৫০. প্রতিবেদন
“তাহলে তুমি সবার শেষে বলবে, চলবে?” আলোচনার ভঙ্গীতে প্রস্তাব রাখলেন যেনো তাং জিয়াঁগঁ।
“হাও দে” মিন হুয়ে ঘাড় নেড়ে সম্মতি দিলো। প্রতিবেদন দিতে পারলেই হলো, শুরুতে দিলো নাকি শেষে, সেটা গুরুত্বপূর্ণ নয়।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিক্ষেত্রের মানুষেরা খুবই সময়নিষ্ঠ। তিন বক্তাই তাঁদের বক্তব্য কিংবা প্রতিবেদন একের পরে এক শেষ করলেন নির্দিষ্ট সময়সীমা মধ্যেই।
খুব তাড়াতাড়ি আসবে মিন হুয়ের প্রতিবেদন দেবার পালা আর তাং জিয়াঁগঁকে মিন হুয়ের পরিচয় দিতে হবে দর্শকদের সামনে। উনি অল্প হাসলেন, মাইক্রোফোনের স্বর তীব্রতর করে নিলেন আর উপস্থিত সকলকে জানালেন, “আজকের প্রতিবেদন এখানেই শেষ হলো। দূর্ভাগ্যবশতঃ সময়ের অভাবে মিন হুয়ে লাওশির প্রতিবেদন সাময়িকভাবে বাতিল করে দেওয়া হয়েছে। যদি আপনাদের কোনো প্রশ্ন থাকে তো আপনারা ওঁদের সাথে মিটিং-এর পরে যোগাযোগ করে নিতে পারেন। উনি আলোচনা করে থাকেন -”
সবাই হতচকিত হয়ে উঠলো, এআইম্যাক্সে মতো বড়ো মাপের একটা সমাবেশের প্রস্তুতি চলে বহু মাস ধরে, আর সাময়িকভাবে প্রতিবেদন বাতিল হয়ে যাওয়া খুব অসম্ভব নয়, কিন্তু যখন বক্তা মঞ্চে উপস্থিত, তখন তাঁর সামনে তাঁর প্রতিবেদন বাতিল করে দেওয়াটা বিশেষ ধরনের অভদ্রতা।
সাও মুই প্রথম জন যে উঠে দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ করলো, “শ্রীযুক্ত সঞ্চালক, মিন হুয়ে লাওশির তো আসল পরিকল্পনা অনুযায়ী সব্বার আগে প্রতিবেদন দেবার কথা ছিলো। কিন্তু আপনি তাঁকে বদলে সবার শেষে করে দিলেন, আবার এখন একদম বাতিল করে দিচ্ছেন। এই প্রতিবেদনের চারজন লাওশি ছিলেন, আর মিন হুয়েই একমাত্র মহিলা তাঁদের মধ্যে। তাহলে আমি কী জানতে পারি যে আপনি কী খোলাখুলি বৈষম্যমূলক আচরণ করছেন একজন মহিলার বিরুদ্ধে?”
তাং জিয়াঁগঁ থমকে গেলেন কিছু ক্ষণের জন্য আর টুপির বোতাম লাগাতে লাগলেন। অনেকটা সময় কাটিয়ে উনি বললেন, “আমাকে ভুল বুঝবেন না। আমরা মিন হুয়ে লাওশিকে আগেই জানিয়ে দিয়েছি যে ওঁর প্রতিবেদন বাতিল হয়ে গেছে। কিন্তু উনি কিছুতেই বুঝবেন না, সহযোগিতা করার কোনো ইচ্ছেই ওঁর নেই।”
পুরো শিল্পক্ষেত্রে তাং জিয়াঁগঁয়ের অবস্থান আর মর্যাদার কথা মাথায় রেখে কেউই কখনো সাহস করেন না, তাঁর সঙ্গে সরাসরি বিরোধে যেতে। ওঁর মুখটা খানিকক্ষণের জন্য আঁধারে ছেয়ে গেলো। ওঁর গলার স্বর কঠিন হয়ে উঠলো।
মিন হুয়ে পায়ে পায়ে পোডিয়ামে গেলো, মাইক্রোফোন তুলে নিলো, শান্তভাবে দেখলো সবার দিকে, “আমার প্রতিবেদন আসলে খুবই ছোটো। এটা আপনাদের খুব বেশি সময় নেবে না। যাঁদের উৎসাহ আছে আমার প্রতিবেদনে তাঁরা থেকে যেতে পারেন।”
“আমি এখন ঘোষণা করছি যে মিটিং মুলতুবি থাকবে।”
তাং জিয়াঁগঁ চা খেলেন, থার্মোস তুলে নিলেন হাতে, বেরিয়ে গেলেন মঞ্চ ছেড়ে।
একটা হট্টোগোল শুরু হলো, কেউ কেউ বেরিয়ে গেলো। কেউ কেউ থেকে গেলো। অধিকাংশই থেকে গেলো।
মিন হুয়ে চটপট প্রজেক্টরটা জুড়ে দিলো, রিমোট হাতে নিলো, আর জোরে বললো, “শুভ অপরাহ্ণ, সবাই জানে বিনোদনের জগতে লোকে গুজবে মেতে থাকে, আর বিজ্ঞানের জগতে আমরা সত্যানুসন্ধান করি। আইনস্টাইন একবার বলে ছিলেন, ‘সবাই জিনিয়াস। কিন্তু তুমি যদি একটা মাছের বিচার করো তার গাছে চড়ার ক্ষমতা দিয়ে, তাহলে মাছ সারা জীবনের জন্য ধরে নেবে যে সে নির্বোধ।’ আজ আমি সেই মাছটা। দয়া করে আমাকে একটু জল দিন, আমি প্রমাণ দেবো যে আমি নির্বোধ নই।”
হঠাৎ করে শ্রোতাদের মধ্যে কেউ কেউ হাততালি দিয়ে উঠলেন এখান সেখান থেকে।
“এখন আমাকে অনুমতি দিন বা’অ্যান টেকনোলজির সাম্প্রতিক পণ্য জিএস১.০ ইন্টেলিজেন্ট অক্সিলিয়ারি ডায়াগনোসিস অ্যান্ড ট্রিটমেন্ট সিস্টেম …”
মিন হুয়ে শান্তভাবে পিপিটির যে পাতাটা প্রোজেকসনে দেখা যাচ্ছিলো সেই পাতাটার তথ্য ব্যাখ্যা করতে লাগলো। বলতে লাগলো আত্মবিশ্বাসের সাথে।
***
মিন হুয়ের প্রতিবেদন দিতে সময় লাগলো মাত্র কুড়ি মিনিট। ও জলখাবারও সময় পেলো না, তার আগেই ওকে সবাই ঘিরে ধরলো। একজন অন-সাইট পরামর্শের অনুরোধ জানালো। একজন একটা পরিচিতির আবেদন রাখলো। আরেকজন চাইলো একটা হাসপাতালে পরীক্ষামূলকভাবে ব্যবহারের সুযোগ। কেউ একটা নেমতন্ন দিলো বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে বক্তৃতা করার। মিন হুয়ে সবাইকেই উত্তর দিলো উৎসাহ নিয়ে। ও ভিড়ের মধ্যে প্রায় এক ঘন্টা দাঁড়িয়ে রইলো যতক্ষণ না সাও মু এসে ওকে জোর করে হলের একপাশে টেনে নিয়ে গেলো। সেখানে ও কতকগুলো প্রযুক্তিগত উত্তর দিলো শি আঁপেই-কে। ইনি ফেংলিঁ ক্যাপিটালের মালিক।
শেষে সাও মু উত্তেজিত হয়ে বললো, “ফেংলিঁ ক্যাপিটাল, আমি এর মধ্যেই রফা করে নিয়েছি শি আঁপেই-এর সাথে। উনি তো তোমার রিপোর্ট শুনে খুবই উদ্দীপিত। উনি ছ কোটি লগ্নি করবেন বলছেন, ম্যানেজমেন্ট টিমকে আটাশ শতাংশ অংশীদারী দেবেন। সঙ্গে অন্য দুটো ইক্যুইটি ফার্ম, আর আমাদের টাকা, সব মিলিয়ে তেরো কোটি কুড়ি লক্ষ হয়ে যাচ্ছে। এটা নিলামে যাবার জন্য যথেষ্ট।”
“দূর্দান্ত” খুশিতে বলে উঠলো মিন হুয়ে।
“তুমিও দূর্দান্ত আজকে। সবাই তোমার সাহসে চমকে গেছে আজ।” সাও মু হাসতে লাগলো, হাসির চোটে ওর চোখ দুটো সরু সরলরেখার রূপ নিলো, “অনেকগুলো হাসপাতালও আমাদের সাথে কাজ করার ইচ্ছে প্রকাশ করেছে আজ। আমার ক্যালেন্ডার দেখো, মোবাইলে, সামনের সপ্তাহের সমস্ত ইন্টারভিউ স্লট ভরে গেছে।”
“ওহ্! আমি তো এখন এআইম্যাক্স ব্ল্যাক লিস্টে।” হাত ছড়িয়ে বললো মিন হুয়ে, “আমি কী পরে রিসেপসন ডিনারে যাব?”
“যাবে, কেনো যাবে না? তুমি এতো প্রাপ্য চুকিয়েছো।” সাও মু খুব জোরে জোরে পিঠ চাপড়ে দিলেন মিন হুয়ের, “যখন জঙ্গলে যাবে তখন কী নেকড়ের দেখা পেতে পারো বলে ভয় পাওয়া চলে? আমি তো একটা বিশেষ জামাও এনেছি। আমি কী ওটার জন্য দাম এমনি এমনি দিয়েছি!”
“উপ্স্, আমি তৈরি নই। ড্রেস কোড আছে নাকি?” পরণের কোট আর স্কার্টের দিকে দেখিয়ে মিন হুয়ে জানতে চাইলো, “এটা পরে গেলে হয় না?”
“নিশ্চয়ই হয়। কিন্তু এটা যথেষ্ট বাহারী নয়।” ভ্রূ কুঁচকে সাও মু বললো, “এটা খানিকটা কনফারেন্সের কর্মীদের মতো দেখাবে। তোমার অমন সুন্দর চেহারা, সেটা যথেষ্ট না দেখালে চেহারার অপচয়।”
“সেকি, এটা তো একটা সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি কনফারেন্স।”
দুজনে কথা বলতে বলতে হাঁটতে লাগলো এলিভেটরের দিকে। হঠাৎ মিন হুয়ের কিছু মনে পড়ে গেলো, “হ্যাঁ, সাও জিয়ে, শিন ছিকে জানিয়েছো?”
“হ্যাঁ। আমি ফোন করে ছিলাম। বুঝিয়ে বলেছি আমাদের সিদ্ধান্ত। বেশ বিনম্রভাবেই জানালেন যে উনি বুঝেছেন আমাদের সিদ্ধান্ত, আমাদের শুভেচ্ছাও জানিয়েছেন। লোকটা বেশ উদার।”
“তাই নাকি?”
মিটিং-এর জায়গাটাতে অনেক লোকের ভিড় ছিলো। মিন হুয়ে দেখতে পায় নি শিন ছিকে। হতে পারে এই জন্য যে বাচ্চাকে নিয়ে ও ঢুকতে পারে নি মিটিং-এ।
এলিভেটর থেকে বেরিয়ে নিজের ঘরে এসে মিন হুয়ে যাচ্ছিলো চানে। এমন সময়ে দেখলো খাটের ওপরে একটা বড়ো গোল উপহারের বাক্স রেখে গেছে কেউ কোনো সময়ে। বাক্সের মাঝামাঝি একটা ল্যাভেন্ডার বো সিল্কের রিবন দিয়ে বাধা।
বাক্সটার আশে পাশে খুঁটিয়ে দেখেও মিন হুয়ে কোথাও কোনো লেখা দেখলো না বা কোনো কার্ড পেলো না যাতে অন্তত ইঙ্গিত থাকবে যে বাক্সটা কোথা থেকে কিভাবে এসেছে। ওর ভাবলো বাক্সটা বুঝি ভুল ঘরে এসে গেছে। তাড়াহুড়ো করে ফ্রন্টডেস্কে ফোন করলো।
“এটা শিন পদবীর এক ভদ্রলোক পাঠিয়েছেন।”
“বুঝলাম, ধন্যবাদ।”
একটা গভীর শ্বাস নিয়ে মিন হুয়ে খুব আলতো হাতে বাক্সটা খুলে ফেললো। একটা খুবই রুচিশীল পরতে পরতে সিল্ক আর নরম কাগজে মোড়া জামা বের করলো। ত্বকের মতো গোলাপী রঙের সিল্কের জমিতে হাতে সুতোর নকশা তোলা একটা ম্যাগনোলিয়া ফুলের গড়ন। আর কিনারা বরাবর মুক্তোর ফোঁটা আর ঝিনুকের পাপড়ি।
দূর থেকে দেখে বোঝা যায় দর্জির বুদ্ধিদীপ্ত মুন্সিয়ানা, আর ধরনটা সরল, নজরকাড়া নয় বা জবরজং নয়। খুব যত্ন করে কেউ যদি ছুঁয়ে দেখে জামাটা তাহলে টের পাবে যে জামাটার সূক্ষ্ম কাপড় আর অন্যান্য উপাদান আর সুনিপুণ কর্মদক্ষতা, যেনো একটা শিল্পকর্ম নিজেই ক্যাটওয়াক করছে।
ও কিছুতেই পারলো না নিজেকে আটকাতে, ঝুঁকে জামাটার গন্ধ শুঁকল। নরম রেশমে লেবুর গন্ধ মাখা।
মিন হুয়ে সুন্দর দেখতে জিনিসপত্র পছন্দ করে। সব রকমের সূক্ষ্ম হাতের কাজ পছন্দ করে। জামা কেনার ব্যাপারে ভীষণ খুঁতখুঁতে। ও সহজে জামা কিনতেও যায় না। প্রচুর দেখে তবে একটা জামা কেনে।
মিন হুয়ে খুব যত্ন করে চান করলো। গাউনটা পরলো। মেক-আপ করলো। খুব যত্ন করে নিজেকে সাজালো। সব কিছু সন্তোষজনক হতে ও বাইরে গেলো একটা ছোটো ব্যাগ হাতে।
অপ্রত্যাশিতভাবে এলিভেটরে পা রেখেই দেখা হয়ে গেলো সাও মুয়ের সঙ্গে। সাও মু একটা কালো রঙের এপাড়-ওপাড় দেখা যায় এরকম একটা লেসের স্কার্ট পরেছে, যাতে ওর বেঁটে মোটা চেহারাটা বেশ ঢাকা পড়ে গেছে। চুল উল্টে পিছনে ঠেলে দিয়েছে, তাতে সুযোগ্য আর কর্মচঞ্চল দেখাচ্ছে।
পরস্পরের জামার প্রশংসা করা শেষ হলে, সাও মু দীর্ঘশ্বাস ফেললো হঠাৎ, “আমি এই মাত্র হে হাই শিয়াং-এর থেকে একটা ফোন পেলাম। ওর বউ কিছুতেই বাড়িটা বাধা দিতে দেবে না। যাই হোক, এখন ও বলছে যে আমরা যদি একসাথে ওকে সাহায্য করতে পারি।”
মিন হুয়ে ভাবছিলো যে ওর এখনো দশ লাখ য়ুআঁর ঘাটতি আছে, তাই ও জানতে চাইলো, “কতো চাও তুমি?”
“ও এখন কেবলমাত্র দু লাখ দিতে পারবে। তাহলে আমাদের সকলকে ওর ভাগ পূরণের জন্য মাথাপিছু আরো পাঁচলাখ পঞ্চাশ হাজার করে দিতে হবে।”
“আমি একসাথে এতো টাকা কোথাও পাবো না।” মিন হুয়ে কঠিন সিদ্ধান্তে মাথা নাড়লো, “আমি এখনো আমার নিজের দশ লাখ জোগাড় করে উঠতে পারি নি।”
“আমি জানতাম তুমি পারবে না। তাই আমি অনেকগুলো ফোন করেছি ওর জন্য। আর কেউই টাকাটা ধার দিতে চাইছে না। সত্যি কথা বলতে কী, যদি তুমি পারো, কোনো পরিবারের পক্ষেই এতো অল্প সময়ে কুড়ি লাখ য়ুআঁর থেকেও বেশি বার করা সম্ভব নয়।”
সাও মু আরো বললো, “আমি খুব স্পষ্ট করেই ওকে বলে দিয়েছি যে যদি এটা কাজ না করে তাহলে ও ছেড়ে দিক। ও অনেক অনুযোগ করলো যে ওকে কেউ সাহায্য করতে চাইছে না। ও এটাও শুনেছে যে আমরা প্রয়োজনীয় বিনিয়োগ জড়ো করে ফেলেছি। ফলে ও এখন ছেড়ে দিতে আরোই অনিচ্ছুক।”
“এটা কেমন করে সম্ভব? কী করে পৃথিবীতে এমন কেউ থাকে যে শুধু সুবিধে নেবে কিন্তু নিজে কিচ্ছুটি করবে না?”
“আমি ওকে এতো চরম কথা বলি নি। আমি ওকে এক সপ্তাহ সময় দিয়েছি, তার মধ্যে ও না হয় ভেবে একটা উপায় বার করুক।”
সাও মু বললো, “তোমাকেও জলদি আনতে হবে বাকি দশ লাখ। যদি সত্যিই পেরে না ওঠো, তাহলে আগে ভাগে বলে দিও। তা হলে একটা রাস্তা বার করতে বলবো সকলকে যাতে তোমার অংশটা সমান ভাগে ভাগ করে নেওয়া যায়।”
“দরকার নেই। যদি আমি টাকাটা ধার করতে না পারি, তাহলে আমি ছেড়ে দেবো।”
“আমি সেটা হতে দি কী করে! তোমার ব্যাপারটা হে হাই শিয়াং-এর থেকে আলাদা। তুমিই ম্যানেজমেন্ট টিমের একমাত্র লোক যাকে ছাড়া চলবে না।”
সাও মু খুব গম্ভীর দৃষ্টিতে তাকালো মিন হুয়ের দিকে, “প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার জন্য মূল ব্যক্তিই হলে তুমি, আমাদের কোম্পানিতে। বাকি সবাই উত্তর-পশ্চিমের বাতাসের সাথে ভেসে যেতে পারে।”
মিন হুয়ে ফিক করে হাসলো, “আমি এতো গুরুত্বপূর্ণ?”
“তুমি সত্যিই গুরুত্বপূর্ণ, তুমি হলে বা’অ্যানের সব থেকে সুস্বাদু পেস্ট্রি।”
রিসেপসনিস্ট জানালো যে মূল অনুষ্টান শুরু হবার আগে এক ঘন্টা নিজের খেয়ালে সংযোগ করার সময়।
দু তলার লবিতে গুঞ্জন আর ভিড়।
মিন হুয়ে যেই পা রাখলো সেখানে, মিন হুয়েকে ধরলেন দুটো হাসপাতালের দুজন ডিরেক্টর। তাঁরা এটা সেটা প্রশ্ন করতে লাগলেন।
পুরো কুড়ি মিনিট কথা বলার পরে তাদের থেকে কোনো মতে ছাড়া পেলো মিন হুয়ে। বারে গিয়ে নিজের জন্য একগ্লাস রেড ওয়াইন অর্ডার করলো। হঠাৎ ভিড়ের মধ্যে একটা চেনা মুখ নজরে এলো - দেঁ চেন।
মিন হুয়ে অবাক হলো। ও আশা করে নি যে এখানে দেঁ চেনকে দেখতে পাবে। তাই ও চটপটে করে এগিয়ে গেলো কথা বলার জন্য, “আরে দেঁ? আপনি এখানে?”
“আমার কোম্পানিটা কাছেই। শুনলাম একটা মিটিং আছে, তাই মজা লুটতে চলে এলাম।”
“চতুর্দিকে সিকিউরিটি গার্ডস দেখছি। কোনো কাজ আছে নাকি?”
“কোম্পানি গত কয়েক বছরে কিছু টাকা করেছে। আমি শুনলাম যে এআই এখন হাতে গরম একটা জিনিস। তাই দেখতে এলাম যে এখানে কোনো লগ্নির সুযোগ আছে কিনা। প্রয়োজন খুব বেশি নয়, আর ফেরত পাবার হারও একশো শতাংশ। আট শতাংশ বাড়লেই হলো।”
মিন হুয়ে হেসে বললো, “আমাকে না হয় ধার দিন দশ লাখ। এক বছর পরে আমি আপনাকে আসলের দশ শতাংশ আর সুদ দেবো।”
দেঁ চেন অনেকক্ষণ মিন হুয়ের দিকে তাকিয়ে রইলেন। বোঝার চেষ্টা করছিলেন যে এটা ঠাট্টা কিনা। মিন হুয়ে তখন বিশদে বললো কিভাবে ম্যানেজমেন্ট টিম বা’অ্যান অ্যাকুইজিসনের কথা ভাবছে।
“হ্যাঁ।”বললেন দেঁ চেন, “আমি তোমাকে টাকা ধার দিতে পারি। কিন্তু তোমাকে একটা লোন এগ্রিমেন্ট সই করতে হবে।”
“কোনো সমস্যা নেই। আমি শিগগির একটা টেম্প্লেট খুঁজে বার করছি, সেটাকে প্রিন্ট করে নেবো আর পরে সই করে দেবো।”
পাশের বিজনেস অফিসে গেলো দুজনে, ঝটপট দুটো এগ্রিমেন্ট টাইপ করলো, প্রিন্ট করলো, সই করে ফেললো, দেঁ চেন বললো, “আমি টাকাটা পাঠাবো তোমাকে কাল সকালে।”
“ওকে। শিয়া শিয়া নি। যাই হোক, দেঁ লাও, আপনি শিন ছিকে দেখেন নি?”
মিন হুয়ে বললো, “ওর ও এখানে আসার কথা।”
“না। ও আর আমি দুজনেই বেজিং-এ। আমরা এখন প্রায়ই দেখা করতে পারি।”
উনি ঘড়ির দিকে দেখলেন, “একজন বন্ধু আমার সাথে কথা বলতে চান বলে জানিয়েছেন। এসো, যাই আগে।”
মিন হুয়ে আরো অনেক কথা বলতে চাইছে। কিন্তু দেঁ চেনের অন্য কাজ আছে দেখে, ওঁকে আর আটকানো অসুবিধেজনক হয়ে গেলো।
ব্যাঙ্কোয়ে হলে ফিরে গিয়ে ওর মন কেমন করতে লাগলো সু ছনের জন্য। ও ভাবতে লাগলো না জানি কেমন করে শিন ছির সঙ্গে আজ সারা দিন কাটিয়েছে সু ছন।
ও একটা ফোন করতে যাচ্ছিলো। ব্যাগ থেকে ও ফোনটা যেই বার করতে গেলো, অমনি ওর পেছন থেকে কে যেনো ডেকে উঠলো, “ইথান।”
ও ঘুরে তাকিয়ে দেখলো চেং ছিরাং কথা বলছে।
ও দাঁড়িয়ে আছে একটা জটলার মধ্যে মিন হুয়ের থেকে খুব দূরে নয়। অনেক স্যুট পরা লোকই দাঁড়িয়ে আছে। এমন কি ওর অ্যাসিস্ট্যান্ট ওয়েই ইয়ঁ চেং-ও আছে জটলায়।
দৃশ্য জুড়ে মানুষের ভিড়। মিন হুয়ে অনুসরণ করলো চেং ছিরাং-এর দৃষ্টিপথ যাতে ও শিন ছিকে দেখতে পায়। দেখতেও পেলো যে শিন ছি কথা বলছে একজন সাদা চুলো বয়স্ক মানুষের সাথে সু ছনকে কোলে নিয়ে, ওর পিঠ চেং ছিরাং-এর দিকে ফেরানো।
চেং ছিরাং-এর ডাক শুনে শিন ছি ঘুরে তাকালো, সঙ্গে ঘুরে তাকালো সু ছনও। মিন হুয়ে না হেসে পারলো না; দুজনে একই ধরনের কালো স্যুট পরেছে, সু ছনের গলা ঘিরে একটা বো-টাই, হাতে একটা ললিপপ, ওর স্বাভাবিক আর সুন্দর চেহারা একটা পেঙ্গুইনের মতো দেখাচ্ছে।
চেং ছিরাং-এর দিকে ফিরে তাকাতে, শিন ছি দেখতো পেলো মিন হুয়েকেও। সু ছন হাসলো আর ওর হাত বাড়িয়ে দিলো মিন হুয়ের দিকে, “ম-অম! মা! আমি এখানে!”
মিন হুয়ে তাড়াতাড়ি হেঁটে গেলো বাচ্চাটাকে নেবার জন্য। বাচ্চাকে জড়িয়ে ধরলো কোলে আর চুমু খেলো। চলেই যাচ্ছিলো যখন শিন ছির হাত হঠাৎ ওর কোমর জড়িয়ে ধরলো।
“আজকের রিপোর্টটা দূর্দান্ত হয়েছে।” ও বললো।
“তুই ছিলি ওখানে?”
“হ্যাঁ। আমি বাচ্চাকে নিয়ে গিয়ে ছিলাম। তাই সব থেকে পিছনের সারিতে ছাড়া অন্য কোথাও বসার সাহস করি নি।”
চেং ছিরাং চুপচাপ অর্থপূর্ণ দৃষ্টিতে ওদের দিকে দেখলেন।
“ইথান, আমি শুনলাম যে আপনি নাকি বিবিজি বিনচেং-এ নিয়ে যাচ্ছেন?” বললো চেং ছিরাং, “হাইতিয়াঁ বিল্ডিং-এ, তাই তো? ঠিক গুয়ান ছাও ইন্টারন্যাশন্যালের উল্টোদিকে।”
শিন ছি হেসে ঘাড় নাড়লো, “দোয়ে।”
চেং ছিরাং অল্প ভ্রূ কুঁচকোলো, “আমরা এ বছরে আরো লোক নিচ্ছি। আমারও ওই বাড়িটা খুব পছন্দ। আমি ওটা কিনে একটা রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট সেন্টার করার কথা ভাবছি। আমি অনেকদিন ধরে লিওর সাথে কন্ট্র্যাক্ট নিয়ে আলোচনা করে চলেছি - আমি ভাবতেও পারি নি যে ও চোখের পলকে বাড়িটা আপনাকে বেচে দেবে, আমাকে একবার বলবেও না।”
“সত্যিই?”
দেখে মনে হলো শিন ছি অবাক হয়েছে, “ও আমাকে একবারও সে কথা বলে নি। আমি এসব কথা একেবারেই জানি না। আমি দু;খিত। আমি একটা সবজান্তা হরিদাস পালের নকশা দেখলাম, আর ভাবলাম যে এটা অনন্য -”
“অ্যাই, আপনি কী যথেষ্ট জঘন্য নন?” আধা-ঠাট্টার ভঙ্গীতে বললেন চেং ছিরাং, “আমার বিল্ডিং-এর উল্টোদিকে। লিও বলেছে আপনার মাত্র দুশো জন কর্মী আছে। আপনার কী কাজে লাগবে অতো বড়ো বাড়িটা?”
“বিবিজিও লোক নিচ্ছে অনেক। বাড়িটা ভরে যাবে।” হাসতে হাসতে বললো শিন ছি, “আরে, ছি রাং, বিনচেং-এ আরো অনেক বাড়ি আছে। আপনি কিচ্ছু ভাববেন না।”
“কিন্তু - কেবল এটাই আনকোরা নতুন। আর এটাই গুয়ান ছাও ইন্টারন্যাশন্যালের সব চাইতে কাছে। তার সাথে বাড়ির নকশা যিনি করেছেন তার নামডাকের কথা মাথায় রেখে, অনেক দিক ভেবে ওটাই আমার প্রথম পছন্দ হয়ে দাঁড়িয়ে ছিলো।”
চেং ছিরাং ঠোঁট ফুলিয়ে বললো, “ওটা আমাকে বেচে দিন, ওখানে ঢোকার আগে। আপনার কেনা দামের কিছু বেশিই না হয় দেবো আপনাকে।”
“মনে হচ্ছে যে ওটা আপনার সত্যিই বড্ডো পছন্দ।” শিন ছি মাথা নাড়লো, একটা হালকা হাসি খেলছে ওর ঠোঁটে, “দুঃখের কথা। আমরা তো ওখানে অদল-বদলের কাজ শুরু করে দিয়েছি। হ্যাঁ, লিও নিজেই ইন্টেরিয়র ডিসাইনের কাজটা করছে। মাসখানেক আর লাগবে। আপনি যখন খুশি আসতে পারেন, আমরা খেলবো না হয় একসাথে।”
“অবশ্যই।” চেং ছিরাং একবার তাকালো মিন হুয়ের দিকে, “বিবিজি কী বা’অ্যান কিনতেও আগ্রহী?”
“ছিরাং, এটা একটা বিশ্রামের নৈশভোজ …” শিন ছি উত্তরটা এড়িয়ে গেলো, “আসুন কিছু কথা বলি যেটা এতো চাপের নয়?”
“আপনি আমার বাড়িটা ছিনিয়ে নিলেন, আবার বা’অ্যানও ছিনিয়ে নেবেন নাকি?”
চেং ছিরাং-এর দৃষ্টি একটু তীক্ষ্ণ হলো।
“আমি শুনেছি যে ওটা একটা মুক্ত নিলাম। ঈশ্বর জানেন কে জিতবে?”
শিন ছি হাসলো। একবার মিন হুয়ের দিকে তাকালো, দেখতে পেলো মিন হুয়ে অন্যদিকে তাকিয়ে আছে, পুরো কথোপকথনটা উপেক্ষা করার ভঙ্গিমায়।
“মিন হুয়ে, আজকের প্রতিবেদনটা খুবই সাড়া জাগানো হয়েছে। গংশি নিয়া।” বললো চেং ছিরাং।
“চেং ছিরাং, আপনি যদি বা’অ্যান কেনেন, তাহলে আমি বা’অ্যান ছেড়ে দেবো।”
মিন হুয়ে বললো হালকা চালে, “এটা আপনি পয়সা খরচ করার আগে, ভালো করে ভেবে দেখবেন।”
"কেনো?”
মৃদু হাসলো চেং ছিরাং, “এমন অনেক কাজ আছে যা তুমি মনে করো যে তুমি কখনো করবে না, তারপরও তোমাকে সেই সব কাজ করে ফেলতে হয়। কিন্তু তোমাকে মাথা ঝোঁকাতেই হয় যখন খেলা শেষ হয়ে যায় - এই অভিজ্ঞতা তোমার একবারের বেশি হয়েছে, তাই না?”
“অ্যাই, ছিরাং, আরেকটু নম্রভাবে কথা বলুন। উনি আমার ছেলের মা।”
শিন ছির চোখ ডুবে গেলো, চেং ছিরাং-কে দেখতে লাগলো হিম শীতল দৃষ্টিতে।
“ঠাট্টা করছি।” সোজাসুজি বললো চেং ছিরাং, “স্বাগত জানাই আপনাকে বিনচেং-এ। আমরা কদিন পরেই প্রতিবেশী হয়ে যাবো। আপনার গলফ খেলার সময় হবে?”
“আমার আশঙ্কা আমি খেলতে পারবো না। আমার শরীর ভালো না।”
মিন হুয়ে রেড ওয়াইনে একটা চুমুক দিলো। শিন ছির দিকে তাকালো, জিজ্ঞেস করলো, “তুই কখন এলি?”
“আমি সারাক্ষণ এখানেই আছি।” ও বললো, “বাচ্চাকে নিয়ে অসুবিধে, তাই আমি এখানেই পাহারায় আছি।”
“জামার জন্য ধন্যবাদ।” নরম সুরে বললো মিন হুয়ে, “দাম কতো? আমি তোকে পরে ফোনে দিয়ে দেবো?”
“না। এটা তোর ছেলে বেছেছে। ও বলছে যে মা সুন্দর জামা পছন্দ করে।”
“এহ্?”
“তুই ভুলে গেছিস, আজকে মাদার্স ডে?”
মিন হুয়ে ভুলে যায় নি। কিন্তু ও ভাবতেও পারে নি যে ও উপহার পাবে। যখন ও ট্রেনে বসে ছিলো, তখন “মোমের আলোয় মা” বার বার বাজছিলো স্পিকারে।
“অদ্ভুত! ঝেং য়ি তিং আসে নি কেনো?”
মিন হুয়ে চারপাশে দেখতে লাগলো, “সে তো এ ধরনের অনুষ্ঠান খুব পছন্দ করে।”
“ওই তো” দেখালো শিন ছি, একটু দূরে একদল লোকের দিকে, “দং লি জিতুয়ার সিনিয়র এক্সেকিউটিভদের সাথে কথা বলছে।”
মিন হুয়ে সাবধানে তাকালো, “ওয়াও, ও কী চুলে রং করেছে? চুলের রঙটা বেজায় অদ্ভুত। আমার খুব ইচ্ছে করছে টেনে ছিঁড়ে দিতে।”
“তোর কী যায় আসে, ও এখানে এসেছে কিনা?” জানতে চাইলো শিন ছি।
“সুযোগ দেখছি এই গ্লাসের ওয়াইনটা ফেরত দেবো ওকে।”
মিন হুয়ে হাতের গ্লাসটাকে নাড়া দিলো, “যাতে ওর মরদ আমাকে না উস্কানি দেয় আর।”
“ভুলে যা।” হালকা সুরে বললো শিন ছি।
“কী করে একটা পরচুলা পরা মেয়েমানুষ নকল চোখের পাতা আর নকল নখ পরে চারপাশে বাস্তব পুরুষদের মধ্যে বাস করে?”
“অ্যাই, ওটা কী গং জঁ, যিনি আজকে একটা রিপোর্ট দিয়েছেন? আমার কয়েকটা প্রযুক্তিগত প্রশ্ন আছে ওঁর কাছে।”
বলেই মিন হুয়ে ছন ছনকে ছুঁড়ে দিলো শিন ছির দিকে, “একটু দ্যাখ ছন ছনকে।”
“আমি তোর সঙ্গে যাবো।”
"কেনো? তুই কিচ্ছু বুঝতে পারবি না আমরা কী নিয়ে কথা বলছি।”
“তোকে সুন্দর দেখালে আমার দেখতে ভালো লাগে।” শিন ছি হাসলো আর বললো “আমিও চিনি গং জঁকে।”
নিশ্চিতভাবে দুজনে শ্রী গং-এর কাছে যাবার আগেই, শ্রী গং পা চালিয়ে এলেন কথা বলার জন্য, “নি হাও, শিন ছি! বাচ্চাটা কী সুন্দর, তোমার নাম কী?”
“আমার নাম ছন ছন।” লাজুক ভঙ্গিতে বললো সু ছন।
গং লাও শি একজন সুন্দর মাঝবয়সী কাকু।
“আমার ছেলে।” ব্যাখ্যা করলো শিন ছি।
“আপনি বিবাহিত?”
“ এখনো নয়।”
শিন ছি বললো, “আমাকে আলাপ করাতে দিন, বা’অ্যান হাই-টেক-এর আর অ্যান্ড ডি ডিরেক্টর -”
“মিন ঝংজিয়ে।” শ্রী গং সশ্রদ্ধ করমর্দন করলেন, “আমি জানি। আমি এদিকে এলাম, বিশেষ করে এইদিকে এলাম ওঁর সাথে কিছু কথা বলবো বলে।”
“উনিও আপনার সাথে কথা বলতে যাচ্ছিলেন।” তাড়াহুড়ো করে বললো শিন ছি।
“উনি আমার মুছিঁ।” সুযোগ হাত ছাড়া না করে জানালো সু ছন।
গং লাও শি দেখলেন শিন ছির দিকে, তারপরে মিন হুয়ের দিকে। অপ্রস্তুত হয়ে বললেন, “তাহলে আপনারা দুজনে ছিংল্যু! শিন ছি আপনি সত্যিই বিচক্ষণ …”
“হম্ম্” শিন ছির মুখে একটা অদ্ভুত হাসি।
“হম্ম্” মিন হুয়েকে অপ্রস্তুত দেখালো।
সু ছন বাঁ হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরলো শিন ছির গলা, ডান হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরলো মিন হুয়ের গলা, একটা শিশুসুলভ গলায় বললো, “শুশু, আমার একটা ছবি নাও।”
দুজনেই বাচ্চার দিকে চোখ বড়ো বড়ো করে তাকালো, “যতো বাজে কথা।”
~~~~~~~~~~~~
সম্পূর্ণ বই বিনামূল্যে : https://dl.bookfunnel.com/lcj5vznt96
Link to Previous Post in the Series : https://projectionofnaught.blogspot.com/2024/09/jpda-chapter-49.html
Link to following Post in the Series : https://projectionofnaught.blogspot.com/2024/09/jpda-chapter-51.html