৪৩. য়ে শিয়াও ঝেন
পুরো ঘরটা ম-ম করছে ধিমে আঁচে ঝলসানো শুয়োরের পাঁজরের মাংসের গন্ধে। চেন জিয়া জুন আর য়ে শিয়াও ঝেন গলা তুলে কথা বলছে, হেসে গড়িয়ে পড়ছে রান্না ঘরে।
মিন হুয়ে টেবিলের ওপরে চাবিটা রাখলো। চাবিটা রাখার জন্য ‘ঝড়াং’ করে একটা শব্দ হলো। শব্দটা তখনই জিয়া জুন শুনতে পেলো, “জিয়েজিয়ে, ফিরলে বুঝি? খাবার প্রায় তৈরি। শুধু একটা ঝোল হলেই ব্যস।”
“হাত ধোয়া?” মিন হুয়ে জানতে চাইলো, আর সু ছনকে জড়িয়ে ধরে আদর করতে গেলো, সু ছন সোফায় বসে অ্যানিমে দেখছে, এমন সময় রান্নাঘর থেকে জিয়া জুনের গলা ভেসে এলো, “ওর হাতও ধোয়া আছে।”
“মিন হুয়ে জিয়ে, তুমি কী ধনে পাতা খাও?”
পর্দাটা অল্প নড়ল, য়ে শিয়াও ঝেন মাথা গলালো, “আমরা কী ঝোলে পার্স্লে দেবো?”
ওর গলার স্বরে উৎসাহ টগবগ করে ফুটছে। মনে হয়ে য়িন শু এখনো ভাঙচুর করে নি কিছুই।
“পাশে রেখে দাও, আমি সবই খাই।” উইন্ডব্রেকারটা খুলে মিন হুয়ে টাঙিয়ে রাখলো দরজার পিছনে।
ঝোলটা খুব তাড়াতাড়িই হয়ে গেলো। ভাপে সেদ্ধ হওয়া ষাঁড়ের লেজ আর মূলোর ঝোলের একটা নিজস্ব সুগন্ধ আছে।
বেশ দক্ষ হাতে য়ে শিয়াও ঝেন বাটি আর চপস্টিক সাজিয়ে ফেললো। পর পর সকলকে বেড়ে দেওয়া হলো ছটা পদ আর একটা ঝোল। গল্প করতে করতে খাওয়া চলতে লাগলো। আবহাওয়াটা বেশ আন্তরিক আর সখ্যতাময়।
য়ে শিয়াও ঝেন সম্পর্কে মিন হুয়ের প্রথম ধারণাটা বেশ ভালো। তার অনেকটাই য়ে শিয়াও ঝেনের শান্ত চেহারার জন্য, আর চটপট যে কোনো পরিবেশে মিশে যেতে পারে বলে। মাত্র কয়েকটা দেখা সাক্ষাতেই মেয়েটা আপন হয়ে উঠতে পারে।
“জিয়ে, জিয়া জুনকে বুঝিয়ে বলুন না, একটু।”
সু ছনের সামনে কম আঁচে ঝলসানো শুয়োরের পাঁজরের মাংসের একটা টুকরো ধরে রেখে কথাটা বললো য়ে শিয়াও ঝেন, “শিন ছি গ্য বেজিং-এ একটা রিফ্রেশার কোর্স দেখেছেন জিয়া জুনের জন্য। সাংবাদিকতার ছাত্ররা দু বছর পড়াশোনা করবে কাজের দায়দায়িত্ব ছাড়াই, তাছাড়া একটা বড়ো খবরের কাগজে ইন্টার্নশিপ করারও সুযোগ আছে। ওর জন্য সব ব্যবস্থা করা আছে। ও থাকবেও শিন ছি গয়ের নিজের অ্যাপার্টমেন্টে। কী দারুণ সুযোগ, টিউশন নেবার থেকে অনেক ভালো, কিন্তু ও যাবে না!”
শিন ছি কথাটা আলোচনা করেছে মিন হুয়ের সাথে। ওর মতে ছিয়াঁ ঝির কাজের মানটা বড্ডো নিচু। যাকে সমাজের খবর বলা হয়, সেটাও সাজানো হয় বিনোদনের ধাঁচে, যার অনেকটাই নরম আর ছড়ানো। রেস্টুরেন্টের খাবারের মতো, নাম করা পদগুলো এতো সুস্বাদ যে খদ্দের তো রান্নার পাত্রশুদ্ধ পুরো খাবারটাই চুরি করে নিয়ে যাবে। আবার ধরা যাক, একটা লোকের অভিযোগ এই যে স্বাস্থ্য ভালো রাখার জিনিস বলে যা বিক্রি হয়, সে সব ওর বাবাকে ঠকিয়েছে। এই বক্তব্যটা বাবার এতো অপছন্দ হলো যে বাবা নিজে লোকটাকে আত্মীয়বন্ধুদের দল থেকে তাড়িয়ে দিলেন। সবটাই অতি নাটকীয়। … যদি জিয়া জুন কর্মজীবনে সাফল্য চায় তো ওকে খুব পরিশ্রম করতে হবে খুব সাধারণ কাজগুলো শেখার জন্য।
যখন মিন হুয়ে এসব শুনে ছিলো, তখন ও একমত হয়ে ছিলো শিন ছির সাথে। বাড়ি ফিরে বলেও ছিলো চেন জিয়া জুনকে। কিন্তু জিয়া জুন খুব জেদ করে অসম্মতি জানায়। বলতে থাকে যে ছিয়াঁ ঝিতে কাজ করে ও খুবই খুশি, ওর মনে হচ্ছে ও বেশ কীর্তি অর্জন করেছে।
বসে বসে মাস্টারমশাইয়ের বক্তৃতা শুনে, পরীক্ষার পড়া মুখস্থ করার থেকে ও বেশি পছন্দ করে বাইরে দৌড়ে দৌড়ে কাজ করতে - কাজের জন্য প্রয়োজনীয় জ্ঞান তো অভ্যেস থেকেই আসে। জিয়া জুন অনিচ্ছুক, শিন ছি জোর খাটাতে পারে না, তাই জিয়া জুনকে না জানিয়ে শিন ছি পারলো না যে যখন কোনো অসুবিধে হবে, কিংবা বাধাবিপত্তি আসবে জীবনে, তখন শিন ছি সাহায্য করতে চায়।
কথাটা মনে পড়তে এখন মিন হুয়ের মনে হচ্ছে জিয়া জুন যেতে চায় নি হতে পারে এই জন্য যে ও য়ে শিয়াও ঝেনকে ছেড়ে যেতে চায় না। তাই না?
যে ভাবে দুজনে কথা বলছে আর হাসাহাসি করছে এখন দেখে মনে হচ্ছে দুজনে যেনো প্রেমিক আর প্রেমিকা। একজন টিউটর এতো খেয়াল রাখে না।
“বিনচেং-এ থাকাই ভালো। এখানে আরো পড়ার অনেক সুযোগ রয়েছে। পরে আরো সুযোগ আসবে।”
মিন হুয়ে খাওয়াতে মন দিলো আর এলোমেলো কথা বলে গেলো।
“জিয়ে, আপনি জানেন না, বেজিং-এর স্কুল অফ জার্নালিজম দূর্দান্ত! আমি আমার শেষ বছরে ওখানে যেতে চাই পোস্টগ্র্যাজুয়েট পড়ার জন্য ভর্তি হবার পরীক্ষা দিতে। যদি জিয়া জুন ওখানে থাকে, তাহলে খুব সুবিধে হয়, যেহেতু পথঘাট সব ওর চেনা হয়ে থাকবে। শিন ছি গ্যও খুব পরিশ্রম করছেন। উনি ছাড়া আর কেই বা পারবেন? জিয়া জুন না গেলে সেটা খুব খারাপ হবে। জিয়ে, ওকে আবারও বুঝিয়ে বলুন না।”
তাহলে - মিন হুয়ে ভাবলো - মেয়েটা কী শিন ছিকেও পছন্দ করে?
মিন হুয়ে তখনই কোনো উত্তর দিলো না। মেয়েটা আগের দিনের টেনিস খেলার জামাকাপড়টাই পরে আছে দেখে ইচ্ছে করেই মিন হুয়ে জিজ্ঞেস করলো, “শও ঝেন আজকে কী ইস্কুলে কোনো খেলাধূলোর ব্যাপার আছে নাকি? এতো চমৎকার জামা পরেছো?”
“না। এই জামাটা জিয়া জুন দিয়েছে, আমি এখানে এসেছি ওকে দেখাবো বলে।”
বলেই উঠে দাঁড়ালো, ঘুরে দাঁড়ালো জিয়া জুনের সামনে, এমনকি একটা হৃদয়ানুভুতি মুদ্রাও করে দেখালো।
হৃদয়ানুভুতি মুদ্রা |
জিয়া জুন হেসে মাথা নাড়লো, “শও ঝেন টেনিস শিখছে। ঘটনাক্রমে আমিও গত দু সপ্তাহ খেলাধূলোর জিনিসের ওপরে কাজ করছি। ব্র্যান্ডটা আমার চেনা। আমি কিছু ছাড় পেলাম দামে আর ওকে এই সেটটা দিলাম।”
রাগে কথা হারালো মিন হুয়ে। এই য়ে শও ঝেন দারুণ ধড়িবাজ। জিয়া জুনকে দিয়ে জামাকাপড় কেনালো, সেই জামা পরে ও যাচ্ছে য়িন শুকে পটাতে। মিন হুয়ে তখনই কিছু বললো না। খাবার পরেও অনেক ক্ষণ বেখাপ্পা এটা সেটা নিয়ে গল্প করে গেলো সবার সাথে। যখন য়ে শও ঝেন বিদায় নিতে গেলো, মিন হুয়ে বললো, “আমি তোমার সাথে নিচে যাবো, ময়লাটা ফেলে দিয়ে আসি।”
অ্যাপার্টমেন্টের দরজা পেরিয়ে মিন হুয়ে কথাটা পাড়লো এই বলে যে ওর কিছু কথা বলার আছে য়ে শও ঝেনকে।
খানিক পরে য়ে শও ঝেনকে কাছাকাছি একটা কাফেতে নিয়ে গেলো মিন হুয়ে। দুজনে বসলো, দুটো লাটের ফরমাস করলো।
মিন হুয়ে বেশি ঢাক ঢাক গুড় গুড় না করে সোজাসুজি বললো যে ও টেনিস ক্লাবের পার্কিং লটে কী দেখেছে।
য়ে শও ঝেনের প্রথম প্রতিক্রিয়া হলো একটা হালকা হাসি, “জিয়ে, আপনি মানুষটাকে ভুল বুঝেছেন।”
“আমার কোনো ভুল হয় নি। তুমি কাল যা পরে ছিলে, আজ এখনো তাই পরে আছো তুমি। পরে আমি য়িন শুকে সরাসরি জিজ্ঞেস করেছি, ও স্বীকার করেছে।”
য়ে শও ঝেন শান্ত, “একটা চল্লিশ বছর বয়সী লোক একটা একুশ বছর বয়সী কলেজ ছাত্রের ঘনিষ্ঠ হচ্ছে। একটা ছোটো সুযোগ মাত্র। আমি এতে কিছুই মনে করি না। আপনিই বা এতো গুরুত্ব দিচ্ছেন কেনো ব্যাপারটাকে?”
“উদ্যোগ নাও। নাকি সস্তা কোনো দাম লাগবে তোমার?”
“এটা একটা রসিকতা।" বিরক্তিতে ঠোঁট বেঁকে গেলো য়ে শও ঝেনের, “ওর পরিবারের মেয়েমানুষটা বুড়ি হয়ে গেছে, দেখতেও বিশ্রী, বদমেজাজীও বটে। ভগবান জানে, মহিলা যে কী করে ওকে পাকড়ে রেখেছে এতো দিন? সে আবার দুটো বাচ্চার জন্মও দিয়েছে? পুরুষমানুষটা রোজ বাড়িতে রান্না করে, কাপড় কাচে, উফ্ ভগবান, এই উল্টো ব্যবস্থাতে কী করে কাটায় দিনের পর দিন? ঐ মহিলাকে বিয়ে করে লোকটা পস্তাচ্ছে না?”
“তোমার হাতে টেনিস ক্লাবের বার্ষিক সভ্যপদের যে কার্ডটা রয়েছে, ওটার সারা বছরের খরচ সাড়ে সাত হাজার য়ুআঁ। এটা তোমাকে দিয়েছে ঐ বিশ্রী দেখতে বুড়িটাই। তুমি পিঠ ফিরিয়েই তার বরকে ভুলিয়ে ভালিয়ে পটিয়ে নিলে। তোমার বিবেক বলে কিছু আছে? নাকি সেটা কুকুরে খেয়ে গেছে?" বেশ রাগ দেখিয়েই মিন হুয়ে বললো, “য়ে শও ঝেন, জানো কী, বোঝো কী তোমার আচরণটা অনৈতিক?”
“এটা অনৈতিক, কারণ লোকটা অনৈতিক, তাই না, জিয়ে? আমি তো বাচ্চা মেয়ে, আমি কী জানি? উনি আমার সাথে মিষ্টি মিষ্টি কথা বলেন, আর আমি একটা ঘোরের মধ্যে সেটা বিশ্বাস করি।”
কথাগুলো বলার সময়ে ও নিজের নখের দিকে তাকিয়ে ছিলো, “নিশ্চয়ই আমি সে রকম মেয়ে নই যে অন্য লোকের সংসার ভাঙে। উনি যদি সত্যিই আমাকে চান, তবে ওঁকে ডিভোর্স নিতে হবে। আমিও ওঁর সাথে লুকিয়ে লুকিয়ে দেখা করতে চাই না।”
“...”
“জিয়ে, এই ব্যাপারটা নিয়ে আপনি মাথা ঘামাবেন না।”
“য়ে শও ঝেন, আমি তোমাকে এইটা বলতে এখানে ডেকেছি যে তোমাকে আমি বরখাস্ত করলাম জিয়া জুনকে পড়ানোর কাজ থেকে।" কেটে কেটে কথাগুলো বললো মিন হুয়ে, “আজ থেকে জিয়া জুনের সাথে কোনো যোগাযোগ রাখবে না। য়িন শুয়ের কাছেও যাবে না। ওদের কারুর সাথে যোগাযোগ রাখার কথা ভেবোও না। যে ধরনের টিউটর তুমি, কাজটাই খুব আর নিরাপদ নেই তোমার জন্য।”
য়ে শও ঝেনের মুখটা সবুজ হয়ে গেলো, বললো, “আমি আপনার কথা শুনবো কেনো?”
“তুমি যদি এরকম চালিয়ে যাও, তাহলে আমার আর কোনো উপায় থাকবে না, তোমার কথা ফাঁস করে দেওয়া ছাড়া।” বিদ্রুপের ভঙ্গিতে বললো মিন হুয়ে, আর কাপে কফি গোলাতে লাগলো।
“আপনি কী আমার সাথে ঝামেলা করতে চাইছেন?" য়ে শও ঝেন ভ্রূ কোঁচকালো, “মিন হুয়ে, তুমি আমাকে নীতি কথা পড়াবার কে? একবারও মনে কোরো না যে আমি জানি না তুমি কে। তুমি তোমার বস চেং ছিরাংকে ভোলানোর চেষ্টা করো নি তখন? সব কেটে যেতে তুমি মানতে চাও নি, মামলা করেছিলে, সততার মুখোশ পরে, সতীত্বের ঢং করে ছিলে। কেনো,তোমাকে কী পয়সা কম দিচ্ছিলো?”
“...”
“আমি সাংবাদিকতার ছাত্র। আমার সাথে ঝামেলা করা সোজা নয়। তুমি যদি আমার ব্যবস্থা করো, তো আমিও তোমার ব্যবস্থা করতে পারি।”
“...”
“তুমি কী জানো আমার ডরমিটরিতে আমার ক্লাসের বাকিরা কী করছে? মুভি দেখছে। আমিই একমাত্র টিউটর, কারণ আমার পরিবারের পয়সা নেই, আমাকে নিজের ব্যবস্থা নিজেই করতে হয়, অনেক দিন থেকেই। আমি তোমাকে ভয় পাই না! আমার শূণ্য থেকে শুরু, তোমার বন্দোবস্তে আমি আমার শূণ্যতেই থেকে যাবো। আমার জন্য হারাতে না পারার কিছুই নেই।”
মিন হুয়ে ভ্রূ কুঁচকে চুপচাপ তাকালো ওর দিকে, “য়ে শও ঝেন, তোমার অসীম ক্ষমতা। তুমি বদামি করতেই পারো।”
“যাই হোক, য়িন শুয়ের রান্নার চ্যানেল, আমার পরিকল্পনা ছাড়া পঞ্চাশ লাখ ভক্ত পেতো?” বিদ্রুপ করলো য়ে শও ঝেন, “জিয়ে, নিজের থুতুতে ডুবে মরার স্বাদ আপনি যথেষ্ট পান নি বলেই মনে হচ্ছে, আমি কী আবার আপনাকে ছুঁড়ে ফেলে দেব?”
কথা বলতে বলতে উঠে দাঁড়ালো ও, “ঐ মহিলা আপনাকে বলেছে আমার সাথে কথা বলতে, তাই না? আমার যেহেতু কাজটা গেছে, আমি বলবো আপনি আমাকে এই মাসের মাইনেটা দিয়ে দিন আমার অ্যাকাউন্টে। য়িন শুয়ের ব্যাপারে বলতে পারি, ঐ মহিলাকে ছেড়ে দিতে পারে যদি ও, তবে আমি ওকে বিয়ে করবো, আমি যা বলি তাই করি। বিয়ের দিন আপনাকে আসতেই হবে! বাই!”
এরপরেই ও চলে যাচ্ছিলো, মিন হুয়ে ওর পথ আটকালো। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ও নিজের মোবাইল ফোন বার করলো, “য়ে শও ঝেন, তুমি যখন অনুতাপ করতে জানো না, তখন আমিও বিনয়ের আশ্রয় নেবো না। আমি তোমার সাথে আমার যা যা কথা হলো সব রেকর্ড করেছি। তুমি তো ‘পড়ার সময়ে কাজ’ দেয় যারা তাদের মাধ্যমে আমার কাছে এসেছো, ওরাই তো তোমাকে দূর্দান্ত টিউটর বলে সুপারিশ করে ছিলো, তাই আমি তোমাদের দলনেতার কাছে এই রেকর্ডিংটা পাঠিয়ে দেবো। আর তোমাদের কলেজের সাংবাদিকতা বিভাগের প্রধানকেও পাঠাব। আর ওঁকে বলব যে তোমাকে ভালো করে শিক্ষা দিতে। তাছাড়া, ইউনিভার্সিটির অনলাইন টিউটরিং ওয়েবসাইটে রেটিং-এর ব্যবস্থা আছে না? আমি কয়েকটা মন্তব্য লিখে তোমার সুপারিশ করবো না হয়।”
য়ে শও ঝেনের মুখ লাল হয়ে উঠলো তক্ষুণি, “জঘন্য। আমি কখনোই ভাবি নি যে তুমি এমন একটা নোংরামো করবে, এমন একটা ফিকির করবে।”
“বিদায়, আমি তোমাকে আর কখনো দেখতে চাই না।”
মিন হুয়ে অ্যাপার্টমেন্টে ফিরে জিয়া জুনকে বললো য়ে শও ঝেনের সমস্ত কথা। সত্যিটা এরকম দাঁড়ালো যে রেকর্ডিংটা নিজের কানে শুনে জিয়া জুন চমকে ফ্যাকাসে হয়ে গেলো, “আমাকে আগে বলো নি কেনো? আমাকে দিয়ে এতোগুলো পদ রাঁধালে কেনো?”
মিন হুয়ের ভয় ছিলো যে জিয়া জুন রেগে যাবে, আর য়ে শও ঝেনও খুব সুবিধের মেয়ে নয়, যদি একটা ঝগড়াঝাঁটি লেগে যায়, যদি নিতান্ত দুর্ঘটনাবশত কেউ আহত হয়, চেন জিয়া জুন এর মধ্যেই একবার জেল খেটে এসেছে, ওকে আরেকবার জেলে যেতে দেওয়া যায় না।
***
সেই রাতেই কৌতুহলের বশে, মিন হুয়ে একটা ব্যাগে সামান্য কয়েকটা জিনিস ভরে, সু ছনকে নিয়ে গেলো আইভি গার্ডেন-এর ব্লক এ-তে।
ও আর ঝৌ রু জি ব্লক ই-তে ছিলো তিন বছরের কিছু বেশি। এলাকাটা মিন হুয়ের ভীষণ পরিচিত। বাইরে পা রাখলেই বিজনেস ডিস্ট্রিক্ট আর চারপাশের ইস্কুল কলেজও বিনচেং-এ সেরা।
কমিউনিটিতে প্রচুর গাছ আর ফুল। প্রত্যেক বিল্ডিং-এর নিজস্ব স্যুইমিং পুল আছে, ভীষণ গরমে স্নান করার জন্য সনা আছে, জিমন্যাসিয়াম আছে, তার মধ্যে একটা বিশাল পার্ক আর বাচ্চাদের খেলার মাঠ আছে।
মিন হুয়ে চাবিটা বার করে ভালো করে দেখলো। চাবিতে লেখা আছে এ- ৩২০১। মিন হুয়ে জানে যে এটা ইয়াও ঝি ঝু যে পেন্টহাউসে থাকতোএকদম সেটার মতো হবে। কিন্তু ভেতরের সাজগোজ একদম আলাদা।
সদর দরজাটা সাদাকালো। রেখাগুলো সাদামাঠা, সোজা আর উজ্জ্বল। জ্যামিতিক বোধে পরিপূর্ণ।
মেঝে হাতে করে মাজা। আসল আসল জায়গা সাদা কার্পেটে ঢাকা। তেল রঙে আঁকা অনেকগুলো উত্তরাধুনিক ছবি টাঙানো আছে দেওয়ালে। ছবিগুলোতে অনেক রং আর সেসব রং ভারি উজ্জ্বল। ছবিগুলো নিস্তব্ধ বাড়িটাতে খানিকটা অগোছালো উত্তেজনা এনে দিয়েছে।
‘নতুন বাড়ি’ দেখে উত্তেজনায় ভরপুর সু ছন। কেবল এ ঘর ও ঘর করছে। সমস্ত ড্রয়ার খুলে দেখছে, কৌতুহলে। একগাল হেসে বললো, “মা, মা, এই বাড়িটা কী বিশাল! এখানে তো লুকোচুরি খেলা যাবে।”
“এই বাড়িটার ব্যবস্থা করেছেন বাবা, তোমার থাকার জন্য। তোমার পছন্দ হয়েছে?”
“হ্যাঁ। বাবা কী এখানে এসে আমাদের সঙ্গে থাকবে? আমাকে কিন্ডারগার্টেনে পৌঁছে দেবে?”
“বাবা এখন বেজিং-এ। বাবা প্রায়ই ফোন করবেন তোমাকে।”
“আমি এখনই বাবার সাথে ফোনে কথা বলতে চাই।”
হাতে তালি দিয়ে হাসলো সু ছন।
“বাবা আজকাল খুব ব্যস্ত থাকে। কাল ফোন করবো, কেমন?”
মিন হুয়ে ছেলের মুখটা ধরে বললো, “লক্ষী ছেলে। আটটা বেজে গেছে। এবার দাঁত মেজে, বিছানায় যেতে হবে।”
ছেলেকে পরিষ্কার করে, মিন হুয়ে ছেলেকে বিছানায় নিয়ে গেলো। দুজনে মিলে খানিক ক্ষণ গল্প করলো এটা সেটা নিয়ে। শিগগির ঘুমিয়ে পড়লো সু ছন।
একমাস ধরে ওভারটাইম কাজ করে করে মিন হুয়েরও খুব ঘুমের অভাব হয়ে ছিলো। চার ঘন্টাও রোজ ঘুমোতে পায় নি মিন হুয়ে। বাচ্চা যতক্ষণ না ঘুমিয়ে পড়ে, ততক্ষণ বাচ্চাকে ভোলাতে ভোলাতে, মিন হুয়ে প্রায় ঘুমিয়েই পড়ে ছিলো। এগিয়ে আসা ডেডলাইনের কথা মনে পড়তেই আবার বিছানা থেকে নেমে পড়লো মিন হুয়ে।
সু ছন ভীতু। ওকে ছেড়ে বেশি দূরে যেতে সাহস করলো না মিন হুয়ে। কম্পিউটার জাপটে ধরে, একটা কম্বল গায়ে দিয়ে, খাটের পাশের একানে সোফাটাতে বসলো। খটাখট করে প্রোগ্রাম লিখে চললো।
ঘন্টা তিনেক মন দিয়ে কাজ করার পরে, আড়ামোড়া ভাঙতে লাগলো, হাই তুলতে শুরু করলো খুব। এই মূহুর্তে ঘরের কোথা থেকে বোঝা গেলো না একটা গাঢ় স্বর ভেসে এলো, “রান্নাঘরে একটা কফি মেশিন আছে, এক কাপ এস্প্রেসো বানিয়ে নে।”
মিন হুয়ে চমকে উঠলো। ঘরের এদিক ওদিক তাকালো, তারপর বুঝে নিলো যে আওয়াজটা সিলিং থেকে আসছে।
“আমি বলছি, শিন ছি।” বলার সুরটা হালকা, কিন্ত স্বরটা স্পষ্ট।
শুরুতে মিন হুয়ে মনে করলো, ওটা বোধ হয় স্মার্ট ভয়েস অ্যাসিস্ট্যান্ট। কিন্তু হঠাৎ ওর মনে পড়ে গেলো যে দেঁ চেন বলে ছিলেন যে সু ছনের শোবার ঘরে হাই ডেফিনিসন ক্যামেরা আছে, ব্যাপারটা মাথায় ছিলো না মিন হুয়ের, যখন ও এসে ছিলো, ও জানতো না কোথায় লুকোনো আছে ক্যামেরা।
“আমি তো ভয় পেয়ে গিয়ে ছিলাম, ভাবছিলাম খোদ ভগবানের দেখা পেলাম বুঝি।”
গলার স্বরটা যে দিক থেকে আসছিলো সেই দিকে তাকালোও। নিশ্চিত হলো যে মাথার ওপরের স্ফটিকের ঝাড়বাতিটায় নিশ্চয়ই একটা ক্যামেরা লাগানো আছে। নিশ্চয়ই দূর থেকে ক্যামেরাটাকে চালানো যায়, পুরো তিনশো ষাট ডিগ্রি ঘুরতে পারে ক্যামেরাটা, আবার সঙ্গে গলার স্বর শোনাতে পারে। এবার মিন হুয়ে খুঁজতে লাগলো খুঁটিয়ে। খাটের উল্টো দিকের ক্যাবিনেটে একগাদা মিনিয়ন আছে। সব কটারই চোখ বেশ বড়ো বড়ো। বলা মুস্কিল যে কোন পুতুলটার চোখের ভেতরে ক্যামেরা লাগানো আছে। আবার সোফার উল্টো দিকের ইলেকট্রনিক ঘড়িটাও যেনো কেমন একটা উদ্ভট লাল আলো ছড়াচ্ছে। হতেই পারে যে ওখানেও একটা ক্যামেরা লুকোনো আছে।
মিন হুয়ে কম্পিউটারটা নামিয়ে রাখলো। গেলো রান্নাঘরে।
খানিক পরে ফিরে এলো কফি ভর্তি একটা বড়ো কাপ নিয়ে। আঙুলে একটা ব্যান্ড-এইডও ছিলো।
শিন ছি জিজ্ঞেস করলো, “তোর আঙুলে আবার কী হলো?”
“ছেঁকা লেগেছে।” মিন হুয়ে বললো, “আমি তো দুধ থেকে ফেনা ওঠা অবধি দুধটাতে ভাপ দি, কিন্তু এটা ঠিকঠাক কাজ করলো না। সমস্ত ভাপ ছিটকে এসে আঙুলে লাগলো।”
“তুই তো কেবল ক্যাপসুল কফি মেশিন ব্যবহার করিস, মিন হুয়ে।”
মিন হুয়ে আমল দিলো না শিন ছির শ্লেষ, অপমানে ভরা কথাগুলোর। রাগ মনের মধ্যে রেখে দিয়ে, টাইপ করতে লাগলো কি-বোর্ডে, ছেঁকা লাগা জায়গাটাতে বেশ লাগছে। নিচু স্বরে হতাশা উগরে দিলো মিন হুয়ে, “নিকুচি করেছে।”
“জিয়া জুন কেমন আছে?”
“ভালোই আছে। যাই হোক, একটা উদ্ভট কথা বলি তোকে …”
মিন হুয়ে জানে না কফির প্রভাবে কিনা, মিন হুয়ে পুরোপুরি জেগে উঠেছে, আর খানিক উত্তেজিতও হয়ে উঠেছে।
মিন হুয়ে ভাবছিলো য়ে শও ঝেনকে তো আর পাহারা দেওয়া যাবে না। সে হয়তো বেজিং-এ গিয়ে শিন ছিকে খুঁজে বার করবে কদিনের মধ্যে। ওকে বিষ ছোবলের একটা আন্দাজ দিয়ে রাখা ভালো। সে জন্য ও য়ে শও ঝেনের কথা সবটাই বললো। কিন্তু শেষ পর্যন্ত দীর্ঘশ্বাস না ফেলে পারলো না, “কী মনে হয় তোর, আমার কপালে কী আঠা দিয়ে কাগজ সাঁটা আছে একটা? কেনো আমার সঙ্গে কেবল দায়িত্বজ্ঞানহীন লোকেদেরই দেখা হয়?”
“তোর জন্য আমিও ভরসার অযোগ্য।” খোঁচা দিয়ে বললো শিন ছি, “এসব হাঙর রক্তের গন্ধ পেলেই ছুটে আসে।”
“টানটা নিচের দিকে।”
মিন হুয়ে ছাদের দিকে তাকালো, “তুই যদি জিয়া জুনকে বুঝিয়ে বলিস, তবে মনে হয় যে ও বেজিং যেতে রাজি হয়ে যাবে।”
“ও রাজি হয় নি। আমি এই মাত্র ওর সাথে কথা বললাম, ও জানিয়েছে যে ও এখনো বিনচেং-এই থাকতে চায়।”
“শিন ছি" মিন হুয়ে মাথা নিচু করে টাইপ করতে করতেই প্রশ্ন করলো, “সু তিয়াঁর কোনো খবর পেয়েছিস এর মধ্যে?”
“না। তোর কাছে কোনো খবর আছে?”
“না।’
দুজনে একসাথে চুপ করে গেলো।
বেশ খানিকক্ষণ পরে মিন হুয়ে জানতে চাইলো, “তুই বলছিস যে সু তিয়াঁ এখনো বেঁচে আছে?”
“বেঁচে আছে।" শিন ছির গলার স্বর ভীষণ নিশ্চিত।
“জানলি কী করে?”
“আমি একটা ভবিষ্যতদ্রষ্টার সাথে কথা বলেছি। উনি বলেছেন যে সু তিয়াঁ এখনো বেঁচে আছে। আমি ওকে খুঁজে পাবো একদিন।”
“তুই? বিশ্বাস করিস ভবিষ্যতদ্রষ্টায়?”
“ভবিষ্যতদ্রষ্টার সাথে কথা বলা ছাড়া আর কীই বা আমি করতে পারি?”
বিদ্রুপ করলো মিন হুয়ে।
“মিন হুয়ে”
“হুহ্?”
“যদি সু তিয়াঁ এখনো বেঁচে থাকে, আর আমি ওকে খুঁজে পাই, তুই কী তাহলে সু ছনকে দিয়ে দিবি আমাকে, বড়ো করার জন্য?”
“না।”
“কেন, তোর তো সু তিয়াঁর কাছে একটা জীবনের ধার বাকি?”
“তুই যদি সু তিয়াঁকে খুঁজে পাস, তবে তোদের এক ডজন বাচ্চা হতে পারে। তুই আমার থেকেই বা কেনো কেড়ে নিবি সু ছনকে?”
“কারণ ও আমারও ছেলে।”
“আমি তাও চাই না।”
“তখন তুই কী করবি?”
“আমি আমার জীবনে এগিয়ে যাবো, সু ছনের জন্য একটা নতুন বাবা খুঁজে বার করবো, যদি তোর অপছন্দ না হয় তো। আমার মনে হয় তোকে ভরসা করা যায়। মনে হয় তুই অনেক লোককেও চিনিস যাদের ওপরে ভরসা করা যায়। যখন সময় হবে তখন তাদের কারুর সাথে আমার আলাপ করিয়ে দিস। তোর কপাল ভালো হলে, আমরা একই শহরেও থাকতে পারি, তাহলে তুই সু ছনকে যখন খুশি তখন দেখতে পাবি।”
“তুই কিছুতেই এই ছেলেটাকে আমাকে দিবি না, তাই তো?”
“আরেকটা সম্ভাবনাও আছে । যদি সু তিয়াঁ বেঁচে না থাকে … তুই … আমি …”
“আমি জানি না তুই কী বলছিস।”
“তাহলে এ নিয়ে কথা বলিস না।”
শিন ছি প্রসঙ্গ বদলালো, “এই ঘরে আমি তিনটে ক্যামেরা লাগিয়েছি, তোর যদি অস্বস্তি হয় তুই পাশের পড়ার ঘরে গিয়ে কাজ করতে পারিস। আমি তোকে বিরক্ত করতে চাই না।”
“আমার কিছু যায় আসে না।”
মিন হুয়ে ক্যামেরার দিকে তাকিয়ে হাসলো, “তোর কফির কাপটা বিকট দেখতে, টয়লেটের মতো, কেনো? রুচিটা কেমন বিশিষ্ট যেন!”
চমকে উঠলো শিন ছি, “তুই জানলি কী করে?”
“তুই যদি আমাকে দেখতে পাস, তাহলে আমিও তোকে দেখতে পাবো। কে বলে ছিলো আমাকে যেনো তার কম্পিউটারে কাজ করার জন্য।”
“ওয়া আহ্ন, মিন হুয়ে।”
“ওয়া আহ্ন, শিন ছি।”
মিন হুয়ে কাজ করতে লাগলো। আরো দু ঘন্টা পরে ছাদের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করলো, “শিন ছি, তুই কী ঘুমিয়ে পড়েছিস?”
“না,” ওর গলার স্বরে ক্লান্তি, “আমিও ওভারটাইম কাজ করছি।”
~~~~~~~~~~~~
সম্পূর্ণ বই বিনামূল্যে : https://dl.bookfunnel.com/lcj5vznt96
Link to Previous Post in the Series : https://projectionofnaught.blogspot.com/2024/09/jpda-chapter-42.html
Link to following Post in the Series : https://projectionofnaught.blogspot.com/2024/08/jpda-chapter-44.html
No comments:
Post a Comment