Showing posts with label বেড়ানো/ Travel. Show all posts
Showing posts with label বেড়ানো/ Travel. Show all posts

Thursday, October 1, 2015

কিছু ফেলনায় লেখা ইতিহাস

লস এঞ্জেলসের শহরতলি কালভার সিটি। সেখানে ২০১০-১১ সালে ছিল আমাদের বাসা। বাসার থেকে হাঁটা দূরত্বে ছিল ওয়েন্ডে মিউজিয়াম। জার্মান ভাষায় ওয়েন্ডে মানে মোড়। ওয়েন্ডে মিউজিয়ামের উপজীব্য সোভিয়েত ব্লকের ইতিহাস - ১৯৬১ সালে বার্লিন দেয়াল গাঁথা থেকে ১৯৯০ সালে বার্লিন দেওয়ালের ভেঙে যাওয়া পর্যন্ত। 
ওঁদের ওয়েবসাইট থেকে জেনেছিলাম যে প্রত্যেক শুক্রবার দুপুর তিনটের সময় গাইডেড ট্যুর পাওয়া যায়। ওয়েবসাইটেই একটা ই-মেল ঠিকানা ছিল ট্যুরে অংশ নেওয়ার আবেদন জানানোর জন্য। একটাই ই-মেলে আমাদের পছন্দের তারিখে মিউজিয়াম দেখার ব্যবস্থা পাকা হয়ে গিয়েছিল; কোনো প্রবেশমূল্য ছিল না। 
পার্থ আর রঙহীন দেওয়াল
ছবি আঁকা উল্টো পিঠ
নির্দিষ্ট দিনে ওয়েন্ডে মিউজিয়ামে গিয়ে দেখলাম যে বাইরের চত্বরে পশ্চিম মুখে দাঁড়িয়ে আছে কংক্রিট দেওয়ালের একটা খন্ড, একপিঠ তার ভীষণ রঙিন, উল্টোপিঠ ধূসর কংক্রিট রঙা। সেটা ফেলে সদর পেরিয়ে পৌঁছলাম দোতলায় যাওয়ার সিঁড়ির মুখে। পাশে একটা ঘরে কয়েকটা মনিটরে ফুটে চলেছে বার্লিন দেওয়ালের পূর্ব জার্মান দিকের পাহারাদারদের জবানবন্দি, জার্মান ভাষায়। আর রয়েছে নানা মাপের স্টিলের আলমারি, যাতে তাকগুলো ঢাকা কাঁচের ঠেলা পাল্লা দিয়ে;  অনেকটা আমাদের অনেকের বাড়িতে বই রাখার বা মেডাল রাখার জন্য যেমনটা ব্যবহার করা হয় তেমন। সেই সব আলমারির কয়েকটা ভর্তি সেকালের বাজেয়াপ্ত পাসপোর্টে। কয়েকটাতে রয়েছে নজরদারির নানা সরঞ্জাম। তাছাড়া চেকপোস্ট চার্লির নানা অবশেষ।
  মিউজিয়ামের দোতলায় উঠে যে হলটায় দাঁড়িয়েছিলাম, সেখানে অনেকগুলো ডেস্ক আর চেয়ার রাখা ছিল। ছিল একটা কাঠের লেনিন মূর্তিও, যা প্রায় পাঁচ ফুট উঁচু, - বক্তৃতার বা মিছিলে হাঁটার ভঙ্গিমায়। দেওয়ালে টাঙানো ছিল কয়েকটা বড় বড় ছবি। এই হলের ওপরই ওয়েন্ডে মিউজিয়ামের ইভেন্ট সঞ্চালক ক্রিস্টিনা কুভাস-উল্‌ফের দপ্তর, দপ্তর মিউজিয়াম ডিরেক্টর ও অন্যান্য আধিকারিকদের।
পাঁচ ফুট উঁচু কাঠের লেনিন মূর্তি, সোভিয়েত ব্লকের ভূমিকেন্দ্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থায় মেয়েদের ভূমিকার ছবি, পুর্ব জার্মানির সংসদ ভবন থেকে আনা ডেস্ক
মিউজিয়াম দর্শনের জন্য এই হলেই জড়ো হতে হয়। আমাদের সাথে ছিলেন ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়ার লস এঞ্জেলস ক্যাম্পাসের ছাত্ররা। গরমের ছুটিতে ছাত্ররা বা গবেষকরা এখানে বেতনভুক ইনটার্ন হিসেবে কাজ করতে পারেন। আমাদের মিউজিয়াম ট্যুরের গাইড ছিলেন ইনটার্ন আলিনা সেরেব্র্যানি। ওয়েন্ডেমিউজিয়ামের ফেসবুক পাতা থেকে জানা যায় আলিনার পূর্ব পুরুষও জড়িয়ে ছিলেন বার্লিন দেওয়ালের ইতিহাসে সঙ্গে।
 মিউজিয়ামের সংগ্রহগুলির সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে দিতে আলিনা জানিয়েছিলেন যে বার্লিন দেওয়াল ভেঙে পড়া মাত্র সাবেক পূর্ব জার্মানি জুড়ে দুদ্দাড় করে ভেঙে পড়ছিল পুরোনো ব্যবস্থায় বানানো আসবাব, ভাস্কর্য কিংবা রাষ্ট্রীয় স্মারক। আস্তাকুড়ে জমা হচ্ছিল নিত্য ব্যবহার্য জিনিসপত্র। ইতিহাসের সেই মোড়ে, প্রায় লোপ পেতে চলেছিল পূর্ব ইউরোপের অবরুদ্ধ তিনদশকের ইতিহাস। আধুনিক ইতিহাসের স্বার্থে ওয়েন্ডে মিউজিয়ামের প্রতিষ্ঠাতা ও কর্ণধার জাস্টিনিয়ান জামপল চেষ্টা করে চলেছেন সেই অধ্যায়কে সংগ্রহ ও সংরক্ষণের চেষ্টায়, তাঁর নিজের শহর লস এঞ্জেলসে। যেহেতু বার্লিন প্রাচীর ভেঙে পড়ার সময় পূর্ব জার্মানির মানুষের আবেগ পুরোনো সব কিছুকে ধূলিসাৎ করে দেওয়ার চেষ্টা করছিল সেহেতু ঐ মিউজিয়াম পূর্ব জার্মানির কোথাও বানাতে ভরসা পাননি জামপল। যে সমস্ত দিনলিপি, নথি, অবশেষ ওয়েন্ডে মিউজিয়ামে আছে তা দেখেই বোঝা যায় একথা। ধ্বংসাবশেস কুড়োতে কুড়োতে একদশকে ইতিহাসবিদ জামপলের সংগ্রহ যা দাঁড়িয়েছিল তা সংরক্ষণের জন্য গ্যারাজ কিংবা বৈঠকখানা নেহাতই অপ্রতুল ছিল। তাছাড়াও ইতিহাসের সেই মূহুর্তকে তো তিনি আশ্রয় দিয়ে চলেছেন ভাবীকালের জন্যও। তাই সমস্ত সংগ্রহ যাতে বর্তমান ও ভবিষ্যতের ছাত্র, গবেষক, উৎসাহী মনোযোগী সাধরণ পর্যবেক্ষকের নাগালে পৌঁছোয় তাই বানিয়েছেন ওয়েন্ডে মিউজিয়াম।  
পিঙ্ক লেনিন
হল পেরিয়ে যে করিডরে গেলাম সেখানে লেনিনের একটা আবক্ষ মূর্তি রাখা ছিল। কিন্তু সেটার মাথা থেকে নব্বই শতাংশ গোলাপি রঙে ঢাকা। সেটার ডাকনাম পিঙ্ক লেনিন। পাঁচিল ভেঙে পড়ার পর জনতার আক্রোশে মূর্তিটার রং বদলে গেছে!
করিডর পেরিয়ে সিঁড়ির মাথায় এসে দেখতে পেলাম একতলার সংগ্রহশালা, মোটেও মিউজিয়ামের মতো নয়, ওয়্যার হাউসের মতো। স্টিলের নাটবল্টু আঁটা তাকে আড়াআড়ি আর লম্বালম্বি দড়ির পেছনে সারি সারি কার্ল মাক্স, স্টালিন, লেনিন, ক্রুশ্চেভের ভাঙা কিংবা গোটা, আবক্ষ মূর্তি। আসলে সেগুলো যাতে তাক থেকে পড়ে না যায় তাই আড়াল দেওয়া হয়েছে অমন করে। এই তাকগুলো উচ্চতায় ঘরের ছাদ অবধি আর চওড়ায় দেওয়াল অবধি বাড়ানো যায় এমন। 
দড়ির পেছনে সারি সারি কার্ল মাক্স, স্টালিন, লেনিন, ক্রুশ্চেভের ভাঙা কিংবা গোটা, আবক্ষ মূর্তি

চেক পয়েন্ট চার্লির নামলেখা সাইন বোর্ড
মিউজিয়ামের প্রথম একজিবিট ছিল মিত্র শক্তির চেক পয়েন্ট চার্লির নামলেখা সাইন বোর্ড। তারপর ছিল কিছু অবাক করা চেয়ার। সাদা রঙের প্লাস্টিকে বানানো ডিমাকৃতি গার্ডেন চেয়ারটার গদি নীল ভেলভেট দিয়ে মোড়াতে সেটা অপরূপ দেখাচ্ছিল। বেশ কিছু গদি আঁটা চেয়ারের মাথাটা খুলে দিলেই সেটা একটা সিঁড়ি হয়ে যায়। মনে করা হয় যে বার্লিন প্রাকারের ভিতরে লোহার যোগানের অভাব হয়তো প্লাস্টিকের ওপর পরীক্ষা-নিরীক্ষা আর নতুন নতুন উদ্ভাবনীর পথে চালিত করেছিল নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের উৎপাদকদের। তাই অপূর্ব ডিম চেয়ার তৈরি হয়েছিল। তাই হয়তো চাকা লাগানো অটোমান, মানে গদি আঁটা যে চেয়ারের হেলান দেওয়ার পিঠ থাকে না, তার কাঠের খোল দিব্যি ব্যবহার করা যেত জিনিসপত্র রাখার জায়গা হিসেবে।  আসবাবের ধরণ থেকে মনে হয় যে অকুলান বাসস্থাণে সংকুলানের জন্য আসবাব হতো ভাঁজ করে ছোটো করে ফেলে যায় এমন কিংবা একই আসবাবকে অনেক রকম কাজে ব্যবহার করা যাবে এমন। তাই, আলিনার মতে, শুধু চেয়ারের জন্য নয় যে কোনো শিল্পজাত দ্রব্যের ক্ষেত্রেই অবশ্যম্ভাবী ছিল এই উদ্ভাবনী। এই প্রসঙ্গে পার্থ মনে পড়ে করিয়ে দেয় ডিডিআর বা জিডিআরে বানানো সাইলেন্ট স্টার ছায়াছবির কথা। সেই ছবির বিষয় সারা পৃথিবীর বৈজ্ঞানিকদের সম্মিলিত শুক্রগ্রহ অভিযান। সেই বৈজ্ঞানিকদের মধ্যে একজন চিনা বৈজ্ঞানিক অজৈব পদার্থ থেকে খাবার সংশ্লেষের পদ্ধতি জানতেন! সে আরও জানিয়েছিল পূর্ব জার্মান উদ্ভাবনীর আরেক বিস্ময় দুই দরজার ত্রাবান্ত গাড়ির কথা।  
ডিম চেয়ার, সিঁড়ি চেয়ার, অটোমান
প্লাস্টার অব প্যারিসের ভাস্কর্য
ধাতব ভাস্কর্য
ওয়েন্ডে মিউজিয়ামে ইস্টার্ন ব্লকের নানান দেশ থেকে আনা ভাস্কর্যের সংগ্রহটা যদিও আদর্শবাদ জড়ানো তবুও রকমারি। মুষ্টিবদ্ধ মুদ্রায় লাল সেলামরত শ্রমিক কিংবা কমিউনিজমের প্রবক্তা মার্ক্স, এঙ্গেলস ও বিভিন্ন সোভিয়েত ও ইস্টার্ন ব্লকের নেতাদের মূর্তির মাধ্যম ছিল প্লাস্টার অফ প্যারিস। বাচ্চাদের জন্য তৈরি কাঠের খেলনাতেও ছিলেন আধুনিক নেতারা অতিমানবিক মহিমায়। একটা বেশ রঙচঙে কাঠের মূর্তি দেখিয়ে আলিনা বলেছিলেন যে সেই মূর্তিটা সম্ভবতঃ লেনিনের এবং নেদারল্যান্ডসে খোদাই করা। ছাঁচে ঢালা সীসার মূর্তিও পাওয়া গেছে কমিউনিস্ট নেতাদের। তবে  সবথেকে নজরকাড়া মূর্তিটি এক অখ্যাত মহিলাশ্রমিকের। কাঠে বানানো প্রায় দেড় ফুট লম্বা সেই মূর্তির পেশীবহুল হাত, চওড়া কাঁধ ও কপাল, পিছনে টেনে বাধা চুলে এক বলশালীনিকে দেখা যায়। 
আন্দোলনে সামিল কোনো জনের মূর্তি
আলিনার হাতে ফুডিসের রেকর্ড
চমকপ্রদ ছিল গানের দল ফুডিসের রেকর্ডের খাপের ছবি। ফুডিস ছিল পূর্ব জার্মানির প্রথম রকব্যান্ড  যেটা জনসমক্ষে গানের অনুষ্ঠান করার সরকারি অনুমতি পেয়েছিল। শুধু তাই নয় সরকারি রেকর্ডিং সংস্থা আমিগা থেকে বেরোত তাদের লং প্লেয়িং রেকর্ড। সেসব রেকর্ডের খাপের নকশা হতো দারুন রঙিন। 
ওয়েন্ডে মিউজিয়ামে পূর্ব জার্মানির বইপত্রের বেশ বড়ো সংগ্রহ আছে। বইপত্র অবশ্য মূলতঃ কমিউনিস্ট দর্শনের উপরেই লেখা হতো। বইপত্রের মাধ্যম ছিল প্রধানত জার্মান ভাষা।
বই ছাড়াও এই মিউজিয়ামের সংগ্রহে আছে পূর্ব জার্মানির বেশ কিছু রেডিও সেট। রেডিও বেশ শক্তিশালী মাধ্যম ছিল মতাদর্শ প্রচারের। কিন্তু এই যন্ত্রই নাকি তাঁদের অশান্তির কারণও ছিল। কারণ এই যন্ত্রটা সোভিয়েত ব্লকের জনসাধারণেরও বেশ পছন্দ ছিল, সাধারণ ক্রেতার নাগালেও ছিল। ফলে ক্রমাগত রেডিও তরঙ্গ বেয়ে ইস্টার্ন ব্লকের জনসাধারণের বৈঠকখানায় ঢুকে পড়ছিল বার্লিন দেওয়ালের পশ্চিম দিক থেকে প্রচারিত যাবতীয় রাজনৈতিক আলোচনা, জনমত, পুব দিকের রাষ্ট্রব্যবস্থা ও রাজনীতির সমালোচনা - সবই । যার মধ্যে ইস্টার্ন ব্লকের রাষ্ট্র নেতৃত্বের সব থেকে অপছন্দ ছিল রক সঙ্গীত। আর যুবজনতার প্রথম পছন্দের রেডিও স্টেশন ছিল রক সঙ্গীতের স্টেশন।
ইরিশ হোনেকারের শ্যালমাই
পুর্ব জার্মানির গান বাজনা প্রসঙ্গে আরেকটা খুব জরুরি কথা জানানো দরকার। শ্যালমাই নামে একটা বাজনা ইস্ট জার্মানির ইস্কুল, কারখানা আর নগরে গঞ্জে খুব জনপ্রিয় ছিল। এই বাজনা বেশ সহজে বাজাতে শেখা যায়। পুব জার্মানির বাদ্যযন্ত্র নির্মাতা ভেব ট্যাকটনের পক্ষ থেকে বার্লিন দেওয়ালের হোতা ইরিশ হোনেকারকে তাঁর পঁচাত্তরতম জন্মদিনে যে শ্যালমাইটা উপহার হিসেবে দেওয়া হয়েছিল সেটা এখন ওয়েন্ডে মিউজিয়ামের সংগ্রহে আছে। পুর্ব জার্মানির সোশ্যালিস্ট পার্টির শীর্ষনেতা তথা রাষ্ট্রনেতা ইরিশ হোনেকার তাঁর সেই শ্যালমাইটা দিয়েছিলেন পশ্চিম জার্মানির রকস্টার উডো লিন্ডেনবার্গকে, আশির দশকের শেষে পশ্চিম জার্মানিতে; বদলে নিয়েছিলেন লিন্ডেনবার্গের চামড়ার জ্যাকেট। 
ওয়েন্ডে মিউজিয়াম সাবেক পূর্ব জার্মানি আর ইস্টার্ন ব্লকের জীবনের নানা কোণ থেকে সংগ্রহ করেছে যাপণের অবশেষ। তারমধ্যে রয়েছে পোষাক, পর্দা, কার্পেটও। পুর্ব জার্মানির অসংখ্য কার্পেটের নকশায় দেখা যায় নিসর্গ, ফুলতোলা পাতাবাহার আর অবশ্যই বালক নেতার ছবি। সব থেকে বেশি পাওয়া যায় লেনিনের ছ বছর বয়সের একটা ছবি। আমাদের পটচিত্র বা কাঁথায় বালক নিমাই বা বালক গদাধরের মতো। বালক লেনিনের সেই ছবিটা শুধু কার্পেটে নয়, কুশনের ঢাকায়, পর্দাতেও বোনা হোতো। ওয়েন্ডে মিউজিয়ামের এসব বস্ত্র সংগ্রহের একটা বড়ো অংশ জুড়ে আছে পুলিশ, নাবিক আর সেনার উর্দি। নাবিকের উর্দি ও স্কার্ফের রং হতো ঘননীল। এরকম এক নাবিকের উর্দিতে স্কার্ফের ভিতরের অংশে আঁকা ছিল প্রশান্ত মহাসাগরের উত্তরপ্রান্ত ছোঁওয়া কামচটকা উপদ্বীপের মানচিত্র। 
কার্পেটের নকশায় লেনিনের ছ বছর বয়সের ছবি
অ্যটাচিকেস
এইসব সংগ্রহের মধ্যে সব থেকে চমকপ্রদ ছিল অ্যটাচিকেস। অনেকগুলো অ্যাটাচি খুলে খুলে আলিনা দেখিয়েছিলেন। এই অ্যটাচিকেসগুলো সবই পুর্ব জার্মানি থেকে সংগৃহীত। এগুলো স্টাসির মানে পুর্ব জার্মানির নিরাপত্তামন্ত্রকের সম্পত্তি ছিল। এর ভিতরে সাধারণত একটা ডিকোডার থাকত। এই অ্যাটাচিকেসগুলো মূলত খবর দেওয়া-নেওয়ার কাজে লাগত।
ওয়েন্ডে মিউজিয়ামের সংগ্রহে থাকা পূর্ব জার্মানির সিনেমার মধ্য জাপানি ও রাশিয়ান ভাষার বেশ কিছু ছবি আছে। জাপানি ছবির পোস্টারে তার নামের ইংরেজি তর্জমা ছিল। সেটা পড়ে মনে হলো জাপানি ছবিটা সামাজিক ছবি। তবে রাশিয়ান ছবির পোস্টারে মহাকাশ যান আঁকা ছিল।  
ওয়েন্ডে মিউজিয়ামে হাতে আঁকা ছবির সংগ্রহও বিশাল। একটা ছবিতে দেখা যায় মেয়েরা যন্ত্রপাতি, ঝুড়ি কোদাল নিয়ে চাষের কাজে চলেছে। দূরে আকাশে দলা দলা মেঘ। সেই মেঘে নাকি পাঁচটা মহাদেশের রেখার আদল। ছবিটাতে দেখানো হয়েছে যে সোভিয়েত ব্লকের ভূমিকেন্দ্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা মেয়েরাই ধরে রাখে এবং দূরের মেঘের দিকে মেয়েদের তুলে রাখা আঙুলে সেই ভূমিভিত্তিক সমাজতন্ত্রকে ইস্টার্ন ব্লকের বাইরে সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে দেওয়ার অঙ্গীকার। অন্য কয়েকটা ছবিতে দেখা যায় পশ্চিমী দুনিয়ার কোর্টরুমে চলতে থাকা ডিভোর্সের মামলার শুনানির দৃশ্য; পশ্চিমী হোটেলে ফূর্তির আয়োজনে খোলামেলা পোষাকে নারীদের উপস্থিতি। একটা ছবি রাজনৈতিক সম্মেলনের। এই ছবিতে বক্তা ক্রুশ্চেভ; সমস্ত শ্রোতার ছবি অটুট রেখে নরুন জাতীয় কিছু দিয়ে খুবলে তোলার চেষ্টা হয়েছে ক্রুশ্চেভের প্রতিকৃতি। 
পশ্চিমী দুনিয়ার ছবি
প্যালেস্টাইনের উপহার
অন্যান্য উপহার
ওয়েন্ডে মিউজিয়ামের যাবতীয় সংগ্রহের একটা বড়ো অংশ হলো পুর্ব জার্মানির পাওয়া কুটনৈতিক উপহার। তার মধ্যে প্যালেস্টাইন, দক্ষিণপূর্ব এশিয়া, কঙ্গো এবং অবশ্যই রাশিয়া থেকে পাওয়া বিভিন্ন উপহার আছে। প্যালেস্টাইনের উপহার মুলতঃ পোর্সেলিন প্লেটে একরঙা সনাতন নকশা, ইয়েমেনের উপহার দাবার ঘুটি, কঙ্গোর উপহার আফ্রিকান রমণীর আবক্ষ মুর্তি, রাশিয়ার উপহার লেনিন মূর্তি। দুঃখজনকভাবে এই মূর্তিটাতেও কালো রং লাগানোর চেষ্টা হয়েছিল। কম্বোডিয়া থেকেও কাঠে খোদাই করা দাবার ঘুটির উপহার ছিল। 
কুটনৈতিক উপহার
পাসপোর্টের সংগ্রহ
আলিনার থেকে জানা গেল যত সিনেমা পাওয়া গেছে পুর্ব জার্মানি থেকে সেগুলোর ইংরেজি তর্জমা ও সাবটাইটেল বানানোর কাজ চলছে। সব দেখাশোনা শেষে দোতলার হলঘরে আবার ফিরে এলাম সবাই। তখন আলিনার কাছে জানতে চেয়েছিলাম যে ওঁদের ওখানে কনফারেন্স, মিটিং ইত্যাদি ওই হলঘরে সেইসব কাঠের ডেস্কে বসেই হয় কিনা। আলিনা বলেছিলেন নিশ্চয়ই হয়। তবে কাঠের ডেস্কগুলোও পুর্ব জার্মানির সংসদ ভবন থেকে আনা। বলাবাহুল্য ডেস্কগুলো এমন করে বানানো যে সেগুলো লেখাপড়ার কাজেও ব্যবহার করা যায় আবার একটু এধার ওধার করে সিনেমা দেখার কাজেও ব্যবহার করা যায়। পুর্ব জার্মানির এক-দ্রব্য-বহু-ব্যবহারের উদ্ভাবনীকে কুর্নিশ করে বেরিয়ে এলাম। আসার আগে আলিনা বলেছিলেন, নিচের তলার পাসপোর্টের সংগ্রহ দেখে যেতে, আর দেখে যেতে এক খন্ড বার্লিন দেওয়াল। বার্লিন দেওয়াল খন্ডের পিছনে তখন চরাচরব্যাপি প্রশান্ত মহাসাগর আর অস্তোন্মুখ সূর্য।
লস এঞ্জেলস ডাউনটাউনে লস এঞ্জেলস কাউন্টি মিউজিয়াম অফ আর্ট, লা ব্রি পিট আর কয়েকটা অন্যান্য মিউজিয়াম নিয়ে মাইলটাক রাস্তাটার নাম মিরাক্যল মাইলস। সেই রাস্তার পাশে সারি দিয়ে দাঁড় করানো আছে বার্লিন দেওয়ালের অনেকগুলো খন্ড। তার একদিক ছবিতে ছবিতে রঙিন আর অন্যদিক ধূসর। আলিনার কাছে জেনেছিলাম অবশ্য খুব শিগগির শুরু হতে চলেছে ধূসর দেওয়াল রাঙিয়ে তোলার কাজ।
মিরাক্যল মাইলস-এ বার্লিন ওয়ালের খণ্ডাংশ
        ওয়েন্ডে মিউজিয়ামে ইস্টার্ণ ব্লকের ইতিহাস চর্চার অংশ হলো প্রত্যক্ষদর্শীর বিবরণ। বার্লিন দেওয়ালের চেক পয়েন্টের পুলিশ থেকে শুরু করে, ইস্টার্ন ব্লকের অধ্যাপক, রাজনীতিক সবাই এই মিউজিয়ামের তথ্যভান্ডারকে সমৃদ্ধ করেন। কখনও এই তথ্য আদানপ্রদানে নিমন্ত্রণ জানানো হয় আপামর উৎসুকদের। যেদিন আজেরবাইজানের রাষ্ট্রদূত এলিন সুলেইমানভ এসেছিলেন, আবার সেদিন আমরা ওয়েন্ডে মিউজিয়ামে  গিয়েছিলাম তাঁর অভিজ্ঞতার কথা শুনতে। যথারীতি আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ছাত্র ও অধ্যাপকরাও ছিলেন সেখানে। ছিলেন মিউজিয়ামের সাথে যুক্ত নানা মানুষ। আর কৌতুহলীরা।
        একটা ইউটিউব ছবির মাধ্যমে আজেরবাইজানের রাষ্ট্রদূত বলেছিলেন ঠান্ডা যুদ্ধের সময় তাঁর দেশ কেমন ছিল, সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন ও সোভিয়েত সেনার হাতে বাকুতে ২০শে জানুয়ারির গণহত্যার কথা যাতে মারা পড়েছিলেন অসামরিক সাধরণ জনতা। যা কিছু তিনি দেখিয়েছিলেন তার মধ্যে সব চেয়ে মজার ছিল পারহ্যাপ্স ব্যাগ। পুরুষ মানুষেরা দিনের বেলা কাজে বেরোনোর সময় সেই ব্যগ সঙ্গে নিয়ে যেতেন, ফেরার পথে দুটো কলা বা একটা আপেল পাওয়া গেলে নিয়ে ঘরে ফিরবেন বলে। কালচে লাল হালকা লাল  উলে বোনা ব্যাগগুলো এমনিতে ধরে যেত মুঠোর মধ্যে বা পকেটে। কিন্তু কলা-আপেলের মাপে বেড়েও যেতো সাইজে। এরকম ব্যাগ কলকাতাতেও দেখেছি বহুবার। 


***** জমা দেওয়ার দু'বছর পর যা ছাপা হয়েছে

##### মূল অ্যালবাম
###### পরের অ্যালবাম

এই গোত্রের অন্য লেখাঃ
বুনো পশ্চিমী মরুপথে এক রাত

স্যান অ্যান্টোনিও – তখন আর এখনের এক অনাস্বাদিতপূর্ব ককটেল

Thursday, October 9, 2014

বুনো পশ্চিমী মরুপথে এক রাত

[লস এঞ্জলসে ফিরে এসে থেকে স্মৃতির তাড়া করছে। তাই একটা বছর চারেকের পুরোনো বেড়ানোর কথা বলতে ইচ্ছে হলো। এই লেখাটা প্রায় বছর দুয়েক আগে "হাওয়া বদল"-এ ছাপা হয়েছিল।]
(এখানের লেখাটা সেটাই যা আমি জমা দিয়েছিলাম। যা ছাপা হয়েছিল তার লিঙ্ক নিচে দেওয়া রইল।)

লস এঞ্জেলসে থাকার সময় থ্যাঙ্কস গিভিং ডের ছুটিতে আমরা গ্র্যাণ্ড ক্যানিয়ন আর লাস ভেগাসে বেড়াতে গিয়ে ছিলাম। আমরা মানে চারজন - আমাদের বন্ধু রবি আর ওঁর স্ত্রী খুশি, আমার বর পার্থ আর আমি। ইউনাইটেড স্টেটসে নভেম্বরের চতুর্থ বিষ্যুদবারে থ্যাঙ্কস গিভিং ডে উদ্‌যাপিত হয়। ছুটি থাকে বৃহস্পতিবার থেকে রবিবার। বুধবার রাতে রবি আর খুশি পিটসবার্গ থেকে লস এঞ্জেলস এসে পৌঁছে ছিল। অরেঞ্জ কাউন্টি এয়ারপোর্ট থেকে ওদের নিয়ে আমরা রওয়ানা হয়ে ছিলাম অ্যারিজোনার গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন ন্যাশনাল পার্কের দিকেমোট দূরত্ব পাঁচশ মাইলেরও বেশি, ন-দশ ঘণ্টার পথ।  তাই জিপিএস-এর সেটিংস এমন করে রেখে ছিলাম যাতে সব থেকে কম সময়ে গন্তব্যে পৌঁছানো যায়। এই জিপিএসকে আমরা আদর করে নুভি মাসি বলে ডাকি। আমাদের অস্থাণ-কুস্থাণে হারিয়ে যাওয়ার মদতদাতা হলো মাসি। যেখানেই যাই না কেন, মাসিকে যদি একবার জানাই বাড়ি ফিরে যেতে চাই, মাসি ঠিক বাড়ি ফিরিয়ে নিয়ে আসে। এই বাৎসল্যের জন্যেই আমরা বোধ হয় খুব সহজে নুভিকে মায়ের আরেক বোন, আমাদের আরেক মাসি বলে ভেবে নিয়েছি।
পথশ্রমে ক্লান্ত ছিল রবি আর খুশিতাই প্রথম রাতটা ওরা পিছনের সিটে ঘুমোচ্ছিল। গাড়ি চালাচ্ছিল পার্থ আর হেল্পারিতে ছিলাম আমি। মনে একটা চাপা টেনশন ছিল। রাতবিরেতে এতোটা পথ যাব বলে, নাকি রোমহর্ষক মোহাবে ডেজার্টের দক্ষিণপ্রান্ত ছুঁয়ে অনেকগুলো মাইল পেরোতে হবে বলে, সে আমি জানি না। লং উইকএন্ডের শুরু বলে হাইওয়েতে গাড়ির ভিড় ছিল। গতিসীমার থেকে অনেক কম বেগে গাড়ি চলছিল। শহর থেকে কিছু দূরে চলে আসার পর প্রতিপদের কাক জ্যোৎস্নায় চারপাশে জেগে উঠে ছিল পাহাড়, ছাইরঙা উপত্যকায় স্থবির উইন্ডমিলের আবছায়া। পাহাড়ের মাথায় চাঁদের আলো, নাকি বরফ পড়ে গেছে তা বুঝতে পারছিলাম না। বরফ পড়তেই পারে, একে নভেম্বরের শেষ, তায় জায়গাটা সমুদ্র থেকে বেশ খানিকটা উঁচুতে আর দূরেও। সামনে টিমটিমানো লাল আলোর স্রোত পাকদণ্ডী বেয়ে উঠতে থাকা গাড়ির মিছিলের নিশান। মাঝে মাঝে ডানদিকের পাহাড় সরে গেলে, দেখা যাচ্ছে আমাদের যাত্রাপথের বিপরীতে চলমান গাড়ির মিছিল। তাদের নিশান তাদের উজ্বল আলোয়। মিউজিক সিস্টেমের গান ছাপিয়ে যাচ্ছিল গাড়ি চলার একঘেয়ে আওয়াজেসে সব ফালাফালা করে একসময় নুভি মাসি হুকুম করেছিল, টার্ন রাইট। তখন এয়ারপোর্ট ছাড়ার পর দেড়ঘন্টা পেরিয়ে গেছিল, অথচ দূরত্ব পেরিয়েছিলাম মাত্র পঁচাশি মাইল! হাইওয়ের গতিসীমায় আমাদের আরো চল্লিশ-পঞ্চাশ মাইল যাওয়ার কথা।
ডানদিকের রাস্তা নিতেই মাসি বলেছিল, ড্রাইভ ওয়ান হান্ড্রেড অ্যান্ড থার্টি ফাইভ মাইলস্‌।  ভিড় ঠেলে আসার ক্লান্তি কাটাতে পার্থর একটু ফ্রেশ হওয়ার দরকার ছিল তখন। কিন্তু কোনো চায়ের দোকান থুড়ি কফিশপ ছিল না আশেপাশে। অগত্যা একটু জল খেয়ে, একটা সিগারেট টেনে, মুখে বাবল গাম ফেলে ফের গাড়ি চালাচ্ছিল ও
ঘন্টাখানেক পরে টুয়েন্টি নাইন পামস নামে একটা জনপদে পৌঁছে একটা চব্বিশঘন্টা খোলা গ্যাস স্টেশন মানে পেট্রল পাম্প পাওয়া গেছিলসেখানে জল আর বাবল গামের রেশনটাকে বাড়িয়ে নেওয়া গেছিলআবার কতোক্ষণে জল পাওয়া যাবে জানতাম না।
ফ্রেস্কো
এদিকে রাস্তার পাশের বাকি সব দোকানে তখন লোহার গরাদ টানা। তাতে সন্দেহ হচ্ছিল যে সামনে জনপদ থাকলেও দোকান খোলা পাওয়া যাবে কিনা। টুয়েন্টি নাইন পামসের দেওয়ালে দেওয়ালে আলো আবছায়ায় জমজমাট সব ফ্রেস্কো গল্প বলে ছিল
। আর ছিল  দুহাত তুলে নামসংকীর্তনের ভঙ্গীতে দাঁড়িয়ে জোশুয়া গাছেদের আবছায়াগুলো। পিঠে বোঝা নিয়ে ধূ ধূ রাস্তা পেরিয়েছিল একজন হোবো। তার হাতে ছিল একটা কাগজের মোড়ক, হয়তো খাবারের, আর কাগজের কাপ, নিশ্চয়ই কফির। 
অন্ধকারে জোশুয়া

কারণ মাঝরাতের মরুভূমি থেকে ছুটে আসা হাওয়ায় নাক-চোখ বেশ জ্বালা করছিল, হাড়েও কনকনানি লাগছিল  হুশ করে ফুরিয়ে গেছিল টুয়েন্টি নাইন পামসের মরুদ্যানটা গাড়ির আলোতে শুধু রাস্তাটুকুই দেখা যাচ্ছিল। সামনের অন্ধকারের ঘনত্বে টের পাওয়া যাচ্ছিল ধারাবাহিক চড়াই-উৎরাই। যখন হেডলাইটের পর অন্ধকারের খাড়া দেওয়াল, তখন চড়াই। আর হেডলাইটের আলো অন্ধকার থেকে গড়িয়ে নিচে নামছে যখন, তখন উৎরাই। এরকম একটা চড়াইয়ের মাথায় উঠতেই মাসি হুকুম করে ছিল, টার্ন লেফ্‌টমাসি না থাকলে  আমরা বাঁদিকের এই বাঁকটা ঠাহরই করতে পারতাম না অন্ধকারে।

আরও ঘন্টাখানেক চড়াই-উৎরাই ভাঙার পর, এক চৌমাথাতে পৌঁছে মাসি বলে ছিল ডাইনে যেতে। সেই ঘণ্টাখানেকে আমাদের আগে পিছে কোনো গাড়ি ছিল না; রাস্তাটা ওয়ান ওয়ে ছিল না, তবুও উল্টোদিক থেকে কোনো গাড়ি আসে নি। এই বিরল জনশূণ্যতায় ঘাবড়ে গিয়ে আমরা তখন মাসির বোধ-বুদ্ধি নিয়ে ট্যারা-ব্যাঁকা মন্তব্য করতে শুরু করে ছিলাম। তারপর মাসির মগজে খুটখাট করে সেটিংস বদলে দিয়েছিলাম যাতে কেবলমাত্র হাইওয়ে দিয়েই যাওয়া যায়তারপর গাড়িটাকে এদিক ওদিক ঘুরিয়ে ফিরিয়ে চেষ্টা করেছিলাম যদি মাসি জনবহুল রাজপথের খোঁজ দেয়। আগে এসব কায়দা আমাদের কাজে এসে ছিল, তাই আর-কি। কিন্তু মাসির তখন ঠোঁটে বোধ হয় ছ্যাঁকা লেগে ছিল, ঠাণ্ডায়, ফলে এক দীর্ঘ স্পিকটি নট্‌। দীর্ঘ পথের নিরিখে সময়াভাব আর বিদেশ-বিভুঁই-এ অচেনা অজানার গা ছমছমানো অনুভূতি - এই দুটো কারণই যথেষ্ট ছিল আমাদের সীমিত ধৈর্যকে আরও ছোটো করে দিতেমিনিট দশেক ধরে শঙ্কাকুল চেষ্টা করে হাইওয়ে খুঁজে পাওয়ার আশা ছেড়ে দিয়ে, ডানদিকে আমাদের বাঁকতেই হয়েছিল। আর বাঁকতেই মাসি কটকটিয়ে উঠে ছিল, ড্রাইভ টু হান্ড্রেড মাইলস্‌। দুশ মাইল মানে প্রায় সাড়ে তিন ঘন্টার পথ এমনিতে, কিন্তু অন্ধকার আর হাওয়ায় কতো সময় লাগবে তা বেশ অনিশ্চিত ছিল। 
সে পথে ঘণ্টাখানেক কাটার পরেও মনে হচ্ছিল যে যতো জোরেই ছুটুক, গাড়িটা যেন এগোচ্ছে না; হেডলাইটের সীমানার ভেতর একচিলতে রাস্তা; আর বাকি সবটাই নিরবচ্ছিন্ন অন্ধকার, দিগন্ত উধাও, চারপাশে শুধুই  আকাশ। গাড়িটা থেকে থেকে হাওয়ায় দুল ছিল। তাতে আরও মনে হচ্ছিল যেন আমরা আকাশে ভেসে চলেছি। সেই ঘোর কাটিয়ে দিয়ে ছিল ডেজার্ট জ্যাকাল। গাড়ির আলোর শেষ সীমা দিয়ে বুরুশের মতো লেজ দুলিয়ে দৌড়ে গেছিল রাস্তার একদিক থেকে আরেক দিকেঅমনি আকাশটা তারা-টারা সমেত উঁচুতে উঠে গেছিল, তখন গাড়ির চারপাশে পড়ে ছিল আদিগন্ত নির্জলা সমুদ্র, বুকে তার ছড়ানো ছিটোনো বোল্ডার। সেই সমুদ্রের ঢেউ দেখে কখনও মনে হচ্ছিল নুনের ঢিবি, কখনও চলমান বোল্ডারের সারি। পার্থর খুব ইচ্ছে করছিল গাড়ি থামিয়ে একবার পরখ করে যে সে পৃথিবীতে আছে নাকি গ্রহান্তরে। কিন্তু প্রত্যেক মাইলেই সতর্কবার্তা ছিল, সফট শোল্ডার, মানে রাস্তার পাশের ফাঁকা জায়গায় গাড়ি বা পা রাখলে  মাটির নিচে সেঁদিয়ে যেতে পারে! আরও ছিল, উড়ন্ত বোল্ডার থেকে সাবধানকড়াং, ঠনঠন আওয়াজে বোঝা যাচ্ছিল যে প্রচুর মুরাম উড়ে গাড়িতে আছড়ে পড়ছিল। আরও দুএকটা ডেজার্ট জ্যাকাল রাস্তা পেরিয়ে ছিল বলে নাকি আমাদের উল্টোপথে দুটো গাড়ি গেছিল বলে, জানি না, আমাদের সাহস কিছুটা বেড়ে ছিল তারপরতাই একটুক্ষণ ফাঁকা রাস্তার ওপরই গাড়ি থামিয়ে, কাছ থেকে ডেজার্ট জ্যাকাল দেখার চেষ্টা করে ছিল পার্থ। কিন্তু কয়েক মিনিটের অপেক্ষায় ব্যর্থ হয়ে শোল্ডার থেকে এক মুঠো বালিরঙা মুরাম তুলে এনে টিস্যু পেপারে মুড়ে নিয়ে ছিল সে
সেই রুদ্ধশ্বাস যাত্রাপথের শোঁ-শোঁ হাওয়ার শব্দ হঠাৎ ফালাফালা করে দিয়ে ছিল একটা হুইশল। টের পেয়ে ছিলাম রেললাইনের অস্তিত্ব। মনে বেজে ছিল গুড-ব্যাড-আগলির আবহ। সে সময়েই দেখে ছিলাম একটা রেস্ট এরিয়ার পার্কিং-এ দাঁড়িয়ে গর্জাচ্ছিল একটা ট্রাক। ড্রাইভারের সাড়া ছিল না। হয়তো ড্রাইভার প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে রেস্ট এরিয়ার টয়লেটে গেছিলপার্থ রেস্ট এরিয়ার টয়লেট ঘুরে এসে জানিয়ে ছিল যে সেটাও শুনশান। রবি আর খুশি তখন পুরোপুরি জাগন্ত। আমার চারজন আড়ামোড়া ভাঙতে ভাঙতে নির্জন মরুভূমিতে কৃষ্ণপক্ষের দুপুর রাতে নিখোঁজ ড্রাইভারকে নিয়ে চারটে হাড়-হিম করা গল্প ফাঁদছিলাম মনে মনে। সেই নিশুতিপনা ঘুচিয়ে বরযাত্রীর মতো আলো ঝলমলানো রেলগাড়ি ঝমঝমিয়ে চলে গেছিল আমাদের সামনে দিয়ে। আদিগন্ত বিস্তীর্ণ মরুভূমির সাথে আকাশের মেশামিশিতে তৈরি এক ত্রিমাত্রিক পর্দায় দেখেছিলাম ওয়েস্টার্ন ভিস্যুয়াল আর্ট!
এক চিলতে গাড়ির হেডলাইট দিয়েছিল আর দূরে রেলগাড়ি


তারপরে হাইওয়ে মিলে ছিল। ততোক্ষণে আরও তিনটে গাড়ি আমাদের ফেলে আসা পথের দিকে চলে গেছিলভোর হয়ে ছিল নিডলস্নামের এক জনপদেবার্গার আর হট চকোলেট খেতে খেতে শুনে ছিলাম সামনেও মরুপথ। সে পথের অন্য গল্প।


(এই হলো যা ছাপা হয়েছিল)

Wednesday, June 11, 2014

স্যান অ্যান্টোনিও – তখন আর এখনের এক অনাস্বাদিতপূর্ব ককটেল

    স্যান অ্যান্টোনিও এক অপূর্ব শহর। এখানে বর্তমানের শহর আর অতীতের গ্রাম একসাথে বাস করে, এক বইয়ের লাগোয়া পাতার মতো গ্রাম - জলজ্যান্ত অতীত যাপণে মগ্ন, আর শহর সমসাময়িকতায় মত্ত পলকে যাতায়াত করা যায় দুই জীবনে, তিনশ বছরের ব্যবধানে।
গুগল ম্যাপে আলোচ্য এলাকাগুলো এখন যেমন দেখায়
      ১৬৯১ সালে আবিষ্কার হয়েছিল স্যান অ্যান্টোনিও নদী। আবিষ্কারক স্পেনের ফ্রান্সিকান মিশনের ভিক্ষুরা। এই আবিষ্কারের কথা জানাও যায় তাঁদেরই বিবরণ থেকে। সব আবিষ্কারের মতো এই নদী আবিষ্কারের মূলেও ছিল প্রয়োজন। স্পেনের সাম্রাজ্য প্রসার ও রক্ষার প্রয়োজন। যখন ব্রিটিশ সাম্রাজ্য তার শিল্প-বাণিজ্যে বলীয়ান হয়ে ইউরোপ, এশিয়া ও আফ্রিকা জুড়ে পুরো পুরোনো বিশ্বে ছেয়ে গেছে, তখন নতুন বিশ্বের সাথে চেনাশোনা হয়েছে কেবলমাত্র স্পেনেরইসেই চেনাশোনাকে বিশ্বজয়ের শক্তিতে পরিণত করতে চেয়েছিলেন স্পেনের রাজন্যরা।
উইকিপিদিয়া থেকে
কিন্তু নতুন বিশ্বে তখন একাধিক যাযাবর ইন্ডিয়ান উপজাতি, যাদের একসাথে বলা হতো কোয়াউইটেকেন তারা খাবার শিকারি, সংগ্রাহক; চাষ কিংবা পশুপালন করতেও জানে না; গায়ে পরে শিকার করা পশুর ছাল আর পায়ে ঘাসে বোনা চটি। তখন সেখানে কোয়াউইটেকেনদের সাথে ভাব জমিয়ে, তাদের জমিতে পুরোনো বিশ্বের সভ্যতার বীজ যে বুনতেই হবে সেই জরুরি প্রয়োজনটা টের পেয়েছিলেন স্পেনের সম্রাট। সে কাজের ঝুঁকিটা আর দায়টা নেবে কিন্তু সুফলের ভাগ চাইবে না এমন লোক বলতে ছিলেন ফ্রান্সিকান মিশনারিরা
তাঁরা যে দারিদ্র্য, পবিত্রতা ও বশ্যতার শপথ নিয়েছিলেন। যীশুর নাম প্রচারের সুযোগ দিলেই তাঁরা সুযোগদাতার যে কোনো কাজের যন্ত্র হতে রাজি ছিলেন। স্পেন সম্রাট নতুন বিশ্বে তাঁদেরকে রাজতন্ত্রের প্রতিভূ ও কূটনীতিক বানিয়েছিলেন।
আলামো
মেক্সিকো স্পেনের উপনিবেশ ছিল, তখন তাকে বলা হতো নিউ স্পেন। এদিকে ফরাসীরা কালক্রমে লুইসিয়ানায় নিজেদের আধিপত্য কায়েম করল। তখন নিউ স্পেনের উত্তর-পূবে, লুইসিয়ানার গা-বরাবর নিজেদের দখলদারি বজায় রাখার জন্য স্পেন সম্রাট পাঠিয়েছিলেন ফ্রান্সিকান মিশনারিদের। সে অঞ্চলে তখন টেহাস উপজাতির বাস, যাদের নাম থেকে এই এলাকার নাম রাখা হয় টেক্সাস।
সাজগোজ সারা, দৌড়ের জন্য উন্মুখ
      ফ্রান্সিকান ভিক্ষুরা লুইসিয়ানা সীমান্তে কয়েকটা মিশন তৈরি করে কোয়াউইটেকেনদের দিয়েছিলেন যীশুর আশ্রয়। তাদের সেলাই করা জামা আর চামড়ার চপ্পল বানিয়ে পরতে শিখিয়েছিলেন। শিকারি-সংগ্রাহক থেকে তাদের পরিণত করেছিলেন চাষি, তাঁতি, কুমোর, কামার, জেলে, দর্জি, মুদি, রাজমিস্ত্রিতে। পাকাবাড়িতে রাঁধা, খাওয়া ঘুমোনো আর মাঠে চাষ করার মাপা সময়ের বাঁধা রুটিনের জীবনে তারা সামাজিক হয়ে উঠছিল।
খদ্দেরের অপেক্ষায় সারিবদ্ধ ঘোড়ার গাড়ি
কৃষিভিত্তিক গ্রামীণ জীবনে সারা বছর নিশ্চিত জলের যোগান জরুরি। তাই স্যান অ্যান্টোনিও নদীর ধারটা মিশনের জন্য বেছে নেন ফ্রান্সিকান মিশনারিরা। ১৭১৮ সালে প্রথম গড়ে ওঠে স্যান অ্যান্টোনিও দি ভ্যালেরো। পরে নিউ স্পেনের আলামো নামক জায়গা থেকে আসা সেনারা এই মিশন বার বছর ধরে অবরুদ্ধ রেখেছিলসেই কারণে আজও এই মিশন আলামো নামে খ্যাত। তবে মিশনের প্রথম দিককার কুঁড়েগুলো এক প্রবল ঝড়ে ভেঙে গিয়েছিল। তাই পরে নদীর থেকে খুব দূরে নয় কিন্তু বানভাসি হওয়ার সম্ভাবনাও নেই এমন জায়গা দেখে মিশনকে পুনর্স্থাপণ করা হয়েছিল। রাবল ম্যাসনরির সেই দেওয়াল, জানলা, কুলুঙ্গী আর ঘন্টা ঝোলানোর খিলান আজও আছে। কিন্তু আজ সেই চঞ্চলা নদীটার অস্তিত্ব আলামোর পুব দিকের মূল ফটকে দাঁড়িয়ে টের পাওয়ার জো নেই।
দৌড় দৌড় দৌড়
      আলামোকে ঘিরে আলামো প্লাজা আজকের স্যান অ্যান্টানিও ডাউন টাউনের প্রাণকেন্দ্র। এখানে আছে সব বড়ো হোটেল, কাপড়ের দোকান আর ফার্মাসি, গা ঘেঁষাঘেষি করে স্যান অ্যান্টানিও নদীর দুপাড় ধরে। নদীর পাড় ধরে পাঁচ মাইলটাক আলোয়, রঙিন ছাতায় সাজানো। রিভারওয়াক নামেই এই এলাকাটা জগদ্বিখ্যাত।

রিভার ওয়াক

রিভারওয়াক অবশ্য আলামো প্লাজার একতলা নিচে। সন্ধে থেকে গভীর রাতে রিভারওয়াকের মাথার ওপরের রাস্তা দিয়ে ছুটে বেড়ায় আলোয় মোড়া ঘোড়ার গাড়ি। দেখে মনে হয় যেন রূপকথারা সব বেড়াতে এসেছে।
আলামো প্লাজা থেকে রিভার ওয়াক
বলাবাহুল্য
টের খিলানে ঘন্টা
      আলামো প্লাজা থেকে নদী পেরিয়ে আরো পুবে গেলে রঙিন বাজার এল মার্কেদো। তার দেওয়ালে দেওয়ালে ফ্রেস্কো, দোকান ঘরের ছাদের আলসেতে ইটের খিলানে ঘণ্টা দোলে। বাজারে দোকানে পশরায় কলকাতার নিউ মার্কেটের ছাপ। কিন্তু আয়তনে বেশ ছোট আর চেহারায় বেশ বেশি রকম চকচকে আর পরিষ্কার। এখানে ফুটপাথে ঝুলন্ত টিশার্ট ধমক লাগায়, লাতিনো নয়, মেক্সিকান বলো
ফ্রেস্কো
স্যান ওসে এ স্যান মিগুয়েল দ্য আগুআয়ো
     আলামো তৈরি হওয়ার পর ১৭৩১ অবধি লুইসিয়ানা থেকে স্যান অ্যান্টোনিওতে স্থাণাতরিত হয় আরও চারটে মিশন স্যান ওসে এ স্যান মিগুয়েল দ্য আগুআয়ো, নুয়েস্ত্রা সেনিয়রা দে লা পুরিসিমা কনসেপসিয়ন, স্যান উয়ান ক্যাপিস্ত্রানো এবং স্যান ফ্রান্সিস্কো দে লা এস্পাদা। এদের মধ্যে সেকালের স্থাপত্য সব থেকে বেশি টিকে আছে স্যান ওসে এ স্যান মিগুয়েল দ্য আগুআয়ো-তেপাথরের কারুকাজ করা রোসা উইনডো আজও অটুট মিশনের গির্জার দেওয়ালে। অটুট প্রার্থনাগৃহের তোরণের রোসা উইনডো ও দ্বার ঘিরে থাকা ঔপনিবেশিক স্পেনীয় ভাস্কর্যের নিদর্শনগুলিওএই তোরণ দ্বারেই দেখা যায় ক্যাথলিক সন্ত জোসেফ, ফ্রান্সিস, দমিনিক, আনা জোয়াকিন-এর সাথে কোয়াউইটেকেনদের ফসলের দেবী গুয়াডালিউপকেঔপনিবেশিক স্পেনীয় স্থাপত্য অক্ষয় হয়ে আছে প্রার্থনাগৃহের গম্বুজে, ঘন্টাঘরের মিনারেটে। গির্জা ছাড়াও অটুট আছে কুমোরের ভাটি, শস্যগোলা, অতীতের বাসিন্দাদের বাসা আর রান্নাঘর।
রোসা উইন্ডো

মিশনের চৌহদ্দির বাইরে আছে টারবাইন আর আটাকল। এই টারবাইন চলে মিশনের চাষজমিগুলোকে সেচ দেওয়ার জন্য বানানো খালের জলে খাল আসছে স্যান অ্যান্টোনিও নদী থেকে, ভূমির ঢাল ধরে উত্তর থেকে দক্ষিণে। একেক মিশনের জমিতে সেচ দেওয়ার জন্য দিনের একেকটা সময় নির্ধারিত ছিল। নির্দিষ্ট লকগেট খুলে চাষিরা নিজেদের জমিতে জল দিতেন। তাই লকগেট থেকে শাখাখাল চলে যেত ভূমির ঢাল বেয়ে নদীতে জল ফেরানোর খালে। জলসেচের জন্য প্রত্যেক মিশনের আলাদা আলাদা জলাধার আর খাল-শাখাখালের নেটওয়ার্ক ছিল। স্যান ফ্রান্সিস্কো দে লা এস্পাদার জলাধার ও খালের নেটওয়ার্ক এখনও প্রায় অটুট আছে। পুরোনো নির্মাণ প্রযুক্তিতে কোনো কোনো জায়গায় সারিয়েও দেওয়া হয়েছে একটু আধটু।

মিশন স্যান ওসে-র প্রার্থনা কক্ষ

      এই সমস্ত মিশনগুলি বর্তমানে ইউনাটেড স্টেটস ন্যাশনাল পার্কস সার্ভিসেস-এর তত্ত্বাবধানে আছে। অতীতের জীবনকে জাগিয়ে রেখেছে মিশনগুলোর দূর্দান্ত ইনফরমেশন সেন্টার। মিশন স্যান ওসে-তে তো অডিও-ভিসুয়াল শো-ও হয়। তাছাড়া আছে অনেক রকম ইলেক্ট্রো-মেকানিকাল মডেল, যা সাহায্য করে মিশনের জীবনযাত্রাকে বুঝতে।
মিশন কন্সেপসিয়ন
মিশন এস্পাদা
      মিশনের গির্জাগুলো অবশ্য এখনও সংলগ্ন এলাকার মানুষদের ধর্মজীবনের প্রাণকেন্দ্র। আমরা মিশন এস্পাদাতে ফিউনারেল রিচুয়ালের সাক্ষী। আবার সঙ্গীতের আধুনিক যন্ত্রায়োজনও দেখেছি মিশন কনসেপসিয়নের গির্জার প্রার্থনা ঘরে এবং মিশন সান ওসের গির্জার প্রার্থনাগৃহেও। মিশনের গির্জাগুলোকে ভিত্তি করেই সেদিনের ভূমিভিত্তিক গ্রামীণ জীবন গড়ে উঠেছিল এবং গির্জাগুলিই সেই জীবনকে ধরে রেখেছিল। তাই হয়তো, যখন স্পেনের সম্রাট মিশনগুলোকে ধর্মনিরপেক্ষ করে তার বাসিন্দাদের করদ প্রজায় পরিণত করেন, তখন কোয়াউইটেকেনরা একে একে সব্বাই জঙ্গলে পালায়।
      এই মিশনগুলোর মধ্যে আলামো অতীত ও বর্তমানের সেতু। মাত্র তিনশ বছর আগে এই মিশনগুলোতে প্রাচীনতম সভ্যতার জীবনযাপণ পদ্ধতি অনুসরণ করা হতো। আবার উত্তর থেকে আসা অ্যাপাচে আর কোমান্‌চে উপজাতির ইন্ডিয়ানদের আক্রমণ ঠেকাতে বন্দুকও ব্যবহার করা হতো। কিন্তু আলামো আধুনিক জাতীয়তাবাদের পীঠস্থাণ, টেক্সাসের স্বাধীনতার তীর্থ। আলামো-র অবরোধ আর যুদ্ধই নির্ধারণ করেছিল মেক্সিকো থেকে টেক্সাসের স্বাধীনতা এবং পরে ইউনাইটেড স্টেট্‌স থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার প্রয়াস।
স্যান উয়ান ক্যাপিস্ত্রানো

      এখন আলামোর পাথরের দেওয়ালে প্রাচীনের গাম্ভীর্য আর চারপাশে সমকালের পশরা। এখানে বেড়ালে মনে হয় যেন এখানে এখনও বর্তমান অতীতকে গ্রাস করে নি।




মিশন স্যান ওসের প্রার্থনা ঘরের তোরণ


Readers Loved