৬. শিন ছি
ঘুরে দাঁড়াতেই মিন হুয়ে অবাক চোখে একটা মানুষের মুখ দেখলো। মানুষটাকে আপাদমস্তক দেখে, সে বিনা চেষ্টায় তিন পা পিছিয়ে গেলো।
তখনই বুঝতে পারলো কেনো সু তিয়াঁ রোজ শিন ছির পিছু পিছু ঘুরে বেড়াতো, কোনো মেজাজ দেখাতো না, সারাজীবন কেনো সে স্বেচ্ছায় অপেক্ষা করেছে।
শিন ছি কী অপরূপ সুন্দর!
মুখ দেখে মুগ্ধ হবার মানুষ মিন হুয়ে নয়। সে বরং সুন্দর দেখতে পুরুষদের ব্যাপারে সতর্কই থাকে। কিন্তু সেও মনে মনে মেনে নিলো যে শিন ছির মুখটা ভোলা যায় না। মুখের সমস্ত অঙ্গ মিলে মিশে একাকার হয়ে আছে, কোনো কোনো অঙ্গ আলাদাভাবে জেগে ওঠে নি। উঁচু ভ্রূরেখা, গভীর চোখ, খাড়া নাক, বাঁকা ঠোঁট। মুখটা ছোট্টো। গম্ভীর, শান্ত সুন্দর নয়। বরং স্বাভাবিক, শিশুসুলভ চঞ্চলতাময় সুন্দর। মাঝারি উচ্চতা, এক দশমিক আট মিটারের আশেপাশে, ছ ফুটের কাছাকাছি। চেহারা রোগার দিকে, চওড়া কাঁধ, সরু কোমর। পরণে তার হালকা হলদেটে হয়ে যাওয়া সাদা টিশার্ট, যেমনটা মিন হুয়ে পড়ে আছে। টিশার্টে ম্যানহোলের ঢাকার নকশাটার বাকি অর্ধেকটা ছাপা আছে। আর কালো জিনস্। পায়ে সাদা নাইকি জুতো।
সতেজ, পরিষ্কার, প্রাণবন্ত যুবক।
হাত বাড়িয়ে শিন ছি বললো, “তুই মাথায় অনেকটা বেড়েছিস! কাছে আয়, বুকে জড়িয়ে ধরি একবার-”
মিন হুয়ে মগজে তোলপাড় হয়ে গেলো খুব দ্রুত। কিন্তু তার পা দুটো নড়লো না। মুখ দিয়ে শুধু বেরোল, “ঐ -”
ও ইয়ং’আন সাঁকোতে এসে ছিলো একটা সৌভাগ্যের মেজাজে। ও মোটেই আশা করে নি যে ওর সাথে শিন ছির দেখা হবে। কোনো সন্দেহ নেই যে শিন ছি ওকে ভুল করে সু তিয়াঁ ভেবেছে। মিন হুয়ে ওকে শুধরে দিতে চলেছে, নিশ্চিত। এমন সময় একজোড়া বলিষ্ঠ হাত ওকে ঘিরে ধরলো গভীর আলিঙ্গনে।
অসেচতন ভাবেই ও বাধা দিলো। কারণ দুজনে পরস্পরের এতো কাছাকাছি যে একে অপরের মুখের ওপরে ওদের নিশ্বাস এসে পড়ছে। উপত্যকা থেকে পাহাড়ি হাওয়া বইছে, পাক খাচ্ছে ওদের মাথার ওপর দিয়ে। মিন হুয়ে জানে না কেনো যে তার মনে হচ্ছে যেনো পুরো পাথরের সাঁকোটা কাঁপছে, হতে পারে তার মনের দূর্বলতা, কিংবা ভারি অসুখের প্রকোপ। কয়েকজন মানুষ পাশ দিয়ে হেঁটে গেলো, কিন্তু ওদের দুজনকে নজর করলো না মোটেই। কিন্তু একটা বাচ্চা মেয়ে একটু দূরে দাঁড়িয়ে পপসিক্ল খাচ্ছে আর খিলখিল করে হাসছে ওদের দেখে।
মিন হুয়ে তখনও ওর হাতে আধখাওয়া আইসক্রিমখানা ধরে আছে। কয়েক সেকেন্ড দ্বিধা করে, ও নিজের হাতটা আলতো করে শিন ছির পিঠে রাখলো। ও ভেবে ছিলো সু তিয়াঁর মৃত্যু সংবাদ দেবার পরে ও শিন ছিকে জড়িয়ে ধরে শান্তনা দেবে, তার অনুশোচনা, মনের যন্ত্রণাটা বোঝাতে। কিন্তু সে সব যেনো ঘেঁটে গেলো যথা সময়ের একটু আগেই।
তার এমনটাও মনে হতে লাগলো যে হয়তো আকাশের কোণ থেকে সু তিয়াঁ তাদের দেখছে এই মুহূর্তে।
শিন ছি এতক্ষণ কোনো কথা বলে নি। তার মুখটা চেপে রেখে ছিলো মিন হুয়ের মাথার ওপরে, যেনো স্মৃতিতে ডুবে আছে। এই চুপচাপ মূহুর্তের সুযোগ নিয়ে মনে মনে মিন হুয়ে কথা সাজিয়ে চললো, “শিন ছি, আমি তোমাকে একটা দুঃখের খবর দেবো …… আমি সু তিয়াঁ নই, সু তিয়াঁ মারা গেছে।”
না, মৃত্যু বলা যাবে না, সে তো শুধু হারিয়ে গেছে। এতোটা সোজাসুজি হবে না কাজটা। এইটা বেশ সরল এবং অসভ্য শোনাবে। কি হবে যদি শিন ছি খবরটা সহ্য করতে না পারে আর তার হার্ট অ্যাটাক হয়?
— “শিন ছি আমি তোমাকে কিছু বলতে চাই। আমি সু তিয়াঁ নই। সু তিয়াঁ আজ আসে নি। ব্যাপারটা এরকম যে আমাকে বাঁচানোর জন্য ও নদীতে ঝাঁপ দিয়েছিল; আর বাণের তোড়ে ভেসে গেছে। এখনো পর্যন্ত ওকে আমি খুঁজে পাই নি। চিন্তা কোরো না। তুমি ভরসা রেখো সু তিয়াঁর সাঁতারানোর প্রতিভার ওপরে। সে হয়তো সাঁতরে অন্য কোথাও চলে গেছে, অন্য কোনো পাড়ে উঠেছে, হয়তো আহত হয়েছে, হয়তো বাড়ি ফিরতে পারে নি অনেকদিন -”
না, এটা বড়ো বেশি আশায় ভরা। যতো বড়ো আশা হবে, ততো জোর হতাশা হবে। ও নিশ্চয়ই পাগলের মতো সবর্ত্র খুঁজবে সু তিয়াঁকে, সেই সব বাচ্চা হারানো বাপ-মায়ের মতো যাদের বাকি জীবনটা ধ্বংস হয়ে যায় হারিয়ে যাওয়া বাচ্চার খোঁজে।
—- “শিন ছি, আমার কথা শোনো, আমি সু তিয়াঁ নই। সু তিয়াঁ হারিয়ে গেছে, পুলিশ ওকে খুঁজছে। ও বাণের জলে ভেসে গেছে আমাকে বাঁচাতে গিয়ে। দয়া করে আমার ওপর ভরসা রাখো যে আমি সু তিয়াঁকে খুঁজে বার করবই। আমি সমস্ত খবর তোমাকে জানাবো যতো শিগগির সম্ভব —”
নাহ্। এটা বড্ডো সাদামাটা। বড্ডো সোজা সাপটা ঘটনার বিবরণে ভরা, যেনো ব্যাপারটায় তার নিজের আর কোনো দায় নেই।
– – “শিন ছি, আমি সু তিয়াঁ নই। তোমার সু তিয়াঁ হারিয়ে গেছে। আমার দোষে। যদি আমাকে সু তিয়াঁর মতো ব্যবহার করলে তোমার ক্ষতিপূরণ হয়, আমি তাতেও রাজি।”
আচ্ছা, খুব সাহসী, যথেষ্ঠ ন্যায্য। সমস্যা হলো যে এটা কোনো লোকে চাইবে কেনো?
মিন হুয়ের বোধ, বিবেচনা, বুদ্ধি ক্রমশ গুলিয়ে যেতে লাগলো। সে আর জানেও যে এরপর কী করা উচিৎ ……
শিন ছি বললো, “তুই কাঁপছিস। ঠান্ডা লাগছে?”
মিন হুয়ে আতঙ্কে ঘাড় নাড়লো।
শিন ছি বললো, “তবে আমি তোকে এভাবেই জড়িয়ে ধরে থাকি যতক্ষণ না তুই একটু ওম পাচ্ছিস।”
শিন ছির গা থেকে লেবুর মতো গন্ধ আসছে। পারফিউম নাকি শাওয়ার জেল, মৃদু আর টকটক, যেনো মিন হুয়ে একটা ফলের ঝোপে এসেছে। টি-শার্টটা বড্ডো পাতলা, মেয়েটার মুখটা লাল হয়ে উঠছিলো, ছেলেটার ত্বক ছাপিয়ে শোনা যাচ্ছিলো তার হৃদস্পন্দনের শব্দ।
মিন হুয়ে গুণছে। মিনিটে একশো পঞ্চাশটা বা তার কিছু বেশি।
মিন হুয়ে একটু ছটফট করে উঠে বললো, “আমার আর ঠান্ডা লাগছে না … কেউ আমাদের দেখছে।”
শিন ছি খুলে দিলো হাতের বাঁধন। বললো, “তোর ভয়টা কিসের?”
পপসিক্ল খেতে থাকা মেয়েটাকে মুখ ভেঙিয়ে, মিন হুয়েকে টেনে নিলো ওর পাশে দাঁড়িয়ে থাকা একটা বড়ো গাছের আড়ালে। বলতে লাগলো, “আমি ন দিন ধরে অপেক্ষা করছি। যতো দিন যাচ্ছে, ততো অধৈর্য হয়ে যাচ্ছি। একেক দিন মনে হয়েছে যে আমি তোকে আর কোনো দিন দেখতে পাবো না। মনে হয়েছে এই সাঁকো থেকে ঝাঁপ দি।”
তারপর জামার দিকে আঙুল তুলে বললো, “আর এই জামাটা আমি ন দিন ধরে রোজ পরেছি। রোজ রাতে কেচেছি। ঘরে এয়ার কন্ডিশনার চলে, তাই শুকোনো যায় না। তাই একটা হেয়ার ড্রায়ার দিয়ে রোজ ব্লো ড্রাই করেছি। এটা থেকে কি গন্ধ বেরোচ্ছে?”
মিন হুয়ে উত্তরে বললো, “না।”
শিন ছির চোখ পড়লো মিন হুয়ের আধখাওয়া আইসক্রিমে, “দেখ, এতো বছর পরেও তোর পছন্দ সেই আম।”
মিন হুয়ে আম খুব পছন্দ করে। কিন্তু সে আশা করে নি যে সু তিয়াঁও আম পছন্দ করতো। ও দীর্ঘশ্বাস ফেললো। ভীষণ আলাদা দুটো মেয়ের মধ্যে শেষ পর্যন্ত একটা কোনো মিল পাওয়া গেলো।
শিন ছি বলে চললো, “তোর মনে আছে, যখন আমরা প্রথমবার এখানে আইসক্রিম খেয়ে ছিলাম, মাথা পিছু একটা করে গোলা, আমি চেয়ে ছিলাম স্ট্রবেরি, তোর পছন্দ ছিলো আম, আমি তিন কামড়ে আমারটা শেষ করে ফেলে ছিলাম, তুই তোরটা আমাকে দিয়ে দিয়েছিলি, আর বলেছিলি যে তোর পছন্দের স্বাদ হলো আম ……”
মিন হুই বেশ বড়ো একটা দলা চামচ দিয়ে মুখে পুরে ভালো করে স্বাদ নিয়ে বললো, “তাই নাকি? আমার কিছু মনে নেই।”
শিন ছি জিজ্ঞেস করলো, “এটা খেতে ভালো?”
মিন হুয়ে উত্তর দিলো, “ভালো। তুই চেখে দেখবি?”
মিন হুয়ে বাকি আইসক্রিমটুকু শিন ছির হাতে দিয়ে ফেলার আগেই ওর মুখ আটকে দিলো শিন ছি। নরম, লেপ্টে থাকা চুমুতে। মিন হুয়ে ভেঙে মুক্ত হতে চাইলো। কিন্তু টের পেলো যে ওর মাথাটা শিন ছি শক্ত হাতে ধরে আছে, আর ওর পুরো শরীরটা ঠেসে ধরা আছে গাছের গায়ে। শিন ছি চুমুর ফাঁকে ফাঁকে গুনগুন করে বলতে লাগলো, “তিয়াঁ তিয়াঁ, রোজ তোর জন্য মন কেমন করেছে আমার, জানিস কী? তুই, যদি তুই আবারও না আসতিস, তাহলে আমি পাগল হয়ে যেতাম!”
মিন হুয়ে মরিয়া চেষ্টা করলো, “শিন ছি - শোন আমার কথা -”
শিন ছি সে কথায় কানই দিলো না। ডুবে রইলো গহীন গভীর চুমুতে। বেশ কিছুক্ষণ পরে সে শান্ত হলো, নিজের কপালটা ঠেকিয়ে রাখলো মিন হুয়ের কপালে, হাসলো, আর মিন হুয়ের ফ্যাকাসে অবাক মুখটা ছুঁলো। দুজনেরই শ্বাস ভারী তখনও।
মিন হুয়ে একটা গভীর শ্বাস নিয়ে মুঠো পাকিয়ে, যাবতীয় সাহস জড়ো করে শুরু করলো, “শিন ছি, তোকে আমার কিছু বলার আছে।”
শিন ছি মিন হুয়ে নাকে আঁচড়ে দিয়ে বললো, “কী কাকতালীয় দ্যাখ, আমারও তোকে কিছু বলার আছে।”
মিন হুয়ে সুযোগ দিলো, “তুই আগে বল।”
শিন ছি খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে মিন হুয়েকে দেখতে দেখতে বললো, “তুই আগে বল। কিন্তু বলিস না যে তুই বিয়ে করে ফেলেছিস।”
মিন হুয়ে প্রতিবাদ করলো, “সেটা সত্যি কথা নয়।”
শিন ছি মত বদলালো, “ঠিক আছে, আগে আমিই বলি।”
তারপর একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো, “আসছে মাসে আমার হার্টে একটা অপারেসন হবে। ডাক্তার বলেছে যে সব ঠিকঠাক উৎরোলে, আমার বাকি জীবনে আর কোনো হার্ট অপরেসন করাতে লাগবে না।”
মিন হুয়ে উৎসাহে সাড়া দিলো, “খুব ভালো কথা।”
মিন হুয়ে প্রায় তালি দিয়ে উঠতে যাচ্ছিলো আনন্দে। কিন্তু তারপর ভাবলো, “যদি অপেরাসনটা কাজ না করে?”
শিন ছি উত্তর দিলো, “ঠিকঠাক না হলে, আমি অপরেসন টেবিলেই মারা যাবো। বছরের শুরতেই আমার এটা করিয়ে ফেলা উচিৎ ছিলো। কিন্তু আমি সমানে ভেবেছি যে যদি অপেরসন ফেল করে তো আমি তোর সাথে দেখা করতে আসতে পারবো না। তাই আমি সমানে পিছোতে থাকি অপরেসনের তারিখ।”
মিন হুয়ে চিন্তিত চোখে শিন ছির দিকে তাকালো। মুখে যে শব্দগুলো আসছিলো সেগুলো ও গিলে ফেললো। ওর মনের মধ্যে ফের ঘূর্ণি ধরেছে
– যদি ও সত্যি বলে আর শিন ছি আর বেঁচে থাকতে না চায়?
– শিন ছি কী অপরেসনটা আর করাবেই না?
– এমনকি – শহীদ হবে?
মিন হুয়ের অস্বাচ্ছন্দ্য টের পেয়ে শিন ছি বললো, “চিন্তা করিস না। আমার ভাগ্য খুব ভালো। না হলে আমি এ জীবনে আবার তোর দেখা পেতাম না।”
তারপর মিন হুয়ের হাত ধরে বললো, “তাহলে আমাদের বিয়ের পর কিছুদিন আমাদের নিউ ইয়র্কে থাকতে হবে।”
আঁতকে উঠলো মিন হুয়ে, “কী? বিয়ের পর?”
ঘটনার ক্রম যেনো লাফাচ্ছে, উড়ছে।
মিন হুয়ে হতবাক হয়ে শিন ছির দিকে চেয়ে রইলো, “বিয়ে?”
শিন ছি স্পষ্ট করে দিলো, “হ্যাঁ। আমি আগেই বলেছি, আমি যখন ফিরে আসবো তখন আমি তোকে বিয়ে করবো।”
তার ভাবখানা গম্ভীর থেকে গম্ভীরতর হয়ে গেলো, “সে কথা তো চিঠিতেই স্পষ্ট করে লেখা ছিলো। তুই ভুলে গেছিস?”
মিন হুয়ে প্রতিবাদের চেষ্টা করলো, “কিন্তু -”
সে প্রতিবাদ শিন ছি শুনলে হয়, “তাছাড়া, আমি তোকে জিজ্ঞেস করে ছিলাম ছ বছর বয়সে যে তুই আমাকে বিয়ে করবি কিনা। তুই ‘হ্যাঁ’ বলেছিলি।”
মিন হুয়ে চেঁচিয়ে উঠলো, “ছ বছর বয়সে? তুই বিশ্বাস করিস ছ বছরের বাচ্চার কথায়?”
শিন ছি ভ্রু কুঁচকে গম্ভীর মুখে জানতে চাইলো, “মন বদলে ফেলেছেন আপনি? সু তিয়াঁ শওজিয়ে?”
মিন হুয়ে মুখ খুললো। আবার বন্ধও করে ফেললো।
শিন ছির মুখ জুড়ে বিরক্তি। দু চোখে মিন হুয়েকে ঝলসাতে ঝলসাতে বললো, “হ্যাঁ, আমি বিশ্বাস করি। এবার হাত বাড়া।”
পকেট থেকে একটা ঝলমলে কী যেনো বার করে মিন হুয়ের মধ্যমায় আস্তে আস্তে পরিয়ে দিয়ে বললো, “এটা তোর এংগেজমেন্ট রিং।”
মিন হুয়ে চোখ নামিয়ে দেখলো একটা সাদামাটা সিক্স ক্ল ডায়মন্ড রিং, সলিটেয়ার। একটা মাত্র হীরে রোদে ঝলমল করছে।
যাচ্ছেতাই কান্ড। খুব বাজে ব্যাপার। মিন হুয়ে আংটিটা খুলে ফেলতে চাইলো। চোখ তুলে দেখলো শিন ছির দু চোখ আলোয় ভরে আছে। মিন হুয়ে কেবল একটা আলতো হাসি দিতে পারলো।
শিন ছি বললো, “এই নকশাটাও তোর পছন্দ ছিলো। মনে পড়ে?”
এ কথাটা ডায়েরিতে লেখা নেই। মিন হুয়ে মনে মনে হাসলো, কী করে তার মনে থাকবে!
শিন ছি মনে করিয়েই ছাড়বে, “সেই দাবা ম্যাচের সময়ে, যখন ডিন সকলকে প্রাদেশিক রাজধানীতে নিয়ে গিয়ে ছিলেন, তখন একটা দোকানে পাশ দিয়ে যাবার সময়, তার জানলাতে সাজানো দেখে তুই আঙুল দিয়ে দেখিয়ে বলেছিলি যে তোর ওরকম একটা চাই। আমি ‘হ্যাঁ’ বলে ছিলাম আর বলে ছিলাম যে বড়ো হয়ে আমি তোকে কিনে দেবো। তুই বলে ছিলি আমি যেনো কথার খেলাপ না করি। আর এখন তুই পিছিয়ে যাচ্ছিস। মনে আছে?”
কী সুন্দর একটা অতীত! কী সতেজ শুদ্ধ অনুভূতি! শিন ছি সব প্রতিশ্রুতি সব শর্ত মনে রেখেছে। সুদীর্ঘ অপেক্ষার পরে, সাত সমুদ্দুর তেরো শো নদী পেরিয়ে এসেছে জীবনভরের এক প্রতিশ্রুতি রাখবে বলে, সে সবই যে বৃথা এখন!
মিন হুয়ে চোখ মেলে চাইলো শিন ছির দিকে। তার চোখ দুটো লালচে হয়ে উঠেছে। বললো, “হ্যাঁ, আমার মনে আছে।”
এই মূহুর্তে তার মনে হলো যে তার একটাই উপায় আছে। সেটা হলো আপ্রাণ চেষ্টা করে শিন ছিকে নিরাপদে নিউ ইয়র্কে ফেরত পাঠিয়ে দেওয়া যাতে তার হার্টের অপরেসনটা নির্বিঘ্নে হয়ে যায়। অপরেসনের পর শিন ছি সেরে উঠলে তাকে আস্তে ধীরে আসল খবরটা দিতে হবে। তার আগে, শিন ছিকে কোনো ভাবেই উত্তেজিত করা যাবে না। এখন সে একটা ভীষণ আনন্দের মধ্যে আছে, উত্তেজিত হয়ে আছে, তার হরমোনগুলো টগবগিয়ে ফুটছে। এখন যদি সে সু তিয়াঁর খবরটা শোনে, আর তার জেরে হার্ট অ্যাটাকে মারা যায়, তাতে মিন হুয়ের পাপ আরো বেড়ে যাবে। মিন হুয়ে আর একটা মানুষকে মেরে ফেলবে, শেষ করে দেবে আরেকটা মনুষ্যজীবন।
এসব ভাবতে ভাবতেই, নিজের অজান্তে মিন হুয়ে ভিজে উঠলো একটা শীতল ঘামের স্রোতে। কপাল জোরে সে আগে বলে ফেলে নি কথাটা। শিন ছির যেরকম আবেগে উথলে ওঠা স্বভাব, তাতে ও নিশ্চয়ই সু তিয়াঁর খবর শুনে সাঁকোর ওপর থেকে ঝাঁপ দিতো।
শিন ছি বললো, “আমার কাজ সারা। এবার তোর পালা।”
শিন ছি মিন হুয়ের হার ধরে খেলার মাঠের দিকে হাঁটতে লাগলো। বললো, “চল, হাঁটতে হাঁটতে কথা বলি না হয়। চল আইসক্রিমের দোকানটায় যাই। আশা করি ওখানে কফি পাওয়া যাবে। তুই খানিক ওম পাবি।”
“আমার কথা – –” বেশ খানিকক্ষণ মিন হুয়ে কিছু ভেবে পেলো না বলার মতো। তারপর একটা যা হোক বিষয় খুঁজে পেলো, “আমার একটা ভাই আছে। আমার থেকে বয়সে একটু ছোটো। আমার সঙ্গে ওকেও ছেলেধরারা ধরে নিয়ে গিয়ে ছিলো, যখন আমরা দুজনেই খুব ছোটো। এতো বছর ধরে আমি ওকে খুঁজে চলেছি। আজকেই কিছু খবর পেয়েছি। ও মনে হয় মিংশুই শিয়াহ্তে আছে।”
শিন ছি জানতে চাইলো, “মিংশুই শিয়াহ্ কোথায়?”
মিন হুয়ে বললো, “সুইহুয়াতে।”
শিন ছি উৎসাহের সঙ্গে বললো, “সুইহুয়া এখান থেকে খুব দূরে নয়। তার জন্যে প্লেনে চড়তে হবে না।”
মিন হুয়ের হাসি আর থামে না, “কতোদিন আগে তুই চলে গেছিস এখান থেকে। তোর মনে আছে সুইহুয়া কোথায়?”
শিন ছির উত্তর বেশ গম্ভীর, যুক্তিপূর্ণ, “আমি তো খুব ছোটোবেলায় যাই নি এখান থেকে। আমি গেছি আমার তেরো বছর বয়সে। অনেক কিছুই মনে আছে আমার।”
মিন হুয়ের মাথায় ঘুরছে সমানে কিভাবে ভুলিয়ে ভালিয়ে শিন ছিকে ইউনাইটেড স্টেটসে ফেরত পাঠিয়ে দেওয়া যায় যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব, “তাহলে তুই নিউ ইয়র্কে ফিরে যা। তোর সার্জারিটা করিয়ে নে। আমি সুইহুয়া যাই, ভাইকে খুঁজি। তোর শরীর সুস্থ হলে আবার একদিন দেখা করবো আমরা না হয়? ঠিক আছে?”
মাথা নেড়ে শিন ছি আপত্তি জানালো, “না। তোর ভাই তো আমারও ভাই বটে। অপরেসনটা জরুরী, সেটা খুব বেশি দিন ফেলেও রাখা যাবে না আর। আমি তোর সাথে যাবো, পথে তোর খেয়াল রাখবো।”
তারপর সে বলে চললো, “আমি ইউনাইটেড স্টেটসে পৌঁছোনোর পর অনাথাশ্রমে ফোন করে ছিলাম। ওঁরা বলে ছিলেন যে তোকে তোর মা এসে নিয়ে গেছেন। তোরা নাকি আত্মীয়ের বাড়িতে আছিস। ওঁরা আমাকে তোর আত্মীয়ের ঠিকানাও দিয়ে ছিলেন। আমি তখনই ঐ ঠিকানায় চিঠি লিখতে শুর করি কিন্তু সব চিঠিই ফেরত গিয়ে ছিলো। আমি আবার অনাথাশ্রমে ফোন করি। তোর ঠিকানা থেকে চিঠি সব ফেরত যাচ্ছে বলি। ওঁরা বলেন যে ঠিকানাটা তোর আত্মীয় যেখানে কাজ করতেন সেখানকার। তিনি হয়তো ঐ বাসা ছেড়ে চলে গেছেন অন্য কোথাও। তাই তোর সাথে আর কোনোভাবেই যোগাযোগ করতে পারি নি। সে যা হোক, তোকে কি এখনো সকলে সু তিয়াঁ বলে ডাকে? নাকি তোর নাম বদলে গেছে?”
মিন হুয়ে জানালো, “পরিচয় পত্রে নাম মিন হুয়ে। কিন্তু তুই আমাকে এখনো সু তিয়াঁ বলতে পারিস। তোর নাম?”
শিন ছির স্পষ্ট উত্তর, “ইংরেজি নামটা পাসপোর্টে। আমাকে শিন ছি বলেই ডাকিস।”
মিন হুয়ে সম্মতি দিলো, “হ্যাঁ। তাই হবে।”
শিন ছি আরো জানতে চাইলো, “তারপর, তোর মা-বাবা কেমন আছেন?”
মিন হুয়ে বললো, “কেউ আর নেই। দুজনেই গত হয়েছেন।”
“ওহ্” বলে শিন ছি মিন হুয়ের কাঁধে আলতো চাপড় দিলো, “কবে হলো?”
মিন হুয়ে উত্তর দিয়ে চললো, “অনেক বছর আগে।”
শিন ছি দুঃখ প্রকাশ করলো, “খারাপ লাগছে যে আমি তখন তোর সঙ্গে ছিলাম না।”
মিন হুয়ে আশ্বস্ত করলো, “ঠিক আছে। সব কেটে গেছে এখন।”
শিন ছির পরের প্রশ্ন, “তা হলে এখন তুই -”
শিন ছি বেশ বুদ্ধিমান। নকল সু তিয়াঁ হয়ে তাকে ভোলানো খুব সহজ হবে না। শিন ছি যদি এভাবে প্রশ্ন করতেই থাকে, তাহলে মিন হুয়ে খুব শিগগির ধরা পড়ে যাবে। সুতরাং মিন হুয়েকে একটা উপায় বার করতে হবে শিন ছিকে থামানোর। তাই হঠাৎ করে থেমে, ঘুরে দাঁড়িয়ে মিন হুয়ে বললো, “শিন ছি, আগেকার কথা নেহাৎ না বললেই কী নয়? আমি সেসব দিনের কথা বলতে চাই না। সে সময়ে এতো কিছু ঘটেছে যে সে কথা ভাবলেই মন খারাপ হয়ে যায়।”
শিন ছি এক মূহুর্ত থমকে গেলো। ওর মুখে দুঃখের ছায়া পড়লো একটু, “নিশ্চয়ই, নিশ্চয়ই। আমি আর জানতে চাইবো না।”
মিন হুয়ে প্রতিশ্রুতি দিলো, “আর আমি তোর আমেরিকার জীবন নিয়ে কিছুই জানতে চাইবো না।”
শিন ছি উৎসাহের সাথে বললো, “আমার জানাতে আপত্তি নেই।”
মিন হুয়ে জোর দিলো, “না, বলিস না। কেমন? যে সময়টা একসাথে ছিলাম না আমরা সেই সেই সময়ের কথা বাদ থাক না হয় যখন আমরা আবার একসাথে হয়েছি। মনে কর না হয়, কখনো আমাদের ছাড়াছাড়ি হয় নি। চলবে?”
শিন ছি চমকে উঠলে যেনো একটু ক্ষণের জন্য, একটু বিভ্রান্ত হয়ে পড়লো, কিন্তু বুঝতে চাইলো না। শুধু ঘাড় নাড়লো, “বেশ, তোর কথাই শুনবো।”
মিন হুয়ে একটু যেনো দম ফেলে নিলো, “শিয়া শিয়া নি।”
শিন ছি যেনো সবাক ভাবনায়, “তোর খুব কঠিন দিন কেটেছে। মা, বাবা দুজনেই মারা গেছেন। তোর খেয়াল রাখার কেউ নেই ……”
মিন হুয়ে একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে আশ্বস্ত করলো শিন ছিকে, “ঠিক আছে।”
আইসক্রিমের দোকানে গরম চা, কফি পাওয়া যাচ্ছে। শিন ছি দুটো দুধ চা বললো। খুব আস্তে চায়ে একটা চুমুক দিলো, মাথা তুলে দেখলো, মিন হুয়ে ওর দু চোখের দিকে তাকিয়ে আছে। মিন হুয়ের অবাক কৌতুহল, “তোর চোখ - তুই দূরের কিছু দেখতে পেতিস না যে?”
শিন ছি মেটালো কৌতুহল, “একটা অপারেসন হয়েছে। কৃত্রিম লেন্স বসানো আছে দুচোখে। এখন দুচোখের দৃষ্টিই স্বাভাবিক।”
হাত বাড়িয়ে মিন হুয়ের মুখটা ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে, বাঁকিয়ে চুরিয়ে বললো, “অবশেষে তোকে আমি স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি।”
মিন হুয়ে বোঝার চেষ্টা করছিলো যে কেউ অন্ধ হলে, দিনে রাতে যে মুখটাকে মনে করেছেে এতো বছর, সেই মুখটা এতোদিনে স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে সে কথা স্বীকার করবে কিনা। মিন হুয়ে বাঁকা, শুকনো হাসি হেসে নিজের মুখটা নিজের হাতে ধরে জিজ্ঞেস করলো, “কিছু বদলেছে কি?”
শিন ছি বললো, “আমি মাথায় লম্বা হয়েছি। আমাকে দেখতে সুন্দর হয়েছে। তবে আমার মাথায় অন্য অনেক কিছু আছে। আগের মতো অতো খামখেয়ালিও নই আমি আর।”
তারপর মাথাটা হেলিয়ে, খুব উৎসাহে মিন হুয়ের অভিব্যক্তি পড়তে পড়তে জানতে চাইলো, “আর কি বদলেছে আমাতে? আরো কিছু আছে কি?”
চামচ দিয়ে দুধ চা গোলাতে গোলাতে মিন হুয়ে জানালো, “বিশেষ কিছু না। আগের মতই অধৈর্য।”
আলিঙ্গন, চুম্বন, হিরের আংটি পরানো, বিয়ের দিন ঠিক করে ফেলা - চারটে বড়ো বড়ো ব্যাপার করে ফেলতে লাগলো পাঁচ মিনিটেরও কম।
শিন ছি আবারও প্রশ্ন করলো, “তোর কি তাড়া আছে? আমি এখানে ন দিন ধরে তোর অপেক্ষা করছি। আগে আসিস নি কেনো তুই?”
মিন হুয়ে চোখ পাকিয়ে বললো, “আমি অসুস্থ, খুব ঠান্ডা লেগে ছিলো আমার। তাছাড়া মূল কারণটা হলো আমি ভেবে ছিলাম তোর পক্ষে আসা সম্ভব নয়। কারণ তুই তিন বছর আগে আসিস নি। সেবার আমি ভোর পাঁচটা মাঝরাত পেরিয়ে একটা পর্যন্ত অপেক্ষা করে ছিলাম।”
শিন ছি দুঃখ প্রকাশ করে কুলোতে পারলো না, “সরি। দ্যুইবুচি। খুব খারাপ লাগছে আমার।”
তারপর বিশদে বলতে লাগলো, “আমার অসুখ সারছিলো না। প্লেনে চড়া মানা ছিলো। খুব মন খারাপ ছিলো তখন। তিন মাস পরে সুস্থ হওয়া মাত্র আমি এসে ছিলাম। যখন এখানে এসে পৌঁছোলাম তখন দেখি অনাথাশ্রমটা আর নেই। সিভিল অ্যাফেয়ার্স ব্যুরোতে গিয়ে ছিলাম তোর খোঁজে। ওখানে যাঁরা ছিলেন তাঁরা বললেন যে তোর কাগজপত্র সব নেই। বারবার ঠাঁই নাড়া নাড়া হতে হতে অনেকগুলো নথিপত্র তৈরি হয়ে গেছে, সব কটার মধ্যে যোগাযোগ নেই। যারা তোর আমার মতো, অনাথাশ্রম থেকে দশ বছরের বেশি আগে চলে গেছে, নথিপত্রে তাদের খুঁজে পাওয়া মুশকিল ছিলো। সরল কিছু নথি এখনো রয়ে গেছে। আমি তোকে খুঁজে পাই নি। আমাকে ফিরে যেতে হয়ে ছিলো।”
মিন হুয়ে বলে উঠলো, “খুব ভালো যে তুই হাল ছেড়ে দিস নি।”
শিন ছির চোখ শান্তিতে ভরা, “আমি কখনোই হাল ছেড়ে দেবার কথা ভাবি নি। আমি বড়ো হয়ে ওঠার কারণ একটাই। সেটা হলো তোর সাথে জীবন কাটানোর ইচ্ছে। সে তোর যাই হোক না কেনো, সে তুই যাই হয়ে উঠিস না কেনো, আমি তোকে খুঁজে বার করবো। আমি তোর সাথে থাকবো চিরটাকাল।”
মিন হুয়ের বুক ফুঁড়ে বেরিয়ে এলো, “সত্যি?”
শূণ্য চোখে মিন হুয়ে চেয়ে রইলো শিন ছির দিকে, তার সমস্ত অনুভূতিতে অবিশ্বাস, বিস্ময়। কিন্তু শিন ছির ছিলো গলার স্বর জুড়ে দৃঢ়তা। চোখ জুড়ে সু তিয়াঁকে দেখার আনন্দ। মিন হুয়ে কোনো কারণ দেখতে পেলো না যার জন্য শিন ছি মিথ্যে বলতে পারে সু তিয়াঁকে। মিন হুয়ের হৃদয় জুড়ে আছড়ে পড়লো বোবা কান্না, কিছুতে ও সেটা আটকাতে পারলো না, “চুন মিয়াও কেনো বাঁচাতে গেলে আমাকে? দেখো, তুমি কী হারালে!”
মিন হুয়ে বলতে গেলো সত্যিটা, “শিন ছি -”
শিন ছি তখন মন দিয়েছে সু তিয়াঁকে আলো দেখানোয়, “মেনে নিচ্ছি যে তুই অনেক দুঃখ, দূর্দশা, দূর্ভাগ্যে কাটিয়েছিস। কিন্তু, দেখ, তোর হাতের সবকটা আঙুল এখনো আছে।”
মুচকি হেসে টেবিলের তলায় দেখিয়ে বললো, “এমন কি তোর পায়ের আঙুলও সব আছে।”
তারপর নিজের দিকে আঙুল ঘুরিয়ে বললো, “এখানে আমিও আছি। তোর ভয়টা কিসের?”
তারপর বললো, “আমি এখানে। আমি সব কিছু গুছিয়ে রেখেছি। তাই তোকে কোনো কিছুতেই ভয় পেতে হবে না।”
মিন হুয়ের কিছু বলার ছিলো না। ঘাড় নেড়ে হাসলো শুধু।
শিন ছি মিন হুয়ের আঙুলে নিজের আঙুল বুলোচ্ছিলো। গলার স্বরে আদর ঝরে পড়লো, “তিয়াঁ, তিয়াঁ। চল বিয়ে করি। …… আমি সব কাগজপত্র গুছিয়ে রেখেছি।”
মিন হুয়ে আপত্তি করলো, “কিন্তু -”
শিন ছি সোজাসুজি বললো, “তুই ঠিক বলেছিস। আমি এখনো খুব অধৈর্য। তুই যদি আমাকে বিয়ে করতে না চাস, তবে আমার অ্যাংক্সাইটি অ্যাটাক হবে।”
~~~~~~~~~~~~
সম্পূর্ণ বই বিনামূল্যে : https://dl.bookfunnel.com/lcj5vznt96
Link to Previous Post in the Series : https://projectionofnaught.blogspot.com/2024/08/jpda-chapter-05.html
Link to following Post in the Series : https://projectionofnaught.blogspot.com/2024/08/jpda-chapter-07.html