৫৩. হাস্কি
অনেক ক্ষণ চুপ করে রইলো শিন ছি। খানিক পরে উপহাস ঠেলে বেরোলো দাঁতের ফাঁক দিয়ে, “এতো বুড়ো?”
য়িন শু মোটেই বুড়ো নয়। এ বছরে ওর বয়স হলো একচল্লিশ। ও এখনো খুবই প্রাণবন্ত, খেলাধূলো ভালোবাসে, ওর পুরো বিবাহিত জীবনটাতে ওকে কোনো চাপ নিতে হয় নি। ওকে দেখতে পর্দার নায়কদের মতো, বয়স তিরিশের শুরুতে বলেও চালিয়ে দেওয়া যায় দিব্যি। অনেকবার ও সাও মুয়ের সঙ্গে স্কুলে গেছে বাচ্চাদের আনতে, আর ওকে সবাই সাও মুয়ের বড়ো ছেলে ভেবেছে।
“মোটেও বুড়ো নয়।” বিয়ারের ওপরে, মিন হুয়ের জিভটা জড়িয়ে গেছে, “গং ফু, গং ফু বেশ ভালো।”
“কী?” শিন ছি ভাবলো যে ও ভুল শুনেছে, ভ্রূ কোঁচকালো, হঠাৎ ঘুরে দাঁড়িয়ে, সু ছনকে নিয়ে বড়ো বড়ো পা ফেলে দরজার দিকে গেলো।
পাশের ঘরে পা রেখে, ও ঝট করে পিছন ফিরলো, তীক্ষ্ণ চোখে মিন হুয়েকে দেখতে দেখতে প্রশ্ন করলো, “তুই কী বললি এখনই?”
“আমার …” মিন হুয়ের হেঁচকি উঠছে, “বিছানায় … তোর থেকে ভালো।”
ঘাড় নাড়তে নাড়তে মিন হুয়ে ছাদের ক্যামেরার দিকে দেখিয়ে বললো, “পরের বার, পরের বার মনে করে … ক্যামেরাটা চালু রাখিস … আমি, আমি তোকে দেখিয়ে দেবো।”
“তোর এতো সাহস হয় কী করে!”
শিন ছি নিচু স্বরে গর্জে উঠলো, “এটা আমার ছেলের শোবার ঘর। তুই যদি এখানে ফস্টিনস্টি করার সাহস দেখাস, আমি -”
“ - আরে, তোর ব্যাপারটা কী?’” চাপা হাসি নিয়ে মিন হুয়ে জানতে চাইলো, “মেরে ফেলবি, আমাকে? বাদ দে, তোর আর আমার তো কোনো সম্পর্ক নেই। কোনো সম্পর্কই নেই। তোর তো কিচ্ছু যায় আসে না, আমি কার সাথে থাকি না থাকি তাতে। তোর কিচ্ছু যায় আসে না।”
“আমার কিচ্ছু যায় আসে না, এর সঙ্গে আমার কোনো লেনাদেনা নেই। তুই যদি এই বুনো লোকটার প্রেমে পড়ে থাকিস -” শিন ছি চীৎকার করতে লাগলো মিন হুয়ের কানের পর্দা ভোঁ ভোঁ করে ওঠা অবধি, “দয়া করে জায়গাটা বদলা। আমার ছেলের চোখের সামনে নোংরামি করিস না।”
“শিন ছি, তুই দয়া করে একটু ভদ্রভাবে কথা বল। আমি এই লোকটার প্রেমে পড়েছি, আমি এই লোকটাকে বিয়ে করবো, লোকটা তোর ছেলের নতুন বাবা হবে।”
“আমি তোকে বিয়ে করতে দেবো না!”
শিন ছির যেনো বিস্ফোরণ হলো, “শুনলি, না? আমার ছেলের জন্য বাবা খোঁজার অনুমতি নেই তোর। আমি এখনো বুঝি না কেনো ঈশ্বর আমাকে তোর কাছে পাঠালেন! শুধু এই দেখতে যে মানুষ কতোটা নির্বোধ হতে পারে!”
"কেনো পারবো না? তোর কী অধিকার আছে?”
কথা বলতে বলতে মিন হুয়ে কয়েকবার ওয়াক তুললো। প্রত্যেকবারই সোজা মাটিতে পড়ে যাচ্ছিলো, কেবল শিন ছি ওকে ধরে নিচ্ছিলো খপ করে।
ও কেবল টের পাচ্ছিলো ওর বুকের মধ্যে শক্ত হয়ে কী একটা যেনো পাকিয়ে উঠছিলো, যেনো গলায় কিছু একটা আটকে গেছে আর চট করে ও মুখে হাত চাপা দিলো। ঝট করে শিন ছি পাশেই টেবিলের ওপরে রাখা কাচের বাটি তুলে নিয়ে ধরলো ওর মুখের সামনে। মিন হুয়ে অনেক ক্ষণ ধরে বাটির ওপরে বমি করার চেষ্টা করলো, কিন্তু কিছুই বেরোল না …
ফ্যালফ্যাল করে শিন ছির দিকে তাকিয়ে বললো, “তুই আমাকে চাস না, কিন্তু তবু তুই আমাকে বিয়েও করতে দিবি না? তুই কী আমার বাবা, নাকি! একটা কথা বলি শিন ছি, আমি তোকে বিয়ে করতে চাই না।”
“তোর কাছে আমার কোনো দেনা আছে নাকি? তুই যদি সু তিয়াঁর সাথে থাকতে চাস, তবে যা খুঁজে নিয়ে আয় ওকে! সারা পৃথিবীতে খোঁজ, তোর মোহ দিয়ে, তুই ওকে খুঁজে পেতে ভয় পাস না! আমাকে বিরক্ত করিস না, আমার ছেলেকে বিরক্ত করিস না, ঠিক আছে? বেরিয়ে যা!”
এক ঝলক দেখলো এআইম্যাক্স পার্টিতে পরা জামাটা, রাখা আছে সোফার ওপরে, ওটাকে খাবলে নিয়ে ছুঁড়ে দিলো শিন ছির হাতে, “আর এটাও নিয়ে যা!”
“তুই মাতাল হয়ে গেছিস!” দীর্ঘশ্বাস ফেললো শিন ছি।
“আমি মোটে মাতাল নই।” গলা চড়লো মিন হুয়ের। উল্টে বললো, “আমি শুধু তোকে পছন্দ করি। যেহেতু তোকে পছন্দ করি, তাই আমার মনে হয় প্রত্যেক ঘন্টায় আমি বুড়িয়ে যাচ্ছি। আর এখন আমি যেনো প্রত্যেক মিনিটে বুড়ো হয়ে যাচ্ছি। আমাদের এভাবে একে অপরের সাথে কথা না বললেও চলে। অত্যাচার এটা, এখনই চলে যা, আমি ক্লান্ত, আমি শুতে চললাম!”
এই মূহুর্তে ও একটা ঘোরের মধ্যে চলে গেলো, পরনে ছিলো একটা বড়ো বাথরোব, যার ভেতরে আর কিছু ছিলো না। বেল্ট আলগা করে, রোবটা ও বিছানায় রেখে দিলো আগে, তারপর তার ওপরে শুয়ে পড়লো। ওকে শিন ছি তুলে নিলো আবার।
বেল্টটা বেধে দিলো আবার। শক্ত করে বাধলো পিঠের দিকে। মিন হুয়েকে ধরলো নিজের দু হাতের বাঁধনে, “তুই শুবি পাশের ঘরে, যেখানে আমার ছেলে শুয়ে আছে।”
“আমি এখানেই শোবো, আমার বুনো মরদের সাথে, একসাথে শোবো, তোর কী!”
মিন হুয়ে মারলো শিন ছিকে এক ঘুষি, টেনে ওর জামা ছিঁড়ে দিলো। শিন ছির দু হাতের বাঁধনে ফুঁসতে লাগলো একটা পাগল হিংস্র ছোট্টো জন্তুর মতো।
নিতান্ত অনিচ্ছেতেও শিন ছি জড়িয়ে ধরলো মিন হুয়েকে, পায়ে পায়ে পাশের ঘরে গেলো, শুইয়ে দিলো ওকে বড়ো বিছানাটাতে। ঠিক যখন ও কম্বলটা চাপা দিতে যাবে গায়ে, মিন হুয়ে কামড়ে ধরলো শিন ছির হাত। শিন ছি কাতরে উঠলো যন্ত্রণায়। তাই ওকে একহাতে শক্ত করে ধরতে হলো মিন হুয়ের শরীরটা। অন্যহাতে মিন হুয়ের মুখটা ছুঁয়ে নিচু স্বরে বললো, “ঠিক আছে, ঠিক আছে, ঝামেলা পাকাস না, ঘুমিয়ে পড়।”
প্রথম দুটো শব্দে গলার স্বরটা কঠিনই ছিলো। তারপর ধীরে ধীরে গলার স্বর গভীর হলো, নরম হলো। তারপরে অসহায়ের মতো ভোলাতে লাগলো।
বেশ খানিক ক্ষণ পরে, মিন হুয়েকে শান্তিতে ঘুমোতে দেখে, শিন ছি নিশ্চিন্তির শ্বাস ফেললো। ওর পাশে সু ছনকে দেখছিলো, এতো হট্টোগোলের মধ্যেও বাচ্চাটা জেগে ওঠে নি। পাশ ফিরে ও একটা হাত রাখলো নিজের মায়ের হাতে, ওর ছোট্টো মুখটা মিন হুয়ের মুখের পাশে ঠেসে ধরে রাখা যেনো। স্বপ্নের ঘোরে ও নিজের ঠোঁট চেটে নিলো। একটা মিষ্টি হাসি জেগে উঠলো।
শিন ছি চুপ করে বসে অনেক ক্ষণ দেখতে লাগলো ওদের। শ্বাস ফেললো, মা আর ছেলেকে একটা সুতির চাদরে ঢাকা দিয়ে দিলো। তারপর দরজা বন্ধ করে দিলো।
বসার ঘরে এসে ও ভাবছিলো কী করে য়িন শুকে জাগাবে, আর ওকে বাড়ি পাঠাবে, এমন সময়ে শুনতে পেলো দরজায় যেনো কে টোকা দিচ্ছে।
দরজা খুলে দেখলো ঝৌ রু জি এসেছে। দুজনের কেউই আশা করে নি পরস্পরকে এই জায়গায় দেখবে। দুজনেই চমকে উঠলো।
“মিন হুয়ে কী এখানে আছে?”
“ও প্রচুর মদ খেয়ে ছিলো, ঘুমিয়ে পড়েছে।" বললো শিন ছি।
“য়িন শু কোথায়?" ঝৌ রু জি ঘরের মধ্যে দেখলো, “চলে গেছে?”
“য়িন শু?" শিন ছি মগজের মধ্যে হাতড়াতে লাগলো নামটা, কিন্তু মনে করতে পারলো না যে মিন হুয়ে একবারও নামটা ওর কাছে কখনো বলেছে।
“সাও মুয়ের বর, না, সাও মুয়ের ছেড়ে দেওয়া বর, ওদের সবে মাত্র ডিভোর্স হয়েছে -" ঝৌ রু জি জানেও না যে কোথা থেকে শুরু করবে, মাথা চুলকে বললো, “ও প্রচুর মদ খেয়ে এখানে এসে ছিলো মিন হুয়ের খোঁজে -”
“ও যায় নি" শিন ছি ঘরের ভেতরে ঢুকতে দিলো ঝৌ রু জিকে, দেখালো সু ছনের ঘরের দিকে, “উনি ঐ ঘরে ঘুমিয়ে পড়েছেন।”
“সাও মু আমাকে বললো ওকে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে।”
“ও খুব গভীর ঘুমের মধ্যে আছে। আমার মনে হয় যে আপনি ওকে নিয়ে যেতে পারবেন না।”
দুজনে মিলে একসাথে অনেক চেষ্টা করলো য়িন শুকে জাগানোর। দুজনে একের পর এক জোরালো চড় কষাতে লাগলো য়িন শুয়ের মুখে বিছানার ওপরেই। যতো জোরেই মারা হোক না কেনো, য়িন শুয়ের ঘুম এতো গভীর যে ওকে কিছুতেই জাগানো গেলো না। কোনো উপায় নেই দেখে, শিন ছি বলতে বাধ্য হলো, “ফিরে যান। রাতটা ওঁকে এখানে ঘুমোতে দিন। কাল সকালে জাগলে পরে উনি না হয় চলে যাবেন।”
“সেটা কি সুবিধের হবে?”
“আমি আছি এখানে, ঠিক আছে।”
***
পরদিন সকালে মিন হুয়ের ঘুম ভাঙলো জানলার পাশে বারান্দা থেকে ভেসে আসা পাখির গানে। চোখ খুলে জানলার কাচ পেরিয়ে দেখলো একটা হলুদ পাখি বারান্দার রেলিং-এ দাঁড়িয়ে আছে, হাতের তালুর মাপের পাখি, ডেকে চলেছে “চালিয়ে যাও, চালিয়ে যাও, গুও য়া, গুও য়া ” ।
ঘুম পরোপুরি ভাঙার আগেই মিন হুয়ে ঠান্ডা ঘামে ভিজে উঠলো, ভাবলো হলুদ পাখিটা সু তিয়াঁ, ওখানে দাঁড়িয়ে যেনো কিছু বলতে চায়, আর ওকে হয়তো দোষ দিচ্ছে।
ভাবা মাত্র ও জেগে উঠলো আতঙ্কে, উঠে বসলো, চোখ বুলিয়ে নিলো চারপাশটাতে। সু ছন শুয়ে আছে ওর পায়ের কাছটাতে, কপাল ভালো যে বিছানাটা বড়ো, না হলে ও আবার মেঝেতে পড়ে যেতে পারতো।
ছেলেটা খুব রেগে আছে যেনো, মাথাটা ঘামে ভিজে আছে ঘুমের মধ্যেই, চুল ভিজে, কতকগুলো চুলের লাছি আটকে আছে কপালে।
বিছানার উল্টোদিকে একটা জোড়া সোফা, তার ওপরে শিন ছি ঘুমোচ্ছে। ওর স্যুটের জ্যাকেটটা ঢাকা দেওয়া আছে সোফার পাশের চেয়ারে, ওর পরনে তখনো রয়ে গেছে শার্ট আর টাই।
পাগুলো খুব লম্বা, রাখার যথেষ্ট জায়গা নেই, কষ্ট করে মুড়ে রাখা, যেনো চিংড়ির মতো বাঁকা। মাথা রাখারও কোনো জায়গা নেই, মাথাটা প্রায় মেঝেতে পড়েই যাচ্ছে।
মিন হুয়ে হালকা জামাকাপড় পড়ে নিলো, উবু হয়ে মেঝেতে বসলো, নিজের হাঁটুতে রাখলো শিন ছির মাথা, একটা বালিশ দিয়ে, রেখে দিতে গেলো শিন ছির মাথা।
যা আশা করে নি তাই হলো, শিন ছি হঠাৎ জেগে উঠলো। ও যখন চোখ খুলল তখন ওর মাথাটা মিন হুয়ের কোলের বালিশে, ধড়মড় করে উঠে বসে পড়লো।
মিন হুয়ে ঘুরে দেখলো এক ঝলক জানলা দিয়ে, হলুদ পাখি এর মধ্যেই উড়ে চলে গেছে।
মিন হুয়ে মনে করতে পারলো না আগের রাতে কী হয়ে ছিলো, ও জানতে চাইলো, “তুই এখনো এখানে কেনো?”
“য়িন শু এখনো যায় নি।" বললো শিন ছি, “আমার ভয় যে মদ খাবার পরে ও যৌনতা চাইবে।”
“ভয় পাস না, দেখ -”
মিন হুয়ে দুম করে একটা সব্জি কাটা চাকু বার করে আনলো বিছানার গদির তলা থেকে, নিজের নাকের নিচে ঝাঁকিয়ে বললো, “আমার এটা আছে।”
শিন ছি চমকে উঠে, নিজের অজান্তেই এক পা পিছিয়ে গেলো।
“কেউ আমার ওপর জোর খাটাতে এলেই আমি তাকে কেটে ফেলবো।" বলেই মিন হুয়ে চাকুটাকে রেখে দিলো ওটার জায়গায়।
বাতাসে ভাজা ডিমের গন্ধ।
“তুই কি বাইরে থেকে খাবার আনিয়েছিস?” জানতে চাইলো শিন ছি, “ইয়ুন লু এখন বেজিং-এ।”
টোস্টের সঙ্গে বেড়ে রাখা আছে ডিম আর বেকন ভাজা, সবই কাচের ঢাকা দেওয়া, মধ্যিখানে একটা বড়ো বাটিতে ফ্রুট সালাড।
কফিও তৈরি, একটা তাপ ধরে রাখা পাত্রে রাখা আছে। টেবিলের ওপরে একটা কাগজের টুকরো, তাতে লেখা, “তোমাকে বিরক্ত করার জন্য দুঃখিত। – য়িন শু।”এই মূহুর্তে মিন হুয়ের মনে পড়ে গেলো আগের রাতে কী কী হয়েছে। টেবিলে বসে পড়লো, বড়ো বড়ো গ্রাসে খেতে শুরু করলো। ডিম ভাজাটা নরম, বেকনটা মুচমুচে, টোস্টটা মাখনে ভাজা, কফিটা কড়াও নয়, পাতলাও নয়, একদম ঠিকঠাক।
শিন ছি এক ঝলক মোবাইলের দিকে দেখে বললো, “আগের বার বলেছিলি তোদের এখনো তিন কোটি য়ুঁআর লগ্নি লাগবে। তোরা কী দর বাড়িয়েছিস?”
মিন হুয়ে মাথা ঝাঁকালো, “তুই কী সিদ্ধান্ত বদলেছিস?”
“না।”
“তাহলে জানতে চাইছিস কেনো?”
“শেন ল্যান টেকনোলজি জানিয়ে দিয়েছে যে ওরা নিলামে থাকছে না।”
ও নিজের ফোনটা তুলে দেখালো, “এখন তো খুব সকাল। তাহলে সেকেন্ড রাউন্ডে রইলো তিনটে কোম্পানি, গুয়ান ছাও, দঁ লি, আর নিমন্।”
মিন হুয়ে বললো, “ওহ্। অবাক হবার কিছু নেই, শেন ল্যান হয়তো তোর সঙ্গ চায় না।”
“ওরা চায় না। তুই চাস কী?”
“শিন ছি,” মুখের কোনো রেখায় কোনো ভাঁজ না ফেলে বললো মিন হুয়ে, “তুই যদি সাহায্য করতে না চাস, তাহলে বিদ্রুপও করিস না। এমবিও-র জন্য আমরা এমনিই খুব ব্যস্ত আছি।”
“তবুও তোর বসের বরের সঙ্গে কাটানোর মতো সময় তো আছে।” বলে চললো শিন ছি, “তোর ভয় করে না যে টিম ভেঙে যাবে?”
ব্যাপারটা দাঁড়ালো এই যে কারণে মিন হুয়ে এড়িয়ে যাচ্ছিলো অনেক ক্ষণ, ডিম খেতে খেতেই মিন হুয়ে এতো চটে গেলো যে ও প্রায় গিলেই ফেললো পুরো খাবারটা এক গ্রাসে, “আমি তো ঠাট্টা করছিলাম, তুই গুরুতর ব্যাপার ভাবলি। সাও মু আমার এতো ভালো বন্ধু, ওঁকে চটাই কী করে?”
“তুইও খুব ভালো, তাও তুই আমাকে চটিয়েছিলি।”
“শিন ছি – –”
“চার বছর আগে, আমি যদি নিউ ইয়র্ক থেকে উজিয়ে না আসতাম, আমার সব কিছু উজাড় করে দিয়ে তোকে খুশি করার জন্য, তাহলে তুই কী অত ভালো করে সু তিয়াঁর ভূমিকা পালন করতে পারতিস? শেষে তুই আমাকে দোষ দিচ্ছিস যে আমি নাকি যথেষ্ট উদ্যম দেখাই নি, মিন হুয়ে, তোর কোনো লজ্জা নেই, আমি তোর ওপরে ভয়ানক চটে যাবো।”
মিন হুয়ে ওর সাথে তর্ক করতে চায় না। তাই ঘড়ির দিকে তাকালো আর মুখের মধ্যে টোস্ট গুঁজে দিলো, “ইয়ো, আমার সকালে একটা মিটিং আছে। আমি আগে বেরিয়ে যাবো। বাচ্চাকে তোর কাছে রেখে গেলাম।”
“অ্যাই - অ্যাই - মিন হুয়ে --”
“বাই।”
***
মিন হুয়ে তাড়াহুড়ো করে কোম্পানিতে পৌঁছোলো। ওর পথ আটকালো সাও মু, “শেন ল্যান বেরিয়ে গেছে।”
“শুনেছি।”
“এএআর কিন্তু দামটা তেরো কোটি কুড়ি লাখেই বেধেছে আর বোঝাপড়াও চালাচ্ছে হেডকোয়ার্টার্সের সঙ্গে আর খুঁটিয়ে দেখছে লেনদেনের সমস্ত নথি। আমাদের প্রতি হেডকোয়ার্টার্সের মনোভাব বোঝা দায়। যদিও আমাদের সাথে গুয়ান ছাও আর দঁ লির লড়াইটা হাড্ডাহাড্ডি, হয়তো ওদের দরটাও আমাদের থেকে বেশি, কিন্তু ওদের শর্তগুলোও আমাদের থেকে বেশি। বেশি কড়া, বেশি চাহিদার, হয়তো হেডকোয়ার্টার্স সে সব মেনে নিতে চাইবে না। অনেক সময় ধরে হেডকোয়ার্টার্সে কোনো নড়াচড়া নেই। হয়তো এই জন্য যে ওরা আমাদের একটা অগতির গতি করে ঝুলিয়ে রাখতে চায়। এএআর আশা করছে আমরা যদি দরটা আর একটু বাড়াতে পারি। যদি শেষ দর দিতে পারি ষোলোকোটি কুড়ি লাখ, তাহলে আমরা খুবই নিশ্চিত হতে পারবো।”
“আমারও মনে হচ্ছে যে ঐ একই পরিমাণ টাকা দিতে লাগবে।”
“তিন কোটি নিয়ে একটা মিটিং করলে কেমন হয়? ব্যাক্তিগত পুঁজির লোকেরা তো রাজি টাকাটা দিতে যদি আমরা আমাদের ভাগ কুড়ি শতাংশে কমাতে রাজি থাকি, টাকা ওরা দেবে, আমরা আমাদের মতে চলবো। সেদিন ইয়ান চেং লি-র কথার সুর বাকিদের তুলনায় আলগা ছিলো। ওর সাথে একা কথা বলে দেখা যাক, ওকে যদি আমাদের দিকে আনা যায়, দেখি।”
“হ্যাঁ, ইয়ান চেং লি-কে আমাদের দিকে করে নিতে পারলেই আমরা তিন-দুই ভোটে এগিয়ে যাবো।”
পরিস্থিতির টান টান উত্তেজনায় মিন হুয়ের হালকা অস্বস্তি হতে লাগলো। চেং ছিরাং বা ফ্যাং দঁ কুই-কে টেক্কা দিতে পারে কে? জিততে পারে কে? দুটো পালোয়ানের মধ্যে এমবিও নড়াচড়া করার জায়গা পাবে তো? যদি গুয়ান ছাও শেষ পর্যন্ত কিনে নিতে পারে বা’অ্যান, তাহলে তখন মিন হুয়ে কী করবে? ভাবতেই মিন হুয়ের কপাল জুড়ে ঠান্ডা ঘাম ছড়িয়ে গেলো।
কপাল জোরে সাও মুয়ের কথার বিষয়বস্ত একদম বদলে গেলো একদম অন্য খাতে, “আমার ভীষণ খারাপ লেগেছে গত রাতের উৎপাতের জন্য। আমি আশা করি নি যে য়িন শু তোমার দরজায় হাজির হবে। আমি ঝৌ রু জির থেকে শুনলাম যে ও তোমার ওখানেই ঘুমিয়েছে?”
মিন হুয়ের মনে পড়লো না ঝৌ রু জি কখন এসে ছিলো ওর বাড়িতে। হতে পারে শিন ছি দরজা খুলে দিয়ে ছিলো ঝৌ রু জিকে। হাসি মুখে উত্তর দিলো, “সব ঠিক আছে। বাড়িতে থাকার একটা বাড়তি ঘর আছে তো। য়িন গ্য আমাকে কতো সাহায্য করেন সু ছনের খেয়াল রাখতে, এ আর এমন কী।”
“শিন ছি ভুল বুঝবে না?”
“না। তাছাড়া, এখন তো ওর সাথে আমার কোনো সম্পর্ক নেই …”
“কার সঙ্গে মস্করা করছো? তোমরা দুজনে ঐ রকমই।”
“ওহ্। বোঝানো মুস্কিল।”
দুই মহিলা পরস্পরের প্রতি দীর্ঘশ্বাস ফেললো আর চলে গেলো নিজের নিজের কাজে।
আধঘন্টা পরে সাও মু এসে আবারও দীর্ঘশ্বাস ফেললো, “তিন কোটি আরো যোগ দেওয়া যাবে না। জীবন-মরণ পণ করে ইয়ান চেং লি জানিয়ে দিয়েছে যে ও কিছুতেই নিলামের দর আরো তিন কোটি বাড়াতে দেবে না। আমি অন্য দুজনকেও জিজ্ঞেস করতে গিয়ে ছিলাম। কিন্তু ওরা এখনো বিপক্ষেই। এই লোকগুলোর কী হলোটা কী, আমরা তো ভবিষ্যতের পরিকল্পনা করি একসাথে আলোচনা করে, সবাই উচ্চাকাঙ্খী, কিন্তু পয়সা দেবার সময় এলেই তোমরা আর এগোতে চাও না?”
মিন হুয়ে হঠাৎ বললো, “যদি এটা কাজ না করে, তাহলে ঠিক উল্টোটা করো। আমি ঝেং য়ি তিং-এর সঙ্গে দেখা করে ওকে ওস্কাবো, সেটা কেমন হবে? আমি যখন কিছু পাবোই না, তখন আমি খানিক সমস্যা দিতেই বা ছাড়ি কেনো?”
সাও মু ঠোঁট কুঁচকে সন্দেহ প্রকাশ করলো, “ঝেং য়ি তিং-কে পঞ্চক্লেশ কাবু করতে পারে না। তুমি পারবে ওকে ওস্কাতে?”
পঞ্চক্লেশ |
মিন হুয়ে বললো, “আমি চেষ্টা করবো।”
ঝেং য়ি তিং-এর একটা হাস্কি আছে, সেটাকে ঝেং য়ি তিং ভালোবাসে নিজের জীবনের মতোই প্রায়। রাত আটটার সময়ে শহরে অন্য কোনো বিনোদনের ব্যবস্থা না থাকলে, ঝেং য়ি তিং- হাস্কিকে নিয়ে যায় সেন্ট্রাল পার্কের উত্তর-পশ্চিম কোণে, হাঁটানোর জন্য। ঝেং য়ি তিং-এর এই অভ্যেসের কথাটা মিন হুয়েকে বলেছে চেং ছিরাং।
হাস্কি |
চার বছর হয়ে গেলেও মিন হুয়ে সত্যিই পথ আটকাতে পারলো ঝেং য়ি তিং-এর। হাস্কি এখন বেশ বড়ো হয়ে গেছে, দানবাকার নিয়েছে। মিন হুয়েকে চেটে আর শুঁকে দেখছে আর হাঁপাচ্ছে জোরে জোরে।
ঝেং য়ি তিং বেঁটেখাটো চেহারার মানুষ প্রায় ফুট পাঁচেক লম্বা মাত্র। মুখ তার গোল, সরু কোমর, শরীরের ওপরের অংশটা ছোট্টো। বলা মুস্কিল খুব খাওয়াদাওয়া নিয়ন্ত্রণের জেরে অমন চেহারা নাকি সরু হাড়ের জন্য।
ওর পাগুলো ওর হাতের মতোই সরু। পরনে শরীরচর্চার জন্য তৈরী জামা, ব্র্যান্ডটা লুলুলেমন। কুকুরের সঙ্গে তাল মিলিয়ে টগবগিয়ে চলেছে। ঝোপের আড়াল থেকে আচমকা মিন হুয়েকে বেরিয়ে আসতে দেখে ও প্রায় চীৎকার করে উঠলো।
শরীরচর্চার জন্য তৈরী জামা, ব্র্যান্ড - লুলুলেমন |
“চেং থাই থাই, ওয়ানশাং হাও।” মিন হুয়ে তার রাস্তা আটকালো।
“মিন হুয়ে, কী চাই তোমার?”
ঝেং য়ি তিং সতর্ক চোখে মুখে কুকুরটাকে টেনে সরিয়ে নিলো।
“গুয়ান ছাও কিনতে চাইছে বা’অ্যান। আপনি সে কথা জানেন নিশ্চয়ই?”
“আমি জানি।”
“জেনেও আপনি এই অ্যাকুজিসন সমর্থন করছেন?”
“এটা তো স্বাভাবিক ব্যবসা।”
“অ্যাকুইজিসন সফল হলে, চেং ছিরাং আবার আমার ঊর্ধতন হবেন। আপনি কী মনে করছেন, সেটা ঠিক হবে?”
“আমার মনে হয়, অ্যাকুইজিসন সফল হলে, তোমাকে আবার তাড়িয়ে দেওয়া হবে।”
“আমিই আসল প্রযুক্তিবিদ।”
“সত্যি, মিন হুয়ে?”
তীক্ষ্ণ একটা হাসি ছুঁড়ে দিলো ঝেং য়ি তিং, “এতো আত্মবিশ্বাসের কিছু নেই। তুমি তেমন গুরুত্বপূর্ণ নও। খুঁজে নেবো কাউকে তোমার বদলে।”
“যদি গুয়ান ছাও সত্যি বা’অ্যান কিনে নেয়, তাহলে পুরো প্রযুক্তিবিদ টিম কাজ ছেড়ে দেবে। আর যতো টাকা খরচ করবে গুয়ান ছাও অ্যাকুইজিসনে তার সবটা নষ্ট হবে। চেং ছিরাং বেশ দায়িত্বজ্ঞানহীনের মতোই খেলছে আপনাদের পারবারিক সম্পত্তি নিয়ে, তাই না?”
কথাগুলো বলা মাত্রই হাস্কি জোরে ডেকে উঠলো বার দুয়েক, হিংস্র দাঁত বার করে।
মিন হুয়ে ঘুরে দৌড় লাগালো ভয়ে।
~~~~~~~~~~~~
সম্পূর্ণ বই বিনামূল্যে : https://dl.bookfunnel.com/lcj5vznt96
Link to Previous Post in the Series : https://projectionofnaught.blogspot.com/2024/09/jpda-chapter-52.html
Link to following Post in the Series : https://projectionofnaught.blogspot.com/2024/09/jpda-chapter-54.html
No comments:
Post a Comment