Thursday, September 26, 2024

JPDA - Chapter 51

৫১. রাতের আলো



 রাতের খাওয়া-দাওয়া শেষ হবার আগেই শিন ছি আর মিন হুয়ে হল ছেড়ে চলে গেলো ছেলেকে নিয়ে। 

যাই হোক, ছেলেটার একটা বড়ো অপরেসন হয়ে গেছে, খুব বেশি দিন যায় নি। আর সু ছনের শরীর এখনো দূর্বল। ও কেবল এক বাটি পরিজ খেয়েছে, আর কয়েক টুকরো শুয়োরের পাঁজর খেয়েছে টেবিলে বসে। তারপরেই চেঁচিয়েছে যে ও ঘুমোতে চায়।

বাচ্চা চলে যেতে চাইলে মা-বাবার পক্ষে অনেক ক্ষণ থাকা মুস্কিল। শিন ছি কোলে তুলে নিলো সু ছনকে, হল থেকে বেরিয়ে এলো, মিন হুয়েকে বললো, “আমার অ্যাপার্টমেন্টে চল। ওখানে একটা ঘর পড়েই আছে।”

মিন হুয়ে জানতো যে ও ওর ছেলের সঙ্গে আরো একটু সময় কাটাতে চায়। খানিকক্ষণ থাকতে হবে জেনে, মিন হুয়ে ঘড়ি দেখলো, নটাও বাজে নি। তাই ও সম্মতিতে ঘাড় নাড়লো, “ঠিক আছে। কিন্তু কাল আমাদের ভোর ভোর উঠতে হবে। সকাল দশটায় আমাদের ট্রেন।”

শিন ছি একটু হকচকিয়ে গেলো, “তুই বলেছিলি না সন্ধে সাতটায়?”

“সাও মু জিয়ে তাড়াতাড়ি ফিরে যেতে চান। বিডিং-এর আগে অনেক কাজ।”

যেমন ম্যানেজমেন্ট টিম যথেষ্ট পুঁজি জড়ো করতে পারে নি। এমবিও -র পদ্ধতিটাও খুব জটিল। কেউই ভাবে নি যে বাকি টাকাটা এতো শিগগির জোগাড় হয়ে যাবে। কাজের চাপেই সাও মুকে ফিরে যেতে হবে আর লেনদেনের দায়িত্বে থাকা এএআর টিমের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে আইন মানার জন্য কী কী করণীয়, হিসেবপত্র কিভাবে রাখা হবে, কেমন করে পুঁজির জোগাড় চলছে, করের কী হাল, মূল্য নির্ধারণ এরকম আরো অনেক কিছু। বিশেষজ্ঞদের সাহায্য ছাড়া এক পাও এগোনো মুস্কিল।

“তাহলে আমি কাল তোকে স্টেশনে পৌঁছে দেবো।” বললো শিন ছি।

ফিনান্সিয়াল স্ট্রিটের অ্যাপার্টমেন্টে ফিরে, দুজনে মিলে সু ছনকে চান করালো। বাচ্চা বাথটবে খানিকক্ষণ খেললো, বিছানায় গিয়ে শুতে না শুতে ঘুমিয়ে পড়লো।

“তোর এখানে বারান্দা আছে?” হঠাৎ জিজ্ঞেস করলো মিন হুয়ে।

“হ্যাঁ, কিন্তু তুই ওখান থেকে নিচে ঝাঁপ দিবি, তা হবে না।”

“আমি একটা সিগারেট খেতে চাই কেবল।”

ব্যালকনিটা খুব বড়ো। খুব শব্দ করে হাওয়া বইছে। মিন হুয়ের লাইটারে গ্যাস নেই আর। তাই শিন ছি ঘরের ভেতরে গিয়ে দেশলাই বাক্স নিয়ে এলো।

“সিগারেট খাওয়া তোর স্বাস্থ্যের পক্ষে ভালো না।”

“আমি খুব বেশি সিগারেট খাই না।”

সেই ঘটনার পরে সিগারেট খাওয়াটা ওর অভ্যেস হয়ে গিয়ে ছিলো, মনের ক্ষয় আটকানোর জন্য। মা মারা যাবার আগে আগে, আবেগে ভেঙে পড়া আটকাতে, ও রোজ এক প্যাকেট করে সিগারেট খেতো। ভেবে ছিলো যে কোনো দিনও হয়তো ছাড়তে পারবে না। কিন্তু সু তিয়াঁর হারিয়ে যাওয়া ওকে নাড়া দিয়ে জাগিয়ে ছিলো। তারপর থেকে মাঝে মধ্যে একটা বা দুটো সিগারেট খেয়েছে। কিন্তু ওর ব্যাগে সব সময়ে এক প্যাকেট সিগারেট থাকে। কোম্পানিতে এতো পুরুষ সহকর্মী, তাদের মধ্যে অনেকেই ধূমপায়ী, কখনো কখনো তাদের সাথে মিশতে, ও দুয়েকটা সিগারেট খেয়েছে। সেটা খানিকটা বিনোদনও।

হাওয়ার তেজ এতো বেশি যে তিনটে কাঠি ঘষে ঘষে বারুদ ক্ষয়ে গেলো, কিন্তু একটাও কাঠি মিন হুয়ে জ্বালাতে পারলো না। 

“আমি চেষ্টা করি?”

হাওয়ার দিকে পিঠ করে শিন ছি কাঠিটা ঘষল, কাঠিটা জ্বলতে সেটাকে হাতের তালুর বৃত্তে আড়াল করে ধরলো মিন হুয়ের মুখের সামনে, একটা দমকা টানে মিন হুয়ে ধরিয়ে নিলো সিগারেট। ধীরে ধীরে বাতাসে ছেড়ে দিলো একটা ধোঁওয়ার গোলা। সেটাকে তখনই উড়িয়ে নিয়ে গেলো হাওয়া।

শিন ছি চোখে ধন্দ নিয়ে দেখতে লাগলো মিন হুয়েকে।

“কুয়াশা হয়েছে।” মিন হুয়ে দেখালো ওর পায়ের নিচে রাস্তার আলোর দিকে। 

“প্রায় নিউ ইয়র্কের মতোই দেখতে লাগে এদিকটা। বিশেষ করে রাতে। কখনো মাঝরাতে জেগে উঠলে আমার ধাঁধা লেগে যায়, মনে হয় আমি বুঝি ওয়াল স্ট্রিটে আছি।”

ধাতব বেড়ার ওপর ঝুঁকে নিচের দিকে তাকালো ও, “বেজিং-এর রাস্তাগুলো নিউ ইয়র্কের মতো, চৌকো। আবহাওয়ায় একই রকম।”

“আমি বেজিং-এ ছিলাম সাত বছর।" বললো মিন হুয়ে।

“আমি প্রায় ভুলে গিয়ে ছিলাম।” শিন ছি হাসতে হাসতে বললো, “তুই হুয়াছিং ইউনিভার্সিটি থেকে পাশ করেছিস। তুই বেজিং-এ থাকলি না কেনো? এখানে তোর ভালো লাগে নি?”

“আমি দক্ষিণের থেকে এসেছি।”

মিন হুয়ে মাথা ঘুরিয়ে শিন ছির দিকে তাকালো, রাতের কুয়াশা যেনো ওর চোখে ভিড় করে এসেছে, বললো, “উত্তরের রুক্ষতা আমি সহ্য করতে পারি না।”

“কোন কোন শহরে গেছিস তারপর থেকে?”

“আমার প্রথম চাকরি বিনচেং-এ। আমার তখন বেজিং-এ থাকার সুযোগ ছিলো। কিন্তু আমার মা তখন অসুস্থ। সব চাকরির মধ্যে গুয়ান ছাও সব থেকে বেশি মাইনে দিচ্ছিলো। ওরা চিকিৎসার নানান ক্ষেত্রে কাজ করছিলো। আমার উৎসাহ ছিলো, কৌতুহল ছিলো। তাই গুয়ান ছাও-তে গিয়ে ছিলাম।”

“তাহলে চেং ছিরাং-এর সঙ্গে দেখা হলো কী করে? ও তো তখনই সিটিও গুয়ান ছাও-তে। তোর থেকে কতো গুলো ধাপ ওপরে?” জানতে চাইলো শিন ছি।

মিন হুয়ে চুপ।

“তোর মোকদ্দমার ব্যাপারে বলি , আমি অনেকগুলো প্রতিবেদনই পড়েছি - সবকটাই বলছে যে সরকারী তদন্তটা ঠিক, আর তোর নিয়োজকই ঠিক বলছে। বাইরের কারুর পক্ষে বিচার করা মুস্কিল। যাই হোক, ওখানে দুটো মাত্র লোক ছিলো যখন ঘটনাটা ঘটেছে। আর সেই সময়ে চেং ছিরাং তোর প্রতি খুব সশ্রদ্ধ আচরণও করতো। ওকে তো কাজে বহালও রাখা হয় আর পদন্নতিও হয় ওর শিগগির। তোদের মিটিং আর ব্যবসায়িক কাজে বাইরে যাওয়া থেকে কিছু অনুমান আছে …”

“ - এতে বেশ যুক্তি আছে। তাই না? লোকটাকে দেখতে ভালো, প্রতিভাবান, কর্তা বড়ো কোম্পানির, আবার ঝেং ল্যানের জামাই - তাকে কেনো আমার দিকে তাকাতে হবে? নিশ্চয়ই আমি পাজি - একটা উঁচু পাহাড়ের দেশ থেকে আসা গরীব মেয়ে - যে মেয়েটা কোম্পানিতে ওপরে ওঠার জন্য চেং ছিরাং-কে যৌন উস্কানি দেবার চেষ্টা করেছে, আমার নিশ্চয়ই অনেক চাহিদা ছিলো, পাই নি তাই ফিরে কামড় বসিয়েছি। ঠিক কিনা?”

“সেটা সত্যি নয়।” শিন ছি থতমত খেলো, “আমি শুধু জানতে চাই তোর আর চেং ছিরাং-এর মধ্যে কী হয়েছে? কী ধরনের সম্পর্ক ছিলো তোদের?”

ওর গলার স্বর শান্ত। ও ভাবছে এরকম প্রশ্ন করাটা অযৌক্তিক নয়।



মিন হুয়ের মন খারাপ হতে শুরু করলো।

“আমি বলতে চাই না।”

"কেনো নয়?”

“কারণ আমি ঐ ঘটনা বার বার বিশদে মনে করতে চাই না, তোর কৌতুহল মেটাতে কিংবা তোর জ্ঞানের পরিধি বাড়াতে। আমার জন্য, আমি যতোবার কাউকে বলব, ততোবার আমি ঐ নরক যন্ত্রণাটা ভোগ করবো।”

“...”

“আমার কী হয়েছে সে ব্যাপারে মিডিয়া রিপোর্টের কাটিং সব কিছুকে জটিলও করেছে, সরলও করেছে। কুঁড়ে লোকেরা কথা বলার জন্য কোনো একটা বিষয় পেয়েছে, তাদের বিরোধীরা ব্যবহার করেছে এটাকে হৈ হৈ করার জন্য। কিন্তু এখন আমি যতো শিগগির সম্ভব ভুলে যেতে চাই আর নিজের জীবনে বেঁচে থাকতে চাই।”

ও জোর করে একটা ধোঁয়ার কুন্ডলী ছাড়লো, “এতো কিছু ঘটার পরেও আমি জীবনের মানেটা বুঝতে চাই, বেঁচে থাকার আনন্দটা টের পেতে চাই - জানিস কী সেটা কী কঠিন?”

“আমি জানি, আমি নিশ্চয়ই জানি …” শিন ছি বিড়বিড় করলো, “ভুলে যাস না যে আমি অনাথাশ্রমে বড়ো হয়েছি।”

“তাহলে তুই আমাকে তাও কেনো জিজ্ঞেস করছিস?”

মিন হুয়ে সিগারেটের জ্বলন্ত ছাই ঝাড়তে ঝাড়তে উপহাসের সুরে বললো, “দুশ্চিন্তায় পড়েছিস যে একটা কামাতুর মেয়ে তোর ওপরে ঝাঁপিয়ে পড়বে?”

“আমি বুঝতে পারছি না, যেহেতু তুই আর চেং ছিরাং একবার কোর্টে অবধি গিয়েছিলি, তাহলে স্বাভাবিক লোক হলে, তোদের যে রকম সম্পর্ক, তাহলে ও তোদের কোম্পানিটা কিনতে চাইছে কেনো? আর তুই, আমার বিচারে বুদ্ধিমতী, ক্ষমতাবান, তাহলে ওর ব্যবস্থাটা মেনে নিচ্ছিস কেনো?”

মিন হুয়ে কথা হারালো। দেখতে লাগলো রাতের কুয়াশা ধীরে ধীরে ওপরে উঠে ওর শিন ছির মধ্যে কেমন একটা ওড়না বিছিয়ে দিয়েছে। 



“তোরা কী আগে পরস্পরকে পছন্দ করতিস, নাকি লোকটার … সব কিছু নিজের কব্জায় রাখার বাতিক?”

“তোর কথার ভেতরে লুকিয়ে থাকা মানেটা দাঁড়ায়, চেং ছিরাং আমাকে পছন্দ করে, আমার কাছে আসার জন্য, আমাকে পাবার জন্য, ও অনেক পয়সা খরচ করে বা’অ্যান কিনবে? শিন ছি তুই প্রেমের গল্প লিখছিস না কেনো?”

“আমি নিশ্চিত জানি যে তুই প্রযুক্তির গবেষণায় খুব সফল। আর ও লোকটাও তোর জন্য নয়, তোর প্রজেক্টের জন্য, তোর গবেষণার জন্য, তোর তথ্যের জন্য, ফলাফলের জন্য আর তোর ডিএস১.০-এর জন্য কিনবে বা’অ্যান।”

“জিএস১.০”

“সরি।”

“চিকিৎসা পরিষেবার ক্ষেত্রে এআই-এর ব্যবহার নিয়ে গুয়ান ছাও কাজ করতে শুরু করেছে আগে, অনেক দিন ধরে কাজ করে চলেছে। চেং ছিরাং এখনো খুবই জ্ঞানী। হালে গুয়ান ছাও-এর সব থেকে বড়ো প্রতিযোগী দং লি। দং লি এখন বলা চলে সবার আগে এগিয়ে চলেছে এই বিষয়টাতে।”

“তাহলে চেং ছিরাং-এর বা’অ্যান কেনার সঙ্গে আবেগের কোনো সম্পর্ক নেই?”

“কেবল ব্যবসা।”

“বুঝলাম।”

নিঃশব্দে মিন হুয়ের দিকে তাকিয়ে রইলো শিন ছি। হঠাৎ করে মিন হুয়ের ঠোঁট থেকে সিগারেটটা কেড়ে নিলো, নিজের ঠোঁটে চেপে টান দিলো।
“অ্যাই, তুই সিগারেটে টান দিতে পারবি না। তোর হার্টের অসুখ আছে।”

মিন হুয়ে চেঁচিয়ে উঠে সিগারেটটা কেড়ে নেবার চেষ্টা করলো, কিন্তু শিন ছি হাত দিয়ে ওকে আটকে দিলো।

“আমি একটা খেলে কিছু হবে না। এমনিতেই আমি বেশি দিন বাঁচবো না।”

হাসলো শিন ছি। হয়তো ও কোনো দিন আগে টান দেয় নি সিগারেটে। দু বার কাশলো, গলায় ধোঁয়া আটকে।

মিন হুয়ে সিগারেটের অবশেষটা ওর মুখ থেকে নিয়ে নিলো, ফেলে দিলো মেঝেতে, জোরে জোরে পা দিয়ে মাড়িয়ে দিলো।

“শিন ছি, সময় যদি ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া যায়, তোর আর আমার মধ্যে সু তিয়াঁ নেই …”

মিন হুয়ে দুহাত পুরে দিলো পকেটে চোখ তুলে রাখলো শিন ছির চোখে দৃঢ় আগুন ঝরা দৃষ্টিতে, “তুই কী আমার প্রেমে পড়বি?”

শিন ছি উত্তর দিতে অস্বীকার করলো।

“যদি আমি আর সু তিয়াঁ তোর সামনে দাঁড়াই একই সময়ে, আর যদি এমন হয় যে ও আমার জীবন বাঁচায় নি, আমার জীবনের ঋণ নেই ওর কাছে, তবে তুই কাকে বেছে নিবি?”

“আমি নেবো সু তিয়াঁকে।” এক মূহুর্তও কোনো দ্বিধা না করে বললো শিন ছি।

"কেনো?”

মিন হুয়ের হৃদয় ডুকরে উঠলো, “তোদের মধ্যে একটা ঘনিষ্ঠ অতীত ছাড়া, তোর মনে হয় না যে আমি আসলে তোর প্রেমিকা হবার বেশি উপযোগী সব দিক দিয়ে ভেবে দেখলে?”

শিন ছি দাঁড়িয়ে ছিলো মিন হুয়ের খুব কাছে, কথাটা শোনা মাত্র ওর শরীর দু পা পিছিয়ে গেলো।

“মার্জনা কর, কোথা থেকে তোর এই আত্মবিশ্বাস জন্মালো যে সু তিয়াঁর থেকে বেশি ভালো বলে মনে করছিস নিজেকে? যদি সু তিয়াঁ না থাকতো, তাহলে আমি এখন হয়তো অন্ধ হয়ে থাকতাম। অথবা, আমি হয়তো কবরে শুয়ে থাকতাম। আমি তোকে জিজ্ঞেস করতে পারি কী তুই কী এমন কারো প্রেমে পড়তিস যে অন্ধ, যার হার্টের অসুখ আছে? কেবল মাত্র সু তিয়াঁ আমার সঙ্গে ছিলো আমার জীবনের সব থেকে কঠিন দিনগুলোতে! ওই আমাকে পরিবারের অনুভুতি দিয়েছে! ওই আমাকে জীবনে সুযোগ করে দিয়েছে যাতে আমি আমার জীবন বদলে ফেলতে পারি ! ওই …”

শিন ছির গলা বুজে আসতে লাগলো, “তুই কী ভাবছিস যে এটা শুধু একটা পরিবারের অনুভব আমাদের মধ্যে? না, আমাদের মধ্যে গভীর প্রেম ছিলো। কারণ একাকীত্ব আর জীবনের কঠিন দুঃখ কষ্ট, কারণ আমাদের ভরসা করার মতো আর কেউ ছিলো না, তাই আমরা শুরুতেই বোকার মতো প্রেমে পড়ে ছিলাম, এটাই শেষ কথা! কিন্তু ওটা প্রেমই, এটাই সত্যি! আমি ওকে কথা দিয়ে ছিলাম যে আমি ফিরে আসবো আর ওকে বিয়ে করবো, ওকে একটা ঘর দেবো - আমি জানতাম এটা হবেই, আমার যাওয়াই উচিৎ হয় নি প্রথমত, ওর পাশে আমি থাকলে, ও কখনো এরকম নির্বোধের মতো সিদ্ধান্ত নিতো না। ও এতো সহজে নিজের জীবন দিতো না একটা মস্তিষ্কহীন মেয়েমানুষকে বাঁচাতে। আর সে মেয়ে মানুষের সাহস দেখো, সে মনে করে সে সু তিয়াঁর থেকে ঢের মানানসই বউ হতে পারে আমার!” 

শিন ছি চেঁচিয়ে উঠলো, “তুই মোটেও মানানসই নস, মিন হুয়ে! তুই শুধু আমার বাচ্চার জন্ম দিয়েছিস, আমাকে বাধ্য করেছিস কোনো উপায় না রেখে তোর সাথে ভালো ব্যবহার করার জন্য, কারণ তুই আমার ছেলের মা। আমার ছেলেকে আদর দিতে হলে, আমার কোনো উপায় নেই তোকে পছন্দ করা ছাড়া, ওকে নিরাপত্তা দিতে হলে, আমার উপায় নেই তোকে নিরাপদ না রেখে। কিন্তু আমাদের মধ্যে কিচ্ছু নেই। কিচ্ছু না। একদম কিচ্ছু না!”

তার মানে এই সব কিছু শুধু ওর ছেলেকে খুশি করতে। মিন হুয়ের হৃদপিন্ড আবার হিমশীতল হয়ে গেলো। ওর মুখ ফ্যাকাসে হয়ে গেলো, ওর মুখের সমস্ত রক্ত উঠে গেলো ওর মাথার ওপরে। ও ভাবলো, ভাবার পরে ওর মুখে একটা নীরব হাসি খেলে গেলো, আর ও নরম সুরে বললো, “ঠিক বলেছিস। খানিক রসবোধ থাকতে থাকতে আমার চলে যাওয়া উচিৎ। কাল সকাল আটটা নাগাদ আমার ঘরে বাচ্চাটাকে পাঠিয়ে দিস। ওয়া আ’ন।”

ও ওর হাতব্যাগটা তুলে নিলো, কোটটা পরে নিলো, দমকা হাওয়ার মতো বেরিয়ে গেলো।

শিন ছি ওকে আটকালো না, বিদায় তো বললোই না।

***

মিন হুয়ে ছেলেকে নিয়ে বিনচেং-এ ফিরে এলো। বা’অ্যান অধিগ্রহণের কাজ চলতে লাগলো পুরো দমে। 

প্রথম দফার নিলামে পাঁচটা কোম্পানি এলো বা’অ্যানে তাদের উৎসাহ দেখাতে আর তাদের প্রাথমিক দরপত্র য়ুঁআ লাই-তে জমা করার জন্য। 

এর মধ্যে তিনটে খুবই ক্ষমতাশালী - গুয়ান ছাও ইন্টান্যাশনাল, দং লি গ্রুপ, শেন ল্যান টেকনোলজি। 

বা’অ্যানে হে হাই শিয়াং একটা কনফারেন্স রুম খালি করে রেফারেন্স রুম করে দিলো। তাতে রইলো সব গুরুত্বপূর্ণ নথি, যার মধ্যে অনেকগুলো ব্যবসার গোপণ তথ্যও বটে, লেনদেনের গোপণ তথ্যও বটে, কোম্পানির অংশীদারীর এমন সব তথ্য যা থেকে কোম্পানির বিপদ হতে পারে, আর কিছু বিশেষ কাগজপত্র আর ফর্দ যেগুলো কোম্পানির ক্রেতাদের দরকার হতে পারে।

সাও মু আর মিন হুয়ের কাজ ছিলো প্রত্যেক ক্রেতাকে অভ্যর্থনা করা, কর্মীদের নানান দলের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়া, মিটিং-এর ব্যবস্থা করা, তাঁদের নানান রিপোর্ট দেওয়া, আর ওঁদের লিখিত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া।

একের পর এক রাউন্ড, দিন থেকে রাত, সারাক্ষণ ব্যস্ত।

তার সঙ্গে মিন হুয়ের দায়িত্ব ছিলো আর অ্যান্ড ডি টিমের উন্নতি করা। 

যদিও রোজকার কাজ কোড লেখার মতো খুব ক্লান্তিকর ছিলো না, শারীরিকভাবে কাজটা একেবারে ধসিয়ে দেবার মতো ছিলো।

একই সঙ্গে, ম্যানেজমেন্ট টিমের ডেডলাইনের শেষ দিনে মুখ লাল করে হে হাই শিয়াং বললো, “আমি দশ লাখ য়ুঁআ পেয়েছি, খানিক ধার করেছি, বাকিটা ব্যাঙ্ক লোন। এটুকুই আমি পারব। বাকি চোদ্দো লাখের জন্য আমি তোমাদের ওপরেই ভরসা করছি। আমি বউকে জপিয়ে ফেলেছি। খুব শিগগির হয়তো আমি তোমাদের ভাগ ফিরিয়ে দিতে পারবো বলে মন হচ্ছে।”

চোদ্দো লাখ, চার জনের মধ্যে ভাগ করলে, মাথা পিছু ভাগ দাঁড়ায় সাড়ে তিন লাখ। সবাই বললো যে এতো টাকা বার করে আনা সম্ভব নয়। হে হাই শিয়াং বললো, “আমি এইটুকুই পারবো, আমার অংশীদারী না হয় কম হবে।”

“এটা ঠিক হলো না, হে জঁ।”

সাও মু বললো, “আজকেই সময়সীমার শেষ দিন। আপনি যদি যথেষ্ট টাকা না আনতে পারেন, তাহলে আপনি নিজেকে সরিয়ে নিন।”

“আমি কিন্তু সত্যিই আমাদের টিমের ব্যাপারে খুব আশাবাদী। আমি একা বা’অ্যান বানিয়েছি। আর ওটা আজকের যে চেহারা নিয়েছে সেটা আমার শক্তিকেই প্রকাশ করে। আমি ভবিষ্যতে বা’অ্যানের জন্য কী করতে পারি, সে কথা মাথায় রেখে, আমি আশা করবো যে তোমরা সাবধানে যত্ন করে আমার প্রস্তাবটা ভেবে দেখবে।”

হে হাই শিয়াং লড়াই করে গেলো লাল মুখে, এমন কি গলায় তার মিনতিও জেগে উঠলো যেনো। 

“হে জঁ, আপনাকে খুব দুঃখ পেতে হবে না।” শু গুয়াং জিয়াঁ বললো, “এবারে গুয়ান ছাও আর দং লি জোর টক্কর লাগিয়েছে। ওদের ক্ষমতা আমাদের থেকে অনেক বেশি। ওদের জেতার সম্ভাবনাও বেশি। যদি আমাদের টিম শেষ পর্যন্ত টিকেও যায়, তবুও অংশীদারীর খেলার ভাগ্য পেরিয়ে যাওয়া কঠিন।”

যদিও শব্দগুলোতে স্বান্তনাই বেশি ছিলো তাও বিধ্বস্ত মুখে হে হাই শিয়াং বললো, “ওকে, আমি ছেড়ে দিলাম।”

সবাই স্বস্তির শ্বাস ফেললো। 

“যাই হোক, বা’অ্যানের বর্তমান জেনারেল ম্যানেজার হিসেবে, আমি তোমাদের সতর্ক করে দিচ্ছি যে তোমরা সবাই কোম্পানির কর্তৃবর্গ। অধিগ্রহণের সময়ে কোম্পানির সমস্ত কাজ স্বাভাবিকভাবেই চলবে। তোমাদের প্রত্যেকের হাতেই অনেক কাজ আছে। এমবিও ব্যাক্তিগত ব্যাপার। কাজের সময় ব্যবহার কোরো না।”

“নিশ্চয়ই” জানালো সবাই।

হে হাই শিয়াংকে রেগে চলে যেতে দেখে, মিন হুয়ে জানতে চাইলো, “ওঁর জায়গায় কে আসবে?” 

“মা শিন।”

জানালো সাও মু, “আমি ওর সাথে যোগাযোগ করতে শুরু করি এআইম্যাক্সের সময় থেকেই। ওর এক শুশুর কয়লাখনির ব্যবসা, ওকে টাকা ধার দিতে পারবেন। কয়লা খনির মালিকের কাছে চব্বিশ লাখ কোনো ব্যাপারই নয়।”

মা শিন হলেন বা’অ্যানের এইচআর ডিরেক্টর। ওঁর সাথে হে হাই শিয়াং-এর সম্পর্ক খুব ভালো, খুব নিকট। মনে করা হয় যে ও হে হাই শিয়াং-এর সরাসরি অনুসারী। কিন্তু ও বেশ উচ্চাকাঙ্খী। তাই বলা যায় না যে ও খুব বিশ্বস্ত থাকতে পারবে শেষ পর্যন্ত।

“আমি একটু চিন্তিত।” মিন হুয়ে হাত তুলে বললো, “চেং ছিরাং আমাকে দু-দুবার হুমকি দিয়েছে যে গুয়ান ছাও ইন্টারন্যাশন্যাল বদ্ধপরিকর বা’অ্যানকে অধিগ্রহণ করবে বলে। তোমাদের কী মনে হয় তেরো কোটি কুড়ি লাখ য়ুঁআর প্রস্তাবটা যথেষ্ট?”

“যথেষ্ট” নিশ্চিত করলো ইয়ান চেং লি, “এএআর আমাদের আনুমানিক দর দিয়েছে নব্বই লাখের।”

“নব্বই লাখ? এটা একটু বেশি রক্ষণশীল অনুমান হয়ে গেলো না?” প্রশ্ন করলো শু গুয়াং জিয়াঁ।

“চেং ছিরাং বাস্তববাদী হতে বলেছে। ও তো আর বেপরোয়াভাবে খরচ করবে না যাতে লোকে ওর থেকে সুবিধে নিতে পারে। তোমাকে ভয় দেখিয়েছে যাতে আমরা পিছিয়ে যাই।”

বললো সাও মু, “তাও সাবধান হবার খাতিরে আমরা দরটা একটু বাড়িয়ে দিতে পারি।”

“কতো বলছো তুমি?”

“ষোলোকোটি কুড়ি লাখ। যাতে জেতার সম্ভাবনা বাড়ে।”

“আরো তিন কোটি, কার থেকে পাওয়া যাবে ভাবছো?" জানতে চাইলো ইয়ান চেং লি।

“সবার আগে বিবিজির শিন ছিকে দিয়ে শুরু করা যাক।” বললো সাও মু, “উনি মিন হুয়ের রিপোর্ট শুনেছেন, উৎসাহও দেখিয়েছেন। হাতে প্রচুর টাকাও আছে। মিন হুয়ে তুমি ওঁকে ফোন করো না কেনো?”

মিন হুয়ে অপ্রস্তুত হলো, কাঁধ ঝাঁকালো, বললো, “সাও জিয়ে, আমরা তো ওকে বাতিল করে দিয়েছি আগেই, আবার কী করে ওঁর কাছে যাই?”

“উনি ব্যবসাদার। উনি এসব নিয়ে মাথা ঘামান না।”

“কিন্তু -”

“তুমি আগে চেষ্টা তো করো। যদি কাজ না হয় তবে আমি ফেংলিঁ ক্যাপিটালের শাই শংসাইকে বলবো যদি উনি আরেকটু বাড়াতে পারেন লগ্নি।”

“আমি …” মিন হুয়ে মাথা নিচু করলো, “ওকে।”

বেজিং থেকে ফেরা ইস্তক মিন হুয়ে আর শিন ছির ঠান্ডা লড়াই চলছে। ফোন কল নেই, উইচ্যাট নেই, ভিডিও কল নেই। মিন হুয়ে খুব চেষ্টা করে সু ছনকে নিয়ে একলা বাড়ির বাইরে সময় কাটাতে। এমনকি ঘুমোতে যাবার সময়ে মিন হুয়ে নিজের শোবার ঘরে সু ছনকে ঘুম পাড়ায় আগে, তারপরে ওকে শুইয়ে দিয়ে আসে ওর নিজের বিছানায়, যে ঘরে ক্যামেরা লাগানো আছে যাতে শিন ছির সাথে ‘এয়ার চ্যাটিং’ এড়িয়ে যাওয়া যায়।

ক্রমশ মিন হুয়ে টের পেতে লাগলো যে ওর দুশ্চিন্তার কোনো কারণ নেই। ক্যামেরার অন্য প্রান্ত থেকে শিন ছির গলার স্বর আর কোনোদিন শোনা যায় নি।

দু সপ্তাহ এভাবে কেটে যাবার পরে, ইয়ুন লুর সাথে কথা বলতে বলতে জানতে পারলো যে বিবিজির এসিয়া-প্যাসিফিক শাখা বেজিং থেকে বিনচেং-এ আসতে শুরু করেছে বেজিং-এর পাট সম্পূর্ণ উঠিয়ে দিয়ে।

“ও কোথায় থাকে?” কৌতুহলে প্রশ্ন করলো মিন হুয়ে।

“পার্ক হায়াত হোটেল।” ইয়ুন লু বললো, “কদিন আগেই তো অনেক কিছু ঘটেছে। ওকে তো প্রায়ই বেজিং আর বিনচেং-এর মধ্যে যাতায়াত করতে হয়। কদিন আগে ও সিঙ্গাপুরে গিয়ে ছিলো, তারপরে নিউ ইয়র্ক।”

“হ্যাঁ।”

“ইথান খুবই মিস করে ছন ছনকে। দিনের মধ্যে প্রায়ই ও ছন ছনকে ভিডিও কল করে। ব্যাপারপটা হলো যে হালে কাজ নিয়ে ও খুবই ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। ফলে নিজে এসে যে ছন ছনের সাথে দেখা করবে সেটা আর হয়ে উঠছে না। ”

তার মানে শিন ছি-ও চেষ্টা করছে যতোটা সম্ভব ততোটা মিন হুয়েকে এড়িয়ে যাবার …

পরের দিন ভোরে মিন হুয়ে ফোন করলো শিন ছিকে, তিনটে কলের পরে একটা ঠান্ডা স্বর এলো, “‘হ্যালো।’ 

“শিন ছি, আমি মিন হুয়ে।”

“ওয়ে।”

“আমি ইয়ুন লুর থেকে শুনলাম তুই বিনচেং-এ এসেছিস।”

“দোয়ে।”

“তুই যে কোনো সময়, সু ছনের সঙ্গে দেখা করতে পারিস।”

“শি দে।”

“আমি তোকে ফোন করেছি বা’অ্যানের ব্যাপারে।”

“শুও।”

“সাও জিয়ে আমাকে বলেছেন তোকে জিজ্ঞেস করার জন্য, তুই কী আমাদের বা’অ্যানের এমবিওতে তিন কোটি দিতে চাস? আমরা খুব শিগগির প্রস্তাব দাখিল করবো। প্রতিযোগিতাও খুব মারমার কাটকাট। আমাদের চিন্তা এই যে আমাদের দরটা যথেষ্ট বেশি নয়।”

“মিন হুয়ে, আমি কী বলে ছিলাম যখন আমি সাও জঁ-এর সাথে দেখা করে ছিলাম এর আগে, তুই কী ভুলে গেছিস?”

শান্তভাবে প্রশ্ন করলো শিন ছি।

“আমার স্মৃতি ভালো নয়, কী বলেছিলি আমাকে আবার বলবি?”

“আমি তোদের আমার চূড়ান্ত প্রস্তাব দিয়ে দিয়েছি। আর আমি বলে ছিলাম যে ঐ প্রস্তাবটা না নিলে, আমি আর কখনো ভবিষ্যতে ঐ বিষয়ে ভাববো না।”

“ব্যবসাটা তো ভালো। তুই আরেকবার ভেবে দেখবি না কেনো?”

“কারণ আমি যা বলি তাই করি।”

“আমি জানতে চাইছি যদি তোর উৎসাহ থাকে। কঠিন কথা বলার দরকার নেই। তোরই অনুশোচনা হবে যে তুই এটাতে টাকা লাগালি না।”

“আমি অনুতাপ করি না এই সিদ্ধান্ত নিয়ে। ঝাইজিয়াঁ।”

মিন হুয়ে রেগে গালি দিয়ে উঠলো, মাইক্রোফোনের কথা খেয়াল না করেই, “Fuক”।

“অ্যাই, আমি এখনো ফোনটা রাখি নি।” ফোনের অন্য প্রান্ত থেকে হিমশীতল গলায় বললো শিন ছি।

“আমি ছন ছনকে ইংরেজি শেখাচ্ছি। ও জানতে চাইছে কী করে ‘ফর্ক’ বলতে হয়। আমি বলেছি ‘এফ ও আর ক’।”

“দয়া করে আমার ছেলেকে নোংরা ভাষা শেখাস না। ওর নিজের ইংরেজি শেখার জন্য লাওশি আছে, শিয়া শিয়া।”




~~~~~~~~~~~~

সম্পূর্ণ বই বিনামূল্যে : https://dl.bookfunnel.com/lcj5vznt96

Link to Previous Post in the Series : https://projectionofnaught.blogspot.com/2024/09/jpda-chapter-50.html

Link to following Post in the Series : https://projectionofnaught.blogspot.com/2024/09/jpda-chapter-52.html

No comments:

Post a Comment

Readers Loved