Monday, October 14, 2024

JPDA - Chapter 69

 ৬৯. লাভের খোঁজ



মিন হুয়ে চমকে উঠলো, “প্ল্যাকার্ড?”

এই প্রথম মিন হুয়ে শুনলো শব্দটা নিতান্ত মূর্খের মতো।

“এর মানে এই যে বিবিজি ইচ্ছে প্রকাশ করছে যে ওরা গুয়ান ছাও ইন্টারন্যাশন্যাল নিয়ে নিতে চায়। আর এই মূহুর্তে গুয়ান ছাও-এর যতো মূলধনের অংশীদারী আছে বাজারে তার পাঁচ শতাংশের বেশি ওদের হাতে। নিয়ম অনুযায়ী ওদেরকে প্ল্যাকার্ড তুলে সব্বাইকে জানাতে হবে কথাটা।”

সাও মু বুঝিয়ে বলতে লাগলো, “গুয়ান ছাও-এর স্টকের দাম বেশি নয়। তার ওপরে শেয়ার মার্কেটে বিশেষ ওঠাপড়া নেই এ বছরে, ফলে এই সস্তার দরদামের সুযোগে, যদি শিন ছি এটাই ভাবছে, তবে এটা একটা ব্যাপক সুযোগ।”

মিন হুয়ে তবুও বুঝতে পারলো না, “কী করে ও গুয়ান ছাও-এর মতো এতো বড়ো একটা কোম্পানি কিনে ফেলবে? খরচা কতো হবে? দাম কতো?”

“পিছনে নিশ্চয়ই বেশ ভালো রকমের পয়সার যোগান আছে, না হলে, এতো বড়ো একটা মাছ - একা একা গিলে ফেলা চাট্টিখানি কথা নয়।”

সাও মু আরো বললো, “চেং ছিরাং নির্বোধ নয়। যদি কিছু ঘটে তবে নিশ্চয়ই ওর পাশে দাঁড়ানোর অনেক লোক আছে। কথায় আছে না দূর্ধর্ষ ল্বং (ড্রাগন)-ও এলাকার শেঅ (সাপ)-কে হারাতে পারে না – শিন ছির চালটা খুবই ঝুঁকির, ওকে হয়তো কামড় খেতে হবে, যদি না গিলতে পারে।”

সব শুনে মিন হুয়ে ঘাবড়ে গেলো। শুরুতে ও জানতো গুয়ান ছাও-এর সঙ্গে লড়াই করবে কী করে। ভাব ছিলো, ও জিততেও পারে, যদি ও যুক্তি দিয়ে কাজ করে, কিন্তু শেষে এটা অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই হয়ে দাঁড়ালো, আর ওর প্রাণ প্রায় যেতে বসেছে। শিন ছি বিদেশী, তার ওপরে বিনচেং-এ পা রাখার মাত্র কয়েক মাসের মধ্যে ও বিনচেং-এর সব চেয়ে বড়ো প্রযুক্তি কোম্পানির দখল নেওয়ার চেষ্টা করছে, পারবে কী? বেশ কিছু ক্ষণ ওর মনে শুধু সন্দেহের বন্যা বয়ে গেলো, “যদি গুয়ান ছাওর-এর দখল বিবিজি নিয়ে নিতে পারে, তাতে লাভ কী হবে?”

“অবশ্যই অনেক লাভ আছে।” সাও মু কাঁধ ঝাঁকালো, “গুয়ান ছাও সব সময়ে ভালো লাভ করে এসেছে। একে বলে কম ঝুঁকি, লাগাতার রোজকারের বন্দোবস্ত, আর এতে অংশীদারদের লাভের অংশ দিতে খরচাও কম পড়ে। যদি এটা ভালো করে দেখাশোনা করা হয়, আর স্টকের দাম বাড়ে, তবে বিবিজি এর স্টক বেচে অনেক টাকা পেতে পারে অল্প সময়ের মধ্যে। গুয়ান ছাও-এর মধ্যে প্রযুক্তির উপাদানগুলোর নিয়ন্ত্রণও পাওয়া যাবে, আবার সিদ্ধান্ত নেবার বন্দোবস্তটাও নিয়ন্ত্রণ করা যাবে, তার সঙ্গে ওর হাতে যা মালমশলা আছে, সে সব যদি মেশাতে পারে, ভাবো একবার প্রযুক্তি শিল্পক্ষেত্র ও টাকার বাজারের যোগাযোগটা যা হয়ে উঠবে …”

সাও মু ভেঙে ভেঙে বিশ্লেষণ করে দিতে লাগলো অনেক কিছু, আর মিন হুয়ে সে সবের আধখানা বুঝলো, জানতে চাইলো, “বিবিজির কতো খরচা পড়বে গুয়ান ছাও-কে নিয়ন্ত্রণ করতে?”

অঙ্কটা শুনে মিন হুয়ের মুখ হাঁ হয়ে গেলো, “হাজার কোটি? বিবিজি কী অতো টাকা জোগাড় করতে পারবে?

ওর ধারণা বিবিজির এসিয়া-প্যাসিফিক শাখাটা খুব বড়ো নয়। বেজিং-এর অফিসটা কেবলমাত্র একটা তলা জুড়ে ছিলো, সব মিলিয়ে এক শো জন বা দু শো জন কর্মী ছিলো, যেটা গুয়ান ছাও-এর তুলনায় কিছুই নয় প্রায়।



“আমার ভয় যে বিবিজি গোষ্ঠীর ওপরে ভরসা করা যায় না। তবে ওদের গোষ্ঠীর পিছনে আছে য়ুআঁ মাও গোষ্ঠী। ল্বব্যাঁ হলেন সু ঝং হে। ওরা বিবিজির বড়ো অংশীদার। ঐ সংস্থাটা আসলে বিমার ব্যবসা করে, অনেক পয়সা ওদের।”

অবশেষে মিন হুয়ে বুঝতে পারলো যে আগের রাতে শিন ছি কেনো ওর সঙ্গে দেখা করে ছিলো। কেনো ওর কাছে এসে ছিলো আর বলে ছিলো চাকরি ছেড়ে দিতে।

এই মূহুর্তে, চেং ছিরাং, খবরটা নিশ্চয়ই পেয়েছে আর ভাবছে মিন হুয়ে বুঝি শিন ছির সঙ্গে হাত মিলিয়েছে, যৌন হেনস্থার ঘটনাটার প্রতিশোধ নেবার জন্য, তাই ও কিছুতেই মিন হুয়েকে ভালো ভাবে বাঁচতে দেবে না, তাই না?

“তাহলে, আমাদের কী করা উচিৎ?”

নিচু স্বরে জানতে চাইলো মিন হুয়ে, “পাহাড়ের মাথায় বসে বাঘের লড়াই দেখবো?”

“হ্যাঁ, বটেই তো। এখানে … অনেকগুলো ক্ষমতার কেন্দ্র, আমরা গুণিও না।”

সাও মু হাত নেড়ে বললো, “গুয়ান ছাও-এর বাড়বাড়ন্ত গত দশ বছরের ব্যাপার। তার সঙ্গে চেং ছিরাং-এর কোম্পানি চালানোর ক্ষমতাও যুক্ত। তলিয়ে দেখলে ওকেও প্রতিষ্ঠাতাদের একজন বলে ধরা যায়। ওর মানসিকতা নিয়ে ও কী করে কারুর থেকে খেলো হতে পারে? ও-ও নিশ্চয়ই মরিয়া লড়াই লড়ছে। শিন ছি চাইছে ওকে বার করে দিয়ে কোম্পানির নিয়ন্ত্রণ নিতে … সেটা খুব সহজ হবে না।”

 “ও যে এটা করলো, সে জন্য তোমার মনে কোনো আলোড়ন নেই?”

যতো মিন হুয়ে ব্যাপারটা ভাবতে লাগলো, ততো ওর ভয় করতে লাগলো, মনে হতে লাগলো যেনো ঘন মেঘ জমে প্রায় মাটি ছুঁয়ে ফেলেছে, এবার বুঝি পাহাড় ছাপিয়ে বৃষ্টি নামবে। 

সমাধিক্ষেত্রে শিন ছি বলে ছিলো বটে ও চেং ছিরাং-এর সঙ্গে হিসেব মেটাবে, কিন্তু তার যুক্তির বিন্যাসটা যে এরকম হবে তেমনটা মিন হুয়ে মোটেই আশা করে নি।

মিন হুয়ের মতে, এই লড়াইতে এক হাজার শত্রু সৈন্য মারতে গিয়ে নিজের আটশো সেনার প্রাণ যাবে। 

“ব্যবসাদারেরা লাভের পিছনে দৌড়োয়, পুঁজি ছোটে ফিরতি পুঁজির পিছনে। শিন ছি একজন বিনিয়োগকর্তা, ও শুধু সুযোগ দেখে আর টাকা বাড়াতে চায়। কী করে এতে কোনো আবেগ থাকবে? যদি থাকেও আবেগ, টাকাটা তো আর নিজের টাকা নয়, এর বেশিরভাগটাই অন্য লোকের টাকা, আর ও অন্য লোকের টাকা নিয়ে নিজের অনুভবের লালন করবে – ও যদি এমন মানুষ, তবে ওর এই ব্যবসা ছেড়ে দেওয়াই ভালো, শেষে ওর ভালো হবে না এতে।”

সাও মু বলতে লাগলো নিজের মোবাইল ফোনে চোখ রেখে, আবার খানিক ক্ষণ পরে বলে উঠলো, “আহ্‌”

“দেখো, এখানে একটা খবর বেরিয়েছে গুয়ান ছাও ইন্টারন্যাশন্যালের যৌন হেনস্থার খবর - পোস্টটা রিপোস্ট করা হয়েছে লাখ বারের বেশি, তাও আধঘন্টার মধ্যে – শিন ছি সত্যিই বেশ কাজের। তৈরি না হয়ে ও যুদ্ধে নামেই না। উইচ্যাটে দেখো তোমার - আমি ফরওয়ার্ড করেছি খবরটা।”

মিন হুয়ে ফোন চালু করলো, দেখলো ছিয়াঁ ঝির বিখ্যাত অফিসিয়াল অ্যাকাউন্ট, তাতে একটা প্রবন্ধ যৌথভাবে লিখেছে ইয়াং লু আর চেন জিয়া জুন, “চুপ করে থাকা মানে হাত মেলানো - বিনচেং-এর কাজের জায়গায় যৌন হেনস্থার তদন্ত" পুরো লেখাটা পাঁচ হাজার শব্দের বেশি লম্বা, তার অর্ধেকটাতেই ওরা আলোচনা করেছে গুয়ান ছাও ইন্টারন্যাশন্যাল নিয়ে।

সংবাদদাতার উৎসাহে পাঁচ জন মহিলা যারা চেং ছিরাং-এর যৌন হেনস্থার শিকার তারা জানিয়েছে যে কাজের সুযোগ আর পদমর্যাদার ক্ষমতা ব্যবহার করে চেং ছিরাং কিভাবে ওঁদেরকে হেনস্থা করেছে।

 রিপোর্টটা মন দিয়ে পড়ে মিন হুয়ে না বলে থাকতে পারলো না, “আমার ভাই রিপোর্টটা লিখেছে। এর সাথে শিন ছির কোনো সম্পর্ক নাও থাকতে পারে”

“আর কদিনের মধ্যেই বিবিজি কিনতে শুরু করবে, কেবল কিনবে, কিনবে আর কিনবে, পাগলের মতো কিনবে।”

সাও মুকে দেখে মনে হলো ও যেনো অগুণতি ফুটি খেয়ে ফেলেছে।

“তোমার কী মনে হয়, গুয়ান ছাও-এর দখল নিতে বিবিজি সফল হবে?”

মিন হুয়ের হৃৎপিন্ড ফড়ফড়িয়ে উঠলো, “আমার মনে আছে শিন ছি কিন্তু চেং ছিরাং-এর সঙ্গে একসঙ্গে কাজ করার কথা আলোচনা করছিলো এই কদিন আগেই, এই সম্ভাবনাও কাটিয়ে দেওয়া যায় না যে পুরো ব্যাপারটাতে চেং ছিরাং খুশিই হচ্ছে।”

“রাখো সম্ভাবনার কথা। চেং ছিরাং কখনোই বিবিজিকে ভোগের ভাগ দেবে না।”

সাও মু শেষ নুড্‌লটা খেয়ে ফেললো, মুখে কয়েক টুকরো ধনে পাতা ফেলে দিয়ে চিবিয়ে নিলো, “জলদি করো, আর শিন ছিকে বোঝাও সাবধান হতে। কোনো ভাবেই যেনো চেং ছিরাং-কে খাটো করে না দেখে, কতো লোকই তো ওর বিরুদ্ধে গিয়ে হোঁচট খেয়েছে। তুমি যদি এই ব্যাপারটা নিয়ে কথা না বলো তো বোলো বা’অ্যানের কথা। ওটা ও বার করে নিয়ে যায় নি?”

মিন হুয়ে বিত্ত আর অর্থনীতির বিশেষ কিছুই বোঝে না আর ওর বোঝার উৎসাহও নেই। কিন্তু সাও মু হুয়াছিং ইউনিভার্সিটির এমবিএ। ও তো য়ুআঁলাই আর বা’অ্যান-এ ফিনান্স আর মার্কেটিং দুটোই দেখতো, তার মানে ওর মতামতটা পেশাদারী মতামত।



দুপুরে খাওয়া হয়ে যাবার পরে, অফিসে ফিরে, মিন হুয়ে ধড়ফড় করে ফোন করলো জিয়া জুনকে।

জিয়া জুন কোম্পানি অধিগ্রহণের ব্যাপারে দেখা গেলো কিছুই জানে না, “শিন ছি গ্য,, কখনোই আমাকে বলে নি যে ও গুয়ান ছাও নিতে চায়। কিন্তু এই তদন্তের পরামর্শটা উনিই আমাকে দিয়ে ছিলেন। শুরুতে আমার একটু অনিশ্চয়তা ছিলো ব্যাপারটা নিয়ে। এই বিষয়টাতে আমার কোনো কিছুই জানা নেই। জ্ঞানও নেই , অভিজ্ঞতাও নেই। তাছাড়া আমার ভয় ছিলো যে আমি হয়তো সাপটাকে ভয় দেখিয়ে ফেলবো, কিন্তু ইয়াং লু অভিজ্ঞ সাংবাদিক, ও আমাকে প্রচুর সাহায্য করেছে। আর তুমি আমাকে ভুক্তভোগীদের একটা ফর্দ দিয়েছো ওদের সঙ্গের যোগাযোগ করার জন্য। ওদের সাক্ষাৎকারগুলো খুব সহজ হয়ে গিয়ে ছিলো। তবে খবরটা কবে বেরোবে, সেটা বোধ হয় শিন ছি গ্য জানতো না, সে সময়টা ল্বব্যাঁ ঠিক করে, তুমি জানো, আমাদের কী রকম লম্বা একটা পদ্ধতি আছে পান্ডুলিপি মূল্যায়ণ করার, আবার এরকম সংবেদনশীল বিষয়ের জন্য পদ্ধতি আরো লম্বা …”

তার মানে শিন ছি তৈরি হয়েই নেমেছে, ভাবলো মিন হুয়ে। একটা গরম পাত্রের ওপরে চড়ে বসা পিঁপড়ের মতো ও ঘাম ছিলো দরদর করে। ওর ইচ্ছে করছিলো এক্ষুণি শিন ছিকে জিজ্ঞেস করতে, কিন্তু ওর আশঙ্কাও ছিলো যে শিন ছি হয়তো খুবই ব্যস্ত আছে, ওর সঙ্গে মোটেই কথা বলতে পারবে না। সেই জন্য ও অফিসের মধ্যেই ঢুকে বসে রইলো প্রোগ্রাম লেখার জন্য যতোক্ষণ না বিকেল পাঁচটা বাজে। সেটা প্রায় কাজ থেকে বেরিয়ে পড়ার সময়।




তারপরে ও শিন ছিকে ফোন করলো, কিন্তু সোজাসুজি কথা বলার সাহস হলো না ওর। অনেক ক্ষণ ধরে একথা সেকথা বলে কুশল বিনিময় করার পরে, ও বললো, “আমি শুনলাম যে বিবিজি নাকি গুয়ান ছাও কিনে নিতে চায়। তুই আজকে কোনো সাইনবোর্ড লাগিয়েছিস?”

“দোয়ে।”

“শিন ছি, তুই যদি আমাকে সাহায্য করার জন্য, রাগ করে, এটা করে থাকিস — তাহলে এটা করার একদম মানে হয় না।”

“তুই আমাকে যতোটা মহান ভাবছিস, আমি ততোটা মহান নই। আমি সবটাই করছি আরো টাকা করার জন্য।”

ও সোজাসুজি বলে দিলো, “যদি টাকা করার সময়ে, চেং ছিরাং-কে শেষ করে দেওয়া যায়, তাহলে আমি খুবই সুখী হবো ব্যাপারটা ফলতে দেখলে।”

“শিন ছি, আমি জানি তোর ওপরে ভরসা করা যায়। কিন্তু তোকে ভীষণ সজাগ থাকতে হবে যখন তুই চেং ছিরাং-এর সঙ্গে কিছু করছিস –”

“বেশ, আমি মানসিকভাবে প্রস্তুত।”

“চেং ছিরাং –”

মিন হুয়ে উত্তর দেবার চেষ্টা করছিলো শিন ছিকে সতর্ক করে দেবার জন্য।

শিন ছি দুম করে ওর কথাতে বাধা দিলো, “যা হোক, তুই আমাকে বললি না কাল রাতে তোর সারা জীবনের ঝামেলার বন্দোবস্ত করতে?”

মিন হুয়ে একটা “ওহ্‌” না বলে থাকতে পারলো না।

“আমি তোর সঙ্গে খুব মানানসই একজনের আলাপ করিয়ে দিতে চাই।”

“এখন?”

“তুই তো বছর শেষ হবার আগেই সিদ্ধান্ত নিতে চাস আর বসন্তোৎসবের সময়ে সার্টিফিকেট পেতে চাস, তাই না? এখন তো নভেম্বর চলছে। তাহলে তাড়াতাড়ি করতে হবে তো সব।" বললো শিন ছি।

“ওকে, বল আমাকে।”

“ছেলেটার নাম ছিন রুই। ও প্যারাগ্লাইডিং শেখায়।”

“প্যারাগ্লাইডিং?" মিন হুয়ে ধাঁধায় পড়ে গেলো একটু।

“কেনো তোর কী উঁচুতে চড়তে ভয় লাগে?”

“না।”

মিন হুয়ে বললো, “আমি বান্‌জি জাম্পিং করতে ভালো বাসি, কিন্তু প্যারাগ্লাইডিং কখনো করি নি, দুটোর জন্য একই রকমের শারিরীক অবস্থা লাগে, তাই তো?”

“বেশ ভালো। শহরের উত্তরে একটা আছে। তিয়াঁয়িং শান প্যারাগ্লাইডিং বেস। ওখানে ছিন রুই কোচের কাজ করে। আমি কালকে সকাল নটার সময়ে বেসের কফির দোকানে তোর সঙ্গে ছিন রুই-এর দেখা করার ব্যবস্থা করে রেখেছি।”

“এটা কী … এতো জরুরি?”

মিন হুয়ে আগে থেকে ভাবে নি কিছুই, “আমি তো কাজেও ব্যস্ত আছি এখন।”

“কাল তো শনিবার। ও বলেছে যে ও প্রথমে কথা বলবে, তারপরে তোকে প্যারাগ্লাইডিং-এ নিয়ে যাবে।”

শিন ছি খুব জোর দিয়ে উৎসাহ দিতে লাগলো, “আমি হিসেব করে রেখেছি, এতে তোর কোনো ক্ষতি হবে না। একটা উড়ান নশো য়ুআঁ। তোকে সেটাও দিতে হবে না। পুরোটাই লাভ।”

“তাহলে তো পরস্পরকে অন্তত পছন্দ করতে হবে, তাই না? তা না হলে, ব্যাপারটা লোকটার থেকে সুযোগ নেওয়া হয়ে যাবে না …”

“সে ঠিক আছে। তোর যদি পছন্দ নাও হয়, তুই একটু খেলতে পারিস, তবে সজাগ থাকিস, নেশা না হয়ে যায়।”

“ছিন রুই-এর আদত অবস্থাটা সম্পর্কে আমাকে একটা ধারণা দে। আমার একটা মানসিক প্রস্তুতি দরকার।”

“ধারণা? কেনো আমি যা দেখেছি তার ওপরে তোর বিশ্বাস নেই?”

“কিন্তু –”

“আমি তোকে বিয়ে করতে তো বলি নি। ও আরেকটা ব্লাইন্ড ডেট। যদি কাজে না লাগে, তখন আবার একজনকে খুঁজে বার করা যাবে। তোর ভয়টা কিসের?”

“... ওকে। শিন ছি …”

মিন হুয়ে চাই ছিলো প্রসঙ্গে ফিরে আসতে, “অ্যাকুইজিসনটায় অনেক ঝুঁকি আছে। আমি চাই তুই ভালো করে ভেবে দেখ। আমি এটা নিয়ে তোর সাথে কথা বলতে চাই …”

“তুই কখনো ফিনান্সে কাজ করেছিস?”

“... না।”

“তাহলে তুই আমাকে বোঝাবিটা কী?”

“...”

“এখনই একটা মিটিং আছে। এখন রাখবো। কিন্তু ভুলে যাস না যে কালকে আমাদের একটা ব্লাইন্ড ডেট আছে, ভালো করে সাজগোজ করবি, দোসর ধরা চেষ্টায় কোনো খামতি যেনো না থাকে।”

********

ছটার সময়ে স্টারবাক্সে খুব ভিড়।

মিন হুয়ে এক কাপ হট চকোলেটের অর্ডার দিলো। দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করতে হলো একটা টেবিল পাবার জন্য। ও সবে দুটো চুমুক লাগিয়েছে কী লাগায় নি, শুনতে পেলো কেউ ডাকছে, “মিন হুয়ে, তুমিও এখানে?”

ঘুরে তাকিয়ে দেখলো কথাটা বলেছে চেং ছিরাং।

চেং ছিরাং নিজের উইন্ডব্রেকারটা খুলে ফেললো, পরিয়ে দিলো চেয়ারের পিঠে, আর বসলো উল্টোদিকের চেয়ারে।

যেদিন মিন হুয়ে ওকে পিটিয়ে ছিলো বেজিং-এ, তারপর থেকে ওদের একে অপরের সঙ্গে দেখা হয়েছে কেবল মিটিং-এ, একান্তে কখনোই নয়।

মিন হুয়ে ওর দিকে এক ঝলক তাকালো, দেখতে পেলো যে ওর ক্ষতটা একদম মিলিয়ে গেছে, এমনকি ভেঙে যাওয়া দাঁতের বদলে নতুন দাঁতও লাগানো হয়ে গেছে। কোনো কারণে, ও যেনো হঠাৎ বুড়িয়ে গেছে, দু চোখের কোণে হালকা করে কাকের পায়ের সারি দেখা যাচ্ছে।

মোবাইল ফোনটা রয়েছে টোট ব্যাগে, নিজের অগোচরেই মিন হুয়ে ওটা বার করে আনলো ব্যাগ থেকে, কিন্তু চেং ছিরাং থামালো, “রেকর্ড কোরো না। আমাকে সামান্য গোপণীয়তা দাও।”

মিন হুয়ে জানতো যে চেং ছিরাং আসবে ওর কাছে, কিন্তু ও আশা করে নি যে ব্যাপারটা এতো তাড়াতাড়ি ঘটবে। 

ও নিজের হাতটা নামিয়ে রেখে ঠান্ডা গলায় বললো, “কিছু গন্ডগোল হয়েছে কী, চেং জঁ?”

“আমি পড়েছি তুমি যে এইচএলডি-টা লিখেছো। বেশ ভালো। আমি কয়েক জায়গায় তোমার হয়ে একটু বদল করেছি আর তোমার ইমেলে পাঠিয়েও দিয়েছি –”

“শিয়া শিয়া, আমি আজ রাতে দেখে নেবো।”

 কাজের কথা বলার সুরে বলে দিলো মিন হুয়ে।

তারপরে চেং ছিরাং কথা বলতে লাগলো প্রজেক্টের গড়ন নিয়ে, আর দুজনেই কথা বললো শান্তভাবে। মিন হুয়ে ভাবছে যে লোকটা নিশ্চয়ই বিবিজি কিংবা জিয়া জুনের রিপোর্টের কথা তুলবে – দুটোরই যোগ আছে ওর সাথে – কিন্তু চেং ছিরাং কাজ ছাড়া আর কিছুর কথাই বললো না। যেনো কিছুই হয় নি।

ব্যাপারটা যতো এরকম এগোতে লাগলো, মিন হুয়ে ততো ভয় পেতে লাগলো।

শেষে চেং ছিরাং হালকা স্বরে বললো, “কখনো কুকুর পুষেছো?”

“না।”

“আমার পরামর্শ নাও, ওটাকে রেখো না।”

মিন হুয়ে চুপচাপ ওর দিকে তাকিয়ে রইলো, জানে না কেনো যে লোকটা কুকুর রাখার কথা তুললো।

“আমার বউয়ের একটা হাস্কি আছে। তুমি দেখেছো নিশ্চয়ই। ও যখন কিনে ছিলো তখনো ওটা একটা ছোট্টো ছানা ছিলো। আমার এখনো মনে আছে প্রথম যেদিন ওটা আমাদের বাড়িতে এসে ছিলো। ওকে একটা খাঁচায় বন্ধ করে রাখা হয়ে ছিলো, আর ওটা মাঝরাতে সমানে চিৎকার করে চলে ছিলো। ওটা জিনিসপত্র কামড়াতেও পছন্দ করতো খুব। যেখানে সেখানে পায়খানা করে দিতো, বাড়িটাকে ভয়ানক নোংরা করে দিতো।”

কথা বলতে বলতে, ও কফিতে ধীরে ধীরে একটা চুমুক লাগালো, “দু মাসের মধ্যে ওটা পাঁচ ক্যাটির মানে তিন কেজির কম ওজনের একটা ছানা থেকে দশ ক্যাটির বেশি মানে ছ কেজিরও বেশি ওজনে বড়ো জন্তু হয়ে গেলো দুম করে, চতুর্দিকে লোম ঝরাতো, গোছায় গোছায়, সর্বত্র। বাড়িতে যে আইয়ে কাজ করতো সে দিনে তিনবার সারা বাড়ি ভ্যাকুয়াম ক্লিনার দিয়ে পরিস্কার করতো। কিন্তু তাতেও ও ভরসা দিতে পারতো না যে বাড়িটা পুরো পরিস্কার হয়েছে।”

“...”

“যদিও কুকুরে আমার খুব ঘেন্না, কিন্তু আমার বউ খুব ভালো বাসে কুকুর। আমাকে বিছানাতে ওর সাথে শুতে যেতে হয়, না হলে ও ঘুমোবে না। এতে আমার বউ আপত্তি করে না, কিন্তু আমাকে এতে অভ্যস্ত করে তুললো। শেষে আমি আর সহ্য করতে পারলাম না, আমাকে গেস্টরুমে চলে যেতে হলো - আর কখনো ফিরে আসি নি।”

“খুব পরিস্কার বোঝা যাচ্ছে যে আপনার আর হাস্কির মধ্যে আপনার বউয়ের হাস্কিকেই বেশি মিষ্টি লাগে।”

বিদ্রুপ করে বললো মিন হুয়ে।

“দোয়ে।”

ও স্বীকার করলো, “হাস্কিও জানে যে আমি হাস্কিকে পছন্দ করি না, কারণ কখনোই আমি একটা প্রসন্ন মুখভঙ্গীতে জন্তুটার দিকে তাকায় নি। ওটা শুধু আমার বউকেই খুশি রাখে খুব মন দিয়ে। ওটা আমার বউয়ের খুব বাধ্য আর অনুগতও। একবার আমি বউয়ের সঙ্গে ঝগড়া করে ছিলাম। ওটা তেড়ে আমাকে কামড়াতে এসে ছিলো। খুব গুরুতর কিছু হয় নি, কিন্তু অনেক রক্তপাত হয়ে ছিলো, আর আমার বউ আমার দিকে ফিরেও তাকায় নি, এও বলে ছিলো যে কুকুরটা ভুল কিছু করে নি, ওটা শুধু ওর মালিককে রক্ষা কর ছিলো।”

মিন হুয়ে ঘড়ির দিকে দেখলো।

“আমাকে আর দু মিনিট দাও, গল্পটা এখনো শেষ হয় নি।”

“...”

“অবশেষে একদিন আমার বউ বাড়িতে ছিলো না। আমি পিটিয়ে মেরে ছিলাম হাস্কিকে। পুরো মেঝে জুড়ে রক্ত পড়ে ছিলো। ওটা অনেক সময় ধরে অনেক যন্ত্রণা পেয়ে পেয়ে তবে মরেছে। যখন আমার বউ জানতে পারলো ও এক সপ্তাহ কেঁদে ছিলো আর প্রতিজ্ঞা করে ছিলো যে ও জীবনে আর কোনো দিন একটাও কুকুর রাখবে না।”

ওর মুখটা জানলার কাচ থেকে ঠিকরে আসা আলোতে ঝকঝক করছে। ওর চোখের রং নিষ্ঠুর ধূসর আর ও একটা আধো হাসি নিয়ে তাকিয়ে রইলো মিন হুয়ের দিকে।

মিন হুয়ের হৃদপিন্ড যেনো হঠাৎ কুঁকড়ে গেলো, ও জানতে চাইলো, “এর থেকে কী মানে করতে চাইছেন?”

ওর চোখে অপলক চোখ রেখে মিন হুয়ে বললো, “চেং ছিরাং, এক মিনিট দাঁড়ান।”

ও ওর ব্যাগ থেকে এক টুকরো কাগজ আর একটা কলম বার করলো, দুটো লাইন লিখলো, ছুঁড়ে দিলো চেং ছিরাং-এর দিকে, “এটা আমার পদত্যাগ পত্র। আমি কাজ ছেড়ে দিলাম।”

চেং ছিরাং উপহাস করে উঠে দাঁড়ালো, উইন্ডব্রেকার পরে নিলো, বললো, “ছিং, শিন ছিকে একটা খবর দিও, যেহেতু তোমার উচ্চাশা আছে, আসতে দাও তোমার ঘোড়াকে, খেলা শুরু হয়ে গেছে।”




~~~~~~~~~~~~

সম্পূর্ণ বই বিনামূল্যে : https://dl.bookfunnel.com/lcj5vznt96

Link to Previous Post in the Series : https://projectionofnaught.blogspot.com/2024/10/jpda-chapter-68.html

Link to following Post in the Series : https://projectionofnaught.blogspot.com/2024/10/jpda-chapter-70.html

No comments:

Post a Comment

Readers Loved