Tuesday, October 8, 2024

JPDA - Chapter 63

 ৬৩. দুঃখী বাহিনী



মিন হুয়ে বিনচেং-এ ফিরে আসার দু দিন পরে চেং ছিরাং-এর আহত হবার খবরটা সারা কোম্পানিতে ছড়িয়ে পড়লো।

গুয়ান ছাওতে দশ বছরে চেং ছিরাং কখনো অসুস্থ বলে ছুটি নেয় নি। রোজ ভোর পাঁচটায় ওঠে, দৌড়োতে যায়। আর গাড়ি চেপে কাজে যায় রোজ সকাল আটটায়।

দুর্ভাগ্যবশত, ও যে রাতে বেজিং থেকে ফিরলো, সেই রাতেই ঝেং ল্যান মারা গেলেন, অনেকগুলো মাস কোমায় থাকার পরে। 

জামাই হিসেবে এবং ঝেং ল্যানের কোম্পানির সিইও হিসেবে ওকে উপস্থিত থাকতেই হলো অন্ত্যেষ্টি ক্রিয়ায়।

একভাবে দেখলে বলা যায় যে ঝেং ল্যান ওঁর শিক্ষকও বটে, পিতাও বটে। ঝেং ল্যান কোনো খামতি রাখেন নি চেং ছিরাং-এর কাজের জীবনটা গড়ে দিতে, এমনকি নিজের একমাত্র মেয়ের সঙ্গে ওর বিয়েও দিয়েছেন, বলা যায় পাহাড় প্রমাণ ঔদার্য।

যারা চেং ছিরাং-কে বেজিং থেকে ফেরার পরে দেখেছে, তাদের বক্তব্য, চেং ছিরাং বড়ো বিশ্রীভাবে পড়েছে। ওর নাকের সন্ধিটা ভেঙে গেছে, মুখের আধখানা ফুলে আছে, একটা ইংরেজি আই অক্ষরের মতো দেখতে বিশোধক মুখোশ পরে ও উপস্থিত হয়ে ছিলো অন্ত্যেষ্টি ক্রিয়ার অনুষ্ঠানে।

যদিও মুখোশটা স্বচ্ছ বস্তুতে দিয়ে তৈরি, তবুও ওটা দেখতে লাগছিলো একটা সবুজ খাঁড়ার মতো। তার সঙ্গে একটা দাঁত ভাঙা, অমন একটা গুরু গম্ভীর অনুষ্ঠানে, বক্তৃতার শব্দগুলো ফসকে পিছলে বেরিয়ে যাচ্ছিলো, উপস্থিত সকলকে হতবাক করে।


মুখোশটা ... দেখতে লাগছিলো একটা সবুজ খাঁড়ার মতো


ও সব সময়েই নিজেকে ‘স্থিতিশীল আর স্বয়ংসম্পূর্ণ’ বলে দেখিয়ে এসেছে কাজের জগতে, আর এই প্রথম ও জনসমক্ষে এমন অপ্রস্তুত অবস্থায় উপস্থিত হলো। 

কেউ বিশ্বাস করলো না কেবল মাত্র ‘পড়ে গিয়ে’ ও এমন করে আহত হয়েছে।

বেশ কিছু দিন ধরে গুজব ছড়ালো। কর্মীরা নিজেদের কল্পনাশক্তির শেষ সীমায় পেরিয়ে নিজেদের নিজেদের সংস্করণ প্রকাশ করে চললো।

যেহেতু এক মাত্র মিন হুয়েই ওর সাথে বেজিং-এ গিয়ে ছিলো সেহেতু সহকর্মীরা সবাই দৌড়োলো মিন হুয়ের কাছে খবরটা সম্পর্কে তাদের কৌতুহল মেটাতে।

মিন হুয়ে বিভ্রান্ত হয়ে থাকার ভান করলো। কেবল চুপি চুপি সাও মুকে বললো আসলে কী হয়েছে।

“য়িন গ্য-কে অশেষ ধন্যবাদ আমাকে কয়েকটা কায়দা কসরত শেখানোর জন্য। রোজ সকালে আর বিকালে আমি প্যাঁচগুলো অভ্যেস করেছি, সেটাই কাজে দিয়েছে।”

মিন হুয়ে জোরে জোরে হো-হো করে হেসে উঠতে চাই ছিলো, কিন্তু পাছে কেউ শুনে ফেলে তাই সাবধানী নিচু স্বরে বললো, “আমি ভাবি নি চেং ছিরাং অতো অসাবধান হবে। এতো মজা পেয়েছি আমি যে আরো একশোবার অমন করে মারতে চাই ওকে।”

মিন হুয়েকে আহ্লাদে আটখানা হতে দেখে সাও মু ওকে একটা ধাক্কা দিলো, “ভেবে দেখেছো ল্বব্যাঁকে ঠেঙিয়ে থেঁতো করার পরিণাম কী হতে পারে?”

“শিন ছি বলেছে যে চেং ছিরাং কক্ষণো আমার নামে পুলিশে নালিশ করবে না। প্রথমত, ও নিজে অপরাধী, আমি তো আত্মরক্ষা করছিলাম মাত্র। দ্বিতীয়ত, ও একটা মুখ সর্বস্ব লোক, আসল খবরটা জানাজানি হলে ওর মুখটাই আর থাকবে না।”

সাও মু হালকা করে হাসলো, কিছু বললো না আর।

“তাছাড়া, আমার বিরুদ্ধে ও করবেটা কী, চাকরি থেকে বরখাস্ত করবে তাই তো?”

দু হাত ছড়িয়ে মিন হুয়ে বললো, “দিক ছাড়িয়ে, আমি তো সেটাই চাই। আমাকে ছাড়িয়ে দিলে আমাকে নন-কম্পিট চুক্তিও মানতে হবে না।”

সাও মু দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো, “তোমাকে বড্ডো আশাবাদী দেখাচ্ছে।”

দুপুরে খাবার সময়ে, নিজের স্বভাব চরিত্র বদলে মিন হুয়ে কোম্পানি কর্মীদের জন্য রাখা কাফেটেরিয়ায় খেতে গেলো। গোলমরিচ দিয়ে ভাজা ঝাল ঝাল শুয়োরের মাংস খেলো। সেই জন্য আরো এক কাপ বরফ দেওয়া লেবু চা নিলো।

পুরো খাবার জায়গাটা বেশ প্রাণবন্ত। একটু চুপচাপ কোণ দেখে ও সেখানেই বসে ছিলো। চা খেতে খেতে কাজের উইচ্যাট গ্রুপে উত্তর দিচ্ছিলো।

কিছু সময় পরে ওর পিছনে কারা যেনো খিল খিল করে হেসে উঠলো। ঘাড় ঘুরিয়ে দেখলো পিছনের টেবিলে তিনটে মেয়ে বসে ফিসফিস করে গল্প করছে।

ওদের মধ্যে একজন লম্বা আর সুন্দর দেখতে, ম্যান্ডারিন বলছে ক্যান্টোনিজ টোনে। মিন হুয়ে চিনতে পারলো ওকে, ওর নাম ঝ্যাং ঝি রুই, কাজ করে মার্কেটিং বিভাগে। ও কাজ করতো লিন শি য়ুয়ের সাথে। মিন হুয়ের সাথে ওর খুব আলাপ ছিলো না, মুখ চেনা ‘হাই-হেলো’ চলতো দেখা হলে, হলের মধ্যে দেখা হয়ে গেলে অল্পস্বল্প গল্পও করতো ওরা। অন্য দু জনও মুখচেনা কিন্তু জানাশোনা নেই।

মিন হুয়েই উদ্যোগ নিলো কথাবার্তা শুরু করার, “ঝি রুই, কি নিয়ে এতো কানাকানি করছো?”

ঝ্যাং ঝি রুই বাকি সবার চোখের আড়ালে আঙুল বাঁকিয়ে ইশারা করলো মিন হুয়েকে ওদের পাশে এসে বসার জন্য।

“আমরা অনেকক্ষণ ধরে তোমার কাছে আসার কথা ভাবছি।” বললো ঝ্যাং ঝি রুই, “ঈশ্বরকে ধন্যবাদ যে তুমি ফিরে এসেছো।”

মিন হুয়ে ভাবতে লাগলো মিন হুয়ের ফিরে আসাতে ঝ্যাং ঝি রুই-এর কী যায় আসে।

হাসি মুখে জানতে চাইলো, “কী হয়েছে?”

“তুমি নিশ্চয়ই জানো চেং ছিরাং-কে কে মেরেছে।”

গম্ভীর মুখে ঝ্যাং ঝি রুই বললো, “আমাদের বলো আর আমাদের খুশি করে দাও। আমি সেই লোকটাকে রাতের খাবার খাওয়াতে নিয়ে যাবো।”

মিন হুয়ে খুব শান্তভাবে বললো, “আমি শুনেছি যে উনি পড়ে গেছেন।”

“বাজে কথা রাখো। ওর ক্ষত দেখে বোঝা যাচ্ছে যে ওকে কেউ খুব ঠেঙিয়েছে।”

অন্য মেয়ে দুজনের যার মুখটা গোল আর বব ছাঁট চুল সে বললো, ওর দু চোখ থেকে উত্তেজনা চাপা পড়লো না কিছুতেই।

“আলাপ করিয়ে দি, এ হলো অ্যান শও হে, ও কাজ করে গেম ডিপার্টমেন্টে।”

ঝ্যাং ঝি রুই বললো বব ছাঁট চুলওয়ালা মেয়েটাকে দেখিয়ে। তারপর অন্য মেয়েটার দিকে দেখালো, যার চুলগুলো সিধে, মাঝে সিঁথি কাটা, একটা সাদা জাম্পার পরে আছে, বললো, “এ ফ্যাঁ শু ছিং, ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্ট থেকে।”

মিন হুয়ে অবাক হবার ভান করলো, “শংসাই আহত হয়েছেন, তোমরা এতো উল্লসিত কেনো?”

“হলোটা কী? ওর পৌরুষ বরাবরের মতো ধ্বংস করে ওকে চিরতরে অক্ষম করে দিলে বরং ভালো হোতো।” ঝ্যাং ঝি রুই হাত চালিয়ে মাথা কাটার ভান করলো, সবাই বুঝে নিলো আসলে কোন অঙ্গ কাটার কথা বলছে ও, “মিন হুয়ে, আমরা জানি, চার বছর আগে তোমার সঙ্গে - সত্যি বলছি।”

মিন হুয়ে চায়ে চুমুক দিচ্ছিলো, কথাটা শুনে, ওর শরীর অল্প কেঁপে উঠলো।

“কারণ … একই কান্ড পরে আমাদের সবার সাথে ঘটেছে।” নরম সুরে বললো অ্যান শও হে, “একটাই ব্যাপার, প্রত্যেকবার তাক করা হয়েছে আলাদা আলাদা জনকে। যেমন, ঝি রুইকে যখনই চেং ছিরাং-এর সঙ্গে ব্যবসার কাজে বাইরে যেতে হবে, তখনই ওকে টোফুর মতো গিলে খাবে। আমাকে, আমার ডিপার্টমেন্টেই। দিঁ য়িফঁ লেগে লেগে আছে ছিং ছিং-এর পেছনে যবে থেকে ও কাজে লেগেছে তবে থেকে, ওকে রোজ একলা বসিয়ে রাখে, ওভারটাইম করায় …”

“এইচআর-এর কাছে যাও, অভিযোগ দায়ের করো!”

“এই যে, একটা উদাহরণ দিচ্ছি যে তুমি এইচআর-কে জানালে কী হবে। এইচআর মোটেই গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করবে না, এই ভয়ে যে তদন্তে দেখা যাবে শংসাই আসলে দোষী।”

ঝ্যাং ঝি রুই হাসলো আধা তিক্ততা মিশিয়ে আধা বিদ্রুপে, “আমরা না তোমার মতো কাজের, না তোমার মতো সাহসী, তোমার সাথে একটা বিষয়েই মিল আমাদের, তা হলো যে আমরা সবাই গরীব বাড়ির মেয়ে, আমাদের সবারই কাজের দরকার …”

“তাই তোমরা চুপ করে থাকবে বলে ঠিক করেছো?”

“আমরা একটা ‘দুঃখী বাহিনী’ বানিয়েছি, অনেকগুলো মেয়ে মিলে আমরা নিয়মিত দেখা করি, একে অপরকে পরামর্শ দি, পরস্পরের সংস্পর্শে একটু সাহস পাই, একটু ভরসা পাই, একটু একে অপরকে উষ্ণতা দি, সহমর্মিতা দি। আমাদের দলে মি কিরও আছে, ও কিছুতেই কাজ ছাড়তে পারবে না।”

জানালো ঝ্যাং ঝু রুই, “এর আগে যেদিন ওর সাথে মলে দেখা হয়ে ছিলো আমার, সেই দিন ও আমাকে বলে ছিলো যে ও মনস্তাত্ত্বিকের সাহায্য নিচ্ছে।”

“আমাদের সমস্ত ভুক্তভোগী মেয়েদের উচিৎ একজোট হয়ে প্রমাণ জড়ো করা।”

মিন হুয়ে বরাবর ভেবেছে যে ও একা একা লড়াই করছে, ও আশাই করে নি যে এরকম একটা জোট আছে যাতে ও অংশ নিতে পারে, মিন হুয়ে এতো উত্তেজিত হয়ে উঠলো যে ওর মনে হতে লাগলো যে ওর শরীরে যেনো মুর্গির রক্ত ভরে দেওয়া হয়েছে, “এসো না আমারা আমাদের কাজের পরিবেশটার একটু উন্নতি করি।”


শরীরে যেনো মুর্গির রক্ত ভরে দেওয়া হয়েছে



“সমস্ত আগুন ঝরাবার প্রত্যাশা একলা তোমার ওপরে। ” বললো ঝ্যাং ঝি রুই আবার, “আমি তো কদিন একটু আরামে নিশ্চিন্তে কাটিয়েছি।”

“ঝেং য়িতিং কোথায়? ও কী জানে এসবের কিছু?”

“ও তো কোম্পানিতেই আছে। তোমরা কী ওকে দেখতে পাও না?”

“আজকাল ঝেং য়িতিং একেবারেই আসে না কোম্পানিতে।”

জানালো ফ্যাঁ শু ছিং, “ওর বাবা গত কয়েক বছর ধরে খুব অসুস্থ ছিলো না? তার ওপর, চেং ছিরাং মামলাটা জিতে গেলেও, ব্যাপারটা নিয়ে মিডিয়া খুব হৈ হৈ করেছে। সবাই বলাবলিও করছে যে নিজে না ঝামেলা পাকালে ঝামেলা তো আর বাড়ি বয়ে আসে না। পুরো ব্যাপারটা বোঝার পরেও ঝেং ল্যান ল্বব্যাঁকেই বেছে নিলো দেখে, আমি মনে মনে গুনগুন করা ছাড়া আর কিছুই করতে পারি নি। আমি শুনেছি যে ঐ সময়ে দুজনের সম্পর্ক খুব ঝটপট খারাপ হয়ে যায়। ঐ বছরে চেং ছিরাং-এর কাজের মূল্যায়ণের মান দাঁড়িয়ে ছিলো তার আগের বছরের তুলনায় দু গুণ। কিন্তু ঝেং ল্যান ঐ ব্যাপারটাকে ভিত্তি করে চেং ছিরাং-এর উন্নতি নাকচ করে দেয়। স্টক ইন্সেনটিভে ওর পাওনা কমে যাওয়ায় চেং ছিরাং খুব অসন্তুষ্ট হয়ে ছিলো।”

ঘাড় নেড়ে সায় দিলো ঝ্যাং ঝি রুই, “ঝেং য়িতিং-ও খুব চটে ছিলো। চেং ছিরাং-এর আশে পাশের সমস্ত লোককে বদলি করে দিয়ে ছিলো - পুরুষ হোক আর মহিলাই হোক - ওকে সন্দেহ করতে শুরু করে ছিলো। ওর আগে থেকেই ভয়ানক অসুখ ছিলো নিজেকে রাজকুমারী ভাবার, কখনোই কোম্পানির ব্যাপারে মাথা ঘামাতো না। আমার মনে আছে এক বার ওর ডেস্কে আমি ওর ‘যা করতে হবে’ তার ফর্দ দেখে ছিলাম। ওপরে মাত্র তিনটে লাইন লেখা ছিলো, ঘুমোও, সাজো, কুকুরকে হাঁটাতে নিয়ে যাও …”

কথাটা শুনে না হেসে পারলো না মিন হুয়ে। 

ঝ্যাং ঝি রুই বলেই চললো, “গত দু বছরে ওর হঠাৎ ঘুম ভেঙেছে। ও মন দিয়েছে ওর বরের দুর্নাম ঘোচানোতে। তাই পুরোনো চেয়ারম্যানের নামে ‘লাভ চ্যারিটি ফান্ড’-এর দায়িত্ব নিয়েছে, ইস্কুল-ছুট ছাত্রদের ইস্কুলে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার কাজ করে, পশুদের নিরাপত্তা দেয়, মালিকানা নেই এমন বেড়ালদের কুড়িয়ে নিয়ে যায়।”

“কুকুর আর অন্য সব জানোয়ার ক্রমশ বেড়ে উঠছে আর ওদের সব মনোযোগ এখন ওদিকেই।”

মিন হুয়ে ওদের দিকে তাকালো, গম্ভীর ভঙ্গীমায় বললো, “চেং ছিরাং-এর মতো লোকেদের জন্য পালিয়ে যাওয়ার কোনো মানে হয় না।”

“আমরা বুঝি সেটা। কিন্তু আমরা এমন কোনো একটা উপায় এখনো পাই নি যেটা কাজে দেবে। তুমি আমাদের ‘দুঃখী বাহিনী”-তে যোগ দিতে পারো। খুব ভালো লাগবে আমাদের যদি তুমি তোমার প্রতিরক্ষার উপায়টা আমাদের শেখাও। একটা কথা বলো, তোমাকে কী আমাদের আলোচনার গ্রুপে যোগ করে নিতে পারি?”

“নিশ্চয়ই।”

মিন হুয়ে মজা করে চোখ পিটপিট করলো, আর নিচু স্বরে বললো, “তোমাদের সঙ্গে প্রথম দেখা হওয়ার একটা উপহার দি। তোমরা ঠিকই ভেবেছো, চেং ছিরাং ঠ্যাঙানিই খেয়েছে। আর ওকে যে ঠেঙিয়েছে সে আমি।”

“তুমি? একা?”

অ্যান শাও হে মুখে চাপা দিয়ে প্রশ্ন করলো, “সত্যি?”

“কী করে লড়লে? আমাকে খুব যত্ন করে গুছিয়ে বলো।”

ঝ্যাং ঝি রুই উত্তেজনায় মিন হুয়ের জামা টেনে ধরলো, “আমি যে কী ভীষণ শুনতে চাই এটা!”

“ওর মোকাবিলা করার জন্য আমি খুব করে সান্ডা অভ্যেস করেছি, অনেক সপ্তাহ ধরে …”

অল্প কথায় বলে মিন হুয়ে কাটিয়ে দিতে চাই ছিলো, কিন্তু শ্রোতাদের উৎসাহ আর মনোযোগ দেখে চটপট জুড়ে দিলো, “মারপিট করাটা খুব হালকা ভাবে নিও না। আমি বাধ্য হয়েছি মারতে নিজেকে রক্ষা করার জন্য।”

ফ্যাং শু ছিং নিজের বুকে হাত রেখে, একটা মরিয়া আকুল ভঙ্গীমায় জানালো, “সান্ডা? দারুণ উপায়। আমি কাল থেকেই শিখতে শুরু করবো!”

“অতো আশা করো না।” মিন হুয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেললো, “যদি চেং ছিরাং মাতাল না হোতো আমি হয়তো ওর সাথে লড়াইতে পেরে উঠতাম না। সবাইকার উচিৎ প্রমাণ জোগাড় করতে থাকা।”

“প্রমাণ বলে গ্রাহ্য কী কী হয়?”

“টেক্সট মেসেজ, অডিও রেকর্ডিং, নথিপত্র, আরো অন্যান্য জিনিস যেগুলো সাক্ষ্য আর প্রমাণ হিসেবে দাখিল করা যাবে আর সবই যতো শিগগির সম্ভব এইচআর-কে জানাবে। পরিস্থিতি খুব গুরুতর হলে, পুলিশে ফোন করবে। এইচআর যদি খুব গুরুত্ব নাও দেয় তোমার অভিযোগকে আর তদন্ত করতে অস্বীকারও করে, তবুও একটা বিস্তারিত নথি তো তৈরি হবে, সেটাই কাজে দেবে।”

****

মিন হুয়ে ভেবে ছিলো যে চেং ছিরাং শ্বশুরের অন্ত্যেষ্টি নিয়ে ব্যস্ত আছে, মিন হুয়ের প্রতি প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থা নেবার মতো সময় নেই লোকটার। মিন হুয়ের হিসেবের চেয়ে অনেক আগেই, বরং বলা যায় যে খুব তাড়াতাড়িই এলো প্রতিশোধ।

দু দিনের মধ্যেই দিঁ য়িফঁ গুয়ান ছাও-এর আরেকটা প্রথম সারির এআই প্রোডাক্ট, ‘তংগুয়াং এআই ডায়াগনোসিস অ্যান্ড ট্রিটমেন্ট প্ল্যাটফর্ম’ তুলে দিলো মিন হুয়ের টিমের হাতে। প্রোডাক্টটার দেখাশোনার সব দায়িত্ব দিলো ওদের।

মিন হুয়ে খুব খুঁটিয়ে দেখলো, ওর মনে হলো জিনিসটা ভালোই বানানো হয়েছে, ভালোই বিক্রিও হয়েছে। মনে মনে ভাবলো সত্যিই গুয়ান ছাওতে যারা কাজ করে তাদের যোগ্যতা আছে কাজ করার। ওর উচিৎ ভবিষ্যতে আরো বিনয়ের সঙ্গে কথা বলা বা আচরণ করা। 

“তংগুয়াং আমাদের আর অ্যান্ড ডি ডিপার্টমেন্টের প্রথম সারির প্রোডাক্ট।” অহঙ্কার করে জানালো দিঁ য়িফঁ। 

“প্রচুর খরিদ্দার। আমরা খুব গুরুত্ব দি ওঁদের মতামতে। চেং জঁ বলতে চাইছেন যে তোমার টিম নিশ্চয়ই খরিদ্দারদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলতে পারবে। ব্যাপারটা কী? আমরা একটা করে ছোটো টিম পাঠাবো খরিদ্দারদের কাছে সমস্যার সমাধান করে দেবার জন্য যতো শিগগির সম্ভব। যতো শিগগির হয়, ততোই ভালো। খরিদ্দারের মনে যেনো কোনো ক্ষোভ না তৈরি হয়।”

কথাটা শুনে মিন হুয়ে অল্প ভ্রূ কোঁচকালো, “আমরা প্রযুক্তি বিভাগ। স্বাভাবিক পরস্থিতিতে আমরা তো সরাসরি খরিদ্দারের সঙ্গে কথা বলি না। যখন খরিদ্দারদের সমস্যা হবে আমাদের প্রোডাক্ট ব্যবহার করতে, ওঁরা তো শুরুতেই সে কথাটা জানাবেন কাস্টমার সার্ভিস ডিপার্টমেন্টে।”

প্রযুক্তি শিল্পক্ষেত্রেও বিশেষত্ত্ব আছে কাজের। আর কাস্টমার সার্ভিস ডিপার্টমেন্টের প্রতিভা হলো যে তারা সব থেকে ভালো খরিদ্দারের সঙ্গে কথাবার্তা বলায় ওরা মুখমিষ্টি এবং ধৈর্যশীল। প্রযুক্তিতে যাঁরা কাজ করেন তাঁরা অনেকেই বদমেজাজী। এঁরা কথা বলার সময়ে প্রায়ই ঝগড়া করেন। 

“সেটা তো পদ্ধতিতে যা আছে। কিন্তু সে সবে অনেক সময় লেগে যায়। তাছাড়া কাস্টমার সার্ভিসের লোকেরা প্রযুক্তির অনেক কিছু বোঝে না। শেষে ওরা আসবেই তোমাকে জিজ্ঞেস করতে। তুমি খরিদ্দারের সঙ্গে সরাসরি কথা বললে ভালোই হবে। এতে আমাদের আন্তরিকতা যেমন দেখানো যাবে, তেমনি খরচও কমানো যাবে। যোগাযোগের খরচ - এক ঢিলে দুই পাখি মারা।”

মিন হুয়ের আর কোনো উপায় রইলো না রাজি না হয়ে। পরদিন সকাল থেকে ফোন আর থামতে চায় না। খরিদ্দাররা সবাই খুব খেপে আছে, সব ধরনের নালিশ আর বকাঝকা আসতে লাগলো। সব মিলিয়ে সার এই দাঁড়ালো যে তংগুয়াং প্ল্যাটফর্ম খুব কাজের নয়, খুব ধীরে ধীরে কাজ করে, বার বার ক্র্যাশ করে।

মিন হুয়ে ছোটো দল পাঠালো সারা দেশের নানান কাউন্টিতে আর নানান শহরে। খরিদ্দারদের পরামর্শ দেবার জন্য আর তাঁদের সমস্যার সমাধান করার জন্য।

কয়েকবার যাতায়াতের পরে ঝ্যাং শও হান জানালো, “হুই জিয়ে, সমস্যাটা আমাদের প্ল্যাটফর্মের নয়। খরিদ্দারের অ্যাপ্লিকেসনগুলো খুব ছড়িয়ে ছিটিয়ে লেখা। তার চোটে পুরো গঠনটা ফুলে ফেঁপে উঠেছে। খরিদ্দার নিজেই বিশাল পরিমাণ তথ্য সরিয়েছে একপাশ থেকে অন্য পাশে, যার দরকারই ছিলো না কোনো। এতে করেই কাজের গতির ওপর প্রভাব পড়ছে।”

“তুমি কী ওঁদের বুঝিয়ে বলেছো সমস্যাটা?” প্রশ্ন করলো মিন হুয়ে।

“বুঝিয়ে বলা! অগুণতিবার বুঝিয়ে বলা সত্ত্বেও ওঁরা বুঝছেন না, ওঁরা যে শুধু নিজেদের প্রোগ্রাম বদলাতে অস্বীকার করছেন তাই নয়, কেবল আমাদের দিকে আঙুল ফিরিয়ে আছেন আর যাচ্ছেতাই গালিগালাজ করছেন। বলছেন যে তংগুয়াং আসলে একধাবড়া গু বই কিছু নয়, যাতে ওঁদের চিকিৎসা করতে আর প্রাণ বাঁচাতে দেরি হয়ে যাচ্ছে - ”

“যদি বুঝিয়ে না বলা যায়, তবে ওঁদের অ্যাপটা বদলাতে সাহায্য করো।” আর কোনো উপায় নেই দেখে বললো মিন হুয়ে।

“বদলানোর কোনো উপায় নেই। বদলাতে গেলে পুরোটা আবার লিখে ফেলতে হবে।”

আন্দাজ করা যায় যে প্রচুর তর্কাতর্কি ঝগড়াঝাঁটি হয়েছে। আর ঝ্যাং শও হানের গালের ব্রণগুলো সব লাল হয়ে উঠেছে। 

"কেনো আমাদের করতে দিয়েছে?”

“আমি করে নেবো।”

দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো মিন হুয়ে, “আমি এখানে কাস্টমার সার্ভিস হয়ে গেছি।”

ফোনের উত্তর দেবার থেকে আর রোজ গালি খাবার থেকে বরং ভালো হবে মিন হুয়ে যদি ওদের কোডগুলো লিখে দেয়।

মিন হুয়েকে সারা দেশ জুড়ে ঘুরে বেড়াতে হচ্ছে


খরিদ্দাররা ছড়িয়ে আছে দেশের নানান প্রান্তে। মিন হুয়েকে সারা দেশ জুড়ে ঘুরে বেড়াতে হচ্ছে। আজকে গুয়াংঝাও, কালকে সাংহাই, তার পরের দিন হারবিন, তার পরের দিন কুনমিং। 

সময়ের সঙ্গে চটপট তাল মিলিয়ে কাজ এগিয়ে নেবার জন্য মিন হুয়ে অনেকগুলো চোখ-লাল করা উড়ানে চাপলো। রাতে প্লেনে চাপে, পরের দিন সকালে পৌঁছে যায়, আর পুরো উড়ানের সময় এতো কম যে উড়ানের কোনো যাত্রীরই যতোটা দরকার ততোটা ঘুম হয় না।

চোখ-লাল করা উড়ান


একমাস পরে মিন হুয়ের প্রায় দশ ক্যাটি মানে ছ কিলোগ্রাম মতো ওজন কমে গেলো। সারা মাসে পাঁচ দিনও বাড়িতে ফিরতে পারে নি ও।

বাড়ি ফিরে এতো ক্লান্ত হয়ে থাকে যে ভেঙে পড়ে আর ঘুমিয়ে পড়ে। এমন কী ছেলের সঙ্গেও দেখে করতে যেতে পারে নি কয়েকবার।

ভাগ্য ভালো যে শিন ছি সব কিছুর দায়িত্ব নিয়ে ছিলো। তাই মিন হুয়েকে একদম ভাবতেই হয় নি কিচ্ছু।

মনে করে শিন ছি কয়েকটা ছবি পাঠাতো সু ছনের। প্রতি রাতে বা প্রতি দু রাতে ছেলের সাথে মিন হুয়ের কথা বলিয়ে দিতো ভিডিও কলে।

সু ছনও ওর মাকে দেখেনি একটানা। ও-ও খুব কান্নাকাটি করতে শুরু করলো, রাতে ঘুমোতে পারলো না কিছুতেই। 



শিন ছি রেগে যেতে শুরু করলো, “এটা তো ওভারটাইম নয়, নিশ্চিত এটা শাস্তি।”

“আমারও তাই মনে হয়।”

মিন হুয়ের মাথা ঝিমঝিম করতে লাগলো, “ঝামেলাটা তো আমি নিজেই পাকিয়েছি। আমি এমন একটা মানুষ যে পুরো প্রোগ্রামটা বদলে দিতে চায় যদি প্রোগ্রামটা বাগে থিকথিক করে তো। এটা বদলাতে শও হানের লাগবে একমাস। আমি পাঁচদিনে বদলে দিতে পারবো। তাই সব থেকে তাড়াতাড়ি এই ঝামেলা থেকে আমার বেরোনোর উপায় হলো কাজটা নিজে করে নেওয়া। সব থেকে তাড়াতাড়ি করার উপায় হলো - বেশি খাটনি খাটা।”

“ওভারটাইম পে দিচ্ছে?”

“না।”

মিন হুয়ে আকাশের দিকে তাকালো, “এটা আমাদের কাজই নয়। খরিদ্দারের আবেগকে প্রশমিত করার জন্য আমাদের এটা করতে হচ্ছে। না হলে ওরা যা কোড লিখছে সেগুলো আমাদের প্ল্যাটফর্মে খুব ভালো কাজ করতে পারছে না। যে সার্ভিসগুলো আমরা দেবো বলে কথা দিয়েছি, তার কোনোটাই দেওয়া যাবে না। আমি ভাবতেও পারি নি যে ঐ সব হাসপাতালে প্রযুক্তির কর্মীরা এতো অকেজো, ওরা ভান করতে ভালো বাসে যে ওরা কিচ্ছু জানে না! ওদের একটা ভালো জিনিস দাও আজকে, ওরা দুমাসের মধ্যে জিনিসটা ভেঙে ফেলবে, বিগড়ে ফেলবে।”

“তোকে কিছু বলার আছে, ঘাবড়ে যাস না।”

দুম করে বলে উঠলো শিন ছি, “আজ সকালে জিয়া জুন কারুর সাথে মারপিট করেছে। ও এখনো পুলিশ স্টেশনে।”

“কী?”

মিন হুয়ে এই সময়ে ব্যবসার কাজেই বাইরে আছে চ্যাংশা-তে। ওর গলার স্বর এক পর্দা চড়ে গেলো, “এখন কী হবে? রেকর্ড আছে যে ও আগে জেল খেটেছে! শিন ছি তোকে যেতেই হবে কী হয়েছে দেখতে, একটু সময় বার করে!”

“যাচ্ছি। ব্যাপারটা এরকম যে জিয়া জুনের প্রেমিকা আছে একজন। তুই জানিস কী?”

মিন হুয়ের মন খারাপ হয়ে গেলো, “য়ে শও ঝেন?”

“না। এটা সেই টিউটরটা নয়। এ অন্যজন। এর নাম ইয়াং লু। জুনের সাথে কাজ করে একসাথে, আমার সাথে দেখা হয়েছে কয়েক বার। বেশ কিছু দিন হয়ে গেলো ওরা একসাথে আছে। ইয়াং লু সামাজিক খবরের জন্য জিয়া জুনের সাথে কাজ করে। বেশ কাজের। আমার বেশ ভালো লেগেছে ওকে। আগের বার যখন বেজিং গিয়ে ছিলাম তখন জিয়া জুন আমাকে একটা নেকলেস কিনে আনতে বলে কাউকে ও উপহার দেবে বলে।”

মিন হুয়ের ভীষণ লজ্জা হলো। অনুভূতিটা ও কিছুতেই এড়াতে পারলো না। 

শিন ছি ফেরার পর থেকে সু ছনের অসুস্থতার কারণে, বা’অ্যানের বিক্রির ব্যাপারটা এসে পড়ায়, শিন ছির সাথে রোজ ঝগড়া লেগে থাকায়, মিন হুয়ের একদম সময়ই হয় নি জিয়া জুনের খবর নেবার। জিয়া জুনও ওর সঙ্গে খুব যে দেখা করেছ এমন নয়। ও দিনে বেরিয়ে যায় খবরের পেছনে দৌড়োতে, রাতে যখন ফেরে তখন আর্টিক্ল লিখতে ব্যস্ত থাকে। ভাইবোনের সময়ই নেয় একে অপরের সঙ্গে দেখা করার।



যতো বার সু ছন গেছে মিন হুয়ের সঙ্গে থাকার জন্য, ও মনে করে টোকা দিয়েছে ওর মামার দরজায়, আর জিয়া জুন বেরিয়ে এসে ঘন্টা খানেক খেলা করে গেছে বাচ্চাটার সাথে, কিংবা ওকে নিয়ে পার্কে গেছে কিংবা খেলার মাঠে।

মিন হুয়ে এরকম করেই মিশতে ভালো বাসে। ও সঙ্গ দেয় যখন ওর সময় থাকে, ও সঙ্গ দেয় না যখন ওর সময় নেই। কেউ কারুর ওপরে নির্ভর করে না। কেউ কাউকে কোনো চাপ দেয় না।

মিন হুয়ে জানে যে শিন ছি প্রায়ই জিয়া জুনের সাথে বাইরে খেতে যায় আর বল খেলতে যায়। জিয়া জুন চুপচাপ, বেশি কথা বলে না।

মিন হুয়ে আশা করে নি যে জিয়া জুন ওর জীবনের আবেগের কথা শিন ছিকে বলবে। ওর একটু হিংসে না করে পারলো না।

দু ভাই-এর সম্পর্ক এতো ঘনিষ্ঠ!

“এখন জিয়া জুন আর ইয়াং লু খোঁজখবর করছে বিনচেং শহরের একটা আন্ডারগ্রাউন্ড গ্যাং-এর ব্যাপারে। যেই ওরা কাজটা শুরু করেছে, অমনি গ্যাং-এর লোকেরা ইয়াং লুয়ের ওপরে নজর রাখতে শুরু করে। যখন মেয়েটা বাইরে কাজে গিয়ে ছিলো তখন ওরা ওকে মেরে অজ্ঞান করে, একটা গলিতে ধরে নিয়ে যায়, তারপরে ভয় দেখায় যে ওকে ওরা মেরেই ফেলবে। ওর ডান হাত কেটে ফেলে দেবে। জিয়া জুন কাছাকাছি ছিলো। শব্দটা পায়। দৌড়ে যায়, তিনজনকে একাই আটকায়, তারমধ্যে দুজনকে মেরে হাসপাতালে পাঠিয়ে দিয়েছে।”

মিন হুয়ে একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে, “ইয়াং লু এখন কোথায়? কেমন আছে ও?”

“মেয়েটা বেশ সাহসী আর শান্ত। ও এখন পুলিশ স্টেশনে বসে নোট নিচ্ছে।”

“জিয়া জুন খুব বেশি মারধর করে নি তো?”

মিন হুয়ে খুব দুশ্চিন্তায় পড়ে গেছে, “আমি হাতের কাজটা আজ রাতের মধ্যে শেষ করে নিয়ে আসছি আজ রাতেই। তারপর না হয় দেখছি যে কী করা যায়।”

“তোর আসার দরকার নেই। আমি ব্যবস্থা করে নিচ্ছি। জিয়া জুন খুব বেশি মারে নি কাউকে। ওদের একজনের কাছে ছুরি ছিলো, কিন্তু জিয়া জুনের কাছে কোনো অস্ত্রই ছিলো না। ওদের একজনের সঙ্গে আবার ড্রাগস পাওয়া গেছে। আমি উকিলের সাথে কথা বলেছি। উকিল বলেছেন যে জিয়া জুনের কিছু হবে না।”

“থা হলা, তা ভালো।”

মিন হুয়ে শুনলো যে সমস্যার সমাধান হয়ে গেছে। কম্পিউটারে টাইপ করে কাজ চালিয়ে যেতে লাগলো।

বললো, “আমি কাল বিনচেং-এ ফিরে যাবো। তুই বাড়িতে থাকবি?”

“আমি সকালে বেজিং যাচ্ছি। সন্ধে আটটা নাগাদ ফেরত আসার চেষ্টা করবো।”

"কেনো যাবি?”

“গলফ্‌।”

“প্লেনে চেপে গলফ্‌ খেলতে যাবি?”

“আমি মাঠে ব্যবসার কথা বলতে ভালো বাসি। কম লোক, চুপচাপ, অনেক সময় পাওয়া যায়।”

****

বেজিং-এ শিন ছির বাধা বন্ধু আছে গলফ্‌ খেলার। এবারে ও যার সঙ্গে দেখা করতে চায় তিনি সু ঝং হে, য়ুআঁ মাও গ্রুপের চেয়ারম্যান, আর বিবিজির গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার।

এ বছরে সু ঝং হে আটান্ন বছর বয়স পার করেছেন। মাঝারি গড়ন, চৌকো মুখ, থুতনি জোড়া, গভীর গর্ত দু চোখের নিচে। ওঁর আসল বয়সের থেকে বেশি বুড়ো দেখায় ওঁকে। ওঁর চুলও ধূসর। উনি গলফ্‌ খেলতে ভালো বাসেন আর রোজ ভোর পাঁচটায় ওঠেন, দিনের অন্য সব কাজ শুরু করার আগে এক রাউন্ড গলফ্‌ খেলে নেবার জন্য। খেলার অভিজ্ঞতা ওঁর দশ বছরেরো কিছু বেশি। উনি প্রায় শিন ছির মতোই খেলতে পারেন। দু জনে যখনই বেজিং-এ থাকেন, দু জনেই যদিও ব্যস্ত থাকেন, ওঁরা অন্তত দুটো করে খেলা প্রতি সপ্তাহে তো খেলতেনই।

যখন উনি জানতে পারলেন যে শিন ছি কোম্পানি উঠিয়ে নিয়ে বিনচেং-এ চলে যাচ্ছে, সু ঝং হেই প্রথম আপত্তিটা তুলে ছিলেন, কারণ ওঁর সাথে গলফ্‌ খেলার কেউ থাকবে না বলে।

শিন ছির কোনো উপায় ছিলো না ওঁকে আশ্বস্ত করা ছাড়া যে ও মাঝে মধ্যেই বেজিং-এ আসবে, যখনই ওর সময় থাকবে আর ওঁর সাথে গলফ্‌ খেলার জন্য যোগাযোগ করবে।

পরে, ও যখন প্রায়ই ফিরে যাচ্ছিলো বেজিং-এ, তখন কয়েকবার দেখা করেছে সু ঝং হের সাথে। তাও দু জনের দেখা হয় নি অনেক কাল। তবে দু জনের কথা হয়েছে অনেক বার। ওঁরা পরস্পরের সঙ্গ যে শুধু উপভোগ করেন তাই নয়, ওঁরা ঘনিষ্ঠও হয়ে উঠেছেন।

কিন্তু এবারে শিন ছির কিছু কাজ আছে ওঁর সাথে। ইচ্ছে করেই বলে রেখেছে যে শুক্রবারে ও ব্যবসার কাজে বেজিং-এ যাবে আর জানতে চেয়েছে যে উনি একটা খেলার জন্য সকালে সময় বার করতে পারবেন কিনা।

সু ঝং হে খুব খুশি হয়ে টেক্সট মেসেজের উত্তর দিয়েছেন, দুটো মাত্র শব্দে, “অবশ্যই হবে।”

এইট্টিন হোল খেলতে প্রায় পাঁচ ঘন্টা লেগে গেলো। একটা টি থেকে একটা গর্তের গোড়ায় বল মারার পরে দু জনে কথা বলতে লাগলেন, হালের খবর থেকে স্টক মার্কেট সব কিছু নিয়ে। শিন ছি বললো, “আজকাল আমার একটা ঝোঁক হয়েছে একটা কোম্পানিকে নজর করার। আমার মনে হচ্ছে শুরু করার জন্য এখনকার অবস্থাটাই একটা ভালো সুযোগ।”

“নিয়ে নিতে চাও পুরো?”

ঘাড় নাড়লো শিন ছি, “কোম্পানিটা তুলনামূলকভাবে একটু বড়ো। আমার মনে হচ্ছে এটাকে গিলে খাওয়া একলা বিবিজির সাধ্য নয়। আপনার উৎসাহ আছে? একসাথে নামতে পারি বাজারে?”

“কোনটার কথা বলছো? তোমার চোখটা সবসময়েই ভালো।” সু ঝং হে দাঁড়িয়ে ছিলেন ঘাসের ওপরে। কোমরে প্যাঁচ মারলেন, বলে ঘা দিলেন, দেখতে লাগলেন যে সাদা বলটা উড়ে গেলো সবুজের ওপর দিয়ে, তারপরে সহজ পায়ে এগিয়ে গেলেন।

“গুয়ান ছাও ইন্টারন্যাশন্যাল।”

“বাহ্‌, তুমি তো বেশ সাহসী। মাংসের এই টুকরোটা একটু বেশি বড়ো না?”

হাসতে হাসতে বললেন সু ঝং হে, “ঝেং ল্যান সবে মারা গেছেন, তুমি কী বিশৃঙ্খল অবস্থাটার সুযোগ নিতে চাও?”

“তা ঠিক নয়।”

হালকা চালে বললো শিন ছি, “আমি ওদের নজর করে চলেছি বেশি কিছু দিন ধরে, গুয়ান ছাও-এর পয়সাকড়ির অবস্থা বেশ ভালো। ওদের মোটের ওপর লাভ পর পর পাঁচ বছর ধরে লাগাতার বেড়ে চলেছে, টাকার যোগানও যথেষ্ট, লাভজনক এখনো আর ধার শোধার ক্ষমতাও ভালো। ব্র্যান্ড আর সম্পদের দিক থেকে দেখলে, এটা ইন্ডাস্ট্রিতে সামনের দিকে এগিয়ে আছে। যাই হোক, এদের স্টকের দাম কিন্তু বেশি নয়, অংশীদারী ব্যবস্থাটা খুব ছড়ানো ছিটানো। এদিকে চেং ছিরাং পর্যুদস্ত নানান বদনামে। আবার কোম্পানির কর্পোরেট কালচারটাও জঘন্য। আমার মনে হয় যে আমরা এটাকে নিংড়ে বার করে নিতে পারবো। আর ওখানে অনেক কিছু করারও আছে। আর অবস্থা যতোই খারাপ হোক না কেনো, আপনি আপানার অংশ পাবেন।”

সু ঝং হে মাথা নিচু করে ভাবছিলেন, শুনতে শুনতেই। 

শিন ছি আরো বললো, “শুয়াং ফেঁ ইন্ডাস্ট্রিস্‌-এর শংসাই ওয়াং কয়েক দিন আগে বিনচেং-এ এসে ছিলেন। আমি ওঁর সাথেও একবার কথা বলতে চেয়ে ছিলাম। উনি ওঁর কোম্পানির কাজে ব্যস্ত ছিলেন তাই আমাদের মিটিংটা পরে হবে বলে ঠিক হয়েছে, তাই ওঁর সাথে কথা হয় নি এখনো। আজ আপনার সাথে দেখা হয়ে গেলো, তাই আমি আপনাকেও জিজ্ঞেস করছি, আপনার কী ইচ্ছে?”

সু ঝং হে তৎক্ষণাৎ বললেন, “তোমার যদি ইচ্ছে থাকে তবে তোমাকে আর ওয়াং ইয়ংকে কিছু বলতে হবে না। আমরা দু জনে মিলে করে ফেলবো। আমি পা বাড়িয়ে দেবো না হয়, আর তুমি হাতে কলমে কাজগুলো করে ফেলো।”

“থা হলা। আমি এর মধ্যেই দঁ চেন টেকনোলজি ব্যবহার করে পনেরো কোটির গুয়ান ছাও শেয়ার কিনে ফেলেছি শেন ঝেন স্টক এক্সচেঞ্জে। ওটা ওদের অংশীদারী মূলধনের দু শতাংশ।”

“তুমি সত্যিই বিত্তবান।" হাসলেন সু ঝং হে।

“আপনি আরো বেশি বিত্তশালী।”

শিন ছি বললো, “আপনি তো বীমার বাজারে কাজ করেন।”

সু ঝং হে নিইজের মোবাইল ফোন বার করে আনলেন, আর স্টক মার্কেট দেখতে লাগলেন, “ঝেং ল্যান মারা যাওয়ার পরে গুয়ান ছাও-এর স্টকের দাম পড়ে গেছে অনেক। এটাই কেনার সময়। চলো আমরা একটা ঘোষণা করবো পাঁচ শতাংশ কেনা হলে।”

“সেই সময়ে অন্য বিনিয়োগ বাজার দিয়ে কেনা চলবে, হংকং স্টক এক্সচেঞ্জে দিয়েও কেনার কাজটা চলতে পারে তখন। আমি কেনার পুঁজিটার ব্যবস্থা করবো। আমি কাল আপনাকে বিশদ পরিকল্পনাটা মেসেজ করে দেবো।”

“ঠিক আছে, যা করার করো তুমি। আমি তোমাকে টাকা দিয়ে সাহায্য করবো। চেং ছিরাং-কে শিখিয়ে পড়িয়ে তৈরি করেছে ঝেং ল্যান। ও খুব সহজে আমাদের মতো বর্বরদের আগল ভেঙে ঢুকতে দেবে না গুয়ান ছাওতে। আমি তোমার ক্ষমতায় বিশ্বাস করি, কিন্তু এই লড়াইটা সহজ হবে না, আমরা হয়তো জিততে পারবো না। সেই সময়ে চেং ছিরাং যদি কোনো ছলের আশ্রয় নেয়, যাতে আমরা এগোতে পারবো না, পিছোতেও পারবো না, তাহলে ও প্রচুর টাকা পেয়ে যাবে, কিন্তু আমাদের অবস্থা শোচনীয় হয়ে যাবে। এর মধ্যেই।”

শিন ছি জোরে হেসে উঠলো, “আমি কখনোই বলি নি কিন্তু ব্যাপারটা সহজ।”

একবার দোলা দিয়ে ও বলটাতে একটা ঝাপট মারতেই একটা সাদা ছায়া উড়ে গেলো। সু ঝং হে এক ঝলক তাকালেন বলটার পরাবৃত্তাকার পথের দিকে, হাসি মুখে বললেন, “পাখি।”




~~~~~~~~~~~~

সম্পূর্ণ বই বিনামূল্যে : https://dl.bookfunnel.com/lcj5vznt96

Link to Previous Post in the Series : https://projectionofnaught.blogspot.com/2024/10/jpda-chapter-62.html

Link to following Post in the Series : https://projectionofnaught.blogspot.com/2024/10/jpda-chapter-64.html

No comments:

Post a Comment

Readers Loved