Showing posts with label Bengali Prose.. Show all posts
Showing posts with label Bengali Prose.. Show all posts

Friday, September 25, 2015

বাংলা মিনিসাগা


অজাতশত্রু


এক রাজপুত্র সিঙ্ঘাসনে বসেছিলেন অজাতশত্রু নামে। সার্থকনামা হতে তিনি তিনটি কাজ আজীবন করেছিলেন। প্রথমত, সবার সাথে বন্ধুত্ব পাতানোর চেষ্টা; দ্বিতীয়ত, যে বন্ধু হয় নি তার বিনাশ, তৃতীয়ত, শত্রুতার সূত্রপাত জানার জন্য চরচর্চা; তার অবশ্যম্ভাবী ফলে শত্রুকে বিনাশ করতে্ন স্থলে, জলে, ছলে বলে, কৌশলে মাতৃজঠরেও। বলাবাহুল্য, তিনি রাজত্ব করেছিলেন জনশূণ্যলোকে।


শঠে ......


লক্ষীরাম আর গঙ্গারাম বুক কাঁপিয়ে হেসে উঠেছিল আইনি বিধান শুনে। সেই বুক ঠুকেই বলেছিল লক্ষীরাম, “আমার নামে উনিশটা আর গঙ্গাদার নামে একুশটা ফৌজদারি রয়েছে।” শুধরে দিয়েছিল গঙ্গারাম, “তেইশটা, ব্যাঁচড়ার চাচা কেটে।”
সেই রাতে সরকারি বনসৃজন প্রকল্পে গরু পড়তে নিরুপায় আধিকারিক সবকটাকে তাড়িয়ে ছেড়ে দিয়েছিলেন লক্ষীরাম গঙ্গারামের ধান খেতে।




শোক ও শিক্ষা


আগে একবার আগুনে পুড়ে গিয়েছিল সনাতনের কেশ, বেশ, বাস, বসত। চুল, চামড়া নতুন গজিয়েছিল। মনের আরাম এসে ছিল সব ভুলে।পরে অন্য আগুনে পুড়তে পুড়তে সে বুঝল যে আগেরবারের দহনশোকের সাথে সে আঁচের অনুভূতি, বিস্ফোরণের কারণ, জ্বালানির চেহারা এসবের লক্ষণ চেনার শিক্ষাটাও ভুলে গিয়েছিল, তাই নিবারণ করতে পারে নি পুনর্দাহ।

শ্রান্ত পান্থের বৃক্ষনিবাস


ধাবায় ঢোকার আগে, লোকটা গাড়ির ট্রাঙ্ক থেকে মাটিতে নামিয়ে রাখল ডালপালা সমেত একটা গাছ। তার ডালে কাঠের একটা বাড়ি টাঙানো, যেন পাখিতে বাসা করবে। স্নান খাওয়া সেরে লোকটা যখন ফিরল তখন গাছটা মহীরুহ। লোকটা এবার ট্রাঙ্ক থেকে ফোল্ডিং মই বাই করে চড়ল ট্রি হাউসে। তারপর ঘুমিয়ে গেল রাতের মতো।

Thursday, October 9, 2014

বুনো পশ্চিমী মরুপথে এক রাত

[লস এঞ্জলসে ফিরে এসে থেকে স্মৃতির তাড়া করছে। তাই একটা বছর চারেকের পুরোনো বেড়ানোর কথা বলতে ইচ্ছে হলো। এই লেখাটা প্রায় বছর দুয়েক আগে "হাওয়া বদল"-এ ছাপা হয়েছিল।]
(এখানের লেখাটা সেটাই যা আমি জমা দিয়েছিলাম। যা ছাপা হয়েছিল তার লিঙ্ক নিচে দেওয়া রইল।)

লস এঞ্জেলসে থাকার সময় থ্যাঙ্কস গিভিং ডের ছুটিতে আমরা গ্র্যাণ্ড ক্যানিয়ন আর লাস ভেগাসে বেড়াতে গিয়ে ছিলাম। আমরা মানে চারজন - আমাদের বন্ধু রবি আর ওঁর স্ত্রী খুশি, আমার বর পার্থ আর আমি। ইউনাইটেড স্টেটসে নভেম্বরের চতুর্থ বিষ্যুদবারে থ্যাঙ্কস গিভিং ডে উদ্‌যাপিত হয়। ছুটি থাকে বৃহস্পতিবার থেকে রবিবার। বুধবার রাতে রবি আর খুশি পিটসবার্গ থেকে লস এঞ্জেলস এসে পৌঁছে ছিল। অরেঞ্জ কাউন্টি এয়ারপোর্ট থেকে ওদের নিয়ে আমরা রওয়ানা হয়ে ছিলাম অ্যারিজোনার গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন ন্যাশনাল পার্কের দিকেমোট দূরত্ব পাঁচশ মাইলেরও বেশি, ন-দশ ঘণ্টার পথ।  তাই জিপিএস-এর সেটিংস এমন করে রেখে ছিলাম যাতে সব থেকে কম সময়ে গন্তব্যে পৌঁছানো যায়। এই জিপিএসকে আমরা আদর করে নুভি মাসি বলে ডাকি। আমাদের অস্থাণ-কুস্থাণে হারিয়ে যাওয়ার মদতদাতা হলো মাসি। যেখানেই যাই না কেন, মাসিকে যদি একবার জানাই বাড়ি ফিরে যেতে চাই, মাসি ঠিক বাড়ি ফিরিয়ে নিয়ে আসে। এই বাৎসল্যের জন্যেই আমরা বোধ হয় খুব সহজে নুভিকে মায়ের আরেক বোন, আমাদের আরেক মাসি বলে ভেবে নিয়েছি।
পথশ্রমে ক্লান্ত ছিল রবি আর খুশিতাই প্রথম রাতটা ওরা পিছনের সিটে ঘুমোচ্ছিল। গাড়ি চালাচ্ছিল পার্থ আর হেল্পারিতে ছিলাম আমি। মনে একটা চাপা টেনশন ছিল। রাতবিরেতে এতোটা পথ যাব বলে, নাকি রোমহর্ষক মোহাবে ডেজার্টের দক্ষিণপ্রান্ত ছুঁয়ে অনেকগুলো মাইল পেরোতে হবে বলে, সে আমি জানি না। লং উইকএন্ডের শুরু বলে হাইওয়েতে গাড়ির ভিড় ছিল। গতিসীমার থেকে অনেক কম বেগে গাড়ি চলছিল। শহর থেকে কিছু দূরে চলে আসার পর প্রতিপদের কাক জ্যোৎস্নায় চারপাশে জেগে উঠে ছিল পাহাড়, ছাইরঙা উপত্যকায় স্থবির উইন্ডমিলের আবছায়া। পাহাড়ের মাথায় চাঁদের আলো, নাকি বরফ পড়ে গেছে তা বুঝতে পারছিলাম না। বরফ পড়তেই পারে, একে নভেম্বরের শেষ, তায় জায়গাটা সমুদ্র থেকে বেশ খানিকটা উঁচুতে আর দূরেও। সামনে টিমটিমানো লাল আলোর স্রোত পাকদণ্ডী বেয়ে উঠতে থাকা গাড়ির মিছিলের নিশান। মাঝে মাঝে ডানদিকের পাহাড় সরে গেলে, দেখা যাচ্ছে আমাদের যাত্রাপথের বিপরীতে চলমান গাড়ির মিছিল। তাদের নিশান তাদের উজ্বল আলোয়। মিউজিক সিস্টেমের গান ছাপিয়ে যাচ্ছিল গাড়ি চলার একঘেয়ে আওয়াজেসে সব ফালাফালা করে একসময় নুভি মাসি হুকুম করেছিল, টার্ন রাইট। তখন এয়ারপোর্ট ছাড়ার পর দেড়ঘন্টা পেরিয়ে গেছিল, অথচ দূরত্ব পেরিয়েছিলাম মাত্র পঁচাশি মাইল! হাইওয়ের গতিসীমায় আমাদের আরো চল্লিশ-পঞ্চাশ মাইল যাওয়ার কথা।
ডানদিকের রাস্তা নিতেই মাসি বলেছিল, ড্রাইভ ওয়ান হান্ড্রেড অ্যান্ড থার্টি ফাইভ মাইলস্‌।  ভিড় ঠেলে আসার ক্লান্তি কাটাতে পার্থর একটু ফ্রেশ হওয়ার দরকার ছিল তখন। কিন্তু কোনো চায়ের দোকান থুড়ি কফিশপ ছিল না আশেপাশে। অগত্যা একটু জল খেয়ে, একটা সিগারেট টেনে, মুখে বাবল গাম ফেলে ফের গাড়ি চালাচ্ছিল ও
ঘন্টাখানেক পরে টুয়েন্টি নাইন পামস নামে একটা জনপদে পৌঁছে একটা চব্বিশঘন্টা খোলা গ্যাস স্টেশন মানে পেট্রল পাম্প পাওয়া গেছিলসেখানে জল আর বাবল গামের রেশনটাকে বাড়িয়ে নেওয়া গেছিলআবার কতোক্ষণে জল পাওয়া যাবে জানতাম না।
ফ্রেস্কো
এদিকে রাস্তার পাশের বাকি সব দোকানে তখন লোহার গরাদ টানা। তাতে সন্দেহ হচ্ছিল যে সামনে জনপদ থাকলেও দোকান খোলা পাওয়া যাবে কিনা। টুয়েন্টি নাইন পামসের দেওয়ালে দেওয়ালে আলো আবছায়ায় জমজমাট সব ফ্রেস্কো গল্প বলে ছিল
। আর ছিল  দুহাত তুলে নামসংকীর্তনের ভঙ্গীতে দাঁড়িয়ে জোশুয়া গাছেদের আবছায়াগুলো। পিঠে বোঝা নিয়ে ধূ ধূ রাস্তা পেরিয়েছিল একজন হোবো। তার হাতে ছিল একটা কাগজের মোড়ক, হয়তো খাবারের, আর কাগজের কাপ, নিশ্চয়ই কফির। 
অন্ধকারে জোশুয়া

কারণ মাঝরাতের মরুভূমি থেকে ছুটে আসা হাওয়ায় নাক-চোখ বেশ জ্বালা করছিল, হাড়েও কনকনানি লাগছিল  হুশ করে ফুরিয়ে গেছিল টুয়েন্টি নাইন পামসের মরুদ্যানটা গাড়ির আলোতে শুধু রাস্তাটুকুই দেখা যাচ্ছিল। সামনের অন্ধকারের ঘনত্বে টের পাওয়া যাচ্ছিল ধারাবাহিক চড়াই-উৎরাই। যখন হেডলাইটের পর অন্ধকারের খাড়া দেওয়াল, তখন চড়াই। আর হেডলাইটের আলো অন্ধকার থেকে গড়িয়ে নিচে নামছে যখন, তখন উৎরাই। এরকম একটা চড়াইয়ের মাথায় উঠতেই মাসি হুকুম করে ছিল, টার্ন লেফ্‌টমাসি না থাকলে  আমরা বাঁদিকের এই বাঁকটা ঠাহরই করতে পারতাম না অন্ধকারে।

আরও ঘন্টাখানেক চড়াই-উৎরাই ভাঙার পর, এক চৌমাথাতে পৌঁছে মাসি বলে ছিল ডাইনে যেতে। সেই ঘণ্টাখানেকে আমাদের আগে পিছে কোনো গাড়ি ছিল না; রাস্তাটা ওয়ান ওয়ে ছিল না, তবুও উল্টোদিক থেকে কোনো গাড়ি আসে নি। এই বিরল জনশূণ্যতায় ঘাবড়ে গিয়ে আমরা তখন মাসির বোধ-বুদ্ধি নিয়ে ট্যারা-ব্যাঁকা মন্তব্য করতে শুরু করে ছিলাম। তারপর মাসির মগজে খুটখাট করে সেটিংস বদলে দিয়েছিলাম যাতে কেবলমাত্র হাইওয়ে দিয়েই যাওয়া যায়তারপর গাড়িটাকে এদিক ওদিক ঘুরিয়ে ফিরিয়ে চেষ্টা করেছিলাম যদি মাসি জনবহুল রাজপথের খোঁজ দেয়। আগে এসব কায়দা আমাদের কাজে এসে ছিল, তাই আর-কি। কিন্তু মাসির তখন ঠোঁটে বোধ হয় ছ্যাঁকা লেগে ছিল, ঠাণ্ডায়, ফলে এক দীর্ঘ স্পিকটি নট্‌। দীর্ঘ পথের নিরিখে সময়াভাব আর বিদেশ-বিভুঁই-এ অচেনা অজানার গা ছমছমানো অনুভূতি - এই দুটো কারণই যথেষ্ট ছিল আমাদের সীমিত ধৈর্যকে আরও ছোটো করে দিতেমিনিট দশেক ধরে শঙ্কাকুল চেষ্টা করে হাইওয়ে খুঁজে পাওয়ার আশা ছেড়ে দিয়ে, ডানদিকে আমাদের বাঁকতেই হয়েছিল। আর বাঁকতেই মাসি কটকটিয়ে উঠে ছিল, ড্রাইভ টু হান্ড্রেড মাইলস্‌। দুশ মাইল মানে প্রায় সাড়ে তিন ঘন্টার পথ এমনিতে, কিন্তু অন্ধকার আর হাওয়ায় কতো সময় লাগবে তা বেশ অনিশ্চিত ছিল। 
সে পথে ঘণ্টাখানেক কাটার পরেও মনে হচ্ছিল যে যতো জোরেই ছুটুক, গাড়িটা যেন এগোচ্ছে না; হেডলাইটের সীমানার ভেতর একচিলতে রাস্তা; আর বাকি সবটাই নিরবচ্ছিন্ন অন্ধকার, দিগন্ত উধাও, চারপাশে শুধুই  আকাশ। গাড়িটা থেকে থেকে হাওয়ায় দুল ছিল। তাতে আরও মনে হচ্ছিল যেন আমরা আকাশে ভেসে চলেছি। সেই ঘোর কাটিয়ে দিয়ে ছিল ডেজার্ট জ্যাকাল। গাড়ির আলোর শেষ সীমা দিয়ে বুরুশের মতো লেজ দুলিয়ে দৌড়ে গেছিল রাস্তার একদিক থেকে আরেক দিকেঅমনি আকাশটা তারা-টারা সমেত উঁচুতে উঠে গেছিল, তখন গাড়ির চারপাশে পড়ে ছিল আদিগন্ত নির্জলা সমুদ্র, বুকে তার ছড়ানো ছিটোনো বোল্ডার। সেই সমুদ্রের ঢেউ দেখে কখনও মনে হচ্ছিল নুনের ঢিবি, কখনও চলমান বোল্ডারের সারি। পার্থর খুব ইচ্ছে করছিল গাড়ি থামিয়ে একবার পরখ করে যে সে পৃথিবীতে আছে নাকি গ্রহান্তরে। কিন্তু প্রত্যেক মাইলেই সতর্কবার্তা ছিল, সফট শোল্ডার, মানে রাস্তার পাশের ফাঁকা জায়গায় গাড়ি বা পা রাখলে  মাটির নিচে সেঁদিয়ে যেতে পারে! আরও ছিল, উড়ন্ত বোল্ডার থেকে সাবধানকড়াং, ঠনঠন আওয়াজে বোঝা যাচ্ছিল যে প্রচুর মুরাম উড়ে গাড়িতে আছড়ে পড়ছিল। আরও দুএকটা ডেজার্ট জ্যাকাল রাস্তা পেরিয়ে ছিল বলে নাকি আমাদের উল্টোপথে দুটো গাড়ি গেছিল বলে, জানি না, আমাদের সাহস কিছুটা বেড়ে ছিল তারপরতাই একটুক্ষণ ফাঁকা রাস্তার ওপরই গাড়ি থামিয়ে, কাছ থেকে ডেজার্ট জ্যাকাল দেখার চেষ্টা করে ছিল পার্থ। কিন্তু কয়েক মিনিটের অপেক্ষায় ব্যর্থ হয়ে শোল্ডার থেকে এক মুঠো বালিরঙা মুরাম তুলে এনে টিস্যু পেপারে মুড়ে নিয়ে ছিল সে
সেই রুদ্ধশ্বাস যাত্রাপথের শোঁ-শোঁ হাওয়ার শব্দ হঠাৎ ফালাফালা করে দিয়ে ছিল একটা হুইশল। টের পেয়ে ছিলাম রেললাইনের অস্তিত্ব। মনে বেজে ছিল গুড-ব্যাড-আগলির আবহ। সে সময়েই দেখে ছিলাম একটা রেস্ট এরিয়ার পার্কিং-এ দাঁড়িয়ে গর্জাচ্ছিল একটা ট্রাক। ড্রাইভারের সাড়া ছিল না। হয়তো ড্রাইভার প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে রেস্ট এরিয়ার টয়লেটে গেছিলপার্থ রেস্ট এরিয়ার টয়লেট ঘুরে এসে জানিয়ে ছিল যে সেটাও শুনশান। রবি আর খুশি তখন পুরোপুরি জাগন্ত। আমার চারজন আড়ামোড়া ভাঙতে ভাঙতে নির্জন মরুভূমিতে কৃষ্ণপক্ষের দুপুর রাতে নিখোঁজ ড্রাইভারকে নিয়ে চারটে হাড়-হিম করা গল্প ফাঁদছিলাম মনে মনে। সেই নিশুতিপনা ঘুচিয়ে বরযাত্রীর মতো আলো ঝলমলানো রেলগাড়ি ঝমঝমিয়ে চলে গেছিল আমাদের সামনে দিয়ে। আদিগন্ত বিস্তীর্ণ মরুভূমির সাথে আকাশের মেশামিশিতে তৈরি এক ত্রিমাত্রিক পর্দায় দেখেছিলাম ওয়েস্টার্ন ভিস্যুয়াল আর্ট!
এক চিলতে গাড়ির হেডলাইট দিয়েছিল আর দূরে রেলগাড়ি


তারপরে হাইওয়ে মিলে ছিল। ততোক্ষণে আরও তিনটে গাড়ি আমাদের ফেলে আসা পথের দিকে চলে গেছিলভোর হয়ে ছিল নিডলস্নামের এক জনপদেবার্গার আর হট চকোলেট খেতে খেতে শুনে ছিলাম সামনেও মরুপথ। সে পথের অন্য গল্প।


(এই হলো যা ছাপা হয়েছিল)

Readers Loved