Saturday, August 24, 2024

JPDA -Chapter 18

 ১৮. সাক্ষাৎকার



তিন মাস কেটে গেলো।

অক্টোবার মাস বিনচেং-এ সারা বছরের সেরা সময়। বেশ ঠান্ডা, ঠান্ডা। গুমোট নেই। আর হাওয়াতে মিঠে জলপাইয়ের সুগন্ধ।

শিংশুই থেকে ফেরার পরে মিন হুয়ে একটা চল্লিশ বর্গমিটারের অ্যাপার্টমেন্ট ভাড়া নিলো শহরের মাঝখানে। একটা শোবার ঘর, একটা বসার ঘর, একটা রান্নাঘর আর একটা স্নানের ঘর। ঘরে থেকে শুধু খেলতে লাগলো। তবে জমা টাকা শুধু খরচ হয়। তাই শেষে কাজ খুঁজতে লাগলো।

এই সময়ে সে পরিজন খুঁজে বারকরা ওয়েবসাইটের স্বেচ্ছাসেবকদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে থাকে। নতুন খবরের ওপর নজর রাখে। সু তিয়াঁর ভাইকে খুঁজে পাবার কোনো নতুন সূত্র পাওয়া যায় কিনা তার খোঁজ করতে থাকে। স্বেচ্ছাসেবকরা অবশ্য বলেছে যে যুক্তি দিয়ে ভাবতে, দুম দাম পয়সা খরচ করতেও বারণ করেছে।

আত্মীয়ের খোঁজ একটা সময় পরে থমকে গেলো।

অন্যদিকে মুশুইহে পুলিশ স্টেশনের চেন শিয়েংশঁ উইচ্যাটে মিন হুয়েকে অগুণতি মেসেজ পাঠিয়ে চলেছেন এই বলে যে শিন ছি “অশেষ” উৎপীড়ন করে চলেছে পুলিশের ওপর তাঁদের ওখানে। 

জলের নিচের উদ্ধারকারী দলকে ফিরে ডাকতে হয়েছে সম্ভাব্য এলাকাগুলোতে আবার উদ্ধারের কাজ করার জন্য। হাসপাতাল আর আপতকালীন আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে ঘুরে ঘুরে যেতে হচ্ছে, বারবার। যেতে হচ্ছে উদ্ধার করে আনা মানুষদের যেখানে রাখা হয়েছে সেই সব জায়গাতেও। সমানে খোঁজ চলেছে একটা মেয়ের যে জলে ডুবে মারা গেছে বা জলে ভেসে যাবার কারণে যার স্মরণশক্তি খোয়া গেছে।

খবরের কাগজে বিজ্ঞাপণ দেওয়া হয়েছে। দেওয়া হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়া আর টিভিতেও। অনেক টাকা পুরস্কারও ঘোষণা করা হয়েছে। 

কিন্তু দেহ পাওয়া যায় নি। আর মুশুই নদীতে ভেসে যাওয়া সমস্ত মরদেহকে ছেঁকে তুলে নেওয়া হয়েছে। 

পরে তিনি শুনেছেন যে শিন ছির একটা অসুখ আছে। অসুখটা বেশ গুরুতর ধরনের। কেউ তাকে সরাতে সাহস করে নি, তাকে রাখা হয়ে ছিলো মুশুইহে হাসপাতালে। সে অবশ্য প্লেনে চেপে বেজিং-এ যায় এবং সেখানে গিয়ে এক হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ নিয়ে আসে তার চিকিৎসা করানোর জন্য। সে ওখানে ছিলো মাসখানেক। শরীরের অবস্থার খানিক উন্নতি হতে তার দাদা তকে ধরে বেধে ফেরত নিয়ে যায় ইউনাইটেড স্টেটসে।

যখনই চেন শিয়েংশঁয়ের থেকে মিন হুয়ে একটা মেসেজ পায়, মিন হুয়ে কল্পনায় দেখতে পায় শিন ছির একাকী, দুঃখী, নিরাশ চেহারাটা, মেসেজের কয়েকটা শব্দের ভেতর দিয়েই ও টের পেয়ে যায়। আর অনেকগুলো দিন ভীষণ দুঃখে থাকে নিজে।

শিন ছি ইউনাইটেড স্টেটসে ফিরে যাবার পরে চেন শিয়েংশঁ আর কোনো মেসেজ করেন নি। শেষ মেসেজে তিনি মিন হুয়েকে মনে করিয়ে দিয়েছেন দু বছর পরে আদালতের কাছে আবেদন করতে হবে সু তিয়াঁকে মৃত ঘোষণা করার জন্য। কারণ “সব কিছুর একটা শেষ থাকে।”

খানদশেক জায়গায় রেজিউমি জমা দেবার পরে, মিন হুয়ে তিনটে জায়গা থেকে ডাক পেলো। 

কিন্তু এই সময়ে তার শরীর খুবই খারাপ ছিলো মেজাজও খুব খারাপ থাকছিলো - মাথা ঝিমঝিম করতো, ঘুম হতো না, ক্লান্ত লাগতো, মাথা ব্যথা, খিদে মরে যাওয়া - সব কিছু তাকে একটা খিটিখিটে, বিরক্তিকর মেয়েমানুষ বানিয়ে ফেলে ছিলো। তার নম্বর আর অ্যাকাডেমিক যোগ্যতায় যে কটা জায়গায় রেজিউমি সে জমা করে ছিলো, সবই লাগসই। কিন্তু সে বুঝতে পারে নি শিল্পক্ষেত্রে গুয়ান ছাও ইন্টারন্যাশন্যালের প্রভাব কতদূর।

প্রথম ইন্টারভিউতে লিখিত পরীক্ষার প্রশ্নের মান দেখে ওর মনে হলো যে সেটা খুব খারাপ। সে নিজেই পরীক্ষা ছেড়ে বেরিয়ে এলো। 



দ্বিতীয় কোম্পানিটা একটা বড়ো কোম্পানি, অবস্থাও খুব ভালো, বেশ নামডাকও আছে। লেখা পরীক্ষাটা মিন হুয়ে পাশ করে গেলো অনায়াসে। মৌখিক ইন্টারভিউয়ের সময়ে পুরুষ প্রশ্নকর্তা থেকে থেকেই তাকে প্রশ্ন করতে লাগলো তার সঙ্গে চেন ছিরাং-এর সম্পর্ক নিয়ে। কিভাবে সে গুয়ান ছাও ইন্টারন্যাশন্যালকে চটালো আর তাকে বার করে দেওয়া হয়ে ছিলো। মিন হুয়ে উত্তর দিতে চাইলো না। বেরিয়ে এলো।

প্রশ্নকর্তার শান্তি হলো না। তিনি মিন হুয়েকে ধমকে একটা বিশেষ ইমেল লিখে ছিলেন। জানিয়ে ছিলেন যে মিন হুয়ের স্বভাব উদ্ধত, মিন হুয়ে শিল্পক্ষেত্রে নিশ্চয়ই থাকতে চায় না আর। মিন হুয়েও শান্তি পায় নি। সে আরো বড়ো একটা উত্তর দিয়ে ছিলো ইমেলে প্রশ্নকর্তাকে ধমকে যে তাঁর মগজে কেবল গুজব গজগজ করে, তাঁর আসলে কোনো কাজ নেই, তাঁর সিইও হবার যোগ্যতাও নেই। মিন হুয়ে কামনা করে ছিলো যেনো তাঁর ব্যবসা লোকসানে ডুবে যায়।

হপ্তাখানেক আলস্যে কাটিয়ে, আরো দুটো ইন্টারভিউ-এ ডাক পেলো। একটা কাছে, অন্যটা বেশ দূরে। সে চেষ্টা করলো কাছেরটায় আগে যেতে। একটা ছোটো মাপের প্রযুক্তি ব্যবসা একটা বড়ো শিল্প সংস্থার অধীনে, অন্যান্য আরো অনেক ব্যবসার সাথে। এরা আর্টিফিসিয়াল ইন্ট্যালিজেন্স আর মেডিক্যাল ডায়াগনোসিসের জন্য সফ্‌টওয়্যার তৈরি করে। মাস ছয়েক আগে কোম্পানিটা তৈরি হয়েছে, এখনো লোক নিচ্ছে। মিন হুয়ের আগের কাজ, যদিও ছমাসের অভিজ্ঞোতা মাত্র, তার সঙ্গে স্নাতকোত্তর স্তরে তার ইন্টার্নশিপের অভিজ্ঞতা সবই কোম্পানিটার ব্যবসার সঙ্গে খাপ খায়। 

দূরেরটা কাছেরটার তুলনায় নামে আর হালচালে বেশ খাটো। ওটা রইলো একটা বিকল্প হিসেবে।

“বা'অ্যান টেকনোলজি”-র অফিস সাতাত্তর নম্বর ঝংসান রোডের শিয়াংহে বিল্ডিং-এর দোতলায়। তিরিশ জনেরও কম লোক কাজ করে এখানে, তাদের অনেকেই আবার পার্ট-টাইম কাজ করে। বিনচেং-এর পুব দিকটা ইউনিভার্সিটি এলাকা আর হাই-টেক ডেভেলপমেন্ট এলাকা। বলা যেতে পারে যে এলাকাটা প্রতিভাবান কর্মীতে থইথই করছে। যদিও মাত্র পাঁচটা পদ আছে, তাও দুশোরও বেশি উৎসাহী ভিড় জমিয়েছে কারণ বিষয়টা জনপ্রিয় - এআই। তাদেরকে চারটে ঘরে তিনটে আলাদা টাইম স্লটে লেখা পরীক্ষায় ডাকা হয়েছে। চারদিন পরে, মিন হুয়ে ডাক পেলো পরের পর্যায়ের ইন্টারভিউয়ের।

বেরোবার আগে মিন হুয়ে অনেকটা সময় কাটালো জামাকাপড়ের কুঠুরিতে। শেষে একটা সাদা এ-লাইন জামা পরল, ওপরে চড়ালো একটা ধূসর রঙের কোট। খুব যত্ন করে হালকা মেক-আপ করলো। সাবওয়েতে দুটো স্টপ পেরিয়ে যখন ইন্টারভিউতে পৌঁছলো তখন দেখলো তাকে নিয়ে দশ জন অপেক্ষায় আছে। সেই কেবলমাত্র মেয়ে।

যদিও বা'অ্যান টেকনোলজির খুব পরিচিতি নেই, কিন্তু এর নির্মাতা য়ুআঁলাই মেডিক্যাল একটা বেশ পুরোনো সাইনো-ইউএস জয়েন্ট ভেনচার। কোম্পানিটা তৈরি হয়ে ছিলো ঊনিশ শো নব্বই সালে। অনেকগুলো কাজের জন্য এরা আলাদা আলাদা কোম্পানি বানিয়েছে। সব মিলিয়ে প্রায় দশ হাজারের মতো লোক কাজ করে এদের জন্য। মেডিক্যাল বিভিন্ন ক্ষেত্রে, যেমন মেডিক্যাল ইমেজিং, ক্লিনিক্যাল টেস্টিং, ডিজিট্যাল আলট্রাসাউন্ড, রুগির খেয়াল রাখার বন্দোবস্ত, নতুন ওষুধ তৈরি আর নানান ক্ষেত্রে, য়ুআঁলাই মেডিক্যালের যোগদানের অংশটা বেশ গুরুত্বপূর্ণ।

এদিনটায় ফ্রন্ট ডেস্কে আছেন ইয়াং বেই বেই। তাঁর মুখটা শিশুর মুখের মতো মিষ্টি, তাঁর আচরণ প্রাণবন্ত, আর তাঁর গলার স্বরটাও ভারি মিষ্টি। ইন্টারভিউয়ের জন্য যাঁরা এসেছেন তাঁদের সবাইকে বসতে ডাকলেন তিনি। তারপর সব্বাইকে এককাপ করে কফি দিলেন।

মিন হুয়ের পাশে বসেছে একটা চশমা পরা ছেলে। খুব মন দিয়ে সে মোবাইলে গেমস খেলছিলো। কফি নেবার সময়ও মুখ তুলে তাকায় নি। সে তো প্রায় মিন হুয়ের কফিটাই নিয়ে ফেলছিলো। শেষ মূহুর্তে তাড়াহুড়ো করে বলে ছিলো, “দ্যুইবুচি।”

“ঠিক আছে।”

“আরে, আমি তোমাকে দেখেছি লেখা পরীক্ষার দিনে। বেগুনি জামা, মাথায় বল করে খোঁপা বাধা। তাই না?”

“হ্যাঁ, তাই।”

“সবাই বলছিলো তোমাকে কাই সা-র মতো দেখতে।”

কাই সা - লিগ অফ লেজেন্ডের একটা চরিত্র
কাই সা লিগ অফ লেজেন্ডের একটা চরিত্র। মিন হুয়ে মুগ্ধ হয়ে গেলো শুনে। না হেসে পারলো না, “আর তুমিই বা কে?”

“আমাদের ডিপার্টমেন্টে তিনটে ডরমিটরি থেকে ছটা ডক্টোরাল স্টুডেন্ট আছে। “

“আমার নাম মিন হুয়ে।”

“আমি ঝ্যাং শও হান।”

দুজনে করমর্দন করলো।

“আমি শুনেছি এখানে জেনারেল অ্যাসিস্ট্যান্টের একটা কাজ আছে। তুমি কী সেই কাজটার জন্য এসেছ?” 

“না। আমি সফ্‌টওয়্যার ডিসাইনারের কাজের জন্য আবেদন করেছি।”’

“আমিও তাই। অ্যাই, লেখা পরীক্ষার প্রশ্নগুলো কে বানিয়ে ছিলো বলো তো? বাব্বা, কী কঠিন! আর কতগুলো! শেষ করা অসম্ভব যেনো। এটা কী আমাদের মারার জোগার নাকি?”

মিন হুয়ে কিছু বলার আগেই, আরেকটা ছেলে বলে উঠলো, “আমি তো ঘড়ির সাথে পাল্লা দিয়ে দৌড়েছি, একবারও না থেমে, তাতেও আমি কেবল অর্ধেক করতে পেরেছি। আমি আর ও নিয়ে ভাবছি না। আমি এবারও ফেল করবো ভেবে নিয়ে ছিলাম। তারপর দেখি কী যে আমাকে ইন্টারভিউতে ডাকা হয়েছে।”

“হতে পারে যে এঁরা দেখছিলেন যে তোমার দৌড় কদ্দুর। এঁরা হয়তো ভাবেনই নি যে কেউ শেষ করবে।” কাঁধ ঝাঁকিয়ে বললো ঝ্যাং শও হান, “আমিও তিন ভাগের এক ভাগই শেষ করতে পেরেছি।”

“তবে,” ঘাড় নাড়লো মিন হুয়ে, “ব্যাপারটা বোধ হয় তেমন নয়।”

মিন হুয়ের কথা শেষ হবার আগেই ইয়াং বেই বেই এলো ঝটপট আর বললো, “মিন হুয়ে, যাও। তুমিই প্রথম।”

মিন হুয়ে ঝটপট উঠে দাঁড়ালো। তাড়াহুড়োয় হাতের কফিটা উল্টে ফেললো। ইয়াং বেই বেই চটপট একটা টিস্যুর বাক্স এনে দিলো। পড়ে যাওয়া কফির ওপরে কয়েকটা টিস্যু বিছিয়ে দিয়ে হাসি মুখে বললো, “ওয়াও, তুমি এতো নার্ভাস কেনো? সব থেকে কঠিন অংশ তো পেরিয়ে এসেছো। তুমি তো লেখা পরীক্ষায় পুরো নম্বর পেয়েছো! যদি না ইন্টারভিউ দিতে বসে নোংরা ভাষায় দিব্যি গালো তুমি নিশ্চয়ই পাস করে যাবে।”

“অ্যাই, ঝ্যাং শও হান, আমার হয়ে একটু পরিষ্কার করে দিন, ছিং।”

মিন হুয়ে বললো, “বু হাইসা।” দুটো ছেলেকে অবাক করে দিয়ে বেই বেই-এর পিছু পিছু মিটিং রুমে চলে গেলো মিন হুয়ে। 

***

কোম্পানির যে দুজন কর্তৃ ইন্টারভিউ করবেন মিন হুয়েকে তাঁদের পরিচিতি দিলেন বেই বেই মিন হুয়েকে মিটিং রুমে যেতে যেতে। একজন হে হাই শিয়াং, তিনি ঝং জিংলি, কোম্পানির সর্বেসর্বা। অন্যজন সাও মু, ফু সংসাই, মার্কেটিং আর সেলস-এর দায়িত্বে আছেন। মিন হুয়ে ভেতরে যাবার পরে দেখলো শুধু সাও মু আছেন। হে হাই শিয়াং তখনও এসে পৌঁছোন নি। তাঁর নাকি একটা জরুরি কল আছে। বড়ো কর্তার অনুপস্থিতিতে ইন্টারভিউ শুরু করা গেলো না। সাও মু ঠিক করলেন যে তিনি প্রথমে সাধারণ কথাবার্তা দিয়ে শুরু করবেন আর মিন হুয়েকে কোম্পানির সাধারণ পরিস্থিতির কথা বলবেন।

সাও মুয়ের বয়স চল্লিশের ঘরে। সাধারণ দেখতে। বেঁটে, মোটা। গোল মুখ, তেকোণা চোখ, চৌকো কপাল, থুতনিতে ভাঁজ আর নিপাট ছোটো চুল। দেখলেই চোখে পড়ে যে সাজের ব্যাপারে তিনি বেশ সতর্ক। ভালো জামা পরেন। অনেক গয়না পরেন না, কিন্তু যে কটা পরেন সবই বড়ো ব্র্যান্ডের। যদিও তাঁকে দেখতে ভালো নয়, চোয়াল ঠেলে বেরিয়ে এসেছে, কিন্তু তাঁকে বেশ ভালো লেগে গেলো মিন হুয়ের। তিনি বাকপটু, অনেক সময় এককথা বার বার বলেন ঘ্যান ঘ্যান করে। কিন্তু শ্রোতা তাতে বিব্রত হয় না মোটেই। আচরণ ভালো, ভালো করে পড়াশোনা করেছেন বলে মনে হয়।

“আমিও হুয়াছিং ইউনিভার্সিটি থেকে এসেছি। আমরা অ্যালামনাই।” তাঁর কথার সুর সহজ, “অ্যাই, তোমার জামাটা খুব সুন্দর। কোথা থেকে কিনেছো গো?”

“খুবই সস্তা।” বললো মিন হুয়ে।

“আমার ওজন কমলে পরে, আমি নিশ্চয়ই একটা এরকম জামা কিনব।” চোখে হিংসে নিয়ে তিনি চাইলেন মিন হুয়ের দিকে।

“আপনিও কী কম্পিউটার ডিপার্টমেন্ট থেকে?” জানতে চাইলো মিন হুয়ে।

“হ্যাঁ, আমিই তোমাদের পরীক্ষার প্রশ্নগুলো বানিয়েছি।”

ওয়াও। সে তো দারুণ। মিন হুয়ে একটু অবাকই হলো। তার পক্ষে কঠিন হলো একজন কম্পিউটার বিষেশজ্ঞ আর তার সামনে বসা কাকিমার মতো দেখতে মহিলাটিকে মেলানো।

“তুমি কী গুয়ান ছাও ইন্টারন্যাশন্যালে মাস ছয়েক কাজ করেছিলে?” সাও মু জানতে চাইলেন।

মিন হুয়ে চোখ বন্ধ করলো। ব্যস, হয়ে গেলো, এবার। হয়ে গেলো আরকি, আবার।

“হ্যাঁ।”

“তোমাদের সিটিও, চেন ছিরাং, কলেজে আমার সাথে এক ক্লাসে পড়তো। আমরা পরস্পরকে ভালোই চিনতাম। ওর গার্লফ্রেন্ড তো আমাদের ডরমিটরিতে থাকতো।”

“সে কি ঝেং য়ি তিং?” মিন হুয়ের মনে ছিলো না যে এই মানুষটা হুয়াছিং-এ পড়েছেন। 

“এক্স-গার্লফ্রেন্ড।”

“ওহ!”

“ঝেং য়ি তিং-এর সঙ্গে থাকবে বলে, চেন ছিরাং কলেজের গার্লফ্রেন্ডকে ছেড়ে দেয়।" বললেন সাও মু, “তখন চেন ছিরাং আমাদের ডিপার্টমেন্টেই পড়ত।”

এই কথাটা বলার সময় তিনি কিছুতেও নিজের ঠোঁটটা একবার চেটে না নিয়ে পারলেন না, যেনো মনে মনে কাউকে চুমু খেলেন।

এটা যখন হলো, তখন মিন হুয়ে কিছুতেই নিজের কাঁধের ব্যাগটাকে না খামচে পারলো না। ওর ভীষণ ইচ্ছে করছিলো ছুটে পালাতে। অস্বস্তিতে ও মাথা নিচু করলো। একটা ছুতো খুঁজছে পালাবার। এমন সময়ে ঘরের দরজাটা খুলে গেলো। স্যুট পরা একজন পুরুষ ঘরে ঢুকলেন। তাঁরও বয়স চল্লিশের কোঠায়। মিন হুয়েকে ধৈর্য ধরে বসে থাকতে হলো। 

ঘরে যিনি ঢুকলেন তিনি হে হা শিয়াং, বা'অ্যান টেকনোলজির সংসাই। মাঝারি উচ্চতার মানুষটার মধ্যে থেকে ফুটে উঠছিলো দক্ষিণী চাতুর্য। গায়ের রং কালো আর গভীর চোখের কুঠুরি। মনে হয় তিনি ধূমপান করতে ভালো বাসেন। তাঁর দাঁতগুলো সামান্য হলদেটে। যখন তিনি মিন হুয়ের পাশ দিয়ে হেঁটে গেলেন তখন নিকোটিনের গন্ধ ছড়িয়ে দিয়ে গেলেন।

মিন হুয়ে জানে না কী কারণ, হতে পারে ভোকাল কর্ডের ঝামেলা কিংবা ভালো করে মুখ বন্ধ হয় না বলে, হে হাই শিয়াং-এর গলার স্বরে তামাক আর অ্যালকোহলের আভাস পাওয়া যায়। 

হে হাই শিয়াং কথা বললেই মনে হচ্ছে যেনো যে কোনো সময় ওঁর গলার স্বর ভেঙে যাবে। স্বরটার জন্য উনি ঝ্যাং তিয়াংশুও-র গানের উপযুক্ত কারাওকে গায়ক হতে পারেন।


ঝ্যাং তিয়াংশুও

হে হাই শিয়াং টেবিলের দিকে গেলেন, বসলেন, জলের গ্লাসে ঢাকা সরিয়ে একটা চুমুক লাগালেন। তারপর জানতে চাইলেন, “আপনারা দুজন কী শুরু করে দিয়েছেন ইন্টারভিউ?”

“ এখনো নয়। এমনিই এটা-সেটা নিয়ে কথা বলছিলাম। আপনি এসে পৌঁছোনোর অপেক্ষায় ছিলাম, হে জঁ।" সাও মু কিছু নথি তুলে দিলেন হে হাই শিয়াং-এর হাতে, “এটা এঁর সিভি। নাম মিন হুয়ে, পাশ করেছে হুয়াছিং ইউনিভার্সিটি থেকে, কম্পিউটার সায়েন্সে মাস্টার্স ডিগ্রি নিয়ে।”

“আবার হুয়াছিং।" হে হাই শিয়াং সিভিটা একপাশে সরিয়ে রাখলেন। মিন হুয়ের দিকে তাকিয়ে হাসলেন, “সাও মু, এভাবেই কী আপনি প্রমাণ করতে থাকবেন যে আপনার ইউনিভার্সিটিকে আপনি কি ভালোটাই না বাসেন?”

“একদম ঠিক বলেছেন।”

দুজনে খুব হাসলো। খানিক পরে, হে হাই শিয়াং গলা পরিষ্কার করে বললেন, “মিন হুয়ে, কলেজে কী কী টেকনোলজি শিখেছেন আপনি যা আমাদের কোম্পানির প্রজেক্টগুলোতে কাজে লাগতে পারে?”

“মেশিন লার্নিং, স্ট্যাটিস্টিক্যাল মডেলিং, ইমেজ প্রসেসিং অ্যান্ড অ্যানালিসিস।”

“আমরা এখন যা কাজ করছি সেগুলো মূলত মেডিক্যাল ইমেজিং এআই আর প্যাথোলজিক্যাল ডায়াগনোসিস। আপনার কী এইসব ক্ষেত্রে কোনো অভিজ্ঞতা আছে?”

মিন হুয়ে মনে মনে ভাবলো, দয়া করে সিভিটা পড়ুন, কিছু কাজের কথা জিজ্ঞেস করুন, প্লিজ।

কিন্তু তবুও খুব সততার সঙ্গে উত্তর দিলো, “আমি এআই নিয়ে গবেষণা করেছি ত্বকের ক্যানসার শনাক্ত করার জন্য। মূলত প্যাথোলজিক্যাল ইমেজের ডিজিট্যাল প্রসেসিং করে, যাতে রোগ ডায়াগনোসিস-এর জন্য যে সময় লাগে সেটা কমানো যায় আর ডায়াগনোসিসে ভুল হবার সম্ভাবনা প্রায় লোপ পায়।”

“স্কিন ক্যানসার স্ক্রিনিং?” হে হাই শিয়াং হাতের চায়ের কাপটা দূরে সরিয়ে রাখলেন। তিনি খুব উৎসাহ বোধ করছেন বলে মনে হলো। “গত মাসে আমি একটা আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্সের সেমিনারে গিয়ে ছিলাম, বেজিং-এ। আমি ওখানেই শুনেছি একটা এআই টিম ‘ব্ল্যাক ডট প্রজেক্ট’ করেছে, যাতে ওরা এখন স্কিন ক্যান্সারের স্ক্রিনিং-এর কাজ করছে। ওরা এখন শিল্পক্ষেত্রে এগিয়ে আছে রোগের ইনভেস্টিগেশনের ব্যাপারে। ওরা শুধু স্কিন ক্যান্সারে সন্তুষ্ট নয়, ওরা কাজ করছে ফুসফুসের ক্যান্সারে, ব্রেন ক্যান্সারে, রেকট্যাল ক্যান্সারে, সারভিক্যাল ক্যান্সারে আরো অনেক কিছুতে। যদি একটা বেয়াড়া ধাঁচের ক্যান্সার যদি আগেভাগেই শনাক্ত করা যায়, তাতে রোগীর জীবনের দৈর্ঘ্য অনেকটাই বেড়ে যায়। খুবই খরচ সাপেক্ষ! কদিন আগেই একটা ভেঞ্চার ক্যাপিট্যালিস্টের থেকে তিনশ মিলিয়ন বিনিয়োগ পেয়েছে! ওরা একটা এআই অ্যাসিস্টেড ক্লাউড প্ল্যাটফর্ম বানাতে চাইছে রোগ শনাক্তকরণ আর চিকিৎসার জন্য। সেটা সবেই শুরু হয়েছে। অবশ্যই এরা ইন্ডাস্ট্রির সবথেকে বড়ো অংশ, ওরা প্ল্যাটফর্মটাও বানাতে পারে আর তার সাথে একোলজিটাও, মানে প্ল্যাটফর্ম ব্যবহারকারীদের পারস্পরিক সম্পর্কটাও। আমরা সবে একটা ব্যবসা শুরু করতে যাচ্ছি। আমাদের জন্য উপযোগী হবে একটা কোনো শাখাতে উদ্যম আর উদ্যোগ দেওয়া।”

“তথ্য পাওয়াটাই মূল।” বললো মিন হুয়ে, “আপনারা কী আশে পাশের হাসপাতালের থেকে তথ্য নেন? মূলত ক্যান্সার হসপিটাল থেকে?”
“করিই তো। আমরা মেডিক্যাল ডিভাইস বানানোর ব্যবসা করি। দেশের প্রায় সমস্ত হাসপাতালের সঙ্গেই আমাদের তথ্যের আদানপ্রদান করি। এটাই আমার সুবিধে।”

মিন হুয়ে হেসে বললো, “খুব ভালো।”

“কী কী এপিআই আর কোন কোন টুলস আপনি ব্যবহার করেছেন?”

“ম্যাটল্যাব, টেন্সরফ্লো, ডকার, নোড ডট জে এস" হে হাই শিয়াং-এর কোনো সাড়াশব্দ নেই দেখে মিন হুয়ে থেমে গেলো একটু, তারপর আবার বলতে লাগলো, “সি প্লাস প্লাস, জাভা, জাভাস্ক্রিপ্ট, টাইপস্ক্রিপ্ট, পাইথন, রুবি, শেফ, পাপেট, অ্যান্সিব্ল, টেরাফর্ম -”

“ওকে, যথেষ্ট।” হাত নেড়ে বললেন হে হাই শিয়াং। “বলতে পারবেন, আপনাদের এআই প্রজেক্টে আপনি ঠিক কী কাজ করতেন?”

“ফুল স্ট্যাক ডেভেলপমেন্ট। ডিসাইন থেকে ডেভেলপমেন্ট থেকে, টেস্টিং থেকে ক্লাউড ডিপ্লয়মেন্ট।”

“সত্যি?”

হে হাই শিয়াং-এর গলায় সন্দেহের পাহাড়, “এতো পারেন? আপনার প্রজেক্টের নাম কী?”

“ব্ল্যাক ডট প্রজেক্ট।”

হে হাই শিয়াং অবাক হয়ে একটা বিশাল হাঁ করলেন। পাক্কা দু সেকেন্ড থমকে রইলেন হে হাই শিয়াং, তারপর চাইলেন সাও মুয়ের দিকে। সাও মু আঙুল দিয়ে দেখালেন সিভিটার দিকে, ভ্রূ উঠিয়ে বাকি মানে স্পষ্ট করে দিলেন।

“শেষ প্রশ্নঃ আপনার মতে আপনার দূর্বলতা কী?”

“আমার দূর্বলতা -” মিন হুয়ে খানিক ভাবলো। তারপর বললো, “আমি সব সময়েই অন্য লোকের ডিসাইনের খামতি খুঁজে পাই। আমি সব সময়ে সেই সব খামতি সারিয়ে ফেলে নিঁখুত করতে চাই। আমি কিছুতেই নিজেকে সামলাতে পারি না, রিডিসাইন করে ফেলি। এর ফলে ডিসাইন টিমের মেম্বারদের আমি ভীষণই চটিয়ে ফেলি।”



মিনিট খানেক নিচু গলায় ফিসফিস করে কথা বলে নিলেন মিন হুয়ের সামনে বসা মানুষ দুজন। হে হাই শিয়াং ফোল্ডারের ওপরে একটা দাগ দিয়ে হাসি মুখে বললেন, “মিন হুয়ে, আপনি কাজে বহাল হলেন। বা'অ্যান টেকনোলজিতে আপনাকে স্বাগত। আপনার যদি কোনো প্রশ্ন না থাকে তবে এই ইন্টারভিউ এখানেই শেষ করে দেওয়া হবে।”

“দাঁড়ান, আমার কিছু বলার আছে।” মিন হুয়ে উঠে দাঁড়ালো আর মৃদু স্বরে বললো, “আমি প্রেগন্যান্ট। আপনাদের অসুবিধে নেই তো?”

দুজনেই একসাথে মিন হুয়ের তলপেটের দিকে তাকালেন।

মাত্র তিন মাস হয়েছে। তলপেট চ্যাপ্টা। কিছুই বোঝার উপায় নেই।



“এই-” হে হাই শিয়াং বললেন, “আপনি অন্তঃস্বত্তা হলে, আমাকে মাপ করবেন -”

“আমার কিচ্ছু যায় আসে না।" সাও মু থামিয়ে দিলেন হে হাই শিয়াংকে। আবার ফিসফিস করে কী সব বললেন হে হাই শিয়াং-এর কানে। হে হাই শিয়াং-এর অনিচ্ছে সত্ত্বেও সাও মু চেয়ার ছেড়ে উঠে, টেবিল পেরিয়ে এসে মিন হুয়ের হাত ধরে ঝাঁকিয়ে বললেন, “বা'অ্যান টেকনোলজিতে আপনাকে স্বাগত। আমরা আপনার স্বাস্থ্যের উপযোগী কাজের ভার সাজাবো। আপনি যতোটা পারবেন, ততোটা করবেন। চিন্তার কিছু নেই। আপনি ক্লান্ত হয়ে পড়বেন না।”

“ধন্যবাদ। আমি সম্মানিত বোধ করছি।” মিন হুয়ে জোরে জোরে সাও মুয়ের হাত ঝাঁকাল। ঘুরে দাঁড়িয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো।




~~~~~~~~~~~~

সম্পূর্ণ বই বিনামূল্যে : https://dl.bookfunnel.com/lcj5vznt96

Link to Previous Post in the Series : https://projectionofnaught.blogspot.com/2024/08/jpda-chapter-17.html

Link to following Post in the Series : https://projectionofnaught.blogspot.com/2024/08/jpda-chapter-19.html

No comments:

Post a Comment

Readers Loved