Thursday, September 5, 2024

JPDA - Chapter 30

 ৩০. অনুভূতি আর সংবেদনশীলতা



মিন হুয়ের মনে হচ্ছিলো যে এই পৃথিবীতে ওর সব থেকে গভীর মন খারাপের কারণ ওর শত্রুর ক্ষমতা কেবল বেড়েই চলেছে। দুঃখ গভীরতর হচ্ছে কারণ এই শত্রুকে এখন অনুরোধ করতে হবে।

এর মধ্যে কোথাও না কোথাও কখনো না কখনো নতজানু হতেই হবে।

এই মূহুর্তে তার মনের মধ্যে কেবল কলহ। 

মিন হুয়ে : বাচ্চার জীবন বাঁচানোর জন্য, ও নিশ্চয়ই অনুরোধ করবে চেং ছিরাং-কে, তাতে যতো বিব্রতই হতে হোক না কেনো ওকে।

ক্ষ্যাপাটে বোধ : যদি কোনো উপায় থাকে যাতে চেং ছিরাং-কে অনুরোধ না করলেও চলে, আমি সেই উপায়টাই নেবো। যদি তাতে হাজতবাস জোটে আর, আর আমাকে অপরাধ করতে হয় তাও।

যুক্তি বোধ : এটা একটা জীবন আর মৃত্যুর প্রশ্ন। ঠিক বা ভুল, আবেগ আর আত্মমর্যাদা তার নিরিখে কিছুই নয়।

ক্ষ্যাপাটে বোধ : এখনো চেং ছিরাং-কে বাদ দেওয়া যায়। আমি নিজেই সিঙ্গাপুরে যাবো আর চেং গুয়াং য়ি-কে খুঁজে বার করবো। চিকিৎসার নীতিশাস্ত্র জানেন যিনি, তিনি নিশ্চয়ই বসে থাকবেন না। আমি ওঁর প্রতি সহানুভূতি দেখাব, ওঁকে যুক্তি দিয়ে বোঝাব, না হলে একশো চড় কষাবো …

যুক্তি বোধ : কল্পনার গাছ থেকে নাম। তুই কেবল একাই নস যার ছেলের হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। সমস্ত অসুস্থ বাচ্চার মায়েরই সেরা ডাক্তারটাকে চাই। যদি চেং গুয়াং য়িয়ের সাথে কথা বলা এতই সোজা হতো তো তাঁর সমস্ত সময়টাই দেওয়া থাকতো রুগীদের, তাঁর সময় থাকতো না সিঙ্গাপুরে গিয়ে মাসাধিক কাটানোর। 

ক্ষ্যাপাটে বোধ : তুই কী আগ্রাসী পদ্ধতি নিতে পারবি কিছু?

যুক্তি বোধ : মাপ কর, তোর হাতে কিছু আছে কী যা আমাকে উত্তেজিত করবে?

ক্ষ্যাপাটে বোধ : আহ্‌হ্‌হ্‌হ্‌হ্‌

শেষে আবেগ হার মানল যুক্তির কাছে। যুক্তি বোধ হারিয়ে দিলো ক্ষ্যাপাটে বোধকে। মিন হুয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েই ফেললো যে ও চেং ছিরাং-কে অনুরোধ করবে মধ্যস্থতা করার জন্য।

স্টারবাক্সে হঠাৎ দেখা হয়ে যাবার সময়টুকু ছাড়া গত চার বছরে মিন হুয়ে একটাও কথা বলে নি চেং ছিরাং-এর সাথে। মুছে ফেলে ছিলো চেং ছিরাং-এর ফোন নাম্বার, উইচ্যাটে ব্লক করে ছিলো, আনফলো করে ছিলো আর পুড়িয়ে দিয়ে ছিলো চেং ছিরাং-এর বিজনেস কার্ড। ওর জীবন থেকে সম্পূর্ণ হারিয়ে গিয়ে ছিলো চেং ছিরাং।

কিন্তু কাজের ক্ষেত্রে লোকটাকে সম্পূর্ণ এড়িয়ে যাবার উপায় ছিলো না। যেহেতু সবাই তারা বিজ্ঞান প্রযুক্তি ক্ষেত্রে কাজ করে, সবাই সফ্‌টওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার আর সবাই এআই নিয়ে কাজ করছে।

এই কয়েক বছরে গুয়ান ছাও-ও তাদের কাজের লক্ষ্য বদলে নিয়েছে এআই মেডিক্যাল কেয়ারের দিকে। বাজার ধরার জন্য, ওরা প্রচুর খরচা করেছে প্ল্যাটফর্ম বানাতে আর ইকোসিস্টেম তৈরি করতে। তাই এখনো গুয়ান ছাও কারিগরি ক্ষেত্রে যথার্থ নেতৃত্বের দাবি রাখে। এমনকি মিন হুয়ের ঊর্ধতন হে হাই শিয়াং, খুব মন দিয়ে লক্ষ্য করে চলেছেন গুয়ান ছাও-এর কাজকারবার। তিনি চেং ছিরাং-কে চেনেন আর থেকে থেকেই নানান মিটিং-এ দুজনকার দেখা হয়। সম্ভবত সাও মু মনে করিয়ে দিয়েছে বলে, আর মিন হুয়ের বিরক্তি উদ্রেক করবেন না বলে, তিনি চেং ছিরাং-এর নাম করেন না সরাসরি।

‘চেং ছিরাং’ নামের জায়গাটা নিয়ে নিয়েছে “গুয়ান ছাও ইন্টারন্যাশন্যল’।

“সবার আস্থা থাকা উচিত প্রযুক্তির স্টকে। দেখো তোমরা ‘গুয়ান ছাও ইন্টারন্যাশনাল’ কতোটা বেড়েছে।”

“গুয়ান ছাও এই সেদিন বাজারে একটা নতুন প্রোডাক্ট এনেছে। সব্বার উচিৎ এটাকে মন দিয়ে নজর করা। এটা অনেক বেশি ইন্টারন্যাশন্যাল স্ট্যান্ডার্ডের কাছাকাছি। হয়তো এটাই এখনকার চলতি প্রবণতা।”

“গুয়ান ছাও আমাদের থেকেও বেশি খবর রাখতে পারে কারণ ওদের একটা প্ল্যাটফর্ম আছে আর সেটা একটা বড়ো প্ল্যাটফর্ম। ঝেং ল্যান ইন্টারনেটে তাঁর ক্যারিয়র শুরু করে ছিলেন প্রচুর বিনিয়োগ নিয়ে। এখন তিনি হাসপাতালগুলোর সঙ্গে তথ্য সংগ্রহের জন্য কাজ করতে উৎসাহ দেখাচ্ছেন, খরচ করতে চাইছেন - টাকা থাকলে সব কাজই করা সহজ। - আহ্‌!”

যখন হে হাই শিয়াং গুয়ান ছাও-এর কথা বলেন, মিন হুয়ের অভিব্যক্তিটা নিরুৎসাহে ভরে যায়, উত্তর দেয় না কোনো, কোনো মন্তব্য করে না, এবং মাথা নিচু করে চা খাওয়াতে মন দেয় …

চেং ছিরাং-এর সাথে যোগাযোগের সমস্ত রাস্তা এতো যত্ন নিয়ে মিন হুয়ে বন্ধ করে ছিলো যে অনেকক্ষণ খুঁজেও ও কিছুতেই চেন ছি রাং-এর ফোন নম্বর খুঁজে পেলো না। হাসপাতালে সু ছনের রোগশয্যার পাশে বসে, মিন হুয়ে সব দিক তলিয়ে ভাবলো, আর ঠিক করলো যে ও ফোন করবে ওয়েই ইয়ঁ চেং-কে। ওয়েই ইয়ঁ চেং হলো চেং ছিরাং-এর সহায়ক। ওয়েই ইয়ঁ চেং মিন হুয়ের জুনিয়র, ওর থেকে তিন বছর পরে পড়াশোনা করতো, গুয়ান ছাও-তে কাজ শুরু করে ছিলো মিন হুয়ের সঙ্গেই প্রায়, আন্ডারগ্র্যাজুয়েট ক্লাস পাশ করেই। যেহেতু দুজনে একে অপরকে কলেজের দিন থেকে চেনে, দু জনের মধ্যে একটা সুসম্পর্ক ছিলো।

যখন ওয়েই ইয়ঁ চেং ওর গ্র্যাজুয়েসন প্রজেক্ট করছিলো, তখন ও একটা সমস্যায় পড়ে ছিলো, যেটা ও সমাধান করতে পারছিলো না। মিন হুয়ে ওকে টিউশন দিয়ে ছিলো সেই সময়ে। তার ফলে ও শুধু পরীক্ষাতে পাশই করে নি, ও গ্র্যাজুয়েশনের সময়ে একটা ডিসাইন এক্সেলেন্স অ্যাওয়ার্ডও পেয়ে ছিলো।

গুয়ান ছাও ছাড়ার পর থেকে মিন হুয়ে আর ওয়েই ইয়ঁ চেং আর কখনো যোগাযোগ করে নি। কিন্তু ওয়েই ইয়ঁ চেং-এর নম্বরটা তখনও মিন হুয়ের ফোনে রাখা ছিলো। পরে ও শুনেছিলো যে মামলার পরে ঝেং য়ি তিং কোনো মহিলা সহায়ক রাখতে দেয় নি চেং ছিরাং-কে, যদি বা মহিলা অ্যাসিস্ট্যান্ট রাখতে দিয়ে ছিলো তো সুন্দরী অ্যাসিস্ট্যান্টদের কাজ করতে দিতো না। যে পুরুষটি দীর্ঘদিনের জন্য অ্যাসিস্ট্যান্ট রয়ে গেছে পদোন্নতির পর থেকে সে হলো ওয়েই ইয়ঁ চেং। ওর মুখ ভর্তি ব্রণর দাগ আছে, ওর দাঁত উঁচু, সবই ঝেং য়ি তিং-এর সন্দেহ এড়াতে।



“হাই, দাজিয়ে, হজিউ বুজিয়া!” ফোনের অন্য পাশে ওয়েই ইয়ঁ চেং-এর গলার স্বর আগের থেকে অনেক বেশি পরিণত আর অভিজ্ঞ শোনাল। 

“ইয়ঁ চেং, আমি চেং ছিরাং-কে কিছু বলতে চাই।” মিন হুয়ের সময় নেই সম্ভাষণের, “তুই কী আমাকে ওঁর ফোন নাম্বার দিতে পারবি?”

“মোবাইল ফোন নাম্বার? সে তো বদলায় নি। তুমি তো ওঁর প্রিয় সতীর্থ ছিলে, তোমার কাছে আছে নিশ্চয়ই?” আনন্দের সঙ্গেই বললো ওয়েই ইয়ঁ চেং।

“আমি মুছে দিয়েছি, আর আমার মনেও পড়ছে না।” মিন হুয়ে এক মূহুর্তের জন্য থামলো, তারপর গম্ভীর স্বরে বললো, “আমার প্রয়োজনটা জরুরী।”

চেং ছিরাং-এর মোবাইল ফোন নম্বর নিয়ে কোম্পানিতে কোনো গোপণীয়তা নেই, গুয়ান ছাও-এর অনেকেই জানে। একটু ক্ষণ দ্বিধা করলো ওয়েই ইয়ঁ চেং, ভাবছিলো যে গ্র্যাজুয়েশনে থিসিসের সময় থেকে মিন হুয়ের কাছে ওর ঋণ রয়ে গেছে, তাই ও মিন হুয়েকে চেং ছিরাং-এর ফোন নম্বরটা নিশ্চয়ই বলে দিলো, কিন্তু শেষে মনে করাতে ভুলল না, “বোলো না আমি দিয়েছি ফোন নম্বরটা।”

“বুঝলাম। এরপর যখন আমরা দেখা করবো, আমি নিশ্চয়ই তোকে ডিনার খাওয়াবো।”

“সাহস হবে না অতো। ল্বব্যাঁ জানতে পারলে … উনি জানান দেন শত্রুর সঙ্গে সহযোগিতা করাটা অপরাধ।”

“রাখ তো।’

“সত্যিই। এখন ল্বব্যানিয়াঁ খুব কড়া হাতে ল্বব্যাঁকে রাখেন।”

“ঠিক আছে। তোর অবস্থা খারাপ হোক তা আমি চাই না। ভালো থাকিস।”

“হ্যাঁ।”

মিন হুয়ে নম্বরটা নিজের মোবাইল থেকেই ডায়াল করলো। পর পর তিনবার। কিন্তু কেউ সাড়া দিলো না। খারাপ লাগলেও, মিন হুয়েকে আবার ফিরে ওয়েই ইয়ঁ চেং-কেই ফোন করতে হলো।

“উনি সম্ভবত এখানে নেই। আর কোনো ভাবে ওঁর সাথে যোগাযোগ করা যায় কী?”

“পিং’আঁ স্ট্রিটে কেএফসির পাশে একটা জিম আছে। উনি প্রায়ই সেখানে সাঁতার কাটতে যান কাজের পরে।”

“আজ যাবেন?

“খুব বেশি আগে নয়, তবে উনি বেরিয়ে গেছেন আজ, একটু আগে।”

মিন হুয়ে খুব দুশ্চিন্তায় পড়েছে। দুশ্চিন্তায় ওর গলার স্বর আটকে আটকে আসছিলো, ওয়েই ইয়ঁ চেং শুনতে পেলো, এক মূহুর্ত চুপ থেকে ও বললো, “উনি নিশ্চয়ই এখন সাঁতার কাটছেন।”

মিন হুয়ে চেনে জায়গাটা। হাতের ঘড়ি দেখলো, সময়টা কাজ শেষ হয়ে যাবার পরে তো বটেই। সু ছনের দায়িত্ব ভালো করে জিয়া জুনকে বুঝিয়ে দিলো, একটা ট্যাক্সি নিয়ে চললো জিমে।

ভিড়ের সময় চলছে।

অনেকক্ষণের জন্য ট্যাক্সিটা রাস্তায় দাঁড়িয়ে রইলো। অগত্যা মিন হুয়ে নেমে পড়লো ট্যাক্সি থেকে বদলে একটা তিন চাকা মোটর সাইকেল ভাড়া করলো। মোটর সাইকেলের চালক মিন হুয়েকে নানান গলি দিয়ে নিয়ে চললো, শেষে হাজির করলো জিমের ফটকে।

তিন চাকা মোটর সাইকেল


মেম্বারশিপ কার্ড ছাড়া জিমে ঢোকা যাবে না। সেই জন্য তক্ষুণি মিন হুয়েকে একটা ট্রায়াল কার্ড কিনতে হলো। লকার রুমে জুতো ছেড়ে খালি পায়ে স্যুইমিং পুলে গেলো।

সাত-আট জন সাঁতার কাটছিলো স্যুইমিং পুলে। কিছু পুরুষ, কিছু মহিলা। মিন হুয়ে পুলের ধারে দাঁড়িয়ে খুঁজতে শুরু করলো। বেশি সময় লাগলো না, ওর চোখে পড়ে গেলো কোথায় চেং ছিরাং সাঁতার কাটছে।

পুরো বিনচেং-এ চেং ছিরাং-এর মতো সুদর্শন পুরুষ খুব কমই আছে। চেং ছিরাং-এর পিঠের দিকটাও সুদর্শন। 



চেং ছিরাং সব সময়ে সব কাজে প্রস্তুত থাকে হালের নতুন গ্যাজেট ব্যবহার করার জন্য। ব্যবহার করেও। রুপোর আস্তরণ লাগানো সাঁতারের চশমা, সিলিকোন স্যুইমিং ক্যাপ, ইয়ারপ্লাগস্‌, স্পিডো রিস্টব্যান্ড, কালো রঙের হাঙরের চামড়ার টাইট স্যুইমিং ট্রাঙ্ক পরে আছে, পেশাদার সাঁতারুদের মতো। সেই আবরণ ফুঁড়ে জেগে উঠছে পিঠের পেশি আর সরু পা।

সাঁতারের একটা গলিতে বারবার সাঁতার দিয়ে যাতায়ার করছে, দেখে মনে হচ্ছে, একাই, কোনো সঙ্গী ছাড়াই।

প্রায় কুড়ি মিনিট পরে, চেং ছিরাং গুটি গুটি এলো পুলের ধারে, বিশ্রাম নিতে। যখন চোখ তুলে তাকালো, তখন মিন হুয়ে ওর চোখের সামনে।

গা থেকে টপ টপ করে জল পড়ছে, তবু হেঁটে এলো মিন হুয়ের সামনে, একটা তোয়ালে তুলে নিয়ে, গায়ের জল মুছলো, শান্ত স্বরে জানতে চাইলো, “তোমার জন্য কিছু করতে পারি কী, মিন হুয়ে?”

ঘাতক। লোকটার অ্যাড্রেনালিন বয়ে চলে উল্টোদিকে। ওর সামনের লোকজন যতো ভয় পেতে থাকে, ওর আচরণ ততো শান্ত হতে থাকে। যখন ও কোনো জঘন্য কাজ করে, মিছে কথা বলে, তখনো ওর মুখ লাল হয় না।

মিন হুয়ে এতো পছন্দ করতো লোকটার মুখ থেকে আসা শব্দ দুটো : মিন হুয়ে। লোকটা ইচ্ছে করে দুটো শব্দের মধ্যে থামত, যেনো পিয়ানো বাজাতে বাজাতে একটু বিশ্রাম করে নেওয়া।

মিন হুয়ে কখনো অস্বীকার করে না যে যখন লোকটার সঙ্গে ওর প্রথম আলাপ হয়ে ছিলো তখন লোকটার জন্য ওর মনে তীব্র শ্রদ্ধা আবার খানিকটা মমতাও ছিলো। মিন হুয়ে জানতো যে লোকটা বিবাহিত, তাই মিন হুয়ের আবেগ মমতাতেই সীমাবদ্ধ ছিলো।

সেই দিন পর্যন্ত, যেদিন অফিসে, লোকটা জোর করে মিন হুয়েকে চুমু খেয়ে ছিলো, জোর করে মিন হুয়ের মুখের ভেতরে ঠুসে দিয়ে ছিলো নিজের জিভ …

“হ্যাঁ।” মিন হুয়ে জোরে জোরে মাথা ঝাঁকালো, মাথার মধ্যে ভিড় করে আসা সমস্ত জঘন্য বিরক্তিকর ব্যাপারগুলোকে ঝেড়ে ফেলার জন্য। ভুলে যেতে হবে এখন।

“তুমি কী আমাকে এখনই বলবে? নাকি আমি জামাকাপড় বদলে আসব, তারপর কোথাও বসে আস্তে ধীরে কথা বলতে বলতে বলবে?”

লোকটা খুব বিনয়ী। কথার মধ্যে কোনো তাড়াহুড়ো নেই।

“এখন বলব।” মিন হুয়ের কানে বাজল নিজের কাঁপতে থাকা কন্ঠস্বর।

“বেশ, বলো তাহলে।” লোকটা তখনই খেয়াল করেছে, যেনো উৎসাহের কিছু পেয়েছে। হালকা হাসি খেলে যাচ্ছে লোকটার মুখে।

“আমি আপনার অনুগ্রহ চাইতে এসেছি।” মিন হুয়ে আপ্রাণ চেষ্টা করছে যাতে ওর শব্দগুলো মৃদু অকম্পিত স্বরে বের হয় গলা থেকে। কিন্তু কোনো কারণে ওর কথাগুলো শোনালো দায়ে পড়ে বাধ্য যেনো, যেনো ও ভেতরে ভেতরে ও ফুঁসছে।

“সত্যি?” লোকটা বিদ্রুপ করলো নাকের ভেতর থেকে শব্দ করে। সেই বিদ্রুপ বজায় রেখেই বললো, "কেনো মনে হলো তোমার যে আমি তোমাকে সাহায্য করবো, এই অনুগ্রহ কিংবা কোনো ব্যাপারে? মিন হুয়ে? তুমি আমাকে যা ভুগিয়েছো, আমার মানসম্মানে কালি ছিটিয়েছো, যদি তোমার মনে না থাকে, শেষ যখন স্টারবাক্সে দেখা হয়ে ছিলো আমাদের, তুমি তখনো বলেছিলে যে তুমি আমাকে পরাস্ত করবে, বাধ্য করবে আমাকে মাটিতে হাঁটু মুড়ে বসতে, আমি তোমাকে বাপ বাপ বলে ছেড়ে দিতে বলবো …”

“আমার ছেলের একটা জন্মগত হৃদরোগ আছে। ভাল্‌ভ সারাইয়ের জন্য সার্জারির প্রয়োজন …”

লোকটা তখনই বুঝে গেলো, “তুমি আমার বাবার খোঁজে এসেছো?”

“সম্ভব?”

“উনি তো এখন দেশে নেই।”

“কোনো ভাবে ওঁকে দেশে ফিরিয়ে আনতে পারেন এই অপরেসনটা করানোর জন্য? আমি যাতায়াতের প্লেন ভাড়া দেবো। এবং যদি অন্য কোনো শর্ত থাকে, তাও আমি মেনে নিতে রাজি।”

লোকটার মুখ থেকে হঠাৎ হাসি মিলিয়ে গেলো। সে ভয়ানক গম্ভীর হয়ে গেলো, “কখন ফেরত আনতে চাও ওঁকে?”

“যতো তাড়াতাড়ি হয়, ততোই ভালো।”

পুলের পাশে টেবিলে একটা ওয়াটারপ্রুফ পাউচ ছিলো। তার মধ্যে থেকে সেলফোন বার করে যখন চেং ছিরাং দেখলো যে তিনটে মিস্‌ড কল তখন বলে ফেললো, “ওহ্‌” তারপর মিন হুয়ের দিকে ফিরে তাকিয়ে বললো, “এ অতি বিরল ঘটনা! তুমি আমাকে কৃপা করেছো দেখছি, বার বার ফোন কল করার।”

“একটা মানুষের জীবন মরণের প্রশ্ন। আমি ভীষণ উদ্বিগ্ন।”

“তাহলে আমি আমার বাবাকে জিজ্ঞেস করবো যে ওঁর সময় হবে কিনা।”

মোবাইল ফোনে দ্রুত টাইপ করলেন। মিনিট পাঁচেক পরে বললেন, “উনি কাল আসবেন। দুপুর পার করে। অপেরসনের আগে রুগীকে দেখাটা জরুরী। উনি রুগীকে দেখতে চান আগে। খুব তাড়াতাড়ি হলে পরশু। এখন তোমার ছেলে কোন হাসপাতালে আছে?”

“বিনচেং ইউনিভার্সিটির হাসপাতালে।”

“অপেরসন হবে কিন্তু আঁ জিতে। বাবা ব্যবস্থা করবেন ট্রান্সফারের। তুমি তোমার ছেলেকে কাল রাতে আঁ জি হাসপাতালের কার্ডিওথোরাসিক ডিপার্টমেন্টে পাঠিয়ে দিতে পারো।”

“ঠিক আছে।”

“চিন্তা কোরো না। আমার বাবা বছরে তিনশোরও বেশি অপরেসন করেন। আর এ ধরনের অপেরশন ওঁর কাছে খুব সহজ।”

“শিয়া শিয়া।” মিন হুয়ে স্বস্তির শ্বাস ফেললো, অবশেষে ওর কথা বলার ভঙ্গিও খানিক নরম হলো, “আমি ওঁর প্লেনের টিকিট কিনে দিচ্ছি।”

“না, আমি এই মাত্র প্লেনের টিকিট কিনে দিয়েছি।”

সব কিছু ভালো ভাবে মিটে গেলো, তাই না?

মিন হুয়ে তাকালো চেং ছিরাং-এর দিকে। মনের মধ্যে ঝড় তুলেছে হাজারো জটিল ভাবনা। ও নিশ্চিত যে ওর স্বর আর বাচনভঙ্গি শুরুর থেকে শেষ পর্যন্ত হিমশীতল ছিলো, ও কখনো “ভিক্ষা” করে নি। 

চেং ছিরাং কোনো সমস্যা তৈরি না করে কয়েক মিনিটে সমস্যাটার সমাধান করে দিলো।

মিন হুয়ে না ভেবে থাকতে পারলো না হয়তো লোকটা নিজের ভুল বুঝতে পেরেছে। মিন হুয়ে কী ওকে ক্ষমা করে দিতে পারবে?

“তাহলে … আমি আর আপনার ব্যায়ামে ব্যাঘাত করবো না।”

মিন হুয়ে ভাবছিলো হাসপাতালের বিছানায় পড়ে থাকা সু ছনের কথা। ওর আর কিছু বলার ছিলো না। ও চাই ছিলো যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব বেরোতে, “ঝেইজিয়া।”

“দাঁড়াও।”

মিন হুয়ে ঘুরতে যাচ্ছিলো, কিন্তু দাঁড়িয়ে পড়লো।

“তুমি আমাকে যা করতে বলেছো আমি করে দিয়েছি।” চেং ছিরাং ফোনটাকে ওয়াটারপ্রুফ ব্যাগে ভরে দিলো, তাকালো মিন হুয়ের দিকে আধো হাসি নিয়ে, “এবার আমার পালা তোমার থেকে কিছু চাওয়ার।”

মিন হুয়ের শিরদাঁড়া শক্ত হয়ে উঠলো, “বেশ, বলুন কী চান, কী করতে হবে আমাকে।”

“সামনের শনিবারে একটা এআই ইন্ডাস্ট্রি রিসেপসন আছে। বেশ বড়ো আয়োজন। য়ি তিং আর আমি যাবো ওখানে। তাহলে তুমিও এসো।”

শিল্পক্ষেত্রের সম্বর্ধনাতে যেতে হবে? মিন হুয়ের মনে হলো তাতে তো কোনো সমস্যা নেই, যদিও ও কেবল গবেষণার কথা যে সম্মেলনে হয় সেখানেই যায়। যারা ব্যবসায়িক যোগাযোগ বাড়াতে চায় তারা এই জাতীয় রিসেপসনে যেতে পছন্দ করে, যেমন হে হাই শিয়াং।

“ব্যস, শুধু রিসেপসনে যেতে হবে?”

“মোটেই না। এখনো অবধি য়ি তিং আমাকে সন্দেহ করে।”

“ওঁর সন্দেহ তো অমূলক নয়।” মিন হুয়ে বললো সোজাসুজি।

“আমি আশা করছি যে তুমি কিছু একটা করবে আমাকে নির্দোষ প্রমাণ করার জন্য।”

মিন হুয়ে তাকালো চেং ছিরাং-এর দিকে। এতো অবাক হলো যে অনেক ক্ষণ পর্যন্ত ও কিছুই বলতে পারলো না। শেষে জানতে চাইলো, “যেমন?”

“যেমন, তোমাকে দেখতে ঠান্ডা বরফের মতো। আসলে তুমি ছিনাল। যখন তুমি একটা সুদর্শন পুরুষ দেখলে আর থাকতে পারো না, বিশেষ করে আমার মতো সুপুরুষ, সুদর্শন কাউকে …”

মিন হুয়ে, “...”

“আমার চরিত্রে কলঙ্ক দিয়েছো তুমি। তোমাকেই সেটা সাফ করতে হবে সেদিন। কল্পনায় কোনো লাগাম দিও না, যতোটা সম্ভব সৃজনশীলতা দিয়ে কাজটা করে ফেলো।”

“মাপ করবেন,” মিন হুয়ে উপহাস করলো, “কাজটা সারা হবে?”

“আমি বলছি কাজটা সারা হবে তাই সারা হবে, আমি যতক্ষণ না বলছি এটা সারা হয় নি, ততক্ষণ হবে না।”

“Fuক ইউ।”

“তুমি কী চাও যে আমি টিকিটটা ক্যান্সেল করে দি?” ভ্রূ তুলে জানতে চাইলো চেং ছিরাং, “মিন হুয়ে, তুমি যাবে কি যাবে না রিসেপসনে?”

মিন হুয়ে দাঁর কিড়মিড় করে বললো, “যাবো।”

“লক্ষী মেয়ে।” গালে হালকা চাপড় দিলো চেং ছিরাং, “আমি জানি কে কার বাপ।”

মিন হুয়ে মনে হলো যেনো ওর সারা গায়ে কেউ গরম ম্যাগমা ঢেলে দিয়েছে। আর ও পাথর হয়ে গেছে। দাঁড়িয়ে রইলো স্থির।

দেখলো চেং ছিরাং কেমন সিটি দিতে দিতে চলে গেলো।




~~~~~~~~~~~~

সম্পূর্ণ বই বিনামূল্যে : https://dl.bookfunnel.com/lcj5vznt96

Link to Previous Post in the Series : https://projectionofnaught.blogspot.com/2024/09/jpda-chapter-29.html

Link to following Post in the Series : https://projectionofnaught.blogspot.com/2024/09/jpda-chapter-31.html

No comments:

Post a Comment

Readers Loved