৫২. কে ও
হে হাই শিয়াং ম্যানেজমেন্ট টিম থেকে বেরিয়ে যাবার পরে, তার জায়গা নিলো মা শিন, বা’অ্যানের হিউম্যান রিসোর্স ডিরেক্টর। খবরটা হে হাই শিয়াং-এর কানে পৌঁছোলো। তাঁর দৃঢ় বিশ্বাস জন্মাল যে সাও মু আগে থেকেই জোগাড় করে রেখে ছিলো যে কে হে হাই শিয়াং-এর জায়গা নেবে আর তাই ওঁকে তড়িঘড়ি ম্যানেজমেন্ট টিম থেকে বের করে দিলো। উনি মা শিনকে নিজের অফিসে ডেকে খুব ধমক দিলেন। ম্যানেজমেন্ট টিমের পাঁচজন সদস্যকে বিশ্বাসঘাতক বলে ধরা হয়। তাদের হাজিরা খুব কড়া হাতে নজর করা হয়। তাদের কোনো ছুটি দেওয়া হয় না আর তাদের কাজ যেনো সব সময়ে গোছানো আছে।
এএআর, লেনদেনের তদ্বির করার জন্য সাও মু যে কোম্পানিটাকে রেখেছে, তারা পুরো দমে কাজ শুরু করে দিয়েছে। এমবিও নিলামে অংশ নেবার জন্য সব কাগজ তৈরি করতে লেগেছে। সময়সীমা এগিয়ে আসছে দেখে সবাই তর্ক জুড়েছে যে প্রথম দফার প্রস্তাবে কতো মূল্য বলা উচিৎ।
ইয়ান চেং লি, শু গুয়াং জিয়াঁ আর মা শিনের মতে তেরো কোটি কুড়ি লক্ষ যথেষ্ট বেশির দিকে, ওটাকে বাড়ানোর কোনো দরকার নেই।
সাও মু আর মিন হুয়ে সামান্য দুশ্চিন্তায়। কিন্তু ওদেরও বিশ্বাস যে দরটা প্রথম দফার ঝাড়াই বাছাই উতরে যাবে নিরাপদে।
“বিবিজি তিন কোটি দেবে না।” মিন হুয়ে জানালো মিটিং-এ, “আমি শিন ছি-কে ফোন করে ছিলাম, কিন্তু ও জানিয়ে দিয়েছে যে ও দেবে না।”
“আলোচনার কোনো জায়গা আছে?" জানতে চাইলো সাও মু।
“একেবারেই না।”
“ফেংলিঁ ক্যাপিটালের কী খবর? শি আঁপেই-এর সাথে তোমার কথাবার্তা কেমন এগোচ্ছে?" জানতে চাইলো ইয়ান চেং লি।
“আমি তিনটে ব্যাক্তিগত মালিকানার ইক্যুইটি কোম্পানির সঙ্গে কথা বলেছি। সবাই দর বাড়ানোর ব্যাপারে আপত্তি করেছে। অনেক সময় ধরে আলোচনার পরে ওঁরা জানিয়েছেন যে যদি তিন কোটি বাড়ে তবে ওঁদের প্রত্যেকে এক কোটি করে দেবেন। কিন্তু আমাদের টিমের অংশীদারী কমে আটাশ শতাংশ থেকে কুড়ি শতাংশ হয়ে যাবে।" বললো সাও মু।
“কী? এক ধাক্কায় আট শতাংশ পড়ে যাবে?” শু গুয়াং জিয়াঁ চলকে উঠলো, “এটা খুবই বড়ো বঞ্চনা। আমি রাজি নই।”
“আমিও রাজি নই।" সহমত হলো মা শিন।
“ওঁরাও ওঁদের দিকটা দেখছেন। এতে তো ভুল কিছু নেই।” ইয়ান চেং লি দীর্ঘশ্বাস ফেললো, “আমারও আপত্তি আছে। তবে আমি বুঝতে পারছি। যাই হোক, তুমি বেশি টাকা লাগালে, ঝুঁকিও নিচ্ছো বেশি। সাও জঁ, কথা বলে দেখবেন ছাব্বিশ শতাংশ করা যায় কিনা?”
“আমি চেষ্টা করেছি। আর করতে চাই না।”
“তাহলে তোমাদের কী মনে হয় - চেং ছিরাং কতো দর হাঁকবে?” মিন হুয়ে জানতে চাইলো, “যদি ও জিততে চায় তো?”
“তেরো কোটি কুড়ি লাখ খুবই প্রতিযোগিতার উপযোগী দর। চেং ছিরাং অতো বেশি দর দেবে বলে মনে হয় না। এএআর পরামর্শ দিয়েছে যে প্রথম দফাতেই অতো বেশি দর না হাঁকতে। যাই হোক, এটা কেবল মাত্র ইচ্ছেটা জানানোর জন্য। দ্বিতীয় দফায় আমরা দরটা বাড়িয়ে দেবো, বিপক্ষের অবস্থা দেখে।”
ইয়ান চেং লি বললো, “এএআর চাইছে যে যতো শিগগির সম্ভব আমরা দরটা স্থির করে ফেলি। ওদের কাগজপত্র তৈরি। কালই ডেডলাইন।”
“একটা সম্ভাবনা থেকেই যাবে শেষ মূহুর্তে বিনিয়োগ তুলে নেবার। আর লোকে ভাববে যে আমরা ভরসার যোগ্য নই। আমরা হয়তো প্রথম দফাতে বাদ হয়ে যাবো।”। মা শিন বললো।
“হেডকোয়ার্টার্স শুরুতে কেবল দরটাই দেখবে। জিততে গেলে আমার মনে হয় আরো তিন কোটির ব্যবস্থা রাখা উচিৎ আমাদের, কুড়ি শতাংশ তো কুড়ি শতাংশই, তাতে সবার হাতে চার শতাংশ করে থেকেই যাবে। আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাবো হাঁড়িটা বড়ো করতে। চার শতাংশও অনেকটা অংশীদারী।” বললো সাও মু।
“আমি সাও জিয়ের সঙ্গে একমত।” মিন হুয়ে ঘাড় নাড়লো, “আমরা এতো পরিশ্রম করেছি,সেটা কী বা’অ্যান পাবার জন্য নয়? যদি নিলামে ব্যর্থ হই তিন কোটি য়ুঁআর অভাবে, যেখানে তিন কোটি দিতে রাজি আছে প্রাইভেট ইক্যুইটির লোকেরা, তাহলে আমি কিন্তু আপশোষই করবো, যখন বা’অ্যান অন্য কেউ কিনে নেবে।”
পাঁচ জনে একঘন্টা ধরে তর্ক করলো। কিন্তু কেউই নিজের অবস্থান বদলালো না। শেষে ৩-২ ভোটে সিদ্ধান্ত হলো যে প্রথম দফাতেই তেরো কোটি দর হেঁকে দেওয়া হবে।
পরদিন সকাল দশটায়, এএআর ম্যানেজমেন্ট টিমের হয়ে, একটা প্রস্তাব জমা দিলো নিয়ম মেনে, সঙ্গে সমস্ত জরুরী নথি যাতে য়ুঁআ লাই-এর নিলামে অংশ নেওয়া যায়।
দুপুরে সাও মু আর মিন হুয়ের একটা নিয়মিত মিটিং ছিলো হেডকোয়ার্টার্সে।
মিটিং-এর পরে সাও মু কাফের দিকে হেঁটে যাওয়া একজন বেঁটেখাটো লোককে দেখিয়ে বললো, “উনিই সাই বিঁ জিয়ে। ওঁর ওপরেই য়ুঁআলাই জিতুয়াঁ ভরসা করছে। উনি এম অ্যান্ড এ ডিপার্টমেন্টের জেনারেল ম্যানেজার। উনিই বা’অ্যানের অ্যাকুইজিসনের ব্যাপারটা দেখছেন। চলো, ওঁর সাথে কথা বলি। ওঁর মর্জি বোঝা যাবে খানিক?”
আধকাপ করে কফি শেষ হয়ে হয়ে গেলো কুশল আলাপে। তারপরে আসল কথাটা পাড়া গেলো।
“আমরা পেয়ে গেছি আপনাদের প্রস্তাব। আমরা সব নথিও পড়ে দেখেছি। বিজনেস প্ল্যানটা খুবই আকর্ষণীয়। দরটাও খুবই আন্তরিক। আমি খুব খুশি হয়েছি যে আপনারা নিলামে অংশ নিয়েছেন। আমরা খুব গুরুত্বের সঙ্গে আপনাদের প্রস্তাব বিবেচনা করবো।” নিতান্ত কেজো ব্যবসায়িক ভঙ্গীতে বললেন সাই বিঁ জিয়ে।
“সাই জঁ, সব মিলিয়ে কতোগুলো কোম্পানি অংশ নিয়েছে?” সাও মু জানতে চাইলো, “আপনি যদি জানান আমাদের তবে আমাদের কাছে ব্যাপারটা স্পষ্ট হয়। লগ্নির পুঁজি জড়ো করতে গিয়ে সবাই পারিবারিক সঞ্চয় খালি করে ফেলেছে।”
“হা হা হা, অসম্ভব। আপনি তো কোম্পানির ভাইস প্রেসিডেন্ট, আপনার বেতনও কম নয়। ছোটো বড়ো কিছু কোম্পানি অংশ নিচ্ছে অধিগ্রহণে। সব প্রস্তাব বিবেচনা করে আমরা ডাকব কয়েকজন ক্রেতাকে পরের ধাপের নিলামীতে। আপনারা এখন উঠে পড়ে লাগতে পারেন। আমি আপনাদের হে শংসাইকে বলবো আপনাদের সঙ্গে সাধ্যমতো, সুবিধে মতো যতোটা সম্ভব সহায়তা করতে।”
“আপনার কী মনে হয় যে আমাদের আশা আছে পরের ধাপে পৌঁছোনোর?” মিন হুয়ে প্রশ্ন করলো।
“হ্যাঁ।” জোর দিয়ে ঘাড় নেড়ে ইতিবাচক ইঙ্গিত করলেন সাই বিঁ জিয়ে, “আমরা তো অবাকই হয়েছি যে ম্যানেজমেন্ট টিম অধিগ্রহণের প্রস্তাব দিয়েছে। আপনাদের পুঁজি জোগাড় করতে তো কোনো বেগই পেতে হয় নি প্রায়। এতে প্রমান হয়ে যায় যে পুঁজির বাজার আপনাদের ওপর সম্পূর্ণ আস্থা রাখে। আসলে হেডকোয়ার্টার্স খুব অনিচ্ছের সঙ্গে বা’অ্যানকে বেচে দিচ্ছে, নেহাৎ অন্য কোনো উপায় নেই তাই। যেমন, বা’অ্যান তৈরি করেছেন আপনারা, এটা শেষে আপনাদের হাতেই তুলে দেওয়া যেতে পারে। এতে হেডকোয়ার্টার্সও কৃতজ্ঞ বোধ করবে। যার অর্থ হলো যে আমরা কেউই অপরের পতনের কারণ নই।”
সাই বিঁ জিয়ে পদামর্যাদায় নেহাৎ খাটো নন। মিন হুয়ে আর সাও মু দুজনেই উদ্দীপিত হয়ে উঠলো এ সব শুনে। এমন হাসতে লাগলো, যেনো ওদের শরীরে মুর্গির রক্ত পুরে দেওয়া হয়েছে।
“তাহলে আমাদের দরটা বেশ উঁচু বলেই ধরা হচ্ছে?” মিন হুয়ে জানতে চাইলো, “তাই কী? পরের ধাপের জন্য তৈরি হতে হবে। যাই হোক, আমরা একটাই পরিবার।”
“আপনাদের দরটাই সব থেকে উঁচু এমন নয়, অবশ্যই এই দরটা তো শুধু উৎসাহ দেখাতে।" হালকা সুরে বললেন সাই বিঁ জিয়ে, “কাগজপত্র সব খুঁটিয়ে দেখার পরে, আমার মনে হয় যে আপনারা দরটা আরো বাড়িয়ে দেবেন। না হলে, … বলা মুস্কিল।”
আরো বেশি প্রশ্নের মুখোমুখি হবার আশঙ্কায়, সাই বিঁ জিয়ে একটা ছুতো করে উঠে গেলেন, মিন হুয়ে আর সাও মু একে অপরের মুখের দিকে তাকিয়ে রইল।
“স্বয়ি - তেরো কোটি যথেষ্ট নয়?” মিন হুয়ে তাকিয়ে রইলো ফ্যাল ফ্যাল করে, “উনি বললেন যে উনি চাইছিলেন দরটা যদি আরো একটু বাড়ানো যেতো, কিন্তু উনি বললেন না যে উনি দরটা আরো বাড়িয়ে দেবেন। তার মানে কী আমরা সব থেকে বেশি দরের থেকে অনেক পিছনে?”
-- ওপরতলার কর্মীরা দূরত্ব রেখে চলে, আমলাদের মতো, আর ওরা সব কথা বলার সময়ে শব্দের খেলা খেলতে পছন্দ করে। মিন হুয়ে এক ঝটকায় কথাগুলোর সোজা মানে নিয়ে ভাবনায় পড়ে গেলো।
“ওঁর ও সব লোক ভোলানো কথায় কান দিও না।” বিরক্তি প্রকাশ করলো সাও মু আপত্তি জানিয়ে, “এ ধরনের লোক কেবল কথার রাজা, ও হয়তো এরকম কথা কোম্পানির সব্বাইকে বলে বেড়ায়, সকলকে তাতিয়ে দরটা আরো বাড়ানোর জন্য।”
“তাহলে আমরা কী করব?”
“মূল ছকে চলবো। উনি যেহেতু বলেছেন যে দ্বিতীয় ধাপে যাওয়া আমাদের জন্য কোনো সমস্যাই নয়, তার মানে আমাদের দর অন্যদের তুলনায় বেশির দিকেই। সাধারণ বুদ্ধিতে বলতে পারি, হেডকোয়ার্টার্স তাকেই দেবে কোম্পানি যে সব থেকে বেশি দাম দিতে তৈরি থাকবে। সাধারণত তিন থেকে পাঁচটা সম্ভাব্য ক্রেতা দ্বিতীয় পর্যায়ের বিবেচনায় যায়। আমরা আমাদের ইন্ডাস্ট্রির লোকজনকে মোটামুটি জানি। আর আমরা জানি যে কার ক্ষমতা আছে আর কার উৎসাহ আছে।”
মিন হুয়ে গুণে ফেললো মনে মনে। গোণা হলে, জানতে চাইলো, “গুয়ান ছাও, দঁ লি, শেন ল্যান, উওম্ন?”
“হ্যাঁ, এই তিনটে কোম্পানি আর আমাদের এমবিও বেশি দর হাঁকতে পারে। যখন বাকি সবাই শুনবে যে গুয়ান ছাও আর দঁ লি আছে নিলামীতে, তখন তারা নিজেরাই পিছিয়ে যাবে। কেউ ওদের সাথে টক্কর লাগাতে চায় না।”
মিন হুয়ের মনে হলো যে ওকে সাও মুয়ের ওপরে ভরসা করতেই হবে যখন কেনাবেচা দরদামের কথা আসবে। যাই হোক, সাও মু বেচাকেনার কাজটাই করে কুড়ি বছরেরও বেশি। ওঁর অভিজ্ঞতা দিয়ে উনি যা অনুমান করবেন ব্যবসার বিষয়ে সেটা মিন হুয়ের অনুমানের থেকে অনেক বেশি সঠিক হবে।
মিন হুয়ে কাউন্টারে গিয়ে দুটো ডোনাট কিনলো। ফিরে এসে ডোনাটে একটা কামড় বসাতেই সাও মুয়ের ফোন বেজে উঠলো। পর্দায় য়িন শুয়ের ছবি।
অবাক কান্ড, সাও মু ফোনটার দিকে এক পলক তাকালো, কিন্তু উত্তর দিলো না। এমন কি কলটা কেটেও দিলো।
মিন হুয়ের বুকের ভেতরে ধড়াস করে উঠলো, সব আশা যেনো নিভে গেলো।
মাসখানেকের ওপরে হয়ে গেলো মিন হুয়ে যেদিন য়িন শুয়ের অসভ্যতা দেখে ছিলো তারপর থেকে। ওর মনে হচ্ছে যে য়িন শুয়ের ইচ্ছেই নেই সত্যিটা সাও মুয়ের কাছে স্বীকার করার।
মিন হুয়ের নিজের কথা ভাবলে ও টের পায় যে ও নিজের দ্বিধা কাটিয়ে উঠতে পারে নি কিছুতেই - য়িন শুয়ের অসভ্যতার কথা ও জানাতে চায় সাও মুকে কিন্তু ও সুযোগও পায় নি বলার আবার মনস্থিরও করে উঠতে পারে নি।
“য়িন শু গ্য কী তোমাকে ফোন করলো এক্ষুণি?” সাবধানে প্রশ্নটা করলো মিন হুয়ে।
সাও মু নিজের বরফ দেওয়া কফিতে একটা গভীর চুমুক দিলো, ঘাড় নাড়লো, অনেক ক্ষণ কিচ্ছু বললো না।
“সাও জিয়ে, আমি তোমাকে সব সময়ে একটা কথা বলব ভাবি -”
“আমি জানি সে কথা।” ঠোঁট শক্ত করে কামড়ে ধরলো সাও মু, জোরে দীর্ঘশ্বাস ফেললো, “য়িন শু আমাকে বলেছে।”
“কখন হুহ্?”
“গত সপ্তাহে।”
যে কোনো কারণেই হোক, এটা স্পষ্টতই মিন হুয়ের দোষ নয়। কিন্তু মিন হুয়ে খুব অস্বস্তিতে পড়লো। এক মূহুর্তের জন্য ওর মনে হলো যে কী বলা ঠিক হবে সেটা ও জানে না, সেই জন্য কাঁপতে কাঁপতে মিন হুয়ে তাকালো সাও মুয়ের দিকে, “সাও জিয়ে, পুরো ব্যাপারটাই আমিই দোষী। আমিই পুরোপুরি না পরীক্ষা করে, অচেনা আধচেনা য়ে শও ঝেনের মতো মানুষের সঙ্গে তোমাদের আলাপ করিয়েছি। য়িন শু আসলে অনুতপ্ত। উনি তোমাকে সত্যিই ভালো বাসেন। উনি সত্যিই পরিবারের প্রতি যত্নবান … তোমরা কিছু কথা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে নিলে …”
“মাছি কামড়ালেই ডিম ছেড়ে যায়।”
সাও মুয়ের গলার স্বর ঠান্ডা, “এটা বিশ্বাসঘাতকতা। আমার জন্য আর বোঝাপড়ার কোনো জায়গা নেই আর।”
“কিন্তু -”
“আমাদের ডিভোর্স হয়ে গেছে। কাল আমরা সার্টিফিকেটও পেয়ে গেছি।”
এতো তাড়াতাড়ি! সাও মুয়ের কথা শুনে, আচরণ দেখে কিছুই বোঝা যায় নি। মিন হুয়ে চমকে না গিয়ে পারলো না, “বাচ্চাদের কী হবে?”
“ও বাড়িটা সম্পূর্ণ ছেড়ে দিয়ে গেছে। বাড়িটা আর বাচ্চারা সম্পূর্ণ আমার।”
“তুমি ওদের দেখাশোনা করতে পারবে?”
মিন হুয়ে জানতে চাইলো, “তুমি এখন কোম্পানি বেচাকেনায় ব্যস্ত, একটা ন্যানি খুঁজে নিচ্ছো না কেনো? আমি খুঁজে দিতে পারি।”
কথাগুলো মুখ থেকে বেরোনো মাত্র ওর মনে পড়ে গেলো য়ে শও ঝেনই সেই টিউটর যাকে ও খুঁজে দিয়ে ছিলো। যদি ওর খুঁজে দেওয়া বাচ্চা দেখাশোনার লোকও ভরসার অযোগ্য হয়? ও তাড়াহুড়ো করে বললো, “ভুলে যাও ও কথা। বরং তুমি নিজেই খুঁজে নিও।”
“বাচ্চারা থাকবে আমার সঙ্গে। কিন্তু ও রোজ আসবে বাচ্চাদের জন্য রান্না করে দেবে বলে, বাচ্চাদের স্কুলেও নিয়ে যাবে। ও সব কিছুর খেয়াল রাখবে।”
সাও মু ডোনাটে একটা নৃশংস কামড় বসালো, বাঁকা হাসি মুখে বললো, “আমি সব সময়ে ভেবেছি যে মানুষকে যে চোখে বিচার করি, সে চোখটা আমার ভালো, কিন্তু এটা আমার চোখ এড়িয়ে যাবে ভাবি নি।”
“ও তো একবার মাত্র ভুল করেছে। য়িন শু গ্য একটু বেশিই বাড়াবাড়ি করে ফেলছে। কিন্তু ব্যাপারটা কী এতো গুরুতর যে ডিভোর্স করে ফেলতে হবে, তাই না? তোমরা তো দশ বছরেরও বেশি সময় একসাথে আছো, ওকে একটা সুযোগ দেওয়া যায় না?”
“না। এ ধরনের ব্যাপার আমি একদম সহ্য করবো না।”
এটা বলার পরে মিন হুয়ে বুঝতে পারলো সাও মুয়ের মুখটা যেনো পানসে মতো, চোখদুট যেনো ফোলা ফোলা। মিন হুয়ে কেবল ভেবেছে যে সাও মু বোধ হয় ব্যবসা, বেচাকেনা এসব নিয়ে ক্লান্ত। কিন্তু মিন হুয়ে ভাবতেই পারে নি যে এতো বড়ো একটা ঘটনা ঘটে গেছে বাড়িতে।
“চলো।” মিন হুয়ে সাও মুয়ের হাত ধরে টান দিলো, “কোথাও একটা যাই মদ খেতে। আমি তোমাকে খাওয়াবো আজ।”
***
কথা ছিলো যে ইয়ুন লু নিয়ে যাবে সু ছনকে সিনেমাতে অ্যানিমে দেখাতে। আর মিন হুয়ে তখন রাস্তায় একটা বারের খোঁজে। সাও মুয়ের সঙ্গে খেয়ে গল্প করে রাত আটটার পরে ও অ্যাপার্টমেন্টে ফিরলো।
এলিভেটর থেকে বেরিয়েই দেখলো যে একটা লোক আধশোয়া হয়ে গুটলি পাকিয়ে বসে আছে দরজার সামনেটাতে। কাদার মতো মাতাল। বুকের কাছে জামার ওপরে স্পষ্ট বমির দাগ। পায়ের শব্দ পেয়ে, দেওয়াল আঁকড়ে লোকটা কোনো মতে উঠে দাঁড়ালো।
“য়িন শু গ্য?”
মিন হুয়ে অবাক। য়িন শুয়ের গা থেকে মদের গন্ধ বেরোচ্ছে আর ও কাঁপছে থরথর করে। ব্যাপার দেখে মিন হুয়ে ঠেকনা দিলো য়িন শুকে। কাছে যেতেই ওর গা থেকে মদের আর বমির গন্ধ পেলো এতো যে মিন হুয়ে নিঃশ্বাস বন্ধ করে রইলো, “তুমি এখানে কেনো?”
“সাও মু কোথায়? ও কী তোমার বাড়িতে আছে? … আমি ওর সাথে কথা বলতে চাই।”
ওর জিভ এলোমেলো চলছে, কথা জড়ানো, চোখের পাতা বুজে আসছে, ও যেনো আধো ঘুমন্ত।
এই অবস্থায় ও অনেক কথা বলে গেলো, যার একটাও শব্দ মিন হুয়ে উদ্ধার করতে পারলো না।
“সাও জিয়ে আমার সাথে বারবিকিউ স্কিউয়ার খেতে গিয়ে ছিলো। এতো ক্ষণে বাড়ি পৌঁছে গেছে।”
বারবিকিউ স্কিউয়ার |
মিন হুয়ে চাবি বার করে দরজা খুলতে গেলো, “ভেতরে এসো। আগে এক কাপ চা খাও, খোয়ারি কেটে যাবে। আমি একটা ক্যাবও ডেকে দেবো, বাড়ি যাবে।”
“বাড়ি - কোথায় আমার বাড়ি? এমন কী সাও মুও আর আমাকে চায় না … আমি ফিরে যেতে পারবো না, যদি আমার একটা বাড়ি থাকেও …”
ছ ফুট দু ইঞ্চি লম্বা লোকটা মিন হুয়ের সামনে মুখে ঢাকা দিলো, আর কাঁদতে শুরু করলো।
কান্নার মধ্যিখানে হঠাৎ একটা “ওয়াক” শোনা গেলো মিন হুয়ের মাথার ওপরে। খানিক কিসে যেনো, বোঝা গেলো খাবারে, মিন হুয়ের মাথা আর মুখ ঢেকে গেলো।
মিন হুয়ের চীৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছে করছিলো। কিন্তু উপায় ছিলো না য়িন শুকে ঘরের ভেতরে নিয়ে গিয়ে সাহায্য করা ছাড়া। প্রথমে নিজের কোট খুলে রাখলো। তারপর য়িন শুকে সাহায্য করলো গায়ের জামাখানা ছেড়ে ফেলতে। ভিজে তোয়ালে দিয়ে ওর মুখ মুছিয়ে দিলো। ও এতো মাতাল যে সোজা হয়ে দাঁড়াতেও পারছে না দেখে, ও তাড়াহুড়ো করে য়িন শুকে নিয়ে গেলো সু ছনের ঘরে আর বললো য়িন শুকে শুয়ে পড়তে, “বিশ্রাম করো খানিক। আমি তোমাকে একটা কড়া চা বানিয়ে দিচ্ছি।”
মিন হুয়ে রান্নাঘরে গিয়ে এক বড়ো কাপে কড়া লাল চা বানালো। য়িন শুকে দেবার জন্য। যখন ঘরে পৌঁছোলো চা-টা দেবার জন্য তখন দেখলো যে য়িন শুয়ের চোখ বন্ধ আর ও গভীর ঘুমে তলিয়ে গেছে।
অনেক ঠেলা দিয়েও য়িন শুকে জাগাতে পারলো না মিন হুয়ে। আর ঠেলা দেওয়া বৃথা দেখে মিন হুয়ে ফোন করলো সাও মুকে। কিন্তু কোনো উত্তর পাওয়া গেলো না। তাই ও একটা উইচ্যাট মেসেজ করে রাখলো। মিন হুয়ে ভেবে চলেছে যে কী করা যায়, ও টের পেলো যে য়িন শুয়ের বমি লেগে ওর চুল থেকে টকটক গন্ধ উঠছে।
ওর তখনই চানে যেতে ইচ্ছে করছিলো কিন্ত ওর কেবল ভয় লাগছিলো যে য়িন শু বুঝি জেগে উঠে গন্ডগোল পাকাবে। ও সামলাতে পারবে না। সেই জন্য ও য়িন শুকে ঘরে বন্ধ করে রাখলো। আগে বাথরুমে গেলো, দুজনের নোংরা জামা ওয়াশিং মেশিনে ছুঁড়ে দিলো। তারপর খুব ভালো করে চান করে নিলো।
জল পড়ার শব্দ যেই বন্ধ হলো, দরজায় ঘন্টা বেজে উঠলো। মিন হুয়ে ভাবলো বুঝি ইয়ুন লু ফিরে এসেছে, সু ছনের সাথে সিনেমা দেখা শেষ করে, একদম ঠিক সময়ে, ও তাহলে ইয়ুন লুকে বলতে পারবে য়িন শুকে বাড়ি পৌঁছে দেবার জন্য। একটা বাথরোব জড়িয়ে ও দরজা খুলে দিলো।
দরজার বাইরে শিন ছি দাঁড়িয়ে ছিলো, ঘুমন্ত সু ছনকে কোলে নিয়ে।
মিন হুয়ের অবাক মুখ দেখে শিন ছি বুঝিয়ে বললো, “ইয়ুন লুয়ের কিছু অসুবিধে ছিলো। আমার সময় ছিলো, আমি সু ছনকে মুভি দেখতে নিয়ে গিয়ে ছিলাম।”
“ও, প্লিজ, প্লিজ, আয়।”
মিন হুয়ের মাথা থেকে, গা থেকে তখনও টপ টপ করে জল পড়ছে। ঘরের ভেতরে পা রেখে মিন হুয়ের দিকে দেখে, শিন ছি জানতে চাইলো, “মদ খেয়েছিস?”
“আমি সাও মু জিয়ের সাথে স্কিউয়ার খেতে গিয়ে ছিলাম। মদও খেয়েছি … কয়েকটা বিয়ার।”
“একটা বিয়ার দেড় লিটার। কতোটা খেয়েছিস, মাথামোটা?”
“দুটো, দু-তিনটে।”
“তোর ছেড়ে দেওয়া উচিৎ, মিন হুয়ে।”
শিন ছির গলায় বিদ্রুপ।
সত্যি বলতে কী মিন হুয়েও খুব মাতাল। ওর পা টলমল করছিলো এলিভেটরে ওঠার সময়ে। ও প্রায় ভুল তলায় উঠে যাচ্ছিলো। কিন্তু য়িন শুয়ের হাল দেখে, ভয়ে ওর নেশা কেটে গেছে।
“বাচ্চাটাকে দিয়ে দে আমাকে। তুই আয়।”
মিন হুয়ে হাত বাড়ালো, বাচ্চাটাকে নেবার জন্য, কিন্তু শিন ছি দিলো না, সোজা চলে গেলো সু ছনের ঘরে, ছেলেকে কোলে নিয়ে।
তখনই মিন হুয়ের মনে পড়ে গেলো যে ওখানে কেউ আগে থেকেই শুয়ে আছে। ও না চেঁচিয়ে থাকতে পারলো না, “শিন ছি, দাঁড়া।”
ঘুরে দাঁড়িয়ে, শিন ছিকে থামাবার জন্য দৌড়ে যেতে যেতেই শিন ছি ঘরের দরজা হাট করে খুলে ফেলেছে।
চড়া মদের গন্ধ ঝাঁপিয়ে পড়লো শিন ছির চোখেমুখে। তার সঙ্গে কানে এলো একটা পুরুষমানুষের নাক ডাকার শব্দ।
ঘরের মধ্যে একটা বড়ো বিছানা ঢাকা আছে একটা দুধসাদা চাদরে। য়িন শু চার হাত-পা বিছিয়ে ঠিক মধ্যিখানে শুয়ে আছে। ওর শরীরের নিচের অংশ ঢাকা খেলার ছোটো প্যান্টে। শরীরের ওপরের অংশ নগ্ন। টেনিস খেলোয়াড়ের ছাপ মাখা বুক ভর্তি শক্তপেশী আর সরু ঊরু দেখা যাচ্ছে।
এক মূহুর্তের জন্য শিন ছি চমকে উঠলো, ঘুরে দাঁড়ালো মিন হুয়েকে দেখার জন্য, খুব গম্ভীর গলায় জানতে চাইলো, “কে ও?”
মাতাল হয়েই ছিলো মিন হুয়ে। তাই ঠাট্টা না করে থাকতে পারলো না, চোখ মেরে বললো, “আমার মরদ।”
~~~~~~~~~~~~
সম্পূর্ণ বই বিনামূল্যে : https://dl.bookfunnel.com/lcj5vznt96
Link to Previous Post in the Series : https://projectionofnaught.blogspot.com/2024/09/jpda-chapter-51.html
Link to following Post in the Series : https://projectionofnaught.blogspot.com/2024/09/jpda-chapter-53.html
No comments:
Post a Comment