Saturday, October 12, 2024

JPDA - Chapter 67

 ৬৭. সামনে উঁচু পাহাড়



সু তিয়াঁর সমাধি ছিয়াঁ শ্যন চ্যাঙ্গল সমাধিক্ষেত্রে, বিনচেং-এর পুব দিকে।

শিন ছি বেছে নিয়েছে সমাধির জন্য জোড়া কেন্দ্রস্তম্ভ। আর ওর নিজের সমাধির জায়গাটাও ধরে রেখেছে। মার্বেল পাথরের ফলকে সু তিয়াঁ আর শিন ছির নাম খোদাই করা আছে। শুধু শিন ছির মৃত্যুর সালের জায়গাটা খালি রাখা আছে।

মিন হুয়ে যখন জানতে পারলো কথাটা, তখন ও জিয়া জুনের সঙ্গে একবার গিয়ে ছিলো শ্রদ্ধা জানাতে। 

যে দিন সু তিয়াঁর অবশেষ খুঁজে পাওয়া গিয়ে ছিলো, সে দিন শিন ছির লাগামহীন দোষারোপ আর মিন হুয়ে সইতে পারে নি। ট্রেনে চেপে একাই বিনচেং-এ ফিরে এসে ছিলো।

পরের দিন জিয়া জুনও ফিরে এসে ছিলো। ও জানিয়ে ছিলো মিন হুয়েকে যে শিন ছি আর দেঁ চেন রয়ে গেছে খোঁড়ার কাজটা চালিয়ে যাবার জন্য যাতে সু তিয়াঁর বাকি অবশেষ তুলে আনা যায়।

খবর শুনে মুশুইহে শহরের পুলিশ বিভাগ দুজন পুলিশকর্মীকে পাঠিয়ে ছিলেন যার মধ্যে একজন চেন শিয়েংশঁ যিনি ঘটনার তদন্ত করে ছিলেন সেই সময়ে। তাই উনি শিন ছি আর দেঁ চেনকে সু তিয়াঁর অবশেষ তোলার ব্যাপারটাতে প্রশাসনের কাজের অংশটাতে সাহায্যও করে ছিলেন।

দু দিন পরে, ডিএনএ পরীক্ষার ফলাফল বের হয়ে ছিলো। তাতে প্রমাণ হয়ে যায় অবশেষটা সু তিয়াঁ কিংবা লি চুন মিয়াও-এরই।

যখন সব কিছু দিনের আলোর মতো স্পষ্ট হয়ে উঠলো, তখন মিন হুয়ের মনটা আগের থেকেও বেশি ভারী হয়ে উঠলো যেনো।

তার ওপর, শিন ছি ওর সাথে সমস্ত যোগাযোগ ছিন্ন করে ফেলেছে। পুরো পরিস্থিতিটা মিন হুয়েকে যেনো একটা ঘোরের মধ্যে ঠেলে দিলো অনেক দিনের জন্য, খেতে পারে না, এমনকি প্রোগ্রাম লেখার কাজে আর বাগ ঠিক করার কাজেও আর উৎসাহ পায় না যেনো। ওর দুশ্চিন্তা হতে থাকে যে ওর ছেলেটা বুঝি রোজ ন্যানির সঙ্গে কাটাবে। তাই ছেলেকে ফেরত এনে নিজের কাছে রেখে দিয়েছে, মিংসেন কমিউনিটির অ্যাপার্টমেন্টে।

রাতে সু ছন ওর সঙ্গে থাকে। ছেলেকে ঘুম পাড়ানোর পরে সারা রাত মিন হুয়ে চোখ মেলে থাকে, ছাদ দেখতে থাকে ভোর পর্যন্ত।

যখন দিনের বেলা কাজে যায়, ওকে সাও মু বলে দুম করে অফিস ছেড়ে যেনো বেরিয়ে না যায় ও।

চেং ছিরাং আর দিঁ য়িফঁ দু জনেই মিন হুয়ের সঙ্গে ঝামেলা করার জন্য মুখিয়ে আছে। যেহেতু ঝেং ল্যান সদ্য গত হয়েছেন, গুয়ান ছাও-এর ওপরতলায় ক্ষমতার নানান রদবদল চলছে। বেশ কিছু দিন ধরে চেং ছিরাং আর মিন হুয়ের দিকে মন দিতে পারছে না, ওকে উদয়াস্ত ব্যস্ত রাখতে পারছে না। তাই নিরুপায় মিন হুয়ে ঘোরের মধ্যেই অফিসে কাটায়, হাবিজাবি খায়, এক সপ্তাহের মধ্যে ওজন বাড়িয়ে ফেললো সাত ক্যাটি মানে চার কেজিরও বেশি।

কয়েক দিন পরে, মোবাইল ফোনের ক্যালেন্ডার মনে করিয়ে দিলো যে পরের দিনটাই ঝৌ রু জির জন্মদিন। মিন হুয়ের হঠাৎ মনে পড়ে গেলো ওকে ঝি ঝু যে কাজটা দিয়ে ছিলো সেটার কথা। ক্লোজেট খুঁড়ে ও দুটো ব্যাগ বার করে আনলো, দু জোড়া জুতোর, যেগুলো ও শিন ছিকে দিয়ে আনিয়ে ছিলো ইউনাইটেড স্টেটস্‌ থেকে। দোকান থেকে যত্ন করে উপহারের মতো বেধে দিয়েছে দু জোড়া ড্যান্সকো জুতো। কাজে যাওয়ার পথে মিন হুয়ে হাসপাতালে গেলো ঝি ঝুয়ের সঙ্গে দেখা করবে বলে। যেহেতু ঝি ঝু বলে ছিলো ঝৌ রু জির জন্মদিনে ওকে একটা চমক দেবে, তাই মিন হুয়ে ভাবলো যে চুপচাপ উপহারটা এনে আগেভাগে ঝি ঝুকে দিয়ে রাখাই ভালো।

চেনা পথ ধরে ও পাঁচ তলায় পৌঁছোলো। ওয়ার্ডে গিয়ে দেখলো যে সব খাঁ খাঁ খালি। নতুন চাদর পাতা আছে টান টান করে, কোথাও কোনো ভাঁজ নেই।

মিন হুয়ে চমকে উঠলো এক মূহুর্তের জন্য। ভাবলো ও বুঝি ভুল ঘরে ঢুকে পড়েছে। বাইরে গিয়ে ঘরের নম্বর দেখে নিশ্চিত হতে গেলো, পাশ দিয়ে যাওয়া একজন নার্সকে ধরে জানতে চাইলো, “এখানে যে রুগি ছিলো তিনি কোথায়? ঘর বদলানো হয়েছে কী?”

“কী নাম রুগির?”

“ইয়াও ঝি ঝু।”

“উনি মারা গেছেন।”

মিন হুয়ে এতো ভয় পেলো যে ওর হাত কাঁপতে শুরু করলো, ওর হাত থেকে উপহারের বাক্সদুটো পড়ে গেলো মেঝেতে, “কখন?”

সেই দিন। মিন হুয়ে ব্যবসার কাজে ব্যতিব্যস্ত হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছিলো সারা দেশে কিছু আগের যে সময়টাতে, ও মাত্র দু বার দেখা করতে পেরে ছিলো ঝি ঝুয়ের সাথে, যখন বিনচেং-এ ফিরে ছিলো।

ঝৌ রু জি জানতো যে মিন হুয়ে কাজ নিয়ে ব্যস্ত। তাই ইচ্ছে করেই ও কিছু জানায় নি মিন হুয়েকে। ওর সাথে কোনো যোগাযোগও করে নি দু সপ্তাহের ওপরে। ও কিছু বলে নি, না হলে মিন হুয়ে ট্রেনে চড়ে ফিরে আসতো পুরো পথ শুধু ঝি ঝুয়ের অন্ত্যেষ্টিতে উপস্থিত হবার জন্য …

মিন হুয়ের সাথে ঝি ঝুয়ের সম্পর্কটা কাছের ছিলো, আবার দূরেরও। ওরা দুজনে বন্ধু বা পরিচিতও নয় একে অপরের, কেবল ওরা দু জনে একটাই পুরুষকে বিয়ে করে ছিলো। এই আর কী। আর একে অপরের সঙ্গে ওদের আলাপের অধিকাংশটাই ছিলো সামাজিক শিষ্টতায় বাধা, আন্তরিক কিছু নয়।

“ঝৌ ইশঁ কোথায়?" জানতে চাইলো মিন হুয়ে।

“অফিসে।”

মিন হুয়ে দু জোড়া জুতো নিয়ে চললো পাঁচ তলার অন্য প্রান্তে। সেই মূহুর্তেই ঝৌ রু জি ওয়ার্ডে ঘুরে ঘুরে রুগি দেখা শেষ করে এসে পৌঁছোলো।

ওর খুব কোনো পরিবর্তন হয়েছে বলে মনে হলো না। শান্ত অভিব্যক্তি, ঝকঝকে চোখ, চেহারা মোটেই বিধ্বস্ত নয়। মিন হুয়ে জানে যে ও সারা দিন সংকটজনক শারিরীক অবস্থায় থাকা রুগিদেরই দেখে, ও জীবন মৃত্যু দুটো দেখতেই অভ্যস্ত, ওর আবেগে সচরাচর কোনো অভিঘাত তৈরি হয় না। জীবন যাপণের ক্ষেত্রেও তাই। যেমন দুটো মানুষের বিয়ে আর বিচ্ছেদের পুরো ব্যাপারটা ভীষণ শান্ত, কোনো ঝগড়াঝাঁটি নেই, আবেগের কোনো ব্যাপক ওঠা কিংবা পড়া নেই। কিন্তু এর বিপরীতে গিয়ে ও মারপিট করেছে, মেজাজ হারিয়েছে ঝি ঝুয়ের জন্য - আবেগের বিরল একটা অভিব্যক্তি।

সেই জন্য মিন হুয়ে ঠাট্টাও করতো যখন ওরা এক সঙ্গে ছিলো যে ওদের দুজনের এক হয়ে যাওয়া উচিৎ। ঝৌ রু জি তর্ক করতো যে ও সব সময়েই এই রকমই।

পরে, মিন হুয়ে যখন ঝি ঝুয়ের সঙ্গে অনেক গল্প করেছে, তখন ঝি ঝুও বলেছে যে ঝৌ রু জির মেজাজ খুব ভালো, ধীর, স্থির, হতে পারে এই জন্য যে ও প্রায়ই উদ্বিগ্ন রুগিদের মুখোমুখি হয় আর স্বাভাবিক ভাবেই একটা ভীষণ ভদ্র কেজো ব্যক্তিত্ব তৈরি করে ফেলেছে।

কেউ জানে না ওর বুকের ভেতরে কী তোলপাড় যে চলছে।

দুজনে কথা বললো ঝি ঝুয়ের শেষ মুহুর্ত নিয়ে। ঝৌ রু জি বললো, “ও বড্ডো তাড়াতাড়ি চলে গেলো, হঠাৎ করে নয়। শেষ দু দিনে ওর কথা বন্ধ হয়ে গিয়ে ছিলো, শুধু আমার দিকে তাকিয়ে থাকতো, যেনো কিছু রয়ে গেছে যা ও বলতে পারলো না।”

কথা বলে হয়ে যেতে ও মেঝেতে রাখা জুতোর জোড়া দুটো পায়ে গলিয়ে নিলো। তারপর একটু চলাফেরা হাঁটাহাঁটি করে দেখলো। জুতো জোড়া দুটো একদম মাপসই হয়েছে।

একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ঝৌ রু জি বললো, “হয়তো ও বলতে চাই ছিলো যে ও আমার জন্য দু জোড়া জুতো কিনেছে।”

কথা শেষ করে, খানিক ক্ষণ মাথা নিচু করে চুপচাপ বসে রইলো।

মিন হুয়ে মন খারাপ না করে পারলো না। অনুশোচনা হতে লাগলো যে ও জুতোর জোড়া দুটো কেনো আগে নিয়ে আসে নি, আগে নিয়ে এলে ঝি ঝু নিজে হাতে ঝৌ রু জিকে উপহারটা দিয়ে যেতে পারতো মারা যাবার আগে, ওর দেওয়া জন্মদিনের শেষ উপহার।

অনেক ক্ষণ ধরে দীর্ঘশ্বাস ফেলে, মিন হুয়ে ঝৌ রু জির কাঁধে চাপড় মেরে জানতে চাইলো, “এমন একটা বড়ো ব্যাপার, তুমি আমাকে আগে কেনো জানাও নি?”

“আমি ভেবেছি যে তুমি ব্যবসার কাজে বাইরে গেছো। আমি অপেক্ষা করতে চেয়ে ছিলাম তুমি ফেরা পর্যন্ত। ঝি ঝুয়ের মা-বাবা খুবই ভেঙে পড়েছেন। জোর করে অস্থিভস্ম সঙ্গে করে ওঁদের ওখানে নিয়ে গেলেন। আমি ওঁদের সঙ্গে শিংজিয়াং গিয়ে ছিলাম, ঝি ঝু-এর জন্য একটা সমাধির জায়গা খুঁজতে সাহায্য করেছি ওঁদের, অন্ত্যেষ্টিও ওখানেই হয়েছে। আমি তো সবে মাত্র গতকাল ফিরেছি।”

“তুমি কী কাজের পর ফাঁকা আছো? কোথাও যাবে, একসাথে মদ খাবো?" প্রস্তাব দিলো মিন হুয়ে।

“অন্য কোনো দিন। দুপুরে আর বিকেলে, সন্ধেবেলা সার্জারি আছে। পুরো সময়টা ভর্তি।”

বাঁকা হেসে ঝৌ রু জি বললো, “আমি ঠিক আছি।”

“এমন একটা সময়ে তুমি কাজ করছো কী করে? তোমার বাড়ি গিয়ে বিশ্রাম নেওয়া উচিৎ। অথবা কোথাও গিয়ে আরাম করা …”

কোনো একটা কারণে, ঝৌ রু জিকে যতো শান্ত দেখাচ্ছে, মিন হুয়ের মন ওর জন্য ততোটাই বিচলিত হচ্ছে। যদি ঝৌ রু জি চীৎকার করে দোষারোপ করতো মিন হুয়ের ওপরে, যে রকম শিন ছি করে, আর এতো দুঃখ পেতো যে কান্নার তোড়ে রগের শিরা ফেটে যাবে বলে মনে হোতো তাহলে হয়তো মিন হুয়ে এতো ভয় পেতো না।

“কাজ আমাকে সব কিছু ভুলিয়ে দিতে পারে।" বললো ঝৌ রু জি, “যদিও সাময়িক।”

“তাহলে চলো পান করি, মদ নয়, কফি।”

ও জোর করে ঝৌ রু জিকে ধরে নিয়ে এলো একটা এসপ্রেসোর দোকানে। দুজনে এক এক কাপ করে এসপ্রেসো অর্ডার করলো। এতো তেতো সেগুলো যে খাওয়া গেলো না। বরফ দেওয়া জল নিতে হলো তারপরে। 

“একটা গুরুতর অসুখে কারুর মারা যাওয়াটা যতোটা নাটকীয় ভাবছো তুমি, ততোটা নাটকীয় মোটেই নয়।" মিন হুয়ের দিকে তাকিয়ে ধীরে ধীরে ঝৌ রু জি বললো, “মৃত্যু একটা প্রাকৃতিক আর শান্তিপূর্ণ প্রক্রিয়া। আর জীবনের ব্যবস্থাটা ভেঙে পড়তে থাকে লাগাতার, নিজের শেষের জন্য প্রস্তুতি চলে, যেমন কম্পিউটারে একটার পরে একটা প্রোগ্রাম বন্ধ হয়ে যায় শাট ডাউন করলে। চিকিৎসক হিসেবে, পুরো প্রক্রিয়াটার সম্পর্কে আমার ধারণাটা খুব স্পষ্ট, এমনকি কিছু না হলেও ব্যাপারটা একই। আগে থেকে দিব্যি বলা যায় এটা কোন দিকে যাবে।”

“শুনে মনে হয় যে এটা ভয়ানক।”

কফিটা খুবই তেতো। মিন হুয়ে খুব জোর দিয়ে কাপের নিচের কনডেন্সড দুধ গুলিয়ে নিতে লাগলো, “ঝি ঝু আমাকে একবার বলে ছিলো যে ও তৈরি, আর ওর ভয় এই যে তুমি প্রস্তুত নও, তাই ও আমাকে বলে ছিলো মনে করে তোমার খেয়াল রাখতে।”

“ — — ফল হলো এই যে, আমি তখন ছিলামই না, যখন ঘটনাটা ঘটলো।”

“ও যাবার কদিন আগে, আমি টের পাচ্ছিলাম যে ওর সময় ঘনিয়ে এসেছে, তাই আমি ওর হাত ধরে বসে থাকতাম আর নরম সুরে কথা বলতাম। সব সময়ে ও যে সাড়া দিতো তা নয়। একটা রাতে ও হঠাৎ জেগে উঠলো আর বললো যে ও শিয়া য়ি হ্যাং-কে দেখতে চায়। শেষ মূহুর্তে, আমরা চার জনে, – ওর মা-বাবাকে নিয়ে – ওকে বিদায় জানিয়েছি একসাথে।”

“শিয়া য়ি হ্যাং?" একটা ঘোরের মধ্যে জিজ্ঞেস করলো মিন হুয়ে, “ও কেনো এসে ছিলো এখানে?”

“ঝি ঝু শুধু শুধু কাউকে বিয়ে করার মেয়ে নয়। ও শিয়া য়ি হ্যাং-এর সঙ্গে ছিলো কারণ ও শিয়া য়ি হ্যাং-কে পছন্দ করতো। ঝি ঝু আসতে বলে ছিলো শিয়া য়ি হ্যাং-কে এই জানাতে যে ও শিয়া য়ি হ্যাং-কে ক্ষমা করে দিয়েছে, যাতে ভবিষ্যতে ও এই বিষয়টা নিয়ে মন খারাপ না করে, আর যত্নবান হয়।”

“এই ছোকরার সময়ে বিবেক জেগে উঠে ছিলো, ওর সামনে খুব কেঁদেছে, বলেছে যে ও খুব দুঃখ পাচ্ছে ঝি ঝুয়ের জন্য। আগে তখন ও এতো অনুভূতিহীন হতে চায় নি, কিন্তু ওর বাবা ওকে ধমকে ছিলেন, ও ভয় পেয়ে ছিলো যে ও হয়তো ঝামেলায় পড়বে যদি ওর বাবার সঙ্গে ও ঝঞ্ঝাট করে তো।”

অপ্রত্যাশিতভাবে ছকটা এরকমই। মিন হুয়ে তাকালো ঝৌ রু জির দিকে। অনেক ক্ষণ কিছু বলতে পারলো না, তার পরে বিদ্রুপের সুরে বললো, “সবাই তো প্রাপ্তবয়স্ক। সবাই মাতাল, কিন্তু কারোরই মেরুদন্ড নেই।”

অমন একটা লোককে, মিন হুয়ে কখনোই এতোটা ক্ষমা করে দেবে না।

“শিয়া য়ি হ্যাং নিজে হাতে ওর অস্থিভস্ম পাহাড়ের মাথা থেকে ফেলতে চেয়েছে। তাই ও আমাদের সঙ্গে শিংজিয়াং গিয়ে ছিলো। ঝি ঝুয়ের মা-বাবা শুধু জানতেন যে আমাদের ছাড়াছাড়ি হয়ে গেছে। কিন্তু ওরা জানতেন না যে তারপরে ঝি ঝু ছিলো শিয়া য়ি হ্যাং-এর সঙ্গে। তাই অনেকটা স্বান্তনা পেয়েছেন ওঁরা।”

“তুমিও তাহলে বদ লোকটাজে ক্ষমা করে দিলে এতো তাড়াতাড়ি?”

মিন হুয়ে চোখ বড়ো বড়ো করে প্রশ্ন করলো, “শিয়া য়ি হ্যাং-এর নরকে যাওয়া উচিৎ ও যা করেছে তার জন্য। তাই না?”

“যদি ঝি ঝু ওকে ক্ষমা করে দেয়, তবে আমার তো ওকে ক্ষমা না করার কোনো কারণ নেই। ওর তো কিছু যায় আসে না …”

ঝৌ রু জি বললো, “এই পৃথিবী ছেড়ে যাবার আগে, ঝি ঝু চেয়েছে সমস্ত বিবাদ বিসংবাদ মিটিয়ে ফেলতে, তাই আমি ওকে শুধু একটু সাহায্য করেছি কাজটা সম্পূর্ণ করতে। এই আর কী।”

“ঝৌ রু জি –”

“আমি জানি, ব্যাপারটা তোমার পছন্দ নয়, তাই আমি তোমাকে ডাকিও নি।”

ঝৌ রু জি কাঁধ ঝাঁকালো, “জীবন এরকমই। সব শুরু হয়ে যায় তুমি যখন কিছুই বোঝো না, ঠাহর করে ওঠো না তখন - কিচ্ছু না জেনে, তুমি এর গভীরে - সবার যন্ত্রণা আলাদা আলাদা। কেউ কারুর থেকে একটুও বেশি ভালো নয়। ঝি ঝু একজন শিল্পী। আমার পক্ষে ওর আধ্যাত্মিক অবস্থানে পৌঁছোনো সম্ভব নয়। মৃত্যুর মুখে দাঁড়িয়ে প্রেমের মতো অনুভব ওর বাধা হতে পারে না। তোমার মতো নয় …”

“আমার মতো নয়?”

মিন হুয়ে চমকে উঠলো, “কী? মানে? আমি প্রেমে বাধা পড়ে আছি?”

“অবশ্যই।”

হাসলো ঝৌ রু জি, “যখন আমরা এক সঙ্গে ছিলাম, যে কবার আমরা যৌন প্রেম করেছি, প্রত্যেকবার তুমি অন্যমনস্ক থাকতে। শিন ছি করেছেটা কী যে তুমি এমন হয়ে গেছো?”

“...”

হঠাৎ মিন হুয়ের প্রচন্ড ইচ্ছে হলো ঝৌ রু জিকে বলে ফেলার, আর দশ মিনিটও লাগলো না ওর সব কথা বলে ফেলতে। 

খুব ছোটো করে সু তিয়াঁ আর শিন ছির গল্প বলে ফেলার পরে মিন হুয়ে এক ঢোকে শেষ করে ফেললো ভয়ানক তেতো কফিটা।

অনেক ক্ষণ কথা বললো না, ওর মনে হতে লাগলো যে সবটা একটা অলীক কল্পকথা।

“এখন সু তিয়াঁ নেই আর। আমাদের পক্ষে একে অপরকে সঙ্গী হিসেবে মেনে নেওয়া অসম্ভব। কিন্তু আমাদের একটা বাচ্চা আছে। আমরা কেউই বাচ্চাটাকে কাছছাড়া করতে চাই না। আমরা জানি না কী করা উচিৎ আমাদের।”

“তাহলে একসঙ্গে থাকো। বাচ্চার জন্য।”

“এটা কিচ্ছু না, আর খুব পুরোনো ধারণা। এখনো তোমরা ভাবো যে একটা বাচ্চা দুটো মানুষকে বেধে রাখতে পারে? এটা সু ছনের জন্য খুব খারাপ হবে।”

“এতে এতো অবাক হওয়ার কী আছে? সারা পৃথিবীতে কতো জোড়া মা-বাবা একসাথে বাধা পড়ে থাকে শুধু তাদের বাচ্চাদের জন্য? তুমি কী জানো না প্রত্যেক বছরে কলেজে ভর্তির পরীক্ষা হয়ে গেলেই ডিভোর্সের সংখ্যা সব থেকে বেশি হয়ে দাঁড়ায়?”

“অন্যেরা হয়তো পারে। কিন্তু শিন ছি আর আমি পারবো না।”

মিন হুয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো, “সু তিয়াঁর পাহাড়প্রমাণ বাধা, শিন ছি হয়তো ওর সারা জীবনে কাটিয়ে উঠতে পারবে না।”

“তাহলে তুমি কী করবে?”

“আমি জানি না …”

ওর চোখগুলো অল্প ফুলে আছে। ও খালি চোখে জানলা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে রইলো।

ও জানে যদি শিন ছি চলে যায়, তবে ওর জীবনের একটা অংশ নিয়ে চলে যাবে। জীবনের একটা অংশ নিঃশব্দে ঘটে চলবে অন্য কোথাও। যাতে ও অংশ নিতে পারবে না, যা ও খুঁজে পাবে না কখনো …

“আসলে শিন ছি তোমাকে পছন্দ করে।”

 হঠাৎ বলে উঠলো ঝৌ রু জি।

মিন হুয়ের মুখে বাঁকা হাসি ফুটে উঠলো, মাথা ঝাঁকিয়ে প্রশ্ন করলো, “তাও কী সম্ভব?”

“যখন সু ছন হাসপাতালে ছিলো, একবার তুমি করিডরে নার্সের সঙ্গে কথা বলছিলে, শিন ছি বসে ছিলো দরজার পাশের সোফাতে। তুমি ওর দিকে পিঠ ফিরিয়ে ছিলে, কিন্তু ও তোমার থেকে চোখ সরায় নি, এক মূহুর্তের জন্যও না। তারপর তুমি সোজা নিচে নেমে গেলে, ওর চোখ তোমার পিছু নিলো এলিভেটর পর্যন্ত, যতক্ষণ না তোমার চেহারা পুরো অদৃশ্য হয়ে গেলো।”

“চুপ করো।”

“এক জন সার্জেনের পর্যবেক্ষণকে বিশ্বাস করো।”

“...”

“আরেক বার, আমি ওকে নেমতন্ন করে ছিলাম গলফ্‌ খেলার জন্য, আমাদের সাথে অন্যান্য ডাক্তাররাও ছিলো। সবাই কোনো একটা কারণে তোমার কথা বলাবলি করতে শুরু করে ছিলো, কারণ তুমি আমার বউ ছিলে। সবাই দেখেছে তোমাকে। … একজন ডাক্তার বলে উঠলো যে তোমার চেহারাটা দারুণ - অমনি শিন ছির মুখ কালো হয়ে গেলো, তাতে ডাক্তার এতো ভয় পেলো যে অনেক ক্ষণ আর কথা বলার সাহস করে নি। … শিন ছি নিশ্চয়ই তোমার ব্যাপারে খুব যত্নশীল, তাই অন্য কাউকে তোমার ব্যাপারে আলোচনা করতে শুনলে ও সেটা পছন্দ করে না …”

মিন হুয়ে তাকালো ঝৌ রু জির দিকে, হাসতে চাইছিলো, কিন্তু পারলো না, “তুমি সত্যিই জানো মানুষকে স্বান্তনা কী করে দিতে হয়।”

ঝৌ রু জির আরো কিছুক্ষণ কথা বলার ইচ্ছে ছিলো হয়তো, কিন্তু ওর সেল ফোন কেঁপে উঠলো। টেক্সট মেসেজের দিকে এক ঝলক তাকিয়ে ঝৌ রু জি বললো, “আমাকে যেতে হবে, আমার একজন রুগি হঠাৎ মারা গেছেন …”

ও হাঁটলো না, প্রায় দৌড়োলো, ওর জামার হাতা লেগে কফিগুলো পড়ে যাচ্ছিলো আর কী। 



****

ঝি ঝুয়ের মৃত্যুর খবর শোনার দু সপ্তাহ পরে মিন হুয়ে আবার দেখতে পেলো শিন ছিকে। কাজের থেকে বেরিয়ে, এক ডজন গোলাপ কিনে নিয়ে যাচ্ছিলো ছিয়াঁ শ্যান চ্যাঙ্গল সমাধিক্ষেত্রে, সু তিয়াঁর কাছে। কিন্তু চেনঝঁ বিল্ডিং-এর ফটকে একটা পরিচিত চেহারা নজরে এলো ওর। 

চেহারার অধিকারী চেন জিয়া জুন। একজন লম্বা মহিলা দাঁড়িয়ে আছে জিয়া জুনের পাশে, মহিলার মাথার চুল ছোটো করে ছাঁটা। পরণের জামাকাপড় সবই পুরষ নারী আর সবাই পরতে পারে এমন। খুঁটিয়ে না দেখলে মিন হুয়ে মহিলাকে পুরুষ বলে ভুল করতো।

দুজনেরই পরণে ধূসর রঙের জাম্পার। দুজনের মাথাতেই খাড়া উঁচু টুপি, তাইতে ঢাকা পড়ে গেছে মুখের বেশির ভাগটাই। সময়টা কাজ শেষ হয়ে যাওয়ার, অফিস থেকে ঘরে ফিরতে শুরু করার। তাই বিল্ডিং-টায় খুব ভিড় মানুষজনের। মিন হুয়ে ছাড়া কেউই ওদের নজরও করছে না।

“জিয়া জুন? তুমি এখানে কেনো?”

মিন হুয়ের চোখের দৃষ্টিতে ভীষণ ধার, দেখেই চিনতে পেরেছে ছেলেটাকে।

ওরা দুজনে যখন শুনতে পেলো যে ওদেরকে কেউ নাম ধরে ডাকছে, দুজনেই খুব চমকে উঠলো, কিন্তু যেই ওরা দেখতে পেলো যে ওদেরকে অন্য কেউ ডাকে নি, শুধু মিন হুয়ে ডেকেছে, দুজনেই একসাথে দীর্ঘশ্বাস ফেললো, যেনো হাঁফ ছেড়ে বাঁচলো।

জিয়া জুন টান মেরে মিন হুয়েকে নিয়ে গেলো এক কোণে। নিচু গলায় আলাপ করিয়ে দিলো, “জিয়ে, ইনি ইয়াং লু, আমার নিফঙিয়ো।”

জিয়া জুনের ভঙ্গিটা শান্ত আর গর্বিত, আগের মতো লাজুক নয়।

“ওহ্‌!”

মিন হুয়ে ঝটপট মেয়েটির সাথে করমর্দন সেরে নিলো, “ইয়াং লু? আপনিও সাংবাদিক, তাই না? শিন ছি বলে ছিলো আমাকে।”

“হ্যাঁ।" শুকনো হাসি ইয়াং লুয়ের মুখে।

“জিয়া জুন আর আমি - আমরা দুজনেই কাজ করি সামাজিক খবরের পাতায়।”

মিন হুয়ে অনেক ক্ষণ ধরে দুজনকে মাপলো, তারপরে জানতে চাইলো, “তোমরা এখানে কী আমাকে খুঁজতে এসেছো? তোমরা এরকম ঘাপটি মেরে আছো কেনো?”

“আমরা এখানে খবরের তদন্ত করতে এসেছি।" ইয়াং লু জানালো।

“হুহ?”

“কাজের জায়গায় যৌন হেনস্থা আর লিঙ্গ বৈষম্য - এই দুটো বিষয়ে।”

জিয়া জুন জুড়ে দিলো, “আমাদের লক্ষ্য প্রযুক্তি কোম্পানিগুলো।”

এক মূহুর্তের জন্য মিন হুয়ে চমকে উঠলো, তারপর দু হাতে তালি দিয়ে উঠলো, “দারুণ। আমি কী কোনো সাহায্য করতে পারি?”

“জিয়ে, তোমার সঙ্গে চেং ছিরাং-এর মামলাটা - ওটা আমরা আবার ঘুরে শুরু করতে চাই, দেখতে চাই যে নতুন কোনো প্রমাণ আছে কিনা। কিন্তু আমাদের তদন্ত শুধুমাত্র তোমাকে নিয়ে নয়।”

বললো জিয়া জুন।

মিন হুয়ে ঘাড় নাড়লো, “আমি তোমাদের একটা ফর্দ দিতে পারি। আমার অসংখ্য সহকর্মী একই পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে গেছে, যাচ্ছে।”

“দারুণ। তদন্ত চলছে বেশ কিছু দিন ধরে। আমরা অনেক সূত্র পেয়েছি, কিছু অভিযোগও পেয়েছি। গুয়ান ছাও-এর ভেতরে কাজের জায়গার সংস্কৃতি জঘন্য। ওপর তলার লোকগুলো সিধে নয়, তাই নিচের তলার লোকগুলোও বাঁকা। সিইও হিসেবে চেং ছিরাং এর দায় থেকে নিজেকে মুক্ত করতে পারবে না।”

ইয়াং লু চলতি ম্যান্ডারিন বলে, খুব দ্রুত বেগে আর উচ্চারণও সঠিক।

“ছিং, চোখ কান খোলা রেখে চলা ফেরা করো। চেং ছিরাং কিন্তু বদলা নেবে নিশ্চয়ই।”

“আমি জানি।”

জিয়া জুন মুঠো পাকিয়ে ফেললো, “আমি ভয় পাই না। আসলে আমি চাই ছিলাম যে ওকে ডেকে বাইরে নিয়ে এসে বেধড়ক মারবো। কিন্তু, জিয়ে, তুমি আমাকে সবসময়ে বলেছো যে মারপিট করে সমস্যার সমাধান হয় না। তাই আমি তোমাকে সাহায্য করবো সবার চোখের সামনে ওর ভেক খুলে ধরার কাজটাতে।”

মিন হুয়ে সন্দেহের চোখে তাকালো ওদের দিকে, মনে মনে নিশ্চিন্ত হলো, আবার আরো বেশি ভয় পেতে লাগলো যতো ভাবতে লাগলো ওদের কথা। যাই হোক, সেই সময়ে ও একা লড়াই করে ছিলো, আর তাতেই খুব হইচই হয়ে ছিলো, কিন্তু শেষে চেং ছিরাং-এর কিছুই বিগড়োতে পারে নি ও। কাজটা যদি অপরিচিত লোকের তরমুজ ফলানোর হোতো, তাহলে ও খুশি মনে ফলের অপেক্ষা করতো। কিন্তু যখন ওর পরিবারের মানুষ জড়িয়ে একটা বিপজ্জনক কাজে, তখন ও খুব বেশি আশা করতে পারে না।



চার বছর পরে, গুয়ান ছাও বেড়েছে অনেকটা। এর প্রভাব প্রতিপত্তিও আগে যেমন ছিলো এখন ঠিক তেমন আর নেই। 

কেবল মাত্র চেনঝঁ বিল্ডিং-এরই পার্কে, একটা সম্পূর্ণ তলা জুড়ে গণমাধ্যম বিভাগ, বিজ্ঞাপণ বিভাগ আর প্রচার বিভাগ।

হতে পারে যে পুরো সেনা বাহিনী ময়দানে নামলে ধুয়ে মুছে যাবে চেন জিয়া জুন ভারি হাতুড়ি নিয়ে লড়তে নামার আগেই।

এই মূহুর্তে ওদের উত্তপ্ত উৎসাহে ঠান্ডা জল ঢেলে দেওয়া সহজ হবে না, তাই মিন হুয়ে ওদেরকে বার বার বললো, “সবার আগে তোমাদের দুজনকে নিরাপদ থাকতে হবে। তারপর এদের পর্দা ফাঁস করে দিও।”

“নি ফাংশি, জিয়েজিয়ে। বদলোকের সাথে লড়াই করার অভিজ্ঞতা আছে আমাদের।” ইয়াং লুয়ের হাসি জুড়ে আত্মবিশ্বাস।

*****

দু জনের ফিরে যেতে থাকা পিঠ জোড়ার দিকে তাকিয়ে মিন হুয়ের হৃদয়ে প্রবল তোলপাড় শুরু হলো। গোলাপ নিয়ে সু তিয়াঁর সমাধিতে পৌঁছে, কাছে যাবার আগেই ও দেখতে পেলো শিন ছিকে।

এ আর অন্য কেউ হতেই পারে না।

কেবল দেঁ চেন, জিয়া জুন, শিন ছি আর ও - এই চার জন মাত্র জানে যে সু তিয়াঁকে এখানে কবর দেওয়া হয়েছে।

পরনে একটা কয়লার মতো কালো স্যুট, চেহারাটা লম্বা আর খাড়া, যেনো সামরিক প্রশিক্ষণ পাওয়া একটা মানুষ। দূর থেকে দাঁড়িয়ে থাকা মূর্তিটা দেখে মনে হলো যেনো এক খোশনবিশ তুলির এক আঁচড়ে হাওয়ায় একটা দাগ টেনেছেন, সুদর্শন আর মর্যাদাপূর্ণ, মার্জিত কিন্ত বাঁধনছাড়া।

মিন হুয়ে দ্বিধায় পড়ে গেলো। ঠিক করলো যে শিন ছিকে বিরক্ত করবে না। ও একটা গাছের ছায়ায় লুকিয়ে পড়লো, অপেক্ষা করতে লাগলো।

সমাধিক্ষেত্রের পুব দিকে সু তিয়াঁর সমাধি। এলাকাটা অনেকটা, বিশাল একটা নজরকাড়া স্মৃতিফলকও আছে। শোনা যায় যে পুরো সমাধিক্ষেত্রে ওটাই সবচেয়ে দামী আর টেকসই সমাধি।

দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করার পরেও, শিন ছি স্থির দাঁড়িয়েই রইলো, চলে যাওয়ার কোনো লক্ষণই দেখালো না। মিন হুয়ে অবশেষে পায়ে পায়ে এগিয়ে গেলো, ওকে একটা নরম ‘নি হাও’ বললো।

ও মাথা ঘুরিয়ে এক পলক দেখে নিলো মিন হুয়েকে, কোনো কথা না বলে বাঁদিকে এক পা সরে দাঁড়ালো মিন হুয়েকে ফুলের উপহার রাখার জায়গা ছেড়ে দিতে।

বেশ খানিক ক্ষণের নৈঃশব্দ পার করে, মিন হুয়ে নিচু স্বরে প্রশ্ন করলো, “তুই সব কটা খুঁজে পেয়েছিস?”

“কী খুঁজে পেয়েছি আমি?”

“অবশেষের সব টুকু?”

গোপণে শিন ছির দিকে এক ঝলক দেখে নিয়ে, অনেক ক্ষণ ধরে কথা গুলো বিড়বিড় করলো মিন হুয়ে। তারপর ফিরে গেলো নিস্তব্ধতায়।

আরো আধঘন্টা অটুট নৈঃশব্দে কাটিয়ে, শেষে মিন হুয়ে বলেই ফেললো, “শিন ছি, তোর চোখ দুটো আমাকে দেখতে দে।”

এই সময়ে শিন ছি যেনো খুব বাধ্য, ঘুরে দাঁড়ালো, তাকালো মিন হুয়ের মুখের দিকে।

চোখের সাদা অংশের ওপরের পর্দায় যে লালচে দাগ হয়ে ছিলো সে সব মিলিয়ে গেছে। তবে চোখটা এখনো একটু ফোলা যেনো, চোখের পাতার ভাঁজটা যেনো একটু বেশি স্পষ্ট করে তুলেছে। 

মিন হুয়ে চাক বা না চাক, শিন ছি চিরকাল সু তিয়াঁর লোক। 

“দ্যুইবুচি।”

অস্ফুটে বললো মিন হুয়ে, তারপর হঠাৎ করেই হাত বাড়ালো শিন ছিকে জাপটে শক্ত করে ধরার জন্য, ঝটপট ছেড়েও দিলো।

“আমি কথা দিলাম, শিন ছি -” নরম স্বরে বললো মিন হুয়ে, “এই শেষ বার আমি তোর জীবনে বিরক্তি তৈরি করলাম। এক দিন, ভবিষ্যতে, যে কোনো সময়ে, যদি তোর আমাকে কখনো দরকার পড়ে, আমি সব ছেড়ে দেবো, এমন কি জীবনও, যদি তোর কাজে লাগে। যেমন সু তিয়াঁ সেই সময়ে দিয়ে ছিলো আমার জন্য।”

শিন ছি তাকালো মিন হুয়ের দিকে, অস্থির চাহনি, “কতো বার?”

“তুই বলেছিস কয়েক বার। কিন্তু শিন ছি - তোকে কথাটা স্পষ্ট করে বলতে হবে। সু তিয়াঁর মতো হয়ে যাস না, ও আমাকে বাঁচাতে এসে ছিলো আমি বাঁচার জন্য সাহায্য চাওয়ার আগেই।”

শিন ছির মুখে একটা বাঁকা হাসি জেগে উঠলো।

“চল, সু ছনকে একসাথে বড়ো করি। এখানে পরিস্থিতি এখন ভালো। তুই তিন বছর ওর সঙ্গে থাকতে পারিস নি, তাই এখন ও তোর সঙ্গেই থাকুক বেশিটা। আমি শুধু ওর সঙ্গে নিয়মিত দেখা করতে পারলেই হবে।”

মিন হুয়ে ঠোঁট কামড়ে ধরলো নিজের, “অবশ্যই তুই যদি পরে বিনচেং ছেড়ে চলে যেতে চাস, বা আবার বিয়ে করার কথা ভাবিস,অথবা আমি আবার বিয়ে করি, আমরা তখন না হয় আবার সু ছনের ব্যবস্থাটা ভেবে দেখবো।”

“...”

“আমি আসছি।”

“দাঁড়া, আমার একটা প্রশ্ন আছে। কিছু বলার আছে।" দুম করে বলে উঠলো শিন ছি।

“...”

“তিয়াঁ তিয়াঁর মৃত্যুর সঙ্গে তোর কোনো সম্পর্ক নেই। তাই তোকে এতো অপরাধী হয়ে থাকতে হবে না। এই সমাধিক্ষেত্রে ছাড়া আমি কখনো আর ওর কথা তোর সামনে বলবো না এখন থেকে।”

অবাক হয়ে মাথা তুললো মিন হুয়ে, “এর সঙ্গে আমার কোনো সম্পর্ক নেই? তাহলে কার সঙ্গে সম্পর্ক আছে?”

“কী যায় আসে?”

ঠান্ডা স্বরে বললো শিন ছি, “চেং ছিরাং।”



~~~~~~~~~~~~

সম্পূর্ণ বই বিনামূল্যে : https://dl.bookfunnel.com/lcj5vznt96

Link to Previous Post in the Series : https://projectionofnaught.blogspot.com/2024/10/jpda-chapter-66.html

Link to following Post in the Series : https://projectionofnaught.blogspot.com/2024/10/jpda-chapter-68.html

Readers Loved