Friday, September 20, 2024

JPDA - Chapter 45

 ৪৫. ভীমরুল



পর পর তিন রাত ওভার টাইম কাজ না করতে হওয়ায়, মিন হুয়ের যেনো প্রাণ ফিরে পেলো, যেনো শরীরে সব রক্ত ফিরে এলো। ওর মনে পড়ে গেলো সু ছন যখন হাসপাতালে ছিলো, শিন ছি ওকে বলে ছিলো ভাঙা ঘড়িটা সারিয়ে দেবার জন্য। মিন হুয়েও কথা দিয়ে ছিলো সারিয়ে দেবে বলে, কিন্তু কখনোই ঘড়িটা সারিয়ে দেয় নি। এখন সময় আছে, কাজের চাপও তেমন নেই, সু ছনও ঝরঝরে হয়ে উঠছে মিন হুয়ের মতো, তা মা আর ছেলে দুটো সন্ধে ধরে ঘড়িটা খুলে ফেললো কেবলমাত্র ঘড়ি সারানোর বিশেষ স্ক্রু ড্রাইভার দিয়ে যাতে ঘড়ির চলনটা বোঝা যায়। একে একে সব যন্ত্রাংশ খুলে ফেলা হলো। 

মিন হুয়ে ভেবে ছিলো ব্যাপারটা সহজ, সরল। কিন্তু ঘড়িটা পুরো খুলে ফেলার পরে কিছুতেই ও আর ঘড়িটাকে যে জুড়ে ফেলতে পারবে না, সেটা ও ভাবে নি একবারও।

মিন হুয়ে সব যন্ত্রাংশ খুলে ফেললো, জুড়ে দিলো। আবার খুলে ফেললো, আবার জুড়ে দিলো, কিন্তু শেষে সেই একটা বা দুটো অংশ রয়ে যাচ্ছে। যেগুলোকে কিছুতেই ভেতরে পুরে দেওয়া যাচ্ছে না, যাই হোক না কেনো। ও ভাব ছিলো ঘড়িটা সারানো হয়ে গেলে শিন ছিকে ফেরত দিয়ে দেবে, যখন বেজিং-এ যাবে মিটিং-এর জন্য। কিন্তু দেখা গেলো যে খুব দেরী হয়ে গেছে। তাই ও একটা জুতোর বাক্সের মধ্যে ঘড়িটার সব যন্ত্রাংশগুলো পুরে রাখলো আপাতত।

পরের দিন বাড়ি ফিরে মিন হুয়ে জুতোর বাক্সটা বার করে, ঘড়িটা জুড়ে ফেলবে ভাবলো। কিন্তু বাক্স হাতে নিয়ে ওর মুখে আর কথা সরে না।

হয়তো সু ছন ভেবেছে যে ওর মা ঘড়িটাকে বাতিল করে দিয়েছে, হলুদ প্লাস্টিসিনের একটা বড়ো গোলা খুঁজে বার করে, না জানি কোথা থেকে একটা সরু তার এনে, ঘড়ির যন্ত্রাংশগুলোকে পেঁচিয়ে একটা ‘ট্রান্সফরমার’-এর ‘ঘড়ি-বাম্বল্‌বি’ বানিয়ে ফেলেছে।

যদিও দূর থেকে দেখলে জিনিসটাকে অদ্ভুত দেখায়, কিন্তু ছেলেমানুষী ছাপটা পুরোটা জুড়ে ধরা পড়েছে, জিনিসটা দেখতেও একই রকম।

মিন হুয়ে এতো রেগে গেলো যে একটা হুংকারই দিয়ে ফেললো, খানিক চেঁচামেচিও করলো ছেলের ওপরে, “ছন ছন, মা বলে ছিলো না বাবার ঘড়ি নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করবে না! দেখো কী করেছো, মা কিছুতেই এটাকে আর জুড়তে পারবে না এটাকে অমন করে তছনছ করলে!”

অসুখের পরে এই প্রথমবার সু ছন মায়ের কাছে বকা খেলো। মিন হুয়ে এতো জোরে চেঁচালো যে সু ছন তখনই কাঁদতে শুরু করলো।

মিন হুয়ে ভয় পেলো যে ছেলে হয়তো খুব কান্নাকাটি করবে। ও তখনই ছেলেকে কোলে নিয়ে ভোলাতে লাগলো, “কেঁদো না একদম। আর কক্ষণো এরকম করবে না। নিজের ঘরে যাও, খানিক ক্ষণ খেলা করো। পরে মা এটাকে ঠিক করে দেবে।”

ভুলিয়ে ভালিয়ে সু ছনকে শান্ত করে, মিন হুয়ে স্টাডিতে গেলো। বাম্বল্‌বিটা হাতে নিয়ে মিনিট পাঁচেক দেখলো খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে, আর ওর মনের মধ্যে হতাশার বিস্ফোরণ হলো যেনো। ঘড়িটার যন্ত্রাংশগুলো খুবই সূক্ষ্ম, সেগুলোর মধ্যে অনেক রকমের ছ্যাঁদা করা আছে, সেগুলোর ভেতরে একবার প্লাস্টিসিন ঢুকে গেলে, সে গুলোর ভেতর থেকে খুঁটে খুঁটে প্লাস্টিসিন বার করা খুব কঠিন। একটা অতো বাচ্চা ছেলে সারা দুপুর জিনিসটা নিয়ে খেলেছে, তারপরে ন্যানি সাফসুতরো করেছেন খেলার জায়গাটা, মিন হুয়ে খুব নিশ্চিত নয় যে সব কটা যন্ত্রাংশ এখনো আছে ওর মধ্যে। মিন হুয়ে কিছুতেই আর ওগুলোকে জুড়তে পারবে না। একটা নতুন ঘড়ি কিনে শিন ছিকে দিয়ে দেয় না কেনো?

ও অনলাইন দেখলো। ঘড়িটা দেখতে তেমন দূর্দান্ত নয়, কিন্তু দামটা দূর্দান্ত - বাওবো জোডিয়াক লিমিটেড এডিসন। দামটা ছ লাখ উয়াঁরও ওপরে। আবার শিন ছি বলেছে দামটা তেমন বেশি নয়। কিন্তু এই ঘড়িটা হাতে পরা আর একটা ছোটো অ্যাপার্টমেন্ট হাতে পরা একই ব্যাপার। 

জোডিয়াক লিমিটেড এডিসন


যদি মিন হুয়ে ঘড়িটা কিনতে না পারে, তা হলে ও পেশাদার কাউকে দিয়ে সারানোর ব্যবস্থা করতে পারে। তাতেও খানিক আশা আছে। 

মিন হুয়ে তাড়াহুড়ো করে ঘড়ির দোকানে ফোন করলো অবস্থাটা বোঝাতে। যখন দোকানে কর্মী শুনলেন যে ওটা কী কাজে ব্যবহার করেছে বাচ্চা, উনি জানালেন যে ঘড়িটা সারানো যাবে না। একটা সাদামাটা ট্যুরবিলিয়ন ঘড়িতে সাধারণতঃ দুশোটা যন্ত্রাংশ থাকে। কিন্তু এই ঘড়িটায় চারশো চৌষট্টিটা যন্ত্রাংশ আছে। তার মধ্যে বসানো আছে ঊনচল্লিশটা রত্ন। পরামর্শ পাওয়া গেলো যে ও যেনো বেজিং বা সাংহাই-এর ব্লাঁপ্যাঁ দোকানে যোগাযোগ করে। সৌভাগ্য হলে ওঁরা সাহায্য করতে পারেন।

ট্যুরবিলিয়ন ঘড়ি


ফোন রেখে মিন হুয়ে বাক্সের মধ্যেটা তন্ন তন্ন করে খুঁজে দেখলো। একটা ছোটো মেডিক্যাল ক্যামেরা খুঁজে পেলো। এরপরে ও প্লাস্টিসিন থেকে খুঁটে খুঁটে যন্ত্রাংশগুলো বার করার জন্য তৈরি হচ্ছিলো। এমন সময়ে ফোন বেজে উঠলো। শিন ছি অনুরোধ করছে ভিডিও কলের।

“ছন ছনের কী হয়েছে? শোবার ঘরে একলা বসে কাঁদছে ও।” জানতে চাইলো শিন ছি।

মিন হুয়ে দৌড়ে গেলো শোবার ঘরে। দেখলো বিছানার ওপরে বসে আছে সু ছন। একটা বালিশকে আঁকড়ে ধরে আছে। হাত দিয়ে চোখ ঢেকে রেখেছে। থেকে থেকে ফোঁপাচ্ছে, ওর ছোট্টো কাঁধটা নড়ে উঠছে। 

মিন হুয়ের কোনো উপায় রইলো না আর ছন ছনকে জড়িয়ে ধরা ছাড়া। ফোনে বললো, “আমি তোর ঘড়িটা সারাচ্ছিলাম। আমি সকালে বেরোনোর সময়ে ওকে ঘড়িটার ব্যাপারে সাবধান করে যেতে ভুলে গিয়ে ছিলাম। ফিরে এসে দেখি যে আমাকে কিচ্ছু না জানিয়ে, কারুর অনুমতি না নিয়ে, প্লাস্টিসিন দিয়ে ও ঘড়ির পার্টসগুলো জুড়ে একটা ট্রান্সফর্মার বানিয়েছে।”

কথাটা বলা শেষ হতেই ও ‘বাম্বল্‌বি’-টা ফোনের ক্যামেরার সামনে ধরলো, “এই যে এইটা ওর ‘মাস্টারপিস’।”

“ওয়াও-” ভিডিও কলেই শিন ছি মুগ্ধ উত্তেজনায় চেঁচিয়ে উঠলো, “আমার আর্জা তো জিনিয়াস!”

মিন হুয়ে ছাদের দিকে চাইলো চোখ মেলে, “...”

ছন ছন যেই টের পেলো যে ওর মা ওর বিরোধিতা করছে আর ওর বাবা ওকে সমর্থন করছে, অমনি ও আরো জোরে কান্না জুড়ে দিলো, “উউউউউউউউউউউউউউউউউউউউউউউউউউউউউউউউউউ ও বলেছে এটা কোনো কাজের নয়, যদি খুব ভালো নকল না করা যায় উউউউউউউউউউউউউউউউউউ”

“হ্যাঁ” হেসে বললো শিন ছি, “যাই হোক, ঘড়িটা ভাঙা, কিন্তু ওটা ফেলে দিতেও খারাপ লাগছে। ওটা দিয়ে তুমি যখন বাম্বল্‌বি বানিয়েই ফেলেছো তখন ওটা টেবিলে রেখে দাও না কেনো? এটা তো একটা সাজানোর জিনিস হিসেবে খুব ভালো।”

“তাই হবে!”

“তারপরে তুমি মাকে বলে দেবে যে বাবা বাম্বল্‌বিটা চেয়েছে। আর মা ওটাকে ভেঙে ফেলতে পারবে না কক্ষণো। ঠিক আছে?”

মিন হুয়ে তাকালো শিন ছির দিকে, “কী -?”

সু ছন পকেট থেকে একটা খেলনা ঘড়ি বার করলো, “বাবা, তোমার ঘড়িটা ভেঙে গেছে, কিন্তু আমারটা যায় নি, তাই আমি তোমাকে এই ঘড়িটা দিলাম।”

ঘড়িটা মিন হুয়ে এয়ারপোর্টে কিনে ছিলো একবার একটা কাজ থেকে ফেরার পথে। ট্রান্সফরমার সিরিজের মূল চরিত্র অপটিমাস প্রাইমের একটা ছবি আছে ঘড়িটার মধ্যে। তাই ঘড়িটা সু ছনের খুব পছন্দ। প্রত্যেক দিন কিন্ডারগার্টেনে যাবার সময়ে ঘড়িটা নিয়ে যায়। একবার একটা কৌতুহলী বাচ্চা কেড়ে নিয়ে ছিলো ঘড়িটা, দু জনে খুব মারপিট করে ছিলো।

অপটিমাস প্রাইম


“তোমার ঘড়ি …”

মিন হিয়ে ভাবলো, ওটা তো তিরিশ উয়াঁ।

“ঠিক আছে, এর পরের বার যখন বাবা আসবে তোমার কাছে, তখন মনে করে আমাকে দিও।”

“বাবা, তোমার জন্য মন কেমন করে।”

শেষে সু ছনের মুখে একটু হাসি দেখা গেলো। যদিও চোখের পাতায় তখনও জলের ফোঁটা লেগে আছে একটা। 

“বাবারও খুব মনে পড়ে তোমার কথা। এবার আমাকে যেতে হবে। একটা মিটিং আছে এখনই। আবার পরে দেখা হবে আমাদের।”

ভিডিও বন্ধ হয়ে গেলো।

রাত নটা নাগাদ, সু ছিন ঠিক ঘুমিয়ে পড়ার পরে, ছাদের থেকে নেমে এলো শিন ছির গলার স্বর, “ও কি ঘুমিয়ে পড়েছে?”

মিন হুয়ে একটা বড়ো বাক্স করে সু ছনের নিজে হাতে বানানো প্লাস্টিসিনের পুতুল গুছিয়ে রেখেছে। পরের বার এলে শিন ছি কয়েকটা নিয়ে যেতে পারবে। 

“আমার এটাই চাই।”

"কেনো?”

“ওটা টেবিলে রেখে দে, তোর নিজেকে মনে করানোর জন্য, হ্যাঁ, এখনো দুয়েকটা কাজ আছে যা মিন হুয়ে মোটেও করতে পারে না।”

“...”

“শিল্পের একটা বিশেষত্ব আছে। নিজের সীমাটা জেনে রাখা ভালো।”

মিন হুয়ে কেবল নিজের দিকে তাকিয়ে হাসতে পারে।

ও দেখলো শিন ছি একটা নাইট গাউন পরে আছে। বসার ঘরের সোফাতে আধশোয়া হয়ে হাতের তালুর মাপের একটা যন্ত্র ধরে আছে। 

“কী করছিস?”

মিন হুয়ে ওর গলার ক্লান্ত স্বর শুনতে পেলো, “আইএনআর মাপছি।”

শিন ছির হৃদপিন্ডে একটা যান্ত্রিক ভালভ্‌ বসানো আছে। ভালভ্‌টা টেকসই, কিন্তু রক্ত জমাট বাধিয়ে দিতে পারে। সারা জীবন একটা ওয়ারফারিন নামে একটা ওষুধ খেতে হয় যা রক্তজমাট বাধতে দেয় না। ওষুধের মাত্রা খুব যত্ন নিয়ে মাপতে হয়, না হলে অন্য বিপদ হতে পারে। খুব বেশি মাত্রায় নিলে খাবারের নালীতে বা মস্তিষ্কের ভেতরে রক্তক্ষরণ হতে পারে। আবার ওষুধের মাত্রা খুব হলে হঠাৎ মৃত্যু ঘটতে পারে শিরার মধ্যে জমাট রক্ত ভালভে আটকে গিয়ে।

শিন ছি নিশ্চয়ই রোজ খায় ওষুধটা। তার সঙ্গে থেকে থেকে রক্ত পরীক্ষা করাতে হয়, ডাক্তারের কাছে যেতে হয় শুধু এইটা দেখার জন্য যে আইএনআরের মান নিরাপদ সীমার মধ্যে আছে। নাহলে ওষুধের মাত্রা শোধরাতে হবে। 

তা বাদে, ওয়ারফারিন অন্যন্য খাবার আর ওষুধের সাথে বিক্রিয়া করে বিপদ ডেকে আনতে পারে। ধনে পাতা, সেলারি, লিকস, নটে শাক আর পালং শাক বেশি খাওয়া যায় না। বেশি খেলে ওষুধের কাজ করার ক্ষমতা কমে যাবে। এর সাথে আবার সনাতন চিনে ওষুধ খেলেও সমস্যা হতে পারে।

তাই শিন ছি সবসময়ে একটা বয়ে বেড়ানোর মতো আইএনআর যন্ত্র সঙ্গে রাখে, যাতে দেখে নেওয়া যায় রক্ত জমাট বাধল কিনা। আঙুলের আগার রক্ত দিয়ে আইএনআর মান দেখে নেয়।

“সব স্বাভাবিক?”

“হ্যাঁ, ঠিক আছে।”

মিন হুয়ে বুঝতে পারছিলো না কেনো - ভিডিওটা খারাপ মানের বলে নাকি আলোতে বিভ্রম তৈরি করেছে বলে - শিন ছিকে অসুস্থ, দূর্বল দেখাচ্ছে। ওর চালচলনও যেনো কেমন ঝিমিয়ে গেছে।

“তাড়াতাড়ি শুয়ে পড়,” বললো মিন হুয়ে, “ওয়া আ’ন।”

“দাঁড়া, আমার আর্জার বানানো বাম্বল্‌বিটার একটা ছবি তুলে পাঠা।”

“এই প্রতিভা, ভবিষ্যতে কী পড়বে? ইন্ডাস্ট্রিয়াল ডিসাইন পড়লে কেমন হয়?”

“ইন্ডাস্ট্রিয়াল ডিসাইন? তাতে কাজ পাবে তো?”

“যদি আরআইএসডির ডিগ্রি থাকে, তবে নিশ্চয়ই পাবে।”

“আরআইএসডি?”

“রোড আইল্যান্ড স্কুল অফ ডিসাইন, ওদের ইন্ডাস্ট্রিয়াল ডিসাইন খুব নামকরা। আমার হাইস্কুল ক্লাসমেটদের একজন ওখান থেকে পাস করেছে। আমি ওর সাথে অনেক দিন যোগাযোগ করি নি। উম্‌, সুযোগ করে ওর সাথে কথা বলতে হবে।”

“এখনো সময় আছে, আমার আর্জা বড্ডো বাচ্চা এখনো।”

“আমাদের এখন থেকেই ব্যবস্থা করে রাখতে হবে, আমি যদি আগে ভাগে মরে যাই।”

“অ্যাই, ঐ, যতো দূর্ভাগ্যের কথা বলবি না।” মিন হুয়ে ধড়ফড় করে প্রসঙ্গ বদলালো। “একটা কথা তোকে জিজ্ঞেস করবো ভাবছি কয়েক দিন ধরে। যদি উত্তর দেবার মতো না হয়, তা হলে উত্তর দিস না।”

“তুই কী চেং ছিরাং-এর সঙ্গে কাজ করছিস?”

“আমরা কতকগুলো ব্যবসায়িক অনুষ্ঠানে মুখোমুখি হয়েছি। এই কদিন হলো, কয়েকটা কাজ একসাথে করার কথা হচ্ছে। কিন্তু তেমন কিছু এগোয় নি।” বললো শিন ছি।

চেং ছিরাং কাজ করেছে গুয়ান ছাওতে কুড়ি বছরেরও বেশি। ব্যবসায়িক মহলে ওর নামডাক ওর বাস্তব বিবেচনা আর বিচক্ষণ সিন্ধান্ত নেবার জন্য। সঙ্কটের মূহুর্তে চিন্তা করার আর কাজ করার সাহস দেখাতে পারে লোকটা। ওর শ্বশুরের আশীর্বাদে শিল্পক্ষেত্রে অনেক লোক বিশ্বাস করে ওর যোগ্যতায়।

“ওর সাথে কাজ করিস না, ও বিশ্বাসের যোগ্য নয়।” মিন হুয়ে বললো, “এমন একটা লোক যার এ ব্যাপারে অভিজ্ঞতা আছে, তেমন একজন হিসেবে আমি তোকে বার বার মনে করিয়ে দেবো।”

মিন হুয়ের গলার স্বর ভরা আন্তরিকতা। কিন্তু শিন ছি তৎক্ষণাৎ ভুল শুনলো আর বিদ্রুপ করতে শুরু করলো, “আগে বলে দি, তোর কথা শোনার দরকার নেই আমার। তুই আমাকে সচেতন হতে বলছিস? বেশি দিন হয় নি, আমার সামনে তুই -”

“-- তার কারণ আমি ওর কাছে কিছু চাইতে গিয়ে ছিলাম, প্রতিদানের শর্ত ছিলো ওটা।” ধড়ফড় করে বলে উঠলো মিন হুয়ে, “ওর বাবা চেং গুয়াং য়ি, বিনচেং-এ বাচ্চাদের ওপেন হার্ট সার্জারির সেরা সার্জেন। সারা দেশে ওপেন হার্ট সার্জারির সেরা সার্জেনদের মধ্যে একজন। উনি সু ছনের অপেরেসনটা করেছেন।”

“তুই যদি আমাকে আগে বলতিস যে তোর ছেলের এমন অবস্থা, তাহলে আমি ওকে ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিকে আনিয়ে নিতাম, যেখানে সারা পৃথিবীর সেরা সার্জেনরা আছেন, যেখানে আরবের রাজপুত্রদের সার্জারি হয়। তোর এতো নিচু হবার দরকার নেই, একটু সাহায্যের জন্য নিজেকে অমন করে বেচার দরকার নেই।”

“...”

মিন হুয়ের অনুশোচনা হতে লাগলো কথাটা বলার জন্য। এরপর অনেক তিরস্কার সহ্য করতে হবে।

“তুই জানিস আমি ইউনাইটেড স্টেটসে থাকি। তুই এটাও জানিস যে আমি গরীব নই। আমার উপায় ছিলো একটা আরো ভালো সার্জেন দিয়ে ওর অপেরেসন করানোর। তুই আমাকে আগে বলিস নি কেনো? তুই জেদ করে চেপে রেখে ছিলি কথাটা চার বছর ধরে। আর ছেলের জীবন নিয়ে জুয়া খেলছিস, এর কোনো মানে আছে?”

“না, এর কোনো মানে নেই। ভুলটা আমারই।”

ওর মেজাজ আরো বিগড়ে যাচ্ছে, ওকে আরো অসুস্থ দেখাচ্ছে দেখে মিন হুয়ে তাড়াতাড়ি বললো, “তখন অবস্থা খুব গুরুতর ছিলো।”

“জেনে ভালো লাগলো।”

“আমার সাথে চেং ছিরাং-এর বিরোধের সাথে তোর কোনো সম্পর্ক নেই। আর আমি তোকে এর মধ্যে জড়াতেও চাই না। তোকে চেং ছিরাং-এর ব্যাপারে সতর্ক করার একটাই কারণ। সেটা হলো আমার সাথে বোঝা পড়া করার জন্য ও তোর সঙ্গে ঝামেলা করতে পারে। আমি চাই না যে এই আগুনে তুইও জ্বলে পুড়ে ছাই হয়ে যা।”

“আমার সাথে ওর কোনো ব্যবসায়িক বা টাকার লেনদেনের সম্পর্ক নেই এই মূহুর্তে। তুই যদি তোর যা খুশি তাই করতে থাকিস, তাহলে ও কী করে আমার সঙ্গে ঝামেলা করবে?”

“আমি জানি না। ও আমাকে বলেছে আমি যেনো তোকে বলি সরে যেতে।”

“হোয়াট দ্য হেক?” শিন ছি বিদ্রুপের সুরে বললো, “ওর সাহস কী করে হয় তোকে ওকথা বলার?”



“আমি জানি না ও কী করে জেনেছে আমার সাথে তোর সম্পর্কের কথা। ওর বাবার অনেক পরিচিত লোক আছে বিনচেং হাসপাতালে। হয়তো তুই যদি ভবিষ্যতে চুপচাপ থাকিস …”

“আমার কী সমস্যা? আমি কেনো চুপচাপ থাকতে যাবো?”

“যেমন ধর, তোর যদি বিয়ে না হয়ে থাকে, তাহলে সব্বাইকে বলে বেড়ানোর দরকার নেই যে তুই সু ছনের আসল বাবা। এতে অনেক ভুল বোঝাবুঝি তৈরি হয়। লোকে অনুমান করতে শুরু করবে তোর আর আমার কোনো অস্বাভাবিক সম্পর্ক আছে।”

“তোর সাথে আমার সম্পর্কটা কী - মিন হুয়ে - তুই বল।”

শিন ছি আবার রেগে উঠতে চলেছে দেখে মিন হিয়ে বললো চটপট, “আমি যদ্দুর বুঝি, আমার সাথে তোর কোনো সম্পর্ক নেই।” মিন হুয়ে মাথা চুলকোলো, “আমি দূর্ঘটনাবশত তোর ছেলের জন্ম দিয়েছি।”

“ওর জন্ম হয়েছে প্রতারণার মধ্যে।”

“আমার ছেলেকে মেরে ফেলেছিস তুই।”

“এটাই ঠিক, এইটাই। আমি মনে করিয়ে দিলাম, যা মনে করানো প্রয়োজন।”

এই সময়ে মিন হুয়ের ইচ্ছে কর ছিলো ছুটে পালিয়ে যেতে, “ওয়া আ’ন” বলে মিন হুয়ে আর অপেক্ষা করলো না, ভিডিওটা চট করে বন্ধ করে দিলো।

***



বেজিং যাবার আগেই সাও মু বললো মিন হুয়েকে ইয়ান চেং লি আর শু গুয়াং জিয়াঁ এবং তার সাথে হে হাই শিয়াং তিনজনেই রাজি হয়েছে ম্যানেজমেন্ট টিমে যোগ দিতে। সেই জন্য পাঁচ জনে একটা মিটিং-এ বসলো পরিকল্পনা করার জন্য এই যে কে কী কাজ করবে, আর বিনিয়োগের সন্ধান কোথায় করা যায় সেই সব।

“শু জঁ আর আমি আলাদা আলাদা করে দুটো প্রাইভেট ইক্যুইটি ফান্ডের সঙ্গে কথা বলেছি। দুটো ভেঞ্চার ক্যাপিট্যাল ফার্ম আর একটা ব্যাঙ্কের সাথে। এঁরা সবাই উৎসাহ দেখিয়েছেন।” বললো সাও মু, “কিন্তু এঁরা যে পরিমাণ বিনিয়োগ করবেন বলছেন, সেই টাকাটার পরিমাণ খুব বেশি নয়। সেই জন্য তিনটে বা তার বেশি ফার্মের সঙ্গে একটা জয়েন্ট ভেঞ্চার লাগবে। তবে নিলামে জেতার সম্ভাবনা দেখা দেবে।”

“প্রাইভেট ইক্যুইটি কোম্পানিগুলোকে ভালো করে যাচাই করতে হবে। যেগুলোর লক্ষ্য কেবলমাত্র ব্যবসায়িক মুনাফা, তাদের সঙ্গে কাজ করা যাবে না।” ইয়ান চেং লি মনে করিয়ে দিলেন, “বা’অ্যান এখনো রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের কাজ করে, এটা খুব লাভজনক সংস্থাও নয়। মূলধন যদি বাধ্য করে ব্যবসার রাস্তা ধরার জন্য, তাহলে পরিণতিটা ভালো নাও হতে পারে।”

ঘাড় নেড়ে হে হাই শিয়াং সায় দিলেন, “যদিও আমি জানি না যে হেডকোয়ার্টার্স চুক্তির ব্যাপারে ঠিক কী ভাবছে, বা কী ধরনের দর হাঁকতে চাইছে, কিন্তু আমি এটা জানি যে বা’অ্যানের বাজারদর আট কোটি থেকে দশ কোটি উয়াঁর মধ্যে হওয়া উচিৎ। প্রায়। আমরা যদি বারো কোটি উয়াঁ জড়ো করতে পারি তাহলে আমরা নিলামে জিততেও পারি।”

একটু থেমে আবার বললেন, “অবশ্যই বেশি টাকা, মানে বেশি নিরাপদ।”

বারো কোটি? মিন হুয়ের কোনো ধারণাই নেই টাকার ব্যাপারে। অন্যান্য কোম্পানির সাথে তুলনায় বারো কোটি কিছু বেশিই দাম। 

হতে পারে জিএস১.০-র জন্য, নিঃশব্দে অনুমান করলো মিন হুয়ে।

“আমাদের হয়ে আলাপ-আলোচনা করবে কে?” হে হাই শিয়াং জানতে চাইলেন আবার, “আমরা নিজেরা তো করতে পারি না, পারি কী?”

“আমি তিনটে কোম্পানির সাথে কথা বলেছি যারা মধ্যস্থতা করে। যেমন আঁহুয়া, পুরিঁ, এএআর। এখনকার মতো এএআর কাজ করবে এটাই ধরে চলছি। ওরা একটা এজেন্সি ফি নেবে। কিন্তু যা যা লাগবে সব কাজ ওরাই করে দেবে।” সাও মু বলতে লাগলো, “ইন্ডান্সট্রিতে এএআর-এর বেশ নামডাক, ওদের ক্ষমতাও আছে কাজটা করার। আমাদের হয়ে কথা বলার জন্য ওদেরকে রাখার কারণ প্রথমত, ওদের অভিজ্ঞতা আছে এরকম কাজ করার, দ্বিতীয়ত, হেডকোয়ার্টার্স ওদের অন্য চোখে দেখবে। না হলে, প্রথম রাউন্ডেই আমরা প্রতিযোগিতার বাইরে ছিটকে পড়ব।”

“ওদের অভিজ্ঞতা আছে, কিন্তু এজেন্সির কাজের দামটাও অনেক পড়বে, তাই না?” জানতে চাইলো ইয়ান চেং লি।

“লেনদেনের পরিমাণের দু শতাংশ।”

“সে তো অনেক!” বার বার মাথা নাড়তে লাগলো শু গুয়াং জিয়াঁ।

“আমি চেষ্টা করবো কথা বলে ওটা দেড় শতাংশ করার।”

“বারো কোটি উয়াঁর জন্য ম্যানেজমেন্ট টিমকে অ্যাক্যুইজিসন ফান্ডের দশ শতাংশ দিতে হবে, নতুন কোম্পানির ভিত্তি হিসেবে। তার মানে এক কোটি কুড়ি লাখ উয়াঁ, পাঁচ জনের মধ্যে ভাগ করে নেওয়া। এক এক জনের চব্বিশ লাখ।”

সাও মু বলে চললো, “টাকার পরিমাণটা খুব কম। প্রত্যেকেই আনতে পারবেন তো? কোনো সমস্যা আছে?”

চব্বিশ লাখ!

মিন হুয়ে নিজের হৃৎপিন্ডখানা চেপে ধরলো। নিতান্ত নির্বোধের মতো ও ভাব ছিলো যে ও ম্যানেজমেন্ট টিমে অংশ নিলেই হবে নিয়ম রক্ষের পাঁচ জনের জায়গা পূরণের জন্য। ও ঘূণক্ষরেও ভাবে নি যে ওকে টাকা আনতে হবে। তাও আবার এতো টাকা।

“আমার অসুবিধে নেই।” জানালো শু গুয়াং জিয়াঁ।

“আমিও পারব।” বললো ইয়ান চেং লি।

“আমি কুড়ি লাখ দিতে পারব। বাকি চার লাখ আমি আমার আত্মীয়দের থেকে ধার করবো।” যোগ দিলো সাও মু, “এটা কোনো বড়ো সমস্যাই নয়।”

মিন হুয়ে একবার সাও মুয়ের দিকে তাকালো, দশ দিন কেটে গেছে, এখনো য়িন শু কোনো দোষ স্বীকার করে নি। না হলে সাও মু এতো উদ্দীপণার মধ্যে থাকতো না। এতো কাজ এতো অল্প সময়ে করে ফেলতে পারতো না।

য়িন পরিবার ধনী। ওঁর পূর্বপুরুষেরা প্রচুর পুরোনো বাড়ির মালিক ছিলেন শহরের কেন্দ্রের সব থেকে খরচ সাপেক্ষ এলাকায়। এলাকাটা ছোটো নয়। ওরা এখন বাড়ি ভাড়ার পয়সা যা পায় তাতেই ওদের চলে যায়। যদি ওগুলোর কোনো একটাকে বেচে দেয় তো সত্তর - আশি লাখ পেয়েই যাবে।

“আমাকে বাড়ি গিয়ে আমার স্ত্রীর সাথে কথা বলতে হবে।” হে হাই শিয়াং কাশলেন, হাসলেন অপ্রস্তুত হয়ে, “আমার ভয় যে আমাকে বোধ হয় বাড়িটা বাধা দিতে হবে।”

সবাই সন্দেহের চোখে তাকালো হে হাই শিয়াং-এর দিকে।

“মিন হুয়ে কী করবে?” অনেক ক্ষণ মিন হুয়ে কিছু বলে নি দেখে জানতে চাইলো সাও মু। 

“আমি, আমি …” মুখ লাল করে মিন হুয়ে বললো, “এই মূহুর্তে এতো টাকা আমি আনতে পারবো না, তবে আমি মন দিয়ে ভেবে একটা উপায় বার করবই।”

“যদি টাকার ব্যাপারটা আলোচনা করে নেওয়া যায়, প্রথম দফা নিলাম শুরু হবার আগেই এই টাকাটা এসে যাওয়া চাই। সবাই দয়া করে একটা উপায় বার করুন যাতে কাজটা যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব ততো তাড়াতাড়ি করে ফেলা যায়।

যখন সবাই সাও মুয়ের দিকে তাকালো, সাও মুও তাকালো সবার দিকে, সবাই যেনো ভার অনুভব করলো। উচ্চাশা একটা ব্যাপার, আর টাকা আরেকটা।

চব্বিশ লাখ টাকা সাধারণ খেটে খাওয়া লোকের জন্য খুব কম টাকা নয়। কারুর কারুর যথা সর্বস্বর মূল্য ঐ টাকাটা। 

ব্যবসা খারাপ গেলে, টাকাটা খুব শিগগিরই মিলিয়ে যাবে যেমন চটপট জলে নুন মিশে যায় তেমনই। 

“কী হবে যদি আমি সত্যিই কোনো টাকা জোগাড় করতে না পারি তো?” মিন হুয়ে দুশ্চিন্তায় পড়ে গেলো।

“তাহলে আর কিছুই করার থাকবে না, আমাদের ছেড়ে দিতে হবে অ্যাক্যুইজিসনের চেষ্টা। আর অন্য কেউ সেই জায়গাটা নিয়ে নেবে।” সাও মু বললো, “যদি তুমি কোনো উপায় না বার করতে পারো, তা হলে যতো তাড়াতাড়ি জানানো সম্ভব ততো তাড়াতাড়ি আমাদের জানিয়ে দিও। আমরা তাহলে আমাদের পরের ধাপটার পরিকল্পনা করতে পারব।”

“ওকে।”

মিন হুয়ে ঘাড় নাড়লো। কিন্তু মনের মধ্যে ওর দুশ্চিন্তার ঝড় বয়ে যাচ্ছিলো। চব্বিশ লাখ, কী যে করা যায়?




~~~~~~~~~~~~

সম্পূর্ণ বই বিনামূল্যে : https://dl.bookfunnel.com/lcj5vznt96

Link to Previous Post in the Series : https://projectionofnaught.blogspot.com/2024/09/jpda-chapter-44.html

Link to following Post in the Series : https://projectionofnaught.blogspot.com/2024/09/jpda-chapter-46.html

Readers Loved