৮. দাবা খেলা
মিন হুয়ে আঁতকে উঠলো, “কী?”
বিব্রত হয়ে পড়লো। আগে হলে এতক্ষণে সে শিন ছির মুখে একটা চড় কষিয়ে দিয়েছে কোনো কথা না বলে। কিন্তু এখন মিন হুয়েকে প্রথমেই ভাবতে হচ্ছে তার জায়গায় সু তিয়াঁ থাকলে কী রেগে যেতো?
নিশ্চয়ই না। শিন ছির সঙ্গে, এই মূহুর্তে, আনন্দ আত্মহারা অবস্থায়, সু তিয়াঁ নিশ্চয়ই মেনে নিতো শিন ছির আব্দার, তাই না? অন্তত মিন হুয়ের মনে, সু তিয়াঁর ডায়েরি পরে, সু তিয়াঁর যে ছবিটা তৈরি হয়েছে, সেটা শিন ছির অনুগত অনুচরের ছবি। সু তিয়াঁ শিন ছিকে খুব মান্যি করে, তার মেজাজ সহ্য করে, তার অধৈর্য আচরণ ক্ষমা করে দেয়, শিন ছি রেগে গেলে তাকে শান্ত করে, আপ্রাণ চেষ্টা করে শিন ছির গোঁয়ার্তুমিতে খারাপ হয়ে যাওয়া সম্পর্কগুলোকে মেরামত করতে।
মিন হুয়ে মনস্থির করে ফেলে যে খেলাটা ও পুরোটাই খেলবে।
সামনে ঝুঁকে শিন ছির চোখে চোখ রেখে, নিষ্পলক দৃষ্টিতে বলে, “জামার চেনটা পিঠের দিকে।”
শিন ছি এক মূহুর্তের জন্য একটু চমকে ওঠে। সে আশা করে নি ‘সু তিয়াঁ’-রূপী মিন হুয়ে তাকে যথাযথ উত্তর দেবে। বিনয়ে জানতে চায়, “আমি কী-?”
মিন হুয়ে ঘাড় নেড়ে সম্মতি জানায়।
শিন ছি হাত বাড়িয়ে চেনটা গোড়া অবধি টেনে দেয়। একটা ‘চাক’ করে শব্দ হয় আর সিল্কের জামাটা খসে পড়ে মিন হুয়ের কাঁধ থেকে। মিন হুয়ে ব্রা-এর হুক খুলে দিয়ে, বুক চিতিয়ে শান্ত চোখে তাকায় শিন ছির দিকে।
সু তিয়াঁর শরীরে এমন কোনো বিশেষ চিহ্ন ছিলো না যা দিয়ে ওকে চেনা যায়। সেটা চেন শিয়েংশঁ যখন ল্যান জিন গতে ফোন করে কথা বলে ছিলেন, তখনই জানা গিয়ে ছিলো। তখন উদ্দেশ্য ছিলো ভবিষ্যতে যদি কোনো অবশেষ পাওয়া যায় সু তিয়াঁর তখন তার থেকে যাতে চিনে নেওয়া যায় সু তিয়াঁকে তার একটা নথি বানানো। কাজটা খানিকটা নিয়মরক্ষাও বটে। ল্যান জিন গের ল্বব্যানিয়াঁ বেশ সহযোগিতা করে ছিলেন তখন। যে মেয়েরা লি চুন মিয়াও-এর সাথে থাকতো, তিনি জিজ্ঞাসাবাদ করে ছিলেন তাদেরকে লি চুন মিয়াও-এর শরীরের পরিচিতি চিহ্নের ব্যাপারে। তিনি বিশেষ জিজ্ঞাসাবাদ করে ছিলেন ঝাও য়িং মেইকে। মেয়েদের বাসায় যেহেতু সবাই একটা স্নানঘর ব্যবহার করতো, মেয়েরা অনেকেই লিন চুন মিয়াও অর্থাৎ সু তিয়াঁকে স্নানের সময়ে দেখেছে। সেই মেয়েরা জানিয়ে ছিলো যে লি চুন মিয়াও-এর শরীরে কোনো জন্মদাগ, কোনো ক্ষত, কোনো তিল বা স্পষ্ট কোনো দাগ কারুর নজরে কখনো পড়ে নি।
শিন ছি চোখ কুঁচকে, খুঁটিয়ে দেখতে লাগলো মিন হুয়ের শরীরের ঊর্ধাংশ, যেমন ছবি আঁকিয়েরা দেখে মডেলকে, তেমন করে। কিন্তু কিচ্ছু ছোঁয় না। পাঁচ সেকেন্ড পরে নিঃশব্দে মিন হুয়ের সাথে হাত লাগিয়ে ব্রা-এর হুক লাগিয়ে ফেলে, জামাটা গায়ে গলিয়ে চেন টেনে দেয় ঘাড় অবধি। তারপর মিন হুয়ের বাঁ কাঁধে আলতো টোকা দেয়, যেনো ধুলো লেগে ছিলো, সেটা ঝেড়ে দিলো।
মিন হুয়ে জানতে চাইলো, “কোনো পরিবর্তন ঘটেছে?”
শিন ছি বললো, “বড্ডো বড়ো। আমি চিনতে পারছি না একদম।”
মিন হুয়ে টিপ্পনি দিলো, “তুই তো কাউকে মুখ দেখেও চিনতে পারতিস না।”
শিন ছি মেনে নিলো, “আমি কোনোদিন তোর মুখটাও স্পষ্ট দেখি নি। তোর উচ্চারণ বেশ জোরালো হয়েছে। আর এটা-”
দেখালো বুকের দিকে, “একেবারেই আগের মতো নেই।”
মিন হুয়ে জানতে চাইলো, “খেয়াল করেছিস?”
শিন ছি জানালো, “আমি আগে দেখেছি।”
তারপর মনে করানোর চেষ্টা করলো, “মনে নেই তোর? সেবার গ্রীষ্মে? বঁ ফায়ার পার্টিতে? আমরা একে অপরের -”
পরের কথাগুলো শিন ছি বললো না। সু তিয়াঁও এই কথাটা ডায়েরিতে লেখে নি। মিন হুয়ের খানিক ধারণা ছিলো যে সু তিয়াঁ আর শিন ছির সম্পর্কটা শুধুমাত্র বন্ধুত্ব ছিলো না, তার থেকে গভীরতর কিছু ছিলো। মিন হুয়ের আর কোনো উপায় রইলো না সে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো, “তেরো বছর।”
শিন ছি দোহার দিলো, “হ্যাঁ, তেরো বছর।”
তারপর দাবা খেলা ফের শুরু করে বললো, “তুই কোনোদিন দাবাও জিতিস নি আগে।”
মিন হুয়ে জুসে একটা চুমুক দিয়ে বললো, “সে তো আগের কথা।”
শিন ছি কৌতুহলী, “যখন আমি ছিলাম না এখানে, তখন কী তুই কোনো ক্লাবে যেতিস, আর প্রায়ই খেলতিস?”
মিন হুয়ে জানালো, “ নাহ্, প্রায়ই খেলতাম না।”
শিন ছি তর্ক জুড়ে দিলো, “তাহলে দাবা খেলার এতো বাড়াবাড়ি রকমের ওস্তাদি রপ্ত করলি কী করে?”
মিন হুয়ে তর্কের মোড় ঘোরালো, “তুই কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারছিস না যে কেউ তোর থেকে বেশি বুদ্ধিমান, বিশেষ করে একটা মেয়ে, তাই না?”
শিন ছি অস্বীকার করলো, “আমি বিশ্বাস করি।”
জুসটা খেতে খেতে গলা পরিষ্কার করে নিয়ে মিন হুয়ে বললো, “পরিবর্তনটা যেভাবে হয়েছে সেটা শোন। একদিন আমি পাহাড়ে গিয়ে ছিলাম মাশরুম তুলতে। আমি জানতাম না যে কোনটা তুলব, কোনটা তুলবো না। আমি পাহাড়ের চূড়াটা বেশ টের পাচ্ছিলাম। হঠাৎ করে -”
মিন হুয়ে ইচ্ছে করে থেমে গেলো, শিন ছির কৌতুহলে শান দেবার জন্য। শিন ছি অধৈর্য, “হলোটা কী? তুই খাড়া পাহাড় থেকে পড়ে গেলি?”
মিন হুয়ে কাঁধ ঝাঁকিয়ে দুহাত ছড়িয়ে বললো, “না। আমার মাথায় বাজ পড়ে ছিলো। তারপরে বাড়িতে ফিরে থেকেই আমি টের পেতে লাগলাম যে আমার আইকিউ বেড়ে চলেছে।”
শিন ছি হাসলো, “এটা কী যা-তা বাজে কথা?”
মিন হুয়ে ঝগড়া করতে লাগলো, "কেনো তোর মনে হলো যে ছোটোবেলায় আমি তোর তুলনায় মাথা মোটা ছিলাম? সেটাও কী যা-তা বাজে কথা নয়?”
শিন ছি বোঝাতে লাগলো, “ছোটোবেলায় মনে হতো যে তোর শুধু খেলাধুলো করতেই ভালো লাগে। তুই হোমওয়ার্কও আমার থেকে টুকতিস।”
মিন হুয়ের ঝট করে মনে পড়ে গেলো সু তিয়াঁর ডায়েরির একটা কথা, “সেই অঙ্ক পরীক্ষাটার কথা মনে পড়ে তোর যেটায় তোর থেকে টুকেও আমি বেশি নম্বর পেয়ে ছিলাম তোর থেকে?”
শিন ছি নিজের মাথা চাপড়াতে চাপড়াতে বললো, “মনে আছে। মনে আছে। আর তখন তুই বলেছিলি-”
মিন হুয়ে কথা কেড়ে নিলো, “- যে পরিবারের দায়দায়িত্ব বওয়ার কাজটা তোর। আমাকে তো অলিম্পিকের ট্রেনিং-এ মন দিতে হবে।”
শিন ছি সমর্থন করলো, “ঠিকই। সেই সময়ে এটাই ঠিক ছিলো। আমরা একমত হয়ে ছিলাম পরিবারের শ্রমবিভাজনটা কেমন হবে সেই ব্যাপারে।”
মিন হুয়ে হাসলো।
শিন ছি তাকালো মিন হুয়ের চোখের ভেতরে, যেনো মগজের সব খাঁজভাঁজে থাকা চিন্তাগুলো পড়ে নেবে, “আমারই ভুল। আমার উচিৎ হয় নি তোকে একই পুরোনো চোখে দেখা। য়ে লাওশি বলে ছিলেন যে তুই বাড়ি ফিরে গেছিস। তোর দেশে, দূর্গম পাহাড়ে। জীবনযাপণ বেশ কঠিন। তাই আমি ভেবে ছিলাম যে তুই দেশে ফিরে যাবার পরে তোর হয়তো আর পড়াশোনার সুযোগই হয় নি। অথবা আরো খারাপ কিছু, তোকে হয়তো পেটের তাগিদে অল্পবয়সেই রোজগার শুরু করতে হয়েছে, এমনকি হয়তো তোকে জোর করে বিয়ে দিয়ে দেওয়া হয়েছে …. এই যে কদিন তুই আসিস নি, আমি মরিয়া হয়ে তোর অপেক্ষা করেছি। অনেক সময় তো এও মনে হয়েছে যে তোর হয়তো বাচ্চাকাচ্চা হয়ে গেছে, তুই আর এখানে আসবি না ……”
অনেক বছর বিদেশে থাকার কারণে শিন ছির ম্যান্ডারিন খুব চলতি ম্যান্ডারিন নয়। আর সব সময়ে ওর উচ্চারণে বিদেশবাসের একটা আভাস রয়ে যাচ্ছে। কয়েকটা শব্দ উচ্চারণের সময়ে ও বেশ ইতস্তত করছে, যেনো ও নিশ্চিত নয় যে জিভটা ভাঁজ করার দরকার আছে কিনা, যেনো ওর মুখের মধ্যে কুঁচো পাথর আছে। কিন্তু ওর গলার স্বরটা ভীষণ আরামদায়ক, নিচু, নরম, অক্লেশে উঁচু আর নিচুতে খেলা করে। ও খুব বাকপটুও বটে। ভঙ্গিটা খানিক ছেলেভুলোনো, বিশেষত, জেদী গোঁয়ার, কাঁদুনে বাচ্চাকে ভোলানোর মতো।
মিন হুয়ে ধামা চাপা দেবার চেষ্টা করে, “ঠিক আছে। পাহাড়ের অবস্থা তুই যতোটা খারাপ ভাবছিস, ততোটা খারাপও নয় ……”
শিন ছি দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো, “আমি ভেবে ছিলাম যে আমি একাই ভীষণ বদলে গেছি। যা হোক আমি বিদেশে গিয়ে ছিলাম। আমি আশা করি নি যে তুই আমার থেকেও বেশি বদলে যাবি। তিয়াঁ তিয়াঁ, আমরা আর আগের মতো সেই তুই, সেই আমি নেই। আমাদের পরস্পরকে আরো বেশি ভালো করে জানা প্রয়োজন, যাতে আমরা বেশি ভালো করে একসাথে থাকতে পারি। আমি তো খুব আচমকা আচরণ করেছি আজ। তুই কী ভয় পেয়েছিস?”
তারপর কথা আরো এগোয় “কী করে ……”
যতো শিন ছি আত্মবীক্ষণে ডুব দেয়, নিজের মানসিকতার, আচরণের চুলচেরা বিচার করে চলে, ততো দুঃখ পেতে থাকে মিন হুয়ে। মিন হুয়ে সত্যি সু তিয়াঁ হবার ভান করতে চেয়ে ছিলো। কিন্তু ভান করার চেষ্টাটাই পুরো চেষ্টাটাকে মাটি করে দিচ্ছে। মিন হুয়ে থেকে থেকেই স্বমূর্তি ধরে ফেলছে। ওকে যা করতে হবে সেটা হলো যে সু তিয়াঁ সম্পর্কে শিন ছির বয়ে চলা ধারণাগুলোকে পুরো বদলে ফেলতে হবে। তাকে অন্য অনেক পরিবর্তনের সম্ভাবনা গ্রহণ করাতে হবে। আর তারপর “সু তিয়াঁ”-র মিন হুয়ে সংস্করণটা শিন ছির সামনে মেলে ধরতে হবে।
ডায়েরিটাকে ভিত করে, একটু গল্প মিশিয়ে, খুব মুসকিল হবে না শিন ছিকে ভুলিয়ে ভালিয়ে নিরাপদে ইউনাইটেড স্টেটসে ফেরত পাঠানো। অপরেসনের পর পুরো সুস্থ হয়ে উঠে শিন ছি যতো খুশি রাগতে পারে, গালাগালি করতে পারে। যা হোক একটা জীবন অন্তত বাঁচানো যাবে।
এসব ভাবতে ভাবতেই মিন হুয়ে দাবার বোর্ডের দিকে নজর ফেরাল, “এই বারে তুই শুরু কর চাল দিয়ে।”
শিন ছি একটা ঘুটি মুঠিতে নিলো আর সেটা মাঝবরাবর সেঁটে খেলা শুরু করে দিলো, “আমার প্রথম চাল।”
মিন হুয়ে চাললো, “ঘোড়া।”
শিন ছি চাল দিলো, “বড়ে।”
মিন হুয়ের পরের চাল, “রথ।”
মিন হুয়ে সৈন্যদল নিয়ে পালাতে লাগলো। শিন ছি সেই গতির সুযোগে একটা দান জিতে নিলো।
মিন হুয়ে প্রশংসা করলো, “সাত চালে রক্তারক্তি হবে দেখছি। দূর্দান্ত।”
শিন ছি হালকা হেসে বললো, “তুইও তো সাতটা চালে পুরো সেনার পাশ কাটিয়ে গেলি। তুইও ভালো খেলছিস। খুব চট করে দেখা যায় না যে কেউ নিজের জীবন বিপন্ন করে সেনাকে রক্ষা করছে।”
মিন হুয়ে উত্তর দিলো, “এটাই আমার ছক।”
শিন ছি প্রশংসা করলো, “সাহসী, চতুর।”
বেশ খানিক ভয়ানক খেলা হবার পরে, কান ঘেঁষে শিন ছি জিতলো। হাতের মুঠিতে একটা ঘুটি নিয়ে খানিক লোফালুফি করে, খানিক ভাবলো, তারপর হঠাৎ করে ভ্রু কুচকে প্রশ্ন করলো, “তিয়াঁ তিয়াঁ, তুই আমাকে ইচ্ছে করে জিতিয়ে দিস নি তো, কি রে?”
মিন হুয়ে জোর দিয়ে বললো, “মোটেই না।”
শিন ছি তর্ক করলো, “আগের ঘোড়াটা, তোর মতো যারা খেলে তাদের ক্ষেত্রে, মারা পড়ার কথা নয়।”
মিন হুয়ে আশ্বস্ত করলো, “...... একটা কৌশলের ভুল।”
শিন ছি অবিশ্বাসের চোখে তাকালো, কিন্তু কিছু বললো না এ ব্যাপারে। শুধু জিজ্ঞেস করলো, “আর এক বোর্ড?”
মিন হুয়ে ঝটপট মাথা নেড়ে আপত্তি করলো, “না। আমার খিদে পেয়েছে। আমি তাড়াতাড়ি ঘুমোতে যেতে চাই।”
শিন ছি চমকে উঠলো এক মুহুর্তের জন্য। হাতঘড়ি দেখলো, টেবিল থেকে মিন হুয়েকে মেনুকার্ডটা দিয়ে বললো, “তুই ঠিক কর কি খাবি। আমি রুম সার্ভিসে ফোন করছি।”
মিন হুয়ে একবাটি সি-ফুড পরিজ চাইলো শুধু। শিন ছি অর্ডার দিলো স্টিক, স্যালাড, আর রেড ওয়াইন। ওয়েটার যখন দিয়ে গেলো তখন বললো যে স্টিকটা প্লেটে পাঁচ মিনিট ঢাকা দেওয়া আছে আর এক্ষুণি খাওয়া যাবে। কথা বলা শেষ করে শিন ছির থেকে টিপ নিয়ে, ধন্যবাদ দিয়ে চলে গেলো।
দুজনে তখনই খেতে বসে পড়লো।
মিন হুয়ে পরিজে চুমুক দিতে দিতে দেখলো যে শিন ছি ধীরে ধীরে বিফ কাটছে। মিন হুয়ের সামনে বসে আছে ছেলেটা খাড়া, সুচারু ভঙ্গিমাতে খাচ্ছে, তার মুখের পাশের দিকটা দেখাচ্ছে রাজহাঁসের মতো মাধুর্য মাখা। আবার ছেলেটাকে দেখে মনে হচ্ছে যে সে একইসাথে ভীষণ আরামে আছে আবার খুব প্রভাবও ছড়াচ্ছে ঘরের আবহে যেনো। মিন হুয়ের একটা ধাঁধার মতো লাগছিলো যে একইসাথে দুটো আবহ কী করে শিন ছি ধরে রাখছে।
না বেশি না কম আঁচে ঝলসানো স্টিকটা থেকে ছিটকে ছিটকে গোলাপী রক্ত ঠিকরে বেরোচ্ছে। শিন ছির বেশ ভালো খিদে পেয়ে ছিলো। খুব উৎসাহ নিয়ে খাচ্ছিলও। তাকিয়ে দেখতে দেখতে মিন হুয়ের মাথা ঝিম ঝিম করে উঠলো। তাড়াহুড়ো করে মাথা নামিয়ে নিলো।
শিন ছি তখনই নজর করলো, ঝটপট রক্তটা দুটো পাতা দিয়ে ঢেকে দিলো। প্রশ্ন করলো, “তোর কি মাথা ঝিম ঝিম করছে?”
মিন হুয়ে বললো, “না রে। তেমন কিছু না।”
শিন ছি প্রসঙ্গ বদলালো, “স্টিকটা বেশ নরম, চেখে দেখবি নাকি?”
ঠোঁট কামড়ে মাথা নাড়লো মিন হুয়ে।
হাতের ছুরিটা নামিয়ে রেখে শিন ছি উদ্বেগে প্রশ্ন করলো, “ব্যাপারটা কী? তুই কি ঘামছিস? হাত পা কাঁপছে?”
নিস্পৃহ হেসে মিন হুয়ে আশ্বস্ত করলো, “ঠিক আছে।”
তারপর কাঁপতে থাকা বাঁ হাতের তালুটা গুঁজে দিলো হাঁটুর নিচে।
মিন হুয়ে কিছু বলতে চায় না দেখে শিন ছি আর কথা বাড়ালো না। দু কামড়ে স্টিকটা শেষ করে, স্যালাডটাও সাফ করে দিলো। তারপর ওর চোখ পড়লো মিন হুয়ের সামনে পড়ে থাকা আধ বাটি পরিজে, “তুই কি আর খাবি? দেখে বেশ ভালোই মনে হচ্ছে।”
মিন হুয়ে মাথা নেড়ে না বললো। শিন ছি বাকি পরিজটা চুমুক দিয়ে শেষ করে দিলো।
ওর যে খুব খিদে পেয়ে ছিলো বোঝা যাচ্ছে। সারাদিন অপেক্ষা করেছে হয়তো সু তিয়াঁর জন্য, কিচ্ছুটি খায় নি।
মুখ মুছে উঠে দাঁড়াতে দাঁড়াতে মিন হুয়ে জানালো, “আমি ঘুমোতে গেলাম।”
শিন ছি সাড়া দিলো, “ঠিক আছে।”
আঙুল তুলে করিডরের প্রান্তটা দেখিয়ে বললো, “ঐ ঘরটা থেকে উপত্যকার পুরোটা দেখা যায়। বেশ ভালো দেখায় সব কিছু।”
মিন হুয়ে কয়েক পা এগোলো, শিন ছি পিছু ডাকল, “তিয়াঁ তিয়াঁ।”
মিন হুয়ে সাড়া না দিয়ে পারলো না, “হুঁ।”
মিন হুয়ে কাছে এগিয়ে এসে শিন ছি আশ্বস্ত করলো, “আমার সাথে তুই নিরাপদ। আমার জন্য তুই অনেক বদলে গেছিস। কিন্তু তোকে জানিয়ে রাখি, তুই খুশি থাকলেই হলো, সে তুই যতই বদলে যাস না কেনো আমি তার পরোয়া করি না। আমি ঠিক মানিয়ে নেবো। তাতে আমাকে যদি পুরো উল্টে যেতে হয় আমার তাতেও কোনো দ্বিধা নেই। কিন্ত একটা জিনিস কখনো যেনো না বদলায় -”
মিন হুয়ে চুপ করে তাকিয়ে রইলো শিন ছির দিকে।
শিন ছি কথাটা শেষ করলো, “তা হলো - আমাদের একসাথে থাকতে হবে।”
তারপর প্রশ্ন করলো, “তুই একমত?”
মিন হুয়ে এক কথায় সারলো, “একমত।”
শিন ছি হেসে বললো, “ওয়া আ’ন।”
মিন হুয়ে সাড়া দিলো, “শুভ রাত্রি।”
সন্ধে আটটা বাজে। আকাশ রোদে ঝলমল করছে। আরো কিছুক্ষণ লিভিং রুমে বসার সাহস করতে পারলো না মিন হুয়ে।
ঘুমোনোও কঠিন। শিন ছি, তার সমস্ত আন্তরিক আচরণ সত্ত্বেও, খুব সজহ মানুষ নয়। অন্তত য্তোটা সহজ বলে তাকে মনে হয়, ততোটা সহজ নয়। সু তিয়াঁর মতো অসাবধানী নয়। সু তিয়াঁর মতো ঘোরপ্যাঁচহীন সাদামাঠা নয়। শিন ছির আন্তরিকতা বুদ্ধিদীপ্ত। তাকে চট করে বোকা বানানো যায় না। যতোটা সম্ভব শিন ছির সাথে একলা কাটানোর ব্যাপারটা এড়িয়ে যাওয়াই ভালো।
অনেকক্ষণ শুয়ে থাকার পরে, অনেক কসরত করে, মিন হুয়ের একটা তীব্র তাগিদ জেগে উঠলো শিন ছির কাছে সত্যিটা উগরে দেবার। যতো আগে বলা যায়, ততো সম্ভাবনা বাড়ে ক্ষমা পাবার। এখন তো শিন ছি বুঝতে পারছে যে তার সামনে যে মেয়েটা আছে সে তার স্মৃতিতে জেগে থাকা সু তিয়াঁ নয়। হয়তো তাই সু তিয়াঁর জন্য তার অনুভূতিগুলো ততো তীব্র আর হবে না। এই পরিস্থিতিতে সু তিয়াঁর মৃত্যুর খবরটা শিন ছিকে জানানো হয়তো খুব মারাত্মক হবে না।
মিন হুয়ে ওর সোনি কম্পিউটারটা চালু করলো। আজকাল সে একটা ছোটো স্ক্যানার দিয়ে সু তিয়াঁর ডায়েরির পুরোটা স্ক্যান করে রাখছে। একটা টেক্সট রেকগনিশন সফটওয়্যার ব্যবহার করে ডায়েরির সমস্ত লেখাজোখা একটা সম্পাদনা করা যায় এমন ডকুমেন্টে পরিণত করে ক্লাউডে জমা রাখছে। স্ক্যানিং আর প্রুফ রিডিং করে, বার তিনেক পুরো ডায়েরিটা পরে মিন হুয়ে ডায়েরির বিষয়বস্তুতে বেশ সড়গড় হয়ে উঠেছে।
খানিক টেক্সট অ্যানালিসিস -এর পরে মিন হুয়ে দেখলো যে সু তিয়াঁর প্রচুর উদ্বেগ ছিলো শিন ছির আবেগপ্রবণতা নিয়ে। ডায়েরি ভর্তি শিন ছির বদ মেজাজের বিশদ বিবরণ - “রেগে যাওয়া" “রাগত" “গালি দেওয়া" “খেপে যাওয়া" “ঝগড়া” ……
সু তিয়াঁ সব থেকে বেশি উদ্বিগ্ন সেদিন এই ভেবে যে সে দিনটাতে শিন ছি খুশি কিনা -
– “আজকে মাদার্স ডে। আর শিন ছি মোটেই খুশি নয়। ও বলেছে যে ও ঘেন্না করে ওর মাকে। ওর কিচ্ছু আসে যায় না যে ওর মা ওকে চায় না। যদি কিচ্ছু না হয়, তাহলে ও কল্পনা করতে পারে যে ওকে ছেলেধরায় চুরি করে নিয়ে গিয়ে ছিলো। তাতে যদি ও সারা জীবনে কখনো ওর মা-বাবাকে দেখতে না পেতো, তাহলে জানতো যে অন্তত এই পৃথিবীতে দুজন ওকে ভালোবাসে। আমি জিজ্ঞেস করে ছিলাম যে আমার ভালোবাসা কী ধর্তব্যের মধ্যে পড়ে। উত্তরে ও বলেছে যে আমার ভালোবাসা মায়ের ভালোবাসা নয়।
– “আজ লাওশি আমাদের সকলকে হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে ছিলেন, শিন ছির সাথে দেখা করাতে। শিন ছির মুখটা কাগজের মতো সাদা হয়ে ছিলো। আমি ওকে জিজ্ঞেস করে ছিলাম যে ব্যথা করছে কিনা। তাতে ও উত্তর দিয়ে ছিলো যে ব্যাথা এড়ানো যাবে না। হ্যাঁ, ব্যাথা আছে। তবে ও ব্যাথায় কষ্ট পাবে কিনা সেটা ও ঠিক করে নেবে। শিন ছি সব সময়ে এরকম করেই কথা বলে। আমি ভয় পাচ্ছিলাম যে ও অনেক কিছু চিন্তা করবে, ভাববে, তাই ঘাড় না নেড়ে আমার কোনো উপায় ছিলো না। আসলে কিন্তু ও যে কী বলেছে তার কিচ্ছু আমি বুঝতে পারি নি। বাকি সব ছাত্ররা কানাকানি করছিলো যে শিন ছি মরে যাচ্ছে। আমি খেয়াল করেছি যে আমার সঙ্গে কথা বলার সময় যন্ত্রণায় ওর ভ্রু কুঁচকে যাচ্ছে। আমার এতো কষ্ট হচ্ছিলো যে আমার কান্না আসছিলো।
আমি শিন ছির কাছে জানতে চেয়ে ছিলাম যে ও মরতে ভয় পায় কিনা। ও বলে ছিলো না। ও নাকি অনেকবার নরকের সদর দরজায় যাতায়াত করেছে। আমি জিজ্ঞেস করে ছিলাম ওকে যে ঠিক কেমন লাগে ‘মরতে’। ও বলে ছিলো বেশ নিশ্চিন্ত আর আরামদায়ক লাগে। যদি তাই হয়, তবে মরতে আমার ভয় নেই। আমি বলে ছিলাম ওকে, ‘শিন ছি তোর যদি একলা লাগে, আমাকে ডাকিস, আমি তোর সাথে মরবো।’ শিন ছি আমাকে খুব ধমক লাগিয়ে ছিলো আর বলে ছিলো আমি নির্বোধ।
– “কাল শিন ছি দাবা খেলায় জিতেছে। এমনকি ডিনও ওর বুদ্ধির প্রশংসা করেছেন। ও প্রাইজের টাকায় আমাকে দশটা ভালুক পুতুল কিনে দিয়েছে। বলেছে যে আমার দশ বছর বয়স আর একটা আমার মা-বাবার দেওয়া উপহার। ক্লাস থ্রির লিয়াঁলিয়াঁ শুনে ওকে বলে ছিলো যে ওরও একটা পুতুল চাই। কিন্তু শিন ছি ওকে কিনে দেবে না বলেছে। লিয়াঁলিয়াঁ আমার কাছে এসে বায়না করছিলো, তাই আমি ওকে একটা পুতুল দিয়ে ছিলাম। শিন ছি যখন জানতে পারলো ব্যাপারটা তখন ও দৌড়ে গিয়ে লিয়াঁলিয়াঁর থেকে পুতুলটা কেড়ে নিয়ে এলো।
এই নিয়ে সে রাতে আমাদের খুব ঝগড়া হয়ে ছিলো। আমি বলে ছিলাম, ‘শিন ছি, লিয়াঁলিয়াঁ খুব গরীব। ওকে একটা দিই না।’ শিন ছি বলে ছিলো, ‘না। এর আগে তুই যখন ওর থেকে একটা ইরেজার চেয়ে ছিলি, তখন ও তো তোকে দেয় নি। তাহলে ও এখন কেনো পুতুলটা তোর থেকে চাইছে?’ আমি বলে ছিলাম, ‘তবুও তোকে এতো হিংসুটে হতে হবে না। তুই কী ভালো করে কথা বলেছিস?’ শিন ছি বলে ছিলো, ‘আমি ওকে বলেছি যে কেবল তুই আমার প্রিয়জন।’ একথা শুনে আমি প্রায় কেঁদে ফেলে ছিলাম। লিয়াঁলিয়াঁ গুজুরগুজুর ফুসুরফুসুর করতে ওস্তাদ। ভগবান জানে এখন আমার পিঠপিছে ও আমার নামে কি যে বলে বেড়াবে।
নিশ্চিত জানি আজ লিয়াঁলিয়াঁ আমাকে ভালো চোখে দেখে নি। আমার কাছে এসে বললো, ‘জানিস শিন ছি মরে যাবে। তাই পুতুল দশটা তুই হারাস না। এই দশটা পুতুলই শুধু ও তোকে দিয়ে যাবে।’ এসব কথা শিন ছিকে বললে শিন ছি আবার কি না কি ভাববে। ভুলে যাওয়াই ভালো। কী হবে ওকে অখুশি করে। কাল অমন ভালো দিনেও ও সারাদিন হাসে নি। সত্যি বলতে কী আমিও ওর মাকে ঘেন্না করি। ওর মায়ের কী অনুতাপই না হবে যদি জানতে পারে যে এমন একটা বুদ্ধিমান ছেলেকে ওর মা ফেলে দিয়ে গিয়েছে।
মিন হুয়ে একত্র করে রাখা লেখাগুলো আবার পড়তে লাগলো। কল্পনা করার চেষ্টা করতে লাগলো যে এই মূহুর্তে শিন ছি এখনো জীবিত আছে দেখে সু তিয়াঁর মনের অবস্থা ঠিক কেমন হতে পারতো। সে নিশ্চয়ই খুব খুশি হতো, তাই না? সু তিয়াঁ এতো খেয়াল রাখতো শিন ছির, তাহলে মিন হুয়ে সত্যিটা বলে শিন ছিকে দুঃখ দেবে কেনো?
যদি ও অপেরেসনের পর আর নাই বাঁচে, তাহলে অন্তত শেষের কটা দিন ও খুশিতে সন্তুষ্টিতে কাটাতে পারবে। মরার আগেই শোকে দুঃখে অবশ হয়ে পড়বে না। যদি অপরেসনটা ঠিকও হয়, তাহলেও একটা ভালো মেজাজ শরীরকে সুস্থ করার জন্য ভালোই হবে, তাই না?
মিন হুয়ের মনে পড়ে গেলো যে ওর ঠাকুমার অগ্ন্যাশয়ে ক্যান্সার হয়ে ছিলো। কিন্তু বাড়ির কেউ ভয়ে ঠাকুমাকে কথাটা জানায় নি। প্রথমে ঠাকুমাও কিছু নজর করে নি। যদিও কিছু কিছু লক্ষণ দেখা দিচ্ছিলো, তাও ঠাকুমা বেশ হাসিখুশিই ছিলো। একদিন কী ভাবে কোথা থেকে যেনো ঠাকুমা জেনে গিয়ে ছিলো। পরের সপ্তাহেই ঠাকুমাকে এমার্জেন্সি ওয়ার্ডে দিতে হয়ে ছিলো। ভয়ে ঠাকুমার ওজন অর্ধেক হয়ে গিয়ে ছিলো। তিন মাসের মধ্যে মারা গিয়ে ছিলো। মিন হুয়ের বাবা তখনও বেঁচে ছিলেন। তিনি খুব অনুতাপও করতেন ব্যাপারটা নিয়ে। পরে যখন মিন হুয়ের ঠাকুর্দা কঠিন অসুখে পড়লেন, তখন কেউ তাকে সত্যিটা বলার সাহস করে নি। যদিও ঠাকুর্দাও তিন মাসের মধ্যেই মারা গিয়ে ছিলেন, তবুও সবাই তাঁকে শেষ পর্যন্ত ভুলিয়ে ভালিয়ে হাসিখুশিই রেখে ছিলো। শেষ নিঃশ্বাস ফেলা পর্যন্ত তিনি জানতেন না তাঁর কি অসুখ করে ছিলো। তিনি একটা ঘোরের মধ্যে চলে গিয়ে ছিলেন যেনো।
এসব কথা ভেবে মিন হুয়ে খুশিই হলো যে শিন ছিকে সত্যি কথা বলার যে তাড়নাটা ওকে পেয়ে বসে ছিলো সেটা ও সময় মতো আটকাতে পেরেছে। মনে মনে মিন হুয়ে ঠিক করে নিলো যে অপেরসনের আগে অবধি শিন ছি যতোটা সম্ভব আনন্দেই কাটাক।
আর সু তিয়াঁর মৃত্যুর কথাটা যতো দিন সম্ভব গোপণ রাখা যায়, তাই থাক।
পরের দিন সকালে মিন হুয়ে ভোর ভোর, ছটার সময়ে জেগে গেলো। ওর ভোর ভোর ওঠার অভ্যেস। পরিষ্কার হয়ে লিভিংরুমে গেলো সকালের খাবার খাবে বলে।
পিছনের বারান্দায় যাবার দরজাটা সামান্য খোলা ছিলো। জলের শব্দ আসছে। সদ্য বানানো কফি হাতে মিন হুয়ে বাইরে গেলো।
স্যুইমিং পুলে শিন ছি সাঁতার কাটছে।
সকালের আলো তখনও বেশ মৃদু। পুরো উপত্যকা ঢেকে আছে সাদা কুয়াশায়। গাছে মহানন্দে পাখিরা গান গাইছে।
মিন হুয়ে খালি পায়ে পুলের ধার পর্যন্ত গেলো। ইচ্ছে ছিলো ‘সুপ্রভাত’ জানানো। কিন্তু কিছুতেই ও জলের মধ্যে সাঁতরাতে থাকা শিন ছির থেকে চোখ ফেরাতে পারছিলো না। শিন ছির শরীরটা মোটেই অসুস্থ মানুষের মতো নয়। চেহারাটা বেশ লাগসই, চওড়া কাঁধ, সরু কোমর, সুঠাম বুকের পেশী, কঠিন উরু, সরু গোড়ালি। কুড়ি মিটারেরো কম লম্বা একটা পুলে এপাড় ওপাড় সাঁতরাচ্ছে শিন ছি - ব্রেস্টস্ট্রোক, ব্যাকস্ট্রোক, বাটারফ্লাই - মুক্ত আর খুশি।
যখন দুজনের চোখ একে অপরের চোখে পড়লো, মিন হুয়ে শুধু একটা ‘হাই’ বললো।
শিন ছি তখনই সাঁতার দিয়ে পুলের ধারে চলে এলো। জল থেকে উঠে পড়লো। একটা তোয়ালে নিলো মিন হুয়ের সামনে দাঁড়িয়ে গা মুছতে লাগলো খুব স্বাভাবিকভাবে। ওর পেশিগুলো সুঠাম, নিশ্চিত রেখায় আর সাবলীল বাঁকে, তলপেট আঁটোসাঁটো, অক্লেশে ওঠানামা করছে। কোথাও কোনো ঠেলে ওঠা নীল শিরা দেখা যাচ্ছে না বডিবিল্ডারদের মতো।
আর শিন ছির পুরো শরীর থেকে একটা বর্ণনাতীত, ব্যাখ্যাতীত শান্তি, সংযম আর আত্মাভিমান বিকিরিত হচ্ছে, যেনো ও জানে যে ওর চারপাশের মানুষদের তুলনায় ও বেশি ভালো, যাতে কেউ ওর সাথে টক্করে না যায় ………
হালকা চালে শিন ছি প্রশ্ন করলো, “তোর পছন্দ?”
কোনটা পছন্দ? পাহাড়? জল? স্যুইমিং পুল? নাকি ওর আকর্ষণীয় শরীর?
হঠাৎ করে মিন হুয়ের মুখ লাল হয়ে উঠলো। তাড়াহুড়ো করে চোখ নামিয়ে নিলো মাটিতে। মুখের ভেতরটা শুকনো। গলার থেকে যেনো ধোঁয়া বেরোচ্ছে। ও একটা তোয়ালে নিয়ে শিন ছির পিঠের দিকে দেখালো, “এখানে এখনো ফোঁটা ফোঁটা জল আছে …… তুই মুছিস নি।”
শিন ছি ঘুরে দাঁড়ালো। মিন হুয়ে দেখলো শিন ছির ভিজে মাথার চুল থেকে জল গড়িয়ে পড়ছে শিরদাঁড়ার সিধে খাঁজ বেয়ে কোমরে। আস্তে আস্তে মিন হুয়ে শুষে নিলো সব জল তোয়ালেতে।
শিন ছি বললো, “ঠিক আছে।”
তারপর ঘুরে দাঁড়ালো আর দুম করে চেঁচিয়ে উঠলো, “নড়িস না।”
মিন হুয়ের নাকে এক হাত দিয়ে চিমটি কাটল, আরেক হাতে ওর থুতনিটাকে ধরে রেখে, বললো, “তিয়াঁ তিয়াঁ, তোর যে নাক দিয়ে রক্ত পড়ছে।”
~~~~~~~~~~~~
সম্পূর্ণ বই বিনামূল্যে : https://dl.bookfunnel.com/lcj5vznt96
Link to Previous Post in the Series : https://projectionofnaught.blogspot.com/2024/08/jpda-chapter-07.html
Link to following Post in the Series : https://projectionofnaught.blogspot.com/2024/08/jpda-chapter-09.html
No comments:
Post a Comment