটা ভীষণ কড়া ভাষায় সতর্ক করে দিয়ে ছিলো আর জানিয়ে ছিলো যে ওয়াং তং য়ুআঁ নিজের কীর্তিকলাপ বন্ধ না করলে মিন হুয়ে হিউম্যান রিসোর্স ডিপার্টমেন্টে নালিশ করবে।
কেবল তারপরেই ওয়াং তং য়ুআঁ নিজেকে সংযত করে, কিন্তু ও অসন্তুষ্ট হয়ে ছিলো। কাজের জায়গায় নানা ভাবে মিন হুয়ে খাটো দেখাতে শুরু করে ওয়াং তং য়ুআঁ। মিন হুয়ের মূল্যায়নের নম্বর সব সময়ে কম দিতে থাকে। বলে যে মিন হুয়ে দূর্বল আর সংযোগ করতে পারে না। সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রজেক্ট থেকে মিন হুয়েকে বাদ দিয়ে দেয়।
পরের দু মাস, মিন হুয়ের প্রায় কোনো কাজ ছিলো না, অলস বসে ছিলো প্রায়, ঐ সময়ে ওয়াং তং য়ুআঁ ওকে পাঠাতে ওর কলিগদের জন্য কফি আনতে, বাক্সে ভরা দুপুরের খাবার নিয়ে আসার জন্য, এমনকি টাইপ করে নানান বিষয়ের নথি নকল করতেও দিতো।
ঠিক এমন সময়ে মিন হুয়ের মায়ের ক্যান্সার ধরা পড়ে।
মিন হুয়ে ভয় পাচ্ছিলো যে ও র কাজটা চলে যাবে, মাইনেটাও যাবে। সেই জন্য ও আরো সাবধানী হয়ে উঠছিলো।
সেই সময়ে ওর সাথে দেখা হয় চেং ছিরাং-এর।
যখন চেং ছিরাং নিজের বিশ্ববিদ্যালয়ে একটা প্রতিবেদন দিতে গিয়ে ছিলেন, তখন উনি একজন অধ্যাপকের থেকে মিন হুয়ের নাম শোনেন।
গুয়ান ছাওতে ফেরার পরে উনি মিন হুয়ের তথ্য সব যাচাই করে দেখেন। উনি মিন হুয়েকে জিজ্ঞাসা করেন যে কেনো মিন হুয়ে আর অ্যান্ড ডি-এর মূল কাজগুলোতে অংশ নেয় নি। মিন হুয়ে জানতো না যে এই প্রশ্নের উত্তর দেবে কী করে। তাই উত্তরে ও জানিয়ে ছিলো যে ওর নিয়োগ তখনো পাকা হয় নি।
“আমি তোমার লেখা প্রোগ্রাম দেখেছি। খুব ভালো। তোমাকে অলস বসিয়ে রাখার মানেই হয় না।” বলে ছিলেন চেং ছিরাং।
“তাহলে আমাকে কোনো একটা কাজে লাগিয়ে দিন।” মিন হুয়ে মনের মধ্যে জমে থাকা ক্ষোভ সব চেপে রেখে ছিলো।
“কোন প্রজেক্টে কাজ করতে চাও?”
“ব্ল্যাক ডট।”
“ওয়াং তং য়ুআঁ এটার দায়িত্বে আছে না? তোমার টিম লিডার?”
“হ্যাঁ”
“আমি তোমার মূল্যায়ণ পড়ছিলাম, এতে লেখা আছে যে তুমি একেবারেই প্রোগ্রাম লিখতে পারো না।”
“আপনি যদি আমাকে টিম লিডার করে দেন তো আমি ওয়াং তং য়ুআঁর থেকে বেশি ভালো কাজ করবো।”
“তুমি যদি টিম লিডার হও তো ওয়াং তং য়ুআঁ কী করবে?”
“আমি জানি না,’ শান্তভাবে বলে ছিলো মিন হুয়ে, “সেটা আপনি ঠিক করবেন।”
মিন হুয়ের দিকে দেখে ছিলেন তাকিয়ে চেং ছিরাং, বেশ খানিক ক্ষণ পরে একটা লম্বা শ্বাস ফেলে হাসতে হাসতে বলে ছিলেন, “বেহায়া মেয়ে, তুমি জানো তুমি সিটিও-র সাথে কথা বলছো?”
ওয়াং তং য়ুআঁকে পরের দিনই বদলি করে দেওয়া হয়ে ছিলো। চেং ছিরাং ব্ল্যাক ডটের টিম লিডার করে দেন মিন হুয়েকে।
বেশ কিছু দিন, গুজব রটে গেলো, বলা হতে লাগলো মিন হুয়ে নাকি ‘বুক’ ব্যবহার করে জন সংযোগ করার জন্য।
*****
দারুচিনি কেকের গন্ধটা লোভনীয়।
মিন হুয়ে তখনই উঠে যেতে চাই ছিলো। কিন্তু ও সে কথা চেং ছিরাং-এর সামনে স্বীকার করতে চাই ছিলো না।
“বাচ্চা সেরে উঠছে?” জানতে চাইলেন চেং ছিরাং, “আমার বাবা তো বললেন যে অপেরসনটা সফল।”
ওঁর কথার সুর খুবই দয়ার্দ্র। কিন্তু মিন হুয়ের জবাবটা কঠোর, “ও ভালোই সেরে উঠছে।”
“তোমার ছেলের পরিস্থিতি বেশ জটিল। আমার বাবা ওঁর সমস্ত শক্তি দিয়ে অপরেসনটা করেছেন। হয়ে যেতে, বাড়িতে এসে উনি জানতে চাইলেন আমার কাছে যে এই সু ছন ওঁর নাতি কিনা।”
অবাক হবার কিছুই নেই যে চেং গুয়াং য়ি সিঙ্গাপুর থেকে দৌড়ে আসতে দ্বিধা করেন নি।
চারদিকে জোর গুজব ছড়িয়ে গেছে যে সু ছন নাকি চেং ছিরাং-এর অবৈধ সন্তান, আর ওঁদের দুজনেরই রক্ত বি গ্রুপের।
জানলার বাইরে আকাশটা হঠাৎ অন্ধকার হয়ে এলো। মিন হুয়ে কোনো কথারই উত্তর দিলো না। কিন্তু নিজের হাত ঘড়ির দিকে তাকালো, উঠে যাবার পরিকল্পনা করছে।
এমন সময়ে অনেক উৎসাহ নিয়ে চেং ছিরাং আসল কথাটা পাড়লেন, “য়ুআঁলাই উঠে পড়ে লেগেছে বা’অ্যান বেচে দেবে বলে। বেচার কাজটা হবে সর্বসমক্ষে নিলাম ডেকে। গুয়ান ছাও ইন্টারন্যাশন্যাল খুবই উৎসাহী বা’অ্যান কেনার ব্যাপারে। আমরা প্রোমোসনের নথি সব পেয়েছি, এখন আমরা প্রথম দফার নিলামের জন্য কাগজপত্র তৈরি করছি।”
মিন হুয়ের হৃদয়ে একটা ঠান্ডা স্রোত বয়ে গেলো, যেনো ওর সমস্ত হাড়ও ঠান্ডা হয়ে গেলো।
মিন হুয়ে খুব অবাক হয়ে গেলো। ওর সাথে চেং ছিরাং-এর ঝগড়াটা শিল্পক্ষেত্রের সবাই ভালোই জানে।
অনেকগুলো বছর কেটে গেছে, দুজনের মধ্যে কোনো যোগাযোগ নেই। যদিও জনসমক্ষে কখনো কখনো একে অপরের মুখোমুখি হয়ে গেছে, দুজনেই মুখোমুখি হয়ে পড়ার সম্ভাবনাটা সাধ্য মত এড়িয়ে গেছে ভয়ে। ওঁর স্ত্রী ঝেং য়ি তিং-ও ব্যাপারটা নিয়ে খুব চিন্তিত।
অপ্রত্যাশিতভাবে ইনিও বা’অ্যান কিনতে চান।
“আমরা ইন্ডাস্ট্রিয়াল চেনটার উন্নতি করেছি, এআই ব্যবহার করে একটা ডাক্তার আর রুগীর যোগাযোগের প্ল্যাটফর্মও বানিয়েছি। বা’অ্যান জুড়ে নিলে আমাদের পরিষেবার সংখ্যা বাড়বে। বিশেষত তোমাদের জিএস১.০। আমি আশা করবো এটাকে আমাদের প্ল্যাটফর্মে জুড়ে দেওয়া হবে।”
চেং ছিরাং আস্তে আস্তে বললো, “মিন হুয়ে, কিছু অশান্তি জমে আছে তোমার আর আমার মধ্যে। আমরা সেটা পেরিয়ে এসেছি। তুমি যদি তখন আমার জায়গায় থাকতে, তুমি বুঝতে পারতে আমি যা করেছি সেটা কেনো করেছি। তুমিই সেই সময়টাকে আঁকড়ে পড়ে আছো, ছাড়ছো না। এতে আমরা দুজনেই আহত হচ্ছি।”
“আপনি পেরিয়ে এসেছেন।” উদাস হয়ে বললো মিন হুয়ে, “আমি পেরোয় নি।”
“মানুষ ভুলো। যদি তুমি ভুলতে পারো, তবেই এই নিষ্ঠুর পৃথিবীর চাপে তুমি গুঁড়িয়ে ছাতু হয়ে যাবে না।”
হালকা সুরে বললো চেং ছিরাং, “তাছাড়া, আমি তোমাকে কিচ্ছু করি নি। আমি তোমার কাছে যেতে চেয়ে ছিলাম কারণ আমি তোমাকে হৃদয়ের গভীরের অনুভূতিতে পছন্দ করতাম। কিন্তু তুমি যা করেছিলে তা আমাকে সম্পূর্ণ ধ্বংস করে দিতো।”
লোকটা একবার মিন হুয়েকে ধ্বংস করে দিয়েছে, ভাবলো মিন হুয়ে মনে মনে।
চার বছর আগের সেই দৃশ্যটা ও কিছুতেও ভুলতে পারবে না …
কোনো আঁচ অবধি মিন হুয়ে কখনো পায় নি যে ওরকম ঘটতে চলেছে।
চেং ছিরাং-এর অফিসে একটা নিয়মিত রিপোর্ট দেবার সময় ছিলো তখন। মিন হুয়ে বাকপটুতার সঙ্গে বলে চলে ছিলো, ব্লু ডটের কাজ কতদূর এগিয়েছে সেই সব। লোকটা দাঁড়িয়ে ছিলো মিন হুয়ের মুখোমুখি। চুপ করে শুনছিলো। কখনো পায়চারি করছিলো, কখনো প্রশ্ন করছিলো।
চেং ছিরাং-এর পিছনে একটা বিশাল কাচের দেওয়াল। দুপুরের সূর্য তখন চকমকে, উল্টোদিকের দেওয়ালে টাঙানো তেল রঙে আঁকা হালকা ধূসর রঙের ছবিতে দু জনের ছায়া ফেলে ছিলো।
কিন্তু যৌনতা হামলে পড়া মাত্র লোকটা হেসে ছিলো, নেচে ছিলো, কিন্তু টেরও পায় নি যে ওর অভিব্যক্তি বদলে গিয়ে ছিলো পুরোপুরি।
হঠাৎ করে মিন হুয়েকে ঠেলে ধরলো দেওয়ালে, দুহাতে চাপ দিলো ওর বুকে, সমস্ত জোর দিয়ে নিঙড়ে দিলো।
মিন হুয়েকে চিৎকার করার জন্য মুখ খু্লতে দেখে, ওর মুখটাও বন্ধ করে দিয়ে টেনে নিয়ে ছিলো ওর জিভ, জোর করে চুমু দিয়ে ছিলো।
মিন হুয়ে মরিয়া লড়াই করে ছিলো -
হঠাৎ দরজা খুলে গিয়ে ছিলো, সেলস ম্যানেজার লিন শি য়ুয়ে ঢুকে ছিলো। দৃশ্যটা দেখে সে শান্তভাবে ঘুরে দাঁড়িয়ে দরজাটা বন্ধ করে চলে গিয়ে ছিলো।
অবশেষে মিন হুয়ে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে পালিয়ে ছিলো, বাড়ি ফিরে গিয়ে ছিলো, জেগে ছিলো সারা রাত - রাগ, দুশ্চিন্তা, ভয় …
এই লোকটাই সে লোকটা যাকে মিন হুয়ে বরাবর নিজের পরামর্শদাতা আর গুরুজন ভেবে এসেছে - সারা রাত ভেবে ছিলো মিন হুয়ে, পরের দিন সকালে হিউম্যান রিসোর্স ডিপার্টমেন্টে নালিশ ঠুকতে গিয়ে ছিলো।
ঐ সময় থেকেই যাবতীয় দুঃস্বপ্নের শুরু …
মিন হুয়ের কানে স্বরটা ক্রমশ স্পষ্ট হয়ে এলো, “... এসো, আমরা অতীতের কথা বলা বন্ধ করি। যা হোক, আমি খুবই খুশি এই জন্য যে তুমি এখনো মুস্কিলে পড়লে যে আমার কথা ভাবতে পারো। আমি আরো খুশি এই জন্য যে আমি তোমাকে সাহায্য করতে পারি। এরপর থেকে তোমার ছেলের কোনো শারিরীক সমস্যা হলে আমার বাবার সঙ্গে যে কোনো সময়ে ফোনে যোগাযোগ করতে পারবে।”
“...”
“আমি আশা করি যে তোমার আর আমার মধ্যেকার ক্ষোভ নিশ্চয়ই মিটে যাবে। তুমি একজন জাত প্রযুক্তিবিদ। তুমি যদি গুয়ান ছাওতে আসো, তবে আমি তোমার সঙ্গে মোটেই খারাপ ব্যবহার করবো না। আমি তোমাকে আর অ্যান্ড ডির ভিপি করে দেবো। তুমি সরাসরি সিটিও-কে রিপোর্ট করবে। তুমি যা দরকার তাই বলতে পারো - মাইনে, ইক্যুইটি, অন্যান্য পছন্দাপছন্দ। আমি যথাসাধ্য চেষ্টা করবো সে সব মেটানোর। আমি আশা করি যে তুমি আমকে গুয়ান ছাও আর বা’অ্যানের সহযোগটা প্রচার করার কাজে সাহায্য করবে।”
অনেক না ভেবেও মিন হুয়ে বুঝতে পারছে যে প্রস্তাবটা খুবই লাভজনক। গুয়ান ছাও ইন্টার ন্যাশনাল মহীরুহ ইন্ডারস্ট্রিতে। কি নেই ওদের - সংস্কৃতি আর বিনোদন, ই-কমার্স, করপোরেট সার্ভিসেস, মেডিক্যাল কেয়ার আর আরো অনেক কিছু। কেবলমাত্র এআই ইমেজিং ডিপার্টমেন্টেই যে সংখ্যায় লোক কাজ করে সেটা বা’অ্যানের তুলনায় তিনগুন। বোঝা যায় যে কতগুলো আলাদা আলাদা আর কতগুলো একই প্রজেক্ট সম্ভব দুটো আলাদা আলাদা সংস্থায়। গুয়ান ছাও যদি কিনে ফেলে বা’অ্যান, তাহলে বা’অ্যানের সব প্রজেক্ট তো ওরা রাখবে না। মিন হুয়ের হিসেব হলো যে বা’অ্যানের অর্ধেক লোককে গুয়ান ছাও বাদ দিয়ে দেবে যদি ওরা বা’অ্যান কিনে নেয়।
চেং ছিরাং চুপ করে তাকিয়ে রইলেন মিন হুয়ের দিকে। খুঁটিয়ে দেখতে লাগলেন মিন হুয়ের অভিব্যক্তি, প্রতিক্রিয়া, “তুমি এটা নিয়ে কয়েকদিন ভাবতে পারো, আমাকে একটা উত্তর দেবার আগে। আমি আদা জল খেয়ে লেগেছি এই অ্যাক্যুইজিসনটা জিতে নেবার জন্য। মিন হুয়ে, তুমি চমৎকার কাজ করো, একমাত্র তুমিই বা’অ্যানের সম্পদ যার বদলে কাউকে পাওয়া মুস্কিল। গুয়ান ছাওতে ব্যাপারটা অবশ্য এরকম নয়। আমাদের এখানে প্রতিভা অফুরান, সিংহুয়া ইউনিভার্সিটি, পেকিং ইউনিভার্সিটি, স্ট্যানফর্ড, এমআইটি, ইটিএইচ, ক্যালটেক - সব আছে। যদি তুমি নাও আসো - তবে আমরা তোমার প্রজেক্ট নিয়ে নিতে পারি। কিন্তু যদি তুমি ছেড়ে যেতে চাও, তোমাকে একটা চুক্তি করানো হবে যাতে আগামী দু বছর তুমি কোথাও কোনো কাজ না করতে পারো। তোমার বাচ্চা আছে, তোমার টাকার দরকার আছে। আশা করি, তুমি একটা যুক্তিপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেবে।”
মিন হুয়ে ধীরে ধীরে কফি গোলাচ্ছে দেখে, সেই সুযোগে চেং ছিরাং দারুচিনি কেকের প্লেটতে মিন হুয়ের দিকে ঠেলে দিয়ে বললো, “খেয়ে নাও, ঠান্ডা হয়ে গেলে এগুলো খেতে ভালো লাগে না।”
“আমি সিনামন কেক পছন্দ করি না।” বাঁকা সুরে বললো মিন হুয়ে, “এটা দেখতে একটা গুয়ের ঢিবির মতো, যদিও এর ওপরে ক্রিমের একটা স্তর আছে, ঠিক যে কথাগুলো এতোক্ষণ আপনি বললেন, সেগুলোর মতো।”
“...”
“কুকুরে আমাকে গু খেতে ডাকছে, আপনি কী মনে করেন, আমি খাবো?”
“জোর করে নিজের শত্রু বাড়িও না, মিন হুয়ে।” চেং ছিরাং শান্ত করার চেষ্টা করলেন মিন হুয়কে, “তোমার যথেষ্ট শত্রু আছে।”
“সিংহ কখনো তোয়াক্কা করে না যে তার পেছনে কটা খেঁকি কুকুর দাঁড়িয়ে আছে।”
“গলার জোর তো খুব বেড়েছে দেখছি। এটা কী একটা ঠেকনা পেয়েছো বলে?” হঠাৎ বলে উঠলো চেং ছিরাং, “তোমার আজকাল শিন ছি আছে, তাই না?”
“ওকে এর মধ্যে টানবেন না। ওর সঙ্গে আপনার কোনো লেনাদেনা নেই।”
“যেই আমার পথ আটকাবে, তার সাথেই আমার লেনাদেনা আছে।” সোজাসুজি বললো চেং ছিরাং, “ওকে বলো, পিছিয়ে যেতে, না হলে আমি ওকেও শেষ করে দেবো। আমি তোমাকে দেখিয়ে দেবো।”
কাফে ছেড়ে বেরিয়ে এসেই একটা নিরিবিলি কোণা দেখে মিন হুয়ে ফোন করলো সাও মুকে। ওকে জানালো যে গুয়ান ছাও নিতে চায় বা’অ্যান। আর চেং ছিরাং জেদ ধরে বসে আছে যে ও ঐ নিলাম জিতবেই।
“তোমার সাথে দং লির কথাবার্তা কেমন চলছে?”
ওর প্রজেক্ট আর টিম চেং ছিরাং নিয়ে নেবে ভাবলেই দূর্ভাবনায় পড়ছে মিন হুয়ে। ফোনেই চিৎকার করে উঠলো মিন হুয়ে, “আমি চেং ছিরাং-এর সাথে কিছুতেই কাজ করবো না! সাও জিয়ে! যদি গুয়ান ছাও-এর অ্যাক্যুইজিসন সফল হয়, তবে আমি তক্ষুণি পদত্যাগ করবো। যদি কাজের অপেক্ষায় আমাকে ঘরেও বসে থাকতে হয়, তবুও আমি গুয়ান ছাওতে কাজে যাবো না।”
“তুমি এই মাত্র স্টারবাক্স থেকে বেরিয়েছো, তাই না? আমি এখনই তোমাকে খুঁজে নিচ্ছি।” বললো সাও মু, “আমি তোমার সাথে ঝংশান সাউথ রোডের চা-এর বুটিকে দেখা করবো। আমার জন্য এক কাপ অ্যাকাসিয়া সয় মিল্কের চায়ের অর্ডার দেবে।”
মিন হুয়ে সবে চায়ে একটা চুমুক দিয়েছে এমন সময়ে সাও মু পৌঁছলো। তাড়াহুড়ো করে এলো, গায়ের উইন্ডব্রেকারটা খুলতে খুলতে, ওটাকে সোফার ওপরে ছুঁড়ে দিলো, মিন হুয়ের পাশে বসে পড়লো, বলতে শুরু করলো, “ফ্যাং দং খুই খুবই আন্তরিক। উনি বলেছেন যে রিসার্চ আর ডেভেলপমেন্টের ক্ষেত্রে উনি আমাদের সিদ্ধান্ত নেবার স্বাধীনতা দেবেন। তার সাথে উনি কোম্পানিকে সাবসিডিয়ারি হিসেবেই রাখবেন ‘দং লি বা’অ্যান’ হিসেবে। কর্মীদের অবস্থা বা ব্যবস্থা দং লির অন্যান্য কোম্পানির কর্মীদের জন্য যেমন তেমনই হবে। আমি খবর নিয়েছি, কর্মীদের যে সমস্ত সুযোগ সুবিধে দেন ওঁরা সেসব দেখে অন্য অনেক কোম্পানির তুলনায় বেশ ভালো বলেই মনে হলো। “
খুশিতে তালি দিয়ে উঠলো মিন হুয়ে, “দারুণ।”
“আমারও তাই মনে হচ্ছে। জানি না হে হাই শিয়াং কী ছকছে। আমাদের সঙ্গে যাবে নাকি হেডকোয়ার্টার্সে থেকে যাবে। ও সব সময়ে বর্ষার দিনের কথা মাথায় রেখে চলে, সুতরাং এই পরিস্থিতিতে ও কিচ্ছুটি করছে না তা তো হতে পারে না। সেই জন্যই আমি ওঁকে আমার সাথে দং লির যোগাযোগের কথাটা বলি নি। ফ্যাং দং খুইয়ের নিজের খুব একটা উৎসাহ নেই হে হাই শিয়াং-এর ব্যাপারে। যদি অ্যাক্যুইজিসনটা সফল হয়, তবে উনি ম্যানেজমেন্টে সবাইকে নাও রাখতে পারেন।”
সাও মু থামলেন।
“এখন প্রশ্ন হলো, দং লি কি গুয়ান ছাও-এর থেকে বেশি ভালো? যদি গুয়ান ছাও-এর বিড দং লির থেকে বেশি টাকার হয়, তাহলে আমরা কী একটু বেশিই স্বপ্ন দেখে ফেললাম না? আরেকটা ব্যাপারও আমার অদ্ভুত লাগছে। চেং ছিরাং তোমার সঙ্গে কলেজে এক ক্লাসে পড়তো। তোমাদের চেনাশোনাও আছে একে অপরের সাথে। কোম্পানিতে তোমার পদও আমার থেকে ওপরে, তোমার প্রভাবও আমার থেকে অনেক বেশি। তাহলে বা’অ্যান কেনার ইচ্ছে হলে উনি তোমার কাছে না এসে আমার কাছে এলেন কেনো?”
“হতে পারে এই জন্য যে ওর প্রাক্তন প্রেমিকার সাথে আমার সম্পর্কটা বেশ ভালো, আর সেই জন্য ওর অস্বস্তি আছে। আমার সাথে ওর সম্পর্ক একদম ঠিকঠাক। প্রায়ই নানা মিটিং-এ আমাদের দেখা হয় আর আমি ওর সাথে কথাও বলি। কোনো ঝগড়াঝাঁটি নেই। জিএস১.০ তুমি বানিয়েছো, এটাই স্বাভাবিক যে ও তোমার কাছে আসবে।”
পরিস্থিতিটা আরো খারাপের দিকে গেলো। বিভ্রান্ত মিন হুয়ে জানতে চাইলো, “তাহলে এখন আমাদের কী করা উচিৎ?”
“যদ্দুর আমি জানি, দং লি আর গুয়ান ছাও ছাড়াও আরো অনেক কোম্পানি আছে যারা বা’অ্যান কিনতে চায়। হয়তো তাদের কেউ কেউ বেশি দামও দিতে পারবে। শেন ল্যান টেকনোলজি প্রচুর বিনিয়োগ জড়ো করেছে এই সেদিন, ওদের হাতে টাকার অভাব নেই।”
“তাহলে এখন বা’অ্যানের ভবিষ্যত অনিশ্চিত।”
“আমার একটা দুঃসাহসিক প্রস্তাব আছে। তুমি আমাকে মনে করিয়ে দিয়েছো এটার কথা।” সাও মু একটু থেমে আবার বলতে লাগলেন, “আমাদের কয়েকজন একত্র হতে পারি, কয়েকটা ভেনচার ক্যাপিটাল আর প্রাইভেট ইক্যুইটি কোম্পানিকে জড়ো করতে পারি আমাদের পাশে আর ম্যানেজমেন্ট টিমের নামে নিলামে দর হাঁকতে পারি।”
“কী?” মিন হুয়ে বুঝতে পারলো না।
“এটা হলো যে আমরা নিজেরাই বাইরে গিয়ে টাকা জোগাড় করবো আর সাধারণ নিলামে দর হাঁকবো বা’অ্যান কেনার জন্য। যদি আমরা সফল হই, তাহলে তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি স্বাধীনতা পাবো আমরা কোম্পানি চালানোর ক্ষেত্রে। আমরা আমাদের টিমগুলোও রাখতে পারবো, প্রজেক্ট রাখতে পারবো, আমাদের সমস্ত বৈজ্ঞানিক গবেষণা আর ফলাফলের অধিকাংশটাই রাখতে পারবো।”
“এরকম করে অ্যাকুইজিসন কী সম্ভব?”
“এটাকে বলে ম্যানেজমেন্ট বাই আউট, এমবিও। এটা খুব চলে, ঠিক আছে? যাই হোক, হেডকোয়ার্টার্স আমাদের আর চায় না। আমরা দং লিতে যাই আর গুয়ান ছাওতে, কিংবা অন্য কোনো কোম্পানিতে, আমাদের ভেঙে টুকরো করবেই করবে। শেষ পর্যন্ত যা বুঝেছি, মার্জার হলে কর্মীদের ভাগ্য সবসময়েই অন্যদের দয়ার ওপর নির্ভর করে আছে, যে যাই ব্যাখ্যা দিক না কেনো। আমাদের বিশ্বাস জেতার জন্য আর আমাদের থেকে কাজ বার করার জন্য যারা কিনবে তারা নানা ধরনের মিষ্টি কথা বলবে, এদিকে ওরা নিজেরাই জানে না যে ওদের দরের সম্মান হবে কিনা। আমরা তো আর একটা গাজর দিয়ে হাতুড়ির কাজ চালাতে পারি না। তার থেকে ভালো হয় যদি আমরা নিজেরাই কিনে নি। ওঠো জাগো নিজের ভাগ্যের নিয়ন্তা নিজেই হও। কী বলো, আমি নতুন একটা কিছু শুরু করি?”
“ওকে। তুমি যদি বিনিয়োগ আনতে পারো।" মিন হুয়ে বার বার ঘাড় নেড়ে নেড়ে বললো। “আমি দু হাত তুলে তোমায় আশীর্বাদ করবো।”
“আমাদের শুরুতে পাঁচ জনের একটা ম্যানেজমেন্ট টিম তৈরি করতে হবে। তুমি যদি তাতে যোগ দিতে চাও, তবে আর দু জনের একজন হলো শু গুয়াং জিয়াঁ, আর ইয়ান চেং লিরও হ্যাঁ বলার কথা। তোমার আর কাকে মানানসই বলে মনে হয়?”
ইয়ান চেং লি হলেন চিফ ফিনান্সিয়াল অফিসার, আর শু গুয়াং জিয়াঁ সেলস-এর ডিরেক্টর। বা’অ্যান যখন তৈরি করা হয়ে ছিলো, তখন ওঁদের বাইরে থেকে এনে কাজ দেওয়া হয়। হেডকোয়ার্টার্সের সাথে ওঁদের কোনো সম্পর্ক নেই।
ওঁদের দু জনের মধ্যে সাও মু আর শু গুয়াং জিয়াঁর সম্পর্ক ভালো, বন্ধুত্বপূর্ণ। কিন্তু ইয়ান চেং লি একটি জেদী আর গোঁড়া প্রকৃতির, নীতির প্রতি মনোযোগী, নীতি আঁকড়ে থাকার লোক, আর অফিসের রাজনীতিতে নিরপেক্ষ থাকেন।
শুরুতে ইয়ান চেং লিকে বিশেষ কেউ পছন্দ করতো না। সবাই মনে করতো যে উনি উদ্ধত। কিন্তু ক্রমশ সবাই বুঝে গিয়ে ছিলো যে ওটাই ওঁর স্বভাব। আর উনি নিজের কাজে খুবই দক্ষ। তাই সবাই ওঁকে গ্রহণ করে নিয়ে ছিলো।
মিন হুয়ে একটু ভেবে জানতে চাইলো, “আমাদের টিম কোনো ভাবে হে হাই শিয়াং-কে পাশ কাটাতে পারবে?”
মিন হুয়ে আর সাও মু - দু জনের কেউই হে হাই শিয়াং-কে পছন্দ করে না। কিন্তু ওঁর সাথে হেডকোয়ার্টার্সের সম্পর্কটা খুব নিকট।
যদি ওঁকে লুকিয়ে একটা ম্যানেজমেন্ট টিম তৈরি করা হয় তবে খুব শিগগিরই উনি সেটা জানতে পেরে যাবেন। উনি নিশ্চয়ই রেগে যাবেন, লজ্জায়ও পরবেন, হয়তো জোর করে প্রভাব খাটিয়ে ওদেরকে ভুল প্রমাণ করাতে পারেন।
“ওঁকে পাশ কাটিয়ে যেতে চাইলে পাশ কাটিয়ে যাওয়াই যায়। তবে আমার মনে হয় যে ওঁকে জিজ্ঞেস করলে খারাপ হবে না। উনি যদি হেডকোয়ার্টার্সে থেকে যাওয়াই স্থির করেন, চলো ওঁকে জিজ্ঞেস করি, তাতে ওঁকে শ্রদ্ধা দেখানোও হবে। যদি উনি সত্যিই উৎসাহী হন আর যোগ দিতে চান, তবে ওঁর সাথে হেডকোয়ার্টার্সের যে রকম সম্পর্ক তার থেকে কতগুলো গুরুত্বপূর্ণ খবরও পাওয়া যেতে পারে, যাতে আমরা প্রতিযোগিতায় জিতে যেতে পারি।”
“সাও জিয়ে, তুমি যা বললে … তার সবটা আমি বুঝতে পারি নি।” সততার সাথে বললো মিন হুয়ে, “আমি শুধু তোমার কথা শুনে চলবো। যা হোক, আমি অংশ নিতে উৎসাহী।”
“সে ঠিক আছে, আমি ব্যবস্থা নেবো। প্রথমে যাও ইয়ান চেং লি, শু গুয়াং জিয়াঁ আর হে হাই শিয়াং-এর সাথে কথা বলো, দেখো তাঁদের মনোভাব কী। যদি ওঁরা যোগ দিতে চান, টিম তৈরি করা যাবে। তারপর আমি একটা কনসাল্টিং কোম্পানি খুঁজে বার করবো যারা আমাদের হয়ে নিলামে অংশ নেবে। যার মধ্যে বোঝাপড়া, চুক্তি সই করা এসবই থাকবে। যাই হোক, এই ব্যাপারটা বেশ জটিল। আইন, অ্যাকাউন্টিং, ট্যাক্স - পেশাদারদের হাতে ছেড়ে দেওয়াই ভালো।”
“বিনিয়োগের কী হবে?”
“আমি কয়েকটা বিনিয়োগ কোম্পানির আর প্রাইভেট ইক্যুইটি কোম্পানির হোমরা-চোমড়াদের চিনি। ব্যাঙ্কের লোকেদেরও চিনি। দেখবো। যদি দং লি গ্রুপ আর গুয়ান ছাও ইন্টারন্যাশন্যাল দুটোই বা’অ্যান কিনতে উৎসাহ দেখায় তবে এই কোম্পানিগুলোও খুব উৎসাহ দেখাতে পারে। আমি ইয়ান চেং লির সাথে গিয়ে ওদের সাথে কথা বলবো, তার আগে তোমাকে কয়েকটা প্রেজেন্টেসন বানাতে হবে। যদি সত্যিই আমরা এমবিও শুরু করতে পারি তাহলে বিনিয়োগ কোম্পানিগুলো প্রেজেন্টেসন চাইবেই। আমাদের হাতে যা কাগজপত্র আছে আর রিপোর্ট আছে, তাতে আমরা কয়েকটা বিনিয়োগ কোম্পানির সাথে এক দিনে কথা বলতে পারি। আমরা খুব ব্যস্ত হয়ে যাবো।”
“ঠিক আছে। আমি তৈরি করে ফেলেছি, আমার মাথার মধ্যে! প্রযুক্তির ব্যাপারটা তুমি আমার ওপর ছেড়ে দাও।”
“প্রথমত, চিফ টেকনোলজি অফিসার হয়ে ওঠার শিক্ষাটা থাকা ভালো।”
সাও মু হাসলো, কাপের দুধ দেওয়া চায়ে চুমুক দিলো, তারপর দু হাত ছড়িয়ে বললো, “চলো, করে ফেলি।”
মিন হুয়ে সাও মুয়ের হাত ধরে খুব জোরে জোরে ঝাঁকাল, ঘাড় নাড়লো, “হাতা গুটিয়ে লেগে পড়ো। চলো, করে ফেলি।”
~~~~~~~~~~~~
সম্পূর্ণ বই বিনামূল্যে : https://dl.bookfunnel.com/lcj5vznt96
Link to Previous Post in the Series : https://projectionofnaught.blogspot.com/2024/09/jpda-chapter-43.html
Link to following Post in the Series : https://projectionofnaught.blogspot.com/2024/09/jpda-chapter-43.html
No comments:
Post a Comment