৬৫. শু জিয়া ঝুয়াং
“আমি আছি এখানে তোর সঙ্গে।” মিন হুয়ের স্বর পালকের মতো নরম। ওর সাহস হচ্ছে না শিন ছিকে ছেড়ে যেতে। ওর আশঙ্কা হচ্ছে যে কিছু একটা অনভিপ্রেত ঘটে যেতে পারে, যদি শিন ছি ধাতস্থ না হতে পারে পরিস্থিতির সঙ্গে।
দু জনের মধ্যে বাতাস চলাচল ক্রমে বন্ধ হয়ে স্থির হয়ে গেলো, যেনো হঠাৎ একটা কুয়াশা ঘিরে ধরেছে, বেশ খানিকক্ষণ পরে মিন হুয়ের দম বন্ধ হয়ে আসতে লাগলো।
চাঁদনি শীত ঢেলে দিচ্ছে যেনো, দূরের উঁচু বাড়িটার ধূসর ছায়া পড়ে আছে কেবল। স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে আছে শিন ছি। মিন হুয়ের পাশে ওর কঠিন পিঠটা খাড়া আছে একটা দেওয়ালের মতো। তার ঘন ছায়াতে ঢাকা পড়ে গেছে রাতের আকাশের তারার আলো।
ব্যাখ্যাতীত আতঙ্কে কাঁপছে মিন হুয়ের হৃদপিন্ড।
“না, তুই ফিরে যা। সঙ্গে নিয়ে যাওয়ার জন্য জিনিসপত্র বেঁধে নে।”
ওর গলার স্বর অবাক করে দেওয়ার মতো শান্ত, “যদি ওটা সু তিয়াঁ না হয়, তাহলে আমরা তখনি ফিরে আসবো। যদি হয়, তাহলে আমরা কয়েক দিন থাকতে পারি অন্ত্যেষ্টির ব্যবস্থা করার জন্য।”
“ছন ছনও যাবে কী আমদের সঙ্গে?”
মিন হুয়ের নজর পড়ে আছে কফি টেবিলে পড়ে থাকা লেগোর ওপরে। একটা ডাইনোসরের তিন ভাগের দু ভাগ তৈরি হয়ে এসেছে।
“না, ও যাবে না। ইয়ুন লু আর শেন ল্যান আমার হয়ে নজর রাখবে, আর ওরা ন্যানিদের খবর দিয়ে দেবে।”
মিন হুয়ে খানিক ভাবলো মাথা নিচু করে, ব্যবস্থাটা ঠিক হবে কিনা। মাথা তুলতে তুলতে ওর নজর শিন ছির থুতনি পেরোনোর আগেই শিন ছি মুখ ঘুরিয়ে নিয়েছে অন্য দিকে।
কোনো উপায় নেই দেখে মিন হুয়ে বললো, “কাল সকালে দেখা হবে তোর সাথে।”
“আমরা সাতটা দশ নাগাদ তোকে তুলে নেবো।”
ও মিন হুয়ের সঙ্গে সঙ্গে এলো এলিভেটরের দরজা অবধি।
মিন হুয়ে “ওয়াঁ আন” বলে ফিরে এলো মিংসেন কমিউনিটিতে।
আসলে, সঙ্গে নিয়ে যাবার জিনিসপত্র গোছানোর কোনো দরকার নেই মিন হুয়ের। ও সবে ব্যবসার কাজ সেরে বাড়ি ফিরেছে। ওর বাইরে যাবার জিনিস সব গোছানোই আছে। ও স্যুটকেস খুলে সমস্ত নোংরা কাপড়জামা বার করে নিলো আর ওগুলো পুরে দিলো ওয়াশিং মেশিনে। জামাকাপড় রাখা ক্লোজেট থেকে তিনটে কালো টি-শার্ট আর একটা কালো জামা নিয়ে বাক্সে ভরে নিলো। ওর মনের অবস্থা এলোমেলো, বাড়িটাও অনেক দিন হয়ে গেলো পরিস্কার করা হয় নি। তাই অন্যমনস্কভাবেই ও একটা পাপোশ ধুয়ে ফেললো। টেবিলটাও মুছে ফেললো।
ওর আশা যে যেদিন সত্যিটা প্রকাশ পাবে সেদিনটা যেনো শিগগির আসে। আবার এরকমও চাইছে যে সত্যিটা যেনো কোনো দিনও না প্রকাশ হয়। যাতে এরকম একটা ঘোরের মধ্যেই কাটিয়ে দেওয়া যায়।
যে চার বছর সু তিয়াঁ নেই, জীবন যেনো কুয়াশার মধ্যে দিয়ে চলেছে, আর মিন হুয়ে কেবল সামনের দশ মিটারই ঠাহর করতে পারে।
ছোটো বড়ো অনেক কিছু ঘটে গেছে একের পর এক। ও যেনো মানিয়ে নিতে নিতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছে।
সব ঝামেলা পোহানো হতে, দিনও ফুরিয়ে গেলো। ও খুব ক্লান্ত বোধ করতে লাগলো। শুধু ঘুমিয়ে পড়তে চাইছে এখন। কালকের কথা, পরশুর কথা, ভবিষ্যতের কথা ভাবার সময় আর ইচ্ছে কোনোটাই নেই ওর।
যদি সু তিয়াঁ এখনো বেঁচে, তবে যাই হয়ে থাকুক না কেনো, শিন ছি ওকে বিয়ে করবে, ওর সাথে চুটিয়ে ঘরসংসার করবে, ওদের অনেকগুলো বাচ্চা হবে, আর সুখে থাকবে এক সাথে।
যদি সু তিয়াঁ মারে গিয়ে থাকে, তবে তার সমাধিস্তম্ভটা গাঁথা হবে মিন হুয়ে আর শিন ছির হৃদয়ে, আর কেউই সহজে তার ভার থেকে নিজেকে মুক্ত করতে পারবে না। ধীরে ধীরে পরস্পরের থেকে দূরে সরে যাবে, একে অপরের অচেনা হয়ে যাবে।
তবে পরিণতি যাই হোক না কেনো, শিন ছির বিশেষ কিছুই করার নেই মিন হুয়ের ব্যাপারে। যাই হোক, মিন হুয়ে আর সু ছন ওদের নিজেদের জীবন কাটিয়ে দেবে। কিন্তু এই ছেলের জন্য, শিন ছি কিছুতেই ছেড়ে দেবে না …
কথাটা মনে হতেই মিন হুয়ে মনের গহীনে নিজেকে গালি না দিয়ে পারলো না। যাই হোক, মিন হুয়ে এখনো জট পাকাতে পারে আর নিজের পছন্দ মতো বাছাবিচার করতে পারে। কিন্তু সু তিয়াঁর তো জট পাকানোর আর বাছবিচারের সুযোগটাও নেই।
একটা গভীর শ্বাস নিয়ে মিন হুয়ে প্রস্তুত হলো যা ঘটবে তা সহ্য করার জন্য।
বাড়িটা পরিস্কার করা হয়ে যেতে, ওর খুব ক্লান্ত লাগলো। আলো নিভিয়ে দিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়লো, কিন্তু অনেক ক্ষণ অবধি ঘুমোতে পারলো না। কে জানে কতো ক্ষণ, মিন হুয়ে কেবল এপাশ ওপাশ করতে লাগলো, হঠাৎ ফোন বাজতে লাগলো। দেখলো যে শিন ছি ফোন করছে।
“ঘুমিয়ে পড়েছিস?" শিন ছি জানতে চাইলো।
“না।”
“আমি এখনই বেরোতে চাই। আমি যদি গাড়ি চালাই, তবে আমি চার ঘন্টায় পৌঁছে যাবো।”
শিন ছি বলতে লাগলো, “ট্রেনে গেলে পৌঁছোতে কাল দুপুর হয়ে যাবে। পুরো সকালটা নষ্ট হবে।”
“রাতে গাড়ি চালানো কী নিরাপদ?" মিন হুয়ে মনে মনে সময়টা হিসেব করে নিলো, “আমরা যদি এখন বেরোই তবে আমরা রাতের মধ্যিখানে - দুটোর সময়ে - পৌঁছোবো। থাকবো কোথায়?”
“হোটেল বুক করা আছে।”
শিন ছির গলায় প্রত্যয়ের সুর, “তোকে সঙ্গে নিয়ে যাওয়াটা আমার জন্য দরকারী। কারণ কেবল মাত্র তুইই ব্রেসলেটটা চিনতে পারবি। আর শরীরের ছবিটাও। তুইই শেষ দেখে ছিলি সু তিয়াঁকে।”
“ওকে। পাঁচ মিনিট অপেক্ষা কর। আমি তাড়াতাড়ি তৈরি হয়ে নেবো।”
“আমি তোর বাড়ির নিচে গাড়িতে আছি।”
মিন হুয়ে চটপট জামা বদলে নিলো। ধড়ফড় করে নেমে এলো। কিন্তু এবারে গাড়ি চালাচ্ছে শিন ছি নিজে। বড়ো স্পোর্টস্ ইউটিলিটি ভেহিক্লটাতে দেঁ চেন বা চেন জিয়া জুনের কোনো চিহ্ন নেই।
স্যুটকেস তুলে রেখে, মিন হুয়ে বসলো যাত্রীর আসনে, বেঁধে নিলো সিটবেল্ট, “কেবল আমরা দুজন?”
“দেঁ চেন আর জিয়া জুন কাল ট্রেনে যাবে।”
“ছন ছন কোথায়?”
“ইয়ুন লু আর ন্যানি আছে ওর সঙ্গে।”
শিন ছি যেই গাড়ির ইঞ্জিন চালু করতে যাবে, দুম করে মিন হুয়ের চোখ পড়ে গেলো মাঝে রাখা রিয়ারভিউ আয়নাতে, হঠাতই বলে উঠলো, “হুহ্?”
বললো শিন ছির ডান চোখ তাক করে, “তোর চোখে একটা বড়ো লাল দাগ, কী হয়েছে? রক্তনালী ফেটেছে?”
লাল দাগটা ওর চোখের সাদা অংশের অর্ধেকের বেশি ঢেকে দিয়েছে। বেশ ভয়ঙ্কর দেখাচ্ছে।
গাড়ির আয়নায় দেখলো শিন ছি, কিন্তু গুরুত্ব দিলো না, “চোখের ওপরের পাতলা পর্দার নিচে কয়েকটা রক্তনালী ফেটেছে। ঠিক আছে। কয়েক দিনে রক্তটা শুষে নেবে ভেতরে।”
ওর চোখগুলো লাল আর ফুলে আছে, অবশ্যই কান্নাকাটি করেছে, কিন্তু এই প্রথম মিন হুয়ে ওর চোখের মধ্যে রক্তনালী ফাটতে দেখলো। মিন হুয়ে একটু দুশ্চিন্তা না করে পারলো না, “তোর দৃষ্টিতে প্রভাব পড়বে?”
“শিন ছি," মিন হুয়ে জানতে চাইলো, “তোর ড্রাইভার কোথায়?”
“আমি ওকে ডাকি নি। আমি নিজে গাড়ি চালাতে চাই।”
“আমার মনে হয় ড্রাইভারকে ডেকে নেওয়া ভালো। কিংবা দেঁ চেনকে।”
“এখন অনেক রাত। আমাকে দয়া কর। পারবি?”
গলার স্বরের অন্ধকারটাতে রাগ স্পষ্ট।
“আর তোর চোখ," সাবধানে বললো মিন হুয়ে, “তোর কী হাসপাতালে গিয়ে একবার দেখিয়ে নেওয়া উচিৎ? যেমন বলছিস তেমন যদি না হয়? যদি আরো গুরুতর কিছু হয়?”
মিন হুয়ের দুশ্চিন্তা হচ্ছিলো। এরকম করে রক্ত বেরোতে থাকলে ইনফেকসন হয়ে যাবে না তো? ওর একটা ভারি রকমের হার্টের অসুখ আছেই। আবার যদি চোখেও না দেখে তবে কেমন করে বাঁচবে ভবিষ্যতে?
“আমি যাবো না।" শিন ছি গর্জন না করে পারলো না, “একটু কম কথা বলতে পারবি?”
মিন হুয়ে চুপ করে গেলো। গাড়ি হাইওয়েতে উঠে সবচেয়ে বেশি গতিতে চলতে লাগলো। যতো বার গাড়ির গতি পথের নির্ধারিত গতিসীমার কুড়ি কিলোমিটার ওপরে গেলো, ততো বার মিন হুয়ে নিচু গলায় মনে করিয়ে দিলো শিন ছিকে।
আর কোনো কথা হলো না।
এক্সপ্রেসওয়েটা একদম নতুন, মাস ছয়েক হলো এটা তৈরির কাজ শেষ হয়েছে। এতো রাতেও অনেক গাড়ি রাস্তায়। বিশেষ করে বড়ো ট্রাক।
শিন ছি লেন বদলে বদলে গাড়ি চালাতে লাগলো। প্রত্যেক বাঁকে আগুপিছু করছে গাড়ি, প্রত্যেকটা ছোটো গাড়িকে পেরিয়ে যাচ্ছে।
দৃশ্যটা থেকে মিন হুয়ের মনে পড়ে যাচ্ছিলো যে রেসিং কারের খেলাগুলো ও কম্পিউটারে খেলতো সেগুলোর কথা। ও কোনো কথা বলতে সাহস করলো না, নিজের হাত দিয়ে শক্ত করে হাতল ধরে রইলো, ওর হাতের তালু ঘামছিলো আতঙ্কে।
শিন ছির গাড়ি চালায় বেশ ভালোই। প্রত্যেকবার লেন বদলের সময় ও সিগন্যাল দিচ্ছিলো। অবশেষে দু ঘন্টার হাইওয়ে উতরে গেলো কোনো বিপদ ছাড়া।
রাতের অন্ধকারে গাড়ি বাঁক নিলো একটা গ্রামের রাস্তায়। সেখানে নটা মোড় আর আঠারটা বাঁক। গাড়ি আস্তে চালানো ছাড়া কোনো উপায় রইলো না শিন ছির।
সারা রাস্তায় গাড়ির নিজের হেডলাইট ছাড়া কেবল মাথার ওপরে তারা জ্বলছে।
আধঘন্টাটাক চলার পরে একটা সাদা গিলি বয় দেখা দিলো সামনে। কোনো একটা কারণে ওটা চলছে খুব ধীরে ধীরে। শিন ছি ওটার সঙ্গে তাল মিলিয়ে গতি কমাতে বাধ্য হলো।
ব্যাপারটা চললো দশ মিনিট। গিলি বয় চলেছে ধীর বেগে, গতি ঘন্টায় পঞ্চাশ কিলোমিটারেরও কম।
যদি না চালক ঘুমিয়ে পড়ে থাকে, তবে পিছনের কালো এসইউভিটা ওর নজরে পড়ার কথা।
আরো দশ মিনিট একইভাবে চলার পরেও গিলি গতি বাড়ানোর কোনো লক্ষণ দেখলো না।
“Fuক।”
রাগে শিন ছির মুখ লাল হয়ে উঠেছে। ও হিংস্রভাবে গাল দিতে লাগলো।
মিন হুয়ে চারপাশে দেখতে লাগলো, “আমরা কী গতিসীমা ভুল পড়েছি?”
“না। গতিসীমা এই রাস্তাতে ঘন্টায় সত্তর কিলোমিটার।”
নিশ্চিত ভঙ্গীতে বললো শিন ছি।
একদিকে যাওয়ার জন্য একটাই মোটোর গাড়ি চলার লেন। মধ্যে একটাই গোটা হলুদ লাইন, মানে উল্টোদিক থেকে গাড়ি আসার লেনে গিয়ে সামনের গাড়িকে পেরিয়ে যাবার উপায় নেই শিন ছির।
“ওকে মনে করিয়ে দিলে কেমন হয়?" পরামর্শ দিলো মিন হুয়ে।
শিন ছির আলোর ঝলকানি গিলিকে মনে করালেও, গাড়িটা সেই সংকেত উপেক্ষা করলো। শিন ছি মরিয়া হয়ে হর্ন বাজাতে লাগলো।
গিলির চালক মনে হলো বুঝি রেগে গেলো আর গাড়ির গতি আরো কমিয়ে দিলো।
গিলি বয় |
আরো পনেরোমিনিট এরকম করে চলার পরে শিন ছি এতো রেগে গেলো যে ও দুহাতে পাকড়ে ধরলো স্টিয়ারিং-টা, ওর রগের শিরা দবদব করতে লাগলো। ব্যাপার দেখে, ওর মনে হতে লাগলো ও যদি ধাক্কা দিয়ে সামনের গাড়িটাকে জোরে ছোটাতে পারতো - এমন সময়ে হঠাৎ মিন হুয়ে বললো, “দ্যাখ, সামনে লাইনটা ভাঙা, মানে সামনের গাড়িকে পেরিয়ে যাওয়া যাবে।”
এক সেকেন্ডের মধ্যে শিন ছি চটপট গাড়িটাকে পেছনে ফেলে এগিয়ে গেলো। যখন গতি বাড়িয়ে এগিয়ে যাবে এমন সময় হঠাৎ গিলির যেনো ঘুম ভেঙে গেলো, ও পেছন পেছন তাড়া করতে লাগলো। সামনের হলুদ দাগ উপেক্ষা করে। আর সমানে বরাবর চলতে লাগলো। এমনকি গাড়ির ড্রাইভার জানলা দিয়ে মাথা বার করে ধমকও লাগালো, “হেড মাস্টারের গাড়ি বুঝি? নিকুচি করেছে, তোর কী পুনর্জন্মের সাধ হয়েছে যে আমাকে পেছনে ফেলে এগিয়ে গেলি?”
কামানো মাথা আর মাংসল মুখের লোকটা মিন হুয়ের দিকে থুথু ছুঁড়ে দিলো।
চমক কাটিয়ে শিন ছি আর মিন হুয়ে প্রতিক্রিয়া জানানোর আগেই গিলি ওদের পেছনে ফেলে এগিয়ে গেলো আর আবার ধীর গতিতে চলতে লাগলো।
শিন ছিও বাধ্য হলো গতি কমাতে। আর রেগে গিয়ে বললো, “এটা কী ধরনের অসভ্যাতা!”
কথা বলতে বলতেই গিলি গাড়িখানা দুম করে থেমে গেলো।
শিন ছি দুম করে ব্রেক লাগাতে বাধ্য হলো। রাগে ধাক্কা দিলো গাড়ির দরজায়, এমন কী দৌড়ে বেরিয়েও যাচ্ছিলো তর্ক-ঝগড়া করার জন্য। কিন্তু ওকে চেপে ধরলো মিন হুয়ে, “যাস না! ডাকাতি হতে পারে!”
হাতে একটা লোহার রড ধরে গিলির চালক এগিয়ে আসছিলো হিংসুটে ভঙ্গীতে।
মিন হুয়ে চেঁচিয়ে উঠলো, “শিন ছি! চল!”
শিন ছি দ্রুত বেগে গাড়ি পিছিয়ে নিলো, গিয়ার বদল করলো, দুই লেনের মাঝে জোড়া হলুদ লাইন নাকি একটা সে সবের তোয়াক্কা না করে, ঝড়ের বেগে পেরিয়ে গেলো গিলিকে।
গিলি আসতে লাগলো প্রায় ঘাড়ের ওপরে।
মিন হুয়ে ফোন বার করে, ম্যাপের ওপরে চটপট জুম ইন করতে লাগলো। চটপট দেখতে দেখতে বললো, “আমরা নেভিগেসন মেনে চলতে পারবো না। দু শো মিটার গিয়ে বাঁ দিকে যেতে হবে, তারপর চলতে হবে খানিকটা, তাতে এই হিংসুটে গিলি বয়ের পিছু ধাওয়া করার ব্যাপারটা থেকে নিস্তার পাওয়া যাবে।”
“তুই নিশ্চিত জানিস যে আমরা এর থেকে ছুটকারা পাবো?”
শিন ছি এক ঝলক দেখলো মিন হুয়ের দিকে, “রাস্তা থেকে নেমে যাবো … পাহাড়ী রাস্তা … সেটা কী খুব নিরাপদ হবে?”
“কলেজে পড়ার সময়ে আমি একটা কোম্পানিকে সাহায্য করে ছিলাম গাড়ি চালানোর উপযোগী সব চেয়ে ভালো রাস্তা দেখানোর নমুনা তৈরির কাজে। আমার অভিজ্ঞতার ওপরে ভরসা করতে পারিস।”
শিন ছি আর কিছু বললো না। মিন হুয়ের কথা শুনে চলতে লাগলো, গাড়ির পথ বদলাতে লাগলো, গিয়ে পড়লো একটা খানাখন্দ ভর্তি রাস্তায়। পুরো সময়টা মিন হুয়ে ম্যাপ দেখে দেখে পথ বলে দিতে লাগলো।
“সোজা একশো মিটার গিয়ে ডান দিকে বাঁক নে।”
“সোজা চল, সোজা চলতে থাক।”
“যখন চার মাথা মোড়টাতে পৌঁছোবি, তখন ডান দিক নিবি। তারপর সোজা গিয়ে বাঁ দিক পরের ছ শো মিটারে।”
“তার পরের চার মাথা মোড়ে পৌঁছে আবার বাঁ দিক নিবি।”
গিলিটা পিছন পিছন আসছিলো। কয়েকটা বাঁকের পরে গায়েব হয়ে গেলো।
শিন ছি রিয়ার ভিউ মিরর দিয়ে দেখে জানতে চাইলো, “তুই কী আমাদের গাড়িটা ওটার হাত থেকে বার করে এনেছিস?”
“ এখনো না।”
মিন হুয়ে বললো, “ও খুব কাছাকাছি ছিলো। আমি ওর ইঞ্জিনের আওয়াজ পাচ্ছি এখনো। ও এখনো কাছাকাছিই আছে।”
শিন ছি মিন হুয়ের কথা মতো গাড়ি চালিয়ে যেতে লাগলো, আর বাঁকের পরে বাঁক নিতে লাগলো। এভাবে দশ মিনিট যাওয়ার পরে, মিন হুয়ে সামনের ঘন ছায়াটা দেখিয়ে বললো, “তুই কী সামনের জঙ্গলটা দেখতে পাচ্ছিস? ওটার পাশ দিয়ে চুপচাপ চল।”
ওই জঙ্গলটার পাশেই লুকিয়ে পড়ার মতো একটা প্রাকৃতিক খাঁজ ছিলো। সেটার মধ্যে শিন ছির গাড়ি ঢুকে পড়লো নিঃশব্দে।
“থাম, ইঞ্জিন বন্ধ করে দে, আলো নিভিয়ে দে।”
ঘাপটি মেরে অন্ধকারে পড়ে রইলো ওরা পাঁচ মিনিট, আর গিলি গাড়িটা এলো, ওদের পেরিয়ে চলে গেলো, আরো সামনে চলে গেলো।
গাড়িটাকে দূরে চলে যেতে দেখে ওরা আস্তে আস্তে জঙ্গল থেকে বেরিয়ে এলো, রাস্তা বদলে বদলে চললো আরো আধঘন্টা। তারপর আবার জাতীয় সড়কে উঠে পড়লো।
ধীরে ধীরে শিন ছি শান্ত হলো। এক চুমুক জল খেলো, জানতে চাইলো, “তুই আই কিউ টেস্ট করিয়েছিস কখনো?”
“হ্যাঁ, একশো একত্রিশ। তুই করিয়েছিস কখনো?”
“একশো কুড়ি। অবশ্যই তুই আমার থেকে বেশি বুদ্ধিমান।”
“দুঃখ করিস না, তুই আমার থেকে অনেক বেশি বড়োলোক।”
শিন ছি নাক দিয়ে বিদ্রুপের আওয়াজ করলো আর হেসে উঠলো।
*****
ভোর দুটো দশে নেভিগেসন ওদের এনে পৌঁছে দিলো শু জিয়া ঝুয়াং যে গ্রামে থাকে তার দোর গোড়ায়। দুজনে গাড়ি থেকে নেমে চারপাশটা দেখতে লাগলো।
ও যা বলে ছিলো সেটা ঠিকই। গ্রামটা খুবই ছোটো। মুশুই নদীর পাশে।
মিন হুয়ে কয়েক পা এগোলো শিন ছির পিছু পিছু। রাতটা ভয়ঙ্কর চুপচাপ, মিন হুয়ে খামচে ধরে রইলো শিন ছির জামার হাতা। ওর বুকের মধ্যে দুড়দাড় করে কেঁপে চলেছে হৃদপিন্ড, কিন্তু ওর মগজটা একদম খালি।
তারার আলোয় নিঃশব্দে বয়ে চলা মুশুই নদী চকচক করছে চাঁদের আলোয়, ঠিকরে দিচ্ছে চাঁদের আলোর কণা।
গাছের পাতার কিনার দিয়ে হাওয়া বয়ে চলেছে, বীণার ঝঙ্কার তুলে।
বাঁ দিকের পাড়ে, একটা নিচু বিল দেখা যাচ্ছে অস্পষ্টভাবে, লম্বা লম্বা নলখাগড়ায় ঢাকা। যদি মিন হুয়ের অনুমান ঠিক হয়, তবে ঐ বিলেই পাওয়া গিয়ে ছিলো সু তিয়াঁর দেহ।
“যে হোটেলটা তুই বুক করেছিস সেটা কী এই গ্রামেই?”
মিন হুয়ের খুব ঘুম পাচ্ছে, বড়ো বড়ো হাই তুলছে। ও এক ঝলক তাকিয়ে একটা খামার বাড়ি দেখতে পেলো নাবালে, কিন্তু সেটাকে কোনো ভাবেই হোটেল বলে মনে হলো না।
“চল, আগে শু ঝি হুয়ার সাথে দেখা করে নি। নিশ্চিত হয়ে নি যে মানুষটার দেহ ও তুলে ছিলো নদীর থেকে সেই মানুষটা সু তিয়াঁই কিনা। তারপরে আমরা হোটেলে যাবো। এখান থেকে উত্তরে, কুড়ি মিনিটের পথ, গাড়িতে।”
অবাক হয়ে বললো মিন হুয়ে, “সেটা কী ঠিক হবে? এখন রাতের মধ্যিখান, দুটো বাজে, সব লোক ঘুমোচ্ছে, ও-ও নিশ্চয়ই ঘুমোচ্ছে।”
“তাহলে ওকে জাগাবো ঘুম থেকে।”
“শিন ছি, এরকম রাতে ওকে ওস্কানোর কী আছে? লোকটার অপরাধ করার নজির আছে আগে।”
“তাতে কী?”
শিন ছির কথার সুর ভয়ানক, “চুপ কর। লোকটা একটা মানুষকে যা হোক তা হোক করে পুঁতে দিয়েছে। আর আমি লোকটার সাথে এখনো বোঝা-পড়া করি নি।”
“তাহলে তুই কী চেক নিয়ে এসেছিস?”
মিন হুয়ে আবার জিজ্ঞেস করলো, “ও তো এখানে এসেছে তোর দেওয়া পুরস্কার নেবে বলে।”
“হ্যাঁ। ও সোজা ভাঙানোর চেক চেয়েছে, যার থেকে ও নগদ টাকা পাবে, যেটা থেকে টাকা পেতে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট লাগবে না। এবং, এও বলেছে যে আমরা যদি সনাক্ত করি যে দেহটা সু তিয়াঁরই তাহলে আমরা যেনো পুলিশে না যাই। যদি একান্ত করতেই হয় পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ, তাহলে যেনো ওর কথা কিছু না বলি। যেনো বলি যে দেহটা আমরা নিজেরা খুঁজে পেয়েছি।”
“তুই রাজি হয়েছিস?”
“বেশ, আমি শুধু যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব ততো তাড়াতাড়ি নিশ্চিত হতে চাই যে ও যার কথা বলছে সে সু তিয়াঁ কিনা।”
অপরিচিত মানুষের পায়ের শব্দে গ্রামের কুকুর চেঁচিয়ে উঠলো। হঠাৎ ঘরে ঘরে আলো জ্বলে উঠলো।
গ্রামে ঢোকার মুখের শু ঝি হুয়ার বাড়ি। দু জনে ফ্ল্যাশ লাইট জ্বেলে বাড়ির নম্বর পড়ে খুঁজতে লাগলো শু ঝি হুয়ার বাড়ি। চটপট খুঁজেও পেয়ে গেলো।
শিন ছি দরজায় জোরে জোরে ঘা দিলো। খানিক পরে একটা লম্বা লোক বেরিয়ে এলো। পরনে ডেনিম জ্যাকেট। হাই তুলতে তুলতে জিজ্ঞেস করলো, “এ তো মাঝ রাত! আপনারা কাকে খুঁজছেন?”
“আমি শু ঝি হুয়া কে খুঁজছি।”
এক মূহুর্তের জন্য লোকটা চমকে উঠলো, “আমিই শু ঝি হুয়া।”
“আমি শিন ছি, এ মিন হুয়ে। দেঁ চেন আমাদের বন্ধু। গতকাল আমাদের কথা হয়ে ছিলো।”
“আপনারা কী সেই মেয়েটিকে খুঁজছেন? কী যেনো নাম তার, সু তিয়াঁ?”
“হ্যাঁ। আমরা বুঝে উঠতে পারি নি আপনার কাছে যে প্রমাণ আছে সেটা সু তিয়াঁর স্মারক কিনা।”
“দেঁ দেন বলে ছিলেন যে আপনারা আগামী কাল এসে পৌঁছোবেন।”
“আমি অপেক্ষা করতে পারবো না।”
শু ঝি হুয়া এক ঝলক চোখ বুলিয়ে নিলো শিন ছির মুখের ওপরে। ওর চোখ দুটো ফুলে আছে, লালও হয়ে আছে। তারপরে ও শিন ছির পিছনের দিকে তাকালো, নিশ্চিত হয়ে নিলো যে পিছনে আর কেউ নেই। তারপর বললো, “আসুন।”
ঘরের ভেতরের আলো খুবই নিস্তেজ। কংক্রিটের মেঝে ভর্তি অনেক গর্ত। দুটো বেতের চেয়ার, একটা টেবিল, আর চারটে বেঞ্চ ছাড়া বসার ঘরের ভেতরে আর কোনো ভদ্রস্থ আসবাব নেই।
শু ঝি হুয়া ওদের বসতে বললো। ভেতরের ঘরে গেলো, একটা ছোটো বাক্স নিয়ে বেরিয়ে এলো। তার থেকে একটা ব্রেসলেট আর একটা ছবি বার করলো।
“ছবিটার কথা বলি - মেয়েমানুষের এই ছবি না দেখাই ভালো।”
লোকটা সোজাসুজি বললো, “নদীতে অনেক মাছ। মুখটা চেনাই যায় না, জামাকাপড় অবশ্য আছে। আপনি একবার দেখবেন নাকি?”
শিন ছি ব্রেসলেটটা মিন হুয়ের হাতে দিলো, বুক ভরে নিঃশ্বাস নিলো, ছবির দিকে একবার তাকালো, আর পরের মূহুর্তেই ছবিটা উল্টে রাখলো।
মিন হুয়ে পকেট থেকে বার করলো একটা কাপড়ের টুকরো যেটা দিয়ে রুপোর জিনিস পরিষ্কার করা যায়। ভালো করে ব্রেসলেটের রুপোর মাছটাকে মুছলো কাপড়টা দিয়ে। ফ্ল্যাশলাইটের আলোয় ভালো করে দেখলো রুপোর মাছটাকে। তারপরে ঘাড় নেড়ে বললো, “ব্রেসলেটটা সেইটাই। ঠিক আছে একদম।”
“জানলি কী করে?”
“আমার বাবা আমার জন্য যে ব্রেসলেটটা বানিয়ে ছিলেন তাতে চুনো মাছের গায়ে সতেরটা আঁশের টুকরো ছিলো। স্বাভাবিক চুনো মাছের গায়ে সাতটার বেশি আঁশের টুকরো থাকে না। চোখের মণিগুলো ফেটে যেনো বেরিয়ে আসছে। অন্য চুনো মাছের চোখ ঢোকা হয়।”
শিন ছি নিজের হাতের আঙুল দিয়ে ছবিটা ঢেকে সেটা বাড়িয়ে দিলো মিন হুয়ের দিকে, “এই জামাটা কোথা থেকে এলো? ঐ দিন কী ও এরকম জামাকাপড় পরে ছিলো?”
মিন হুয়ে অনেক ক্ষণ ধরে ছবিটা দেখলো, নরম সুরে বললো, “আমি তো খেয়ালই করি নি ও কেমন জামাকাপড় পরে ছিলো সেদিন … আমি শুধু জানি, ও একটা হলুদ জ্যাকেট পরে ছিলো।”
শরীরের ওপরের অংশটা একটা সাদা টি-শার্টে ঢাকা। সাধারণ ধরনের, কোনো বিশেষ চিহ্ন কিছু নেই। কোমরের নিচের অংশ একটা ঢিলে ডোরা কাটা খাটো ঝুলের প্যান্টে ঢাকা। মিন হুয়ের মনেই নেই যে ঐ প্যান্টটা সু তিয়াঁ বাসে পরে ছিলো কিনা। পায়ের জুতো নেই। কেবল এক জোড়া খালি পা পড়ে আছে - সম্ভবত মাছে খাওয়া, গর্ত আছে, ক্ষত আছে।
“তার মানে তোর কোনো স্মৃতিই নেই যে সে দিন ও কী ধরনের জামাকাপড় পরে ছিলো?”
বিদ্রুপ না করে পারলো না শিন ছি।
“আমার মনে হয় না যে বাসে ও এই জামাকাপড় পরে ছিলো।" বিড়বিড় করে বললো মিন হুয়ে।
“কী রঙের প্যান্ট পরে ছিলো?" জোর করলো শিন ছি।
“আমার মনে নেই।”
অনেক মনে করার চেষ্টা করলো মিন হুয়ে, অনেক ক্ষণ ধরে। অবশেষে মাথা নেড়ে বললো, “হোটেলে থাকার সময়ে, ও স্নানে গিয়ে ছিলো। স্নান সেরে কেবল একটা গা মোছা তোয়ালে পরে ছিলো, যখন আমার সাথে কথা বলছিলো। তারপরে ও ঘুমিয়ে পরে ছিলো, কেবল শরীরের ওপরে জামা পরে ছিলো।”
“এক জোড়া সাসপেন্ডর ছিলো উপরের অংশে। আর নিচে অন্তর্বাস …”
মিন হুয়ে মন দিয়ে ছবির জামাকাপড় দেখতে দেখতে বিড়বিড় করলো, “এই তো, সাদা টি-শার্টে এক জোড়া সাসপেন্ডর আছে, দেখা যাচ্ছে। এই প্যান্ট জোড়া …”
হঠাৎ কিছু যেনো মনে পড়ে গেলো ওর। ফোন বার করে ছবি দেখতে লাগলো। মোমেন্টস্-এ সু তিয়াঁর ছবির পর ছবি উল্টে যেতে যেতে, শেষে একটা ছবি দেখিয়ে বললো, “দ্যাখ, ওর এরকম প্যান্ট ছিলো।”
ছবিতে সু তিয়াঁর শরীরের অর্ধেক দেখা যাচ্ছে।
একটা ম্যাগনোলিয়া গাছের নিচে দাঁড়িয়ে আছে। হাতের আঙুল দিয়ে একটা ‘V’ চিহ্ন করেছে। ছবির ফোকাস শরীরের ওপরের অংশে, তাই প্যান্টের যেটুকু ছবিতে ধরা পড়েছে, সেটা এক সেন্টিমিটারেরও কম। শিন ছি ছবিটা বড়ো করে দেখলো। দুটো ছবিতে যে প্যান্ট দেখা যাচ্ছে সুগুলোর ডুরের তুলনা করলো। মিন হুয়েও নিজের মাথাটা বাড়িয়ে দিয়ে দেখছিলো। প্যান্টের ডুরেতে তিন রকমের রঙ আছে - একটা কালির নীল, আরেকটা হালকা বেগুনী আর অন্যটা বালির হলুদ, ডুরেগুলো চওড়ায় সমান নয়। শিন ছি ছবিটাকে বড়ো করে ছোটো করে দুটো ছবির ডুরেগুলোর অনুপাত সমান করলো।
“এটাই ঠিক।”
মিন হুয়ে ঘাড় নাড়লো, “এটা ওরই প্যান্ট। চুলের ধরনটাও একই রকম। ওর চুল কোঁকড়া ছিলো। ভিজে গেলে খুব কুঁকড়ে যেতো প্রায় স্প্রিং-এর মতো।”
“যদি তোমরা নিশ্চিত না হও, তবে তোমরা ডিএনএ দেখতে পারো।”
বলে উঠলো শু ঝি হুয়া।
“দেখবো আমরা।”
লোকটার দিকে তাকিয়ে শিন ছি জিজ্ঞেস করলো, “কোথায় কবর দিয়েছেন ওকে?”
শু ঝি হুয়া এক মূহুর্ত চুপ করে থাকলো, তারপর বললো, “গ্য, আমি বুঝতে পারছি তোমার কেমন মনে হচ্ছে। কিন্তু ঐ জায়গাটা পায়ে হেঁটে যাওয়া সহজ নয়। তারওপর এখন আবার মাঝরাত। অন্ধকার, পথটাও পিছল। কেউ পড়ে গেলে ভালো হবে না। ভোর অবধি অপেক্ষা করো। তাছাড়া আমি খামারে কাজ করেছি সারা দিন। আমার খুব ঘুম পেয়েছে। আমি কিছুক্ষণ ঘুমোতে চাই।”
ও খুব উঁচু স্বরে কথা বলছে। মিন হুয়ের মনে হলো যে লোকটা যেনো ঠারে ঠোরে বোঝাতে চাইছে শিন ছি ওকে চেক দেবে একটা, যতো ক্ষণ না ও চেক দেখছে, ততো ক্ষণ ও কিছুতেই বলবে না যে ওর গ্রাম থেকে বেরিয়ে কোন দিকে গেলে পাওয়া যাবে সু তিয়াঁর দেহ।
শিন ছিও বুঝলো, বিদ্রুপের ভঙ্গীতে বললো, “আমাকে আগে বললে টাকাটাও আগে পাবে। সেটাই ভালো নয় কী? আমরা ওর দেহটা এখনই নিয়ে যেতে চাই।”
“ব্যাপারটা টাকার নয়, গ্য। ও ওখানে শুয়ে আছে, তা আজ চার বছরেরও বেশি। আরো দুয়েক দিন বেশি থাকলে ওখানে আমার কিছু যায় আসে না। এটাই কী কারণ নয়?”
“আমার যায় আসে।”
শিন ছি গর্জে উঠলো নিচু গলায়, “আমি আর একদিনও শুয়ে কাটাতে পারবো না।”
ও একটা খাম বার করে গুঁজে দিলো লোকটার হাতে, “এই তোমার ক্যাশ করে নেবার বেয়ারার চেক।”
শু ঝি হুয়া খামটা খুলে দেখে নিলো একবার ভেতরে কী আছে। সব ঠিক আছে সে ব্যাপারে নিশ্চিত হয়ে, ও উঠে দাঁড়ালো, নিয়ে নিলো বেলচাটা আর একটা বালতি, দরজার পেছন থেকে, “আমার সঙ্গে এসো।”
~~~~~~~~~~~~
সম্পূর্ণ বই বিনামূল্যে : https://dl.bookfunnel.com/lcj5vznt96
Link to Previous Post in the Series : https://projectionofnaught.blogspot.com/2024/10/jpda-chapter-64.html
Link to following Post in the Series : https://projectionofnaught.blogspot.com/2024/10/jpda-chapter-66.html
No comments:
Post a Comment