২৭. চেন জিয়া জুন
জেলের আসামীরা চাইলেই কারুর সাথে দেখা করতে পারে না। মিন হুয়ে তো চেন জিয়া জুনের আত্মীয়ও নয়, বন্ধুও নয়। সেই জন্য ওকে ওর কোম্পানির থেকে একটা সার্টিফিকেট নিতে হলো ও বা’অ্যানের কর্মী বলে। তারপরে বিনচেং জেলের প্রশাসনিক দপ্তরে ওর বিশেষ দরখাস্তের প্রক্রিয়া শুরু হলো।
পরিজন খুঁজে বার করার ওয়েবসাইটের শাও ওয়ানের মতে, যদিও চেন জিয়া জুনের সাথে তার পালক মা-বাবার সম্পর্ক খারাপ ছিলো, ও কখনোই জানতো না যে ওকে দত্তক নেওয়া হয়েছে। যতোদিন না বিচার শুরু হয় আর পুলিশ ওর পালক মা-বাবার সাথে যোগাযোগ করে ততোদিন ও সত্যিটা জানতোই না। জেলের রক্ষীরা ওকে অনেক করে বুঝিয়ে ওকে রক্তের নমুনা দিতে বলে ওর পরিবার পরিজন খুঁজে বার করার জন্য। শুরুতে ওর খুবই অনিচ্ছা ছিলো। বারবার দ্বিধা করছিলো। ভাবছিলো যে এই রক্তের নমুনা দেওয়া, পরিজনের খোঁজ করা এই সবই অর্থহীন। কিন্তু ও মোটেই আশা করে নি যে ডিএনএ-র ব্লাইন্ড কম্প্যারিসনে তিন সেকেন্ডের মধ্যে সাফল্য আসবে।
খবরটা পাওয়া মাত্র শাও ওয়ান যোগাযোগ করে চেন জিয়া জুনের সাথে। ওকে জানায় যে ওর দিদি লি চুন মিয়াও-এর অবস্থাটা। এও বলে যে লি চিন মিয়াও চার বছরের বেশি নিখোঁজ হয়ে গেছে বাণের জলে ভেসে যাওয়া একটা মানুষকে বাঁচাতে গিয়ে।
যে মেয়েটাকে লি চুন মিয়াও বাঁচায় তার নাম মিন হুয়ে। মিন হুয়ে আশা করে আছে যে ও চেন জিয়া জুনের সাথে যোগাযোগ করতে পারবে। এমনকি মিন হুয়ে এটাও জানিয়েছে যে ও আশা করে যে চেন জিয়া জুন জেল থেকে বেরোনোর পর যেভাবে জীবন কাটাতে চায় যাতে সেভাবে জীবন কাটাতে পারে তার সব ব্যবস্থা মিন হুয়েই করবে।
অপ্রত্যাশিত হলেও, চেন জিয়া জুন জানায় যে সে মিন হুয়ের সাথে দেখা করতে চায় না। এমনকি সে মিন হুয়ের সাথে কোনো রকম যোগাযোগ করতে চায় না।
মিন হুয়ে দায়িত্ব দেয় শাও ওয়ানকেই চেন জিয়া জুনের কাছে আবেদন রাখার জন্য আর তাকে রাজি করানোর জন্য।
ইন্টারভিউ-এর ঘরটা দেখতে ব্যাঙ্কের কাউন্টারের মতো। একসারি রিইনফোর্সড কাঁচ দিয়ে আধাআধি করা। প্রায় কুড়ি মিনিট অপেক্ষা করার পরে মিন হুয়েকে ডাকা হলো একটা জানলায় বসার জন্য। কাঁচের দেওয়ালে অন্য পারে মিন হুয়ে দেখলো একটা মাঝারি মাপের গাঁট্টাগোট্টা চেহারার যুবক তার সামনে বসে আছে। হালকা নীল রঙের জেলের পোষাক পরে, মুখের আকার তার অগভীর। ছোটো চোখ, চওড়া নাক, অল্প মোটা ঠোঁট, ঠিক সু তিয়াঁর মতো। একটা ছাঁচে ঢালা দক্ষিণী মুখশ্রী। বাঁদিকের চিবুকের ওপরের একটা কাটা দাগ একটা বিশ্রী ধারণা দেয় যে ছেলেটা উড়নচন্ডে রাস্তার ছেলে। জেলের রক্ষীদের মতে, চেহারা ছোট্টোখাট্টো হলেও ছেলে মারপিটে ওস্তাদ। জেলে কেউ ওকে উস্কানি দিতে সাহস করে না।
শাও ওয়ান অনেক করে বুঝিয়েছে মিন হুয়েকে সতর্ক থাকার জন্য, “সু তিয়াঁ ভালো মানুষ ছিলো মানে এই নয় যে তার ভাইও ভালো মানুষ। চেন জিয়া জুনের ব্যাপারটা এরকম যে ও পালিয়ে যায় বাড়ি থেকে, রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়ায়, বিশৃঙ্খল, হিংস্র আর মারকুটে, যার মানে দাঁড়ালো যে ওঁর কাছে যাওয়া খুব সহজ নয়, যদি সে খুব ভালো মানুষ হয়, তবুও। ব্যাপারটা খুব সহজ নয়। হয়তো আপনার যথেষ্ট মানসিক প্রস্তুতি থাকবে না আর আপনার সহানুভূতিকে নিংড়ে ওঁ নিজের উদ্দেশ্য সিদ্ধির চেষ্টা করতে পারে। কিংবা অপ্রত্যাশিত কিছু যদি করে বসে, তাহলে আপনি মুস্কিলে পড়ে যাবেন।”
নিশ্চয়ই আগে যতোবার শাও ওয়ান কথা বলেছেন চেন জিয়া জুনের সাথে, সে সব থেকে চেন জিয়া জুন সম্পর্কে তাঁর ধারণাটা খুব সুখের হয় নি।
“না, আমি ওঁর সাথে দেখা করবই।” জোর দিয়ে বলে মিন হুয়ে।
বন্দী আর তাঁর সাথে দেখা করতে যাওয়া লোকেরা সরাসরি কথা বলতে পারে না। তারা মাইক্রোফোন দিয়ে কথা বলে। একসারি বন্দীর পিছনে দাঁড়িয়ে থাকে দু সারি জেলরক্ষী।
মিন হুয়েকে দেখে চেন জিয়া জুন রিসিভারটা তুলে নিলো। অন্যমনস্ক ভাবে বসলো পিছনে হেলে, যেনো ওঁর মনে হলো যে দুজনকার মধ্যেকার দূরত্বটা বড়োই কম, সেটা একটু বাড়ানো দরকার।
“আপনি কী জিয়া জুন?” উত্তেজনায় কেঁপে গেলো মিন হুয়ের গলা, “চেন জিয়া জুন?”
উল্টোদিকে বয়সা যুবক উদাসীনভাবে ঘাড় নাড়লেন।
“হাই, জিয়া জুন, আমি মিন হুয়ে। আমি বেশ কয়েক বছর ধরে আপনাকে খুঁজছি। দেখা হয়ে ভালো লাগলো।” উৎসাহ নিয়ে বললো মিন হুয়ে।
চেন জিয়া জুন উত্তরে একটা হালকা, “হম্” বললো।
“আপনার দিদি আর আমি - আমাদের দেখা হয়ে ছিলো একটা বাসে। তাঁর স্বভাব ভারি উষ্ণ, মনে তাঁর গভীর করুণা। সে দিন -”
“- বাকিটা আমাকে শাও ওয়ান বলেছেন।”
ঝপ করে বলে উঠলো চেন জিয়া জুন, মিন হুয়ের কথার মধ্যে, “আপনাকে বাঁচাতে সে জলে ঝাঁপিয়ে পড়ে আর ডুবে যায়।”
“ওহ্, না, না, না, না,” মিন হুয়ে খুব তাড়াহুড়ো করে হাত নাড়তে থাকে, “উনি হারিয়ে গেছেন। আমরা ওঁকে এখনো খুঁজে পাই নি।”
“আমরা খুঁজি পাই নি চার বছর, তাই না?”
“... হ্যাঁ।”
“এটাই মৃত্যু।”
“আমি শুনেছি উনি ভালো সাঁতার জানতেন।” মিন হুয়ে জানে না কী বলবে, “হতে পারে … যা হোক … আশা ছাড়বেন না।”
চেন জিয়া জুন যে ভাবে তাকালো মিন হুয়ের দিকে তার মানেটা দাঁড়ায়, “আপনি যাই বলুন না কেনো,আমি বিশ্বাস করছি না।”
পুরো তিন মিনিটের জন্য একটা অস্বস্তিকর নিস্তব্ধতা নেমে এলো দুজনের মধ্যে আর মিন হুয়ে তার দুটো হাত কচলাতে লাগলো অস্বস্তিতে।
“কেমন দেখতে ছিলো ওকে?” জানতে চাইলো চেন জিয়া জুন।
“আপনার মতোই। কথা বলতো অন্য সুরে, অন্য ধাঁচের উচ্চারণে।”
মিন হুয়ে হাতের ছোটো ব্যাগ থেকে একটা খাম বার করে গুঁজে দিলো জানলার নিচের নালী মতো জায়গাটাতে, “এখানে ওঁর কিছু ছবি আছে। আপনি দেখতে পারেন।”
ছবিগুলো মিন হুয়ে পেয়েছে ঝাও য়িং মেই-এর থেকে। ঝাও য়িং মেই ছবিগুলো ডাউনলোড করেছে সমাজ মাধ্যমে সু তিয়াঁর বন্ধুচক্রের থেকে। তারপর সেগুলোকে কাগজে ছাপিয়ে পাঠিয়েছে মিন হুয়েকে। সব মিলিয়ে পনেরোটা ছবি। সু তিয়াঁর বন্ধুচক্রে কোনো বিষয়বস্তু নেই, প্রায় কোনো শব্দ নেই, শুধু ল্যান্ডস্কেপ ছবি আছে।
চেন জিয়া জুন ছবিগুলো বার করে নিলো, দেখলো সব কটা ছবি, একটা একটা করে, একটাও কথা না বলে। দেখা হয়ে গেলে, ছবিগুলোকে আবার খামে ভরে ফেললো, দেওয়ালে টাঙানো ঘড়ির দিকে তাকালো, বললো, “ধন্যবাদ। আপনার কাজ হয়ে গেছে তো?”
“দাঁড়ান, আমি শুনেছি আপনি দু মাসের মধ্যে বেরিয়ে পড়ছেন, তাই না?”
“হম্।”
“তাহলে আমি নিতে আসবো আপনাকে।” গম্ভীরভাবে বললো মিন হুয়ে।
চেন জিয়া জুন থমকে গেলো, "কেনো?”
“আমি বিনচেং-এ থাকি। সেটা বেশ সুবিধের ব্যাপার। তাছাড়া আপনার জিয়েজিয়ে হারিয়ে গেছেন আমাকে বাঁচাতে গিয়ে, এবং আমি … ঋণী তাঁর কাছে আমার প্রাণের জন্য।”
“তার সাথে আমার সম্পর্ক কী?”
চেন জিয়ে জুন খুব সচেতনভাবে নিজের কব্জিতে মোচড় দিলেন, তা নয়, কিন্তু হাড় মড়মড় করার শব্দ হলো, “আমি আপনার প্রাণ বাঁচাই নি।”
“আপনি তাঁর সত্যিকারের ভাই, সহোদর।” উৎসাহ নিয়ে বোঝাতে লাগলো মিন হুয়ে, “আপনি জানেন আপনার জিয়েজিয়ে কখনো দেশ ছেড়ে অন্য কোথাও যান নি আপনাকে খোঁজার জন্য। উনি আপনাকে খুঁজছেন গত কুড়ি বছরেরও বেশি সময় ধরে। কক্ষণো হাল ছাড়েন নি।”
“সে তো এখন মৃত।”
“যদি উনি আমাকে বাঁচানোর চেষ্টা না করতেন, তা হলে হয়তো আপনাদের দেখা হতো, আপনার আবার একসাথে একটা পারিবারিক বাঁধনে থাকতেন।”
মিন হুয়ের চোখ উপছে উঠলো জলে, মিন হুয়ে ঘন ঘন ঢোক গিলতে লাগলো। মিন হুয়ে নিজের নাক খামচে ধরলো, “উনি আপনার … এই পৃথিবীতে … একমাত্র স্বজন।”
“কিসের পারিবারিক বাঁধন, কিসের স্বজন? মানুষ মরে যায় যখন তখন যেমন জ্বলতে থাকা আলো নিভে যায়। এসব বলার মানে কী?”
চেন জিয়া জুনের কথার সুর মোটেই খুব চড়া নয়, তবুও কথাটা মিন হুয়ের বুকে বড়ো ঘা দিলো।
“আমি জানি যে আমার জন্যই আপনাদের জীবনের অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে গেছে। কিন্তু আমি পূরণ করতে চাই সে ক্ষতি। আমি আপনার সমস্ত দায় নেবো আপনার জিয়েজিয়ের হয়ে।” কথাগুলোর মধ্যে ফুটে উঠলো মিন হুয়ের আন্তরিকতা, “খুব সামান্য হলেও এটা ছাড়া আমি আর কিইবা করতে পারি! দয়া করে আমাকে একটা সুযোগ দিন আপনার পাশে দাঁড়ানোর! … এখানে থাকতে কী কী অসুবিধে হচ্ছে? আপনার কী টাকাপয়সার দরকার আছে?”
“কোনো অসুবিধে নেই। কোনো কিছুর দরকার নেই।”
“তাহলে আপনার জন্য আমি কী করতে পারি? মানে আপনি জেল থেকে বেরোনোর পরে?”
সাক্ষাতকার চললো তিরিশ মিনিট ধরে। তবুও মিন হুয়ের মনে হলো যেনো তা যথেষ্ট নয়। সে যেনো বলা শুরুই করতে পারে নি যা সে বলতে এসে ছিলো, “আপনার কোনো পরিকল্পনা আছে? যেমন, কাজ খোঁজা? আমি এই দুমাস আগাম ব্যবস্থা করতে পারি আপনি যাতে প্রস্তুতি নিতে পারেন। তাহলে আপনি এখান থেকে বেরোনোর পর সব কিছু খুব নির্বিঘ্নে হবে।”
“আমি নিজেই নিজের ব্যবস্থা করতে পারি।” অবশেষে চেন জিয়া জুনের স্বর নরম হলো, “আপনাকে দুশ্চিন্তা করতে হবে না।”
“জিয়া জুন …শুনুন আমার কথা, আমি আপনাকে সাহায্য করতে পারবো। আমার অর্থনৈতিক পরিস্থিতিও খারাপ নয়।”
“মাপ করবেন, “ জোর করে মিন হুয়েকে থামালো চেন জিয়া জুন, “আমার জিয়েজিয়ে কী আপনার প্রাণ বাঁচানোর জন্য টাকা নিয়ে ছিলো?”
“না, না।”
“যেহেতু আমার জিয়েজিয়ে আপনার প্রাণ কোনো শর্তে বাঁচায় নি, নিজের ইচ্ছেয় বাঁচিয়ে ছিলো, তাঁর দিদি হিসেবে আমি তাঁর ইচ্ছেকে সম্মান জানাই। সুতরাং, মিন শওজিয়ে, আমার কোনো পাওনা নেই আপনার কাছে। আপনি যেতে পারেন। আপনাকে আর কখনো আমার সাথে দেখা করতে আসতে হবে না।”
ফোনটা চেন জিয়া জুন রেখে দিতে যাচ্ছে দেখে ধড়ফড় করে মিন হুয়ে বললো, “দাঁড়ান, আরেকটা কথা আপনার জানা দরকার।”
“বলুন।”
“আপনার জিয়েজিয়ের প্রেমিক, ছোটোবেলার প্রিয়সখা - না, নান ফঙিয়ো নয়, কিন্তু ওয়েহুংফু, শিন ছি। তিনি আপনার জন্য চিন্তিত আর তিনিও আপনাকে খুঁজছেন।”
“বেশ।”
“শিন ছির এখন ইউনাইটেড স্টেটসে থাকার কথা। আপনি যদি তাঁর সাথে যোগাযোগ করতে চান, তবে আমি আপনাকে একটা বিজনেস কার্ড দিতে পারি।”
মিন হুয়ে মনে মনে ভাবছে যে যদি জিয়া জুনের অস্বস্তি থাকে মিন হুয়ের থেকে কোনো সাহায্য নিতে, তবে সে নিশ্চয়ই শিন ছির সাহায্য নিতে পারবে।
“আমেরিকা?” হেলান দিয়ে পিছিয়ে বসে, পা দুটোকে কাঁচি দিলো জিয়া জুন, “বাদ দিন। সে অনেক দূর। উনি কী জানেন যে আমার জিয়েজিয়ে মারা গেছে?”
“হারিয়ে গেছেন।” আবার শোধরালো মিন হুয়ে, “শিন ছি জানে ব্যাপারটা।”
“যাচ্ছেতাই, আপনি সত্যিটা মানতে পারছেন না কেনো?”
অধৈর্য হয়ে বললো জিয়া জুন, “একটা মানুষ জলে পড়ে গেছে আর চার বছর ধরে তাকে খুঁজে পাওয়া যায় নি। আপনি এখনো বলবেন সে হারিয়ে গেছে? আপনি কী চান যে আমি আপনার হয়ে আদালতে গিয়ে মৃত ঘোষণার আবেদন করি না হলে আপনি হাল ছাড়বেন না?”
“যতোক্ষণ না শরীরটা পাওয়া যাচ্ছে … সব সম্ভাবনাই রয়ে যাচ্ছে।”
“এমন ভেবে যদি আপনি আরাম পান।”
“জিয়া জুন -”
“আপনার সাথে আমার জিয়েজিয়ের আলাপ হয়ে ছিলো ঘটনাচক্রে। তিনি আপনার প্রাণ বাঁচিয়েছেন, কিন্তু আপনাদের কোনো সম্পর্কই নেই একে অপরের সাথে। আপনার আর আমার মধ্যেও তাই। আমাদের কোনো সম্পর্ক নেই একে অপরের সাথে, আর আমি চাইও না আপনার সাথে আমার কোনো সম্পর্ক হোক। যাচ্ছেতাই, রক্ত পরীক্ষাটা করানোই উচিৎ হয় নি আমার!” একটু তির্যক ভঙ্গীতেই কথাটা বললো সে, “আমি সব ধরনের খারাপ পরিস্থিতির কথা ভেবেছি, কিন্তু আমি কখনো ভাবতেও পারি নি যে আমাকে ছেলেধরায় চুরি করে ছিলো, আমার বাবা মারা গেছেন, আমার মা মারা গেছেন, এমনকি আমার একমাত্র জিয়েজিয়েও মারা গেছেন। এই রক্ত পরীক্ষা সম্পূর্ণ ব্যর্থ!”
“আপনার ভরা পরিবার আর নেই,” নরম সুরে বললো মিন হুয়ে, “কিন্তু আমি তো আপনার জিয়েজিয়ে হতে চাই। আর শিন ছি, তিনিও আপনার স্বজন। যদিও তিনি আপনার জিয়েফু হন নি, কিন্তু তিনি নিশ্চয় আপনার গ্যগ্য হবেন। তিনি - ওহ্ না - আমরা - থাকবো আপনার পাশে সব সময়ে, আপনার জিয়েজিয়ে নেই তো কী হয়েছে! বিশ্বাস করুন আমার কথা। আমরা মন থেকে আপনার স্বজন হতে চাই।”
“কোনো দরকার নেই।” জোর দিয়ে বললো জিয়া জুন, “শুধু, নিজেদের জীবনে ভালোভাবে বাঁচুন, এই চাই।”
“জিয়া জুন” ধড়ফড় করে বললো মিন হুয়ে, ওর ভয় হচ্ছিলো জিয়া জুন বুঝি ওর পৃথিবী থেকে মিলিয়ে যাবে অচেনা অজানার দেশে যেই মাত্র সে জেল থেকে ছাড়া পাবে, “আমি শাও ওয়ান-এর থেকে শুনেছি যে আপনি ফুজিয়াঁতে বড়ো হয়েছেন। আপনি বিনচেং-এ এলেন কী করে? আপনি কী বিনচেং-এই থাকবেন? নাকি আপনি অন্য কোথাও যাবেন?”
“আমি বিনচেং-এ আছি পাঁচ বছর। এখান থেকে বেরিয়ে আমি বিনচেং-এই থাকব।”
মিন হুয়ে মনে মনে একটা হিসেব করে নিলো। ওর সাথে যখন সু তিয়াঁর আলাপ হয়ে ছিলো তখনই চেন জিয়া জুন বিনচেং-এ ছিলো। হঠাৎ ওর অনেক কিছু মনে পড়ে গেলো, জানতে চাইলো, “বিনচেং-এ আসার আগে কোথায় ছিলেন?”
“আমি অনেক জায়গায় ঘুরে বেরিয়েছি। সবই ছোটো নয় তো মাঝারি মাপের শহর।”
“আপনি কী কখনো য়ুখঁতে ছিলেন?”
“হ্যাঁ। বিনচেং-এ আসার ঠিক আগে। আমি য়ুখঁতে থেকেছি আর কাজ করেছি সিকিউরিটি গার্ড হিসেবে। একটা জিংওয়ে কোম্পানির হয়ে। তিন বছর।”
মিন হুয়ে হৃৎস্পন্দন এক মূহুর্তের জন্য বন্ধ হয়ে গেলো যেনো।
“আপনি জানেন আমার সাথে দেখা হবার আগে আপনার জিয়েজিয়ে য়ুখঁ স্টেশন থেকে বাসে চড়ে ছিলো?”
মিন হুয়ের গলার স্বর কাঁপছিলো, “উনি নিশ্চয়ই আপনি কোথায় আছেন তা জানতে পেরে ছিলেন। উনি য়ুখঁ গিয়ে ছিলেন আপনাকে খুঁজতে। অথবা সেখানে আপনার পরিচিত কেউ আছেন, যাঁরা জানিয়ে ছিলেন ওঁকে যে আপনি বিনচেং-এ চলে গেছেন আর বিনচেং-এই আছেন। সেই জন্যই উনি ঐ বাসটায় চড়ে ছিলেন।”
য়ুখঁ - বিনচেং |
ভ্রু কুঁচকে খানিকক্ষণ ভাবলো চেন জিয়া জুন, তারপর বললো ঘাড় নেড়ে, “তা সম্ভব। আমার কিছু জানাশোনা আছে য়ুখঁতে। যদিও পরে আর আমার সাথে কারও কোনো যোগাযোগ নেই। কেউ কেউ জানে যে আমি বিনচেং-এ এসেছি।”
সুতরাং মিন হুয়ে নিশ্চিত হলো যে সু তিয়াঁ হারিয়ে গেছে ঠিক তার ভাইকে খুঁজে পাবার আগে আর তার প্রেমিকের সাথে দেখা করার আগে।
অবাক হবার কিছুই নেই যে সেদিন তার মন মেজাজ খুবই ভালো ছিলো। মিন হুয়ে কিছুতেই না ভেবে পারলো না যে সু তিয়াঁর জন্য ব্যাপারটা একটা দ্বিগুণ খুশির কারণ ছিলো।
~~~~~~~~~~~~
সম্পূর্ণ বই বিনামূল্যে : https://dl.bookfunnel.com/lcj5vznt96
Link to Previous Post in the Series : https://projectionofnaught.blogspot.com/2024/09/jpda-chapter-26.html
Link to following Post in the Series : https://projectionofnaught.blogspot.com/2024/09/jpda-chapter-28.html
No comments:
Post a Comment