১৯. ঝৌ রু জি
কাজের প্রথম সপ্তাহে সবই ভালোয় ভালোয় কাটলো।
মিন হুয়ের ভূমিকা টিম লিডারের। পাঁচ জন প্রোগ্রামার মিন হুয়ের নেতৃত্বে প্রজেক্ট ডিসাইন করে। এআই মেডিক্যাল ইমেজিং সব থেকে তাড়াতাড়ি বদলে যাওয়া, সব থেকে তাড়াতাড়ি বেড়ে ওঠা প্রযুক্তি ক্ষেত্র যাতে চিকিৎসার সুবিধে দেবার কাজে এআই-এর ব্যবহার শুরু করা হয়েছে। ব্যবসায়ী উদ্যোগপতিরা এই ক্ষেত্রে ভিড় বাড়াচ্ছেন এখন। যদিও কিভাবে ব্যবসাটা হবে, কোথায় টাকা ঢাললে, কে কতো দিন কোথা থেকে কোন হারে সুদ পাবে সেসব বেশ অস্পষ্ট এখনো, তবুও গরম গরম টাকা এখনই ঢেলে চলেছে অনেক উদ্যোগপতিই। প্রতিষ্ঠিত ব্যবসা বলে, “য়ুআঁলাই মেডিক্যাল”ও উঠতি ব্যবসার উথলে ওঠা মুনাফা ছাড়তে চায় না। তাই এরা বা'অ্যান টেকনোলজি বানিয়েছে। বড়ো কোম্পানিটার টাকার অভাব নেই। উদার হাতে রিসার্চ আর ডেভেলপমেন্টে টাকা ঢেলে চলেছে। শিল্পক্ষেত্রের ওপরতলার কোম্পানি হবার কারণে তথ্য আর যন্ত্রানুসঙ্গের অভাব ছিলো না। তাই নতুন ব্যবসা শুরু করা খুব কঠিন হয় নি।
জেনেরাল ম্যানেজার হে হাই শিয়াং-এর প্রযুক্তি শিক্ষা আছে আবার ম্যানেজমেন্টেও কাজ করেছেন দীর্ঘদিন। কয়েকবার কথা বলে মিন হুয়ের মনে হয়েছে যে হে হাই শিয়াং-এর প্রযুক্তি বোধটা গড়পড়তা। শিল্পক্ষেত্রে নতুন জ্ঞান বা প্রযুক্তির প্রচলনের সম্পর্কে জানতে বা বুঝতে খুব উৎসাহীও নন তিনি। তবে হেড অফিস থেকে তাঁকে যে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে তার ব্যাপারে তিনি খুবই যত্নশীল। খুব উৎসাহের সঙ্গে মিটিং-এ আসেন, রিপোর্ট দেখেন মন দিয়ে, আর যে কোনো পারস্পরিক সম্পর্কের বিষয়ে তিনি খুবই যত্নবান। তিনি রোজই কোনো না কোনো মিটিং-এ ব্যস্ত থাকেন, হয় কোম্পানির মধ্যে নয় তো শহরের বাইরে।
হে হাই শিয়াংকে বিশেষ পছন্দ হয় নি মিন হুয়ের। হে হাই শিয়াং যে সফল, বাতাস আর বৃষ্টিতে কান পেতে রাখেন আর ভীষণ গম্ভীর প্রকৃতির আমলা সে কথাটাই মিন হুয়ের নজরে পড়ে সব থেকে বেশি। তবে হে হাই শিয়াং খুব বিরক্তিকরও নন, কারণ তাঁর মতো নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিত্ব কম বেশি সব অফিসে আছে।
তার ওপরে হে হাই শিয়াং পাশ করেছেন মিলিটারি অ্যাকাডেমি থেকে। সবসময়ে তাঁর নজর থাকে প্রাতিষ্ঠানিক শৃঙ্খলার ওপরে। যদিও কোম্পানিতে তিরাশি শতাংশের বেশি কর্মী পুরুষ, কিন্তু কেউ অশিষ্টতা করার সাহস করে না।
একটা তেলচিটে মাঝবয়সী লোক, এটাই মিন হুয়ের কাছে হে হাই শিয়াং-এর পরিচয়। কারণ তাঁর হাতে ধরা কাঁচের থার্মোসটা তাঁর হাত থেকে কিছুতেই ছাড়ানো যায় না। আর সত্যিই ওটার মধ্যে জলে ভেজানো গোজি বেরি থাকে।
গোজি বেরি |
সাও মু অন্য রকম। কম্পিউটার সায়েন্সের ডিগ্রি ছাড়াও ওঁর একটা এমবিএ ডিগ্রি আছে। হেড অফিসে পাঁচ বছর কাজ করেছেন মার্কেট তৈরি করার। তিনি শুধু অনেক কিছু জানেন তাই নয়, তিনি খুব কাজেরও। উনি স্বভাব জেদী, যেটা মনে করেন করা জরুরি সেটা করে এবং করিয়ে তবে ছাড়েন।
মিন হুয়ে শেষ অবধি বা'অ্যানে কাজ করাই স্থির করলো কারণ সাও মুকে ওর মনে ধরে ছিলো। যে তোলপাড়টা চেন ছিরাং-এর জন্য হয়েছে, তার জেরে মিন হুয়ে সমস্ত পুরুষ ঊর্ধতনকে দূরত্ব রেখে শ্রদ্ধা করতে বাধ্য হয়েছে।
দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে কোম্পানিতে একের পর এক ঘটনা ঘটতে শুরু করলো।
কাস্টমার সার্ভিস কল করতে লাগলো। বিনচেং টিউমর হাসপাতালের সিস্টেম বারবার ক্র্যাশ করতে লাগলো। বিনচেং টিউমর হাসপাতাল আবার বা'অ্যানের সবথেকে সামনের সারির পণ্য ‘MIST’ -এর সব থেকে বড়ো খদ্দের।
সাও মু অনেকগুলো ছোটো টিম পাঠিয়ে ছিলেন হাসপাতালে, মেরামতির জন্য। সিস্টেম ব্যবহার করা যাচ্ছে ততক্ষণই যতক্ষণ টিম হাসপাতালে থাকছে, কিন্তু যেই টিম হাসপাতাল ছেড়ে চলে আসছে।, অমনি এক দিনের মধ্যে সিস্টেম ভেঙে যাচ্ছে। বার বার এরকম হতে হাসপাতালের কর্তারা মহা রেগে গেলেন। তাঁরা তো ফোন করে চেঁচামেচি করতে লাগলেন। কন্ট্র্যাক্ট টেনে বার করে এনে বলে দিলেন যে সাত দিনের মধ্যে পাকা সমাধান না দিতে পারলে, বা'অ্যান যে টাকা কন্ট্র্যাক্ট অনুযায়ী নিয়েছে, তার তিরিশ শতাংশ টাকা ফেরত দেবে বিনচেং টিউমর হাসপাতালকে।
হে হাই শিয়াং ঘাবড়ে গেলেন একটু। একটা মিটিং ডাকলেন অবস্থাটার তল পাওয়ায়ার জন্য।‘MIST’ একটা এআই অ্যাসিস্টেড অটোম্যাটিক সেগমেন্টেশন টেকনোলজি প্ল্যাটফর্ম যেটা য়ুআঁলাই মেডিক্যাল তৈরি করে ছিলো লিভার লেসিয়নের চিকিৎসার জন্য। এটা বানাতে দু বছর সময় লেগে ছিলো য়ুআঁলাই মেডিক্যালের রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট টিমের। বা’অ্যান তৈরি হবার পরে, ‘MIST’-এর কাজ বা'অ্যানকে দিয়ে দেওয়ায় হয়ে ছিলো। ফল ভালো পাওয়া গিয়ে ছিলো বলে এটা চটপট নানান বড়ো হাসপাতালে বিক্রি হয়ে ছিলো মেডিক্যাল ইক্যুইপমেন্টের সাথে।
“সব থেকে বড়ো সমস্যা হলো যে দঁ হুয়ে, ‘MIST’-এর প্রজেক্ট লিডার চাকরি বদলেছে।" সাও মু বললেন মিটিং-এ, “যবে থেকে উনি ছেড়ে গেছেন, ‘MIST’ সমস্যা দিচ্ছে। তিনি কয়েক গোছা অ্যালগোরিদ্ম দিয়ে লিভার টিউমর লেসয়িনের সিটি ইমেজের সমস্যাগুলো দূর করার চেষ্টা করে ছিলেন। সেই সময়ে অটোমেটিক সেগমেন্টেশন নিখুঁত হবার মাত্রা বেশ ওপরের দিকে ছিলো। যখন দঁ হুয়ে কাজ ছেড়ে চলে যায়, তখন তাঁর ঊর্ধতনের সঙ্গে দীর্ঘ এবং গভীর বচসা হয়। এখন তাঁকে ফিরিয়ে আনা অসম্ভব। এতোগুলো বড়ো বড়ো সারাই করার পরে।”
এসব বলতে বলেতেই সাও মু তাকালেন মিন হুয়ের দিকে আর বললেন, “মিন হুয়ে – –”
মিন হুয়ে জোর করে একটা কোণের দিকে বসেছে। গর্ভাবস্থার শুরুর দিকের শারিরীক প্রতিক্রিয়াগুলো বাকি সবার চোখের আড়ালে রাখবে বলে। চমকে উঠলো তাকে কেউ ডাকছে শুনে, ঘোরের মধ্যে ধড়ফড়ে করে জানান দিলো, “এখানে।”
ঘরে যারা উপস্থিত ছিলেন সব্বাই হাসলেন।
“তোমাদের হাসি কেনো পাচ্ছে? কেনো হাসছো তোমরা?” খিঁচিয়ে উঠলেন হে হাই শিয়াং, “অপেক্ষা করতে পারো না? ফের হাসি?”
“কেমন আছো তুমি?” সাও মু জানতে চাইলেন, “পারবে যেতে?”
অনেকদিন ধরেই সাও মু চাইছিলেন মিন হুয়েকে পাঠাতে, বিনচেং টিউমর হাসপাতালের সমস্যাটা সমাধান করার জন্য। কিন্তু হাসপাতালটাতে ক্যান্সারের চিকিৎসা হয়, এদিকে মিন হুয়ে অন্তঃস্বত্তা। সাহস পাচ্ছিলেন না কিছুতেই কথাটা বলতে।
“ঠিক আছে। আমি যাচ্ছি এখন।” ছোটো ব্যাগে ল্যাপটপ পুরে নিলো মিন হুয়ে।
“দাঁড়াও। তুমি কী সারাতে পারবে? এমন সারতে পারবে যাতে আমাদের ওপরে হাসপাতালের রাগটা পড়ে যায়?” হে হাই শিয়াং জিজ্ঞেস করলেন। যতো ছেলেদের পাঠানো হয়েছে, তাদের কেউই কাজটা করতে পারেনি বলে কথা।
“এতো অল্প সময়ে পুরোপুরি সারিয়ে তোলা অসম্ভব। যতোটা সম্ভব ততোটা সারাতে পারবো নিশ্চয়ই যাতে আগে সিস্টেমটা কাজ করে। তারপর ফিরে এসে খতিয়ে দেখতে হবে আর কী কী করে ঝামেলাটা আটকানো যায়।” মিন হুয়ে বললো।
“সাত দিন। পারবে সাত দিনে কাজটা শেষ করতে?”
“হ্যাঁ।”
“তোমার কতগুলো লোক লাগবে তোমার সঙ্গে যাবার জন্য?”
“আমি একাই যেতে পারি।”
এটা শুনে ঘরের বাকি সবাই অস্বস্তিতে পড়লো, নিজেদেরকে তাদের নির্বোধ মনে হতে লাগলো।
এক মূহুর্তের জন্য হে হাই শিয়াং চুপ করে রইলেন। তারপর হঠাৎ মিন হুয়ের চোখের দিকে চেয়ে বললেন, “ঔদ্ধত্য একটা অসুখ, সেটা সারানো প্রয়োজন। যদি তুমি কাজটা না করতে পারো তবে এখনই বলে দাও, আমরা অন্য কাউকে খুঁজে নেবো। আমি এই বিষয়ের কয়েকজন বিশেষজ্ঞকে চিনি। একজন ডক্টরেট আছেন হুয়াছিং ইউনিভার্সিটির যে হাসপাতাল সেখানে। তাঁর টিমও এই বিষয়ে কাজ করছে। যিনি দায়িত্বে আছেন, তাঁর সঙ্গে আমার সম্পর্ক ভালোই। ওদের কিছু বেশি পয়সা দিয়ে কাজটা আমি করিয়ে নিতে পারবো।”
“আমার ঔদ্ধত্য আমার সততা। সৎ ঔদ্ধত্য ঢের ভালো মিথ্যে বিনয়ের থেকে।”
মিন হুয়ে চুপ করে হাসতে লাগলো। হাতে ব্যাগ নিয়ে উঠে দাঁড়ালো, “কী ভাবছেন?”
“যদি তুমি সাতদিনে কাজটা না করতে পারো, তবে তোমার বছর শেষের বোনাস কেটে নেবো। তখন আমার দোষ ধোরো না কিন্তু।”
পাঁচ দিনের দিন সকালে মিন হুয়ে কোম্পানিতে একটা মিটিং-এর জন্য ফিরে গিয়ে জানালো যে সমস্যাটা সাময়িকভাবে সমাধান করে দেওয়া হয়েছে। মাস খানেক, মাস দুয়েকের মধ্যে হাসপাতাল কল করা বন্ধ করে দেবে।
সব্বাই হাঁপ ছেড়ে বাঁচল।
“দঁ হুয়েকে অভিজ্ঞ মানুষ হিসেবেই ধরা হয়। তিনি ঠিক কী করেন?” সাও মু জিজ্ঞেস করলেন।
“অনেক বাগ। ‘MIST’ -এর ডেটা প্রোসেসিং-এ অনেক সমস্যা আর মডেল ডিসাইনেও এবং সিলেকসন অফ লস ফাংকশনেও। পোস্ট-প্রোসেসিং আর রিফাইনমেন্টও যথেষ্ট সূক্ষ নয়। মূল সমস্যাটা হলো টু ডি ইমেজকে থ্রি ডি করার অ্যালগরিদ্মটা অপ্রতুল, যেমন কাজ করা উচিৎ তেমন কাজ করে না।” কথা বলতেই বলতেই মিন হুয়ে টের পেলো হে হাই শিয়াং-এর মুখটা ক্রমশ কালো থেকে অন্ধকার হয়ে উঠছে।
যতোই হোক, ‘MIST’ নিয়ে তাঁর অনেক গর্ব। তাঁর নিজের মূল্যায়নই এতো নেতিবাচক হলে ব্যাপারটা ভালো দেখায় না। তিনি বললেন, “কিন্তু ‘MIST’ ডেটার ক্ষেত্রে বেশ ভালো কাজ করেছে। অনেক রকমের অনেক তথ্য, উচ্চ মান, মজবুত ভিত্তি। এরকম একটা প্রজেক্টে ডেটার মূল্যটা অ্যালগরিদ্মের মূল্যের চেয়ে অনেক বেশি। যদি ডেটা ভালো না হয়, অ্যালগরিদ্ম যতই বুদ্ধিদীপ্ত হোক না কেনো সেটা কাজ করবে না।”
“তাহলে এরপর কী করবো আমরা? এটাকে আবার লিখব শুরুর থেকে শেষ অবধি?”
হে হাই শিয়াং চায়ে একটা চুমুক দিয়ে মিন হুয়ের দিকে তাকালেন, “তোমার পূর্বসুরীকে তো তুমি এর মধ্যেই অপদার্থ বলে দিয়েছো।”
“যদি রিডিসাইন না করা হয়, একটা বড়ো খদ্দের, যেমন একটা ক্যান্সার হাসপাতাল, যারা অনেক কিছুর জন্য প্ল্যাটফর্মটা ব্যবহার করবে, তারা তো আবার সমস্যার সম্মুখীন হবে। প্রত্যেকটা বাগ থেকে যে কোনো সময়ে একটা বড়ো ঝামেলা হতে পারে। যদি একই রকম কাজ করে এমন প্রোডাক্ট অন্য কেউ আনে, যাদের ডিসাইনটা অনেক বেশি পোক্ত, তবে হাসপাতালগুলো আর ‘MIST’ ব্যবহার করবে না। অন্য প্রোডাক্টটাই কিনবে।” মিন হুয়ে বলে চললো, “যদি আমার ওপর ভরসা করেন, তবে আমার একটা টিম লাগবে, তাতে পাঁচজন থাকলেই হবে আর আধ থেকে একবছর লাগবে। গত কয়েকদিনে আমি একটা সিস্টেম ডিসাইন করেছি, এপিআইগুলো - একটা প্রোটোটাইপ।”
“তাহলে চলো জলদি কাজ শুরু করে দেওয়া যাক।” হেসে বললেন সাও মু। “বেই বেই, আপনাকে যে কদিন আগে ডিক্যাফ কফিটা কিনতে বলে ছিলাম সেটা কিনেছেন কী?”
“হ্যাঁ।”
ইয়াং বেই বেই বললেন, “এই নতুন ডিক্যাফ কফিটার জন্য আমি একটা নতুন কফি মেশিনও কিনেছি।”
মিন হুয়ে সাও মুয়ের দিকে তাকিয়ে হাসলো।
মিটিং-এর পরে সাও মু হাঁটতে লাগলেন মিন হুয়ের পাশে পাশে, আর বলতে লাগলেন, “আজ রাতে আমার বাড়িতে এসো। একটা হালকা খাবারের ব্যবস্থা করেছি।”
“নিশ্চয়ই।”
হাতে কাজ থাকায় মিন হুয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়লো। কনফারেন্স রুম থেকে বেরিয়েই মিন হুয়ে কাজ শুরু করে দিলো। খিদে না পেলে ও টেরই পেতো না যে দুপুরের খাবার সময় হয়ে গেছে আর অফিসের সমস্ত লোক চলে গেছে।
ফার্স্ট ফ্লোরের রেস্টুরেন্টে চলে গেলো। একটা ক্রিস্পি সল্টেড চিকেন রাইস অর্ডার করে দিলো। সঙ্গে দুটো মিট বান। জানলার ধারে একটা বসার জায়গা দেখে বসেও পড়লো। খেতে শুরু করা মাত্র কানে এলো কে যেনো ওকে ‘নি হাও’ বললো। মাথা তুলে দেখলো ঝৌ রু জি, কোম্পানির একজন পার্ট-টাইম কর্মী, বিনচেং ইউনিভার্সিটির যে হাসপাতাল আছে, সেই হাসপাতালের অনকোলজি বিভাগের প্রধান চিকিৎসক। হাসপাতালটা শিয়াংহে বিল্ডিং-এর সামনে দিয়ে যাওয়া ঝংসান রোডের ঠিক উল্টো পাড়ে।
এআই আর মেডিসিন আসলে দুটো একদম আলাদা পৃথিবী। সাধারণত, যারা প্রোগ্রাম লেখে, তারা মেডিসিন বোঝে না, আর ডাক্তাররা প্রোগ্রাম লেখে না। কিন্তু প্রজক্টের উন্নতির জন্য এই দুই ধরনের মানুষকে একসাথে কাজ করতে হয়। সেই জন্যই কোম্পানি কয়েকজন পার্ট-টাইম পরামর্শদাতাকে রেখেছে যারা পেশায় মূলত ডাক্তার। ঝৌ রু জি তাঁদের একজন। বয়স তিরিশের কোঠায়, শুরুর দিকে। ডাক্তারদের মধ্যে সবচেয়ে অল্প বয়সী আর সবচেয়ে বেশি কম্পিউটারে সড়গড়।
ঝৌ রু জি বসে পড়লো মিন হুয়ের উল্টোদিকে। হেসে বললো, “আবার সল্টেড ক্রিস্পি চিকেন আর মিট বান কেনো? মেনুতে তো আরো অন্য পদও আছে, আপনি অন্য কিছু অর্ডার করতে পারেন না?”
“আপনি কী খান?”
“সেলেরি লিলি।” বলেই নিজের লাঞ্চ বক্স খুলে একটা সাদা, একটা সবুজ পদ, নিচে রাখা ভাত দেখালেন।
সেলেরি লিলি |
“মাঝে মধ্যে মাংসও খাই।”
মিন হুয়ে তখনও ভেবে চলে ছিলো যে এপিআইগুলো লিখবে কিকরে। সে চাই ছিলো ঝটপট খাওয়া শেষ করে অফিসে ফিরে কাজ শুরু করতে। সেইজন্য দুটো কামড়ে বানটা মুখে গুঁজে দিলো।
“আস্তে খান। ঠিক আছে?” ঝৌ রু জি আর থাকতে পারলেন না, “যদি এমন তাড়াহুড়ো করে ভাতরুটির মতো প্রচুর শর্করা ভরা খাবার খান তবে নিশ্চিত আপনার ব্লাড সুগার দুম করে বেড়ে যাবে আর আপনার অগ্ন্যাশয়ের ওপরে ব্যাপক চাপ তৈরি হবে সে কথা জানেন নিশ্চয়ই। মুখের মধ্যে খাবারটা যথেষ্ট চেবানো হলো না, খাবারটা যথেষ্ট লালায় ভিজল না। বেশ কিছু ক্ষতিকর আর বিষাক্ত উপাদান মোটেই দূর হলো না। সেগুলো সব আপনার শরীরে ঢুকে যাবে।”
ভয়ের কথাটা যখন সেই বিষয়ের বিশেষজ্ঞের থেকে শুনলো, তখন মিন হুয়ে কথাটাকে গুরুত্ব না দিয়ে পারলো না। ধীরে ধীরে চিবিয়ে খেতে শুরু করলো।
“ভালো। প্রায় একই ব্যাপার। খাওয়া মাত্র বসে পড়বেন না। একটু হাঁটবেন খাবার পরে। না হলে চট করে ফ্যাটি লিভার, ডায়াবিটিস, হাইপারলিপিডেমিয়া …”
মিন হুয়ে বাধা না দিয়ে পারলো না, “আমি আপনার রোগী নয়। আমাকে এতো কিছু বলছেন কেনো?”
“সাও জঁ বলছিলেন যে কোম্পানির পরিকল্পনাগুলোর একটা হলো এআই ব্যবহার করে ব্রেস্ট ক্যান্সারের একটা ইমেজ স্ক্রিনিং সিস্টেম বানানো। ওঁর আশা এই ব্যাপারটাতে আমি পরামর্শদাতা হিসেবে কাজ করবো। যাই হোক … দায়িত্বে আপনি আছেন তো?”
“ফু সংসাই সাও আমাকে কিছু জানান নি এখনো এ ব্যাপারে।” মিন হুয়ে বললো নিজের আঙুল চাটতে চাটতে, “ওঁর কাছে অগুণতি টিম কাজ করে। মন হয়, এই কাজটা অন্য কাউকে দিয়েছেন উনি।”
“নিশ্চয়ই আপনি।” ধীরে ধীরে সেলেরি চিবোতে চিবোতে বললেন ঝৌ রু জি, “ওঁরা সবাই বললেন আপনি দুর্দান্ত, না -বললেন, আপনি সব চেয়ে সেরা।”
“তাহলে আমি ওঁকে জিজ্ঞেস করবো, যখন রাতে ওঁর সাথে আমার দেখা হবে।”
“আপনি আজ রাতে ওঁর বাড়িতে যাচ্ছেন?”
“হ্যাঁ।”
“উনি আমাকেও যেতে বলেছেন।”
“ওহ্।” মিন হুয়ে ভাবতে শুরু করলো যে কখন থেকে কাজ নিয়ে কথা বলতে বলতে ঊর্ধতনের বাড়ির কথা এসে পড়লো, আর অবাক না হয়ে পারলো না, "কেনো? রাতের খাবারের নিমন্ত্রণে ব্রেস্ট ক্যান্সার নিয়ে আলোচনা কেনো? এতো মন খারাপ হয়ে যাবে!”
“আহ্।”
“উনি বোধ হয় আমাদের জুটি বানানোর চেষ্টা করছেন।” চোখ পিটপিট করে বললেন ঝৌ রু জি। “গতকাল উনি স্পষ্ট করে জানতে চাইলেন যে আমি আমার ব্যক্তিগত সমস্যার সমাধানের দিকে একটুও এগোতে পেরেছি কিনা।”
মিন হুয়ে ওঁর আঙুলের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করলো, “আপনি অবিবাহিত?”
“একবার বিয়ে করে ছিলাম।” ঝৌ রু জি ঠোঁট কুঁচকোলেন, “আমার বৌ ভাবতো যে আমি বড্ডো বেশি সময় দিই কাজে। বলতো যে আমি আমার পরিবারের কোনো যত্নই নিই না। কাজের পরে আমি ঘুমিয়ে পড়ি, ওঁর প্রতি কোনো মনোযোগই দিই না।”
ব্যাপারটা বেশ সোজাসাপ্টা।
মিন হুয়ে হেসে প্রশ্ন করলো, “মাসে ক ঘন্টা কাজ করেন আপনি?”
“তিনশো ঘন্টা।”
“ব্যস্ত থাকলে আমিও তাই করি।”
“সেই জন্য আমরা একসাথে থাকলে ব্যাপারটা বেশ মানানসই হবে। আপনি আমাকে অবহেলা করবেন, আমি তার তোয়াক্কাই করবো না। পরস্পরের বিরুদ্ধে অনুযোগের সুযোগ নেই।”
“যেহেতু পরস্পরকে অবহেলাই করবেন, তবে আর একসাথে থাকা কেনো? একলা থাকলেই তো হয়, তাই না?”
“তা সত্ত্বেও যেটুকু সময় খালি থাকে তখন একলা লাগে। জীবনে কেবল কাজটাই সব নয়। আপনার কিছু বিশ্রাম আর বিনোদনও প্রয়োজন। তাই না?”
“মানছি।”
“আপনার পরিস্থিতি কী?”
উনি বিষয়টা বদলালেন, “আপনিও একলা?”
“আগে গর্ভবতী।”
“আমি কিচ্ছু মনে করি না।”
“কী?”
“আমার কিচ্ছু যায় আসে না আপনি আগে থেকেই গর্ভবতী হলে। আমি বাচ্চা পছন্দ করি। যতো বেশি হয়। ততোই ভালো।”
মিন হুয়ে মুখ তুলে তাকালো, ভাবলো উনি বোধ হয় ঠাট্টা করছেন। আর ওঁকে মনোযোগ দিয়ে না দেখে থাকতে পারলো না। যদিও তত্ত্বের সাথে তুলনা করলে ওঁকে সুদর্শন সুপুরুষ বলা যায় না মোটেই, ঝৌ রু জির চেহারা বলিষ্ঠ, চোখ-নাক-ঠোঁট- কপাল বেশ কাটা কাটা, পৌরুষের মাধুর্য মাখা। চোখ জোড়া ঘুমন্ত রেশম পোকার মতো, যেনো ভাঙা চাঁদ, বিশেষ করে সুন্দর হয়ে ওঠে হাসলে। ইয়াং বেই বেই বলেছিলো যে উনি খুব অহঙ্কারী। কিন্তু মিন হুয়ের মনে হয়েছে দিব্যি মেশা যায়। এই মাত্র মিন হুয়ের মনে পড়ে গেলো যে সে যদ্দিন কোম্পানিতে কাজ করবে, তদ্দিন প্রায় রোজই দুপুরে সে ঝৌ রু জির মুখোমুখি হয়ে যাবে।
মিন হুয়ে ওঁকে কোনো আশা দিতে চায় না। তাই ও হালকা চালে বললো, “আমি খুব ব্যস্ত। প্রেমে পড়ার সময় নেই মোটেই।”
“অদ্ভুত তো?” মৃদু হেসে বললেন ঝৌ রু জি, “তাহলে আপনি গর্ভবতী হলেন কিভাবে?”
“...”
“আপনি ঠিক করে ফেলেছেন যে বাচ্চাকে আপনি একাই বড়ো করবেন?”
“হ্যাঁ।”
“আমি কাজে লাগতে পারি।”
“দরকার নেই। ধন্যবাদ।”
ওঁর চোখে হালকা দুশ্চিন্তা, “আমি শুনেছি যে আপনার মা-বাবা মারা গেছেন। আপনার কী কোনো ভাই বা বোন আছেন? ভালো বন্ধু আছে, মানে বান্ধবী আর কী?”
“কোনোটাই নেই।”
“কোনো দিনই নেই নাকি ছাড়াছাড়ি হয়ে গেছে?”
“কোনো দিনই নেই।”
“রাতে আমরা সাও জঁর বাড়িতে খেতে যাচ্ছি। তাই তো?”
মিন হুয়েকে দেখে ঝৌ রু জি প্রসঙ্গটা তাড়াতাড়ি বদলানোর চেষ্টা করলেন, “যাই হোক, ওঁর উদ্দেশ্য ভালো।”
“নিশ্চয়ই যাচ্ছি। আমরা কাজের কথা আলোচনা করবো। যাই হোক আমরা নিশ্চয়ই ভবিষ্যতে কোনো প্রজেক্টে একসাথে কাজ করবো, নিশ্চয়ই।” মিন হুয়ে একদম কেজো আবহাওয়ার সুরে কথাটা বললো।
“তা হলে আমি ব্রেস্ট ক্যান্সার থেকে লিম্ফনোড মেটাস্ট্যাসিস কী করে হয় সেই কথা বলবো না হয়।” হাসলো ঝৌ রু জি।
“আমি জানি, আপনারা যারা কম্পিউটার প্রোগ্রাম লেখেন, আপনাদের একমাত্র লক্ষ্য হলো ডাক্তারদের নিশ্চিহ্ন করে দেওয়া।”
“এক্কেবারেই না।” মিন হুয়ে শুধরে দিলো, “এই সবকিছুই আপনাদের কাজের বোঝা কমানোর জন্য।”
খাওয়া হয়ে গেলে দুজনে এলিভেটরে করে অফিসে ফিরে গেলো একসাথে, কথা বলতে বলতে, হাসতে হাসতে, সারাটা পথ, যেনো কিছুই হয় নি, আর তাঁরা যেনো কোনোভাবেই বিব্রত হয় নি একটু আগে যা ঘটেছে সেই ব্যাপার নিয়ে।
এই প্রথম মিন হুয়ে কোনো পুরষকে দেখলো অনায়াসে এগোতে আর অক্লেশে পেছোতে।
~~~~~~~~~~~~
সম্পূর্ণ বই বিনামূল্যে : https://dl.bookfunnel.com/lcj5vznt96
Link to Previous Post in the Series : https://projectionofnaught.blogspot.com/2024/08/jpda-chapter-18.html
Link to following Post in the Series : https://projectionofnaught.blogspot.com/2024/08/jpda-chapter-20.html
No comments:
Post a Comment