Monday, August 26, 2024

JPDA - Chapter 20

 ২০. সামিল


মিন হুয়ে অফিসে ঢুকলো, দরজাটা বন্ধ করে দিলো, কানে দিলো ইয়ারফোন, ডুবে গেলো প্রোগ্রাম লেখার মধ্যে। যতক্ষণ না গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেলো ততক্ষণ ধরে লিখল। সেই মূহুর্তে ওর মনে পড়ে গেলো যে ও আর কফি খেতে পারবে না, কারণ ও গর্ভবতী। বহুদিন ওর মাথা ঘুরেছে কফি খেতে না পেয়ে। সেই সমস্ত লোকেদের দলে পড়ে মিন হুয়ে যারা সকালবেলা এক কাপ কালো কফি না হলে কিছুতেই জেগে উঠতে পারে না।

চায়ের ঘরে পৌঁছে দেখলো ইয়াং বেই বেই কফি মেশিনে কফি বিন ঢালছে। মিন হুয়ে দেখে সে তাড়াতাড়ি বললো, “মিন হুয়ে জিয়ে, আপনার ডিক্যাফ কফি তৈরি। আপনি চাইলে আমি এক পাত্তর টাটকা কফি বানিয়ে দিতে পারি।”

কথা শেষ করেই সে একটা লাল রঙের কফি মেশিন ছুঁলো যার ওপরে রুপোলি রং দিয়ে লেখা আছে ‘ডিক্যাফ’। 

“না, না, আমি নিজে বানিয়ে নেবো।” বলতেই বলতেই মিন হুয়ে ওপরে নিচে সমস্ত বোতামগুলো দেখে নিচ্ছিলো, “জল ভরে কোথা দিয়ে?”

“জল ভরা আছে। সবই অটোমেটিক। এই ভাবে চিপে ধরুন।”

মিন হুয়ের কফি তৈরি। সোফায় বসে একটা চুমুক দিয়ে বললো, “ওয়াও, গন্ধটা তো বেশ!”

“এতে কোনো ক্যাফেন নেই। আপনি বারবার খেতেই পারেন। শুধু মুখের সুখ পাবার জন্য, মিন হুয়ে জিয়ে।”

“এই নিয়ে আর কথা বলে কাজ নেই। আমি তো পুরোপুরি জেগে উঠলাম যেই কফির গন্ধ পেলাম।”

“তাহলে আপনি একটা কাজ করতে পারেন।-”

বলতে বলতেই বেই বেই একটা বড়ো মুঠিতে খানিক কফি বিন নিয়ে একটা কাপে চালান করে দিলো, “এটা আপনার মনিটরের পাশে রাখবেন কোড লেখার সময়ে। আপনি প্রোগ্রাম লেখার সময়েই সুগন্ধ নিতে পারবেন।”

“হা হা, দারুণ বুদ্ধি দিয়েছেন তো!”

মিন হুয়ে মোটেই আড্ডা দিতে পারে না। কিন্তু বা'অ্যানে মহিলা সহকর্মীও সংখ্যায় হাতে গোণা। বেই বেই ফ্রন্টডেস্কের কাজ ছাড়াও কিছু প্রশাসনিক কাজ করেন, আচরণ আর পরিষেবা সংক্রান্ত কাজও করেন। এঁরা সবাই উঁচুদরের আর কোম্পানির সব্বাই এঁদের পছন্দ করে। বেই বেই মিন হুয়ের সাথে ভালো ব্যবহার করে হয়তো এই জন্য যে সাও মু আলাদা করে বলে দিয়েছেন বেই বেই-কে মিন হুয়েকে যত্ন করার জন্য। 

“মিন হুয়ে জিয়ে, আমি আপনাকে কিছু বলতে চাই। আপনার সময় হবে তো?”

ইয়াং বেই বেই পাশে বসলো, পাকড়ে ধরলো চায়র কাপটা, একটু মধুও চিপে দিলো তাতে, অনেকক্ষণ ধরে একটা চামচ দিয়ে গুলে নিতে লাগলো, আর বললো, “আমি বলতে চাই না। এটা আমার ব্যাপার নয়। অফিসের মা দওইয়্যাঁ আমাকে জানতে বলেছেন আপনার ব্যাপারে, উনি - একজন পুরুষ সহকর্মী, তাই ওঁর মনে হয়েছে যে আমি আপনাকে প্রশ্নগুলো সরাসরি করতে পারি।”

মিন হুয়ে নিজের ঠোঁট চেটে সোজা হয়ে বসলো, “আপনার সময় থাকলে, জিজ্ঞেস করুন।”

“জিয়ে, আপনি কী সত্যিই বিয়ে করেন নি?”

“সত্যিই করি নি।”

“তাহলে … আপনার পেটে যে বাচ্চা আছে … আপনি তাকে জন্ম দেবেন বলে ঠিক করেছেন … তাই তো?”

“হ্যাঁ।”

“আমাদের কোম্পানিটা ছোটো। তাই অফিসেই পরিবার পরিকল্পনা … অবিবাহিতের জন্ম দেওয়া …”

একটু থেমে বললেন, “বেআইনি। যেমন সুপারবার্থ। বুঝলেন?”

“বেআইনি!” মিন হুয়ে এমন চমকে উঠলো যে আরেকটু হলে হাতের কফিটা প্রায় ফেলেই দিচ্ছিলো। “কোন আইনের বিরুদ্ধে যায় এটা?”

“জনসংখ্যা আর পরিবার পরিকল্পনা আইন।”

চায়ের ঘরে কেউ ছিলো না তখন। তবুও বেই বেই কথা বলতে লাগলেন খুব নিচু স্বরে, “বাচ্চাকে জন্ম দিলে তোমার একটা বার্থ সার্টিফিকেট লাগবে। তোমার যদি ম্যারেজ সার্টিফিকেট না থাকে, তাহলে তুমি বার্থ সার্টিফিকেট পাবে না। এমনভাবে বাচ্চা জন্মালে তোমাকে ফাইন দিতে হবে। তাকে বলে সোশ্যাল মেইন্টেন্যান্স ফি। তবে পরিবারের পাকা ঠিকানার নথীকরণ করতে পারবে। অনেক ঝামেলা হবে।”

যবে থেকে শিন ছির ধমক খেয়েছে, তবে থেকে মিন হুয়ের বিভ্রান্তি লেগেই আছে কয়েক মাস যাবৎ। শুধু সজাগ থাকে যখন প্রোগ্রাম লেখে। ও কখনোই ভাবে নি যে ও অন্তঃস্বত্তা হবে। ভাবেই নি তারপরে কী হতে পারে।

“তাহলে পরিবারের পাকা ঠিকানার নথীকরণের দরকার নেই।” ভ্রূর ঠান্ডা ঘাম মুছে নিলো মিন হুয়ে।

“ও জিয়ে, আপনি সমাজের থেকে কতো যোজন দূরে বাস করেন বলুন তো? একটা বাচ্ছা কী করে বড়ো হবে একটা নথীকৃত আবাসের ঠিকানা ছাড়া? একটা রেজিস্টার্ড পার্মানেন্ট রেসিডেন্স না থাকলে বাচ্চা কিন্ডারগার্টেন-এ যেতে পারবে না, এলিমেন্টারি স্কুলেও যেতে পারবে না। কিছুই করা যাবে না রেজিস্টার্ড পার্মানেন্ট অ্যাড্রেস না থাকলে।”

মিন হুয়ে শুধু বললো, “ওহ্‌!” তারপর বোবা হয়ে গেলো যেনো।

“আপনার সাথে বাচ্চার বাবার যোগাযোগ আছে এখনো?” বেই বেই আবার জানতে চাইলেন।

“মেইয়ো।” মিন হুয়ে মাথা নাড়লো, “আমি বাচ্চার বাবার পরিচয় প্রকাশ করতেও চাই না।”

“টাকার পরিমাণটা সমান নয়। দ্বিতীয়ত, আপনাকে মা এবং বাবা দুজনেরই পরিচয়ের প্রমাণ জমা দিতে হবে এবং সোশ্যাল মেইন্টেন্যান্স ফি জমা করার রসিদও জমা দিতে হবে অ্যাকাউন্ট নথীকরণের সময়ে যাথে বাচ্চার বাবার অ্যাকাউন্টও জমা দিতে হবে। সঙ্গে আপনাকে একটা প্যাটার্নিটি টেস্ট সার্টিফিকেট দিতে হবে। তার জন্য আবার পুলিশ স্টেশনের দওইয়্যাঁর থেকে অনুমোদন নিতে হবে।”

মিন হুয়ের মাথাটা ক্রমশ ফুলে উঠছিলো যেনো, “টাকাটা সমস্যা নয়। আমি নিজেই দিতে পারবো। অন্য জিনিসগুলো … কঠিন হয়ে দাঁড়াবে।”

“আমার জিয়ে, অনেক টাকা। আমি পরিবার পরিকল্পনা কমিশনে ফোন করে জেনেছি … আপনার মতো পরিস্থিতিতে, আপনাকে পঞ্চাশ হাজার য়ুআঁ দিতে হবে।”

“পঞ্চাশ হাজার য়ুআঁ?” মিন হুয়ে চোখ বড়ো বড়ো করে তাকালো, ওর অবিশ্বাস্য লাগছে। “এতো?”

“আমি আপনাকে মিথ্যে বলবো না। তাই-”

বেই বেই মিন হুয়ের পেটের দিকে তাকালেন, “আপনি কী এখনো বাচ্চাকে জন্ম দিতে চান?”

মিন হুয়ে জোরে জোরে ঘাড় নেড়ে বললো, “দাঙ্গরাঁ।”

বেই বেই ঘুরে বসলেন, “আরেকটা উপায় আছে অবশ্য।”

“হুহ্‌”

“জিয়ে, আপনাকে একটা অ্যাপের কথা বলতে পারি, বাইহে ডট কম, একটা ব্লাইন্ড ডেটে যান আর আপনার বাচ্চার একটা বাবা খুঁজে নিন। অবশ্যই বাচ্চার জন্মের আগে ম্যারেজ সার্টিফিকেটটা করিয়ে নেবেন।”

বেই বেই-এর সাথে কথা বলার পরে মিন হুয়ের মনে হলো যে কিছুতেই বাচ্চাটা ওর একার, ওর একলার হবে না। মানুষের সাথে আচারে ব্যবহারে ও নিজে মোটেই পটু নয়। আর কোনো আত্মীয়স্বজনও নেই, বয়ঃজ্যেষ্ঠ কেউও নেই বিনচেং-এ যার সাথে এ ব্যাপারে আলোচনা করতে পারে। এর জেরে মিন হুয়ে একটু চিন্তায় পড়লো। অফিসে ফিরে গিয়ে পুরো ব্যাপারটা আবার ভাবলো। মিলবে না এমন কোনো রাস্তাই নেই। বাচ্চার জন্মের আগে সাত-সাতটা মাস মানে দুশো দিনেরও বেশি আছে। এখনো সময় আছে।

কাজ থেকে বেরোনোর সময় মিন হুয়ে আবার মুখোমুখি হলো ঝৌ রু জির, এলিভেটরে। ঝৌ রু জি জানতে চাইলো যে সাও মুর বাড়িতে নেমন্তন্ন রাখতে মিন হুয়ে একসাথে যাবে কিনা ঝৌ রু জির গাড়িতে। 

মিন হুয়ে ভাবলো ব্যাপারটা। বললো, “সুপারমার্কেটে থামা যাবে সাও মু-এর বাড়ি যাবার পথে? আমি ওয়াইনের একটা বোতল নেবো।”

“ও কে। আমিও কয়েকটা জিনিস কিনবো। ডিনারের নেমতন্নে যাচ্ছি। আমিও তো খালি হাতে যেতে পারি না।”

ঝৌ রু জি একটা অডি চালায়, গাড়িটা চিনে তৈরি। গাড়িটা রেখেছেও খুব পরিষ্কার। দুজনে যখন সুপারমার্কেটে পৌঁছোলো মিন হুয়ে অ্যালকোহল সম্পর্কে কিছুই জানে না। ঝৌ রু জির পরামর্শ মতো একবোতল হুইস্কি কিনল। দাম চুকিয়ে বেরোনোর সময় দুজনে ‘মা ও বাচ্চা’ বিভাগের পাশ দিয়ে গেলো। ঝৌ রু জি জিজ্ঞেস করলো, “আপনি কী গর্ভবতী মহিলাদের ভিটামিনগুলো খেতে শুরু করেছেন?”

“না।”

“ফোলিক অ্যাসিড?”

“ডাক্তার বলেছে খেতে। কিন্তু আমার এখনো কেনার সময় হয় নি। কদিন খুব ব্যস্ত আছি আমি।”

“তাহলে এখন কিনে নিন।” ঝৌ রু জি টেনে নিয়ে গেলো মিন হুয়েকে একসারি তাকের সামনে। বেশ দক্ষ হাতে ঘাঁটাঘাঁটির পরে, “এই ব্র্যান্ডের ভিটামিন ভালো। এতে ফোলিক অ্যাসিডও আছে। এতে আপনাকে দুটো আলাদা করে কিনতে হবে না। আর এই যে নরওয়ের চুনোমাছের ডিএইচএ, এরও দু বাক্স।” 

“ডিএইচএটা আবার কী … কী কাজে লাগে?”

“অসম্পৃক্ত ফ্যাটি অ্যাসিড, সাধারণত ব্রেন গোল্ড বলে।” হাতের ছোটো নীল রঙের ওষুধটার দিকে দেখালেন ঝৌ রু জি, “এই জিনিসটা স্নায়ুকোষে তৈরিতে কাজে লাগে। মগজ আর রেটিনার জন্যও খুব জরুরি। বাচ্চার ব্রেনের কোষ তৈরিতে সাহায্য করে আবার মায়ের পোস্টপার্টাম ডিপ্রেসনের মোকাবিলাতেও সাহায্য করে। এটা সত্যিকারের ভালো জিনিস, বিশ্বাস করুন। তিন মাস থেকে ছমাস বাচ্চার মগজ তৈরির সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ সময়। বাচ্চার বুদ্ধির বিকাশের জন্য আপনি এটা নিশ্চয়ই খাবেন।”

এতো প্রাণবন্ত স্বরে ঝৌ রু জি বলছিলো যে মনে হচ্ছিলো বিজ্ঞাপণ। মিন হুয়ে দু বাক্স নিয়ে নিলো, শপিং কার্টে রেখে দিলো, দোকান ছেড়ে বেরোনোর উপক্রম করছিলো যখন ঝৌ রু জি হঠাতই বাক্সদুটো তুলে নিয়ে খুঁটিয়ে দেখে ওগুলোকে তাকের ওপর তুলে দিলো, বদলে অন্য বাক্স নিলো, “ওটাতে মাছের তেল ছিলো। এটাতে সিউইডের তেল। এটাই চাই, ওটা নয়।”

মিন হুয়ে দাম দেখলো। পরেরটার দাম আগেরটার দামের দ্বিগুণ, “এগুলো সবই ডিএইচএ, কোনো ফারাক আছে কী?”

“আছে বই কী। যে ডিএইচএটা সমুদ্রের শ্যাওলা থেকে নেওয়া হয়, সেটা ফুডচেনের মধ্যে দিয়ে বাহিত হয় নি। তাতে দূষণ কম। এতে গর্ভবতী মহিলারা আর শিশুরা তুলনামূলকভাবে বেশি নিরাপদ। তাছাড়া এটা হজম করাও সহজ।”

“আপনি এতো সব জানলেন কী করে?”

“আমি তো ডাক্তার। ভুলে গেছেন সে কথা?”

দোকানের কাজ শেষ হলে দুজনে গাড়িতে চেপে চলতে লাগলো। ভিড়ের সময়, রাস্তায় অনেক যানবাহন। সাও মু শহরের বাইরে থাকেন, তিনি বলেনও যে তিনি একটা বড়ো বাড়িতে থাকতে চান। তিনি অল্প পথ যাতায়াতের সুখটুকু ছেড়ে দিয়েছেন। নেভিগেশনে দেখাচ্ছিলো যে আরো দেড় ঘন্টা লাগবে পৌঁছোতে। মিন হুয়ের মনে পড়ে গেলো অ্যাপটারকথা যেটা বেই বেই বলে ছিলো তাকে। তাড়াতাড়ি ডাউনলোড করে নিলো, ব্যক্তিগত তথ্যও ভরতে লাগলো।

ঝৌ রু জি একঝলক দেখে নিয়ে বললেন, “আপনিও বাইহে ডট কম ব্যবহার করেন?”

মিন হুয়ে ফোনটা ঢেকে রাখলো, “আপনি কী করে জানলেন?”

ঝৌ রু জি হেসে বললেন, “আমারও একটা অ্যাকাউন্ট আছে। এই রেজিস্ট্রেশন পেজটার প্যাটার্ন সহজেই চেনা যায়।”

মিন হুয়ে টাইপ করতে থাকল, “কদ্দিন ব্যবহার করছেন এটা? কেমন, ভালো?”

“আমার সময় নেই ব্যবহার করার। রোজই সার্জারি থাকে একটা না একটা। ব্লাইন্ড ডেটের সময় কোথায়?”

“একবারও একজনের সাথে দেখা করেন নি?”

“হ্যাঁ। দেখা করেছি। কয়েকবার। কয়েকবার খেতে গিয়েছি। কথা বলে ভালো লাগে নি। তাই আর কথা বলি নি ফের।”

“কারণ এইটা যে যাদের সাথে ডেটে গিয়ে ছিলেন তাদের কাউকেই আপনার মনে ধরে নি?” 

“হ্যাঁ। তুলনামূলক ভাবে আমার যোগ্যতা বেশি ভালো - আমার তেত্রিশ বছর বয়স, মেডিক্যাল পিএইচডি আছে, বড়ো একটা পদে কাজ করি, মা-বাবা সরকারী কর্মচারী ছিলেন, আমাকে দেখতে খারাপ নয়, তাই না? আমি দ্বিতীয়বার বিয়ে করতে চাইছি, আমাকে আর জোর করবে কে?”

“এতো অনেক এলোপাথাড়ি তোলপাড়ের মতো শোনাচ্ছে।”

“যার একবার ডিভোর্স হয়ে গেছে সে ভালো করেই জানে যে সম্পর্কটা ভেঙে গেছে। মূল্য কী? ব্যাপারটা একটা ভালো বন্ধুত্বের অবসানের মতোই। যদি কেউ একবার ঘুরে দাঁড়াতে পারে, তবে দ্বিতীয়বারে আর ভয় কী?”

ঝৌ রু জি নিপুণহাতে স্টিয়ারিং হুইল ঘোরালেন, “দেখেছি আমিও।”

“কিন্তু আপনি কখনো শিখেবন না।”

“আমি ভীষণ চেষ্টা করেছি, সত্যিই চেষ্টা করেছি। আমার মা বলেন বরবউ-এর সম্পর্কটা একটা বাড়ির মতো। একটা আলোর বাল্ব খারাপ হয়ে গেলে আলোর বাল্বটা বদলে নিতে হয়, কিন্তু একটা আলো জ্বলছে না বলে বাড়িটা বদলানো যায় না। কিন্তু আমার আর আমার বউয়ের ঝামেলাটা একটা আলোর বাল্বের মতো নয়। একজন ফার্স্ট-ক্লাস সার্জন হয়ে ওঠাটাই আমার জীবনের স্বপ্ন। সেই স্বপ্নটা আমি বিয়ের জন্য ছেড়ে দিতে রাজি নই। আমি পারবো না। বুঝলেন কী?”

“বুঝলাম।” মিন হুয়ে বললো, আর বলতে বলতে ফোনটা নাড়াতে লাগলো। “দেখুন, আমি রেজিস্টার করে দু ঘন্টাও হয় নি, কয়েক মিনিট আগে আমাকে কেউ একটা টেক্সট মেসেজ পাঠিয়েছে। ওয়াও! দুটো মেসেজ।”

“বলুন দেখি কী চলছে?”

“একজনের বয়স পঁয়ত্রিশ, এক দশমিক সাত ছয় মিটার লম্বা, ওজন নব্বই কেজি। অন্যজনের বয়স ঊনত্রিশ বছর, এক দশমিক সাত তিন মিটার লম্বা, ওজন পঁচাত্তর কিলোগ্রাম। আমার হিসেবে এই পঁচাত্তর কিলোগ্রাম খুব খারাপ নয় দেখতেও ভালো, বেশ বুদ্ধিদীপ্ত।”

জুম ইন করে, ডানদিকে, বাঁদিকে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে মিন হুয়ে ছেলেটার ছবিটা দেখতে লাগলো। 

“আমার কেনো মনে হচ্ছে যে আপনি যেনো তরমুজ বাছছেন?”

“হাহা হাহা” মিন হুয়ে ফোনে টাইপ করতে লাগলো, “আমি এবার এঁদের বলতে চাই যে আমার পেটে বাচ্চা আছে আর জিজ্ঞেস করবো যে ওঁরা কিছু মনে করছেন না তো। যদি এঁরা কিছু মনে না করেন তো আমি এঁদের বলবো কোথায় কখন দেখা করবো।”

টেক্সট মেসেজ পাঠানোর পরে, সেটা যেনো মিলিয়ে গেলো কোথায়। আর সেই যে দুজন যারা একটু আগে পর্যন্ত আবেগে গদ্গদ হয়ে চ্যাট করে যাচ্ছিলো মিন হুয়ের সাথে, তারা যেনো কোথায় উবে গেলো এক মূহুর্তে। কোনো সাড়া শব্দই নেই আর।



মিন হুয়েকে থেকে থেকে দীর্ঘশ্বাস ফেলতে দেখে, ঝৌ রু জি বললো, “দুপুরে বলেছি আপনাকে, আমার কিচ্ছু যায় আসে না। দেখুন, আপনার পেটের বাচ্চা জন্মানোর পরে তার একটা বাবা তো থাকতে হবে, তাই না? যখন কিন্ডারগার্টেন-এ যাবে, তখন অন্য সব বাচ্চারই বাবা থাকবে, কিন্তু এই বাচ্চার থাকবে না, মর্মান্তিক। বাচ্চাকে একটা স্বাভাবিক বাড়ি দেওয়াটা জরুরি আর তার মা-বাবা দুজন থাকাটাও জরুরি।”

“আপনার সত্যিই কিচ্ছু যায় আসে না?”

“সত্যি কথাটা বলতে দিনঃ আমি হাসপাতালের শেষ পর্যায়ের যে ফ্ল্যাট বিলির জনকল্যাণকর ব্যবস্থা তার সুযোগটা নিতে চাই। আপনি ‘তিয়াঁরাঁ কমিউনিটি’র কথা শুনেছেন? চারটে হাই-রাইজ অ্যাপার্টমেন্ট বিল্ডিং আছে এই রাস্তার পুব দিকে, যেগুলো আমাদের ইউনিভার্সিটির বানানো। চারপাশটা দেখতে ভালো, এলাকাটা ভালো। দামটা চারপাশের ভাড়ার তিন ভাগের একভাগ যেটা অর্ধেক কেনা আর অর্ধেক বিনাপয়সায় পাবার সামিল। কিন্তু প্রজেক্টের মাথা বলেছেন যে এই ফ্ল্যাটগুলো তাঁদেরকেই দেওয়া হবে যাঁরা বিবাহিত বটে, কিন্তু তাঁদের বাড়ির মালিকানা নেই। আমার যা পদাধিকার তাতে আমি তিনটে শোয়ার ঘর দুটো বসার ঘর সমেত ফ্ল্যাট পাবো।”

“ওয়াও! ওহ্‌।”

“বিনচেং-এ বাড়ির যা দাম, তাতে আপনি যদি আমার জায়গায় থাকতেন, তবে আপনিও লোভে পড়ে যেতেন নাকি?”

“আমার সঞ্চয় খুবই কম।” মিন হুয়ের সৎ স্বীকারোক্তি, “আমার সামর্থ্যে কুলোবে না।”

“আপনাকে পয়সা দিতে হবে না। দেখুন, আমরা পরস্পরের কাজে লাগতে পারি যদি আমরা বিয়ে করি। আপনার একটা ম্যারেজ সার্টিফিকেট লাগবে বাচ্চার জন্ম দিতে, আমার একটা ম্যারেজ সার্টিফিকেট লাগবে একটা বাড়ির মালিক হতে। যদিও ব্যাপারটা ভীষণই পরস্পরের কাজে লাগার, ব্যবহারে লাগার মতো শোনাচ্ছে, তবুও দেখুন আমাদের অন্য ব্যাপারপগুলোও মানানসই। বয়স, শিক্ষাগত যোগ্যতা, আয়, কাজের পরিবেশ - সব মানানসই। যদি এমনও মনে হয় যে আমাদের বনিবনা হচ্ছে না, আমরা সেই বিষয়ে আলোচনা করে বিয়ে ভেঙেও দিতে পারি। আমি কথা দিচ্ছি যে আমার জন্য আপনার পরিস্থিতি কঠিন হবে না কখনো।”

ঝৌ রু জি শান্ত স্বরে বললো, “আমার প্রাক্তন স্ত্রীর সাথেও ব্যাপারটা এরকমই। আর কিছু না, আমি নিজেকে জিজ্ঞেস করে ছিলাম যে আমি সার্জারি ছেড়ে একটা ডাক্তারি পড়ানোর কলেজে পড়াবো কিনা। আমি চাই নি সার্জারি ছেড়ে ডাক্তারি কলেজে মাস্টারি করতে। তাই আমি ডিভোর্সে রাজি হয়ে ছিলাম। কখনো কোনো ঝগড়া হয় নি। বন্ধুমহলে সবাই জানে যে আমরা এখনো পরস্পরকে পছন্দ করি।”

“তাহলে আপনি কবে বিয়ে করতে চান?”

“কাকে?”

“ধরুন আমাকে।”

“আমি এই সপ্তাহে ছুটিতে আছি। সামনের মঙ্গলবারে আবার কাজে যোগ দেবো। সোমবারে সিভিল সার্টিফিকেশন ব্যুরোতে গেলে কেমন হয়?”

মিন হুয়ে নিজের ক্যালেন্ডার দেখে বললো, “সোমবার ঠিক আছে।”

“সকাল দশটার সময়ে।”

“এর সাথে আমার দুটো অনুরোধ আছে।”

“বলুন।”

“প্রথমত, আমাকে জিজ্ঞেস করবেন না যে আমার বাচ্চার বাবা কে।”

“আমি কখনো জানতে চাইবো না।”

“দ্বিতীয়ত, বাচ্চার পদবী হবে ‘সু’।”

“আমার কোনো কৌতুহল নেই।”

“আপনার কোনো শর্ত আছে? আপনি কিছু জানতে চান?” মিন হুয়ে জিজ্ঞেস করলো।

“আপনার সাথে চেন ছিরাং-এর গন্ডগোলটা কী নিয়ে?”

“আমি এ ব্যাপারে কোনো কথা বলতে চাই না।”

“ওকে, তাহলে বলতে হবে না আপনাকে।”

মিন হুয়ে খানিক ক্ষণ ভাবলো। তারপরে জানতে চাইলো, “আপনার শখ কী কী?”

“বেহালা, ক্ল্যাসিক্যাল মিউজিক, ব্যালে, মুভি।”

মিন হুয়ে ফের জিজ্ঞসে করলো, “আপনি নাচতে পারেন?”

“আমি ব্যালে নাচ দেখতে ভালো বাসি।” বললো ঝৌ রু জি, “আপনার শখ কী কী?”

“দাবা খেলা, তাস খেলা, গেমস, মুভিস।”

“তার মানে মুভিস আমাদের দুজনেরই শখের জিনিস। আমরা একসাথে মুভি দেখতে যেতে পারি পরে।”

“হ্যাঁ।”

“এটাই সাও জঁয়ের বাড়ির এলাকা। এইখানে।”

ঝৌ রু জি গাড়িটাকে রাস্তার পাশে দাঁড় করালেন। দুজনে কমিউনিটির প্রবেশপথ অবধি ওয়াইন আর উপহার হাতে নিয়ে হেঁটে গেলো। 

“জানো মিন হুয়ে, আমি আমার প্রাক্তন বৌয়ের সাথে ছায়ার মতো লেগে ছিলাম তিন বছর ও আমাকে বিয়ে করতে রাজি হবার আগে। আর তুমি - তুমি তো রাজি হয়ে গেলে তোমার জন্য কিছুমাত্র করার আগেই।”

মিন হুয়ে দাঁড়িয়ে পড়লো। হঠাৎ করে। ঝৌ রু জির দিকে চেয়ে প্রত্যেক শব্দে ওজন দিয়ে বললো, “ঝৌ রু জি, আমি চটপট রাজি হয়েছি, কিন্তু আমি কিছু না ভেবেই রাজি হয়ে গেছি এমন নয়। অন্য লোকে কী ভাবলো তাতে আমার কিচ্ছু যায় আসে না। আমি রাজি হয়েছি কারণ আমি বিষয়টা স্পষ্ট করে বুঝেছি। তুমি কী গুরুত্ব দিয়ে ভেবেছ? বুঝেছ স্পষ্ট করে?”

“হ্যাঁ ভেবেছি।”

“ভালো।”

***



সাও মু যে ঠিকানা লিখে দিয়ে ছিলেন সেখানে পৌঁছে দুজনে একটা দোতলা টাউনহাউসের দেখা পেলো। দরজায় ঘন্টি বাজালো, ভেতর থেকে পুরুষ কন্ঠে উত্তর এলো, আর দরজাও খুলে গেলো। তিনি হাসিমুখে অভ্যর্থনা করলেন, “আসুন, আসুন, খুয়েংয়িং।”

মিন হুয়ে আর ঝৌ রু জি মুখ চাওয়া-চাওয়ি করলো। তারা জানে না এই মানুষটা কে।

সাও মুয়ের বিয়াল্লিশ বছর বয়স। যে মানুষটা দরজা খুললেন, তাঁকে দেখে ঝৌ রু জির থেকেও কম বয়সী বলে মনে হচ্ছে, খুবই সুদর্শন, লম্বা, ছোট্টো মুখ, পুরুষ মডেলের মতো শারিরীক গঠন, একজোড়া শান্ত, তীক্ষ্ণ চোখ প্রায় পশুর মতো।

এক ঝলকে মিন হুয়ের মনে হলো যে স্যুট পড়লে মানুষটাকে খুব কেতাদুরস্ত দেখাতো, যেনো ওয়াল স্ট্রীটের ব্যাঙ্কার।

মিন হুয়ে ভাবলো যে মানুষটা নিশ্চয়ই সাও মুয়ের বোনপো বা ভাইপো হবে। ঝৌ রু জিও সামান্য বিভ্রান্ত, ‘নি হাও’ অবধি বলতে পারলো না, শুধু পায়ে পায়ে অনুসরণ করলো।

“সাও মু বাচ্চাদের আনতে গেছে। আমি রান্না করছি। গন্ধ পাচ্ছেন কী আপনারা?”

হেসে বললেন মানুষটা। একসারি সাদা দাঁত দেখা গেলো, “যা হোক, আমি নিজেই আমার পরিচয়টা দিয়ে দি, আমার নাম য়িন শু, আমি সাও মুয়ের বর।”




~~~~~~~~~~~~

সম্পূর্ণ বই বিনামূল্যে : https://dl.bookfunnel.com/lcj5vznt96

Link to Previous Post in the Series : https://projectionofnaught.blogspot.com/2024/08/jpda-chapter-19.html

Link to following Post in the Series : https://projectionofnaught.blogspot.com/2024/08/jpda-chapter-21.html

No comments:

Post a Comment

Readers Loved