কবিতা লিখি কারণ
কিছু রক্তাভা জাগে আকাশের
নীল গায়ে সাদা মেঘের চূড়ায়
কিছু রক্তের ছিটে সাগরে, মরুতে, বনে,
পাহাড়ে, আমাদের গায়ে
রোদ্দুরে খুঁজি শৈত্য, স্নিগ্ধচ্ছায়, বৃষ্টিতে ভিজি যদি জ্বালা যায়
কিছু কথা এসব নিয়ে কলমে আসে
কবিতা হয়ে
কিছু বোধ জাগে মুক্ত মগজে
ব্যক্ত হতে চেয়ে
আগামীকে জানাতে চেয়ে লিখে
যাই সব গুছিয়ে
সে
ফুরিয়ে যায় যায় দিনের আলো,
সুয্যি দিল ডুব। বলে গেল,
“বিশ্বাস করো, সে আসছে”।
আহ্, হাওয়ায়
হাওয়ায় ও কি
সুর বাজে! ওরাও বলে –
“সে আসছে, সে আসছে...”
এমন সময় সামনে এলো
চাঁদ। ঝকঝকে মুখে ছোট্ট
মুচকি হাসি; বলল,
“শুনলে তো; সে আসছে।”
আমি গেলাম চটে; বসলাম
পিঠ ফিরিয়ে; “ কি যা তা
বল, এখনই সে
আসবে?
সব্বাই মিলে আমায় বোকা
পেয়ে শুধু ইয়ার্কি ...” ।
চাঁদ গভীর গলায় বলল –
“তুমি চেনো তাকে? দেখেছ
কখনও আগে”? ঘাড়
শক্ত করে, অহঙ্কারিনী,
তেজের সাথে বলি, “যার
সাথে প্রত্যেকটা মুহুর্তে
ওঠা-বসা তার প্রত্যেকটা
স্পন্দন আমি চিনি।
ওর উজ্জ্বল চোখের ভাষা,
ওর নরম ঠোঁটের গান গাওয়া,
ওর পাগল চুলের ওড়া,
আর ওর দুষ্টু হাসির
গালে, চোখে,
চিবুকে, ঠোঁটে –
সারা মুখে ছড়িয়ে পড়া –
ঠিক তোমার মত; বুঝলে?”
এমন সময় অখণ্ড নীরবতায়
চমকে উঠি। এ কী, আমি
যে জ্যোৎস্নায় ডুবে গেছি!
চারপাশে আছড়ে পড়া জ্যোৎস্না
আমাকে ভিজিয়ে দিচ্ছে;
এ কি জ্যোৎস্নার সুগন্ধ?
এমন সময় চাঁদ নেমে এল,
বসল পাশে; ফিসফিস
করে বলল, “সত্যিই চিনতে
পেরেছ তাকে? একদিন,
একবারও?” কাঁপন লাগে;
লাজুক চোখ ধীরে ধীরে
তুলি; তাকাই
চাঁদের দিকে।
সে বলল, “কেউ মিথ্যে
বলে নি। এবার বিশ্বাস হল?”
মা
এখনও
স্বপ্নে নাড়তে থাকি কড়া
বলে
না কেউ, “আসছি, একটু দাঁড়া।”
রেগে
যেতে থাকি কেন দেবে না সাড়া –
কখনও
দেখি শীর্ণ হাতের চেটো
যেন
ছুঁয়ে গেল আমার চোখ দুটো
যেন
বলে গেল, “আমি এই তো।”
চোখের
পাতা দিনের আলো ছুঁলে
বুঝতে
পারি যদিও এসেছিলে
কোথাও
গেছ, আজও যাও নি
বলে।
খেলার মাঠ
দুই পাহাড়ের কোণাকুণি ঢালে আটকে আছে অনুভূমিক
জমিটা;
বর্ষা, শীত এবং বসন্তেও সবুজ ঘাসের সোয়েটারটা পরে।
পায়ে বল নিয়ে আবালবৃদ্ধ নেচে বেড়ায় যখন তখন…।
মাঠেরও কি জানা আছে যে কে তার মালিক?
আবার জন্মদিন
জন্মদিন আসে যায়
বয়স জমে ওঠে তলে তলে
ঘড়ির টিটকিরি ছাপিয়ে
মাপতে থাকি হাতছাড়া মূহুর্তগুলো
মাপতে মাপতেই ফসকে যায় আরও অনেকগুলো
আর জন্মদিনও
নিউ
মেক্সিকো
কিছু অনুরণনে মুগ্ধ ককলিয়া
কিছু রঙিন দৃশ্যে বিমোহিত
কর্নিয়া
সাজানো শহরে পুয়েবলো বসবাস
সাজানো বাগান জুড়ে হার্পের
অনুপ্রাস
অলিতে গলিতে আর সাইড ওয়াকে
হাতে বোনা চাদর রাখা থাকে
থাকে
সার সার লোহার প্যাঁচা পরী
লিচেনের ফুল
টার্কোয়িশ, বেরিল আর রোসি কোয়ার্জের দুল
কাঠ, হাড়, পালক
চামড়া দিয়ে বানানো হার
নানান গয়না, বাঁশি, চাইম
আর ড্রিম ক্যাচার
আলপাকাজ পঞ্চোতে পেরুর পরিচয়
গুয়াতেমালার চিহ্ন সজারু, লামায়
রাস্তা ধরে গ্যালেরিয়া
পাশাপাশি
গির্জাতে ঐতিহ্য গাম্ভীর্য
ঠাসাঠাসি
আদিম পাড়ার স্মৃতি ধূ ধূ
বান্ডেলিয়র
আড়ালে রেখেছে টাফ স্টোন জমাট
পাহাড়
একদিকে স্যান মিগ্যেল মর্চে
রঙা ন্যাড়া
আরেক দিকে পাহাড় সবুজ বর্ফি
চূড়া
মাঝে লস অ্যালামস ক্যানিয়ন
দাঁড়িয়ে
ভিন্ন দিগন্তকে দিয়েছে
মিলিয়ে
হাজার বছর রিও গ্রান্ডের
খাতে বিলীন
ঠাণ্ডা হাওয়ার ঝলক মাখা রোদ
ঝলমল দিন
নিদারুণ অনিবার্যতায়
চলমান সকালটা দুপুরে এসে
থমকে দাঁড়ায়
থকে যায়, কিংবা
চলতে ভুলে যায়
তবু বসন্ত আসে যায়
নিদারুণ অনিবার্যতায়
শিমুলের লালিমায়
ফলেদোর নরম কমলায়
সোনালি কিংবা লালে বা
সাদায়
পলাশে, আড়ালে
উষ্ণতা ক্রমে তার জাল ছড়ায়
থকে যায়, কিংবা
চলতে ভুলে যায়
নিদারুণ অনিবার্যতায়
তবু হেমন্ত আসে যায়
মেপলের লালিমায়
ওকের খয়েরি পাতায়
আবার শীতের খড়খড় গান
শোনা যায়
আবারও সকালটা দুপুরে এসে
থমকে দাঁড়ায়
থকে যায়, কিংবা
চলতে ভুলে যায়
নিদারুণ অনিবার্যতায়
আজ মিশরে, কাল
সিরিয়ায়
যৌবনের লালিমায়
অস্ত্রের আগুনে, খোঁচায়
পেরোলে শতক সব্বাই ভুলে
যায়
শাসন আড়ালে নেতৃত্বের
প্যাঁচে ক্ষমতা বাড়ায়
অক্লান্ত, তীক্ষ্ণ
প্রবল পাহারায়
তবু ইতিহাস বদলে যায়
নিদারুণ অনিবার্যতায়
কখনো রাশিয়ায়
কখনো আমেরিকায়
স্থির সূত্রে পৃথিবী
ওল্টায় পাল্টায়
অনেকটা দুর্বোধ্য হলেও
কিছুটা তার বোঝা যায়
কেটে যায় শতক সব বোঝার
আশায়
নিদারুণ অনিবার্যতায়
পৃথিবী ওল্টায় পাল্টায়
তবুও বিদ্রোহ
শপথের সাথে জেগে উঠি
প্রত্যেক ভোরে,
“আজ থেকে আমি শান্ত হব।” জপি নিচু স্বরে।
তারপরে -
পায়ে পায়ে মাড়িয়ে যাই সহস্র
বারুদকণা।
উড়ে এসে জুড়ে বসে গায়ে তার
অনেকখানা।
অথচ ফুরোয় না।
পায়ের তলায় পুরু হতে থাকে
বারুদের আস্তরণ,
ত্বকে কিন্তু পথের সোঁদা
স্পর্শ চেয়েছিল মন।
এটাই অস্বস্তির কারণ।
সেই না পাওয়ার ক্ষোভ, অন্য নানা অজুহাত নিয়ে
চোখের সামনে উস্কানির পাহাড়
তোলে উঁচিয়ে।
ছ্যাঁকা লাগে পায়ে।
তাই সম্বিত ফিরে আসে আর ঘষাঘষি
টের পাই
বারুদে বারুদে রাস্তার বুকে
আর পায়ের পাতায়,
আগুন লেগে যায়।
অনিবার্য দহনে পুড়তে থাকে
আমার চামড়া।
জালিকা দীর্ণ হয়ে ছোটে
রক্তের ফোয়ারা।
বুঝি ইশারা।
এরপরে লাগবে ঘষা হাড়ে, কাঠামো ভাঙবে
“আমি তো বিদ্রোহ চাই নি!” ভেবে ভেবে
হতাশা মাথা কুটবে।
শান্তির খোঁজেই তো নেমেছিলাম
চেনা পথে!
তাই কি বারুদের অনিবার্যতাকে
পারিনি ঠেকাতে!
কবিতা নাকবিতায় রাত কেটে যায়
বিরক্তি আর হতাশায় থাপ্পড় গিয়ে পড়বি তো পড় কবিতার কানের গোড়ায়!
সে মাগীও ছিনাল বড়, হি হি করে দাঁত কেলিয়ে টোন করল, “ও তোমার জোছনা নয়তো উপগ্রহক আলোকসম্পাত”।
ছেয়ে থাকা রাকার আলো মানে অন্ধকার বুকে হাত রেখে চুমু খেলে গালের ওপর দুফোঁটা
মুক্ত রাখে দীর্ঘশ্বাস। বিয়ে করা বউয়ের মতো নিঃশব্দ নির্লিপ্তিতে বিছানার একধারে
তুলতুলে ঘুমিয়ে ন্যাতা কবিতাও সোহাগের ওমে ঘনিয়ে ওঠে মুঠোয় শুঁয়োপোকার রোমের পরশ
আলগা পেয়ে উড়ে যায় মশারির বুনট ভেঙে সবুজাভ সাদা পাখা নেড়ে নেড়ে মিলিয়ে যায়
আদিগন্ত অন্ধকারে।
ভোরের অপেক্ষায় সকাল ছ্যাঁকা দিয়ে যায়। তবু সে
অন্ধকারেই অবয়ব পায় সূর্য, রশ্মি,
কোলে নিয়ে সমুদ্র কিংবা বরফমাখা পাহাড়চূড়ো; কবিতারই
অবরোধে অসঙ্গতিতে সয়ে যাওয়া অসহ্য অভিমানে।
প্রেমের কথা
প্রেমের কথা
নতুন করে বলার কী আর আছে
সেসব কথা বড্ড
ক্লিশে তোমার আমার কাছে
তবুও যখন নদীর
হাওয়া জানলা ঠেলে আসে
হঠাৎ কেমন
ভাল্লেগে যায় মন খারাপের পাশে
আবার যখন
পূর্ণিমা রাত জ্যোৎস্না ঢেলে ভাসায়
তখন আবার একথালা
চাঁদ তোমার কথাই ভাবায়
ভাবায় বলেই তুমি
আমার রিংটোনে আজ বিশেষ
ভাবায় বলেই আমার
মুঠোয় ভরলো এসএমএস
ডিজিট কথা
পাহাড়প্রমাণ জমছে ক্রমে ক্রমে
কাগজ কলম বাতিল
হলেও আলাপ যায় নি থেমে
যায় নি বলেই
বাদলা সাঁঝে ব্যাকুলতা ডাকে
যায় নি বলেই
ঝড়ের রাতে ভরসা ভরে ফাঁকে।