২৩. সাদা লাল জামা
মোটেই কোনো মেলানোমা নেই। মিন হুয়ে যখন এই প্রজেক্টে কাজ করতো গুয়ান ছাও-এর হয়ে তখন ও নানান আকারের মেলানোমার ছবি দেখেছে, সেগুলোকে বিভিন্নভাবে বড়ো করে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখেছে, অনেকরকম তুলনা করেছে নানা রকমের মেলানোমার, বিশ্লেষণও করেছে। যদিও অবাক হবার কিছু ছিলো না, তবুও কী ভীষণ খারাপ যে লেগে ছিলো প্রথমবার দেখতে সে কথা মনে আছে মিন হুয়ের। সমস্ত চেতনা যেনো অবশ হয়ে গিয়ে ছিলো।
“আমি শুধু এই চাই যে আমার শরীরটা তুমি পরখ করো। এটা ছিলো সামনের দিকটা।” বলতে বলতে উল্টে গেলো ঝৌ রু জি, “আর এই হলো পিঠের দিক।”
“ও কে। তোমার সব কিছু স্বাভাবিক।” ঝৌ রু জির মাথা চাপড়ে দিয়ে বললো মিন হুয়ে, “এখন চটপট করে জামাকাপড় পরে নাও। না হলে ঠাণ্ডা লেগে যাবে।”
“তোমাকে প্রথমবার দেখেই আমি তোমার প্রেমে পড়ে গেছি।”
"কেনো?”
“আমি সুন্দরী মেয়েদের পছন্দ করি।” জামা পরতে পরতে বললো ঝৌ রু জি।
নিজের রূপ সম্পর্কে মিন হুয়ে আত্মবিশ্বাসী। ছোটোবেলা থেকেই ও সৌন্দর্যের ভক্ত, ওর জীবনের একমাত্র শখ জামা কেনা আর নানান প্রসাধনী কেনা। যেহেতু ওর বাবা রূপোর গয়নার কারিগর ছিলেন, ও ছেলেবেলা থেকেই সূক্ষ্ম গয়নার ভক্ত, সব সময়ে যে খাঁটি সোনা রুপোয় হতে হবে তা নয়, ওর পছন্দ হলেই হলো, সেটা কেনার সব রকম চেষ্টা ও করবে। যে ছোট্টো শহরে ও বড়ো হয়েছে সেখানে অনেক সুন্দরী মেয়ে থাকতো। মিন হুয়ে ওর বাবাকে ছেনির ওপরে হাতুড়ি পিটে পিটে সব ধরনের গয়না বানাতে দেখেছে। সেই সব গয়না কিনতো শহরের যে মেয়েরা বিয়ে করবে তারা। রুপো গলানো, ছাঁচে ঢালা, বাঁধানো, ফুল খোদাই করা - পুরো এক সেটের ওজন দশ ক্যাটিস বা ছ কিলো, অনেক সময়েই একলা একজনের বানাতে লেগে যেতো অনেকগুলো মাস। যখন মিন হুয়ে শিশু ছিলো, তখন বাবার পাশে বসে দেখতো, কখনো কখনো আবার হাত লাগাতো রুপোর চাদর থেকে নকশা কেটে বার করার কাজে, কিংবা টিনের ছাঁচগুলো ঝেড়ে ফেলার কাজে। হয়তো তখন থেকেই যা কিছু চকচকে রুপোলি সে সব জিনিসের প্রতি ওর একটা আকর্ষণ তৈরি হয়েছে।
“তোমার প্রথম পক্ষ কী সুন্দরী?”
“সুশ্রী।”
“তোমার মতোই ডাক্তার?”
“নৃত্য শিল্পী।”
মিন হুয়ে দেওয়ালের অয়েল পেন্টিংগুলোর দিকে তাকালো আর হঠাতই যেনো কী একটা বুঝে ফেললো, “ব্যালে?”
“হ্যাঁ।” ঝৌ রু জি তাকালো মিন হুয়ের দিকে, “তোমার যদি অসুবিধে হয় তো ছবিগুলো খুলে নিতে পারি দেওয়াল থেকে।”
“দরকার নেই। ঝোলানো থাক ওগুলো।” হাসলো মিন হুয়ে।
“আমি বিজ্ঞান আর প্রযুক্তির লোক ছিলাম শুরুর থেকে। ওঁকে বিয়ে করার পরে আমি থেকে থেকেই অপেরা শুনতে যেতাম, আর্ট এক্সজিবিশনে যেতাম। আর ওর প্রভাবে কখন যেনো শিল্প সাহিত্যের অনুরাগী হয়ে পড়েছি।”
“তুমি এখনো চর্চা চালিয়ে যেতে পারো। আমি তাল দিতে পারবো না।”
“গিরগিটি দেখেছো? আমি গিরগিটির মতো। তোমাকে নিজেকে বদলাতে হবে না। ধীরে ধীরে আমি তোমার মতো হয়ে যাবো। দু- এক বছর সময় দিলেই হবে। আমি তোমার নিকট বন্ধু হয়ে যাবো।”
মুখোমুখি বসে ঝৌ রু জি বললো কথাগুলো।
অ্যাপার্টমেন্ট বিল্ডিংটা বত্রিশ তলা। ঝৌ রু জি থাকে ঊনত্রিশ তলায়। বাড়ির ভেতরটা খুবই চুপচাপ। জানলার বাইরে তারাগুলোকে আলাদা করে চেনা যায়, যেনো আকাশেই বসবাস।
টিফানি ডেস্ক ল্যাম্প থেকে কমলা আলো পড়ছে ঝৌ রু জির মুখের একপাশে। নানা রঙের কাঁচ অনুভূতিকে নস্ট্যালজিক করে তুলছে। মিন হুয়ে তাকিয়ে রইলো ঝৌ রু জির দিকে, ভাবছিলো একেকটা পুরুষের অভ্যেস একেক রকম, যেনো একটা কঠিন অঙ্কের ধাঁধা, শিন ছি ঢাকা শিন ছির রহস্যে, ঝৌ রু জি আছে ঝৌ রু জির অদ্ভুত স্বভাবে, কেনো যে মিন হুয়ে বুঝতে পারে না?
যখন প্রথম চেং ছিরাং-এর সাথে ওর আলাপ হয়ে ছিলো, ও লোকটাকে ভদ্রলোকই ভেবে ছিলো। সুদর্শন, শান্ত, প্রতিভাবান। হুয়াছিং বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের কাছে প্রবাদপ্রতিম। প্রায় মিন হুয়ের মতোই ঝটপট প্রোগ্রাম লিখতে পারে। লোকটা বিবাহিত, না হলে রোম্যান্টিক নায়কের সব গুণই ছিলো লোকটার।
মিন হুয়ে টেরটি পায় নি যে ও কী করছে। হয়তো মিন হুয়ের মন বড্ডো নরম ছিলো কিংবা নির্লজ্জ।
“বাইরে থেকে দেখে মনে হয় আমরা সুখী দম্পতি। আসলে আমি অভাগা।” বলে ছিলো চেং ছিরাং।
এইভাবেই শুরু হয়ে ছিলো।
অজান্তে গভীর ভাবনায় ডুবে রইলো মিন হুয়ে, যতক্ষণ না টুস্কি দিয়ে ওর ঘোর কাটিয়ে দিলো ঝৌ রু জি।
“তুমি হয়তো ভাবছো আমি কোনো জঘন্য কান্ড করেছি এই অল্প দিনের বিয়েটাতে।”
দেশলাই দিয়ে কফি টেবিলের ওপরে রাখা হাতের মতো মোটা একটা বাতি জ্বাললো ঝৌ রু জি।
“আমিও কিছু করিনি। ও-ও কিছু করে নি। আমরা শুধু আলাদা হয়ে গেছি, কোনো অশান্তি না করে। ও খারাপ নয়। আমার সঙ্গে ভালো ব্যবহার করে। বিয়ের আগে, ওর মন পাবার জন্য অনেক পুরুষ চেষ্টা করে ছিলো। ওর ক্লাসে যারা পড়তো তারা হয় ব্যবসাদারের বউ নয়তো দ্বিতীয় প্রজন্মের সরকারী কর্মচারীর বউ। কেবল ওরই পয়সা রোজগার করার চিন্তা ছিলো। অনেক উচ্চাশা ওর ছিলো না, সহজ সরল, সিধে স্বভাবের, আমি ওকে খুবই পছন্দ করি। একসঙ্গে আমরা অনেক আনন্দ করেছি।”
কোনো সন্দেহ নেই যে ভদ্রমহিলাই ডিভোর্স চেয়ে ছিলেন, ঝৌ রু জি এখনো উদাস।
“বুঝতে পারছি।” হালকা হাসলো মিন হুয়ে, “ কখনো বাচ্চার কথা ভাবো নি?”
“ভেবেছি। ওর ভয় ছিলো যে বাচ্চা হলে ওর চেহারা খারাপ হয়ে যাবে। আমার কথা যদি বলো, আমি বাচ্চা পছন্দ করি, তবে আমি খুবই ব্যস্ত। আমি ঝড়ের গতিতে দৌড়োচ্ছি ক্যারিয়ারে। তাই আমরা বাচ্চা পরে নেবো বলেই ঠিক করে ছিলাম।” দীর্ঘশ্বাস ফেললো ঝৌ রু জি, “বাচ্চা থাকলে হয়তো আমরা আলাদা হতাম না।”
ঝৌ রু জিকে দুঃখ পেতে দেখে মিন হুয়ে চট করে বিষয় বদলালো, “তোমাকে কী তোমার মা-বাবার সাথে দেখা করতে হবে? সার্টিফিকেট পাবার আগে?”
“ওঁরা নানজিং-এ থাকেন। ওখানে অনেক আত্মীয়স্বজন থাকে। আমার মা-বাবার অনেক ভাইবোন। তাঁরা প্রায় সবাই কাজ থেকে অবসর নিতে চলেছেন শিগগির। সবাই বাড়ি কিনেছেন এক কমিউনিটিতে, যাতে একে অপরের কাছাকাছি থাকতে পারেন।”
“তা ভালো।” মিন হুয়ের মনের মধ্যেটা আকুল হয়ে উঠলো, “বেশ জমজমাট পরিবার।”
“তোমাকে ওঁদের নিয়ে ভাবতে হবে না। আমার মা-বাবা খুবই মুক্ত মনের মানুষ। আমার ছোটোবেলা থেকেই ওঁরা আমাকে কোনো লাগামে বাধেন নি। আমার ব্যাপারে আমার কথাই শেষ কথা, ওঁরা কখনো সে ব্যাপারে মাথা গলান না। আমারই খুব ইচ্ছে ওদের নাতি-নাতনি দেবার। বাচ্চা জন্মালে ওঁরা খুব খুশি হবেন।”
“কিন্তু,” মিন হুয়ে বিব্রত, “আমার বাচ্চা তোমার নিজের বাচ্চা নয়।”
“তুমি যদি না বলো, আমি কাউকে বলতে যাবো না। কারুর জানার দরকার কী?”
উঠে দাঁড়ালো ঝৌ রু জি, “এখানে আমার একটা হেলথ্ পট আছে। আমি তোমার জন্য কিছু বানাই। এক কাপ ফলের চা।”
তারপরে ফ্রিজ থেকে একে একে বেরোল নানান ফল - আপেলো, নাসপাতি, স্ট্রবেরি, লেবু, আনারস, আড়ু, প্যাস্ন ফ্রুট - সেগুলোকে চৌকো করে কেটে, মধু আর কালো চা পাতা দিয়ে হেলথ পটের মধ্যে রেখে ধীরে ধীরে রান্না করতে দেওয়া হলো। দুজনে রান্নাঘরে বসেই কথা বলতে লাগলো আর গান শুনতে লাগলো। ফলের চা-টা খেতে সত্যিই খুব ভালো। একটা বড়ো মগে ঢেলে হাতের মধ্যে ধরে মিন হুয়ে যেনো নিজের বাড়ির আরাম পেলো।
ঝৌ রু জির অ্যাপার্টমেন্টে রাত কাটালো না মিন হুয়ে। ঝৌ রু জিও জোর করলো না।
দুজনে মিলে বিয়ের ব্যবস্থা নিয়ে কথা বলে নিলো। সার্টিফিকেট নিতে যাবে সোমবার, শনিবারে বন্ধুবান্ধব অতিথিদের আপ্যায়ন করবে, ঝৌ রু জি হাসপাতাল থেকে কয়েকজনকে ডাকবে, মিন হুয়ে ডাকবে বা’অ্যানে ওর সহকর্মীদের। সব মিলিয়ে তিনটে টেবিল। বিনচেং-এ অনেক কোম্পানি আছে যারা বিয়ের জোগাড় করে। তাদের একটার হাতেই সবটা ছেড়ে দিলে হবে। এসব মিটে গেলে, মিন হুয়ে একবার নানজিং-এ যাবে শ্বশুর-শাশুড়ির সাথে দেখা করতে।
সব কিছু সেরে নিতে হবে মিন হুয়ের পেটটা বেড়ে ওঠার আগেই।
সোমবার খুব ভোরে জাগলো মিন হুয়ে। দুপুরে সিভিল অ্যাফেয়ার্স ব্যুরোতে রেজিস্টার করতে যাবে বলে হালকা মেক-আপ করে নিলো। মাথার চুলে একটা খোঁপা করে নিলো। একটা সাদা শার্ট পরল যার হাতাটা শালের, লাল রঙের বুনুনির স্কার্ট পরল, যার তলার দিকটা কয়েক ইঞ্চি কাটা। কয়েক সেন্টিমিটার উঁচু হাই হিল পরে কোম্পানিতে গেলো।
যেই এলিভেটর থেকে বেরিয়ে, ফ্রন্ট ডেস্ক পেরোল, অমনি টেকনিক্যাল ডিপার্টমেন্টের দিঁ য়িফঁর সাথে দেখা হয়ে গেলো। মিন হুয়ে একটু সাজগোজ করেছে দেখে, সে একটা দীর্ঘ সিটি না বাজিয়ে থাকতে পারলো না। তার চোখটা মিন হুয়ের বুকের ওপরে ঘুরে গেলো কয়েকবার, “ওয়াও, বেবি, কী ফূর্তি! এমন সাজ! কাল রাতে কে তোমাকে আদরে তুষ্ট করেছে? তোমার ফিগারটা খাসা, তোমার বয়ফ্রেন্ড কুল নিশ্চয়ই?”
মিন হুয়ের মুখটা নিচু হলো হঠাৎ। দিঁ য়িফঁকে অবজ্ঞা করে মিন হুয়ে ঘুরে দাঁড়ালো। গেলো ফ্রন্ট ডেস্কে। ইয়াং বেই বেইকে জিজ্ঞেস করলো, “বেই বেই, আপনি কী শুনতে পেলেন আমাকে এইমাত্র দিঁ য়িফঁ যেসব কথা বললো?”
ইয়াং বেই বেই বাকরুদ্ধ যেনো, ঘোরের মধ্যে মাথা নাড়লো, “শুনুন, আমি শুনেছি।”
“আমাকে পরে সাহায্য করবেন এটা প্রমাণ করতে।”
“মিন হুয়ে জিয়ে, আপনি করবেনটা কী?”
“মামলা করবো।”
দশ মিনিট পরে মিন হুয়ে আর দিঁ য়িফঁ দু জনেরই ডাক পড়লো কনফারেন্স রুমে। ডেকেছেন ডিরেক্টর মা শিন শুয়াং। বা’অ্যান একটা ছোটো কোম্পানি। ব্যবস্থাপত্র আর কর্মচারীদের দেখার জন্য একটাই অফিস। মা শিনের বয়স পঁয়তাল্লিশ বছর, ফর্সা, অল্প দাড়ি আছে। তাঁর মুখটা চিনে লিপির একটা অক্ষরের মতো। হে হাই শিয়াং হেড কোয়ার্টার থেকে যে বিশ্বস্ত জনেদের আনিয়েছেন, মা শিন তাঁদের একজন। মিন হুয়ে জানে না মা শিন কেমন লোক, সে তো কোম্পানিতে সবে এসেছে আর কখনো তাকে মা শিনের মুখোমুখিও হতে হয় নি এতো দিন।
“দিঁ য়িফঁ, এটা আপনার দোষ।” ভাবলেশহীন মুখে উচ্চারণ করলেন মা শিন, “আপনি কী করে একজন মহিলা সহকর্মীর সাথে এভাবে কথা বলেন?”
“ঝংজিয়ে মা শিন, আমি কিছুই বলি নি, বেই বেই আর মিন হুয়ে বোনের মতো। আমি নিশ্চয়ই ওঁদের সাথে কথা বলেছি।” দিঁ য়িফঁ হাসলো, আচরণ হিসেবে সেটা যদিও অসঙ্গত, “আজকে ও কেমন জামাকাপড় পরে এসেছে দেখুন! বুক দুটো উঁচিয়ে আছে যেনো, কলারটা অনেক নিচে, স্কার্টটা খুব টাইট আবার স্কার্টের তলার দিকটা পিছনে কাটা বেশ বড়ো ফাঁক করে - নির্ঘাৎ ও আমাদেরকে উস্কাচ্ছে। আমার মনে হয়, ঝংজিয়ে, আপনার শও মিনকে বোঝানো উচিৎ যে কাজের জায়গায় এমন সেজে আসা যায় না। আমাদের কোম্পানিতে কম করে কুড়ি জন প্রোগ্রামার আছে যারা সিঙ্গল। ও যদি আমাদের আশেপাশে এমন ন্যাকার মতো সেজে ঘুরে বেড়ায়, তবে আমি তো অন্তত, মন দিয়ে কাজ করতে পারবো না। খুব সহজে অন্যমনস্ক হয়ে যাবো!”
রাগে চেঁচিয়ে উঠলো মিন হুয়ে, “দিঁ য়িফঁ, আমি কী পরে আসবো কাজে, সেটা আপনার মাথাব্যাথার বিষয় নয়।”
মিন হুয়ের স্তন তুলনামূলকভাবে বড়ো। যে কোনো জামাই তার গায়ে আঁটোসাঁটো লাগে। তবে সে তন্বী, এক্সএস, তার এক্সট্রা স্মল দেহ তো আর রোজ এক্সট্রা লার্জ জামা পরে কাজে আসতে পারে না, তাই না?
“ঝংজিয়ে, আপনাকে এই ব্যাপারটার প্রতি নজর দিতেই হবে। আমাদের কোম্পানির ড্রেসকোড বদলানোর প্রয়োজন যাতে ও এরকম জামাকাপড় পড়ে আর কখনো না আসে।”
মা শিন কোনো কথা বলছেন না দেখে দিঁ য়িফঁ আরো উন্মত্ত হয়ে উঠলো যেনো, “আমি শুনেছি ওকে গুয়ান ছাও ইন্টারন্যাশন্যাল থেকে বের করে দেওয়া হয়ে ছিলো কারণ ও ওর বসকে পটানোর চেষ্টা করে ছিলো, আর অন্যান্য অশালীন আচরণও করে ছিলো। এমনকি ওর বিরুদ্ধে মামলাও হয়ে ছিলো। আপনি যদি চান আমি বলতে পারি -”
মিন হুয়ে উঠে দাঁড়ালো, দিঁ য়িফঁকে কষে একটা থাপ্পড় লাগাবে বলে। দিঁ য়িফঁ কোনো মতে একটা ফোল্ডার তুলে যথাযময়ে চড়টা আটকে দিলো। ফোল্ডারের ভেতরের কাগজপত্র সব ছড়িয়ে গেলো সারা মেঝেময়।
“ঠিক আছে।” চেঁচিয়ে উঠলেন মা শিন, “আমি ব্যাপারটা হে জঁ-কে জানাবো। উনি যা বলবেন তাই হবে। আপনার নিজের নিজের কাজে চলে যান।”
“ঝংজিয়ে মা, আমার অনুরোধ দিঁ য়িফঁকে কাজের থেকে বরখাস্ত করা হোক।”’
“ঠাট্টা! আমাকে বরখাস্ত করে দেবে কোম্পানি? যান গিয়ে কোম্পানির নিয়মকানুন দেখুন গে। কোন নিয়ম ভেঙেছি যে আমাকে বরখাস্ত করা হবে?”
হয়তো ব্রণ, চুলকানি এসবের কারণে দিঁ য়িফঁ নিজের মুখটাকে প্রায় আঁচড়ে ফেললো নিজের নখ দিয়ে, “ঠাট্টা করেছি তো, দড়ি দেখে সাপ ভাবার কী আছে?”
“ঠাট্টা নয়, যৌন হেনস্থা।”
“এরকম জামা পরে এসে আপনি আমাকে হেনস্থা করেছেন। আপনি কোম্পানির সমস্ত পুরুষ কর্মীকে হেনস্থা করেছেন, ক্যালানে চো*!”
“দিঁ য়িফঁ, যেহেতু ইয়াং বেই বেই সাক্ষী দিয়েছে, আপনাকে ক্ষমা চাইতে হবে মিন হুয়ের কাছে। এরপর কী হবে সে সব আমরা একটা মিটিং-এ আলোচনা করবো।”
“আমি কিছুতেই ক্ষমা চাইবো না। বরং বলব - এ ধরনের মেয়েদের যাদের নীতিবোধের অসুবিধে আছে, তাদেরকে মোটেই কাজে নেওয়াই উচিৎ নয় কোম্পানির।”
“ঠিক আছে, বরখাস্ত হওয়াই ভালো।” মিন হুয়ে মেজাজ হারালো, সরাসরি বলে দিলো, “তাহলে আমি চললাম। মোদ্দা কথা হলো, আমি বিকৃতমনস্ক লোকেদের সঙ্গে কাজ করবো না। ঝংজিয়ে মা, আপনি হে জঁকে জানান। যদি দিঁ য়িফঁ বা’অ্যান না ছাড়ে, তাহলে আমি এখনই রিসাইন করবো।”
“শাওফু, মাথা গরম করবেন না।”
মিন হুয়েকে রেগে যেতে দেখে মা শিন তাঁকে শান্ত করতে চাইলেন, “তোমরা দুজনেই কোম্পানির প্রযুক্তি বিভাগের মেরুদন্ড। এটা একটা তুচ্ছ ব্যাপার। দিঁ য়িফঁ, তুমি পুরুষ মানুষ, তোমাকেই আগে ক্ষমা চাইতে হবে -”
“আমি কোনো পুরুষকে উস্কাই নি। আমি কেনো ক্ষমা চাইব?”
“সেক্ষেত্রে, মিন হুয়ে আপনি যান, শান্ত হোন। এটা এমন কোনো বড়ো ব্যাপার নয়, কিন্তু আমরা গুরুত্ব দিয়ে দেখবো ব্যাপারটা। আসছে সোমবার আমরা একটা প্রশাসনিক মিটিং করবো। তাতে কোম্পানির মাথারা সবাই আসবেন, তখন দেখা যাবে যে এই ব্যাপারটা নিয়ে কী করা যায় -”
“আমি তোয়াক্কাই করি না আপনারা ব্যাপারটা নিয়ে কী করবেন। যদি আজকেই দিঁ য়িফঁ না যায়, তবে আমি কাজ ছেড়ে দেবো।”
মিন হুয়ে বললো, “হ্যাঁ আমার কাজ তো এখনো পাকা হয় নি। তাই আমার পক্ষে যাওয়া সোজা।”
“বেশ, তাহলে যান, আপনার জিনিসপত্র গুছিয়ে নিয়ে, শিগগির বাড়ি চলে যান। ঝংজিয়ের কথাই যখন মানছেন না …” খানিকটা উপহাস করেই বললো দিঁ য়িফঁ, “ছেড়ে চলে যাওয়াই ভালো।”
“দিঁ য়ি ফঁ - -”
“মিন হুয়ে,” মা শিন ভ্রূ কোঁচকালেন, “কোম্পানির নিজের পদ্ধতি আছে সব রকম পরিস্থিতি মোকাবিলা করার জন্য। যে ব্যাপারটা আপনি জানালেন এখন তাই নিয়ে আলোচনা হোক। অভিযোগ করার যেমন অধিকার আছে, অভিযুক্তেরও অধিকার আছে অভিযোগ খন্ডণের। আমাদেরও তদন্ত করার সময় লাগবে, কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছোনোর আগে, নিশ্চিত করার আগে যে এই ব্যাপারটা নিয়ে কী করা যায়। শুধু অভিযোগ মেনে নিয়ে এটা করা যাবে না। তাই না? আমি জানি আপনি ক্ষুব্ধ। আপনি যতোই ক্ষুব্ধ হোন না কেনো,আপনি কোম্পানির কর্তৃদের ওপরে রাগ দেখাতে পারেন না! কর্তৃরা নানা কাজে ব্যস্ত, সব সময়। বলা মুস্কিল যে রোজই তাঁদেরকে সব সময়ে পাওয়া যাবে, তাই না?”
“ঠিকই। পাগলামি করবেন না। আপনি নিজেকে ভাবেনটা কী?” তাল দিলো দিঁ য়িফঁ।
“আমি ভেবে ছিলাম যে আমিও কোম্পানির মূল প্রতিযোগিতামূলক কাজগুলো করি।” মিন হুয়ে ব্যাগ উঠিয়ে নিয়ে, চোখ পাকিয়ে, ঘর ছেড়ে বেরিয়ে গেলো।
দু ঘন্টা পরে, দিঁ য়িফঁ একটা বড়ো কার্ডবোর্ডের বাক্স দুহাতে জড়িয়ে ধরে বা’অ্যান ছেড়ে বেরিয়ে গেলো। তখনই সবাই ইমেল মারফত জানতে পারলো যে “ব্যক্তিওগত কারণে কাজ ছেড়ে দিয়েছেন” দিঁ য়িফঁ।
ইয়াং বেই বেই চুপি চুপি দেখা করলো মিন হুয়ের সাথে চা খাবার ঘরে। খুশিতে ডগমগ করতে করতে বললো, “সাও জঁ জান লড়িয়ে দিয়েছেন আপনাকে ধরে রাখার জন্য। যখন হে জঁ আর অন্যদের সঙ্গে একটা মিটিং চলছিলো তখন আমি কফি দিতে গিয়ে ছিলাম। সেই সময়েই আমার কানে আসে কথাগুলো।”
“হে জঁ কী বললেন?” মিন হুয়ে জানতে চাইলো।
“সাও জঁ যাই বলুন না কেনো, হে জঁ যেতে দিতে রাজি ছিলেন না দিঁ য়িফঁকে। প্রথমত, দিঁ য়িফঁ হচ্ছে সেই লোক যাঁকে হে জঁ নিজের উদ্যোগে হেডকোয়ার্টার্স থেকে আনিয়েছেন। ও যেনো হে জঁর নিজের লোক। দ্বিতীয়ত, তুমি অন্তঃস্বত্ত্বা। কয়েকমাসের মধ্যেই তোমার বাচ্চা হবে। বাচ্চার জন্ম দেবার পরেও কী তুমি তোমার কাজ ঠিকঠাক করতে পারবে? - হে জঁ এই যুক্তিতে অনেকক্ষণ তর্ক করেছেন। এমনকি সাও জঁকে আপনার কাজ করে নিতে বলেছেন যাতে দুজনকেই রাখা যায়। সাও জঁ উত্তরে বলেছেন যে আপনাকে এখানে কাজ দিয়ে রাখা সহজ নয় আর এমন নয় যে এই প্রথমবার দিঁ য়িফঁ অসভ্যতা করলো। যদিও বা’অ্যানে মহিলা কর্মীর সংখ্যা বেশ কম, তাহলেও মহিলা ও পুরুষের যে সাম্যের ব্যবস্থা সেটাকে নষ্ট হতে দেওয়া যায় না। আর দিঁ য়িফঁ যেনো ঠিকই করে নিয়েছে যে ও মহিলা ও পুরুষদের সাম্যের ব্যবস্থাটা মানবে না। অনেকক্ষণ তর্ক করার পরে, সাও মু ভাবতে বললেন হে জঁকে যে আপনি চলে গেলে যদি MIST-এর কিছু হয়, তবে উনি কাকে ডাকবেন ঠিক করতে। হে জঁ-এর মেনে না নিয়ে কোনো উপায় রইলো না। তারপরে দিঁ য়িফঁ-এর কাছে গিয়ে অনেকক্ষণ কী সব বললেন হে জঁ। ঠিক কী বলেছেন আমিও জানি না। দিঁ য়িফঁ তখনই নিজের জিনিসপত্র গুছিয়ে নিয়ে, ঝড়ের বেগে কোম্পানি ছেড়ে বেরিয়ে গেলেন।”
মিন হুয়ে হাঁপ ছেড়ে বাঁচলো।
“এতো খুশি হবেন না। দিঁ য়িফঁ চলে গেছেন। ওঁর টিমের দেখাশোনা করার কেউ নেই, ওঁর কাজগুলো করারও কেউ নেই। সেগুলো কী আপনার ঘাড়ে পড়বে?”
“আমার তো কাজ ভর্তি। সাও জঁ-এর অন্য কাউকে বহাল করতে লাগবে সব কাজ সময়ে শেষ করতে হলে। অথবা কাউকে প্রোমশন দিয়ে দিঁ য়িফঁর জায়গায় আনতে হবে। যতো দূর দিঁ য়িফঁর কাজের কথা আসে, ও প্রোগ্রাম লিখতে পারে। কিন্তু বা’অ্যানে এখনো এমন অনেক লোক আছে যারা দিঁ য়িফঁ-এর মতোই প্রোগ্রাম লিখতে পারে। এমন ভাবার কোনো কারণ নেই যে দিঁ য়িফঁ-এর কাজটা করার কোনো লোক নেই।”
“মিন হুয়ে জিয়ে, ঝ্যাং শও হান আপনার খুব ভক্ত। উনি বলছিলেন যে আপনি যে প্রোগ্রাম এক দিনে লেখেন, সেটা বাকি সবাই লিখতে একমাস সময় নেয়। আপনার মতো কেউ পারে না, আপনি মাস্টার।”
“যাহ্” মিন হুয়ে হাসলো, “তা ঠিক।”
“বেই বেই আমি বিয়ে করছি। একটা ম্যারেজ সার্টিফিকেটও পাবো। কাকে দেবো?”
“ঝংজিয়ে মা কে জিজ্ঞেস করলেই হবে। এসব উনিই দেখাশোনা করেন।”
বলেই গল্পের ছলে জানতে চাইলেন, “জিয়ে, আপনি বাচ্চার জন্য বাবা এতো চটপট খুঁজে ফেললেন?”
“হ্যাঁ।”
“কে, আমি চিনি নাকি তাঁকে?”
“ঝৌ রু জি।”
বেই বেই অনেকক্ষণ ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে বললেন, “ঝৌ রু জি?”
“হ্যাঁ, কোনো সমস্যা আছে?”
“আমি পুরো মন জুড়ে খুশি হয়েছি।” বেই বেই হেসে তালি দিয়ে বলে উঠলেন, “ঝৌ রু জি খুব ভদ্রলোক। তবে অনেক সময়েই ওঁর কাজকর্মের কোনো মাথামুন্ডু থাকে না। যদিও উনি একজন ডাক্তার। উনি মোটেই বিনয়ী নয়। উনি আমাদের সবার সাথে খুবই ভালো ব্যবহার করেন। উনি ঠাট্টা করতে ভালোবাসেন। তবে লাগামছাড়া করেন কখনো কখনো। উনি হাসিখুশি থাকতেই পছন্দ করেন। কে-পপ মানে জনপ্রিয় কোরিয়ান গান গাইতে পারেন। সমস্ত পার্টিতে ডাকা হয় ওঁকে। দিঁ য়িফঁর মতোই উনিও এসেছেন হেডকোয়ার্টার্স থেকে। শোনা যায় যে ওঁর মেন্টর ওঁকে পাঠিয়ে ছিলেন সাও জঁর কাছে। সাও জঁ, আপনি জানেন নিশ্চয়ই, খুব বেছে বেছে তবে কাজে রাখেন সকলকে। ওঁর নজর কাজের দক্ষতায় আর নীতিবোধের প্রতি। ঝৌ রু জি এখানে তো একটা পার্ট-টাইম কাজ করেন। ওঁর পয়সার অভাব নেই। উনি শুধু ওঁর মেন্টরের খাতিরে আমাদের সাহায্য করছেন। ওহ্ কথায় কথায় অন্যমনস্ক হবার কোনো উপায় নেই, তাই না?”
“ভালো কথা, আপনি ওঁর আগের পক্ষের বৌকে দেখেছেন?”
“আমি আগেই দেখেছি, হেড কোয়ার্টার্সে, ইয়াও ঝি ঝু, ব্যালে শিল্পী, খুবই সুন্দরী। আপনি যদি কখনো ব্লু ওসান গ্র্যান্ড থিয়েটারে যান, যেটা ছিং নিয়ান রোডে, যেখানে ওঁর ব্যালে ট্রুপ প্রায়ই পারফর্ম করে, সেখানে উনি লিড ডান্সার, সোয়ান লেক করেন খুব ভালো, ওঁর একটা পোস্টারও আছে থিয়েটারে।”
বেই বেই খুব আনন্দের সাথে বলছিলেন, মিন হুয়ে মন দিয়ে শুনছে দেখে। তারপর বিব্রত হয়ে বলে ফেললেন, “মিন হুয়ে জিয়ে, আপনিও সুন্দরী। বিশেষ করে আজকে আপনাকে খুব সুন্দর লাগছে।”
দুপুর পার করে, ঝৌ রু জি এলো মিন হুয়েকে নিয়ে যেতে। গেলো সিভিল অ্যাফেয়ার্স ব্যুরোতে রেজিস্টার করতে। ঝৌ রু জি একটা লাল রঙের তাং স্যুট পরে ছিলো। অবাক হয়ে মিন হুয়ে জিজ্ঞেস করলো, “তুমি লাল শার্ট পরেছো কেনো আজকে?”
“আজ একটা উৎসব উদ্যাপণের দিন।”
“আমি আজ একটা ছবি নেবো রেজিস্ট্রেশনের। পিছনের বোর্ডটা লাল। সেই জন্য আমার জামাটা সাদা হওয়া উচিৎ।”
“তাহলে আমি অ্যাপার্টমেন্টে গিয়ে বদলে নিচ্ছি।”
ছ্যুনতাং গার্ডেন বা আইভি গার্ডেন অ্যাপার্টমেন্টস্ কমিউনিটি পড়বে বা’অ্যান থেকে সিভিল অ্যাফেয়ার্স ব্যুরো যাবার পথেই। দুজনেই ওপরে গেলো জামা বদলানোর জন্য। কিন্তু দরজা দিয়ে যেই ঢুকলো, অমনি দেখলো যে দরজাটা খোলা। ভিতরে কেউ হাঁটছে। মিন হুয়ে চমকে গেলো, ঝৌ রু জি স্বাভাবিক স্বরে বললো, “সব ঠিক আছে, ঝি ঝু।”
“আহ্”
“আমার প্রাক্তন স্ত্রী। আমি আজ সকালেই এ ব্যাপারটা নিয়ে ভেবেছি। ঐ অয়েল পেন্টিংগুলো এখানে ঝোলানো উচিৎ নয়। ফেলে দেবো? খারাপ লাগছিলো। গাদা করে রাখারও জায়গা নেই। তাই আমি ঝি ঝুকে জিজ্ঞেস করে ছিলাম যে এই ছবিগুলো ও নেবে কিনা। এর মধ্যে দুটো পেন্টিং ওর নিজে হাতে করা। ও বলে ছিলো যে ও একটা নতুন বাসায় আছে। সেটা সাজাতে গোজাতে ওর কিছু বাকি আছে। তাই ওকে বলে ছিলাম যে আজ এসে নিয়ে যেতে।”
“খুব ভালো।” মিন হুয়ে খুব গুরুত্ব দিলো না ব্যাপারটাতে।
“ও বোধ হয় একা আসে নি। সঙ্গে ওর বয়ফ্রেন্ড আছে।”
~~~~~~~~~~~~
সম্পূর্ণ বই বিনামূল্যে : https://dl.bookfunnel.com/lcj5vznt96
Link to Previous Post in the Series : https://projectionofnaught.blogspot.com/2024/08/jpda-chapter-22.html
Link to following Post in the Series : https://projectionofnaught.blogspot.com/2024/08/jpda-chapter-24.html
No comments:
Post a Comment