Tuesday, August 20, 2024

JPDA - Chapter 14

 ১৪. হে শিয়ান গু



গেস্টহাউসে ফেরার পথে, ট্যাক্সিতে বসেই দুজনে গভীর আলোচনায় ডুবে গেলো। পরিবার অনুসন্ধানের ওয়েবসাইট থেকে যে সব সূত্র পাওয়া গেছে সেগুলোর সবটা বিবেচনা করে বোঝা গেলো যে সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো সামনে তং তিয়াঁ হাই-এর মামাতো ভাইকে খুঁজে বার করা। নিশ্চয়ই তার সাথে বাচ্চা চোরেদের যোগাযোগ আছে। না হলে তং তিয়াঁ হাই ভাবা মাত্র দত্তক নেবার বাচ্চা চটপট করে পেয়ে ছিলো কী করে? তার ওপর আবার একাধিক বাচ্চার মধ্যে থেকে তার পছন্দ মতো বাচ্চা বেছে নিতে পেরে ছিলো। 

মিন হুয়ে তখনই তং তিয়াঁ হাইকে ফোন করলো, তার মামাতো ভাইয়ের ফোন নম্বর চাইবে বলে। মামাতোভাই এটাসেটা কথার পর জানালো যে বাচ্চা দুটোকে ঝৌ লুর কাছে দিয়ে ছিলো তার বউয়ের গ্রামের একজন লোক। মামাতো ভাই এও জানালো যে হে শিয়ান গু সারা বছর নানান জায়গায় ঘুরে ঘুরে বেড়ায়, নানারকম কাজ কারবার করে থাকে। গ্রামের লোকে বলে মহিলা বেশ ওস্তাদ। বয়স এখন প্রায় পাঁচের কোঠায়। সাধারণত থাকে ইউন্নান প্রদেশে তংবি কাউন্টির একটা গ্রামে। তখন ছেলেটার জন্য চল্লিশ হাজার য়ুআঁরও বেশি চেয়ে ছিলো প্রথমে। পরে দামটা বিবেচনা করে যেহেতু হে শিয়ান গুর জামাইকে মামাতোভাইয়ের বউ একটা কাজের বন্দোবস্ত করে দিয়ে ছিলো।

মিন হুয়ে স্পষ্ট করে জানতে চায়, “আসলে মহিলা মানুষ পাচারের কারবার করে, তাই তো?”

“স্বীকার করে না কখনো সে সব কথা। বলে যে এই বাচ্চারা অতিজন্মার ফল, এদের বাপ-মায়েরা এদের প্রতিপালনে অক্ষম। সেই জন্য তারা ওকে বাচ্চার জন্য একটা ভালো পরিবার খুঁজে দিতে বলে যাতে বাচ্চার খাওয়া-পরার অভাব না হয়।”

মামাতো ভাইয়ের গলার স্বর ফোনের অন্য পাড়ে গমগম করছে। কথা বেশ অস্পষ্ট শোনাচ্ছে নাকি স্বরের জন্য। 

মিন হুয়ে আবার জানতে চাইলো, “বলেছে কী কখনো যে কোথায় পেয়ে ছিলো অন্য বাচ্চাটাকে?”

“আমি জানতে চাই নি। যারা এ ধরনের কারবার করে, তারা সবকিছু খুব চাপা দিয়ে রাখে। কার সাহস আছে এতো কথা জিজ্ঞেস করার?”

অনেকক্ষণ ধরে মিন হুয়ে প্রশ্নের পর প্রশ্ন করে চললো। চেষ্টা করলো হে শিয়ান গুয়ের ফোন নাম্বার জোগাড় করতে। কিন্তু মামাতোভাই বা তার বৌয়ের সাথে হে শিয়ান গুয়ের আর কোনো যোগাযোগ নেই বহুদিন। ওরা শুধু বলতে পারলো যে যে গ্রামে হে শুয়ান গু থাকে তার নাম “আঁয়া”। তাকে যদি মিন হুয়ে খুঁজতে যায়, তবে অসুবিধে হবে না নিশ্চয়, কারণ হে শিয়ান গুকে গ্রামের সক্কলে চেনে।

ফোন রেখে মিন হুয়ে খানিক ভাবলো। তারপর শিন ছিকে বললো, “এই শিয়ান গু - নির্ঘাৎ মানুষ পাচার করে। কিন্তু এ প্রথম সারির পাচারকারী নয়। দ্বিতীয় সারির।”

“কী করে জানলি?”

“দ্যাখ, তং মিংহাও-এর জন্মদাতা-জন্মদাত্রী থাকে হারবিনে। আমার ভাইকে চুরি করে ছিলো গুয়াঁইশি প্রদেশের হেচি থেকে। একটা উত্তরে, আরেকটা দক্ষিণে। কী করে এই দুটো বাচ্চা এক হাতে এলো? এর থেকেই বুঝলাম যে হে শিয়ান গু বাচ্চার খদ্দের আর যারা বাচ্চা চুরি করেছে তাদের মধ্যেকার বিন্দু। আমি জোর দিয়ে বলতে পারি যে এর হাত দিয়েই বাচ্চা বিক্রি হয়। না জানি কতো বাচ্চা এর হাতে মরেছে। চুরি, চালান, বিক্রি - এই তিনটে ব্যাপারই এই ব্যবসার অঙ্গ। একলা তো কেউ করে না। এটা বেশ এক গোছানো অপরাধ ব্যবস্থা। গ্যাং ছাড়া ভাবা যায় না।”

“তুই বলছিস প্রায় একটা শিল্পবাণিজ্য বানিয়ে ফেলেছে এরা - একটা ইন্ডাস্ট্রিয়াল চেন?”

“হ্যাঁ, তাই।”

“মনে হচ্ছে আমাদের ইউন্নান যেতেই হবে এই হে শিয়ান গুয়ের সাথে দেখা করতে।”

শিন ছি ঝটপট ফোনটা নেড়ে বললো, “পাঁচ ঘন্টা লাগে হারবিন থেকে প্লেনে কুঁমিং যেতে। তোর আইডি কার্ড দে। টিকিট কিনে নি।”

মিন হুয়ে সামান্য ঘাবড়ে গেলো। আগে দুজনের ট্রেনের টিকিট কাটার সময়ে মিন হুয়ে ওর আইডি কার্ড শিন ছিকে দিতে চায় নি। এই ভয়ে যে না জানি কী ত্রুটি চোখে পড়ে যাবে শিন ছির। শিন ছি তখন পাসপোর্ট ব্যবহার করে ছিলো টিকিট কেনার জন্য, তাই মোবাইল ফোনে টিকিট কাটতে পারে নি তখন দুজনকে দুটো আলাদা টিকিট অফিসে যেতে হয়ে ছিলো আলাদা আলাদা করে টিকিট কাটার জন্য। তবে মিন হুয়ে নিজে সু তিয়াঁর থেকে মাত্র দুমাসের ছোটো। তাই মিন হুয়ের আইডি কার্ডে মিন হুয়ের ব্যক্তিগত তথ্য যা আছে, তাতে শিন ছির খুব সন্দেহ হবার কথা নয়। নিজের ওয়ালেট বার করার মূহুর্তে মিন হুয়ের মনে হলো আরেকটা মিথ্যের, ছলনার অপরাধ বাড়ানোর থেকে, একটা অপরাধ কম করা ভালো। তাছাড়া, মিন হুয়ে কোনো ভাবেই শিন ছির টাকা পয়সার সুবিধে নিতে চায় না। তাই বললো, “দরকার নেই। তোর পাসপোর্ট নম্বর বল। আমি বুক করছি টিকিট।”

কান টেনে ধরে শিন ছি বললো, “আবার! আমি থাকতে এ সব ছোটো খাটো ব্যপারে তোকে মাথা ঘামাতে হবে না। চল, দুজনে মিলে তোর ভাইকে খুঁজি। যদি খুঁজে পাই তো তার থেকে ভালো আর কিছুই হয় না। কিন্তু যদি খুঁজে না পাই, তবে ধরে নে এটা আমাদের হানিমুন।”

তং মিংহাও-এর জন্য কুড়ি হাজার য়ুআঁরও বেশি খরচ হয়ে যাবার পরে মিন হুয়ের ব্যাঙ্ক কার্ডে আর এক পয়সাও নেই। মিন হুয়েকে ওর আইডি কার্ড বের করে দিতেই হলো শিন ছির হাতে।

শিন ছি ওপরে লেখা ঠিকানাটা একঝলক দেখে বললো, “ওয়াও! তুই বিনচেং-এ থাকিস?”

“হ্যাঁ।”

“সে তো বেশ বড়ো শহর।”

“তা বটে।”

“ওখানে তুই কী করিস? পার্ট-টাইম কাজ?”

“হ্যাঁ।”

“যে -”

শিন ছি আরো অনেক কিছু জানার চেষ্টা করছিলো। কিন্তু মিন হুয়ে আটকে দিলো, “তোর কথা বল। তুই কোথায় থাকিস?”

“নিউ ইয়র্কে, আগেই বলেছি তো।”

“নিউ ইয়র্কের কোথায়?”

“পার্ক অ্যাভিনিউ।”

“কোথায় থাকিস?”

“অ্যাপার্টমেন্টটা আমার দাদার।”

“তাহলে … তোর এখন একটা দাদা আছে।”

“হ্যাঁ।”

“তিয়াঁ তিয়াঁ, তোর কী কৌতুহল হচ্ছে? তুই আরো জানতে চাস?”

“না। আমি কিচ্ছু জানতে চাই না।”

গেস্ট হাউসে ফিরতে দুজনের রাত দশটা বেজে গেলো প্রায়। মিন হুয়ের মনে হলো যে ওর স্নানঘরে রাখা হেয়ার ড্রায়ারটা কাজ করছে না। ফ্রন্ট ডেস্কে গিয়ে সেখানে যে কর্মী আছে তাকে বললো হেয়ার ড্রায়ারটা বদলে দেবার জন্য। তখন কর্মীটি এক মধ্যবয়স্ক দম্পতির সাথে কথা বলছে। কথোপকথনের মধ্যে গিয়ে যাতে না পড়ে, সে জন্য মিন হুয়ে একপাশে সরে দাঁড়ালো।

“... আজ রাতে একটাও ঘর খালি নেই। বু হাইসা। এক ভদ্রলোক বলে ছিলেন যে আজ চলে যাবেন, কিন্তু তিনি আরো দুদিনের জন্য থেকে গেছেন।”

ফ্রন্ট ডেস্কের কর্মী ধৈর্য ধরে ব্যাখ্যা করে চললো। “কাছাকাছি কোনো হোটেলও নেই। গাড়িতে চল্লিশ মিনিট গেলে, সব থেকে কাছের হোটেলে পৌঁছোতে পারেন। হোটেলটাকে ‘সানি হোটেল’ বলে। এই রইলো ঠিকানা। আগে থেকে ফোন করার দরকার নেই। ওখানে নিশ্চয়ই জায়গা পেয়ে যাবেন। আপনাদের গাড়ি আছে? নাকি, আমি আপনাদের জন্য একটা ট্যাক্সি ডেকে দেব?”

মধ্যবয়স্ক পুরুষটির বয়স পঞ্চাশ পেরিয়েছে। লম্বা। স্বাস্থ্যবান। মুখটা লালচে। স্যুট পরে আছেন। দেখে মনে হয় কোনো বেসরকারী ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান চালান। তাঁর পাশে দাঁড়িয়ে থাকা মহিলা সম্ভবত তাঁর পত্নী। ভদ্রমহিলাও প্রায় সাড়ে পাঁচ ফুট লম্বা। তাঁর সুশ্রী মুখে ক্লান্তির ছাপ। তাঁর জামাটা গোলাপির ছোঁয়া লাগা ধূসর-বাদামী রঙের। চোখে সোনালি রিমের চশমা। তাঁকে দেখে শিক্ষিকা বলে মনে হচ্ছিলো।

“আমরা নিজেরাই গাড়ি চালিয়ে এসেছি এখানে। ওহ্‌, যদি কোনো ঘর নাই থাকে, তাও কোনো সমস্যা নেই। আমরা যদি এই সোফায় রাতটুকু বসে কাটিয়ে দিতে পারি -”

রিসেপশনের ঘরে গোল করে পেতে রাখা সোফাগুলোর দিকে দেখালেন তিনি।

মহিলা সায় দিলেন, “হ্যাঁ, হ্যাঁ। আমরা এখানে আমাদের সন্তানের সাথে দেখা করতে এসেছি। আমরা ভীষণ খুশি, উত্তেজিত। আমাদের ঘুমই হবে না। একটু বসতে পেলেই হবে।”

আরো বললেন, “ওঁর হাই ব্লাড প্রেসার। এখানে থাকলে চিন্তা হবে না। এমন সময়ে গাড়ি চালানো নিতান্ত মুস্কিল।”

শুনে সবাই চমকে উঠলো। হাসপাতালটা মানসিক রোগীদের। বাড়ির লোক যারা দেখা করতে আসে, সকলকে ভীষণ দুঃখী দেখায়। খুবই অদ্ভুত যে এই দুজন ভীষণ খুশি। 



মিন হুয়ের মনেও দোলা লাগলো। জানতে চাইলো, “শুশু, আপনি কী এখানে তং মিংহাও-এর জন্য এসেছেন?”

ব্যবসায়ী মাথা নাড়লেন চটপট, “হ্যাঁ, আমি ওর বাবা। তুমি - সু তিয়াঁ? তাই না? আমাকে বলেছে, যে তুমি এখানে এসেছ তোমার ভাইকে খুঁজতে, তুমি খুঁজেও পেলে এখানে, তুমি তাকে প্রায় ফিরিয়ে নিয়েই যাচ্ছিলে। কিন্তু ডিএনএ পরীক্ষার ফল থেকে জানা গেছে যে এখানে তোমার ভাই নেই। খুবই দুঃখের কথা।”

“আমরা অবশেষে ফিরে পেয়েছি আমাদের ছেলেকে। কী ভালো! হাল ছেড়ো না।”

কথা বলতে বলতে ব্যবসায়ী পুরুষটি জোরে জোরে মিন হুয়ের হাতে ঝাঁকুনি দিচ্ছিলেন। কথা বলতে বলতে তিনি চোখের জল ফেলতে লাগলেন। মিন হুয়ে খানিকক্ষণ দুঃখ পেলো। কিছুতেই দীর্ঘশ্বাস আটকাতে পারলো না। এঁরা আসল বাবা, মা। তাঁদের জীবনে ছেলের দেখা পেয়ে তাঁরা সন্তুষ্ট। তাঁদের কিচ্ছু যায় আসে না যে ছেলের মাথাটা খারাপ। তাঁদের মনেই হয় না যে ছেলে তাঁদের বোঝা।

“শুশু, আমরা দুটো ঘর নিয়েছি। আমরা একটা ঘর আপনাদের সাথে ভাগ করে নিতে পারি।”

শিন ছি হেসে বললো, “আমি ওর সাথে একঘরে থেকে যেতে পারি।”

“অসুবিধে হবে না? নাকি?” সলজ্জ ভঙ্গীতে বললেন ইস্কুল টিচারের মতো দেখতে মহিলা। “তোমাদের কোনো অসুবিধে হবে না?”

“কিচ্ছু অসুবিধে হবে না।” মিন হুয়ে বললো, “আমরা মাত্র দুজন। আমাদের দুটো ঘর লাগবে না।”

“আর” শিন ছি মিন হুয়ের কব্জি তুলে ধরে ওঁদেরকে মিন হুয়ের আঙুলের আংটি দেখিয়ে বললো, “আমরা বিয়ে করছি।”

“ওয়াও! দুর্দান্ত।”

দু ঘন্টা পরে দুজনে বিছানায় শুয়ে ছাদের দিকে তাকিয়ে হাঁপাতে লাগলো।

“শিন ছি, কাল আমাদের প্লেন ধরতে হবে। এবার আমাদের থামা উচিৎ। ভালো করে ঘুমোনো দরকার।”

“আমার আত্মসংযম বরাবর ভালো। কিন্তু আমি জানি না কেনো আমি কিছুতেই নিজেকে সংযত রাখতে পারছি না যখনই তোকে দেখছি।”

“মিথ্যে বলিস না। তুই ইউনাইটেড স্টেটসে ছিলি। তুই এখনো কৌমার্য ধরে রেখেছিস? সেটা কি সত্যি?”

“নিশ্চয়ই ধরে রেখেছি। আমি কথা দিয়েছি তোকে বিয়ে করবো। অবশ্যই আমি তোকে রক্ষা করবো যেমন করা উচিৎ।”

শিন ছি হঠাৎ পাশ ফিরে নিজের শরীরের নিচে চেপে ধরলো মিন হুয়ের শরীর, “তুই আমার সূর্য, তুই আমার চাঁদ, তুই আমার তারা …”

“দ্যগ্য, তুই কী আমাকে দিয়ে একটা আস্ত সৌরমণ্ডল বানাবি?”

“হ্যাঁ, আমি তোকে একটা ছোট্টো ব্রহ্মাণ্ড দেবো।”

কথা বলা শেষ করেই, মাথা নিচু করলো আর চুমুতে ডুবে গেলো। তার জেরে মিন হুয়ে অনেকক্ষণ কথাই বলতে পারলো না। পরস্পরের সঙ্গে শক্ত করে লেপ্টে রেখেছে পরস্পরের শরীর, কেউই মোটা নয়। পেশী পেরিয়ে পরস্পরের শরীরে হাড় বিধিয়ে দিচ্ছিলো দুজনে তীক্ষ্ণতায়, জোরে। মিন হুয়ের বুকের ওপরের ছোট্টো পায়রা লড়াইতে মেতেছে শিন ছির হাতের সাথে, মিন হুয়ের পুরো শরীর নিঙড়ে সব জল যেনো বেরিয়ে যাচ্ছে।

“আমার বিশ্বাস হচ্ছে না - তোর একটাও গার্লফ্রেন্ড ছিলো না এতো বছরে?”

মিন হুয়েকে জড়িয়ে ছিলো শিন ছির দু হাত। আশ্লেষে নতুন জোয়ার ধেয়ে এলো। মিন হুয়ে গলা তুলে আওয়াজ করতে সাহস পেলো না। আবার কামড়ে ধরলো চাদর। 

“ইস্কুলে, কলেজে মেয়েরা ছিলো, আমাকে ধাওয়া করতো। কিন্তু শেষ মূহুর্তে আমি পিছিয়ে এসেছি প্রত্যেকবার।”

নরম স্বরে শিন ছি বললো, “যদি তোর সঙ্গে প্রথমবার না হতো, তাহলে আমি ভীষণ অপরাধবোধে ভুগতাম।”

“আমি কিছু মনে করতাম না।” মিন হুয়ে একদিকে মাথা হেলিয়ে জানলা দিয়ে বাইরে দেখতে লাগলো।

“আমি মনে করতাম।” মিন হুয়ের মাথাটা টেনে ফিরিয়ে দিলো শিন ছি যাতে মিন হুয়ে ওর দিকে তাকাতে পারে, “তোর ব্যাপারটা কী? তুই কী তোর প্রথমবারটা কোনো উন্মত্ত বুনো জংলী লোককে দিয়েছিস?”

মিন হুয়ে ঠোঁট কামড়ে ধরে মাথা ঝাঁকাল।

“তা ভালো।” শিন ছি হাসলো, মিন হুয়ের নাকে টোকা দিলো, “না হলে আমার খুব হিংসে হতো।”

খাটের পাশের আলোটার জ্যোতি ক্ষীণ। ঘরে এয়ারকন্ডিশনারের আওয়াজ গমগম করছে। কিন্তু শিন ছির চোখ দুটো শান্ত। চোখের মধ্যে প্রেমের গোলা রয়েছে যেনো। তার আঁচে ওম পেলো মিন হুয়ে।

মিন হুয়েকে জড়িয়ে ধরে রাখলো শিন ছি শক্ত করে, শিশুর মতো। মিন হুয়ের হাতের মধ্যে মাথা রেখে, ঘুমিয়ে গেলো শিগগির।

মাঝরাতে নিঃশব্দে উঠে মিন হুয়ে ফ্রন্টডেস্কে গিয়ে এক প্যাকেট সিগারেট কিনল। পিছনের উঠোনের সিঁড়িতে একলা বসে তামাকের ধোঁয়া নিতে লাগলো।

ও নিজের কথাই ভাবছে। ভাবছে নিয়তির কথা।

ভাবছে সেই অদ্ভুত মেয়েটা কেমন একটা কথা ভেবে তার নিজের জীবনটা শেষ করে দিলো আর মিন হুয়েকে ঠেলে দিলো জীবনের আরেকটা খাতে।

কেন যে সে বাসে চড়ে ছিলো। কেনো যে সে মুশুই নদীতে ঝাঁপ দিয়ে ছিলো সব ঝাপসা হয়ে এলো। 

শিন ছির উদয় যেনো মৃত্যুপথযাত্রীকে দেওয়া মরফিনের আরক। মিথ্যে আনন্দে চাপা পড়ে গেলো তীব্র যন্ত্রণা।

যাই হোক, যন্ত্রণাটা যায় নি। আছে সারাক্ষণ। 

মিন হুয়ে কংক্রিটের সিঁড়িতে বসে রইলো, একটার পর একটা সিগারেট টেনে যেতে লাগলো। শেষ করে দিলো পুরো প্যাকেটটা। সে যখন ঘরে ফিরল তখন ভোর হয়ে গেছে। পরপর দুবার খুব যত্ন করে দাঁত মাজার পরে, শিন ছির পাশে বিছানায় ফিরে গেলো, ঠান্ডা শরীরে।

শিন ছি কিছুই টের পেলো না। মিন হুয়েকে জোরে জড়িয়ে ধরলো, আধো জাগা, আধো স্বপ্নের ঘোরে।

পরের দিন খুব সকালে দুজনে জিনিসপত্র গুছিয়ে তৈরি হলো গাড়িটা মিংশুইতে ফিরিয়ে দিয়ে হারবিনে যাবার বাস ধরার জন্য। 

গাড়িতে বসা মাত্র শিন ছি জিজ্ঞেস করলো, “তুই তো তং মিংহাও-এর হাসপাতালের খরচ বাবদ সাতাশ হাজার য়ুআঁ দিয়ে ছিলি? তোকে টাকাটা ফেরত পেতে হবে নাকি হবে না?”

মিন হুয়ে দুহাত ছড়িয়ে বললো, “কিভাবে পাবো এখন? কাকে বলব এমন সময়ে? বললে ব্যাপারটা দেখাবেই বা কেমন?”

“তাছাড়া আমাদের কাছে সেই শুশুর ফোন নাম্বারও নেই। এতোক্ষণে ওঁরা চলেও গেছেন হাসপাতাল থেকে। তং তিয়াঁ হাই আর কোনো দায়িত্ব নেবে না। তাহলে টাকাটা গেলো?”

মিন হুয়ে টাকাটা চাওয়ার কথা ভাবে নি। চাওয়ার কথা ভাবতেই অপ্রস্তুত লাগছে। সাতাশ হাজার য়ুআঁ তার জীবনের সবটুকু সঞ্চয়। আর টাকাটা তার তখনই দরকার তার ভাইকে ইউন্নানে খোঁজার সময়ে। সে দ্বিধায় ছিন্নভিন্ন হয়ে যাচ্ছে।

“আমি জানি না কী করা উচিৎ।” শিন ছিকে বলতেই হলো।

“গাড়িতে অপেক্ষা কর। আমি গিয়ে নিয়ে আসছি টাকাটা।”

মিন হুয়ে ডাকল, “অ্যাই -”

ততোক্ষণে শিন ছি চলে গেছে। পনেরো মিনিট পরে যখন ও ফিরল গাড়িতে, তখন ওর হাতে একটা খাম, “এই নে। আমি ফেরত এনেছি। ওঁরা অনেক ধন্যবাদ দিয়েছেন। আর জোর করছিলেন আরো দশ হাজার য়ুআঁ দেবার জন্য। কিন্তু আমি নিতে চাই নি।”

“তুই যে কী ভালোই করলি!” মিন হুয়ে খাম খুলে ব্যাঙ্ক নোটগুলো বার করে হাত বুলোতে লাগলো। 

“এটা দিয়ে দিলে ঠিকই ছিলো, যদি তং মিংহাও-এর বাবা-মার টাকা পয়সা না থাকতো। কিন্তু দেখে যখন ওঁদের আর্থিক অবস্থা খারাপ বলে মনে হলো না …”

“দুর্দান্ত।” মিন হুয়ে একটা থাম্বস আপ দিলো শিন ছিকে। “আমিও টাকার ওস্তাদ হতে চাই।”

“আমি জানি তুই কেনো সবার প্রিয় ছিলি ছোটো বেলায়। এখনো নিশ্চয়ই তোকে সবাই খুব পছন্দ করে।”

"কেনো?”

“কারণ আমি সব্বাইকে চটিয়ে দিতাম আর তুই তাদের রাগেরও উপশম করতিস। তোর দায়িত্ব ছিলো নালিশ করা। আমার কাজ ছিলো লড়াই করা। তোর কাজ ছিলো কাঁদা। আমার কাজ ছিলো শোধ তোলা। তোর কাজ ছিলো সুন্দর হওয়া, আমার কাজ ছিলো নিষ্ঠুর হওয়া। তিয়াঁ তিয়াঁ -”

হালকা হাসলো শিন ছি। মিন হুয়ের মুখ ছুঁয়ে দিলো, “তোর পাশে থেকে তোকে আমি সব ফিরে পেতে সাহায্য করবো, যা হারিয়ে তুই যন্ত্রণা পাচ্ছিস।”


~~~~~~~~~~~~

সম্পূর্ণ বই বিনামূল্যে : https://dl.bookfunnel.com/lcj5vznt96

Link to Previous Post in the Series : https://projectionofnaught.blogspot.com/2024/08/jpda-chapter-13.html

Link to following Post in the Series : https://projectionofnaught.blogspot.com/2024/08/jpda-chapter-15.html

No comments:

Post a Comment

Readers Loved