৪১. য়িন শু
সু ছন কাঁদছিলো গাড়িতে, মিন হুয়েকে হতবাক করে দিয়ে, কিছুতেই ভোলানো যাচ্ছিলো না ওকে।
যখন ট্যাক্সিটা ঝংশাঁ রোডে ঢুকে পড়েছে, শিয়াংহে বিল্ডিংটা সামনে, তখন মিন হুয়ের সেল ফোন বেজে উঠলো। ব্লু টুথ ইয়ারপিসে সাও মুয়ের ব্যতিব্যস্ত গলা বেজে উঠলো, “শও হুয়ে, আজ সকালের মিটিং-এর কথা কী আপনি ভুলে গেছেন? সেটা তো শুরু হতে চলেছে। আপনি এখনো এসে পৌঁছোন নি কেনো? সবাই আপনার জন্য অপেক্ষা করছে।”
“আমি এখনই আসছে, এখনই আসছি। আমার জন্য - পাঁচ মিনিটের জন্য অপেক্ষা করুন।”
মিন হুয়ে সু ছনকে জড়িয়ে ধরে বললো, “যা হোক, সাও জিয়ে, ছন ছন আমার সাথে আছে। আপনি কী বলতে পারেন যে কে এখন ওকে একটু দেখবে আমি যতোক্ষণ মিটিং-এ থাকব?”
“অপ্রত্যাশিতভাবে, হে জঁ আপত্তি জানিয়েছেন, বলেছেন বা’অ্যান কাজের জায়গা, এটা কিন্ডারগার্টেন নয় …”
মিন হুয়ে চমকে উঠলো।
“আমি এখন কী করব? সু ছনের ডিসচার্জের কাজ সব হয়ে গেছে, ওর বেডটাও আর নেই।” উদ্বিগ্ন হয়ে বললো মিন হুয়ে, “জিয়া জুনও নেই এখানে, ও একটা সাক্ষাৎকারে গেছে।”
“বেশ তুমি ফোর সিজন্স টেনিস ক্লাবে যাও দং পিং রোডে,” সাও মু বললো তক্ষুনি, “য়িন শু ওখানে খেলছে। তুমি সোজাসুজি ওর কাছে যাও আর বাচ্চাকে ওর হাতে দিয়ে দাও।”
পূর্ব পিং রোড কাছেই। মিন হুয়ে দ্বিধায় পড়ে গেলো, “এটা কি সুবিধের হবে? ওকে তো দুপুরের পরে নেবার কথা ছিলো … তুমি আমাকে আগে কল করো নি কেনো?”
য়িন শুয়ের পরিবার অবস্থাপন্ন আর ও একমাত্র ছেলে, পয়সা রোজগার করে না, কিন্তু পয়সার অভাবও নেই। তবে ও ঘরে বসে ব্যস্ত থাকার লোকও নয়, ও বাইরে খেলতে ভালো বাসে। বাজার করা, বাড়িতে রান্না করা আর বাচ্চাদের দেখাশোনা করার সময়টুকু বাদ দিলে বাকি সময়ে ও হয় গলফ্ খেলে নয়তো দৌড়োয়, বিশেষ করে গরমের দিনে প্রায়ই গলফ্ খেলে। যদি কেউ আগে থেকে ব্যবস্থা করে একটা সময় স্থির করে রাখে, তবে সেই সময়ের অনেক আগে তার ঘাড়ে একটা বাচ্চাকে চাপিয়ে দিলে সে বিরক্ত হবে না?
“কোনো অসুবিধে নেই। ও ফোনের দিকে তাকায় না যখন ও খেলে, তাড়াতাড়ি যাও, বাচ্চাকে রেখে শিগগির চলে এসো। আমি অনেকের সাথে মিটিং-এ অপেক্ষা করছি। হে জঁ এর মধ্যেই খুব বিরক্তি দেখিয়েছেন।”
ইয়ারফোনে হে হাই শিয়াং-এর গর্জন শোনা যাচ্ছিলো। মিন হুয়ে চটপট বললো, “ঠিক আছে, সাও জিয়ে।”
ড্রাইভার গাড়ি ঘুরিয়ে চললো পূর্ব পিং রোডে। পাঁচ মিনিট পরে পৌঁছে গেলো ফোর সিজন্স টেনিস ক্লাবে।
ছেলেকে কোলে নিয়ে মিন হুয়ে ফ্রন্ট ডেস্কে গেলো। দেখলো একটা মেয়ে একটা কম্পিউটারের সামনে বসে আছে। চটপট জানতে চাইলো, “কোন কোর্টে আছেন য়িন শু?”
“কোচ য়িন? উনি তো খেলা শেষে সবে বেরিয়ে গেলেন। আপন ওঁকে পার্কিং লটে পেয়ে যাবেন।”
“পার্কিং লট কোথায়?”
“পিছনের গেটে। সোজা গিয়ে, বাঁদিকে, একটা কাঁচের দরজা আছে। ওটাকে ঠেলে খুললেই হবে।”
মিন হুয়ে ভয় হচ্ছে যে ও বুঝি য়িন শুয়ের দেখা পাবে না। তাই ছেলেকে কোলে নিয়েও ও দৌড় লাগালো। কাঁচের দরজাটা দেখতে পেলো। দরজাটা ঠেলে খুলতে গিয়ে ও থমকে গেলো।
দূরে, কালো টয়োটা এসিউভি-এর পাশে, একটা লোক দাঁড়িয়ে আছে খেলার পোষাকে, কাঁধে একটা টেনিস ব্যাগ। যদিও আবছায়া কেবল, মিন হুয়ে চিনতে পারলো য়িন শুকে। কোমর পর্যন্ত ঝুলের নাইকির জার্সি পরা একটা মেয়ের সাথে কথা বলছে, দুজনে হাত ধরে আছে খুব ঘনিষ্ঠ ভঙ্গিমায়। কথার শেষে মেয়েটা গাড়িতে উঠলো য়িন শুয়ের সাথে, বসলো ড্রাইভারের পাশের সিটে।
গাড়ির ইঞ্জিন চালু করে য়িন শু মেয়েটাকে চুমু খেলো। মেয়েটা ছিটকে সরে গেলো না। মেয়েটা উদার ভঙ্গিমায় য়িন শুকে অভিবাদন জানিয়ে জবাবী চুমু দিলো।
বুকের মধ্যে ধড়াস করে উঠলো মিন হুয়ের, শরীরের সব রক্ত জমা হলো ওর মুখে। ও মেয়েটাকেও চিনতে পারলো য়ে শও ঝেন বলে।
কী ভাবে? কী করে হতে পারে? এটা নিশ্চয়ই সত্যি নয়।
য়ে শও ঝেন হলো চেন জিয়া জুনের টিউটর যাকে মিন হুয়ে খুঁজে বার করেছে। মেয়েটা ভালো পড়ায়, বুদ্ধিমতী আর মননশীল, ওকে তাই অনেকেই পছন্দ করে।
পরে য়িন দি, সাও মুয়ের ছেলে, - তার লেখা শেখার জন্য টিউটরের দরকার পড়তে মিন হুয়ে যোগাযোগ করিয়ে দিয়ে ছিলো য়ে শও ঝেন-এর সঙ্গে। মেয়েটার পারিবারিক দুরবস্থার কথা মনে করে, মিন হুয়ের মনে হয়ে ছিলো একের বেশি রোজগারের জায়গা থাকলে মেয়েটার জন্য ভালোই হবে। য়ে শও ঝেনও রাজি হয়ে গিয়ে ছিলো মনের আনন্দে।
এগারো বছরের য়িন দি এখন একটা বিদ্রোহী হয়ে উঠেছে, মা-বাবার দুঃস্বপ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু শও ঝেন জানতো কী করে সেই বিদ্রোহীকে বাধ্য করবে যাতে সে লেখাপড়ায় মন দেয়, মন দেয় অধ্যাবসায়ে আর অনুশীলনে।
সাও মু তো খুব প্রশংসাও করেন শও ঝেনের সরলতা আর ক্ষমতার। সাও মু ভাবছে যে গরমের ছুটির সময়ে মেয়েটাকে কোম্পানিতে কাজও দেবেন। পার্ট-টাইম কাজ, প্রচার বা ওরকম কোনো জনমুখী বিভাগে।
মিন হুয়ে আশাই করতে পারে নি যে শও ঝেনের চরিত্রের ‘সারল্য’ এমন চেহারা নেবে, এতো তাড়াতাড়ি।
মিন হুয়ের ইচ্ছে করছিলো নিজের গালে চড় কষাতে। ও আশা করে নি যে ওর মানুষ চেনার ক্ষমতাটা এতো খারাপ। আগেও ভুল করেছে ও, চেং ছিরাংকে চিনতে, তার জেরে ও নিজের প্রাণও খোয়াতে বসে ছিলো।আবার ও ভুল বুঝেছে য়ে শও ঝেনকে। আর অগ্নিকুন্ডে ফেলেছে সাও মুয়ের পরিবারকে।
এরা দুজনে শুরুটা করলো কবে?
মিন হুয়ে বুঝতে পারলো না ব্যাপারটা, আবার সাহসও করলো না ব্যাপারটাকে খুব বিশ্লেষণ করতে যদি ওর ব্যাখ্যা ভুল হয় তাই ভেবে। য়ে শও ঝেন আর চেন জিয়া জুন সাধারণত দেখা করে ইউনিভার্সিটির লাইব্রেরিতে। ওর সাথে মিন হুয়ের দেখাই হয় না প্রায়। মেয়েটার রেজিউমি ছাড়া মেয়েটার ব্যাপারে জানেও না কিছু। যা কিছু ভালো ভালো কথা ও মেয়েটার সম্বন্ধে শুনেছে তার অনেকটারই মূলে জিয়া জুন। মেয়েটা যখনই পড়ায়, তখনই খুব যত্ন নিয়ে তৈরি করে আনে পড়ানোর বিষয়বস্তুতে, অনেক কাগজপত্র নিজেই তৈরি করে এনে দিয়ে দেয় জিয়া জুনকে, জিয়া জুনকে বাড়ির কাজও দেয়।
এসব কথা ভেবে মিন হুয়ে আরো একটু উদ্বিগ্ন হয়ে পড়লো। এমনো কী হতে পারে যে জিয়া জুনও মেয়েটাকে পছন্দ করে?
হাসপাতেলে থাকার সময়ে সু ছনের সঙ্গে থাকার জন্য কাউকে একটা দরকার ছিলো একবার। মেয়েটা তখন নিজেই সময় দিতে চেয়ে ছিলো সু ছনকে।
মিন হুয়ে ঘন্টা পিছু শ্রমের মূল্য হিসেব করে মেয়েটাকে পারিশ্রমিক দিতে চেয়ে ছিলো, কিন্তু মেয়েটা টাকাটা নিতেও চায় নি। পাঁচ দিনের ফাঁক পূরণের জন্য জিয়া জুন দু দিনের জন্য সাহায্য চেয়ে ছিলো শও ঝেনের কাছে। আর ও অমনি রাজি হয়ে গিয়ে ছিলো। তখন ও খুব জোর দিয়ে জানিয়ে ছিলো যে ও কিছুতেই সু ছনের সঙ্গে থাকার জন্য টাকা নেবে না।
মিন হুয়ে ভাবতেই পারে নি যে মেয়েটা এতো চটপট ‘কাজ’ শুরু করে দেবে। টিউটর বাড়ির পুরুষ কর্তাটির প্রেমে পড়ে গেলো দু সপ্তাহের মধ্যে। ও জানে না কে উদ্যোগটা নিয়েছে। যে নাইকির সেটটা পরে আছে শও ঝেন - মাথা থেকে পা পর্যন্ত - সেটার দাম কয়েক হাজার ডলার। য়ে শও ঝেনের যা রোজগার, তাতে ও কিছুতেই ওটা কিনতে পারে না।
মিন হুয়ের ইচ্ছে হচ্ছিলো জানতে যে হচ্ছেটা কী। তারপর ভয় পেলো যদি দু জনেই অস্বীকার করে। দুজনেই বিব্রত হবে যদি দুজনেই ব্যাপারটা নিয়ে কথা বলতে না চায়। ওদের ওপরে দোষ দেওয়া হয়ে যাবে যে ওরা সমস্যা তৈরি করছে।
সাও মুয়ের দিকটা কী হবে, ওকে বলবে কী বলবে না তা মিন হুয়ে জানে না।
এর মধ্যে য়িন শুয়ের গাড়ি টেনিস ক্লাব থেকে বেরিয়ে গেছে।
বিরক্ত হয়ে মিন হুয়ে টেনিস ক্লাব থেকে বেরিয়ে এলো, ছেলেকে কোলে নিয়ে। একটা ট্যাক্সি নিয়ে গেলো শিয়াংহে বিল্ডিং-এ। ও মনে মনে ভাবছিলো যে কেউ যখন নেই যার থেকে সাহায্য পাওয়া যাবে, তখন বেহায়ার মতো সু ছনকে নিয়ে ও কোম্পানিতেই যাবে। আর ওকে অনেক কথা শুনতে হবে, যেমন ওকে সব সময়ে শুনতে হয়।
কথা শোনা অনেক ভালো, কাজের দেরি হবার থেকে। ও যখন গাড়ি থেকে নেমে এগিয়ে যাচ্ছিলো, হঠাৎ কেউ ওকে ডাকলো পিছন থেকে, “মিন হুয়ে।”
ঘাড় ঘুরিয়ে দেখতে পেলো য়িন শুকে। ও চমকে উঠলো আর কোনো মতে বললো, “হাই”।
“সাও মু ফোন করে ছিলো, বললো সু ছনকে নিয়ে যেতে।”
য়িন শু হাসি মুখেই কথা বলছিলো মিন হুয়ের সাথে।
মনে হচ্ছে যে ও এখনো জানে না। একটু দ্বিধা নিয়ে মিন হুয়ে বললো, “অসুবিধে হবে না তো?”
“কোনো অসুবিধে হবে না। আমি গলফ খেলা হয়ে যেতে, চলে এলাম।”
যখন কথা কটা বললো য়িন শু তখন ওর চোখ মুখ বেশ শান্ত, অস্বাভাবিক কিছু নেই।
মিন হুয়ে তাকালো ওর গাড়ির দিকে। গাড়িতে কেউ নেই। এক মূহুর্তের জন্য মিন হুয়ে অবাক হলো যে ও নিজে কী ঘোরের মধ্যে স্বপ্ন দেখছিলো। ব্যাপারটা নিয়ে ভাবার পরে একটু ও আপন মনে অনুমান করে স্থির করলো যে য়িন শু নিশ্চয়ই য়ে শও ঝেনকে কলেজে পৌঁছে দিতে যাচ্ছিলো, কিন্তু ওর এতো সাহসও নেই যে ও ওর বউয়ের ফোনটা উপেক্ষা করবে, তাই ও নিশ্চয়ই য়ে শও ঝেনকে নামিয়ে দিয়েছে গাড়ি থেকে, আর নিজে এসেছে সু ছনকে নিতে। যদি দুজনের মধ্যে কিছু না থাকে তাহলে য়ে শও ঝেনের আর য়িন শুয়ের গাড়িতে বসতে কী অসুবিধে আছে? মেয়েটা ওর ছেলেকে পড়ায়, তাই খুবই স্বাভাবিক যে মেয়েটা য়িন শুয়ের গাড়িতে চড়তেই পারে।
“তাহলে আমি তোমাকে খানিক ঝামেলা দি।” মিন হুয়ে দিয়ে দিলো সু ছনকে য়িন শুয়ের কোলে, “রাতে আমি ওকে নিয়ে আসব।”
“না, তোমার গাড়ি নেই, আগে থাকতে ফোন করবে, আমি ওকে ফিরিয়ে আনব।”
“দুওখোই নি।”
মিন হুয়ে সু ছনের মাথা চাপড়ে বললো, “ছন ছন, খানিক ক্ষণ শুশুর বাড়িতে খেলা করতে পারবে, কেমন?”
সু ছনের একটু অনিচ্ছে ছিলো মাকে ছেড়ে যাওয়াতে। মায়ের হাত ছাড়তে চাই ছিলো না কিছুতেই।
চট করে য়িন শু বললো, “শও দি গ্য আর শও নিং জিয়ে বাড়ি ফিরে এসেছে আজ দুপুরেই। ওরা তোমার সাথে খেলতে পারবে। শুশু একটা ভালো খাবার বানিয়ে দেবে তোমাদেরকে।”
সু ছন যখন শুনলো যে ওর প্রিয় দাদা আর দিদি ওর সাথে খেলবে বলে তৈরি, তখন ও য়িন শুয়ের কাছে যেতে দেরি করলো না, উঠে পড়লো য়িন শুয়ের কোলে।
দুজনে বিদায় জানিয়ে তাড়াহুড়ো করে চলে যেতে, মিন হুয়ে মনে অনেক সন্দেহ নিয়ে গেলো ওপরে।
***
সারা সকাল ধরে ছোটো বড়ো নানান মিটিং হয়ে গেছে। মিন হুয়ে কথা দিয়ে ছিলো যে আনুষ্ঠানিক ঘোষণার সময়ের আগেই ও শেষ করে দেবে জিএস১.০-এর ডায়াবেটিস স্ক্রিনিং ফাংশন, আর হে হাই শিয়াং-এর মুখে অবশেষে একটা হাসি জেগে উঠলো।
দুপুরে খাবার সময়ে, মিন হুয়ে রেস্টুরেন্টে চললো সাও মুয়ের পিছু পিছু। এক বাটি নুডল অর্ডার করে বসলো একটা নিরিবিলি জায়গা দেখে। মিন হুয়ে চুপচাপ দেখলো সাও মুকে। কিন্তু অস্বাভাবিক কিছুই চোখে পড়লো না।
দুজনে একসঙ্গে চার বছর কাজ করার পরে, সাও মু নিজের ক্ষমতার সুযোগে মিন হুয়েকে অনেক সুবিধে দিয়েছেন কাজের ক্ষেত্রে। তাতে মিন হুয়ে অনেক ভারি কাজ অন্যদের তুলনায় অনেক কম মাথাব্যাথা নিয়ে সম্পূর্ণ করতে পেরেছে।
দুজনের বন্ধুত্ব ক্রমশ গভীর থেকে গভীরতর হয়ে উঠেছে। তাছাড়া ঝৌ রু জি আর য়িন শু একসাথে গলফ খেলে। ছুটিছাটায় দুই পরিবার অনেক সময়েই একসঙ্গে কাটায়।
তা সত্ত্বেও, মিন হুয়ে আর সাও মু এতো ঘনিষ্ঠও নয় যে তারা সব কিছু নিয়ে কথা বলতে পারে একে অপরের সাথে। যাই হোক, দুজনের মধ্যে বয়সের ব্যবধান অনেকটা। মিন হুয়ের থেকে সাও মুয়ের বয়স ষোলো বছর বেশি। মিন হুয়ের গুরুজনেদের সমকক্ষ প্রায়। দুজনে আবেগমথিত বিষয়ে প্রায় কথাই বলে না, ওরা কথা বলে কম্পিউটার, টেকনোলজি, এআই নিয়ে যখন ওরা একত্র হয়। খুব উৎসাহের সঙ্গে দুজনে এইসব আলোচনা উপভোগও করে। মিন হুয়ে কখনো সু তিয়াঁ কিংবা শিন ছির কথা সাও মুকে বলে নি। চেং ছিরাং-এর ঘটনাটার কারণে, সাও মুয়ের ভয় ছিলো যে মিন হুয়ের মন খারাপ হবে। তাই মিন হুয়ের ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে কোনো কথা বলার সাহস হয় নি সাও মুয়ের।
কোম্পানিতে সবাই মনে করে যে সাও মু খুব খুশি মহিলা আর তার বর খুব কাজের, শুধু লোকটা রোজগার করে না।
“সাও জিয়ে, টেনিস ক্লাবটা বেশ খরচ সাপেক্ষ! য়িন শু গ্যগ্য এতো ভালোবাসে টেনিস খেলতে, তুমিও ওঁর সাথে খেলো না কেনো?”
নুডল খেতে খেতে জিজ্ঞেস করলো মিন হুয়ে।
“আমার ভালো লাগে। তবে আমি রোজ ওভারটাইম কাজ করি। আমার সময় কোথায়? আমি স্নান করে ঘুমিয়ে পড়ি।”
“জিয়ে, আমার মনে হয়, চাপটা তুমি নিতে পারবে। এতো কাজ আর দুটো বাচ্চা, আমি মোটেও তোমাকে রোজ দেখার জন্য ব্যস্ত নই।”
“এক ঘেয়ে নয়।” দীর্ঘশ্বাস ফেললো সাও মু, “সেই জন্য আমি ওষুধ খাই।”
“কী ধরনের ওষুধ?”
“প্যাক্সেটিন। শুনেছো এটার কথা কখনো?”
প্যাক্সেটিন |
মিন হুয়ে মাথা ঝাঁকাল।
“মানসিক উদ্বেগ, অশান্তি, হতাশা এসব কাটাতে বছর খানেক হলো খাচ্ছি।”
“এতো ভয়ানক অবস্থা?”
“মেনোপজ। শেষবার যখন আমি সিএফডিএ করিয়ে ছিলাম, তখন এতো ব্যস্ত ছিলাম যে আমার স্বয়ংক্রিয় স্নায়ুগুলোতে আঘাত লেগে ছিলো। আমার মনোযোগ দূর্বল হয়ে গেছে। আমি রোজ ঘোরের মধ্যে কম্পিউটারের স্ক্রিনে তাকিয়ে থাকি, কেবল আমার চোখ চারপাশে ঘোরে, আমি কোনো কাজে মন দিতে পারি না। ডাক্তার দিয়েছে আমাকে …”
ব্যাগের ভেতর থেকে ওষুধের একটা ছোটো বোতল বার করলো সাও মু, “একটা বড়ি, প্রতিদিন।”
“এটা তোমাকে শান্ত করতে পারে?”
“শান্তর থেকে বেশি কিছু করে। আমি আর কিছুতে উৎসাহ পাই না। আমি শুনেছি আমেরিকান মহিলারা ডিভোর্সের পরের মানসিক পরিস্থিতি কাটিয়ে ওঠেন এটার জোরে।”
মিন হুয়ে বোতলের ভেতরের সাদা বড়িটাকে দেখে হাসলো, “এটা তো চমৎকার। আমিও চাই এটা।”
সাও মু ওষুধের বোতলটা ছিনিয়ে নিয়ে গম্ভীর মুখে বললো, “একদম খাবে না। অনেক সাইড এফেক্ট আছে। আমাকে করতেই হবে -”
“য়িন শু গ্যগ্যকেই দাও না ভালো করে তোমার খেয়াল রাখতে।”
“ও আমাকে কিছুতেই ওষুধ খেতে দেবে না। সব বন্ধ হয়ে যাবে।”
সাও মু বাঁকা হাসি মেখে বললো, “ও তো আমরা যে কাজটা করি সেটা করে না, ও কী করে বুঝবে চাপটা কী।”
মিন হুয়ে বলতে চাইলো কী দেখেছে টেনিস ক্লাবের পার্কিং লটে, কিন্তু ও গিলে নিলো নিজের কথাগুলো।
হয়তো বলে দেওয়াটাই ঠিক কাজ, কিন্তু কাজটা ভালো না খারাপ সেটা ও জানে না। যদি সাও মু বিশ্বাস না করে, ওর হাতে কোনো জোরালো প্রমাণ নেই। হতে পারে যে বর-বউয়ের মধ্যেকার প্রেমটা কবেই গেছে, যে বন্ধুত্বটুকু আছে সেটাও যাবে, মিন হুয়ে কিছু বললে।
অফিসে ফিরে, প্রায় কোনো শব্দ না করে মিন হুয়ে ফোন করলো ঝৌ রু জিকে, প্যাক্সিল সম্পর্কে জানার জন্য।
“একটা অ্যান্টিডিপ্রেসান্ট, অ্যাংসাইটি আর সোশ্যাল ডিসঅর্ডারের চিকিৎসা করতেও ব্যবহার করা হয়।”
ঝৌ রু জি জানালো, “ফলাফল বেশ ভালোই।”
“সারা বছর খাওয়া কী ঠিক? শরীরে অন্য কোনো ক্ষতি হবে না তো?”
“সাইড এফেক্টঃ এক গাদা। ইন্সমনিয়া, দুঃস্বপ্ন, মাথাব্যাথা, বমিভাব, কোষ্ঠকাঠিন্য, ঘামা, চুলকানি, ওজন বেড়ে যাওয়া … এগুলো সবই ওষুধ নির্ভর, ফলে ওষুধটা চট করে বন্ধও করা যায় না। তাছাড়া যেটা খুব বেশি দেখা যায় সেটা হলো -” যোগ করলো ঝৌ রু জি, “যৌন ক্ষমতা চলে যাওয়া।”
~~~~~~~~~~~~
সম্পূর্ণ বই বিনামূল্যে : https://dl.bookfunnel.com/lcj5vznt96
Link to Previous Post in the Series : https://projectionofnaught.blogspot.com/2024/09/jpda-chapter-40.html
Link to following Post in the Series : https://projectionofnaught.blogspot.com/2024/09/jpda-chapter-42.html
No comments:
Post a Comment